কৃষ্ণময়ীর অলংকার পর্ব -১৭+১৮

#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
পর্বঃ১৭

নিভু নিভু আলোয় পৃথার মুখাবয়ব দেখে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল সিজান। নিঃশব্দে গিয়ে পৃথার পাশে বসে পড়ল। পৃথা নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে সামনে। তার অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই সে ইহজগতে আদৌ আছে কিনা। সিজান সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পেটের ভেতরটা গুড়গুড় করছে। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিলেও মুখ ফুটে বের হতে চাইছে না কিছুই।
কিয়ৎকাল পর সিজান আচমকা দোলনা ছেড়ে পৃথার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল। সহসা এহেন কান্ডে পৃথা তাকাল সিজানের মুখপানে। ক্লান্তি হীন সে দৃষ্টি। নেত্রকোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা নোনাজল। মৃদু আলোয় তা সিজানের দর্শনেন্দ্রিয়ে ধরা পড়ল কিনা কে জানে। পৃথা নিরলস ভঙ্গিতে তাকিয়েই রইল।
সিজান অপটু হাতে পৃথার এক হাত মুঠোয় পুরে নিল। পৃথার গতিহীন কলেবরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ কাপণ ধরল তাতে।
সিজান নিম্নস্বরে বলল,
“আমি জানি আমি ভুল করে ফেলেছি। ওইটুকু সময়ের মধ্যে কি থেকে কি বলেছিলাম আমি ভাবিনি তখন। তখন কেবল একটাই ভাবনা ছিল আমার। তপাকে সরাতে হবে ওই নরক থেকে। নাহলে ও বাঁচবে না। সত্যিই বাঁচতো না ও। বাঁচতে দেওয়া হতো না ওকে। আমি তপা কে সরানোর জন্য এর থেকে ভালো উপায় আর পাই নি। কিন্তু আমি যে ভুল ছিলাম সেটা সময় গড়াতেই বুঝতে পারি। এতগুলো মানুষের অবহেলা আমি সইতে পারছিলাম না। বাবাও কথা বলছিল না। আর তুমি? তুমি কি বললে? তোমাকে আমি নিলামে তুলে দেব। এতটাই জঘন্য আমি? এতটাই নিকৃষ্ট মনে করো আমাকে? আমি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দিতে পারি তোমাদের জন্য। তোমার জন্য। আর সেই তুমি বললে আমি তোমাকে নিলামে তুলে দেব। সেই মূহুর্তে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল জানো? কিন্তু আত্মহত্যা যে মহাপাপ। তাই চেয়েও পারি নি। কিন্তু ওই কথাটায় হৃদয় এতটাই আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল যে আর সামনে আসার সাহস পাই নি। কিন্তু তপার অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে আর থাকতে পারি নি দূরে সরে। যাইহোক আমি নিজের জন্য আর কোনো সাফাই দেব না। আমি জানতাম না তুমি এখানে আছো।”
পৃথা নিষ্পলক চেয়ে থেকেই মুখ খুলল।
“জানলে আসতে না?”
“এসে কি লাভ? সেই তো মুখ ফিরিয়ে বসে আছো।”
পৃথা হাত ছাড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,
“তাহলে চলে যাও। আংকেলের সাথে যাও নি কেন?”
“সত্যি চলে যাব?”
পৃথা কিছু বলল না। কিন্তু কিঞ্চিৎ সময় পার হতেই সিজান ফোঁপানোর আওয়াজ শুনলো। সেই সাথে পৃথার কেঁপে উঠাও অনুভব করতে পারল।
পুনরায় পৃথার হাত দু’হাতের মুঠোয় চেপে ধরে বলল,
“এভাবে কাঁদিস না প্লিজ। আমার ভুলের জন্য এভাবে কাঁদলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। প্লিজ শান্ত হ। ”
পৃথা তবুও ফুঁপিয়েই যাচ্ছে দেখে সিজান পৃথার হাত ছেড়ে দু’হাতে নিজের কান ধরে বলল,
“দেখ কান ধরছি ছোট বেলার মত। এবার তো কান্না থামা।”
পৃথা নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
“আমি আর ছোট নেই সিজান ভাই।”
সিজান ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বলল,
“তাহলে কি বড় হয়ে গেছিস?”
পৃথা নাড়ালো। সিজান মৃদু হেসে বলল,
“তাহলে কি এখন বড় বড় আদর দিয়ে রাগ ভাঙাতে হবে?”
পৃথা অকস্মাৎ তাকাল সিজানের দিকে। মৃদু আলোয় মুখটা আবছা দেখতে পেল। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে সে তার দিকেই।
পৃথা ওড়নার কোণ চেপে ধরে বসে রইল চুপচাপ। সিজান পুনরায় বলল,
“কি রে বললি না তো। বড় বড় আদর দেওয়ার মত বড় হয়েছিস?”
পৃথার কান লাল হয়ে গেছে বোধহয়। উঠে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সিজান হাত টেনে বসিয়ে দিল নিজের সামনে। পৃথা হঠাৎ টানে তাল সামলাতে না পেরে টালমাটাল হয়ে পড়ে যেতে নিল। সিজান একহাতে পৃথাকে আগলে নিয়ে নিজের সামনে বসিয়ে দিল। দুজনেই ছাদের মেঝেতে বসে তাকিয়ে রইল একে অপরের দিকে। পৃথার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো মূহুর্তেই। চোখের কার্নিশে জমা হলো বিন্দু বিন্দু নোনাজল। পৃথা অক্ষিপল্লব ঝাপটে ঝাপসা হওয়া দৃষ্টি স্বচ্ছ করার বৃথা চেষ্টা করল।
চিলেকোঠা থেকে আসা আবছা আলোয় সিজান স্পষ্ট দেখতে পেল পৃথার নেত্রকোণের মুক্তোর মতো ঝিকঝিক করা জলটুকু। হাত বাড়িয়ে মুছে দিতেই পৃথা শব্দ করে কেঁদে উঠল। সিজান দুবাহু মেলে আবদ্ধ করে নিল বাহুডোরে। বক্ষপিঞ্জরের লুকায়িত দগদগে ক্ষতটা যেন মূহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেল। সেখানে জমা হলো গভীর প্রেমের সুপ্ত কিছু অনূভুতি। কিছু পাওয়ার এক অবিস্মরণীয় মূহুর্তের স্মৃতি।

চায়ের কাপে চামচ দিয়ে টুংটাং শব্দ তুলে তপা মুচকি মুচকি হাসছিল। তপার মুখের লুকোচুরি হাসি দেখে পলক ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তোমার মনের ভেতরে কি চলছে বলো তো? এরকম চুন্নি মার্কা হাসি দিচ্ছো কেন?”
তপা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। ঈষৎ রেগে বলল,
“হুয়াট ডু ইউ মিন বাই চুন্নি মার্কা হাসি?”
পলক মুখ টিপে হাসল। তপার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
“এমা তুমি চুন্নি মার্কা হাসি বোঝো না?”
তপা মাথা নাড়ালো।
পলক হেসে বলল,
“থাক বুঝতে হবে না। ছোট মানুষ এসব বুঝবে না।”
তপা বিরক্তির সহিত বলল,
“আমি ছোট? তাহলে বড় কে? রাত্রি?”
পলক অবাক হলো। মেয়েতো জেলাস! আরেকটু রাগিয়ে দিতে বলল,
“হ্যা রাত্রি তো বড়ই। ও আমার ব্যাচমেট। বয়সও সমান। ও লেখাপড়া না করে আদুবোন হয়ে রয়েছে। ও তোমার থেকে যথেষ্ট বড়।”
তপা অগ্নিঝড়া চোখে তাকাল। কিছু বলতে চেয়েও বলল না। মস্তিষ্ক জানান দিল সে বাড়াবাড়ি করছে। এই বাড়াবাড়িটা তার জন্য না। হিংসে করাটাও তার সাজে না। তাই নীরবতাই মেনে নিল।
পলক পুনরায় বলল,
“বললে না তো ওরকম হাসছিলে কেন?”
তপা কাপ রেখে ধারালো কণ্ঠে বলল,
“আপনার গুষ্টির ষষ্টি উদ্ধার করছিলাম হেসে হেসে।”
পলক ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মেয়ে তো ঝগড়াও করতে জানে। একে নিয়ে সংসার করতে গেলে বহুত কাঠখড় পোড়াতে হবে। ভাবতে ভাবতে গালে হাত রেখে তপার দিকে তাকাল। পরে মোহাবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইল প্রহরের পর প্রহর।
তপা চোখ পিটপিট করে চেয়ে রইল খানিকটা সময়। পরে মৃদুস্বরে বলল,
“আমি রুমে যাব এখন।”
পলক ধ্যান ভেঙে বলল,
“হুম। চলো দিয়ে আসি।”
কোলে নেওয়ার জন্য দু’হাত বাড়িয়ে দিতেই তপা পলকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি হেঁটে হেঁটে চলে যাই? আর কত এভাবে অকেজো হয়ে ঘুরে বেড়াবো। আপনিই বা কতদিন এভাবে কোলে নিয়ে নিয়ে ঘুরবেন?”
পলক মৃদু হেসে বলল,
“তুমি চাইলে আজীবন কোলে নিয়ে ঘুরবো। ক্লান্ত হবো না।”
তপা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
“চাপা মারছেন?”
“চাপা না। সত্যি সত্যি। তুমি কি কখনোই আমার অনূভুতি বুঝবে না কৃষ্ণময়ী?”
তপা মলিন কণ্ঠে বলল,
“আমার সাধ্য থাকলে আমি আপনাকে ভালবাসতাম মিস্টার তাজওয়ার। কিন্তু আমি নিরূপায়। পঁচে যাওয়া মন নিয়ে ভালবাসা যায় না। দুর্গন্ধ যুক্ত শরীর নিয়ে ভালবাসতে নেই। ছুঁয়ে দিলে যে শরীর সুবাস না ছড়িয়ে দুর্গন্ধ ছড়াবে সে শরীরের মালিকের ভালবাসা পাওয়ার অধিকার নেই। ভালবাসা চাইতেও নেই। কলঙ্কিনী হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে নেই।”
” চাঁদেরও তো কলঙ্ক আছে। তুমি নাহয় আমার কলঙ্ক হয়েই রইলে।”
তপা মাথা নিচু করে মৃদু হাসল। লোকটা এত ভাল কেন? নিঃস্বার্থ ভালবাসা কি একেই বলে?
পরক্ষণেই শক্ত গলায় বলল,
“” আপনি আবেগে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন মিস্টার তাজওয়ার।”
পলক ঠোঁট কামড়ে হাসল। মুখে হাসি ফুটিয়েই বলল,
“আমার বয়স কত জানো? আটাশ বছর। এই বুড়ো বয়সে এসে আবেগে গা ভাসাবো? আমি জানি তোমার একটা অতীত আছে। হয়তো সেটা ভয়ঙ্কর। কিন্তু সেসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। মানুষের অতীত একান্তই তার ব্যক্তিগত। আমি সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। হ্যা আমি চাইলে সবটা জানতে পারব। কিন্তু আমি সেটা চাই না। যদি নিতান্তই তোমার কখনও জানাতে ইচ্ছে হয় সেদিন জানাবে। আমি মনোযোগী ছাত্রের মতো শুনবো। কিন্তু তার আগে তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। যখন আমি ছিলাম না তখন হয়তো তোমার সাথে কিছু হয়েছে। অতীত সবারই থাকে। কারো ভালো, কারো ভয়ানক। তোমার অতীতটা যে মোটেও সুন্দর নয়। সেটা আমি বুঝতে পেরেছি ঘুমের ঘোরে তোমার চিৎকার শুনে। কিন্তু সেজন্য তুমি আমার ভালবাসাকে আবেগ বলে চালিয়ে দিতে পারো না। সেই অধিকার আমি তোমাকে দেই নি। আর না কখনো দেব। তুমি আমাকে ভালবাসো না। ঠিক আছে। মেনে নিলাম। কিন্তু আমার ভালবাসাকে অপমান করার অধিকার তোমার নেই। দ্বিতীয় বার এই ভুল করো না।”
তপা চোখ পিটপিট করে চেয়ে রইল। কি এমন বলল যে একটা পুরো রচনা শুনিয়ে দিল। তবুও ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটিয়ে তুলল। মনে মনে আওড়ালো,”ভালবাসা সুন্দর। ভয়ঙ্কর সুন্দর।”

ইস্পাত কঠিন বুকের উষ্ণ স্পর্শে বলিষ্ঠ হাতের আলিঙ্গনে মুখরিত কিছু সময় অবিবাহিত হওয়ার পর পৃথা নড়েচড়ে উঠল। সিজান পৃথার নড়াচড়ায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“সাপের মত মোচড়া মুচড়ি করছিস কেন তুই?”
পৃথা মুখ তুলে চেয়ে দেখল সিজানের মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। মৃদু হেসে বলল,
“ছাড়ো সিজান ভাই। তপা এসে পড়বে।”
সিজান বিরক্ত চাহনি দিয়ে বলল,
“ও আসবে কি করে? হাঁটতেই তো পারে না ভালো করে।”
“ও তো রুমে নেই। পলক ভাইয়া নিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। ভাইয়া যদি নিয়ে আসে তখন?”
সিজান পৃথাকে ছেড়ে সরে বসল। হাত দুটো হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“কখন গেল?”
“কিছুক্ষণ আগে। তুমি রুমে ছিলে। তপা আমার সাথে বসে ছিল। তখন চ্যাংদোলা করে নিয়ে গেছে।”
সিজান হেসে ফেলল পৃথার কথা শুনে। সত্যি সত্যি চ্যাংদোলা করে নিল নাকি। পরক্ষণেই দায়িত্ববান ভাইয়ের মত বলল,
“আমার বোনটা ভাল থাকবে তো পৃথা?”
পৃথা সিজানের হাতদুটো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,
“তুমি নিশ্চিতে থাকো। পলক ভাইয়ার থেকে ভালো তপা কে কেউ রাখতে পারবে না।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল দুজন। চোখে চোখে কথা চলতে থাকল অবিরত। নীরবতার রেশ কাটিয়ে সিজান বলল,
“পৃথা আমায় বিয়ে করবি তো?”
পৃথা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“তো তুমি কি ভেবেছো? খেয়ে ছেড়ে দেব? পৃথা অতটাও খারাপ নয় সিজান ভাই। পৃথার কথা তেঁতো তেঁতো হলেও মনটা নিখাঁদ সোনা।”
সিজান অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কি বলবে তা ভাবতে গিয়ে বুঝল তার ডিকশনারী আপাতত শূন্য। এই কথার প্রেক্ষিতে কি বলা উচিৎ তা তার ছোট্ট মস্তিষ্কে বিদ্যমান ডিকশনারী এখনো ধারণ করে উঠতে পারে নি।

চলবে…#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ১৮

বিলাসবহুল সাজশয্যা বিশিষ্ট একতলা বাড়ি। বিশালাকার গেইট পেরিয়েই সাজানো বাগান। বাগানের একপাশ জুড়ে ফুটে আছে হাজার খানেক বিভিন্ন রঙের গোলাপ। সিংহভাগই সাদা গোলাপ। অপর পাশে রয়েছে বেলীফুলের সমারোহ। ফুটে থাকা বেলীগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে সাদা সবুজ গালিচা। নাম না জানা আরও অসংখ্য ফুলের ছড়াছড়ি দেখে তপার মনটা পুলকিত হলো। বাগানের মাঝ বরাবর ভেতরে যাওয়ার রাস্তা। তপা ধীর পায়ে ভেতরে গিয়ে দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালো নেইম-প্লেট দেখে। ‘তাজমহল’ লেখাটি নেইম-প্লেটে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো এটা বোধহয় পলকের বাড়ি। কিন্তু পরের মূহুর্তেই ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। আবার মনে হলো সে বোধহয় ভুল করে আগ্রায় চলে এসেছে। চারদিকে কেবল তাজমহল। পলকের ফ্ল্যাটটা তাজমহল মনে না হলেও এই সাজানো বাড়ি টাকে নিঃসন্দেহে তার তাজমহল বলেই মনে হচ্ছে। শহরের বুকে এত সুন্দর একটা বাড়ি থাকতে পারে তা তপার ধারণার বাইরে ছিল।
কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো একটি হাস্যজ্জল মুখের অধিকারিণী। তপা তার আপাদমস্তক স্ক্যান করল। সুতির শাড়ি গায়ে জড়ানো একজন ভদ্রমহিলা। চেহারার গাম্ভীর্যের ছাপ নেই বললেই চলে। নিঃসন্দেহে তাকে প্রথম সারির সুন্দরীদের তালিকায় ফেলা যায়। ভদ্রমহিলার মুখের সাথে লেপ্টে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আঁচলের কোণে ললাটে লেগে থাকা ঘাম টুকু মুছে নিল। তপার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কে তুমি?”
তপা মৃদু হেসে বলল,
“ম্যাম আমি তিয়াশা। ‘মিষ্টিমুখ’ পেইজের ওনার। এই ঠিকানা থেকে কেক অর্ডার করা হয়েছিল। আপনি..?”
ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে বললেন,
“আমি অর্ডার করছিলাম। আমিই পায়েল । তুমি ভেতরে এসো। কখন থেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।”
“না ম্যাম। আজ নয়। অন্য দিন। আমার ক্লাসে যেতে হবে।”
পায়েল মৃদু হেসে বললেন,
“কি ম্যাম ম্যাম করছো? আন্টি বলো। সারাক্ষণ ম্যাম শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল আমার। আমি তো তোমার মায়ের বয়সীই হবো। আন্টি বলো। এরপর তো বহুবার আসতে হবে এই বাড়িতে। প্রতিবার ম্যাম শুনতে ভালো লাগবে না আমার।”
তপা মন খারাপ করে বলল,
“আমার মা নেই আন্টি। থাকলে হয়তো আপনার মতই হতো। কিন্তু এরপর বহুবার কেন আসতে হবে?”
পায়েল তপার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। সোফায় বসিয়ে কেক নিয়ে অন্যরুমে গিয়ে দ্রুত ফিরে এসে তপার পাশে বসে পড়ল।
“আমি তোমার বানানো কেক সুপারশপ থেকে অনেক বার বাসায় নিয়ে এসেছি। ভীষণ ভালো খেতে হয়। ডেকোরেশনও মাশাল্লাহ। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ রেখেছিলে কেন?”
“সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে পায়ে ফ্যাকচার হয়েছিল আন্টি। তাই রেস্টে ছিলাম। এখন থেকে ইনশাআল্লাহ আবার আগের মত অ্যাক্টিভ হবো।”
পায়েল মৃদু হেসে বললেন,
” সেজন্যই বহুবার আসতে হবে। বহুবার অর্ডার করব তো। তুমি বসো আমি দু’মিনিটে আসছি।”
অল্প কিছু সময় পর পায়েল হাজির হলেন হাতে মিষ্টির পিরিচ নিয়ে। তপা গুনে গুনে দেখল তিনটি মিষ্টি রাখা আছে। একটা সাদা, একটা সাধারণ লাল এবং অন্যটি কালজাম। তপা মৃদু হেসে বলল,
“আন্টি আমি এত মিষ্টি খাব না।”
“একটা তো খেতেই পারো। নাকি ডায়েটে আছো।”
“ডায়েট সুন্দরীদের জন্য আন্টি। আমার মত মেয়েরা ডায়েট করলে লোক হাসবে তো।”
পায়েল তাজওয়ার খানিকটা এগিয়ে এসে তপার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“নিজেকে ছোট করে দেখছো কেন মা? গায়ের রঙ দিয়ে কখনো মানুষ বিচার করতে নেই। প্রত্যেকেই সুন্দর। নিজের মত সুন্দর। শুধু দেখার জন্য সুন্দর চোখ দরকার। তুমি জানো তোমার মুখটা কত মিষ্টি। আমি প্রথম দেখায় তোমার সাথে এত সংকোচহীন কথা বলছি কিভাবে জানো? তোমার চোখ দেখে। তোমার চোখে তোমার স্পষ্টবাদী চেহারা ফুটে ওঠেছে। তোমার পার্সোনালিটি ফুটে ওঠেছে। আর তুমিই কিনা গায়ের রঙ নিয়ে এভাবে কথা বলছো। এটা মানা যায়?”
তপা অপলক নয়নে তাকিয়ে রইল। মানুষ এমনও হয়। এটাই বুঝি মায়ের জাত।
পায়েল তাজওয়ার পুনরায় বললেন
“গায়ের রঙ তোমার দুর্বলতা নয়। বরং তোমার শক্তি হিসেবে কাজে লাগাও। যখন কোনো কাজ করবে তখন মনে করো তোমাকে কেউ তোমার গায়ের রঙের জন্য অবহেলা করেছে। শক্ত হয়ে দাড়াও তুমি। আরও একটু বেশি সময় দাও নিজের কাজে। তোমাকে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে তোমার এই দৃঢ় মনোবল।”

কৃতজ্ঞতায় তপার মাথা নুয়ে এলো। মসৃণ কণ্ঠে বলল,
“মনে থাকবে আন্টি। এই কথাগুলো আমি সারাজীবন মনে রাখব।”
পায়েল তাজওয়ার মৃদু হাসলেন।
“আজ তাহলে আসি আন্টি। ক্লাস আছে আমার। কেক ডেলিভারি করার জন্য একজন আছে। কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় আমাকেই আসতে হলো। এদিকে এখানে এসে আমি গল্প জুড়ে দিয়েছি। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে আন্টি। আজ উঠি?”
পায়ল তাজওয়ার মন খারাপ করে বললেন,
“একটু মিষ্টি তো খেয়ে যাও।”
তপা কালজাম মিষ্টিটা খেল। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পায়েল তাজওয়ারের চোখ চলে গেল তপার বিনুনির দিকে।
অবাক হওয়া কণ্ঠে বললেন,
“তিয়াশা তোমার চুলগুলো তো মারাত্মক। ঘোমটাটা সরিয়ে দেখাবে প্লিজ। জানি অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। তবুও… ”
তপা মৃদু হেসে ঘোমটা সরিয়ে দিল।
এগিয়ে দিতে দিতে পায়েল তাজওয়ার বললেন,
“আমার ছেলেটার লম্বা চুল ভীষণ পছন্দের জানো। আগে আমার চুলগুলোও অনেক বড় ছিল। তোমার মত সুন্দর না হলেও খারাপ ছিল না। ছেলেটা যতক্ষণ চুল খোলা পেত হাতে নিয়ে খেলা করতো। তখন ওর মাত্র সাত বছর বয়স। বিনুনি করতে শিখে গিয়েছিল জানো। সারাক্ষণ বলতো মা এসো চুল চিরুনি করে দেই, বিনুনি করে দেই। বলতো মা তোমার চুলদের কি খেতে দাও। আমাকেও দাও। খেয়ে আমি আর আমার চুলও বড় হয়ে যাই তাড়াতাড়ি। আমি খুব করে হাসতাম তখন। ছোট্ট ছেলেটার কত তাড়া ছিল বড় হওয়ার। জানো ওকে যখন জিজ্ঞেস করতাম বড় হয়ে সুন্দরী বউ বিয়ে করবে কিনা। ও বলতো যার চুল মায়ের চুলের সমান তাকে বিয়ে করবে। প্রতিদিন বলতো বড় চুলওয়ালা বউ কবে এনে দেবে মা। কি পাগল ছিল ছেলেটা। কিন্তু তারপর হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। টাইফয়েড ধরা পড়ল। আমি সুস্থ হলেও পাওয়াফুল ওষুধের জন্য চুলগুলো পড়ে গেল। আগের মত আর হলোই না।”
তপা মন খারাপ করে ফেলল। মৃদু স্বরে বলল,
“আপনার ছেলে?”
পায়েল তাজওয়ার হেসে বললেন,
“ছেলে? সে ঘুমোচ্ছে। আজ অফিসে যাবে না বলে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। তোমাকে গেইট অবধি দিয়ে এসে ওকে ঝাটা পেটা করে ঘুম থেকে তুলতে যাব। মানুষ স্কুল, কলেজে চলে যাচ্ছে। ও ঘুম থেকেই উঠছে না। এই ছেলে বাড়িতে থাকলে আমিও ঠিক মত কলেজে যেতে পারি না।”
তপা খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি, কলেজে?”
পায়েল তাজওয়ার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন,
“লেকচারার।”
“জ্বি!”
পায়েল তাজওয়ার শব্দ করে হাসলেন। তপার অস্বস্তি দেখে বললেন,
“লেকচারার বলে কি মা নই? মায়ের মতোও নই?”
তপা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আপনি ভীষণ ভালো। একদম মায়ের মত। মা মা ফিল করা যায় আপনার সান্নিধ্যে এলে।”
পায়েল তাজওয়ার হেসে তপার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“আবার এসো। আমি অপেক্ষা করব।”

উৎসবের রঙে সেজেছে তাজমহল। কোম্পানির নতুন ব্রাঞ্চ ওপেনিংয়ের জন্য ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাজমহলে। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি পলক তাজওয়ার। নিকট আত্মীয় এবং পলকের কিছু বন্ধু বান্ধবীদের নিমন্ত্রণ করেছে। পলক হেঁটে হেঁটে সকলের খাওয়া দাওয়ার তদারকি করছিল। হঠাৎ দরজা ঠেলে রাত্রিকে ভেতরে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মনে মনে বলল,’একে দাওয়াত করেছে কে? মায়ের কি আর কাজ নাই?”
রাত্রির পাশে সমানতালে এগিয়ে আসা সুদর্শন পুরুষকে দেখে ভ্রু জোড়ার মাঝের ভাজ গুলো দ্বিগুণ হলো।
রাত্রি পলকের সামনে এসে মুচকি হেসে বলল,
“পলক মিট মাই ফিয়ন্সে রাজীব সিকদার। আর রাজীব ও আমার ফ্রেন্ড পলক তাজওয়ার।”
পলক হা করে চেয়ে রইল রাত্রির দিকে। রাত্রি ভ্রু উঁচিয়ে কিছু ইশারা করল। তা দেখে পলক রাজীবের বাড়ানো হাতে হাত মিলিয়ে পরিচয় পর্ব সেরে নিল।
পলক প্রায় আধঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছে রাত্রির সাথে একা কথা বলার জন্য। কিন্তু রাজীবের জন্য পারছে না। কারণ পলকের ভাষায় সে সারাক্ষণ রাত্রির সাথে চিপকে আছে।
অবশেষে থাকতে না পেরে রাজীবের সামনে গিয়ে বলল,
“রাত্রির সাথে আমার কিছু কথা আছে। কিছু মনে না করলে আমি পাঁচ মিনিটের জন্য ওকে বাইরে নিয়ে যেতে পারি?”
রাজীব মৃদু হেসে সম্মতি প্রদান করল।

“তুই বিয়ে করে নিচ্ছিস?”
পলকের এহেন কথা শুনে রাত্রি চোখ বড় বড় করে বলল,
“তুই কি চাইছিস বলতো? যখন তোর পিছু পিছু পাগলের মত ঘুরতাম তখন তো পাত্তা দিতি না। এখন বিয়ে করছি শুনে হ্যাংলার মতো করছিস কেন? তুই কি প্ল্যান করেছিলি? গাছেরও খাবি, তলারও কুড়োবি?”
পলক রাত্রির মাথায় চাটি মেরে বলল,
“সাবধানে কথা বল বেয়াদব মেয়ে। হ্যাংলা কাকে বলছিস? এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছিস। বুঝেশুনে করছিস তো? রাজীব ছেলেটা ভালো তো?”
রাত্রি মৃদু হেসে বলল,
“আমি ততদিন তোর জন্য অপেক্ষায় ছিলাম যতদিন তোর জীবনে কেউ ছিল না। কিন্তু এখন তোর জীবনে অন্য কেউ এসেছে। এখন তো আমি আর আশা করতে পারি না তোকে। কেউ না থাকা অবস্থায় যখন পারি নি তোর মনে নিজের জায়গা করতে সেখানে তপাকে সরিয়ে দিয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তাই সরে গেলাম। কি লাভ তোদের জীবনে ভিলেন হয়ে থেকে? আমি তো নাইকা হতে চেয়েছিলাম তোর। ভিলেন নয়। আর রাজীবের কথা বলছিস? ও ভীষণ ভালো। আমাকে ভালোও বাসে। যেমন করে আমি তোকে বাসতাম। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। ভালবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণা আমি বুঝি। তাই চাই নি আমার জন্য অন্য কেউ সেই অনলে জ্বলুক, দগ্ধ হোক। ভাল করিনি বল?”
পলক মাথা নিচু করে ফেলল। কেন এই মেয়েটার জন্য তার হৃদয়ে প্রেমের অনিল বহে নি। কেনই বা তিয়াশার করে মত দেখতে পারে নি ওকে। তাহলে তো মেয়েটা এত কষ্ট পেত না। পরক্ষণেই ভাবল তাহলে কৃষ্ণময়ীর কি হতো?
পলক মৃদু হেসে বলল,
“তুই ভালো থাক। আমি এটাই চাই। তোকে ভাল না বাসলেও তুই কিন্তু আমার বন্ধু। সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু। কিন্তু মাঝখানে একটু বিগড়ে গিয়েছিলি। সেজন্যই তো খারাপ ব্যবহার করেছি। এবারে ভদ্র মেয়ের মত সংসার কর কেমন?”
রাত্রি হেসে বলল,
“হ্যা সেজন্য কিডন্যাপ করে হাত পা ভাঙতে অর্ডার করছিলি প্রান্তকে।”
পলক মাথা চুলকে হেসে বলল,
“ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম শুধু। কিন্তু বেশি রাগ ওঠে গিয়েছিল তাই.. ”
রাত্রি শব্দ করে হেসে ফেলল। পলক ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিন্তু প্রান্ত তোকে মারল না কেন বলতো? আর তুই বা পাল্টি খাইলি কিভাবে? তুই তো এরকম ছিলি না। তিয়াশা কে সহ্য করতে পারতি না। কিন্তু সেদিনের পর হসপিটালে এত সুন্দর করে কথা বলছিলি ওর সাথে। এত পরিবর্তন কিভাবে?”
“প্রান্ত আমাকে রাত্রির জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বলেছে। ছোট বেলায় মা হারানো মেয়েটা। বাবা থাকতেও মেয়েটা সম্পূর্ণ এতিম, অনাথ। তার সাথে আমার এত উগ্র আচরণ করা মানায় না। খারাপ হলেও দিনশেষে আমিও একজন মানুষ। মন বলে কিছু একটা আমারও আছে। অমানুষ আমি নই। তোর কাছে থাকলে মেয়েটা সুখের মুখ দেখতে পাবে। তাছাড়া তুই তো ওকে ভালবাসিস। তাই চলে গেলাম তোদের ছেড়ে। ভাল রাখিস মেয়ে টাকে। অবহেলা করিস না কখনো। মেয়েটার জীবনে ভালবাসার বড্ড অভাব রে। আমি যে ভালবাসা হাজার চেয়েও পাইনি সেই ভালবাসা দিয়েই ওর জীবন ভরিয়ে দিস। তাহলে আমিও ভাল থাকতে পারব।”
পলক কয়েক মূহুর্ত অবাক হয়ে চেয়ে রইল। ঠিক হজম করতে পারছে না কথাগুলো।
কিয়ৎক্ষণ পর বলল,
“কিন্তু রাত্রি, তিয়াশা তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। সবকিছুতে আমি আছি। বিশ্বাস, ভরসা সবকিছুতে। শুধু ভালবাসার ঘরটা শূন্য। মেয়েটার এত কিসের অবহেলা ভালবাসার প্রতি কে জানে। আর কত ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে আমার?”
রাত্রি হেসে বলল,
“সবুরে মেওয়া ফলে।”
পলক করুন গলায় বলল,
“আপাতত করলা ফলাতে বল। তাতেই আমি খুশি। মেওয়া আমি নিজেই ফলিয়ে নেব।”

অফিসে বসে ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে একমনে কাজ করছিল পলক। সহসা ফোন বেজে ওঠার শব্দে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। কিন্তু স্কিনে তাকিয়ে বিরক্তিভাব কেটে গিয়ে ধরা পড়ল এক ফালি মিষ্টি হাসি।
ফোন কানের কাছে তুলে বলল,
” আজ কি দিনের বেলায় চাঁদ উঠেছে? স্বয়ং রাজমহিষী স্মরণ করেছেন সামান্য ভৃত্যকে।”
তপা পলকের ইয়ার্কিতে কান না পেতে মৃদু স্বরে বলল,
“আপনি কোথায়?”
পলক তপার কণ্ঠ শুনে চিন্তিত হলো। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
“তিয়াশা, ঠিক আছো তুমি? পা ব্যথা করছে?”
তপা এবার বিরক্ত হলো পলকের বাড়াবাড়ি দেখে। কঠিন গলায় বলল,
“মিস্টার তাজওয়ার পায়ে ব্যথা পেয়েছি তিন মাস কেটে গেছে। এখনো ব্যথা করবে কেন? তাছাড়া সামান্য ফ্যাকচারই তো হয়েছিল। এটা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কিছু হয় নি।”
পলক দমে গেল তপার গলার তেজ শুনে। মৃদু স্বরে শুধালো,
“তাহলে কল দিলে কেন?”
তপা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সরি এভাবে বলার জন্য।”
পলক কিছু না বলে মৃদু হাসল।
তপা পুনরায় বলল,
“আপনি কোথায়? অফিসে?”
পলক ল্যাপটবে নজর দিয়ে বলল,
“হ্যা। কোনো সমস্যা?”
“হুম। আপনি কি একটু বের হতে পারবেন। আমি জানি অফিস টাইম। তবুও প্লিজ পারবেন?”
পলক ল্যাপটব থেকে নজর সরিয়ে তপার কথায় মনোযোগ দিল।
“কি হয়েছে কৃষ্ণময়ী? আমাকে স্পষ্ট করে বলো।”
“মামা অসুস্থ। হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। আমি জানতাম না। ভাই আমাকে মাত্র ফোনে বলল। আমি মামার কাছে যাব মিস্টার তাজওয়ার। প্লিজ নিয়ে চলুন আমাকে। ওই বাড়িতে আমি একা যেতে পারব না। মরে যাব। মামার কাছে না গেলেও বাঁচব না।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল তপা।
পলক ঘড়ির দিকে তাকাল। কপালে আঙুল চালিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“আমায় আধঘন্টা সময় দাও। হাতের কাজ গুছিয়েই আমি আসছি। তোমাকে নিয়ে যাব। ততক্ষণে তুমি রেডি হও। খবরদার কাঁদবে না।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here