#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-৫
সকালে সবার নাস্তা করার পর জানতে পারলাম পরশ আসবে ১সপ্তাহ্ পর। আমার কেনো জানি খুব ভয় লাগতেছে। আমি কি পরশকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছি? ইশ্ মিফতি আপু যদি পরশের ১বছরের ছোট না হয়ে বড় হতো তাহলে হয়তো আমার ভয় থাকতো না। কাকিমায়ের চাচাতো বোনের একমাত্র আদরের মেয়ে মিফতি আপু। লন্ডনে পড়াশোনা করেছে তাই অনেক বেশি মডার্ণ। বড় কাকু, কাকু আর সুমু ভাইয়ের সামনে কতো ইজিলি শর্ট স্কার্ট পরে থাকে। আচ্ছা পরশ কি এমন মেয়েকে পছন্দ করবে? হয়তো করবে। প্রায় ৭বছর থেকে ভিনদেশে থাকতেছে তো এমন গোরী মেম কেই তো পছন্দ করবেন। আমি কিছু একটা মনে পরায় নিজের ঘরে আসলাম।
-আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতেছি প্রায় ২০মিনিট হয়ে গেছে কিন্তু কিছুই বুঝতেছি আসলে আমি কি দেখতে চাচ্ছি? সাদা চামড়া হলেও ফ্যাকাশে হয়েছে গেছে মুখখানা। ফুল স্লিভ হওয়ায় হাতগুলো দৃশ্যমান না হলেও প্রচুর শক্ত হাত-পা ও বাকী সেসব অংশ যেগুলোতে কাকিমার বেঁতের ছোঁয়া পেয়েছি। মাথাটা হালকা পিছনে ঠেলে দিয়ে দেখলাম যেটার কারণে আজও কথা বলতে কষ্ট পাচ্ছি সেই জায়গাতেও লম্বা কালসিটে দাগ হয়ে আছে তবে তা নরম হয়তো একবার লেগেছে তাই। পরশ আমায় ছেড়ে দেবে?(আবারও কান্না করছি কিন্তু চোখের পানিরা বেঈমান হওয়ায় আমার কষ্ট হালকা করতে ঝড়ছেনা তারা। আমি চাই তারা ঝড়ুক খুব করে চাই।)
“আমি চাই পরশ তুমি.. মানে আপনি মিফতি আপুকে বিয়ে করতে যেনো নাকোজ করে দেন। উফ্ কিছুই ভাবতে পাচ্ছিনা। আমায় ভালো না বাসলে বিয়ে কেন করে গেছিস? কামিনা তোকে তো আমি ওয়াশিং মেশিনে হুইল দিয়ে নাহ্ নতুন কি যেন ওটা?(ভাবার ভং করে) হ্যাঁ ভ্যানিশ! বাহ্ মৃদু বাহ্ আম প্রাউফ অফ ইউ। পরশের চিন্তা-ভাবনাও পরিষ্কার হবে সাথে ওর শরীরের রংটাও পাল্টাবেনা।(হুহা করে হেসে দিলাম)”
নিজের ভাবনায় এতোটা বিভোর ছিলাম যে পিছনে দাড়িয়ে থাকা পরীকে খেয়াল-ই করিনি। পরী আমার হাসি দেখে অবাক হয়ে খুব জোরেই প্রশ্ন ছুড়ে মারে-
“মৃদুউউউউ!!!!(চিল্লিয়ে) কি হয়েছে বল আমাকেউ বল। ভাইয়ার সাথে ঘটে যাওয়া কোন রোম্যান্টিক মোমেন্ট নিয়ে তাইনা? বলনা আমায়ও বল। আমিও একটু হাসি। মমম না থাক হয়তো আমার হাসিতে তুই লজ্জা পাবি।(বলেই নিজেই বোকার মতো হাসতেছে)”
আমার মুখের কোন রিয়েক্শন না দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবারো প্রশ্ন ছুড়ে-
“অন্য কিছু নিয়ে ভাবতেছিলি?? ঐ তোরে ছেড়ে যাওয়ায় ভাইয়াকে শায়েস্তা করার কথা ভাবছিলি নাতো? এমনটা হলে কিন্তু ভুলে যা।”(খাটের উপরে দুই পা তুলে আয়েশ করে বসে পরী)”
“কেন নয়? যার জন্য আমি এতোগুলো বছর কষ্ট পেলাম তাকে একটু কষ্ট দিবোনা?”
“না বইন এম..উপস্ সরি ভাবি (মেকি হাসি দিয়ে) আসলে ভাইয়ার সাথে যখন কথা বলি ভাইয়া তো কথায় কথায় রেগে যায়। মনে হয় এখন আগের থেকেও বেশি রাগ বাড়ছে ভাইয়ার।”
“গাধা ওটা রাগ না উন্মাদীপনা। তোর ভাই একটা উন্মাদ।”
“সেটা শুধু তোর জন্য আমাদের জন্য তো ভয়ংকর রাগী।”
কিছু একটা মনে পরায় পরীকে প্রশ্ন করলাম-
“এই ফাজিল মাইয়া!! তোমার ভাই আসবে তাই তুমি আসছো তাইনা?”
“পরী জোরপূর্বক হাসি দেয় কিন্তু কিছু বলেনা।”
.
দুপুরের রান্না শেষ করে ঘরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথেই কাকিমা তার রুমে যেতে বললেন। আমাকে দেখে কাকিমা নড়েচড়ে বসলেন। এমন করতে কাকিমাকে কখনো দেখিনি তাই বেশ খটকা লাগলো। এমন কি বলবে যার জন্য ইতস্ততবোধ করছেন? কাকিমা একটু সময় নিয়ে বলতে শুরু করলেন-
“দেখ মৃদু তোর বাপ-মা জিন্দা নাই তাই তোকে শত চাইলেও ফেলে দিতে পারতাছিনা। শুনছিস তো পরশ আসতাছে ১সপ্তাহ্ পরেই, কি শুনিসনি?(আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম) আমি চাইনা তুই পরশের আশেপাশে যাস কেননা মিফতিকে বৌ বানাবো আমি। পরশ ৭বছর থেকে আমেরিকায় আছে ওর পছন্দও ওমনই হবে মিফতির মতো মডার্ণ মেয়ে। পরশ তো আমেরিকায় থাকেই, ওকে বলবো যেনো মিফতিকে নিয়ে ওখানেই চলে যায়।চেষ্টা করবি যেনো তুই পরশ যেখানে থাকে কোনভাবে যেতে না পারিস। আর তুই আমাদের সাথেই থাকবি। আামি জানি তুই সুমেনকে ভাই হিসাবেই মানিস কিন্তু বড় আপা তোকে পছন্দ করে এখন থেকে না ছোট থেকেই। সে এখনো চায় তোকে সুমেনের বৌ বানাইতে। আমি যে তোকে মারি সেটা ওনার পছন্দ না, ওনার কষ্ট হয় তাই ওরা তোকে এড়িয়ে চলে। পরশ মিফতিকে বিয়ে করে চলে গেলেই সুমেনের সাথে আমি বিয়ে দিবো তোর। আমার বলা শেষ এখন ঘরে যা।”
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু আমি একই ভাবে বসে আছি আয়নার সামনে। দুপুরের খাওয়ার জন্য পরী ডেকেছিলো অনেকবার কিন্তু আমি গেট খুলিনি। আয়না আমার একমাত্র নিঃসঙ্গতার সঙ্গি যার সাথে কথা বললে বিনিময়ে আমায় প্রশ্ন করেনা। কি হচ্ছে আমার সাথে আমি যে কিছুই বুঝতেছি না। আমাকে এ বাড়ির কেউ কি মানুষ মনে করে না? সবাই কি ভাবছে আমার শরীরের সাথে মনটাও লোহার হয়ে গেছে? নাহ্ এমনটা মোটেও নয়, কিন্তু পরশও তো আমায় কখনো ‘ভালোবাসি’ বলেনি। তাতে কি? কর্মে তো প্রকাশ করেছে। ইশ্ চোখের অশ্রুরা যদি আজ আমার পাশে থাকতো হয়তো এতোটা কষ্ট হতোনা। আমি আমার ভালোবাসা সেক্রিফাইস করবো হুম এটাই করবো। যদি পরশ আমায় ডিভোর্স দিতে চায় আমার উচিৎ হবেনা তাকে বাঁধা দেওয়া কিন্তু সুমু ভাই? ছিঃ এটা আমি আমার কল্পনার জল্পনাতেও আনতে পারবোনা। অসম্ভব এটা সম্ভব না। চলে যাবো অনেক দূরে যেখানে এদের কথা মনের এককোনাতেও আসবেনা।
.
.
আগামীকাল পরশ আসবে আর এতে যেনো মিফতি আপুর পোশাকের সাথে কোন তালুকাত্ আছে। যত পরশের আসার সময় আসছে আপু তার নিজের কাপড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। যখন সে কাকুদের আর সুমু ভাইয়ার সামনে যায় আমি লজ্জায় যেতে পারিনা। কাকিমার জন্য কাকুরাও কিছু বলতে পারেনা মাথা নিচু করে বসে থাকে। আমার তো বিশ্বাস করতে প্রচুর কষ্ট হয় যে কাকিমা এমন একটা মেয়েকে পরশের বৌ বানাতে চায়।
.
আজ পরীর সাথে আছি। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর আমি ভাবতেছি। পরশ কাল আসবে আমায় ডিভোর্স দিবে আর আমি চলে যাবো।
“পরশ ভাই প্লিজ তুমি আসিও না। আমি এমনই থাকতে পারবো তবুও তুমি আসিও না প্লিজ। তুমি হয়তো ভালোবাসোনা আমায় আমি তো বাসি গো। মনের সাথে শরীরটাও আজ পাল্লা দিয়ে ব্যথা অনুভব করাচ্ছে।
.
কাকিমা বলেছে যেনো আমি পরশ ভাই থাকাকালীন সে উঠার আগেই নাস্তা বানিয়ে রেডি রাখি। কোনো ভাবেই যেনো তার সামনে আসার সুযোগ না থাকে। নাস্তা তৈরী করতেছি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। পরশ কি চলে এসেছে? মিফতি আপুর গলার স্বর শুনতে পাচ্ছি সে এমন ভাবে চিল্লাচ্ছে যেনো তাকে সম্পূর্ণ মহল্লাটাকে উঠানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর সে তা পালন করতেছে। দরজা খোলার কিছুক্ষণ পরই কাকিমার কান্নার আওয়াজ কানে ভেসে আসলো। আমার খুব ইচ্ছা করতেছে পরশকে একটু দেখার। ওনার চুলগুলো আমার খুব পছন্দের ছিলো এখন কেমন আছে সেগুলো? আগের মতোই? নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম লুকিয়ে একনজর দেখবো। যেই ভাবা সেই কাজ। চুপিচুপি দেখার চেষ্ঠা চালাচ্ছি কিন্তু সবাই পরশকে এমনভাবে ঢেকে রেখেছে যেনো ‘কোহিনুর’। অবশ্য ‘কোহিনুর’ই তো তবে সেটা আমার। এই তোমরা(সবার উদ্দেশ্যে) সরতো আমি একটু উনাকে দেখবো। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি কিন্তু তার একইঞ্চি পরিমাণ কিছুই দেখা সম্ভব হলোনা কিন্তু আমার রুটির জ্বলে যাওয়ার গন্ধ ঠিকই পেলাম। উফ্ আমিও ইদানিং এতোটা মন ভুইলা হয়ে গেছি যে রান্না করা অবস্থায় দুনিয়ার সকল বিষয়বস্তু নিয়ে ঘাটাঘাটি করি।
.
চলবে-
.
*