এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -১২

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-১২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

“রাত প্রায় দুটো তখন।হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো রাত্রির।বুঝতে পারলো নিজের বিছানায় আর নেই সে।কেউ তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।চিৎকার করার বা কিছু দেখার উপায় পর্যন্ত নেই।কারণ তার মুখ আর চোখ তখন একটা শক্ত কাপড় দিয়ে বাঁধা।লোকটা রাত্রিকে একটা ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো।তারপরে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।রাত্রি ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।লোকটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে তার দিকে।তারপর ওকে পেছন থেকে খুব বাজেভাবে জড়িয়ে ধরলো।তার উষ্ণ নিঃশ্বাস রাত্রি নিজের ঘাড়ের ওপরে উপলব্ধি করতে পারছে।এরপর লোকটা রাত্রির মুখের বাঁধন খুলে দিলো।

—কে,কে তুমি?দেখো আমার সাথে একদম খারাপ কিছু করার চেষ্টা করবে না বলে দিচ্ছি,

লোকটা তখনো চুপ,কোনো কথা বলছে না।রাত্রি এই মুহূর্তে তিয়াশের প্রয়োজন অনুভব করছে ভীষণভাবে।ও নিশ্চয়ই নিজের ঘরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে।

রাত্রি এরপর বুঝতে করলো ওর বুকের ওপর সে ধারালো কিছু রেখেছে।হয়তো ছুড়ি হবে।তারপর সেটা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে লাগলো।একপর্যায়ে লোকটা ছুড়ির অগ্রভাগ দিয়ে রাত্রির চোখের বাঁধন এক টানে খুলে দিলো।এরপর সে রাত্রিকে নিজের দিকে টেনে নেয়,তার ছুড়িটা রাত্রির গলা বরাবর।লোকটার হিংস্র চেহারা দেখে দেখে আঁতকে উঠলো রাত্রি!অস্পষ্ট স্বরে সে বলে উঠলো :

—তিয়াশ তুমি…..!!!!

তিয়াশ রাত্রিকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই গলায় ছুড়িটা চালিয়ে দেয়।অমনি প্রকান্ড এক চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে গেলো রাত্রি।সারা শরীর ঘেমে একাকার তার।ওর চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তিয়াশ ছুটে এলো।

—আরে কি হলো তোমার?এভাবে চিৎকার করছো কেন?

—-একদম কাছে আসবে না আমার,একদম কাছে আসবে না।(রাত্রি তিয়াশকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলছে)

—আরে বাবা, হয়েছেটা কি?এমন করছো কেন?

—তুমি আমার কাছে আসবে না বললাম না!

—আমার মনে হচ্ছে তুমি বাজে কোনো স্বপ্ন দেখেছো,দেখো এইভাবে ভয় পাবার কিছু নেই।

তিয়াশ দেখতে পাচ্ছে রাত্রি ওকে দেখে রীতিমত আতংকে কাটা হয়ে আছে।রাত্রির বারণ অগ্রাহ্য করে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলো।

—আমার কাছে আসছো কেন,বলছি না দূরে সরে যাও আমার থেকে,

—দূরে সরে যাবার জন্য তো আসি নি আমি,তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো না কেন,

—কাছে আসার জন্য আসোনি মানে খুন করতে এসেছো আমায় তাই না?

তিয়াশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রাত্রি নিশ্চই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে,তাই এমন ভুলভাল বকছে।ওর মনের ভয় কাটাতে না পারলে মুশকিল হয়ে যাবে।

—প্লিজ সরে যাও আমার থেকে,আমার ভয় করছে তোমায় দেখে,

—কেন ভয় করছে আমি বাঘ না ভাল্লুক,নাকি অন্য কিছু?

—আমি জানি না,কিচ্ছু জানি না।সরে যাও তুমি!

তিয়াশ রাত্রির আরো কাছাকাছি চলে আসে।তারপর ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো।রাত্রি তখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

—কি হলো,এখনো কি ভয় করছে আমাকে দেখে?দেখো আমি তোমার কতো কাছে চলে এসেছি।

রাত্রি আর কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো।ধীরে ধীরে ঘোর কাটতে লাগলো তার।এক পর্যায়ে পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেলো সে।

—কি এবার,মাথাটা ঠিক হলো তো?

—সরি,আমি মনে হয় একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছি।

—নো ইটস ওকে।আমি বুঝতে পেরেছি।তুমি বরং এখন একটু বিশ্রাম নাও।

—আমার খুব ভয় করছে!

—মানে,এই না বললে আমাকে….

—আরে আপনার জন্য না,সত্যিই আমার এই জায়গাটা কেমন জানি লাগছে।আপনি প্লিজ থাকুন না আমার কাছে,

—ইস!সেটা সম্ভব না যে ম্যাডাম।

—সম্ভব না,কেন সম্ভব না!

—একটা ছেলে এবং মেয়ে এভাবে এক ঘরে রাত কাটাতে পারে না,লোকে জেনে গেলে কেলেংকারি হয়ে যাবে যে।

—কেউ কিচ্ছু জানবে না,আর জানলে তাতে বয়েই গেছে আমার।আপনি আমার সাথে থাকবেন।ব্যস আর কিছু জানি না আমি।

—থাকতেই হবে,বলছো?

—হ্যাঁ!আপনি চলে গেলে আমি কিন্ত আবারো চিৎকার করবো।

—ঠিক আছে বাবা,চিৎকার চেঁচামেচি করতে হবে না আর।আমি বরং এই চেয়ারটার ওপরে বসি।আপনি নিশ্চিত ঘুমান।

—ওই ভাঙ্গা চেয়ার আপনার ভার নিতে পারবে বলে মনে হয়?

—তাহলে কি সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবো আমি?
আপনি কি আমাকে শাস্তি দেবার পায়তারা করছেন!

—আমি কখন বললাম আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন।আপনি বরং এই পাশটায় শুয়ে পড়ুন।আমি ওপাশটায়…

—ছিহ,ছিহ!আপনার কি লজ্জা নেই,জেনে শুনে একটা পরপুরুষের সাথে নিজের বেড শেয়ার করতে চাইছেন!

—একদম লেগপুল করার চেষ্টা করবেন না,বলে দিচ্ছি।

—এতোটা বি‌শ্বাস করেন আমায় আপনি,যদি সত্যি কোনো ক্ষতি করে দেই আপনার।তখন কি হবে?

—এতো বকবক না করে শুয়ে পড়ুন তো মশাই, বড্ড ঘুম পাচ্ছে আমার।আর আপনি কেমন সেটা কি এতোসময় একসাথে থেকেও বুঝতে পারিনি আমি,কি ভেবেছেন!

এই বলে রাত্রি ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।তিয়াশ আর দেরী না করে সেও বিছানায় উঠে পড়ে।বালিশ নেই তাই অগ্যতা নিজের হাতকে দিয়ে বালিশের কাজ সারতে হলো।মাথার নিচে কনুইটা রেখে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।রাত্রির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়।

এরপর সকালবেলা…..

কান্না রহমানকে নিয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তিয়াশ।সাথে রাত্রি।তিয়াশের বাসাতে রাত্রির বাবাও অপেক্ষা করছে।রাত্রি অবশ্য এখনো ওর বাবার বিষয়ে কিছুই জানে না।নিজের আসল মা অবধি পৌঁছতে যে ওর বাবার কতখানি অবদান সেটা জানে না রাত্রি।আমান সাহেবের পূর্ব পরিচিত তিয়াশ।ছেলে হিসেবেও সে যথেষ্ট ভালো।যখন আমান সাহেব জানতে পারে তার স্ত্রী রাত্রিকে টাকার লোভে কারোর কাছে বিক্রি করে দিতে চাইছে তখন সে তিয়াশের শরণাপন্ন হয়।তিয়াশও তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়।ক্লাইন্ট সেজে কতোগুলো জাল টাকা নিয়ে পৌঁছে যায় রাত্রিদের বাড়িতে।সেখান থেকে কৌশল করে রাত্রিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।যদিও সেই কাজটা বড্ড ঝুঁকি নিয়েই করতে হয়েছে।শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই রাত্রিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সে।




এদিকে রাত্রিদের বাড়িতে।রাত্রির মা অর্থাৎ আমান সাহেবের স্ত্রী টাকা আর মেয়ে হাত থেকে ফঁসকে যাবার শোকে পাগল প্রায়।তার ফোনে সেই বৃদ্ধের কল আসলো।ভদ্রমহিলা ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো।

—কি ব্যপার, তুমি কি বেঁচে আছো?ফোন রিসিভ করছো না কেন?

—আমি শেষ হয়ে গেছি,ওরা সর্বশান্ত করে দিয়েছে আমায়!(হতাশার স্বরে)

—মানে, কি বলছো তুমি, কি হয়েছে?

—কেউ আমার চোখে ধূলো দিয়ে রাত্রিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে, আমার সোনার ডিমও গেলো, রাজহাঁসও গেলো।এবার কি করবো আমি,

—কেউ কেউ করছো কেন,যে তোমার মেয়েকে কিনে নেবার কথা ছিলো সে তো তোমার ক্লাইন্ট। যাও এখন গিয়ে চেপে ধরো তাকে।

—না কোনো ক্লাইন্ট ফ্লাইন্ট ছিলো না সে।কেউ একটা গেম খেলেছে আমার সাথে,সে জানতো আমি রাত্রিকে বিক্রি করে দিতে চলেছি তাই এটা করেছে,ইচ্ছে করে করেছে।

—আমার মনে হয় তোমার স্বামীর হাত আছে এই কাজে,সে লোক দিয়ে করায়নি তো এসব!

—ঠিক ধরেছো আমারো তাই মনে হয়,বুড়োটা বাড়িতেও আসছে না।আমার মনে হয় ওই করেছে এসব।রাত্রির জন্য ওর বরাবরের জন্য বেশিই দরদ।

—তাহলে কি করবে এখন?

—আমি কি করবো জানি না,তুমি বরং চলে এসো আমার এখানে।আমার মাথা কাজ করছে না আজকাল।জানিনা কখন কি করে ফেলি নিজেকে।

—ঠিক আছে,তুমি সামলাও নিজেকে।আমি আসছি।তারপর দুজনে মিলে একটা বুদ্ধি খুঁজে বের করবো।

—একবার ঐ বুড়োটাকে পাই হাতের কাছে আর ওর মেয়েকে।তারপর বুঝাবো আমার সাথে পাঙ্গা নেবার কি ফল হতে পারে।ওদেরও ছাড়বো না আমি, দুটোকেই দেখে নিবো।

—যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।আমি শীঘ্রই আসছি।তুমি নিজেকে একটু শান্ত রাখো।

—হ্যাঁ,এসো।তাড়াতাড়ি এসো।



তিয়াশ রাত্রি আর তার মাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলো।সেখানে রাত্রি আমান সাহেব অর্থাৎ নিজের বাবাকে দেখে অবাক।তিয়াশ রাত্রিকে বুঝিয়ে বলে আজকে রাত্রি নিজের আসল মাকে খুঁজে পেয়েছে যে মানুষটির জন্য সে আর কেউ নয়,তার বাবাই।আমান সাহেব রাত্রিকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা না করলে আজ ওর সাথে আরো ভয়ানক কিছু হতে পারতো।রাত্রি অবশেষে নিজের বাবাকে বুঝতে পারে।

পরের দিন আমান সাহেব তিয়াশ,রাত্রি,
সাথে কান্না রহমানকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।সবার লক্ষ্য আমান সাহেবের স্ত্রী আর তার সঙ্গীকে জব্দ করা,আর তাদের থেকে সমস্ত রহস্যের উদ্ঘাটন করা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here