কল্পনায় হলেও শুধু আমারি থেকো💖 পর্ব ১

–তোমায় বিয়েটা করতে হবে। আর শুধু মাত্র আমাকে একটা বাচ্চা দেওয়ার জন্য। ২ বছরের সংসার হবে আমাদের।
২ বছর পর বাচ্চা কে ছেড়ে তোমাকে চলে যেতে হবে।
আমানের কথায় মেঘ ছোটাছুটি বন্ধ করে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,
আমান গিয়ে মেঘের মুখের বাঁধন টা খুলে দেয়,
–কি মনে করেন নিজেকে?খুব বড়ো মানুষ আপনি? যা বলবেন তাই শুনতে হবে আমায়?
–হ্যাঁ শুনতে হবে কারন এখন আর তোমার কাছে কোন উপায় নেই।
আমানের কথায় মেঘ মেঘ অবাক দৃষ্টিতে তাকায় আমানের দিকে,
–মিসেস.আমান খান, আপনার পরিবার আমার কাছে বন্দী আছে।
আপনার বাবা-র হার্ট এটাকের বিষয় টা ত আপনি জানেন।
আপনার বাবার চিকিৎসা বন্ধ আছে।
আপনার ছোট্ট বোনটা আর আপনার মা আমাদের কাছেই আটকা আছে।
ওদের ৩ জনের জীবন আপনার কাছে।
আপনি রাজি হলেই শুধুমাত্র তারা বেঁচে থাকতে পারবে।
না হলে না।
–আমি আমার বাবাকে বাঁচিয়ে নিবো ছাড়ুন আমাকে
পারলে আমায় এই বন্দী দশা থেকে মুক্তি করে দেখান। তার পরে বলুন।
–ও মিসেস.খান OK. I will set you free but only for one day.
I promise you will come back to me exactly one day later. .
আমান বাঁকা হেসে কথাগুলো বললো।
মেঘর আমানের এই বাঁকা হাসি বিন্দু মাত্র সহ্য হচ্ছে না।
ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহুর্তে এই মানুষ টাকে মেরে ফেলতে।
আমান মেঘের হাত খুলে দেয়,
মেঘ ছাড়া পেয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
সাদা থ্রি পিচ পরা চুল এলোমেলো করা মেয়েটার ওড়না টা পুরো সামনে দিয়ে বিছিয়ে গেছে
মেয়েটার দৌড়াচ্ছে যার জন্য পেছনের কোন কথাই তার কানে আসছে না।
মাথার মধ্যে শুধু একটা চিন্তা ব্যাঙ্কে পৌঁছাতে হবে।
বাবার জন্য মায়ের করা ডিফিএজ টা ভেঙে বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে হবে।
মেঘ দৌড়ে তাদের একাউন্ট করা ব্যাঙ্ক এ আসে।
দৌড়ে আসতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে।
জায়গাটা নির্জন ছিল।
তবে মেঘের চেনা ছিল সেই জন্য ই সে দৌড়ে আসতে পেরেছে।
ব্যাঙ্কে এসে,
— Excuse me.
–yes mam. may I help you?
–আমার মায়ের নাম মাহিমা রহমান৷
ওনার নামে একটা ডিফিএজ ছিল যার অধিকারি হিসাবে আমার নাম ছিল।
সেটা এই মুহুর্তে ভাঙতে হবে।
প্লিজ।
–ম্যাম নামটা আবার বলুন।
–মাহিমা রহমান।
–ছবি ম্যাম ওনার এই টাকাগুলো আমরা গত ৩ দিনের মধ্যে ওনাকে দিতে পারবো না।
–কেন?
–উপর থেকল ওর্ডার আছে। এটা পারবো না আমি।।
–কিন্তু আমার বাবার জীবন মরন প্রশ্ন।
–হতে পারে কিন্তু ম্যাম পারবো না।
মেঘ অনেক চেষ্টা করেও কাজ টা করতে না পেরে হসপিটালে চলে আসে,
মেঘের বাবার অবস্থা ভিশন খারাপ।
–ম্যাম এই মুহুর্তে টাকা জমা না দিলে আপনার বাবাকে বাঁচানো সম্ভব না।
মেঘ অসহায় হয়ে বসে পরে।
এক দিকে তার মা আর বোন আটক।
অন্য দিকে তার বাবার চিকিৎসা আটকে আছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না মেঘ।
চারিদিকে ঘুরছে সব কিছু।
হসপিটালের একটা বেঞ্চে বসে পরে মেঘ।
মেঘের সামনে এখন মাত্র একটা রাস্তা খোলা।
চোখের কোনে জমে থাকা বিন্দু পানি কনা মুছে মেঘ আমানের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে পায়ের ব্যাথা নাড়া দিয়ে ওঠে।
এতো সময় তিরাশে তিরাশে অনেকটা পথ হেঁটেছে আর চলছে ন পা দুটো।
সাথে থাকা ব্যাগ টাও পরে গেছিল রাস্তায়।
মেঘ মাথা নিচু করে কাঁদছে হটাৎ তার সামনে তার চোখের পানির উপর হাত রাখে এক ব্যাক্তি।
মেঘের চোখ থেকে নির্গত পানির ফোঁটা লোকটার হাতে গিয়ে পরে,
মেঘ মাথা তুলে তাকায়,
সামনে আর কেউ না আমান দাঁড়িয়ে আছে,
–পেপার রেডি আছে সাইন করে দেও।
–আগে আমার বাবাকে ফেলে না রেখে চিকিৎসার জন্য পাঠান।
–সাইন করলে তবে সব হবে।
মেঘ চোখ বন্ধ করে সামনে থাকা পেপার টায় সাইন করে দেয়।
অপারেশন থিয়েটার এর আলোটাও জ্বলে ওঠে।
আমান মেঘের হাত ধরে এক পাশে নিয়ে আসে।
সেখানে উপস্থিত হয় মেঘের মা আর ছোট বোন।
ওদের দেখে ওদের কাছে যেতে চায় মেঘ।
আমান মেঘের হাতটা আঁটকে ধরে।
চোখের পানি বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পরতে থাকে।
–আ সরি মা।
পেছন থেকে টান অনুভব হয় মেঘের হাতে।
–শেষ বারের মতো মা বোনকে দেখে নেও.
পরে গিয়ে সুযোগ নাও পেতে পারো।
মেঘ একটা পাথরের মতো সব কথা শুনলো।
কিছুই বললো না।
সামনে একটা কাটা যুক্ত পথ অপেক্ষা করছে তার জন্য যেটা পারি দিতে কেউ তাকে সাহায্য করবে না।
মেঘ চোখ বন্ধ করে নেয়।
আর অতীতের কথা সরনে আসতে থাকে,
(মেঘ পুরো নাম জান্নাতুল মেঘ মা বাবার দুই মাত্র সন্তানের মড়ো জন।
ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া মেয়েটা ভিশন চনচল স্বভাবের মা বাবা আর ছোট বোনটা তার পরিবার না জীবন বলতে গেলে।
বাবা এক জন সামান্য সরকারি কর্মকর্তা কিছু দিন হলো রিটার্টমেন্ট এ আসছেন।
মা ও চাকরিজীবী একটা প্রাইমেরি স্কুলে চাকরি করতেন। কিন্তু হটাৎ একটা এক্সিডেন্ট এ মায়ের পায়ে সমস্যা হয় যার জন্য চাকরিটা মাকে ছেড়ে দিতে হয়।
কোন মতে সংসার টা চললেও পরিবারের সবার সাথে ভালোবাসায় ভরা দিন গুলো ভালোই কাটছিলো।
,
সেদিন শুক্রবার সব কিছুই ছুটির দিন।
রিমির (মেঘের ছোট বোন) ইচ্ছে হয়েছে আইসক্রিম খাওয়ার৷
তাই আপুর সাথে বিকালে বেরিয়ে পরে।
দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে দুই বোন পার্কের পাশের রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে আসছে।
দু’জন হেঁটে বাসায় আসছিল এমন সময় কিছু লোক তাদের ঘিরে ধরে।
–কি চাই (মেঘ)
–ম্যাম আপনাকে একটু আমাদের সাথে আসতে হবে?
–কোথায়? (ভ্রু কুচকে মেঘ)
–ম্যাম প্লিজ আপনি কথা বাড়াবেন না আমাদের সাথে আসুন না হলে ওর্ডার আছে আপনাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার।
–আরে একে কথা নেই বর্তা নেই আমাকে নিয়ে যেতে চাইছেন আবার ধমক ও দিচ্ছেন।
মাথা তুলে না আছাড় দিবো রাস্তা ছাড়ুন।
–ওকে ম্যাম।
লোক গুলো জোর জবর দোস্তি করে মেঘকে নিয়ে আসে।
আর রিমি অবেক চেষ্টা করেও আটকতে পারে না।
মেঘকে নিয়ে গেলে রিমি দৌড়ে বাসায় চলে আসে মা বাবাকে কথাটা বলার জন্য,
মেঘকে এনে বসানো হয় আমানের সামনে।
আমান খান। খুবই অল্প বয়সে মাফিয়া হয়ে ওঠা এক বিজনেস ম্যান।
দেশ থেকে নাম যার বাইরে পর্যন্ত ছাড়িয়ে আছে।
মেঘ আমান কে সামনে দেখে কিছু সময় তাকিয়ে রয় আমানের দিকে,
–আসসালামু আলাইলুম। (আমান)
–ওয়া আলাইকুম সালাম।
আমাকে এখানে তুলে আনার মানে কি?
–একটা ডিল করতে চাই আপনার সাথে মিস. মেঘ।
–আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
–কেন কুব কঠিন কিছু আপনার নাম জানাটা।
–দেখুন আমাকে এভাবে অসভ্যের মতো তুলে আনার কারন কি?
–আপনাকে সভ্য ভাবে প্রথমে বলা হয়েছিল।
কিন্তু আপনি অসভ্যতার রাস্তা টা বেছে নিয়েছেন।
–মানে কি!
–মানে কিছু না।
ডিলের কথায় আসি।
–কিসের ডিল।
–বেশি কিছু না ২ বছরের জন্য স্ত্রী আর সন্তানের মা হবার দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকে
আমানের মুখে এসব কথা শুনে মেঘ আমানের গালে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয়,
–ইয়ারকি পেয়েছেন আপনি।
এই বিকালের সময় একা একটা মেয়েকে তুলে এনে আপনি আমায় এগুলো বলছেন।
আমানের চোখ মুহুর্তে লাল বর্ণ ধারন করে,
চলবে,
#কল্পনায়_হলেও_শুধু_আমারি_থেকো💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
#পর্ব_০১

(গল্পটা প্লিজ ধৈর্য ধরে পড়বেন।গল্প সম্পর্কে মন্তব্য জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here