#কলঙ্ক
#৮ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
মেয়েটি আমায় কিছুই বললো না । হেসে হেসে আমায় পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। তবে ওর এই চলে যাওয়াটাই আমায় আরো বেশি কষ্ট হলো।মনে হলো ওর এই হাসিটা স্বাভাবিক কোন হাসি নয়। এই হাসিটা রহস্যের।এই হাসিটা ও হেসেছে আমার প্রতি ঘৃণা ছুঁড়ে দিতে।ও আমার সামনে দিয়ে হেসে যেতে যেতে আমায় এটা বুঝিয়েছে যে আমি হাসার পাত্র।আমায় দেখে মানুষ এমনিই হাসবে।এটাই বরং স্বাভাবিক!
‘
আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ানক রকমের শকডটা খেলাম আমি।ঘরটা বাইরে থেকে লক করা।প্রতিটা রুমে দুজন করে থাকে এখানে। আমার রুমে থাকতো এলিজা।এলিজা কী এই রুম ছেড়ে দিয়েছে? ছেড়ে না দিলে তালাবদ্ধ কেন?
তারপর মনে হলো কী সব আবোল তাবোল ভাবছি আমি।ও হয়তো কোথাও গিয়েছে।আর কোথাও গেলে তো ঘরে তালা লাগিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক!
‘
এই হোস্টেলটা অনেক শৃঙ্খল বদ্ধ।যা হবে ঘরের ভেতরেই।মেয়েরা আড্ডা মারুক আর ঝগড়া করুক সব রুমের ভেতরে। বাইরে কোন কিছু না।এমনকি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলেই মেয়েরা বারান্দায় নামে এ ছাড়া সব সময় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকে।
আমি তখনও দাড়িয়ে আছি আমার ঘরের সামনে। এখন ক্লান্তি লাগছে। মাগরিবের আজান পড়ে যাবে যাবে মনে হচ্ছে।ঘড়ি দেখেছি।এক ঘন্টা তেত্রিশ মিনিট ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।নড়ছিও না ভয়ে।কেউ দেখে ফেলে যদি ওসব কথা জিজ্ঞেস করে বসে তাই!
হাতে যে ফোন আছে সেই ফোনের দুটো সিম কার্ডই নতুন। পুরনো সিমকার্ড নষ্ট করে ফেলেছি। আমার ভয় ছিল যে কেউ যদি ওই নম্বরগুলোতে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে এসব ব্যপারে। হোস্টেলের ওরাও তো জিজ্ঞেস করতে পারতো। তখন কী উত্তর দিতাম আমি? তাছাড়া ঢাকায় ফেরার কোন আশাও ছিল না আমার।মনে মনে বাবা মার সিদ্ধান্তই মেনে নিয়েছিলাম। এতো দিনে অন্যের ঘর সংসার সামলাতাম। হয়তো এখন এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে চুলোর ভেতর লাকড়ি গুঁজে দিতাম। চুলোর ঝাঁজালো ধোঁয়া সহ্য করতে না পেরে একটু পর পর খুক খুক করে খাশতাম!
‘
এতোক্ষণ যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। আমার রুমের পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো সেই মেয়েটি যে আমায় হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল।ওর নাম পিয়া।পিয়া আমায় দেখে যেন একটা ধাক্কা খেলো। তারপর এক গাল হেসে বললো,’আরে দোস্ত তুই!আমি কী সত্যি দেখছি না মিথ্যে?বল বল,সত্যি সত্যি তোকে দেখছি?ইউ আর তূর্ণা, বেইবি?’
আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। এবং দুঃখও হচ্ছে আমার।কথা বলতে পারছি না।কী বলবো না বলবো বুঝতে পারছি না।তাই আঙুল কুটছি। এমন হয় প্রথম প্রেমের বেলায়। প্রেমিকের প্রথম কথায় কোন উত্তর করতে না পেরে সব মেয়েরাই আঙুল কুটে।বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু আমার হলো উল্টো।আমি একটা পরিচিত মেয়ের সামনেই এমন করছি।
পিয়া শব্দ করে হাসলো। তারপর আমার চোখের সামনে ওর হাত এ পাশ ও পাশ নাড়িয়ে বললো,’কিরে কথা বলছিস না কেন?ঘুমোচ্ছিস?ওহ সরি!তুই তো আর হরস না যে এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাবি!তুই হলি মানুষ।মানুষেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোতে পারে না। তবে প্রেমিকের গায়ের সাথে মিশে গেলে পারে।চার টেঙে দাঁড়িয়ে ঘুম। আহ্ কী আরাম!’
আমার চোখ জলে ভিজে উঠেছে।কান্না পাচ্ছে ভীষণ। ইচ্ছে করছে ফিরতি ট্রেনটা ধরে সোজা বাড়ির দিকে ছুটে যেতে। ওদিকে এলিজাও আসছে না।
পিয়া আমার জলভরা চোখ দেখে বললো,’ওমা, চোখে যে জল এসে গেল একেবারে বেচারির!এই আমি কী তোকে মন্দ কিছু বলেছি রে?আমি কী বলেছি, তুই একটা ছেলের সাথে সেক্স করে প্রেগন্যান্ট হয়েছিস?বলেছি এসব? তারপর আবার এবরোশন করে হাত পা চোখ হার্ড নাক কান মুখ হয়ে যাওয়া একটা বেবিকে কসাই ডক্টর দিয়ে খুন করিয়েছিস!বলেছি?’
আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,’প্লিজ পিয়া আমি তোর দুটো পায়ে পড়ি!তুই আমায় এভাবে লজ্জা দিস না!প্লিজ পিয়া প্লিজ!’
আমি কাঁদছি। মুখে ওড়না চেপে ধরে কাঁদছি।আর মনে মনে ভয় পাচ্ছি কেউ যদি হঠাৎ এসে দেখে ফেলে এভাবে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছি!
ভেবেছিলাম আমায় এভাবে কাঁদতে দেখে পিয়ার মায়া হবে।সে হয়তো আমায় সান্তনা দিবে। আমার সাথে আর দূর্ব্যবহার করবে না। কিন্তু এসবের কিছুই করলো না সে। মুখটাকে কেমন ভেংচি কেটে সে তার ঘরের দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলো আমার মুখের উপর দিয়ে।আমি বোকার মতো ওর বন্ধ করা দরজার দিকেই তাকিয়ে রইলাম।
‘
দীর্ঘ তিন ঘণ্টা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর এলিজার নাগাল পেলাম। এলিজা আমার জুনিয়র। অবশ্য ডিপার্টম্যান্ট আলাদা।আমি পড়ি ইংরেজিতে।আর ও পড়ে ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।ও আমায় দেখেই দূর থেকে ফিক করে হেসে উঠলো।ওর হাসি দেখেই আমার ভেতর ভয় জেগে উঠলো।মনে হলো এলিজাও আমায় নিয়ে মজা করে হাসছে।আমি যে ওদের কাছে ঘৃণার পাত্র তা হাসি দিয়ে দিয়ে ওরা বুঝিয়ে দিচ্ছে আমায়!
এলিজা কাছে আসছে আর ওর হাসি বাড়ছে।মনে মনে নিজেকে আমি স্থির করে নিচ্ছি।পিয়া একটু আগে অনেক কিছু বলেছে। এখন বলবে এলিজা। আমাকে শুনতে হবে।আর হজম করে ফেলতেও হবে এসব। আমাকে কোন উত্তর দেওয়া যাবে না। আমার কান্না পাচ্ছে।আমি কী করে এই হোস্টেলে দিনগুলো পাড় করবো?একটা দিনই তো আমার কাটবে বলে মনে হচ্ছে না! এরচেয়ে তো বিয়ে করে অন্যের ঘর সংসার সামলানোই ভালো ছিল! ভাইয়ার কথা মানা আমার মোটেও উচিৎ হয়নি! ভুল করেছি আমি। আরেকটা বড় সড়ো ভুল করে ফেলেছি আমি!
‘
#চলবে