কিডন্যাপার (পর্ব :৭)
#S_A_Priya
ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ব্যাটা কিডন্যাপার স্মিত হেসে বলল,
_তো মামলা কবে করছেন?
কথাটা শুনা মাত্র লোকটার দিকে তাকালাম।ব্যাটাকে বুঝার চেষ্টা করছি।মামলা করে কিচ্ছু হবে না জানে।তাহলে এই ধরনের কুয়েশ্চান করার মানে?লজ্জা দিচ্ছে? ব্যাটার তেডি স্মাইল তাই প্রোভ করে।বললাম,
_”মাইট ইজ রাইট”
মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো সেই কিলিং স্মাইল দিল।বললাম,
_কাল থেকে ভার্সিটি যাচ্ছি।যদি ভার্সিটির নাম করে অন্য কোথাও???আই মিন ফলো করার মতো কয়টা গোন্ডা ভাড়া করলেন?
ব্যাটা অ্যান্সার না দিয়ে কেবল হাসলো। অপেক্ষায় রইলাম। যদি কিছু বলে?
এবার চোঁখের দিকে তাকিয়েই বলল,
_’সত্যি বলছি।করিনি।যা ইচ্ছা করুন।রাতটুকু এ বাড়িতে সময় দিলে চলবে।
দিনে সময় দিলেই তো হয়।রাত সময় দেয়ার কারণ? সমাজের ভয়ে?জানিনা।বললাম,
_আর যদি না দেই?
এমন প্রশ্নে লোকটা বিরক্তি নিয়ে চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল,
_’অন্যথায় এ বাড়ির বাইরে পা রাখা নিষেধ।
মনে হল ব্যাটাকে ভয় পেলাম।মুহূর্তেই চোঁখ ঘুড়িয়ে নিলাম।ব্যাপারটা হয়তো লক্ষ্য করলো। টপিক এড়ানোর জন্য বলল,
_’আঙ্কেল কবে আসছেন?
_’আফটার সিক্স মান্থ।চাচার পিছনে গোন্ডা লাগিয়ে দিয়েছেন।তারমানে চাচা প্রতিমুহূর্তে কি করছেন না করছেন নিশ্চই সব আপনার জানা?আর জেনেশুনে এই ধরনের কুয়েশ্চান করার মানে?
লোকটা কথায় সায় না দিয়ে স্মিত হেসে বলল,
_৬মাস পর দেশ ছেড়ে পালাবেন?
_দেখুন ৬ মাস পর এমনিতেই মুক্তি সো পালাবার প্রশ্নই আসে না।
_গুড পয়েন্ট।
ব্যাটা আর কিছু বলছে না।ভোর হতে এখনো দেরী আছে।আবারো নিরবতা।যা হবার হোক।সব উপরওয়ালার হাতে।মা-বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে কষ্ট কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।প্রয়োজনে কষ্টটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবো। ব্যাপার না।তবে এই ব্যাটাকে উচিৎ শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত শান্ত হতে পারছি না।আই অ্যাম ট্রায়িং টু এক্সেপ্ট মাই প্রেজেন্টস।
এনিওয়ে, এই ব্যাটার সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা।বললাম,
_আই উয়েন্ট টু নো সামথিং অ্যাবাউট ইয়োর ফ্যামিলি।
ব্যাটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বলল,
_মা-বাবা ইউ,এস,এ তে সেটেল্ড। যখন ইচ্ছে হয় বি,ডি তে পা রাখেন।আর ছোট বোন তার হাজবেন্ট সহ এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।
মনে হল মাথায় আকাশ ভেঙে পরছে।এই বয়সে মেয়েটা তার প্রেরেন্টসদের হারিয়েছে।লোকটা আবারো বলল,
_মেমি তখন দুই বছরের।এত কিছু মনে নেই ওর।আর কেউ ছিলনা বিধায় মেমির ফুফু আর তার হাজবেন্ট আমাদের জুরাজুরিতে ওকে আমাদের কাছে সফে গেছে।
_আর কেউ ছিলনা মানে?
_আই মিন মেমির দাদা দাদী বেঁচে নেই।ওর ফুফু তার দুই মেয়ে হাজবেন্ট নিয়ে নিউইয়র্ক।মেমিকে নিতে চাইলে মানা করি আমরা।মাঝেমধ্যে মেমীকে দেখতে আসে।
_’এক্সিডেন্ট কিভাবে হল?
_কার ব্রেকফিল।এক্সিডেন্ট বি,ডি,তে হয়।বিয়েতে এসেছিলাম আমরা।
_বাট মেমি?
_ও আমাদের কাছে ছিল।
মেমির লাইফ টা এই রকম? আই নেভার থট।হেলে পড়া চাঁদ টা এখনো মিটমিটে আলো ছড়াচ্ছে।সবকিছু নিস্তব্ধ। এই নিস্তব্ধতা মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।অতীত স্মরণ করিয়ে মনে হল লোকটাকে হিট করলাম।টপিক এড়ানোর জন্য বললাম,
_বাদ দিন।আপত্তি না থাকলে আপনার লাইফ সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যাটা চোঁখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
_এই তো,আমেরিকা থেকে সাইকোলজির উপর পি,এইচ,ডি।আর কিছু?
স্মিত হেসে বললাম,
_’স্পেশাল কেউ ছিল?আই মিন কোনো গার্লফ্রেন্ড?
_শুনবেন?
অ্যান্সার না দিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
ব্যাটা কিছু বলছে না।অপেক্ষায় রইলাম।আবারো নিরবতা।লোকটার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছি।মনে হল বলতে শুরু করেছে,
_’ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে ওকে আমি প্রথম দেখি।সি ওয়াজ জাস্ট গর্জিয়াস।একদিকে তার সোন্দর্য অপরদিকে তার ড্রেসাপ।এককথায় অপ্রতিরোধ্য সুন্দরী যাকে বলে।লাইন মারার জন্য অনেকেই ওর পিছনে ঘুরঘুর করছিল।চোঁখের সামনেই অফার করেছিল বেশ কয়েকজন। কেউ লাভ প্রপোজাল কেউ ম্যারেজ প্রপোজাল। সবগুলাই রিজেক্ট করেছে ও।রিজেক্ট করার পর ও অনেকেই জাস্ট ফ্রেন্ড হতে চেয়েছিল।আর আমি দাঁড়িয়ে থেকে কেবল দেখছি মাত্র।পেটে পেটে আমার মতো অনেকেই ছিল।
এই পর্যন্ত বলে লোকটা থেমে গেল।কৌতুহল নিয়ে বললাম,
_তারপর?
কয়েক সেকেন্ড পর বলল,
_”আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার “চেনেন উনাকে?
মাথে নেড়ে না সূচক জবাব দেওয়ার আগেই বলল,
_আমেরিকান বডিবিল্ডার।বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়াতে ৩৮তম গভর্নর। ২২ বছর বয়সে তিনি মিস্টার ইউনিভার্স হন। ৭বার মিস্টার অলিম্পিয়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।বডিবিল্ডার জগতের একজন প্রখ্যাত ব্যাক্তি।ভাবলাম দেখা করবো।
_করলেন?
_ইয়েস।আফটার দ্যাট,ভাবলাম উনার মতো বডিবিল্ডার না হতে পারি,জিম তো করতে পারি।
এই পর্যন্ত বলে লোকটা আবারো থেমে গেলো।আমার আবার কিউরিয়াস মাইন্ড।নেক্সট না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই।ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ব্যাটা আবারো বলল,
_ঘটনা টা এখানেই।ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন জিম করতে গেলাম,তখন ওকে দেখে অবাক হই।সে আমার আগে থেকেই প্রেকটিস করছে।আমাকে দেখে সে নিজেও অবাক হয়েছিল।ভেবেছিল আমি তাকে ফলো করে এই পর্যন্ত এসেছি।পরে তার নেগেটিভ থিংকিং দূর হয়।ফার্স্টলি হাই,হ্যালো টাইপ কথাবার্তা দিয়ে শুরু দ্যান আমার সম্পর্কে জানলো।আমিও জানলাম।
এই পর্যন্ত বলে লোকটা আবারো থামলো।কখন যে গল্পের মধ্যে ডুবে গেছি জানা নেই।লোকটা বলতে শুরু করল,
_’কম্পিউটারের উপর পারদর্শীতা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।সি ইজ অ্যান এক্সপার্ট। সম্প্রতি মাইক্রোসফট তাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়েছে।হার এক্সপ্যারিয়েন্স ইজ আউট অফ মাই থিংকিং।বাই দ্যা ওয়ে।ধীরেধীরে ওর মাইন্ড পড়তে শুরু করলাম।সে কি চায়,তার চুজ কি রকম,সেই রকম সাজার চেষ্টা করলাম।এককথায় ওর চোঁখে হিরো সাজার চেষ্টা করেছি।একদিন ওর বার্থডে পার্টিতে ইনভাইট করলো।লোকজন ও বলাবলি করছিল অমুকের সাথে অমুকের অ্যাফেয়ার আছে।তো ভাবলাম সুযোগ টা হাত ছাড়া করা যায় না।প্রপোজ করে বসলাম।
মুখ ফসকে কথাটা বলেই ফেললাম,
_’এক্সেপ্ট করেছে?
লোকটা আর কিছু বলছে না।মনে হল হি ইজ কনফিউজড, কথাটা বলবে কি’না।
_যখন শুনলাম ওর ফ্রেন্ডরা বলাবলি করছে,আরহান চৌধুরী ইজ রিজ্যাক্টেড ফ্রম তানিয়া।তখন মনে হল এই মুহূর্তে মরে যাওয়াই শ্রেয়।
_’হোয়াট ইজ দ্যা রিজন?
_আমার থেকে ভাল কাউকে ডিজার্ব করে।ফর দিস রিজন।লজ্জার মাথা খেয়ে বলেছিলাম,আই অ্যাম অ্যাডিক্টেড টু ইউ,ইউ আর মাই ড্রিম, ডোন্ট ল্যাভ মি অ্যালোন।
এই পর্যন্ত বলে লোকটা আবারো থেমে গেল।লোকটা কি কাদঁছে?জানিনা।হেলে পড়া চাঁদের আলোতে যতটুকু দেখলাম,মনে হয় না।বলল,
_এই সবে ওর সুতোর পরিমাণ ও ইন্ট্রেষ্ট নেই।অতি ভালবাসার সাইড এফেক্ট রূপে তখন পাগলামো শুরু করি।প্রায় দেড় বছরের মতো নিকোটিন, অ্যালকোহল নিয়েই পরেছিলাম।ওর সাথে আমার অ্যাফেয়ার ছিল,বাবা টের পেয়ে প্রায়ই বলতেন,ডোন্ট ফল ইন লাভ টু সি বিউটি। ভাবলাম রিভেঞ্জ নিবো।
_তো নিলেন?
_না। একজন প্রেমিককে দূর্বল করে দেওয়ার জন্য ওর ফেইসটাই এনাফ।তারপর আর কি? মনকে শক্ত করি।অনেক হয়েছে আর না।ওর সাথে সব কন্ট্রাক্ট অফ করে দিলাম।বি,ডি, তে চলে আসলাম।বি দ্যা গুড বাই আফটার দ্যা রিলেশান ইজ ওভার।
চলবে,,