#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
বর্তমানে ইরহান ও যুথি একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
যুথি ঘরটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠে,, বোকা পুরুষ এটা তো,,,, আর কিছু বলার আগেই ইরহান বলে উঠে,, এটা তোমার আর আমার নতুন ঠিকানা।
ইরহান যুথির পাশে নিজের ব্যাগ টা রেখে দেয়। তারপর যুথির হাত টা আলগোছে ছেড়ে দিয়ে ঘরের দরজার পাশে এগিয়ে যায়।
দরজার পাশে বসে পরে।কাঠের দরজার চৌকাঠের নিচ দিয়ে যে ফাঁকা জায়গা টা আছে সেইখান দিয়ে হাত টা একটু ভিতরে ঢুকায়।
যুথি চুপচাপ ইরহানের কাজ দেখছে।
ইরহান হাত দিয়ে দরজার নিচ থেকে কিছু একটা বের করে এনেছে। খুবই ছোট একটা জিনিস।যুথি বুঝতে পারলো না কি সেটা।ইরহানের হাতের দিকে তাকিয়ে মাথা উচিয়ে দেখার চেষ্টা করলো জিনিস টা কি।
যুথির উঁকি ঝুঁকি দেখে ইরহান নিজেই তার হাতে রাখা জিনিস টা যুথির সামনে তুলে ধরে ব্রু উচায়।
একটা ছোট চাবি।
বোকা পুরুষ কিসের চাবি এটা?
তোমার আর আমার খড়কুটোর বাসার চাবি এটা বুঝলে।
এই ঘরের চাবি?
হুম।
তারপর ইরহান চাবি দিয়ে খুব দ্রুত তালা টা খুলে ফেলে।দরজা না খুলেই পিছনে ফিরে যুথির দিকে তাকায়। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,,আমি দুই মিনিটে আসছি তুমি একটু দাঁড়াও যুথি রানী।এখানেই দাড়াবে ঘরে ঢুকবে না কিন্তু।
যুথি ইরহান কে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
ইরহান কয়েক কদম গিয়ে ও আবার ফিরে তাকিয়ে বলে,, তুমি আবার ভ’য় পাবে না তো যুথি রানী?
ইরহানের কথায় যুথির মুখে হাসি ফোটে উঠে। আরে বোকা পুরুষ আপনি যান।আমি একটুও ভ’য় পাবো না। আপনার যুথি রানী এতো ভিতু না।
ইরহান একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।
যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আশে পাশে চোখ বোলায়।রাত প্রায় অনেক হয়েছে এদিক টাতে একটু অন্ধকার এতো সময় ইরহানের মোবাইলের আলো জ্বালানো ছিলো তাই সব দেখা গেছে। অন্ধকার দেখেই হয়তো তার বোকা পুরুষ টা ভেবেছে সে ভ’য় পাবে।
বেশি সময় অপেক্ষা করায়নি ইরহান।কিছু সময় পর ই ফিরে এসেছে। তবে এখন আর ইরহানের হাতের মোবাইলের আলো নেই।অন্ধকারে হালকা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ইরহানের হাতে কিছু একটা আছে। কিছু একটা এনেছে সে।তবে যুথি বুঝতে পারলো না ইরহান কি আনতে গিয়েছিলো।
আপনার হাতে কি বোকা পুরুষ?
আমার রানী কে তার খড়কুটোর রাজত্বে বরণ করার জন্য কিছু একটা। এখনই দেখতে পাবে।
আমি কিন্তু একটু একটু ধারণা করতে পারছি কি হাতে।মিষ্টি ঘ্রান টা কিন্তু নাকে লাগছে।
ইরহান যুথির কথার প্রতি উত্তরে কিছু না বলে,,দরজাটা কাধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে যায়।
যুথিও ইরহানের পিছন পিছন এগিয়ে গিয়ে ঘরের ভিতর পা রাখবে ঠিক সেই মুহূর্তে ইরহান বলে উঠে,,, যুথি একমিনিট ঢুকো না।যুথি ইরহানের কথায় ভরকে যায়। (লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম) কি করতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
তার মধ্যে হুট করে চোখের সামনে আলো জ্বলায় যুথি চোখ মুখ কোচকে ফেলে। তারপর কিছু টা স্বাভাবিক হয়ে চোখ পিটপিট করে তাকায়।ইরহান ঘরে বাতি জ্বালিয়েছে।
তারপর ইরহান যুথির সামনে এসে দাঁড়ায়। ইরহানের হাত ভর্তি বকুল ফুল।ফুলের মিষ্টি ঘ্রান এসে নাকে বারং বার বারি খাচ্ছে।
“এই ছোট্ট খড়কুটোর বাসা তে তার রানী সাহেবা কে স্বাগতম। ”
ফুল গুলো ছিটিয়ে ইরহান যুথির উপর ফেলে তারপর বলে,,ভিতরে প্রবেশ করুন আমার গরিব রাজ্যের রানী সাহেবা। বলে হাত বাড়িয়ে দেয়,,,,,
যুথি মুচকি হেসে ইরহানের হাতটা ধরে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।
প্রথম বার তো কিছুই করতে পারলাম না তোমার জন্য। তাই একটু ছোট্ট প্রয়াস চালালাম।
এটা ছোট্ট না বোকা পুরুষ। এটা আমার কাছে মহামূল্যবান।
যুথি ঘরের চার পাশে সব কিছু দেখতে থাকে।দুই রুমের ছোট্ট একটা দু-চালা ঘর। এই টা সেই ঘরটাই যেটা এই বাড়িতে ঢুকতে সর্বপ্রথম যুথি দেখেছিলো। কে জানতো এটাই যে তার ঠিকানা হবে?
ঐ বাড়িটা এই ঘর থেকে বেশ দূরে। এটা গেটের কাছাকাছি আর ঐটা অনেক টা ভিতরে। তবে এই ঘর উল্টো মুখি করে করা।এই ঘরের পিছন দিয়ে ঐ ঘরে যাওয়ার রাস্তা। এটা একটা ভালো ব্যাপার।ঐ লোক গুলো যাওয়া আসা দেখতে হবে না।
ঘরের ভিতর সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস ই আছে দেখা যায়। ছোট ছোট হাড়ি পাতিল ও আছে। দুই জন বা তিনজনের সংসারের জিনিস পত্র।
সব কিছু খুব সুন্দর করেই সাজিয়ে রাখা। তবে অনেক দিন মনে হয় কেউ প্রবেশ করে নি তাই ধুলোবালি জমে আছে।
যুথি সব কিছু দেখার মাঝেই হুট করে হাতে টান অনুভব করে। ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে বলে,,, যুথি এটা আমার মায়ের ছোট্ট সংসার ছিলো। এই ঘরটায় আমার মায়ের ছোয়া রয়েছে।
আমার বাবা মায়ের ভালোবাসার সংসার ছিলো এই ঘরটায়।আমার ছোটোবেলা কেটেছে এখানে। আমরা তিনজন এখানে থাকতাম।আমার মা তার যত্ন ভালোবাসা দিয়ে এই ঘরটা সাজিয়ে ছিলো।এসব জিনিস পত্র আমার মায়ের করা।
বাবা যখন মা কে বিয়ে করে তখন বাবা তেমন কোনো কাজ করতো না।ছোট খাটো কাজ করে দুইজনের সংসার চালাতো।দাদা দাদি বাবার বিয়ের আগেই মা’রা গেছে। আত্নীয় স্বজন রা জোর করে বাবা কে মায়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়।নয়তো কে দেখবে বাবা কে? তেমন কেউ ছিলো না বাবার খেয়াল রাখার। আত্নীয় রা তো আর বাবার জন্য সব ছেড়ে এখানে পরে থাকবে না।আর বাবা কে যে ওদের সাথে নিয়ে যাবে সেই সামর্থ্য ও ছিলোনা।তখন সময়টা ই এমন ছিলো সকলের অভাবের সংসার। একজন মানুষ মানেই অনেক খরচা তার খাওয়া পড়ার।
তাই সকলে ভেবে চিন্তা করে মাকে পছন্দ করে বাবার সাথে বিয়ে দেয়।বাবা রাজি হতে চায় নি কারণ সে তখনো তেমন কোনো কাজই করতো না। কি খাওয়াবে বিয়ে করে? এক বেলা খাবার দিতে পারলে পরের বেলা দিতে পারবে কি না সন্দেহ তাই জন্য। পরে সকলের জোরাজোরি তে অবশেষে মা কে বিয়ে করে ঘরে আনে।
আমার মা তারপর বাবার পাশে থেকে হাতে হাত রেখে এই সংসারটার হা’ল ধরে।সব কিছু করে।বিয়ের কিছু দিন খুব কষ্টে পার করে দুইজন। তারপর বাবার কাজ হয়।দিন ঘুরতে থাকে।ভালো সময় আসতে থাকে। তখনই জানতে পারে আমার পৃথিবীতে আসার খবর।
বাবার হাতে টাকা হয়।ঠিক করে ছোট্ট দু-চালা ঘর থেকে চৌচালা ঘর দিবে। কিন্তু মা এই ঘরটা ভাংতে দেয়নি।যেহেতু বাড়িতে অনেক জায়গা আছে তাই বলেছে অন্য দিকে তুলতে এটা যেন না ভাঙে।এটা তার এই বাড়িতে আসার প্রথম স্মৃতি। কতো ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। নতুন ঘরে বেশি দিন থাকতে পারে নি মা তার আগেই,,,
কথাটা বলতে গিয়ে ইরহানের গলা টা ধরে আসে।
যুথি এগিয়ে এসে ইরহানের কাঁধে হাত রাখে। ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে,,
বাবা মা কে অনেক ভালোবাসতো।আমার জন্য শুধু ঐ মহিলা কে বিয়ে করেছিলো।আমি তখন একা বাবা কাজে চলে গেলে আমাকে দেখার কেউ ছিলো না। তাই করেছে।বাবা থাকতে ঐ মহিলা কি যে ভালো ছিলো। তবে আমার ব্যাপারে সব সময় উদাসীন ছিলো কাউকে সেটা বুঝতে দিতো না। আমিও বলিনি ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন ঠিক ভালোবাসবে। বাবা আমাকে প্রায় ই জিজ্ঞেস করতো উনি কেমন খারাপ ব্যবহার করে কিনা।আমি তখন বলতাম অনেক ভালো আমাকে খুব ভালোবাসে আদর করে। আমি এগুলো ই কল্পনা করতাম উনাকে নিয়ে। সেই কল্পনা থেকেই খুবই গভীর ভাবে কথা গুলো বলতাম।তাই বাবা ও ভেবেছে সত্যি বুঝি সব। হাহ্ বাদ এসব কথা।
এখন যে ঘর টা তুলেছেনা? ঐটার সামনেই ছিলো চৌ-চা’লা ঘর টা। ঐ ঘরের পিছন দিয়ে জায়গা কিনে ঘরটা তৈরি করা হয়েছে। আর বাবার বানানো চৌ-চা’লা টা ভেঙে ফেলে ঐখানে উঠুন বানানো হয়েছে।
মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ও এই ঘর টা ভাংতে দেয়নি। মায়ের হাতের সব জিনিস পত্র এই ঘরে সব যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছে। নিজে সব কিছু পরিষ্কার করে রাখতো। তালা দিয়ে রাখতো কাউকে ঢুকতে ও দিতো না।আমি ছাড়া।
কে জানতো আমার মায়ের রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট সংসার টা ই এখন আমাদের হবে? আমি বিদেশে যাওয়ার আগে সব পরিষ্কার করে রেখে গিয়েছিলাম।পরশুদিন ও ঢুকেছি।কিছু কিছু পরিষ্কার করলেও সব করা হয়নি।ধুলো বালি লেগে আছে।
আরে বোকা পুরুষ যুথি থাকতে চিন্তা কিসের? যুথি নিজের ওড়না টা কোমড়ে ভালো করে বেঁধে কাজে লেগে পরে।
সবকিছু ঝেড়ে ঝুড়ে পরিষ্কার করতে থাকে।
ততক্ষণে ইরহান তাদের ব্যাগের ভিতর থেকে একটা বিছানার চাদর বের করে।যুথিকে নিতে দেখেছিলো সে চাদর টা। হয়তো ভেবেছে রাস্তাতেই থাকতে হবে তাই নিয়েছিলো।ইরহান হাতে চাদর টা ধরে হাসে।
রুমে একটা আলমারি রয়েছে বেশ মজবুত ও দামি কাঠের তৈরি বোঝাই যায়। রুমে রাখা চৌকি টা ও আলমারির কাঠের তৈরি। যুথি বুঝতে পারলো।
ইরহান চাদর টা এনে বিছানায় বিছাতে গেলে যুথি টেনে নিয়ে যায় বলে,,আপনাকে কিছু করতে হবে না আমি একাই করতে পারবো।
মোটেও না আমি জ’ল’জ্যা’ন্ত মানুষ টা উপস্থিত থাকতে আমার বউ কে সব কাজে আমি সাহায্য করবো।
কেন? আমি একাই করতে পারি।
তোমার কথা কে শুনে? আমি তোমাকে সাহায্য করবো এর উপরে কোনো কথা হবে না।
তারপর আর কি সব কিছু দুইজন মিলে মিশে করে ফেলে।
আজকের জন্য আপাতত যা বেশি দরকার তা শেষ। দুইজনেই হাফ ছাড়ে। যুথি কোমড়ে বাঁধা ওড়না টা খুলে ফেলে।ইরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইরহানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। যুথি এগিয়ে গিয়ে যত্ন সহকারে কপালের ঘাম টুকু ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।
ইরহান যুথির দুই গালে হাত রেখে বলে,, আমি তোমার জন্য তেমন কিছুই করতে পারলাম না যুথি।তোমার কোথায় থাকার কথা ছিলো অথচ,,,,,
তোমাকে শ্বশুর বাড়ির যোগ্য সম্মান টুকুও দিতে পারলামনা।এই পুরনো ভাঙা ঘরে থাকতে হবে।।
এখন একটু মানিয়ে নাও।সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ছোট্ট ঘরটায় কখনো ভালোবাসার অভাব হবে না। আর একদিন ওদের থেকে ও বড় বাড়ি করবো ইনশাআল্লাহ। সেই বাড়ির একমাত্র মালকিন হবে আমার যুথিরানী।এখন যেমন এই ছোট্ট ঘরের রানী সে।
যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,
” ও আমার বোকা পুরুষ গো!
আমার লাগি খড়কুটো দিয়ে বাঁধিলা তুমি ঘর!
জোসনার আলো গায়ে মেখে, তোমার বু’কে মাথা রেখে,,
কাটিয়ে দিবো সেথায় আমি জনম ভর! ”
#চলবে,,,,,,,,,#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam
মাঝে মধ্যে কান্না করতে হয়। নিজের বোকামির জন্য। অন্যের জন্য না। নিজের মানুষ চিনতে না পারা ভুলের জন্য। নিজের নরম মনের জন্য। কান্না করলে হালকা লাগে। শান্তি লাগে,তাই মাঝেমধ্যে ই কান্না করা উচিত!
ইরহান যতই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুক না কেনো সে আসলে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। সেটা সে বাহিরে প্রকাশ করতে পারছে না।
রাতে দুইজনের একজনের ও খাওয়া হয়নি। চুপচাপ শুয়ে পরেছিলো।ইরহান সারারাত ভালো করে ঘুমোতে পারেনি।ছটফট করেছে সেটা যুথির ন’জর এড়ায়নি। সে সব টা লক্ষ করেছে।
ইরহানের চোখের কোণের পানিও যুথির ন’জর এড়ায়নি। সে দেখেছে।কিন্তু এগিয়ে যায় নি ইরহানের কাছে।মাঝে মাঝে মন খারাপ কষ্ট পাওয়া লোকটাকে একা ছেড়ে দিতে হয়।যেনো সে নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজের কষ্ট টা কে সামলে নিতে পারে।
কিছু মুহূর্ত আছে যেই সময় নিজের প্রিয় মানুষ টা স্বান্তনা দিলেও ভালো লাগে না। যুথি ইরহান কে আটকায় নি।নিজের মতো করে কিছু সময় থাকুক।যুথির ও কান্না পাচ্ছে। কিন্তু তার কাঁদা যাবে না।লোকটা নয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবে।
যুথি চুপচাপ ঘুমের ভা’ন ধরে পরে ছিলো।ইরহান কে বুঝতে দেয়নি যে তার কষ্টে যুথির ও ঘুম আসছে না।
অনেক সময় চুপচাপ শুয়ে নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতেই যুথি একসময় ঘুমিয়ে যায়। তখন ভোর হতে হয়তো দুই এক ঘন্টা বাকি।
জানালার ফাঁক গলিয়ে আসা মিষ্টি রোদের আলোয় ঘুম ভেঙে যায় যুথির।চোখ পিটপিট করে তাকায়।আলোটা সরাসরি তার মুখে এসে পরছে। ভালো করে ঘুম হয়নি।
পাশ ফিরে ইরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইরহান ঘুমুচেছ। উল্টো দিকে ফিরে শোয়ায় রোদের আলো থেকে বেঁচে গেছে।
যুথি বিছানা থেকে নেমে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর ঘরের পাশের কলপাড় আছে একটা ঐখান থেকেই হাতমুখ ধুয়ে নেয়।
অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে সে। কিছু টা দূরেই পুকুর পাড় রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ঘরের বাম সাইডে চোখ যেতেই দেখতে পেলো বকুল গাছ। বেশ বড় গাছটা।ফুল পরে আছে নিচে। কাল ইরহান এখান থেকে ফুল নিয়েছে বুঝতে আর বাকি নেই।যুথি গাছের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফুল গুলো কুড়াতে থাকে আর ওড়নায় নিতে থাকে। এগুলো দিয়ে সে মালা গাঁথবে। প্রায় অনেক গুলো ফুল নিয়ে উঠে ঘরের দিকে হাঁটা দেয়।
ঘরে এসে দেখতে পায় ইরহান উঠে গেছে বসে বসে চোখ কচলাচ্ছে। হাতে যুথির মোবাইল।
–কই গিয়েছিলে যুথি?
— ঐতো বাইরে বের হয়ে এই দিকটা একটু দেখতেছিলাম।
— ওহ! নাও তোমার মোবাইল তোমার দাদি সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে।
— দাদি এতো সকাল সকাল?
— হুম,,, জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীর ঠিক আছে কি না বলল সব ঠিক আছে। তবে তোমার সাথে যেনো কি জরুরি কথা আছে বলছে তোমাকে কল দিতে।
— দেখি, বলেই যুথি ইরহানের হাত থেকে ফোন নিয়ে কল লাগায় তার দাদিকে।
তুমি কথা বলো আমি কলপাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসছি।
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় ইরহান উঠে চলে যায়।
ঐপাশ থেকে কল রিসিভ করে যুথির দাদি যুথিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে,,,, ওওও বু কেমন আছস তুই?
ভালা আছস? এই বুড়িরে তো ভুইলাই গেলি।
— ভুলি নাই দাদি।তোমারে কি ভুলা যায় নাকি?
কেমন আছো তুমি দাদি?
— আমি বহুত ভালা আছি বু।শোন যেই কারণে ফোন দিছি।
— হুম বলো।
— নাত জামাইরে নিয়া এই বাড়িতে তারাতাড়ি আয় দেখি।এখনই বের হ। এইখানে আইসা সকালের নাস্তা করবি।
— এতো সকাল সকাল যাইতে বলতেছো।কিছু কি হইছে বুড়ি?
— আসলেই দেখতে পাবি।তুই নাত জামাইরে নিয়া আয়।খুব জরুরি কাম আছে। খাওয়া দাওয়া করে সময় নষ্ট করিস না। এইখানে আইসা খাবি।
আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি।
দেখছি না। আসতেই হবে।
আচ্ছা।
যুথি কল কেটে ভাবতে লাগলো কি এমন হলো যে দাদি এতো তারা দিচ্ছে যাওয়ার জন্য।
তারপর চুপচাপ বিছানায় বসে ইরহানের আসার অপেক্ষা করতে লাগে।
কিছু সময়ের মাঝেই ইরহান ঘরে ঢুকে। হাতে তার একটা পলিথিনের ব্যাগ।
ইরহান ব্যাগটা যুথির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,,, বের করো এতে কিছু খাবার আছে। কাল থেকে দুইজনেরই কিছু খাওয়া হয়নি।খেয়ে তারপর বাজারে যাবো।তুমি একটু লিস্ট করে দিওতো কি কি লাগবে।
যুথি মাথা নাড়িয়ে খাবার গুলো বের করে,, পরোটা,ভাজি, বিস্কুট,, কলা রয়েছে।
তারপর দুইজন এক সাথে খেতে বসে। ইরহান পরোটা ছিরে মুখে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে,, তোমার দাদি কি বললো?
জরুরি কিছু নাকি?
কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে জরুরি কিছুই।
কিছু হয়েছে?
জানিনা।বলছে আপনাকে নিয়ে এখনই ঐ বাড়ি তে যেতে। ঐখানে গিয়েই যেনো খাবার খাই।যেনো দেরি না করি।
কি হয়েছে বলোতো? এসব কিছু জানতে পেরেছে নাকি?
মনে হয় না। এসব কে বলবে? অন্য কিছু একটা বিষয় আছে। আপনি যাবেন?
আমার তো মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্যই এতো জরুরি তলব। খেয়ে তৈরি হয়ে নাও।গিয়ে দেখি কি হয়েছে। উনি বু’ড়ো মানুষ যদি কোনো অসুবিধা তে পরে।ঐখান থেকে আসার সময় না হয় আমাদের যা যা দরকার সব বাজার সদাই করে নিয়ে আসবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর খেয়ে দেয়ে দুইজন ই ঘরে তালা মেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় যুথিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
——————————————
সকালে ঘুম থেকে উঠে তাছলিমা বানু রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কাল যে সেই শুয়েছে সেই শুয়ায়ই রাত পার হয়ে গেছে। খাওয়া আর হয়নি।কেউ তাকে ডাকেও নি খাওয়ার জন্য।
রান্না ঘরে ঢাকনা দিয়ে রাখা পাতিল গুলো খুলে চোখ মুখ কোচকে ফেলেন। কালকের রান্না করা বা’ষি খাবার ছাড়া কিছুই নেই।
তারমানে এতো বেলা হয়ে গেছে একটাও উঠে নাই।এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। রা’গে শরীর কাঁপতে থাকে তাছলিমা বানুর।একেই তো খিদে একদম সহ্য হয় না উনার।পেটে খিদে থাকলে এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে থাকে।
ঐ জ’মিদারের বেটিরা তোদের কি মাইক এনে ঘুম থেকে উঠার জন্য বলতে হবে?
বাড়ির রান্না কি তোর মায়েরা এসে করে দিয়ে যাবে? তোদের কে আজাইরা খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে আনছি?
এখনো বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বালাস নি কেউ।আমার ছেলেদের বোকা পেয়ে ঘারে বসে বসে খাচ্ছিস।
প্রায় পনেরো মিনিটের মতো বকে হাঁপিয়ে ওঠে। বসার রুমে গিয়ে বসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।
এরমধ্যে দিনা,আর লিমা তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে মাত্র উঠেই দৌড়ে বেরিয়ে এসেছে।
ঘুম ভাঙলো নবাবের বেটিদের?
আম্মা ভুল হয়ে গেছে। আসলে কাল একটু দেরিতে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই।
ঠিক সময় আমার খাবার আমার সামনে চাই বুঝেছো? নয়তো ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।বাপের বাড়ি গিয়ে জমিদারি চলা চইলো।
দুইজন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে।
যেতে যেতে দিনা বলে,,, এসব আর ভালো লাগে না ভাবি।
— আমার কি ভালো লাগে?
— ইচ্ছে করে বু’ড়ির চুল গুলো টেনে ছিড়ে দেই।
— লিমার কথা শুনে দিনা হেসে দেয়।
— হাসিস না। শুধু সময়ের অপেক্ষাতে আছি।একবার সব কিছু ঠিক হক পরে দেখে নিবো।সব মনে রাখছি।
তারপর দুই জা মিলে রান্না করতে লেগে পরে।
—————————————-
যুথি আর ইরহান খুব তারাতাড়ি ই এসে পরে যুথিদের বাড়ি।গাড়ি নিয়ে এসেছে। যুথি অবশ্য চায় নি গাড়ি নিতে ইরহান যুথির কথা শুনেনি।সাথে আরো ফল আর মিষ্টি নিয়ে নিয়েছে।যুথি বলেছে এতো লাগবে না।ইরহান একটা কথা ও শুনেনি।বলেছে তুমি চুপ থাকো।এই প্রথম বার নিজের শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি খালি হাতে যাবো কেন?
যুথি আর কিছু বলেনি।যা করার করুক।
যুথি ঘরের কাছে আসতেই দেখে তার দাদি বের হয়ে আসছে। যুথি কে দেখেই একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,,, ও বু তুই আইছস?
হুম।
আরে নাত জামাই কেমন আছো?
ইরহান সালাম দিয়ে বলে জ্বি দাদি ভালো।আপনি কেমন আছেন?
এইতো ভালো এসো এসো ভিতরে এসো। যুথি আর ইরহান এক সাথে ভিতরে ঢুকে।
ভিতরে ঢুকে দুইজন ই বেশ অবাক হয়।
যুথি তার দাদিকে বলে উঠে,,, দাদি এসব কি?
#চলবে,,,,,,,