#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৬
অপূর্ব ভাইয়ের আনা খোলা তেল মামি মাথায় দিয়ে দিচ্ছেন। ঘুমানোর পূর্বে মাথায় তেল দেওয়া রোজকারের অভ্যাস। তেলের ভেতরে দুর্ভাগ্যবশত কেক পরেছে। তেলের প্রতিটি বিন্দুতে কেকের গন্ধ। নানি মা ঠাক্কুর ঠুক্কুর শব্দে পান ছেঁচে চলেছেন। নানি মা চুন তর্জনীতে নিয়ে বলেন, “আজকে তোদের নতুন গল্প শোনাব। গল্পের নাম ‘আলাল-দুলাল দুই ভাই’ বেশ পুরোনো।”
প্রায় দিনেই নানি মা গল্প শোনায়। আমি বাধা দিয়ে বললাম, “আজ আমি গল্প শুনাব, সবাই শুনবে।”
তিস্তা আপু পড়তে পড়তে বলেন, “তুই আর গল্প? আগের গল্পের নাম কি ছিল, জানিস?”
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “আমার তৈরি গল্প। গল্পের নাম, ‘চাঁদের বুড়ির রাম ছাগল।’ বুঝেছ?”
সবাই একসাথে চ্যাঁচিয়ে বলে, “কী? চাঁদের বুড়ি সুতা কা/টে শুনেছি। এখন কী ছাগলও পোষে?”
মামি বিনুনি করে দিলেন। দু’কাধে রেখে বললাম, “শুনেই নাও না, চাঁদের বুড়ি তখন সুতা কাঁ/টা/ত না, খামার করত। খামারে ছাগল পোষে, বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল। তার ভেতরে একটা ছিল রাম ছাগল। দুষ্টু ছাগল। চাঁদের বুড়ি ছাগলের জন্য বিরক্ত থাকত। একদিন ছাগলটা পালিয়ে যায়। দু’দিন বুড়ি খুঁজেও পায় না ছাগলটাকে। প্রচণ্ড রাগে সবগুলো ছাগল বিক্রি করে দিল। তারপরে সুতা কা/টা শুরু করে। গল্প শেষ।” [গল্পটা কালেক্ট করা]
অপূর্ব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নানি মায়ের কোলে শুয়ে পড়লেন। হাতটা মাথায় রেখে বললেন, “পাঁদানিসা গল্প। হাস-কষ কিছু না।”
কোমরে হাত দিয়ে বললাম, “পাঁদানিসা হলো কেমনে?”
“তার নয়তো কী? ছাগল পোষত, ছাগল হারিয়ে গেছে বলে বিক্রি করে দিছে। ছাগলটা কোথায়? ফিরে এসেছে কি-না তাও বললি না।”
“ছাগলটা তো আমার সামনে। সে পৃথিবীতে এসে এখন আমাদের জ্বালাচ্ছে।” সবাই আমার আর অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অপূর্ব ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মুখে হাত দিল। অপূর্ব ভাই গম্ভীর গলায় বললেন, “আমি ছাগলই না, রাম ছাগল?”
“আয়না দিবো দেখবেন।” বলেই মামির কোলে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। অপূর্ব ভাই উঠে চলে গেলেন। পুনরায় হেসে উঠল সবাই। আমাকে বাহবা দিচ্ছে। রাত বাড়ছে। ঘুমানোর জরুরি। আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।
মাথা চুলকাচ্ছে। অতিষ্ঠ আমি। আমার মাথায় উকুন নেই, তবুও এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হওয়ার পর বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মাথা চুলকে উঠে বসতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বালিশে। কিছু চুল পরে আছে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কাঁথা সরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ালাম। গুড়ি গুড়ি লাল পিঁপড়া আর চুল। পিঁপড়া হঠাৎ আমার চুল কেন কা/ট/ল? কখনো তো এমন হয়নি। চুলগুলো নিয়ে ড্রাইনিং রুমে গেলাম। অপূর্ব ভাই রুটি ভিজিয়ে চা খাচ্ছেন আর বলছেন, “গতকাল মিহিরের সাথে দেখা হয়েছিল। আরুকে নিজেদের বংশের দাবি করতে চেয়েছিল।”
সেজো মামা তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, “মাটিতে পুঁ/তে দিলি না কেন?”
ছোটো মামা বলেন, “ফোন করে জানাতি, থর থেকে মাথাটা আলাদা করে দিতাম।”
বড়ো মামা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “থাম তোরা। ঠিকই তো বলেছে, আমরা যতই বলি, আরু আমাদের মেয়ে। আসলে ও আমাদের কেউ নয়। ওর শরীরে মৃধা বাড়ির রক্ত বইছে। আদালতের প্যাঁচে ফেলে ওরা আরুকে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের ক্ষমতা নেই রাখার। তবে আমার বোনের এই পরিণতি তাদের জন্য। কখনো পারুল কথা বলবে না।”
চুলগুলো দেখিয়ে কেঁদে ফেললাম, “দেখো মামি হিন্দু পিঁপড়া আমার চুল কে/টে ফেলেছে। আমি জানি এই কাজটা অপূর্ব ভাই করেছেন। আমি কাল ইঙিয়ে বিঙিয়ে রাম ছাগল বলেছিলাম, তার প্রতি/শো/ধ নিতে হিন্দু পিঁপড়া ধরে এনেছে।”
মামা হেসে ফেললেন। বলেন, “হিন্দু পিঁপড়া কী মা?”
মাথায় হাত দিয়ে বললাম, “ওমা! আপনি হিন্দু পিঁপড়া চিনেন না? লাল পিঁপড়া। ছোটো বেলায় অপূর্ব ভাই বলেছেন, লাল পিঁপড়া হিন্দু, কালো পিঁপড়া মুসলমান, সাদা পিঁপড়া খ্রিষ্টান।’ রাতে বিছানায় পিঁপড়া ফেলে এসেছে, সেগুলো আমার চুল শেষ করেছে।”
“সাদা পিঁপড়া তুই দেখেছিস কখনো?”
“না। অপূর্ব ভাই বলেছেন, ‘খ্রিষ্টান পিঁপড়া খ্রিষ্টানের সাথে থাকে।’ আমাদের এখানে তো হিন্দু আর মুসলমান ছাড়া কেউ নেই, তাই ওরাও নেই।”
সবাই হেসে উঠলেন। অপূর্ব ভাই চা’য়ে চুমুক দিয়ে বলেন, “গতকাল বারণ করেছি, এই তেল না কিনতে। এবার বুঝ? কেকের গন্ধ পেয়ে পিঁপড়া চলে এসেছে। কারণ পিঁপড়ার নাক বড়।”
আমার কষ্টে সবাই দুঃখ প্রকাশ করল। আজকের পর থেকে এই হিন্দু পিঁপড়া দেখলেই মে/রে ফেলল। আমার প্রিয় চুলগুলো কে/টে শ/ত্রুর খাতায় নাম লেখালি তোরা।
___
সময় চারটা বিশ। সূর্য পশ্চিমে হেলে তার তীক্ষ্ণ রশ্মি হালকা হয়েছে। মাটির রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছি আমি তুর ও শেফালী। আজ স্কুলে গিয়েছিলাম। এখন বাড়ির পথে ফিরছি। তুর হাঁটতে হাঁটতে বলে, “ইংরেজি স্যার অনেকগুলো কম্পোজিশন দিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসতে হবে। তাড়াতাড়ি হাঁটা দে।”
দ্রুত পা চালিয়ে বললাম, “আমার স্কুল ভালো লাগে না। প্রতিদিন যদি শুক্রবার হতো। কী ভালোটাই না হতো। বল তোরা?”
বইয়ের ফাঁক থেকে কলমটা পড়ল মাটিতে। শেফালী কলম তুলে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “প্রতিদিন শুক্রবার হলে কী আর হতো? আমরা সবাই গরু হতাম।”
আবার আমাকে প্রিঞ্চ করল। বন্য লতার মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। অসাবধানতায় পা পড়ল একটা মোটা লতার উপর। পরক্ষণেই সাপের মতো ফণা তুলে উঠল। পিছিয়ে গেলাম তিনজনে। বোধগম্য হলো এটা সাপ, লতা নয়। পাতা রঙের বোরা সাপ। সাদাঠোটি বোরা সাপের দেহ মোটাসোটা, মাথার উপরিভাগে ত্রিকোণাকৃতির চ্যাপ্টা আঁইশ থাকে; তুন্ড। গোলাকার লেজ ছোট, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মিটার। মাথার শীর্ষ ও দেহ সবুজ রঙের। পৃষ্ঠীয় আঁইশের নিচের সারির কিনারায় সরু ও সাদা ব্যান্ড। সাপে চোখের নিচে একটি সাদা রেখা থাকে। চোখের নিচের আঁইশ হলুদ। লেজের প্রান্ত দাগ। দেহের নিম্নভাগ ঈষৎ সবুজ হলদে।
আমি শেফালীর হাত চেপে ধরলাম। তিনজনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। আয়াতুল কুরসি পড়ছি। কাঁপা কাঁপা গলায় উচ্চারণ করতে পারছি না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সাপটা কিছুক্ষণ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থেকে চলমান হলো। পাশের ডোবাতে নেমে গেল। পরক্ষণেই আমরা তিনজনে সর্বশক্তি দিয়ে ছুটলাম। ভয়ে ছুটছি। বন্য লতার মাঝে যদি অন্য কোনো বিষধর সাপ লুকিয়ে থাকে। পারলে পা খুলে হাত নিয়ে ছুটতাম।
আমাদের ঘরের পিছনে অনেক আমগাছ। তবে একটা বড়ো আমগাছ। শীতকালেও যাতে আম ধরে। মামি আম আর চালতা কা/ট/ছে। আমাদের ছুটে আসা দেখে উত্তেজিত হয়ে গেলেন। অসাবধানতায় আঙুল কে/টে ফেললেন। অপূর্ব ভাই বন্য লতা চিবিয়ে হাতে দিয়ে দিলেন এক ধমক, “এখানে কী শিরনি দিচ্ছে যে বাটি নিয়ে ছুটে আসছিস? দেরি হলে পাবি না। এসে সেই দোলনায় চড়ে বসে থাকবি। বয়সেই বেড়েছিস। আর একদিন যদি দেখি ঘোড়ার মতো ছুটে আসছিস। বেত গাছের কাঁটা দিয়ে আচ্ছা করে পে/টা/ব। বলে রাখলাম।”
হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, “সাপ। বোরা সাপ।”
মামি বিচলিত হয়ে বললেন, “কোথায়? তোদের ছো/ব/ল দেয় নি তো?”
“না মামি। আমি ভুলে পা ফেলেছিলাম।”
তিয়াস ভাই ব্যঙ্গ করে বললেন, “চোখ আকাশে রেখে হাঁটলে তো পা পরবেই। তোদের যে খেয়ে ফেলেনি, এটাই বেশি। শুকরিয়া কর।”
নাক ফুলিয়ে মনে মনে বললাম, ” তিয়াস নয়, তিন হাঁস। হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করে।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৭
“অপূর্ব ভাই, সাপটা আমাদের খেয়ে খেলবে এটা সিউর। সাপকে কেউ আঘাত করলে, সাপ তাকে পাল্টা আঘাত করবেই।” আঙুল তুলে সিরিয়ার ভঙ্গিতে বললাম। ততক্ষণে তুর শেফালী এসে দাঁড়িয়েছে। চালতায় ভাগ বসিয়ে বলে, “দাদি মা গল্পে বলেছেন, একজন পুরুষ একটি সাপের লেজ কে/টে ফেলেছিল। সে সোনার সিন্দুকে লুকিয়েও বাঁচতে পারে নি। সাপ ঠিকই ছো/বল দিয়েছে।”
তুর বলে, “আজ আমরা তিনজন বড়োদের সাথে ঘুমাব। সাপ যদি আমারে ছো/বল দেয় তখন?”
আমরা বইখাতা রেখে পোশাক নিয়ে অগ্রসর হলাম দিঘির দিকে। ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে মামি আধ গ্লাস খেজুরের রস খেতে দিয়েছিলেন। শীত লাগবে না, বরং গরম লাগছে। তাই গোসল করতে গেলাম। পাড়ে পোশাক রেখে পানিতে নামলাম। আমাদের হাঁসগুলো চক বেঁধে সাঁতার দিচ্ছে।
কাঁদার ভেতরে পায়ে বাঁধল কিছু। একটু নুয়ে হাতের স্পর্শে অনুভব করলাম কী? ব্যর্থ! হাতে নিয়ে ভেসে উঠলাম। হাতের ডিম। অন্যহাতে শেফালীর দিকে পানি ছুড়ে বললাম, “দেখ ফালি, পানিতে হাঁসের ডিম।”
তুর শেফালী একসাথে সাঁতার দিয়ে আমার নিকট এলো। ডিমগুলো নিয়ে বলে, “সত্যি তো, কিন্তু হাঁসের ডিম পানিতে কেন?”
তুর ভয়ে ভয়ে বলে, “এটা সাপের ডিম না-তো?”
আমার হাত রীতিমতো কাঁপছে। ডিমগুলো হাত ফসকে পরার উপদ্রব হলো। চ্যাঁচিয়ে বললাম, “সাপের ডিম পেয়েছি, কে কোথায় আছো এদিকে এসো।”
ওদিকে দোলনার দিকে বসে আছে সবাই। আমার চিৎকারে ছুটে এলো। গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে হাত উপরে তুলে বললাম, “দেখো, সাপের ডিম।”
“নিয়ে আয়।” বলে মামি দু সিঁড়ি নিচে নামল। শেফালী ডিম নিয়ে গেল। পর্যবেক্ষণ করে বললেন, “এটা হাঁসের ডিম। ঠ্যাঁং ভাঙা হাঁসটা প্যাক প্যাক করে ডাকছে। এদিকে আমি আশায় আছি ‘কবে ডিম দিবে’ ওদিকে পানিতে ভেসে ভেসে ডিম পাড়ছে। ডুব দিয়ে দেখ তো, আর আছে কি-না।”
আমি ডুব দিয়ে চারটা ডিম পেলাম। সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বেই একটা সাপ দেখতে পেলাম। জমে গেলাম পানিতে। ঠান্ডার চেয়ে ভয়ে হাঁটু কাঁপছে। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে অস্ফুট স্বরে বললাম, “মামি, দেখো ঐ সাপটা আমাকে ছো/বল দিতে হাজির হয়েছে। আমাকে বাঁচাও। বিশ্বাস করো, আমি ইচ্ছে করে চাপা দেই নি।”
কাকতালীয় ভাবে সাপটা আমার চারপাশেই ঘুরঘুর করছে। শেফালী তুর দু’জনে উপরে উঠে গেছে। উচ্চশব্দে কেঁদে উঠলাম আমি। মামি চিৎকার করে বললেন, “আরে পা/গ/ল, এই সাপে ছো/বল দিলে কিছু হবে না। তুই যেটাকে চাপা দিয়েছিস, সেটা বোরা সাপ। এটা গোবুরে সাপ।”
আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম। হ্যাঁ! এটা গোবুরে সাপ। গোবরে এদের বসবাস। এদের বিষ গোবরে থাকে। কাউকে ছোবল দিলে কোনো রুপ ক্ষতি হয় না, তবে গোবরে পরলে বিষ শরীরের প্রবেশ করে। আমরা যেহুতু গরু পুষি, সেহেতু গোবরের স্পর্শ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বোরা সাপটা নির্ঘাত গোবুরে সাপকে পাঠিয়েছে। চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। পানির শব্দ পেলাম। তাকাতেই নিবদ্ধ হলো অপূর্ব ভাইকে। পানিতে নেমেছেন তিনি। সাপটা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভয়টা দৃঢ় হলো। তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত হওয়ার উপায় নেই। অপূর্ব ভাই একদম নিকটে এলেন। তাড়া দিয়ে বললেন, “তাড়াতাড়ি চল।”
“না, সাপে পা পড়বে। আমাকে খেয়ে ফেলবে।”
“বলছি তো, চল। কিছু হবে না।”
“না! আমি আপনার কথা শুনব না।” অপূর্ব ভাই ঠোঁট চেপে অন্যদিকে তাকালেন। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। ভয় লাজ লজ্জা সবকিছু পিছু ঠেলে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আচমকা ঘটা ঘটনায় তাজ্জব বনে গেলাম আমি। অপূর্ব ভাই কাঁধ জড়িয়ে ধরলাম। অস্ফুট স্বরে বললাম, “সাপে ছো/বল দিলে?”
“তোর পা আর পরছে না। দিলে আমাকে দিবে, আমি সয়ে নিবো।” বলেই অগ্রসর হলেন। তার মুখ মণ্ডলে ছিটে আসা জলকণা গুলো সূর্যের হালকা রোদ্দুরে চিকচিক করে উঠছে। কিছুটা পিঞ্চ করে বললাম, “অপূর্ব ভাই ধরুন, সাপটা আপনাকে ছো/বল দিল। অতঃপর আপনি আমাকে ছুঁয়ে দিলেন। আপনি তো আমাকে গরু বলেন। বলেন আমার মাথাটা গোবরে ভর্তি। মাছি ভনভন করে। সেই গোবরের থাকা সাপের বিষে আপনি মা/রা যাবেন।”
“তুই তো শান্তি পাবি।” কথাটা হৃৎপিণ্ডে আঘাত হানল। তার মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত হলাম।
___
চাঁদের স্নিগ্ধ আলো পতিত হচ্ছে পৃথিবীতে। আজ নয় জ্যোস্না, তবুও আলোকিত। অর্ধ চন্দ্র। অবেলায় ভিজে হালকা ঠান্ডা লেগেছে অপূর্ব ভাইয়ের। মামি আদা দিয়ে কড়া এক কাপ চা করে দিয়েছেন। চায়ের চাপ নিয়ে হাজির হলাম অপূর্ব ভাইয়ের ঘরে। সবকিছু গোছগাছ করা। আগামীকাল তিনি চলে যাবেন। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম। অতঃপর চায়ের কাপ রাখলাম। অপূর্ব ভাই ওয়াশরুমে আছেন। পানির শব্দ শুনা যাচ্ছে। বিছানার পাশে টাকার থলে। ভেতরে অনেক টাকা। নিঃশব্দে দুইশত টাকা লুকিয়ে রাখলাম। অপূর্ব ভাই পেছন থেকে ডেকে উঠলেন। “ওখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস?”
টাকার ব্যাগটা রেখে আমতা আমতা করে বললাম, “কিছু না। এমনি দেখছিলাম সবকিছু।”
অপূর্ব ভাই ব্যাগ সরিয়ে রেখে বললেন, “সরাস নি তো?”
“না।”
“সিউর?”
“হম।”
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন, “কাল ফিরে যাচ্ছি। বেশ কয়েকদিন থাকলাম। এবার যেতে হবে।”
ফট করে বললাম, “সুজন স্যার আমাদের আর পড়াবেন না? তিনি যে আসছেন না।”
“ফেব্রুয়ারি থেকে পড়াবে। পৌষ মাস। ধান আছে, ক্ষেতে সবজি ফলন। তুই আজকাল তার খবর নিচ্ছি? ব্যাপার কী বল তো?”
“কী যে বলেন আপনি? এখন থেকে প্রচুর পড়তে হবে।”
অপূর্ব ভাই বিছানায় রাখা এক গাদা কাগজ সামনে রাখলেন। চট করে বুঝে ফেললাম এগুলো কী? বর্ষ পরীক্ষার খাতা। গম্ভীর গলায় বললেন, “তোর সব খাতা। দেখব কী লেখেছিস।”
মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলাম। ঘরে গিয়ে খুলে বললাম সবটা। তুর একটু রাগান্বিত হলো। তার ভাইয়ের টাকা নিয়েছি বলে। তবে শেফালী সেই খুশি। গার্ডদের দিয়ে তিনটা মোজো আর বিস্কুট, কেক, চানাচুর এনেছি। ওড়নাটা কোমরে বেঁধে মা/তা/লের মতো অভিনয় ধরে গান ধরলাম,
“মুই এক নে/শা-খোর
ভাইয়ের টাহা, চু/রি হইরা
মুই হইছি যে চো/র! চো/র! চো/র!
মুই এক নে/শা খোর!”
“কত টাকা চু/রি করেছিস?” বাক্যটা কর্ণপথে শ্রবণ হওয়া মাত্র থেমে গেলাম। কোমর থেকে ওড়না খুলে দাঁড়ালাম। কাঁচুমাচু করে বললাম, “এটা তো গান। কাবিলা গেয়েছিল।”
অপূর্ব ভাই একটা পানি ভর্তি জগ টেবিলে রেখে বললেন, “সাত মিনিটের মাথায় পানি টুকু শেষ করবি। এক ফোঁটা পানিও যাতে জগে না থাকে।”
“আমি কী করেছি?”
“প্রথমত, আমার কাছে পাঁচ হাজার তিনশত আঠাশ টাকা ছিল। দুইশত টাকা নেই। গেল কোথায়?”
কাঁচুমাচু করে ওড়না টেনে অকপটে উত্তর দিলাম, “আমি জানি কোথায়?”
“চুপ! ভয় করে না তোর? দ্বিতীয়, তোর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ খাতা দেখেছি। প্রশ্নে লেখা ‘মাথা পিছু আয় কাকে বলে?’ উত্তরে লিখেছিস, ‘যাদের মাথা পিছনে। এক কথায় বিকলাঙ্গ। তারা যা আয় করে তাকে মাথাপিছু আয় বলে।’ এবার কী বলব তোকে বল?”
অস্ফুট স্বরে বললাম, “মাথা মানে মাথা। পিছু মানে পেছনে। আয় মানে উপার্জন। অর্থাৎ মাথা পিছনে থাকা মানুষের আয়।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৮
টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পরছে। লেপ্টে পরিণত হচ্ছে বিশাল জলধারায়। বাতাসের ‘শোঁ শোঁ’ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বই নিয়ে পড়তে বসেছি। সামনে অপূর্ব ভাই বসে গোছগাছ করছেন। আগামীকাল চলে যাবেন। হাঁচি দিলাম অতঃপর জানালার বাইরে দৃষ্টিতে নিবদ্ধ করলাম। অপূর্ব ভাই পরক্ষণেই ধমকে উঠলেন, “তুই কি ভালো হবি না? পড়ছিস, কিন্তু ঠোঁট নড়ছে না। মুখে কি কাঁঠালের আঠা লাগিয়েছিস? কী চাস, বল। আমাদের পরিবারের মানসম্মান ডুবাতে চাস?”
“হা.. হা.. হাচ্চু।” অতঃপর সর্দিতে মুখমণ্ডল মেখে একাকার অবস্থা হলো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাক মুছতে গেলে বিপরীত হলো। আরও মেখে ফেললাম। পৃষ্ঠা ছিঁ/ড়ে নাক মুছলাম। অপূর্ব ভাই কড়া হুংকার দিলেন, “সিলেবাসটা কি তোকে নাক মুছতে দেওয়া হয়েছে? ইচ্ছে করছে ঠাস করে দু গালে চারটা লাগিয়ে দিতে।”
কাঁপা কাঁপা হাতে পৃষ্ঠা দেখলাম। সিলেবাসের ‘৬’ পৃষ্ঠা ছিঁ/ড়েছি। নখ দিয়ে দাঁত কাটতে কাটতে বললাম, “ধুয়ে নিয়ে আসি?”
“হ্যাঁ! এটা তো পোশাক। ধুলেই উঠে যাবে।
আগামীকালের কাজ সিলেবাসের এই পৃষ্ঠা হাতে লিখে নিয়ে আসবি।” বলেই অপূর্ব ভাই চলে গেলেন। আচ্ছা পুরো সিলেবাস লিখব? নাকি এই এক পৃষ্ঠা? ভাবতে ভাবতে আরও একটা পাতা ছিঁড়ে ফেললাম। ভাঁজে ভাঁজে আনমনে কাগজের নৌকা তৈরি করলাম। পরপর তিনটা নৌকা তৈরি করলাম। যখন চেতনা ফিরল তখন নৌকা খুলতে ইচ্ছে করল না। তুর ও শেফালী আছে, সমস্যা নেই। বাইরে বিরতিহীন ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। নৌকাগুলো ভাসাতে হবে। ভাসানোর পূর্বে আমার পড়ায় মন বসবে না। নৌকা তিনটা হাতে নিয়ে উঁকি দিলাম বাইরে। কেউ নেই। চঞ্চল পায়ে নেমে গেলাম নিচে। আমাদের বাড়ির পুরনো ল্যান্ডফোনটা বেজে চলেছে। বৃষ্টি ও হাওয়ার শব্দে ল্যান্ডফোনের ‘কিলিং কিলিং’ শব্দ শোনা বড্ড মুসকিল। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলাম। সালাম বিনিময় করে বললাম, “এতরাতে ফোন করেছেন, কে বলছেন?”
ভেজা গলায় ওপাশ থেকে বলে, “আমি প্রয়াস।”
“কোন প্রয়াস?”
ছেলেটি বাক্য হারিয়ে ফেলল। সময় নিয়ে ইতস্তত করে বলে, “তিস্তার হবু স্বামী। আমি একটু আপনাদের গ্ৰামে এসেছি। হঠাৎ বৃষ্টির কবলে পড়ে গ্ৰামে আটকে গেছি। আপনাদের বাড়িতে আজকে রাতটা থাকতে পারি।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। চলে আসুন।”
“বাইরে প্রচুর শিলাবৃষ্টি। ঝড়োহাওয়ার বইছে। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। একটা গাড়ির ব্যবস্থা করা যাবে?”
“বড়োদের বলে, ব্যবস্থা করছি। আপনি ঠিকানাটা বলুন।” প্রয়াস ভাই ঠিকানা বলতেই ফোন রেখে দিলাম। অগ্রসর হলাম মামার ঘরে। তাকে জানিয়ে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। মাঝপথেই দেখা পেলাম অপূর্ব ভাইয়ের। মামার ঘর থেকে ফিরছেন তিনি। আমাকে দেখামাত্র চোখ রাঙালেন। রাগান্বিত গলায় বলেন, “তোর শরীর কি গন্ডারের চামড়া দিয়ে তৈরি আরু। গন্ডারের চামড়ায় আঘা/ত করলে সাতদিন পর সে বুঝতে পারে তাকে আঘা/ত করা হয়েছে। কিন্তু তোকে এক যুগ বুঝালেও সাধারণ কথাটা বুঝিস না।”
“তারমানে এক যুগ বুঝব না, এক যুগ পর বুঝব।” বলেই ছুটে গেলাম ঘরে। হাত থেকে সেখানে পরল তিনটা নৌকা। ভাসানো হলো না জলে।
__
“আরু, তুমি তো বলেছিলে গাড়ি পাঠাবে। কিন্তু পাঠালে না। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছে। জ্বরে ম/রে গেলে তিস্তার বিয়ে কার সাথে হবে?”
ঠান্ডায় আরামসে ঘুমাচ্ছি। প্রয়াস ভাইয়ের কথা মনে হানা দিল। বাজ পড়ল মাঝরাতে। ভয়ে উঠে বসলাম। অপূর্ব ভাইয়ের কারণে তখন বিস্মৃতি হয়েছে সেই সময়ে প্রয়াস ভাইয়ের কথা। নিশ্চয়ই আমার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। পুরো বাড়ি আঁধারে আবৃত। এগিয়ে গেলাম ল্যান্ড ফোনের নিকট। বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন তার হিসাব নেই। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন করলাম। অবিলম্বে রিসিভ হলো। আমতা আমতা করে বললাম, “আপনি এখনো সেখানে আছেন ভাইয়া?”
তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “হ্যাঁ আপু। গাড়ি পাচ্ছি না। অর্ধেক ভিজে গেছি। গাড়ি পাঠিয়েছেন?”
প্রত্যুত্তর না করে কল বিচ্ছিন্ন করলাম। নতজানু হয়ে আলতো করে শ্বাস নিলাম। আমার জন্য তার এই অবস্থা। বারান্দা জুড়ে পায়চারি করলাম। ‘কোথায় যাবো? কী করব?’ বুঝতে পারছি না। তিয়াস ভাইয়ের ঘরে গেলাম। দরজায় করাঘাত করে বললাম, “তিয়াস ভাই। তিন হাঁস ভাই। তালে আঁশ ভাই। শুনছেন? একটু দরজাটা খুলুন।”
ভাইয়ের কোনো ভাবাবেগ শোনা গেল না। ঠান্ডার ভেতরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তিনি। অপূর্ব ভাইয়ের কাছে যাওয়ার সাহস নেই। ঘর থেকে ডাট ওয়ালা ছাতা নিয়ে বের হলাম। আমাদের বাড়িতে একটা তালাবদ্ধ সাইকেল আছে। সেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আশেপাশে কাক পাখির ছায়াও নেই, জনমানব তো দূরের কথা। হিম হাওয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে লোমকূপ। ভীত হলাম তবে জমে গেলাম না। পৌঁছে গেলাম সেখানে। আমাদের টিনের তৈরি প্রাইমারি স্কুল। ছিল ভাঙাচোরা। বর্তমানে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলায় পড়াশোনা চলছে। সাইকেল গাছের সাথে ঠেস দিয়ে রেখে ছুটে গেলাম ভেতরে। ভেজা বেঞ্চিতে দু’পা তুলে কুঁজো হয়ে বসে আছে। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম, “প্রয়াস ভাই, আপনি ঠিক আছেন।”
উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন, “তারমানে তুমি। তুমি রিসিভ করেছিলে। এতক্ষণ লাগল তোমার আসতে। ভিজে কাক ভেজা হয়েছি। জ্বরে কতদিন ভুগতে হয়, কে জানে?”
স্মিত হেসে বললাম, “স্যরি। একদম ভুলে গেছি। আমি সাইকেল এনেছি। ছাতা ধরুন।”
পাশ দিয়ে একটা ট্রলি গাড়ি অতিক্রম করছে। ইট নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেখে শিষ দিল। কয়েক জন ছেলে বলে, “তোমাদের কাজ চালিয়ে যাও। বৃষ্টির রাত বলে কথা।”
রাগান্বিত হলাম তৎক্ষণাৎ। তড়িৎ কণ্ঠে বললাম, “অ/সভ্য-র দল। রাস্তায় কাউকে না চিনেই উদ্ভর কথা বলছেন।”
গাড়িটা হঠাৎ থেমে গেল। একদল ছেলে বেরিয়ে এলো। সেই ছেলেদের মাঝে আমি খুঁজে পেলাম ‘মিহির’ নামক মৃধা বাড়ির ছেলেটিকে। ছাউনির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। পানি ঝাড়া দিতে দিতে বলে, “তোরা এতরাতে এখানে কী করছিস?”
নতজানু হয়ে বললাম, “প্রয়াস ভাইকে নিতে এসেছি। তিনি আমাদের তিস্তা আপুর হবু বর। বাড়িতে সবাই ঘুমাচ্ছে, কাউকে ডাকার সাহস হয়নি। তাই আমিই এসেছি।”
“সাহায্য না চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে বাড়িতে পৌঁছে যাবি?” বলে ছেলেটি ইশারা করল ট্রলির দিকে। আহ্বান করল যাবার। ভয় ভয় ঠেকছে। বিশ্বাস করতে বড্ড ইচ্ছে করছে। প্রয়াস ভাই বললেন, “আরু, তুমি কি তাদের চিনো?”
কাশি দিয়ে বললাম, “জি-না। তবে তিনি মৃধা বাড়ির ছেলে। আমাদের শ/ত্রু।”
“আমি কারো শত্রু নই। তোর তো প্রশ্নই উঠে না। চল বাড়িতে পৌঁছে দেই।” মিহির আমার হাত ধরলেন। টানতে টানতে উঠলেন গাড়িতে। প্রয়াস ভাই নিজেও উঠলেন গাড়িতে।
পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। বাড়ির ভেতরে গেলাম। অপূর্ব ভাইয়ের বারান্দায় ছায়ামূর্তি দেখতে পেলাম। ড্রয়িং রুমে অপূর্ব ভাই চেয়ারে বসে আছেন। ধৈর্যহীন হয়ে বললাম, “অপূর্ব ভাই আপনি উঠে গেছেন?”
প্রয়াস ভাইকে দেখে কিছু বললেন না। গম্ভীর গলায় বললেন, “তুমি আমার ঘরের যাও। ওখানে ওয়াশরুম আছে। আমি আসছি। জামা কাপড় বদলে নাও।”
আঙুল দিয়ে দোতলায় তার কক্ষটি ইশারা করলেন। প্রয়াস ভাই মাথা নেড়ে চলে গেলেন। পরক্ষণেই অপূর্ব ভাইয়ের ভয়ংকর মুখটি দর্শন করলাম। রক্তিম চোখজোড়ায় বড্ড তেজ। তার শক্তপোক্ত হাতটি তড়িৎ গতিতে আমার গালে আঘা/ত হানল অগ্নিরুপে। চোখজোড়া ছলছলিয়ে উঠল যেন। উচ্চ কণ্ঠে বললেন, “এতরাতে বাড়ির বাইরে এক পা ফেলার সাহস কে দিয়েছে তোকে?”
নতজানু হয়ে ওড়না খামচে নিলাম। চোখজোড়া সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। অপূর্ব ভাই দ্বিগুন তেজ নিয়ে বললেন, “কিছু জিজ্ঞাসা করছি। কথা বল। বল বলছি। নাহলে একদম মুখ ভে/ঙে ফেলব।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]