হিয়ার মাঝে পর্ব ৬১+অন্তিম

#হিয়ার_মাঝে
৬১.(অন্তিম পর্বের প্রথম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter

হিয়া আজ স্কুল থেকে ফেরার পর দেখছি মন খারাপ।বার বার জিজ্ঞেস করছি কিছুই বলে না।হিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে গালে একটু আদর করে বললাম কি হয়েছে সোনা তোমাকে এমন দেখলে আমি কাজে মন দিতে পারি না সোনা।

হিয়া বললো মাম্মা জানো ওই দাদুটা বেশ কয়েক দিন আর আসে না।উনার কি কিছু হয়েছে।উনি আমাকে খুব ভালবাসে মাম্মা।অনেক আদর করে আমার মনে হয় আমাদের আপন কেউ উনি?প্লিজ মাম্মা উনাকে খুজে এনে দাও।উনাকে আমি খুব ভালবাসি মাম্মা।তুমি আর পাপ্পা তো কত মানুষকে সাহায্য করো উনাকেও একটু সাহায্য করো মাম্মা।দাদু নাকি আর বেশী দিন বাঁচবে না।উনার অনেক বড় অসুখ হয়েছে।তুমি আমাকে স্কুলে যাওয়ার সময় যে টাকা দিয়েছো সব আমি দাদুকেই দিয়েছি উনি নিতে চাই নি আমি জোর করেই দিয়েছি।

হিয়ার কথা শুনে আমার ভয় লাগছে।আজকাল কেউ এগুলো কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া তো করবে না।আর যে এগুলা করছে সে কেনো করবে।অদ্ভুত ব্যাপার আমি আর নিরব চেষ্টা করেও তাকে দেখতে পাই নি।আমরা গেলেই সে লুকিয়ে পড়ে কিন্তু কেনো?কোনো না কোনো কারণ অবশ্যই আছে।

এমন সময় নিতু এসে পড়লো।নিতু কে বললাম এত দেরি হলো কেনো নিতু তোর আজ।

নিতু বললো জানেন আপা কি হইছে?আমাদের ওই পাড়ায় এক বেটায় রোজ তার বউ পিটায়।

-নিতু এখনো শুদ্ধ ভাষা শিখতে পারলি না।তোকে না বলেছি ভাষা ঠিক করে কথা বলবি।কথা এমন টেনে টেনে বলবি না।তোকে লেখাপড়া শিখতে হবে বড় হতে হবে বুঝলি।

-জ্বী আপা।

-এখন বল কে কার বউ কে মারে।

-আশিক ভাইয়া আছে না উনার বউ কে খুব মারে।

-কেনো মারে?

-জানিনা আপা। ওই আপা উনার মা বাপের সব টাকা নিয়ে আশিক ভাইয়ের সাথে ভাইগা আইছে।আর এহন সরি এখন আশিক ভাই আপাকে খুব মারে।আমি অত টা বলতে পারবো না।আপনি গেলেই বুঝবেন।আপাকে অনেক মারে আমার খুব পরাণ পোড়ে দেখলে।যার জন্য মা বাবার সব কিছু নিয়ে ভেগে চলে এসেছে সে আজ দু চোখে দেখতে পারে না।নিতুকে বললাম নারী নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলেছে চারদিকে।আচ্ছা তোর দুলাভাই আসুক দুজনে যাবো দেখে আসবো কি সমস্যা।এমন সময় নিরব এসে বললো নিতু মানুষ বউ এর গায়ে হাত দেয় কিভাবে রে।আমি তো তোর আপার দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা ও বলতে পারি না।তোর আপা কষ্ট পেয়েছে ভাবলেই আমার নিঃশ্বাস আটকে আসে।পুরুষ জাতি কেনো বোঝে না একটা মেয়ে তার স্বামির ভরসায় বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে আসে।নিজের সব প্রিয়জন দের ছেড়ে চলে আসার পর তাদের সাথে ভালো ব্যবহার না করলে তারা কিভাবে থাকবে।।

-দুলাভাই আমার ও যেনো আপনার মতো একটা জামাই হয়।আপনার মতো না হলে আমি বিয়েই করবো নাহ।

-হাহাহা আমার চেয়ে ভালো কিছু পাবি বুঝলি।

-কিভাবে দুলাভাই।আসলে কি করলে জামাই আপনার মতো হবে বলবেন।

-মেয়েরা চাইলে একটা ছেলেকে নিজের মতো করে চালাতে পারে।তবে কড়া ভাষায় বললে কাজ হবে না।ছেলেরা হুকুম মানতে নারাজ।তারা হুকুম মানতে রাজি নাহ।হুকুম করলে তারা বিপরিত দিকে চলে যায়।ভাল ব্যবহার, ভালবাসা, একটু লাজুকতা,ভয় সব মিশিয়ে নিজেকে উপস্হাপণ করতে হবে।পুরুষ মানুষ ভালবাসার কাঙাল বুঝলি।সঙ্গী যদি মনের মতো করে চলে তাহলে পুরুষ মানুষ বাধ্য বউ এর কথা মানতে।তোর আপাকে দেখেছিস কখনো আমার কাছে কইফত চাইতে,আমাকে বকা দিতে দেখেছিস,আমার অসুস্থতায় যেভাবে আমার পাশে থেকেছে একটা দিন খোটা দিতে দেখেছিস। আমার কোনো দূর্বলতায় দেখেছিস আঘাত করতে।সারাদিন এত কাজ করে,অফিস থাকে, যে বড় দায়িত্ব থাকে তোর আপার কাঁধে হাজার ক্লান্তি থাকলেও আমি বাসায় আসলে ছুটে এসে হাত এ যা থাকে এগিয়ে এসে ধরে।লোড শেডিং থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে,আঁচল দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দেয়।গোসলের টাওয়াল এগিয়ে দেয়,চুলে শ্যাম্পু করে দেয়।আবার রাতে হাত পা টিপে দেয় আমি নিষেধ করলে সে শোনে না বলে তার সব থেকে ভাল লাগে আমার সেবাযত্ন করতে।মাথার চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়,আমি অফিসের কাজে যাওয়ার সময় বিজি থাকলে আমি রেডি হতে থাকি ও খাইয়ে দেয়।আমার জীবনে আমি দেখিনি মৃথিলা ওর কোনো কলিগ বাইরে কোথাও কারো সাথে ঘনিষ্ট হয় নি।প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে বেশী কথা বলে না আমি কষ্ট পাবো তাই।আসলেই মৃথিলাকে ভালবাসার জন্য একটা না অজস্র কারণ আছে।আল্লাহর দেওয়া বেষ্ট গিফট মৃথিলা।মৃথিলার কোনো কিছুই বলে শেষ করা সম্ভব হবে না।

নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখি ও অনেক টা ইমোশনাল। নিতুকে ইশারা দিলাম যাওয়ার জন্য।নিতু চলে গেলে নিরব কে জড়িয়ে ধরে ওর শার্টের কলার ধরে বললাম নিরব আমার জীবনে এই মৃথিলা হয়ে ওঠা কখনোই হতো না তুমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে আমার কাছে না আসলে।নিরব আমি আজ ও ভাবি সেই দিনের সেই সন্ধ্যার কথা সেই ছাদ বাগানে তুমি এসেছিলে।আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।প্রতিটা দিন যেভাবে আমার পাশে ছিলে আমি কোনদিন অতটা ভালবাসতে পারবো না হয়তো তোমাকে।তুমি আমার জীবনে কি করেছো আর কতটা আগলে রেখেছো তোমার হিয়ার মাঝে সেটা ইতিহাসে সাক্ষি হয়ে থাকবে।ভালবাসি নিরব ভীষণ ভালবাসি তোমাকে।

আজ হিয়া সোনার জন্মদিন পাশের বস্তিতে অনেক গুলো অসুস্থ মানুষের সন্ধান পেয়েছি। ওদের জন্য কিছু খাবার,পোশাক আর টাকা নিয়ে যাবো।বিকালে নিরব, মা, আমি, আর হিয়া বেরোলাম।বস্তিতে প্রবেশ করে কিছুদূর যেতেই দেখি হিয়া নেই।পেছনে আশে পাশে কোথাও হিয়া নেই।নিরব আর আমি পাগলের মতো খোজাখুজি করছি হঠাত দেখি চাঁদরে মোড়ানো একটা লোকের হাত ধরে হিয়া গল্প করছে।হিয়ার চোখে মুখে অনকে আনন্দ দেখা যাচ্ছে।আমি আর নিরব এগিয়ে যেতেই লোকটা মুখ পেছনে ঘুরিয়ে দিলো।হিয়া আমাদের বললো এইযে মাম্মা দাদুটাকে খুজে পেয়েছি এখানে দেখো সেই দাদুটা।আমি অবাক হয়ে লোকটিকে বললাম এদিকে ঘুরে দাঁড়ান কে আপনি।আমাদের থেকে পালিয়ে বেড়ান কেনো?লোকটি সামনের দিকে রওনা দিতেই নিরব জোর করে উনাকে টেনে ধরে চাঁদর সরালো।লোকটার মুখ দেখে আমি আর নিরব চমকে গেলাম।উনাকে এইভাবে দেখবো ভাবতেও পারিনি।লোকটার চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে, আচমকা আমার দু’পা জড়িয়ে ধরলো পায়ের উপর পড়ে হাউ মাউ করে কাঁদছে।আমার মুখে বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা নেই।নিরব ও অনেক টা অবাক হয়ে গেলো। বাবাকে এইভাবে দেখবো ভাবতে পারি নি আমি।উনার থেকে খানিক টা সরে গিয়ে বললাম আকি আপনি।জেল থেকে ছাড়া পেলেন কবে।নিরব বলে উঠলো আপনি আমার মেয়ের পিছনে লেগেছেন কেনো?নিজের মেয়ের জীবনের যা করার তাতো করেছেন এখন আমার মেয়ের পেছনে পড়েছেন।আমার মেয়ের আশে পাশে ও যেনো না দেখি আপনাকে।

মানুষ টার দিকে তাকিয়ে দেখি হাত পায়ে পচন ধরেছে।মাংস খসে খসে পড়ছে।এমন ভয়ানক রোগ আগে দেখি নি আমি।শুকিয়ে গায়ের মাংশ সব লেগে গিয়েছে।সেই দাপট সম্পদশালী ব্যাক্তি টা আজ বস্তিতে খাবারের জন্য হাত পেতেছে গায়ে ভয়ানক পচন ব্যাধি।

আশরাফ সাহেব এর এমন অবস্থা দেখবো ভাবতেও পারি নি।উনার সাথে একটা কথা ও বললাম না।। মায়ের মৃত্যু আমাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় উনার জন্য আমি এতিম হয়েছি।নিরব আমাকে বললো চলো।হিয়ার হাত ধরে বললাম চলো হিয়া আর ভুলেও উনার আশেপাশে আসবে না।হিয়ার মুখ টা চুপসে গেলো।হিয়া বললো কেনো মাম্মা দাদু টা খুব ভালো।আমাকে খুব ভালবাসে।আমি এই দাদু কে ছেড়ে যাবো না মাম্মা।আশরাফ সাহেব আবার ও নিরবের পা জড়িয়ে ধরে বললেন নিরব আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাদের সাথে যেতে চাই না।আমি সারাজীবন তোমাদের সাথে অন্যায় করে এখন তোমাদের ঘাড়ে বোঝা হতে চাই না।আমাদের পাপের শাস্তি পেয়েছি আমরা।আমি পরকালেও ক্ষমা পাবো না।মৃথিলা তুমি আমার মেয়ে এই পরিচয় আজ ও কারো সামনে দেই নি আমি।সেই মুখ নেই আমার।নবনিতার মা বিছানায় পড়ে আছে হাত পায়ে পোকা হয়েছে মাংস পচে।সব সময় ছটফট করছে মৃত্যুর আগে একবার ক্ষমা চাইবে বলে।অনেক দিন ধরে বিছানায় ভুগছে।হিয়ার স্কুলে সাহায্য চাইতে গেছিলাম সেখানে নিরবের সাথে ওকে দেখেছিলাম।সেদিন থেকে জানি ও আমার নাতনি।আল্লাহ তার পাপী বান্দাকে ক্ষমা করে তুই করবি না।হিয়া আমাকে কেঁদে দিয়ে বললো মাম্মা এই দাদু আমার নানা ভাই।কেনো আমাকে বলোনি এতদিন।নানা যায় করুক এখন কাঁদছে।প্লিজ ক্ষমা করো মাম্মা।প্লিজ মাম্মা ক্ষমা করো নানাভাই কে।

মনের মাজে অনেক খারাপ লাগছে।চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি ও বেরোলো।চোখের পানি মুছে বললাম আপনার ওয়াইফ কোথায় আছে কথাটা ভীষণ অভিমান নিয়েই বললাম।এর আগে অনেক বার মা ডেকেছি কিন্তু তার জন্য অনেক অপমানিত ও হয়েছি।

এই বস্তির একটা ঘরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মা।হাত পা পঁচে গলে পড়ছে।আমাকে দেখে হাউ মাউ করে কাঁদলো।তেমন একটা কথা বলতে পারে না।শুধু আউ আউ করছে।দুই হাত জোর করে ক্ষমা চাইছে।অনেক কষ্ট লাগছে দেখে।আমি কখনো এত টা খারাপ সিসুয়েশন ও চাই নি তাদের।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের আর কিছুই বললাম নাহ।নিজের ও মায়া লাগছে দেখে।নিরব ও কিছুই বলছে না।

জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের মেয়ে কোথায়?

বাবা বললেন আমার সম্পত্তি যা ছিলো আমাদের অসুস্থতার সুযোগে আমাদেদ ফেলে সব নিয়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।আমাদের খোজ ও নেই না।

আসলেই বোধ হয় রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার আছে।যে মেয়েকে মাথায় তুলে রাখতো সে আজ এতটা কষ্ট দিতে পারলো।

কয়েক টা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি ছাড়লাম।উনাদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দিলাম,কিছু টাকা পায়সা ও দিয়ে আসলাম।আমার মনে হয়েছে তাদের পাপের যথেষ্ট শাস্তি মিলেছে।এত ভয়ানক ব্যাধি আগে দেখি নি।

পরের দিন নিতুর সাথে সেই আশিক এর বাসায় গেলাম।সেখানে গিয়ে আরো চমকে গেলাম।আশিক এর ওয়াইফ নবনিতা আপু।প্রচন্ড মেরে ফ্লোরে ফেলে রেখেছে আশিক। আমি যেতেই আপু আমাকে দেখে অবাক হয়এ গেলো।আমি গাড়ি নিয়ে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছি।আমাকে দেখে চমকে গেলো।জীবন কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে তাদের।

আশিক কে বললাম উনাকে মেরেছেন কেনো এভাবে?.
আশিক উত্তর দিলো ও জেল খাটা আসামি আমি সেটা জানতাম না।ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পর ওকে আর আমি মেনে নিতে পারি না।আমাকে মিথ্যা বলে ঠকিয়ে বিয়ে করেছে।নিজের বোনের সাথে যা করেছে জানলে অবাক হবেন।

হালকা হেসে উত্তর দিলাম আমি ই সেই বোন।
#হিয়ার_মাঝে
৬২.(অন্তিম পর্বের শেষ অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter

প্রতিটা মানুষ ই তার কর্মের ফল পেয়ে যায়।সৃষ্টিকর্তা যখন কাউকে শাস্তি দেন সেই শাস্তি এতটাই ভয়ানক হয় কোনো মানুষের পক্ষে সেই শাস্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।কথায় আছে মানুষের শোধ হয় তবুও বোধ হয় না।আজ নবনিতা আপুকে দেখে বুঝলাম কি বাজে সিসুয়েশণ ফেস করছে।আপুকে বললাম যে মা বাবা সারাজীবন মাথায় তুলে রাখলো তাদের ফাঁকি দিয়ে কিভাবে পালিয়ে এলে।এটা কি তোমাকে ভালবাসার প্রাপ্য ছিলো তাদের।সময় থাকতে মা বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।তাদের দেখাশুনা করো কিছুটা পাপ কমবে।আর আশিক কে বললাম তার অতীত নিয়ে বিচার করবেন না।অনেক টা বুঝিয়ে আসলাম।আমার সব কথা আশিক মেনে নিলো।

কেটে গেলো আরো কতগুলো দিন।নবনিতা আপু আর আশিক ভাইয়া মা বাবাকে তাদের কাছে নিয়ে এসছে।আমরা টাকা পয়সা দিয়ে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করি।আমার কাছে নিয়ে আসিনি।কারণ আমি চাইনা আমার মেয়ের জীবনে ওদের কারো ছায়া পড়ুক।মরণব্যাধিতে প্রতিনিয়ত ছটফট করছে মা বাবা।কি জানি এ শাস্তি তাদের আর কতদিন চলবে।আশিক ভাইয়া ও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।

ছোয়া বেবির বয়স আজ চার বছর পড়েছে।রিফাত ভাইয়ার কলিজার টুকরো ছোয়া বেবি।আল্লাহর অশেষ রহমতে সুপ্তি মা হতে চলেছে।এর চেয়ে খুশির নিউজ আর কিছুতেই হয় না।সুপ্তির এই মা হওয়া নিয়ে আলাদা ফিলিংস নেই।সুপ্তি বলছে আমি মা আগেই হয়েছি আমার ছোয়া সোনার মাধ্যমে।আমার ছোয়া সোনায় আমার প্রথম সন্তান।

রিক আর মুনতাহা আপু ও আজ অনেক ভালো আছে।ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। রিক ভাইয়ার ভালবাসায় মুনতাহা আপুর নিরবের প্রতি জমে ওঠা ফিলিংস টা হাওয়ায় মিশে গিয়েছে।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।হিয়া থালা বাসন মাজা ঘষা করছে।নিরব আমাকে ডেকে বলছে মিথু তোমার কষ্ট কমে গিয়েছে দেখো তোমার মেয়ে কাজ করা শিখে গিয়েছে।মা বললেন শুধু কাজ ও ঝাড়ু দিয়ে ঘর ঝাড়ু করে, খুন্তি দিয়ে তরকারী নাড়ায়,কাপড় ভাজ করে।নিরব হাসছে আর বলছে আমার পাকা বুড়ি টা না থাকলে এত হাসি আনন্দ বুঝতাম ই না।

এর ই মাঝে দেখি নানা এসেছে।নানাকে দেখেই হিয়া গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নানার এখন বয়স হয়েছে তবে চলাফেরা করতে পারে।নানাকে ঘরে নিয়ে বসতে দিলাম।নিতুকে বললাম নানাকে নাস্তা দিতে।নিরব আর আমি নানার কাছে বসে অনেক গল্প করলাম হাসি আনন্দ করে কাটালাম।রাতে ডিনার শেষে রুমে গেলাম।

“নিরব হঠাত করে একটা কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিলো।বুঝলাম না হঠাত চোখ বাঁধার কারণ।নিরব কে বললাম কি হলো হঠাত চোখ বাঁধলে।”

“চোখ বাঁধবো না তাই বলছো।আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেকে আদর করো না ঠিক ভাবে তাই এখন কিডন্যাপ করে আদরের দেশে নিয়ে যাবো।”

“তাই না।যে দেশে ইচ্ছা নিয়ে চলো শুধু তোমাকেও থাকতে হবে সাথে।”

“মিথু আমার ও কিন্তু চোখ বাঁধা ভেবোনা শুধু তোমার চোখ ই বেঁধেছি।”

“আচ্ছা চোখ বাঁধা হয়েছে কেনো মিষ্টার হ্যান্ডসাম।”

“আমি তোমাকে নিজ হাতে শাড়ি পরিয়ে দিতে চাই তাই।তুমি কি রাগ করবে আমি শাড়ি পরালে।””

“একটুও না।তুমি পরাও শাড়ি। ”

“কিছুক্ষণের মাঝেই নিরবের শাড়ি পড়ানো হয়ে গেলো।নিরব আমাকে বেডের উপর নিয়ে বসিয়ে দিলো।এত সময়ে ওর নিজের চোখ খুলে দিয়েছে।আমার চোখ বাঁধা ই আছে।”

“নিরব ওর হাঁটুর উপর আমার পা রেখে নেল কাটার দিয়ে নখ কেটে দিলো।এর পর নেল পালিশ পরিয়ে দিলো।হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলো এগুলো যে কাঁচের চুড়ি বুঝতে বাকি রইলো না।ঠোঁটে লিপিস্টিক পরিয়ে চোখে কাজল দিয়ে চোখ টা খুলে দিলো।আমি ভাষাহীন হয়ে গেলাম নিজেকে দেখে।কালো শাড়ি,কালো ব্লাউজ,কালো চুড়ি,কালো নেলপালিস, কালো টিপ নিরব ওর মনের মতো করে সাজিয়েছে আমাকে।নিরবের পরনেও কালো শার্ট কালো জিন্স, মুখে খোচা খোচা দাঁড়ি দেখে মুগ্ধ হওয়ার থেকে ও বেশী।”

“নিরব কে বললাম হঠাত এতটা সুন্দর ভাবে সাজালে যে।”

“হঠাত মনে হলো নিজ হাতে সাজায় বউ পাখিকে।”

“নিরব বললো ওয়েট একটা জিনিস বাকি আছে বলে আলতার কৌটা এনে আলতা পরিয়ে দিয়ে বললো এখন পরিপূর্ণ লাগছে।”

নিরব রুমের লাইট অফ করে আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় আস্তে করে সুইয়ে দিলো।ডিম লাইটের আলোতে ওর সুন্দর মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।নিরব কে বললাম কি হয়েছে তোমার আজ।নিরব আমার পাশে এসে সুয়ে আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো কিছুই হয় নি মৃথিলা তোমাকে বুকের সাথে আগলে ধরে রাখতে ইচ্ছা করছে।আমার বুকে কান পেতে শোনো মিথু হিয়ার মাঝে তোমাকে কত যতনে লুকিয়ে রাখা।নিরবের বুকে কান পেতে হার্টবিট এর সাউন্ড শুনছি।নিজের একটা মানুষ থাকলে কতটা যতনে আগলে রাখে নিরব না থাকলে বুঝতাম নাহ।নিরব শাড়ির ভাজ সরিয়ে হাত দিয়ে মসৃণ পেটে স্লাইড করছে। নিরবের বুকে একটা চুম্বন করে বললাম এই দুষ্টু এটা কি করছো।নিরব আমার গালে চুমু দিয়ে বললো আমি যা করছি তুমিও তাই করো আমি কি নিষেধ করেছি।লজ্জায় ওর বুকের সাথে মাথা গুজে রইলাম।ওর স্পর্শে শরীরে তরঙ্গের মতো শিহরণ বয়ে গেলো।নিরবের পাগলামি টা আজ যেনো বেশী ই ছিলো।আমার কানে একটু চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বললো কথা ছিলো অনেক গুলা সন্তানের বাবা বানাবে আমাকে।আই থিংক এখন সেই সময় এসেছে।ভীষণ লজ্জায় কিছুই বলতে পারছি না আমি।নিরবের দুষ্টুমি বুঝতে বাকি নেই আমার।খোপা করা চুল খুলে দিয়ে বললো আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলের হাতে আরো বহুবার অনর্থ হোক।পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারী আমার বউ, তাই আমার হাতে অনর্থ হবেই। নিরবের শরীরে উষ্ণতা বয়ে যাচ্ছিলো আর তার সংস্পর্শে আমার শরীরেরেও।পাগলের মতো গালে চোখে ঠোঁটে চুমু দিচ্ছিলো।বেসামাল ভালবাসায় ডুব দিলাম প্রেম সাগরে।

পরের দিন সকালে দেখি পেটের উপর মাথা দিয়ে সুয়ে আছে নিরব।এটা ও বরাবর ই করে থাকে।নিরব কে আস্তে করে সরিয়ে দিলাম।হিয়া এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।হিয়া মায়ের কাছে ঘুমোয় এখন।হিয়াকে ডেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে নাস্তা খেতে দিয়ে বই পড়াতে বসলাম।হিয়া টা ওর বাবার মতো কালো পোশাক ছাড়া পরে না।নিরবের কলিজার টুকরো তার মেয়ে।হিয়া বই পড়তে পড়তে বায়না ধরলো ঘুরতে যাবে।নিরব ঘুম থেকে উঠলে আমরা কাশবনে ঘুরতে গেলাম।কাশফুলের রাজ্য নিরব আমাকে আর হিয়াকে নিয়ে অনেক ছবি তুললো।রোজ শুক্রবার কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায় আমরা।নিরবের কথা তার মেয়ের জীবনে সে কোনো অপূর্ণতা রাখবে না।হিয়া সোনা ছুটে গিয়ে গিয়ে বাড়ির বাগানের সব ফুল তুলে রোজ মালা বানায় আমাকে আর ওর দাদু কে পরিয়ে দেই।সারা বাড়িময় হিয়াসোনার ছোট ছোট দুষ্টুমি জড়িয়ে আছে।

বাড়ির বাগানে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে নিরব।আমি ওর কাছে যেতেই পানির ফোয়ারা দিয়ে ভিজিয়ে দিলো আমাকে।নিরবের কাছে গিয়ে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,,

“জীবনে কস্ট পাওয়া মানুষগুলো যখন কারো উপর নির্ভর করতে ভয় পাই,
অন্য কাউকে বিশ্বাস করাটা অসম্ভব হয়ে উঠে,
ঠিক তখনই এমন কেউ হঠাৎই চলে আসে জীবনে।
যা জীবনকে বহমান করতে সাহায্য করে।

সে হয়ে উঠে খুবই বিশেষ কেউ।
আর তার থাকে নিজস্ব একটা যাদুকরী শক্তি।
যা দিয়ে সে বুজিয়ে দেয়,
জীবনটাকে যেমন ভাবা হয় আসলে জীবন তা নয়।
জীবনে যা হারিয়ে গেছে তা ছাড়াও আরও কিছু আছে বাকি।।

সে এক জীবনের সকল খেদ কস্ট দুঃখ মিটিয়ে দেয়।
পাথর হয়ে যাওয়া মনেও সে সজীবতা ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
সকল বেঠিক কাজগুলো কে আপন করে,
ভুল গুলোকে শুধরে দেয়!
আর অনেক ভালোবাসে, কিন্তু ছেড়ে যায় না।” [রুমানা মির্জা]

আমার জীবনে সেই মানুষ টা তুমি নিরব।নিরব আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,,

আর তুমি হলে আমার জীবনের শ্রেয়সী মৃথিলা।তোমাকে আমি ভালবাসি তাই তুমি আমার চোখে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর নারী।যাকে একবার ভালবাসার পর দ্বীতীয় কাউকে ভালবাসার ইচ্ছা জাগে নি।তুমি ই আমার রুপসী তুমি আমার শ্রেয়সী মিথুপাখি।রূপসী অর্থে আমি গায়ের সাদা চামড়া বোঝায় নি কিন্তু।জীবনে রুপসীর চেয়ে শ্রেয়সীর গুরুত্ব অনেক বেশী জানো।শ্রেয়সী নারী প্রেমিকের চোখে আপনা আপনি রুপসী হয়ে ওঠে।প্রতিটা সফল পুরুষের জীবনে একজন করে শ্রেয়সী নারীর অবদান থাকে।আমার জীবনের শ্রেয়সী তুমি না থাকলে কি আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।

নিরবের হাত ধরে বললাম তুমি আমি মিলেই তো আমরা নিরব।আমার বেঁচে থাকার প্রার্থনা তে বৃদ্ধ হতে চাই তোমার হাত ধরে।

বছর ঘুরতেই একটা পুত্র সন্তান এর জন্ম হলো আমার।পরিবারের নতুন সদস্যর নাম রাখলাম হিয়ান।সুপ্তির ও একটা ছেলে হয়েছে।সুপ্তির জীবনের এই খুশি টা যেনো আমার জীবনের বর প্রাপ্তি।নিরবের চাওয়াতেই আমাদের হিয়ান সোনার জন্ম হলো।পরিবারে আরেক বার ও হাসি আনন্দে জমে উঠলো।

সাংসারিক ব্যাস্ততায় ছেলে মেয়ে নিয়ে আজ ভালো আছে সবাই।চারদিকে সবাই আজ ভাল আছে।আমার সাংসার ও আজ ভরে উঠেছে।

নিরব ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে গান ধরেছে,,

“আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি তারে,দেখতে আমি পাই নি তারে”

নিরবের সাথে হিয়া আর আমি তাল মেলাচ্ছি আর আমাদের ছোট্ট হিয়ান গাল ভরে হাসছে।ভালবাসাময় এই জীবনে এই একটায় প্রার্থনা করি সবাই যেনো নিরবের মতোই স্বামি পায়।এমন ভালবাসার মানুষ পেলে এক জীবনে আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না।

।সমাপ্ত।

(উপন্যাস টা শেষ করে ভীষণ মন খারাপ লাগছে।নিরব চরিত্র টা আমি ভীষণ ভালবাসি।এই চরিত্র টা দুই বছর আগে সৃষ্টি করেছিলাম।নিরব চরিত্র টা কেমন যেনো নিজের সাথে মিশে গিয়েছে, বলতে গেলে শিরা উপশিরায় এই চরিত্র বয়ে চলেছে আমার।আমার ব্যাক্তিগত জীবনে নিরব চরিত্রের কাউকেই চাই আমি।মৃথিলা মানেই আস্ত একটা ভালবাসা।এতদিন নিজেকে মৃথিলা ভেবে এসেছি।নিরব মৃথিলার জার্নি শেষ হবার নয়।অনেক ভুল ত্রুটি ছিলো আমার লেখায়।আমি শখ করেই লেখা শুরু করেছিলাম।আমার হাত শব্দের চয়ন অনেক কাঁচা।এত ভুল থাকার পর ও যারা আমাকে ভালবাসেন তাদের ভালবাসার মূল্য দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।পাঠক পাঠিকাদের নিয়ে ভালবাসা ময় অনেক আবেগ আছে যেটা প্রকাশ করতে পারি।

1 COMMENT

  1. Oshombob shondor hoyeche golpota💝💝💝💘💘💘❤❤❤golpota Porte porte mrithilar jaygay nijeke kolpona kore niyechilam🤗🤗🤗I wish amar jiboneo jeno nirob er moto akta life partner pai☺☺😍🤭😌😌thanks apu ato shondor akta golpo dear jonno💐💐💐💐❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here