কাঠপুতুল পর্ব ১৭+১৮

১৭+১৮

#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১৭
.
“মৃদপাখি বিয়ে করবে?”
“কাকে?”
“আমাকে বাদে অন্য কেউকে করার ইচ্ছে আছে নাকি?”
“নাহ্ সেটা নেই তবে অন্য কারো সাথে তুমি নিজে দিতে চাইলে বাঁধা দিবোনা।”-বলেই মিটিমিটি হাসে মৃদু।
পরশ মৃদুকে কিছুক্ষণ দেখে অধরে ছোট করে চুমু দিয়ে বলে-
“ভালোবাসি মৃদপাখি।”
“আর আমি?”
“তুমি বাসো কিনা সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই মৃদপাখি। জানোই তো যার মাথা তার ব্যথা। তাই তুমি তোমার মাথা ব্যথা বাড়াও কারণ তুমি আমার। হয় নিজে থেকে ভালোবাসা দাও নয়তো জোর করে নিবো।”
“জোর করে কিভাবে সম্ভব?”
“আমি বলতে নয় করে দেখাতে বিশ্বাসী মৃদপাখি।”-বলেই মৃদুকে কোলে তুলে নেয়।
“আমি নিজেই যেতে পারবো তো।”
“আমি থাকতে এত কষ্ট করতে হবেনা তোমার। এখন জলদি শাওয়ার নিয়ে আসো, আমি আন্বিষের সাথে কথা বলে আসতেছি। জলদি করবে আমরা বাহিরে যাবো।”
“কোথায় যাবো?”
“উফ্ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। যাও এখন”
.
“পরশ তুমি কি রুমে আছো?”
কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে চোখ বুলিয়ে দেখে রুমে পরশ নেই।
“এভাবে ভেজা শরীর নিয়ে রুমে গেলে তো রুমটাও ভিজে যাবে। বেকুব টা কাপড় পর্যন্ত দিয়ে যায়নি। আমি তো এখানে নিজে থেকে আসিনি, এখন কাপড় কোথায় পাবো? সে থাকতে নাকি আমার কষ্ট করতে হবেনা। হাহ্। হাউকা কথা বলে।”
“পরশশশশশশশ-জোড়ে চিল্লিয়ে ডাকে।”
পরশ হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে। মৃদুকে রুমে না দেখে বাথরুমের দড়জায় চোখ দিতেই দেখে মৃদু দড়জা হাল্কা খুলে মাথা বের করে রেখেছে।
“কি হয়েছে এভাবে ডাকলে কেন?”
“তুমি তো বলেছিলে তুমি থাকতে আমার কষ্ট করতে হবেনা।”
“কেন তোমার বিশ্বাস হয়না?”
“আমার কাপড় কই?”
পরশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মৃদুকে কাপড় দিতে ভুলে গেছে সে, মৃদু সানজুর বাড়িতে আছে শুনেই অন্নেকগুলো শাড়ি কিনেই এসেছিল সে। কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে মৃদুর দিকে এগিয়ে যায়। মৃদু বলে-
“কাপড় সাথে করে নিয়ে আসো।”
দড়জার সামনে দাড়িয়ে মৃদুর মুন্ডু দেখতে ব্যস্ত পরশ। মৃদুর ইতিমধ্যে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে। পরশের হেলদোল না দেখে চিল্লিয়ে বলে-
“পরশশ আমার ঠান্ডা লাগতেছে।”
তাতেও পরশের হেলদোল না দেখে দড়জা লাগিয়ে দেয়ার জন্য মুখ ঢুকিয়ে নেয় মুদু। সাথেই পরশ বাথরুমে ঢুকে পরে। মৃদু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে, আর কিইবা করার আছে? প্রচুর কাঁপুনি শুরু হয় মৃদুর। পরশ মৃদুকে লজ্জা পেতে দেখে জড়িয়ে ধরে।
“উফ্ মৃদপাখি আমিই তো। লজ্জা পেতে হবেনা বউ। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে-টাওয়ালে দারুণ মানিয়েছে বউ, বিয়ের পরে টাওয়াল পরেই থাকবে বুঝছো?”
পরশের কথায় লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে যায় মৃদু। হুট করেই সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে গেছে মানুষটা। এভাবে লজ্জা দেয়ার মানে কি? নিজে থেকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরশকে। লজ্জা নিবারনের স্থান তো এখন পরশের বুকটাই।
.
শপিং মলে-
“আমরা এখানে কেন এসেছি পরশ?”
“বিয়েতে কি পরতে চাও মৃদপাখি?”
“আবারো বিয়ের কথা বলছো? বিয়ে তো হয়েই গেছে আমার, তোমার সাথে।”
“তো? আমরা আবারো বিয়ে করবো।”
“কেন?”
“আমার ইচ্ছা।”
“আজব! হঠাৎ ইচ্ছে হলো কেন?”
“বাসর হয়নি যে।”
.
.
মৃদুর জন্য মেরুন কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা নেয় পরশ সাথে নিজের জন্য সেম কালার পাঞ্জাবী। মৃদু এখনো মাথা উঁচু করে নিজের জন্য নেয়া লেহেঙ্গাটাই দেখতে পারেনি। পরশের হুটহাট দেয়া লজ্জায় খুব বেশি অসস্তিতে পরে যায় সে। মৃদুর মনে হয় আগের পরশই ভালো ছিল। আবার ভাবে আগে পরশ কেমন ছিল? আমার হওয়ার পরে তো সে আমার সাথেই ছিলোনা আবার তার আগেও কাছে থেকেও দূরেই ছিল। আমি এইসব ভাবছি কেন? পরশ যেমনই হোক না কেন এখন সে আমার এটাই যথেষ্ট।
“মৃদপাখি?”
“হুম-পরশের দিকে তাকাতেই সবার অগোচরে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মৃদুকে।”
মৃদু আবারো মাথা নিচু করে তবে এবার হেসে দেয়। এই ভালোবাসা যে তার জন্য বরাদ্দ ছিল, তাই এখন সেটা উদয় হচ্ছে।
.
আন্বিষও নিজের আর সানজুর জন্য শপিং করে। পরশসহ প্ল্যানিং করেছে একসাথে বিয়ে করবে তারা।
পরশের ফোনে কল আসতেই দেখে পরী কল দিয়েছে, রিসিভ করতেই পরীর কথা শুনে রেগে যায় পরশ।
“কি হয়েছে পরশ? এভাবে রেগে গেলে কেন?”
“তোর শাশুড়ি মা জেল থেকে বেইল পেয়েছে মৃদপাখি।”
পরশের কথা শুনতেই খুশি হয় মৃদুলা। মৃদুলার খুশি দেখে রেগে যায় পরশ।
“খুশি হওয়ার কিছু নাই বউ। তোর শাশুড়ি মাকে তোর বর শাস্তি দিবে তাও অনেক বেশি পরিমাণে।”
“সেটার প্রয়োজন নেই পরশ। আমার তুমি হলেই চলবে আর কিছু চাইনা আমি।”
“আমি তোর জন্য না তোর সাথে করা আমার প্রতি অন্যায়ের শোধ নিবো।”
“তোমার প্রতি অন্যায়?”
“চুপ থাক আর একটা কথাও বলবিনা। যদি বলিস তো সবার সামনে ঠাটিয়ে কিস করে দিবো।”
পরশের কথা শুনে সবার সামনেই কান্না করে দেয় মৃদু। মৃদু হুট করে কান্না করায় পরশ ভয় পেয়ে যায়।
“কি হয়েছে মৃদপাখি কান্না করছো কেন? তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছে বলো প্লিজ।”
মৃদু মাথা তুলে দেখে সবাই ওর দিকেই ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে। থাকবে নাইবা কেন? এভাবে কান্না করাটা নেহাৎ বোকামী ছাড়া কিছুনা। তবে এই কান্নাটা যে খুশির। এতো ভালোবাসা সইবে তো মৃদুর কপালে?
“বাড়িতে নিয়ে চলো আমাকে পরশ।”
.
.
৭দিন পর-
.
সানজুর বাড়িতেই সব আয়োজন করা হয়েছে। সানজুর ফ্যামিলিসহ পরী, জুনায়েদ, সুমেন, কুহেলী, আশনি, রাবিত, পরশের বাবা আর সুমেনের বাবা মা এসেছে।
কাঠপুতুলকে আজ মৃদপুতুলে রূপান্তর করা হয়েছে। পরশ একবার দেখেছিল শুধুমাত্র, একনজর দেখে আর চোখ তুলে তাকায়নি। বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই পরশ সবাইকে বলে-
“আমি আগামী সপ্তাহেই মৃদপাখিকে নিয়ে আমেরিকায় ফিরে যাবো। এইদেশে থাকা পসিবল না আমার জন্য।”
পরশের বাবা বলেন-
“কিন্তু কেন পরশ? কোনো প্রয়োজন নেই বাবা, তুই আমাদের সাথেই থাকবি।”
“সরি বাবা। আমি তোমার বউয়ের সাথে একই বাড়িতে থাকতে পারবোনা।”
“পরশশ সে তোমার মা। এভাবে বেয়াদবি করার কারণ কি?”
“তুমি কি জানোনা বাবা তোমার বউ আমার বউকে কতটা কষ্ট দিয়েছে?”
“আচ্ছা তাই বুঝি? তো তুমি কেন মৃদুলাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলে?”
“সেটা অনেক পুরোনো বিষয় বাবা। সেটা আমার ভুল ছিল, আমি আমার মৃদপাখিকে সব বলেছি।”
“তোমার ঐ ডিসিশনটার জন্যই তো আমার বউ তোমার বউকে কষ্ট দিয়েছে।”
“আপনার বউ একজন খুনি বাবা।”
“তো তুমি কি খুনি নও? কি ভেবেছো আমি কিছুই জানিনা?”
সবাই শকড্। রুশানা বেগমকে পরশ খুনি বলতেছে কেন? সে আবার কাকে খুন করলো এই একটা প্রশ্ন সবার মাথায় খুব জোড়ে আকডুম-বাকডুম করে ঢোল পিটাচ্ছে। কিন্তু বাবা-ছেলের কথার মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস কারোই নেই। পরশ পরীকে উদ্দেশ্য করে বলে-
“পরী মৃদপাখিকে নিয়ে রুমে যা।”
“ওকে ভাই।”
পরী মৃদুকে নিয়ে চলে যেতেই পরশ তার বাবাকে বলে-
“তোমার বউ আমার বউয়ের সবথেকে কাছের মানুষদের খুন করেছে, আর আমি করেছি যারা আমার মৃদপাখিকে আমার থেকে দূর করে দিতে চেয়েছে।”
“সেই তালিকায় তো তোমার মা ও পরে। তাকেও বুঝি খুন করে ফেলবে?”
“সেটা তো করবো না তবে সে তার কর্মের জন্য আমাকে হারাবে বাবা। চলে যাবো এখান থেকে কখনই ফিরে আসবোনা।”
“বাড়িতে থেকেই তো শাস্তি দিতে পারো। আমিও সাথে থাকবো তোমার। কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।”
এটাই তো শুনতে চেয়েছিল পরশ। বাবার সাপোর্ট থাকলে ইচ্ছামতো জব্দ করতে পারবে রুশানা বেগমকে।
.
রাত ১২:২৩মিনিট-
পরী পরশের কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছে উদ্দেশ্য বাসর ঘরে ঢুকতে দিবেনা। টাকা চাওয়ার দাবী না করলেও আঁটকে রাখতে কোন বাঁধা মানবেনা সে। এদের ভাই বোনের চক্করে বেচারা আন্বিষ ফেঁসে গেছে। আন্বিষের হাত ধরে আছে আশনি। পরী আর আশনির চোখে-মুখে দু্ষ্টুমি ভরা হাসি।
“পরী তুই কি এখন আমাকে ছাড়বি নাকি দিবো দুইটা থাপ্পড়?”
“আহ্ ভাই কিসব বলছো বলতো। আজকের দিনে এটা আমার অধিকার।”
“রাখ তোর অধিকার। আমার অধিকার ক্ষুণ্ন করে নিজের ফালতু অধিকার ফলাচ্ছিস?”
“সরি ভাই আচ্ছা যা তুই।”
“সেটা তো যাবোই। আমি যেমন দ্বিতীয়বার বিয়ে করলাম, তেমনি তোরও বিয়ে দিবো। তোর বরকে সারারাত তোর কাছে যেতে দিবোনা তখন বুঝবি।”
“আমিতো বাসর করে ফেলেছি। দ্বিতীয়বার বিয়ের দরকার নেই।”
পরীর কথায় জুনায়েদ লজ্জা পেয়ে যায়। এই মেয়েটার মুখে কিছু আটকায় না। বিয়ের আগে কত ভালো ছিল কিন্তু বিয়ের পরেই যেন লাজ-লজ্জা ধুয়ে খেয়েছে। পরী নিজেও লজ্জা পায়, অনেক বেশি বেহায়া টাইপ হয়েগেছে যে। পরীর কথা শুনে পরশ আন্বিষকে ইশারায় যেতে বলে নিজেও উঠে যায়। বোনটাও ওর মতো বেহায়া হয়েছে। পরশ যেমন মৃদুকে হুটহাট করে লজ্জা পাইয়ে দেয়, তেমনি পরীও জুনায়েদকে হুটহাট লজ্জা পাইয়ে দেয়। পরশ আন্বিষ চলে যেতেই পরীর করা কান্ডের জন্য হুহা করে হেসে উঠে।
.
রুমে প্রবেশ করতেই পরশ দেখে মৃদু গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কাপড় চেঞ্জ না করায় এপাশ-ওপাশ করতেছে, ভারী লেহেঙ্গা হওয়ায় নিশ্চই অসুবিধা হচ্ছে ভেবেই ডাকতে শুরু করে মৃদুকে।
“মৃদপাখি? এই মৃদপাখি উঠো।”
“…………..”
“এই উঠো বলছি।”
“উমমম না।”
পরশ মৃদুর মুখে পানির ঝাপটা মারে। মৃদু ধরফরিয়ে উঠতেই পরশ মৃদুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে-
“সরি বউ আসতে দেরী করে ফেলেছি। তবে বাসর না করে তো তোমাকে ঘুমাতে দিবোনা।”
.
.
চলবে-

#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১৮
.
মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে পরশের মৃদপাখি। পরশের আবদার সে ঘোমটা তুলে তার মৃদপাখিকে দেখবে। মৃদু তো ঘুমের কারণে ঝিমুচ্ছে, চোখে পানিও দিতে দেয়নি। কেননা পানি দিলে তো বউ এর মেকআপ উঠে যাবে। এই প্রথম মৃদু এমন সেজেছে তাও আবার পরশের জন্য, তো তাকে দেখাতে হবেনা? প্রথম বিয়েতে তো স্কুলের ড্রেস পরেই ছিল।
পরশ মৃদুর সামনে বসে আছে। মৃদুর কোন হেলেদোল না দেখে ঘোমটা তুলে দেখে ঝিমুচ্ছে তার মৃদপাখি। প্রচন্ড হাসি পায় পরশের, সাথে রাগও। পরীর জন্য আসতে দেরি করায় মৃদু প্রায় ঘুমিয়েই পরেছিল।
“মৃদপাখি চেঞ্জ করে আসো যাও। এসব পরে ঘুমোতে কষ্ট হবে তোমার।”
“কিন্তু তুমি যে বললে আমার ঘোমটা তুলবে? কই তুলে দেখো।”
“তোমার ঘোমটা তোলাই আছে পাগলী। চেয়েছিলাম এখন অন্নেক সময় ধরে দেখবো তাই নিচে শুধুমাত্র একনজর দেখেছি। আমার দেখা হয়ে গেছে পাখি, তুমি চেঞ্জ করে আসো। এভাবে ঘুমোতে কষ্ট হবে তোমার।”
“নিয়ে চলো।”
“আমার সাথে যেতে চাও? আমি কিন্তু তোমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে পারবোনা, তোমার সাথেই থাকবো।”
“হুম চেঞ্জটাও তুমিই করে দিও।”
“সত্যি বলছো? আচ্ছা চলো।”
“এই নাহ্ নাহ্ আমি যাচ্ছি।”
মৃদু চলে যেতেই ব্রেইনটাকে ওয়াশ করতে চায় পরশ। অনেক বেশিই জ্যাম লেগে গেছে। প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করতেছে পরশ তার ছোট্ট মস্তিষ্কে। একটা সাধারণ লাইফ কি সে লীড করতে পারতোনা। তার ছোট খালামুনির জন্য সব শান্তি আজ উবে গেছে সবার জীবন থেকে। মৃদুর প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবে ভাবতে থাকে। পরশ চোখ বন্ধ করে থাকায় মৃদুকে দেখতে না পারলেও তার উপস্থিতি টের পায়।
“ভালোবাসি মৃদপাখি।”
“নিকুচি করি তোমার ভালোবাসার। নিচে তো একটাবারও আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেনা। জানোই তো, আরেহ্ না তুমি কিভাবে জানবে? আজ প্রথমবার আমার মুখে মেকআপ দিয়েছিলাম তাও শুধুমাত্র তোমার জন্য। আর তুমি? একবার দেখলেও না?”
“কে বলেছে মৃদপাখি আমি দেখিনি? কিছুক্ষণ আগেই তো দেখলাম তাও মনের তৃষ্ণা না মেটা পর্যন্ত। তো মৃদপাখির কি ঘুম এখনো চোখে হানা দিচ্ছে? তুমি ঘুমের কারণে কিছু মনে রাখতে পারোনি মৃদপাখি।”
পরশের কথায় শুকনো একটা ঢোক গিলে মৃদু। কিছুএকটা মনে পরতেই প্রশ্ন করে-
“সেদিন আমার রুমে কে এসেছিল পরশ? তোমার আগে কেউ ছিলো এই রুমে।”
“হুম আন্বিষ ছিল। তোমার জ্ঞান ফিরেছে দেখেই আমাকে ডেকে দিয়েছিল। মৃদপাখি আর কোন প্রশ্ন করবেনা প্লিজ।”
“আরও একটা প্রশ্ন পরশ। শুধু একটা প্লিজ?”
“আচ্ছা করো।”
“তুমি কাকিমাকে খুনি বললে কেন?”
“আমার এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে। কোনো উত্তরই দিতে পারবোনা। আমার এখন তোকে চাই মৃদপাখি।”
হঠাৎ করেই মৃদুর লজ্জা লাগতেছে। এতক্ষণ তো ছিলনা, তবে এখন কেন হচ্ছে? পরশ মৃদুর হাত টেনে নিজের সামনে বসায়। কপালে অধর ছুঁইয়ে গভীরভাবে একটা পরশের পরশ এঁকে দেয়। পূর্ণতা মেলে পরশের ভালোবাসার আর অবসান ঘটে মৃদুর কষ্টময় জীবনের।
.
.
.
৫দিন পর-
“পরশ আমার খুব ভয় লাগতেছে। কাকিমা যদি মেনে না নেয়?”
“হুম তুমি এভাবে গেটে দাড়িয়ে ভাবতেই থাকো। আমি পারবোনা তোমার সাথে এখানে দাড়িয়ে থাকতে।”
পরশের কথায় চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি ঝরে মৃদুর। কী আশ্চর্য ব্যাপার না? কাকিমায়ের করা আঘাতেও চোখ বেয়ে পানি বেরোতে নারাজ ছিল কিন্তু পরশের বলা যেকোনো কথাতেই তারা নিজেদের ঝড়াতে পাগল হয়ে যায়।
“তাই বুঝি? এই তোমার ভালোবাসা? আমাকে নাকি কষ্ট পেতে দিবেনা কিন্তু এখন আমাকে ফেলে যেতে চাচ্ছো?”
“তুমি আর তোমার মেলোড্রামা। আমি তোমাকে কখন কষ্ট দিলাম বলতো? কষ্ট তো তুমি আমাকে দিচ্ছো।”
পরশের কথা শুনে মৃদু পিছনে ঘুরে বাড়ির বাহিরে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করে। ইদানিং মৃদু অল্পতেই কষ্ট পায় আবার অল্পতেই অভিমান করে সাথে যতক্ষণ না তার অভিমান কমবে কথাই বলবেনা। মৃদুর এই রূপ নতুন তাই পরশের এটাকে সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রচুর জিদ্দি হয়ে যাচ্ছে মৃদু। পরশের ধারণামতে এসব হচ্ছে তার ভালোবাসার কারণে। মৃদুর করা ছোট ছোট আবদারগুলো ভালো লাগলেও অতিরিক্ত করা বিষয়গুলো পছন্দ হয়না পরশের। মৃদু গেটের কাছে পৌঁছোতেই পরশ দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে বাড়িতে প্রবেশ করে। রুশানা বেগম মাত্রই বের হয়েছে রুম থেকে। পরশ মৃদুকে কোলে নিয়ে আছে দেখেই রুশানা বেগম কটমট করতে থাকে। রুশানা বেগমকে দেখা মাত্রই পরশ মৃদুর গালে টুপ করে চুমু দিয়ে নিজের রুমের পথে হাঁটা দেয়। রুশানা বেগম শকড্! তাকে দেখিয়ে এটা করেছে বেশ বুঝতে পারছে সে।
মাথা নিচু করে বসে আছে মৃদু। পরশের করা কাজে খুব লজ্জা পেয়েছে সে। সম্পর্কে শাশুড়ি হয় যে মানুষটা তার সামনে এটা কিভাবে করলো পরশ ভাবতে পাচ্ছেনা মৃদু।
“মৃদপাখি এতো ভাবতে হবেনা তোমার। সবে তো শুরু, আরও অনেককিছুই করা বাকি আছে।”
মৃদু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মৃদুর পাশে বসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে-
“ভালোবাসি মৃদপাখি।”
মৃদু প্রতিউত্তরে কিছুই বলতে পারেনা। তার যে বলতে ইচ্ছে করেনা এমনটা নয়, কিন্তু কোথাও থেকে বাঁধা পায় সে।
.
.
রুশানা বেগমের সামনে দাড়িয়ে আছে মৃদু। সকালের ঘটনায় এখনো সে লজ্জার চাদরে মুড়িয়ে আছে, কিন্তু পরশের জন্য রুশানা বেগমের সামনে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। পরশের দেয়া কাজ সে কিভাবে করবে বুঝতেছে না। ভয়তো এখনো সে পায় রুশানা বেগমকে, মাথা না তুলেই মৃদু রুশানা বেগমকে বলে-
“মা পরশের জন্য এক কাপ কফি বানাতে বলেন মারিয়াকে।”
বলেই দ্রুতপায়ে চলে আসে রুমে মৃদু। ভয়ে এখনো তার হৃদকম্পন দ্রুতগতিতে লাফ্ফচ্ছে। মৃদুকে দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে পরশ। তার দেয়া কাজ যে তার মৃদপাখি করতে পেরেছে সেটা মৃদুর চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছে। রুশানা বেগম এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। মৃদু তাকে অর্ডার দিয়ে গেল? এতো সাহস সে পেয়েছে পরশের থেকে। এখন পরশকে ইচ্ছেমতো মারতে ইচ্ছে করতেছে রুশানা বেগমের। পরশের জন্য জেলেও থাকতে হয়েছে সাথে আবার এখন মৃদুকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে নাহলে মৃদুর সাহস আরো বেরে যাবে। মারিয়াকে কফি দিতে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় রুশানা বেগম।
.
“তুমি একটা খুব খারাপ পরশ।”
“ওলে আমাল বউটা বুঝি আদকে এতা জানলো?”
“তুমি একটা ঢঙ্গি।”
হুহা করে হেসে দেয় পরশ। মৃদুকে গেট থেকে সড়িয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে-
“ভালোবাসি মৃদপাখি।”
এবারো কোন উত্তর দিতে পারেনা মৃদু্। কেন পারেনা জানেনা কিন্তু খুব বলতে ইচ্ছে করে তার। *ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।*
.
কফি হাতে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে পরশ। মৃদুর থেকে মা কে দেয়া প্রথম ঝাটকার প্রমাণ এটা। তার মায়ের চেহারার এক্সপ্রেশন কেমনে হয়েছিল ভাবতে থাকে পরশ। ঝাটকা খেয়ে যে পটকা হয়ে ফোঁটেনি তার থেকে প্রমাণ মেলে সে মৃদুর বলা কথা বিশ্বাস করতে অনেক বেশি সময় নিয়েছে।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here