কাছেপিঠে পর্ব -০২+৩

~কাছেপিঠে~
পর্বসংখ্যাঃ০২

ইভান দশ মিনিটের পথটা পায়ে হেঁটে অতিক্রম না করার সিদ্ধান্ত নিলো আজ। গাড়িতে করে ছড়ে পৌছালো ‘দাওয়াত রেস্তোরাঁয়’। পরিচ্ছন্ন ফরমাল পোশাকে সাহেবী ভাব দৃশ্যমান হয় তার। রেস্তোরাঁর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিক পর্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মিষ্টিকে খুঁজলো। সবশেষে হঠাৎ মাঝের সারিতে মিষ্টিকে দেখতে পেলো। মেজাজ দ্বিগুণ গরম হলো তার এবার। এজন্যই চাকরি করার এতো শখ মেয়ের। কোথায় ঘর-সংসার করবে,বাচ্চা সামলাবে তা নয়। মূলত মিষ্টির চাকরি করা,এবং স্বাধীনতা চাওয়ার পর থেকেই দুজনের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব আসে। মিষ্টি চেয়েছিলো নিজের পায়ে দাঁড়াবে,যাতে তার সকল চাহিদার জন্য ইভানের কাছ থেকে টাকা নিতে না হয়। দিন অথবা মাস শেষে কিছু আয় সঁচয় করা যায়। লাভটা তো তাদেরই হতো।

ইভান মিষ্টির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে লোকজনের দিকে যেনো তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কি এমন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে? শুনার জন্য আরেকটু এগিয়ে গেলো তাদের নিকটে। ইভানকে দেখে মিষ্টির সামনে বসে থাকা মানুষটি হুট করে বলে উঠলো,

—- আর কিছু লাগবে না ওয়েটার!

ইভান অবাক হয়ে বলল,

—- কে ওয়েটার?

— আপনি, যান এখান থেকে, প্রয়োজন হলে ডাকবো।

অপমানে মুখ থমথমে হয়ে যায় ইভানের। সে তীর্যক চানহিতে মিষ্টির দিকে তাকালো। ঠিক তখনি মিষ্টিও তাকালো। ইভানকে দেখে অবাক হলো না। অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলল,

— বসে পড়। আমাদের সাথে লাঞ্চটা করে নে।

ক্ষেতাপুরি তোর লাঞ্চের। বিড়বিড় করে বলল ইভান।

মিষ্টির সামনে বসে থাকা লোকটি সরল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— উনি তোমার কে হয় মিষ্টি।

— উনার সাথেই আমার ডিভোর্সের আলোচনা
হচ্ছিলো এতক্ষণ।

লোকটি ঠোঁট চোখা করে বলল,

—- ওওও!

ইভান ভড়কে গেলো মিষ্টির কথায়। তার মনেই নেই সকালে সে মিষ্টিকে ডিভোর্সের কথা বলেছিলো।
তাই কন্ঠে একরাশ বিষ্ময় ঢেলে ইভান বলল,

—- কিসের ডিভোর্স মিষ্টি।

মিষ্টি বিরক্তি চোখে তাকালো ইভানের দিকে। ইভানের তীব্রভাবে ভুলে যাওয়ার স্বভাব আছে। এরজন্য কম ঝগড়া হয়নি তাদের মধ্যে। যারজন্য সম্পর্কের আজ এই অবস্থা। একটা সম্পর্কে যেমন ভালোবাসা, বিশ্বাস দরকার। তেমনি দরকার যত্নের।তাদের মধ্যে ভালোবাসাটা থাকলেও বিশ্বাস এবং যত্নটা কম ছিলো।
মিষ্টি দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনে বসে থাকা তার ভাইয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাসিনের দিকে চেয়ে ইশারা করলো যেনো তার পরিচয়টা দেয়।
তাসিন করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে বলল,

— হ্যালো মিস্টার ইভান।আমি ডিভোর্স লয়ার
তাসিন আহমেদ।

ইভানের বেয়াদবি করার একটা স্বভাব আছে।সে স্বভার থেকে সে হাত তো বাড়ালোই না, মিষ্টির দিকে চেয়ে অত্যন্ত কঠিন স্বরে বলল,

— বাসায় চল, তোর সাথে কথা আছে।

— যা বলার এখানেই বল। আমার ক্লাস আছে।

—- ছুটি নে।

— অসম্ভব!

আধখাওয়া খাবার রেখেই মিষ্টি উঠে পড়লো। ইভান অস্থির হয়ে গেলো। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলল,

— না খেয়ে উঠিস না।আমি চলে যাচ্ছি।
পেটপুরে খা তুই।

ইভান চলে গেলো। তাসিন মিটমিট হেসে বলল,

— তোমার স্বামী তো তোমাকে প্রচুর ভালোবাসে।
শুধু একটু ত্যাঁড়ামি স্বভাব আছে তাই না?

মিষ্টি নিরলস ভাবে বলল,

— একটু নয়,অনেকটাই!

—- আচ্ছা সমস্যাটা কি খুলে বলো আমাকে।

— আমি আমাদের ব্যাক্তিগত সমস্যাটা
বলতে চাচ্ছি না। আপনার কাজ শুধু পেপার্স রেডি করা।

— আর ইউ সিউর। তোমাদের মধ্যে আমি তেমন
কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে ডিভোর্স নিতে চাচ্ছো কেন?

মিষ্টি চুপ থাকলো কিছুক্ষণ। তাদের সাংসারিক জীবনটা কেমন যেনো খাপছাড়া হয়ে আছে। শুধুমাত্র নিজের স্বাধীনতা দাবি করার জন্য কেউ সম্পর্কের বিচ্ছেদ চায়? সমস্যার শুরুটাতে তো তৃতীয় কেউ ও তো আছে,যেটা মিষ্টি আঁচ করতে পারছে। সন্দেহজনক কাউকেই সে দেখেনি এখনি অবধি। ইভানকে চোখে চোখে রাখার জন্য তার অফিসের কাছে কলেজের চাকরিটা নিয়েছিলো সে। অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তার আগমন ঘটার কারণে মিষ্টি মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো৷ অস্থির,অবিচল হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আচমকা বলে উঠলো,

— আমি আরো একটা মাস সময় চাই।
একমাস পর আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাই?

তাসিন আহমেদ বিচক্ষণ দৃষ্টিতে মিষ্টিকে পর্যক্ষণ করে কিছু ভাবলো। এরপর মিষ্টির সিদ্ধান্ত সায় জানাতে মাথা নাড়ালো।

________

আজ মঙ্গলবার, সেজন্য বাজারে জমজমাট হাট বসে। স্বল্পমূল্যে তরতাজা তরিতরকারি কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচাসবজি আসার ফলে সবকিছুর দাম কমই বলা চলে। যখন রুটিন অনুযায়ে ইভান রান্না করে,তখন কাঁচা বাজার ,মুদি বাজার সব মিষ্টিকে করতে হয়। রান্নাটা ইভান সন্ধ্যায় ফিরলে করবে। কাঁচা তরকারির দিকে চেয়ে মিষ্টির মন খারাপ হলো। এতো সুন্দর তরতাজা সবজিকে ইভান অখাদ্য বানিয়ে ফেলে। অনেক কষ্টে গিলতে হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসার পথে রওনা দিলো সে।

ইভান বাসায় ফিরলো ঠিক সন্ধ্যে সময় ছয়টা। মিষ্টির তখন ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলে।শুধু কিচেন বাদে। কারণ কিচেন পরিষ্কারের দায়িত্ব আপাততে ইভানের। ডোরবেল বাজতেই মিষ্টি দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা মেললো। দরজার মেলতেই ইভান মিষ্টির দিকে চেয়ে মুখ মুছড়ালো। এমনভাবে মুছড়ালো যেটা দেখে মিষ্টির রাগে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরলো। মিষ্টি তেড়ে কিছু বলবে তার আগে ইভান বলে উঠলো,

— সর সর সামনে থেকে। ঘামের গন্ধ আসছে
তোর গা থেকে।

—- তুই আমার গায়ের গন্ধ শুঁকছিস কেন?

— আমার অকাল পড়েনি, তোর গা শুঁকতে যাবো।

ইভান হনহনিয়ে ভেতরে চলে গেলো। দুপুরের রাগটা এখনো তার মস্তিষ্ক জুড়ে দখল করে আছে। মন চাইছে ঠাস ঠাস ছড়িয়ে মিষ্টির গাল লাল করে দিতে। দামী গাল, একটা চড় মারা যায় না,উল্টো পাঁচটা চড় তার গালে এসে পড়ে।

ফ্রেস হয়েই কাজে লেগে পড়লো। মিষ্টি সোফায় বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিলো। কিচেন থেকে ভেসে আসা কাটকুটির শব্দে মনোযোচ্যুত হয় মিষ্টি। তন্মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো। মিষ্টি গিয়ে দরজা খুলে দেখলো একটা কম বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
মিষ্টি প্রশ্নাত্বক চোখে তাকিয়ে থাকলে ছেলেটি বলে,

— আফা,তিনমাস ধরে ডিসের বিল দিচ্ছেন না।
লাইন কি কেটে দিবো?

বিলের কথা শুনে মিষ্টির চোখ চড়কগাছ। তার হাতে একটা টাকাও আর অবশিষ্ট নেই।মাসের শেষ দিকে প্রচুর হাতে টান পড়ে তার।ধার নিয়ে চলতে হয়।টাকা কোথায় পাবে এখন।

ইভান কিচেন থেকে কলিংবেল বাজার শব্দ শুনেছিলো। কথার আওয়াজ না পেয়ে তার তীব্র সন্দিহান মনটা চেঁচিয়ে কিছু একটা জানালো। দ্রুতপায়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। মিষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে ভ্রূ কুঁচকালো। হাত মুছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

— কি সমস্যা?

—- ডিসের বিল দিস নাই কেন?

—- আশ্চর্য, আমি ডিসের বিল কেন দিবো?
টিভি কি আমি কিনেছি?

— তুই কিনিস নি। কিন্তু খেলা দেখে কে?

— তুই!

মিষ্টি রেগে বলল,

— আমি খেলা দেখি না।তুই দেখছ। মনে নাই ঝগড়া হওয়ার পর থেকে সন্ধ্যার পর রাত অবধি বসে বসে খেলা দেখতিস।তাও তিনমাস ধরে,তাহলে আমি কেন বিল দিবো?

— টিভি যার,বিল ও তার। এ্যা ভাই,
এই মহিলাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। প্রচণ্ড জ্বালাচ্ছে।

—- মাথা খারাপ করবি না।জলদি টাকা দে।

— তুই দে।

তাদের এহেন কথোপকথনের মাঝে ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকলো। অতঃপর গলা হিক দিয়ে বলল,

—- আমি কাল-পরশু আবার আসবো।
ততক্ষণে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন কে বিল দিবেন।আসি। স্লা’মালাকুম!

ছেলেটি যেতেই ভাত পুড়া গন্ধ্য নাকে আসলো ইভানের। হঠাৎ দিক বেদিক ভুলে মারলো এক দৌড় কিচেনের দিকে। ইভানের দৌড় দেখে মিষ্টি হাসি আঁটকাতে পারলো না। হাসতে হাসতে পূনরায় সোফায় গিয়ে বসলো।
___________
©তারিন_জান্নাত
~কাছেপিঠে~
পর্বসংখ্যাঃ০৩

কিচেনে এসে দেখলো ভাত পুড়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছে চারপাশে। দ্রুত চুলা বন্ধ করে ঢাকনা উল্টে দেখলো পুড়া পুড়া গন্ধ্য বেরুচ্ছে। অলরেডি অনেকটা সময় ব্যয় করে তরকারি কেটেকুটে তারপর ভাত বসিয়েছিলো। ভাতের অবস্থা দেখে তরকারি রান্না করার ইচ্ছেটা ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে গেলো ইভানের।
সবশেষে চিন্তা করলো পাশে রেস্টুরেন্ট থেকেই খাবার কিনে আনবে। যদিওবা তাদের টাকা পয়সার হিসাব-নিকাশ আলাদা। তার কিনে আনা খাবার মিষ্টি খাবে নাকি তাতেই সন্দেহ।

ফোনে খাবার অর্ডার দিয়ে সোফায় এসে বসলো ইভান। মিষ্টি একচোট চোখ তুলে চেয়ে পূনরায় বইয়ে মনোযোগ দিলো। ইভান উশখুশ করতে লাগলো। টিভিতে তো এই টাইমি রেসলিং চলে। প্রতিদিন টাইমলি দেখা হয়।আজ কোন মুখে দেখবে। ফাজিল মেয়ে এখান থেকে আজ সরছেও না। বেশ বড় গলা করে বলেছিলো টিভি যার,বিল তার। এখন টিভি ছাড়লেই কখন না জানি ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসে এই মেয়ে।

ইভানের ভাবনা চিন্তার মাঝে বিকট শব্দ তুলে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের শব্দে সচকিত হয়ে ফোনটা হাতে নিলো। স্ক্রিনে জুঁইয়ের নামটা ভেসে উঠলো। যথাসময়ে ফোনটা রিসিভ করলো ইভান।
জুঁই বলে উঠলো,

— দোস্ত বৃহস্পতিবার তো আফিনের বিয়ে।
আসবি না তুই?

ইভান বিরক্ত হলো,বলল,

— আজ মাত্র মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবারের কথা
তুই আজ জিজ্ঞেস করছিস কেন?

— না এমনিই জিজ্ঞেস করেছি। অফিসে তো
তোর সাথে তেমন আড্ডা দিতে পারিনি। আচ্ছা মিষ্টির সাথে তোর দেখা হয়েছিলো। ছেলেটা কে ছিলো?

জুঁইয়ের কথার প্রত্যুত্তরে ইভানের চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো,অফিস আমার কাজের জায়গা, সেখানে তোর সাথে আড্ডা কেন দিবো আমি।”
মিষ্টি শুনবে বলে আর কথাটা বললো না।তাই সোফা থেকে উঠো মিষ্টির কাছ থেকে কিছুটা সরে আসলো,মৃদু আওয়াজে শুধু বলল,

—- দোস্ত! অনেক হয়েছে তোর আমার পক্ষে
কথা বলা।প্লিজ আর আমাদের মধ্যে কোন কথা বলতে আসিস না। তুই তোর মতো হ্যাপি থাক।

ইভান লাইন কেটে এসে দেখলো,মিষ্টি বই বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান বহুদিন পর মিষ্টিকে এভাবে তার দিকে তাকাতে দেখলো। বুকের ভেতর কেমন যেনো উত্তাল ঢেউ শুরু হয়ে গেলো। মন চাইলো সব ঝগড়াবিবাদ চুকিয়ে একে অপরের সান্নিধ্যে চলে আসতে।ডুবে যেতে মন চাইলো মধুর আলিঙ্গনে।

ইভান মিষ্টির মুখোমুখি বসে বলল,

— মিষ্টি চাকরিটা ছেড়ে দে না। দেখ এখানে
তোর তো কিছুর অভাব নেই।বা আমি তোকে খাওয়াতে পারবো না এমনটাও তো নয়।তাহলে কেন করছিস চাকরিটা। দরকার টা কি?

মিষ্টি ঈষৎ হাসলো। এরপর বলল,

— দরকারটা হচ্ছে আমার আত্মসম্মানের।
আমি তোর মতো অট্টালিকায় বড় হওয়া মানুষ নই।
আমার বাবা সামান্য একজন কৃষক। ছোট শহরে জীবনযাপন করা আমি যখন এই শহরে এসে তোদের মতো উচ্চবিত্ত পরিবারের বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করি।তখন সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা আমি আমারই করেছি।

ইভান বিরক্ত হয়ে বলল,

— এসব কি রচনা শুনাচ্ছিস।

মিষ্টি রেগে চোখমুখ লাল কর বলল,

— খবরদার রচনা বলবিনা।
আমি এখনো ভুলিনি তোর বলা কথাগুলো। অফিস থেকে ফিরেই তো বলতি আমি সারাদিন শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি।কাজের কাজ কিছু করছিনা। তোর টাকা নষ্ট করছি।

—- আগের কথা এখন তুলে লাভ কি?

— তুই আমাকে ছোটলোক বলেছিলি।
তুই ভুলতে পারিস এসব, আমি না। এজন্য করছি চাকরি।যাতে তোর টাকায় চলতে না হয়।

মিষ্টি উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইভান দ্রুত দাঁড়িয়ে বলল,

— তুই কি বলেছিস আমাকে সেগুলো কেন বাদ রেখেছিস? দোষ শুধু আমার।আমি অহংকারি। আর কি যেনো বলছিলি আমার জন্মের…

মিষ্টি ইভানের কথা সম্পূর্ণ কর্ণগোচর করলো না।মিষ্টির উপেক্ষা ইভানের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। সোফার সামনে থাকা সেন্ট্রল টেবিলটায় সজোরে লাথি মারলো সে। এরপর রুমে আসলো মানিব্যাগ নেওয়ার জন্য। রুমে এসে দেখলো মিষ্টিও তৈরি হচ্ছে কোথায় যাওয়ার জন্য। তা দেখে ইভানের মেজাজ তুঙ্গে। সে দ্রুতপায়ে মানিব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা বাইরে থেকে আঁটকে দিলো যাতে মিষ্টি বেরুতে না পারে।

বাইরে থেকে দরজা আঁটকাতে দেখে মিষ্টি দৌড়ে এলো।কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। ইভান ততক্ষণে দরজা আঁটকে দিয়ে চলে গিয়েছে। মিষ্টি দ্রুত বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। ইভানকে গেইট দিয়ে বের হতে দেখে চেঁচিয়ে বললো,

—- হারামখোর! বাসায় আসিস আজ তুই।

নিচ থেকে ইভান পেছন ফিরে বলল,

— আসবো তোর জন্য সতীন নিয়ে।
দেখি তুই কি করতে পারিস।

— বরণডালা সাজায় রাখবো তোদের জন্য।
বাসায় আয় আজ শুধু।

দুজনের চেঁচামেচিতে আশেপাশে ফ্ল্যাটের ভাবিরা এবং তাদের বাচ্চারাও বেলকনি দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারতো লাগলো। ইভান তাদের তাদের দিকে এমনভাবে তাকালো,যেটা দেখে তারাও সুর সুর করে স্থান ত্যাগ করলো।

ইভান ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দানব আকৃতির বিল্ডিংয়ের সামনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো। লোকজন তেমন নেই এদিকে। ইভান মনে মনে নতুন ভাবনার চক খসলো। আজ খেয়েদেয়ে একদম রাত বারোটার দিকে বাড়ি ফিরবে। ক্ষুধায় কাতর হয়ে যাক মিষ্টি। তাও একটা ভাতের দানাও নিয়ে যাবে না আজ। আধঘন্টা ঘুরলো ফিরলো রাস্তায়।নিরিবিলি পথ দিয়ে রেস্টুরেন্টের রাস্তা ধরার জন্য যেই না এগোতে যাবে,ওমনি দশটা মতো কুকুর তেড়ে আসতে লাগলো ইভানের দিকে। ইভান ছোট বেলা থেকে কুকুরকে ভীষণ ভয় পায়।ভার্সিটি লাইফেও মিষ্টির সামনে কম লজ্জায় পড়েনি। ভাগ্যটা ঘুরেফিরে মিষ্টির সামনেই তাকে কুত্তা তাড়ানি খাওয়াতো। নির্মম ভাগ্যের পরিহাস,আজও এই জনমানবহীন রাস্তায় কুত্তার তাড়ানি খেতে চলেছে সে। মিষ্টি একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলো তাকে। কুকুর দেখলেই যেনো মাটিতে হাত দেয়।তাতে কুকুররা ভয় পেয়ে পেছনের দিকে ছুট লাগায়। আজও মিষ্টির কথানুযায়ে ইভান মাটিতে হাত রাখলো। কিন্তু মাতাল কুত্তাগুলো দ্বিগুন ঘেউ ঘেউ করতে করতে ইভানের দিকে প্রচণ্ডবেগে ছুটে আসতে লাগলো।
আজীবন কুত্তাকে ভয় পাওয়া ইভানের,সময়টা আজও ব্যাতিক্রম গেলোনা। এক তাড়ানিতে একেবারে বাসার সামনে এনে দিয়েছে। সর্বশরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেলো৷ এতো বড় দামড়া ছেলে কুকুর দৌড়ানি খেয়েছে শুনলে মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। ইভান চারপাশে উঁকি দিতে দিতে উপরে তাকালো।ঠিক তৎক্ষনাৎ মিষ্টিকে সেখানে দাঁড়িয়ে হাসতে দেখে চট করে বুঝতে পারলো এই অকাজটা কে করিয়েছে। মিষ্টি হাতের তর্জনী উঁচু করে দেখালো গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দারওয়ানকে। দারওয়ানটা একদম হালকা বয়সের। ইভান আর মিষ্টির বছর দুয়েকের বড় হবে। তার শরীর জ্বালানো হাসি দেখে ইভানের চতুর মস্তিষ্ক বুঝলো দারওয়ানের সাহায্য নিয়ে মিষ্টি কুত্তাগুলাকে হায়ার করে তাকে তাড়ানি খাইয়েছি।
ইভান মিষ্টির দিকে চেয়ে বলল,

— এ জীবনে যদি আমি বেঁচে থাকি,
তাহলে এর শোধ আমি নিবোই।

— শ্লা! দরজা খোল আগে। তোর সাথে
কোস্তাকুস্তি করার মতো চর্বি আমার নেই।
চট করে দরজা খোল।

— এ্যাই ভাষা ঠিক কর।

— আমি ছোটলোক।আমার ভাষাও
হবে ছোটলোকি।

ইভান চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে লাগলো।একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করা দরকার।গলা শুকিয়ে এসেছে। উফফ!

ইভান ঠাণ্ডা পানি খেয়ে তাদের ঘরের দরজাটা খুললো। হঠাৎ অস্থির লাগতে শুরু করলো ইভানের। মাথা চক্কর দিতে শুরু করলো। ঘামের পরিমাণ আরো বাড়তে লাগলো। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসার আগেই ধপ করে বিছানার উপর গিয়ে গড়িয়ে পড়লো। ইভানকে হঠাৎ এভাবে বিছানায় পড়ে যেতে দেখে মিষ্টি আতঙ্কিত হয়ে হাতের ব্যাগ ছুঁড়ে মেরে তড়িৎ বেগে ইভানের কাছে ছুটে আসলো। ইভান তখন চোখ বন্ধ অবস্থায় মিষ্টির হাতের স্পর্শ পেয়ে হাতটা শক্তকরে চেপে ধরলো। ইভানকে এমন অস্বাভাবিক রূপে দেখে মিষ্টি কেঁদে ফেললো। উৎকন্ঠিত হয়ে ইভানের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো।ইভানের সাড়া না পেয়ে মিষ্টি পাগল হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আগের তুলনায় গলার স্বর বাড়িয়ে ডাকতে লাগলো।তাতেও ইভানের সাড়া না পেয়ে মিষ্টি হিতাহিত জ্ঞ্যান হারিয়ে ফোনটা বের করে কাদের যেনো ফোন দিলো।
_______________
©তারিন_জান্নাত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here