কিডন্যাপার (পর্ব :৫)
#S_A_Priya
খাতাটা বন্ধ করে দিলাম।চোঁখ গেলো উপরের দিকে।সিলিং ফিক্সড ঝাড়বাতি।লোকটার পছন্দ আছে বলতে হয়।ঘোর কাটলো সার্ভেন্ট এর ডাকে।হাতে ম্যাডিসিন ধরিয়ে দিয়ে বলল,
_’ম্যাম ম্যাডিসিন খেয়ে নিন।স্যারের অর্ডার। নয়তো চাকরি যাবে।
অতিরিক্ত কেয়ারিং বিরক্তিকর। তারপরও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।আবারো বলল,
_’ম্যাম বাড়িটা ঘুরে দেখবেন?
আচ্ছা এই সার্ভেন্টদের খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই?কত টাকা পায়?বড় জোর বিশ হাজার?তার জন্যই এতকিছু?বললাম,
_চলুন।
দরজার কাছে যেতেই বেবি ডল হাতটা ধরলো।চোঁখের দিকে তাকিয়ে আমার রিয়্যাকশান বুঝে নিলো।মৃদু হাসলাম।
।
বাড়ির বাহিরে পা বাড়ালাম।বিশাল বাগানটায় চোঁখ পড়লো।বাড়ির বাম পাশে সুইমিংপুল আর ডান পাশে গার্ডেন। ব্যাটা তো দেখছি হেব্বি ফুল প্রিয়।লাল টুকটুকে গোলাপ ঝাড়টা দেখে মনে হচ্ছে, আরহান চৌধুরীর ওয়াইফ বধূ সেঁজে ব্যাটার জন্য অপেক্ষা করছে।বাট ব্যাটা সময় দিচ্ছে না।মৃদ্যু হাসলাম।যাইহোক, বাড়িটা দেখলে সত্যি মুগ্ধ হতে হয়।গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে তাকালাম। রাজ প্রাসাদ বললে ভুল হবে না।আচ্ছা এ বাড়ির নাম কি?বাগান বাড়ি?জানিনা।সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করায় বলল “আহসান মঞ্জিল”।আহসান কে জানতে চাইলে বলল,কুমিরটার বাবা।আর এ বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে পায়ের নিচের ঘাস।ঘাসগুলো এমনভাবে ছেটে দেয়া হয়েছে মনে হচ্ছে ঘাসের কার্পেট।বাড়িটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য অন্তত আমার ১ মাসের প্রয়োজন।গাড়ির আওয়াজ শুনে চোঁখ গেলো গেটের দিকে।ব্যাটা সানগ্লাস পড়ে ড্রাইভিং করছে।ভাব দেখে মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট এর চেয়েও বেশি।মেমি হাত ছেড়ে গাড়ির পেছনে দৌঁড়াতে লাগলো।কুমিরটা তেডি স্মাইল দিয়ে স্লো-মোশন দিচ্ছে।হার্ট কিলিং স্মাইল।ফিল করলাম ঠোটের কোণে একচিলতি হাসি ফুটে উঠেছে।
।
সন্ধ্যায় রুমে বসে বোর হচ্ছিলাম।এমন সময় লোকটা দরজায় নক করলো।বললাম,
_আসুন।
চোঁখের দিকে তাকিয়েই বলল,
_’আপত্তি না থাকলে ডাইনিং এ আসুন।
_মিনিট খানেক পরে আসছি।
।
ডাইনিং এ মেমি যত্নসহকারে ব্রেড এর গায়ে জেলি মাখছে।চোঁখে চোঁখ পড়তেই মৃদু হাসলো। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটায় বসতে বসতে বললাম,
_আপনার মেয়ে বিশাল এক্সপার্ট। হেব্বি আর্ট করে।
মেয়েটা লোকটার হাতে জেলি মাখানো ব্রেড এগিয়ে দিল।এরই মধ্যে লোকটা বলল,
_মেয়ে?ম্যাম আই অ্যাম আনম্যারিড।সরি বর্তমানে ম্যারিড।
লোকটার কথায় খানিকটা লজ্জা পেলাম।বাট মেমি কে?ধরেই নিয়েছিলাম কুমিরটার মেয়ে।বললাম,
_সরি।মামনি ডাকতে শুনেছিলাম,,,
_ভুল হচ্ছে আপনার।ছোট বোনের মেয়ে।
ছোট বোনের মেয়ে?তাহলে ওরা?জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই লোকটা হাত দিয়ে থামিয়ে দিল।বলল,
_পরে না হয় জানবেন।আপাততঃ খেয়ে নিন।
মনে হলো মেয়েটার সামনে বলতে দ্বিধাবোধ করছে।ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য জোসের গ্লাসটা হাতে নিলাম।এরই মধ্যে মেয়েটা ব্রেড এগিয়ে দিল।মৃদু হেসে গ্রহণ করলাম।জোসের গ্লাসে একচুমুক দিলাম।ভালো বানিয়েছে।লোকটা কফির মগে চুমুক দিয়ে মাথাটা তুলে বলল,
_কাল থেকে ভার্সিটি যাচ্ছেন।
কথাটা শুনা মাত্রই গলায় খাবার আটকে গেলো।লোকটা পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
_ইউ অকে?
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বললাম,
_চাচার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো?
কফির মগে চুমুক দিয়ে মাথাটা তুলে চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল,
_’হুম।
_নিজ বাড়িতে?
_’ক্ষণিকের জন্য। ৬ মাস অন্য কোথাও এলাও না।আপাততঃ ভার্সিটি, আর আপনার বাড়ি পর্যন্তই এনাফ। অন্য কোথাও যেতে হলে আশা করছি পারমিশন নিতে ভুলবেন না।
লোকটার কথাবার্তায় ডাউট হচ্ছে। এত সহজে মেনে নিল?অন্য কোনো প্লেন নেই তো?ক্যামন যেনো খটকা লাগছে।
কফি শেষ করে মেমীকে ইঙ্গিত করলো রুমে যেতে।কথামত মেয়েটা ও রুমের দিকে পা বাড়ালো।ডাইনিং টেবিলে লোকটার সাথে একা বসে আছি। ক্যামন যেন অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।ডাইনিং ছেড়ে উঠতে যাবো,তখনি সুফার দিকে ইঙ্গিত করে বলল,
_আসছি আমি। আপনি বসুন।
কথা না বাড়িয়ে সোফায় বসলাম।লোকটা হাতে রিমোট ধরিয়ে দিয়ে লিভিং রুম ত্যাগ করলো।দূরন্ত চ্যানেল এ লাগিয়ে দিলাম।”ড্রাগন হান্টারস্”দেখছি।টিভি দেখার মোড নেই।আই থিঙ্ক, এই পর্যন্ত লোকটা আমার ট্রিটমেন্ট এর জন্য কম হলেও লাখ দেড়েক এর মতো টাকা খরচ করলো।বিনিময়ে কি পেলো?ইন মাই অপিনিয়ন,বিয়ে তারপর ডিভোর্স? এই তো?একটা চ্যালেঞ্জের জন্যই এতকিছু?খটকার উপর খটকা।এভাবে একের পর এক ভাবতে থাকলে মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হবে।আপাততঃ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যাক।
লোকটা হাতে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
_এটা আপনার জন্য।ড্রয়ারে ছিলো।ইউজ করা হয়নি।
ফোনটা নিবো কি নিবো না?ভাবতে ভাবতে হাত বাড়িয়ে ফোনটা ধরলাম।ওয়াও সামসাং গ্যালাক্সি নোট নাইন।এরই মধ্যে মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিলো চাচার কথা।বললাম,
_চাচাকে ফোন করতে,,,,
আর বলতে না দিয়েই বলল,
_ইয়েস।
লোকটার হ্যাঁ সূচক জবাবে আবারো ধাক্কা খেলাম।একবারও ভাবলো না, যদি চাচাকে সব বলে দেই?ইন মাই পয়েন্ট অফ ভিউ।লোকটা হেব্বি ইন্টিলিজেন্ড।ব্যাটা ঠান্ডা মাথার খুনি।যা করছে ভেবে চিন্তে করছে।আমার সিক্সথ সেন্স বলছে লোকটার ইয়েস বলার বাহ্যিক মিনিং এমন দাড়ায়,যে তোমার চাচা চাইলেও কিচ্ছু করতে পারবে না।
পাওয়ারফুল পার্সনরা হাই পারসোনালিটি হয় বলেই তাদের হাতে পাওয়ার থাকে।
এনিওয়ে,চাচার নাম্বারে ডায়াল করলাম।রিং হচ্ছে বাট রিসিভ করছেন না।সম্ভবত বিজি।দারোয়ান আঙ্কেলের নাম্বারে ডায়াল করতে যাবো অমনি চাচার নাম্বার থেকে কল আসলো।মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ হাতুঁড়ে দিয়ে পেঠাচ্ছে।রিসিভ করছি না দেখে ব্যাটা কিডন্যাপার বলল,
_’ম্যাম ইতস্তত বোধ হলে উপরে যেতে পারেন।
ফোন রিসিভ করে উপরের দিকে পা বাড়ালাম। ওপাশ থেকে চাচা হ্যালো বলতেই ভেতরটা ধরে আসছে।তড়িগড়ি করে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।কোনোরকম চাচা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লাম।অভিমানে বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলাম।খোঁজ না নেয়ার জন্য।মিনিট পাঁচেক পর চাচা নিজেই বললেন,
_আরহান চৌধুরী সব বলেছে।
চাচার কথা শুনে নিস্তব্ধ হয়ে রইলাম।অঝথা রাগ দেখানোর মানে হয় না।শান্ত রিয়্যাকশান দিচ্ছি। বললাম,
_তারপর?
_ভেবে দেখ ছেলেটা না থাকলে নীলা চৌধুরীর ডেড বডি দেখতে হতো আমাদের।
মেজাজ চরমে।চাচা সব জানেন?আর জেনে শুনে এতকিছু? লোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।৬ মাস পর ডিভোর্স।চাচা জানেন?আর কিডন্যাপড?ওপাশ থেকে চাচা আবারো বললেন,
_যা হবার হতে দে।৬ মাস পর আসছি।
কেটে দিলাম।এতকিছু ঘটলো অথচ উনি নিস্তব্ধ। নিজের মেয়ে হলে অন্তত দেখে যেতেন।কথায় বলে পর তো পর,আপন গুলা সব স্বার্থপর।চাচার কয়েকটা কথায় খটকা লাগলো।ফাস্টলি চাচা জানতেন যে,আমি সুইসাইড এটেন্ড নিয়েছি।অথচ দেখতে আসলেন না।সেকেন্ডলি, “যা হবার হতে দে” তারমানে, আরহান চৌধুরী নীলা চৌধুরীর সাথে যা ইচ্ছা করুক।নীলা চৌধুরী মেনে নিতে বাধ্য।আর শেষ খটকা, চাচা ৬মাস পর আসছেন।৬মাস পর ডিভোর্স।৬ মাসের আগে না আসার কারন? তারমানে কি ধরে নিবো?লোকটা চাচাকে ডিভোর্স এর কথাও বলে দিয়েছে?হিসেব কোনোভাবেই মিলছে না।আচ্ছা লোকটা চাচাকে ব্ল্যাকমিল করছে না তো?তড়িগড়ি করে নিচে নামলাম।লোকটা সুফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসছে।না বসে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম,
_ডিল অনুযায়ী চাচাকে ব্ল্যাকমিল করার কথা ছিল না।
ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ রেখেই বলল,
_আই হ্যাভ নো আদার অপশন।
চলবে,,