#খেসারত
#চতুর্থ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
এক রাত শারীরিক সম্পর্ক করার পরেই রুহিকে আমার আর ভালো লাগছিলো না,
তাই ওর থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম।
ব্যাপারটা এমন না যে রুহিকে আমি ভালোবাসিনি,
কিন্তু কেন যেন ফিরে আসার পর ওর প্রতি আগের মত একটা টান কাজ করতো না, মনে হতো যা দরকার ছিলো হয়তো তা পেয়ে গেছি
আমি নিজেও জানিনা এমন কেন মনে হতে শুরু করে,
এরপর যখন ও প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়,
আমার আসলে ভয় লেগে যায় কারণ আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না, ওর প্রতি মন উঠে যায় আমার আর এম্নিতেও আমার সময় দরকার
এরপর আমি রুহির সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করি, এরই মাঝে সামিয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়, মেয়েটা আমাকে ভালো বুঝতো, রুহির মত ছিলো না, একটা সময় তার সাথে আমি সম্পর্কে জড়িয়ে পরি, কেন যেন মনে হতে শুরু করে সামিয়াই আমার উপযুক্ত রুহি নয়।
এভাবে রুহির ব্যাপারটা গোপন করেই সামিয়ার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলাম। বেশ ভালোই চলছিলো সব কিছু কিন্তু একদিন বিকেলে হঠাৎ সামিয়া ফোন করে আমাকে বলে ও বিয়ে করতে যাচ্ছে আর একজন ছেলেকে। আমার তখন দিশেহারা অবস্থা । সামিয়ার বাসার সামনে যাই, ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি, পায়ে ধরা বাকি ছিলো একমাত্র
তারপরেও ওর মন গলে নি ফেলে চলে যায় আমাকে ফেলে।
অনেকদিন ডিপ্রেশনে ছিলাম
কিছুই ভালো লাগতো না, এরপর ব্যাবসায় মন দিলাম একে ঘিরে আমার দিন কাটানো শুরু হলো, তারপরে যে রুহিকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি এমন কিছুই ঘটে নি,
কিন্তু রুহি আমাকে ভালোবাসে ও আমাকে চায় আর মনে হলো এই মেয়েটা আমাকে সুখী করতে পারবে এই আশায় কাল ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও বাবা মা কে নিয়ে গেলাম ওকেই বিয়ে করতে।
আর আমাকে মা বাবা অনেক ভালো তারা রুহির মত মেয়েই খুজছিলেন,
কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ইরাদ কথা গুলো ভাবছে, আসল জীবনে ও নায়ক নাকি খলনায়ক এগুলো কিছুর ধারণা ওর নেই,
হয়তো রুহির জীবনে ও কিছুটা খলনায়কের ভূমিকা পালন করে আবার সামিয়ার কারণে একজন ব্যার্থ প্রেমিক যে ওকে শরীর দিয়ে চায় নি, চেয়েছিলো মন থেকে কিন্তু সামিয়া ওকে না বুঝে ফেলে চলে যায়।
জীবন খুব অদ্ভুত, কার সাথে কখন কি ঘটে কেউ জানে না, হয়তো নতুন জীবন শুরুর পরে এসব আগের মত মনে হবেনা আবার হতেও পারে, রুহিকে আগের মত ভালোবাসলে সামিয়া ওর জীবনে আসতেই পারতো না এটা ইরাদ জানে, আর সামিয়া যাওয়ার পরে নানা মেয়েদের সাথে আবাধ মেলামেশা ও করেছে ও। যার ফলশ্রুতিতে এখন ভালোবাসা নামক জিনিসটা আর বুঝে ওঠা হয়না ওর। ইরাদের মনে হয় শান্তি আসবে এগুলো করলেই।
ও জানেনা সুখ আর শান্তি কিভাবে পাওয়া যায়। তবে এর সন্ধান পাওয়া যাবে একদিন সেই আশায় আছে ও।
ইরাদের মা ফোন করলেন রুহিকে
মার্কেটে নিয়ে যাবে তাই,
রুহি ইরাদের মা আর ইরাদের ফুপাতো বোন তনু সবাই মিলে শপিং করছিলো এমন সময় হঠাৎ করে তনুর শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলো, যেহেতু তনু প্রেগন্যান্ট তাই ইরাদের মা আর রুহি ভয় পেয়ে গেলো, এবং কাছে যে হাসপাতাল আছে সেখানে নিয়ে গেলো।
রুহি এই হাসপাতালে এসে ভয় পাচ্ছে কারণ এটা সেই হাসপাতাল যেখানে ওর এবরশন হয়ে ছিলো।
আমি শুধু আশেপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম যে ডাক্তার আমার অপারেশন করেছিলেন সে এখানে আছেন কি না?
আর উনি গাইনোকলোজিস্ট আর তনুও প্রেগন্যান্ট, যদি উনি আসে চেকাপে?
আর আমাকে যদি দেখে চিনে ফেলে?
ইরাদের মা বোনের সামনে আমার কি রকম ইম্প্রেশন পরবে?
এসব ভয় আমি পাচ্ছিলাম,
যেই ভয় পেলাম তাই হলো, আমার সামনে ওই ডাক্তারই আসলো
উনি চুপচাপ বসে তনুর চেকাপ করলেন,
মায়ের সাথেও কথা বললেন,
তনুর বেশি হাটাহাটি করার কারণে একটু দুর্বল অনুভব করছিলো ডাক্তার একটা স্যালাইন দিয়ে দিলো,
আমি এরপর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বাচলাম হয়তো বা আমাকে উনি চিনতে পারেন নি।
ইরাদের মায়ের ব্যাবহার অনেক ভালো ডাক্তার ও খুব ভালো করে উনার সাথে কথা বললেন,
আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মা
আমি তার ছেলের হবু স্ত্রী।
ডাক্তার তখন আমাকে কিছু না বললেও মা তনু
বেড় হয়ে যাওয়ার পর আমি আমার ব্যাগটা ভুলে ফেলে চলে যাচ্ছিলাম ডাক্তারের রুমে তা নিতে ফিরে আসার পরে তিনি আমাকে একা দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
– যখন আপনি এবরশন করতে এসেছিলেন তখন আপনার বয়স ১৮ ছিলো না তাই না?
কথাটা শুনে আমি চমকে উঠি,,
উনি তাহলে আমাকে চিনতে পেরেছেন??
– না তখন আমি ১৭ বছরের ছিলাম,
ডাক্তার আমাকে কিছু বললেন না আর
শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
বাসায় ফিরে এলাম কিন্তু এখনো সেই হসপিটালের ঘটনাই ভাবছি,
ডাক্তার এমন কেনো করলো আমি জানিনা, আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
তবে বুঝতে পারলাম একটা জিনিস উনি ভালো মানুষ নাহয় মায়ের সামনে এগুলো বলতে পারতেন।
এভাবে করেই বাকি দিন গুলো কেটে গেলো, দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো,
অনেক বড় পাপ করেছি আগে তবে
আজ সম্পর্কটাকে পবিত্র করার পালা, আমি বধু সেজেছি, লাল বেনারসিতে নিজেকে মুড়িয়েছি, একদম লাল টুকটুকে বউ।
খুব বিচলিত লাগছিলো,
বিয়েটা আসলে হবে তো?
সব সঠিকভাবে হবে?
নাকি কোনো ঝামেলা হবে আমার??
এরপর ইরাদরা এলো
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ালেন
কবুল বলার পর যেন একটা শান্তি অনুভব করলাম,
আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন সত্য হয়ে গেলো,
ইরাদ আমাকে ছেড়ে গেলো না,
অবশেষে ও আমাকে নিজের স্ত্রী করলো
ভেবেছিলাম এইতো সুখ চলে এসেছে জীবনে, আর কোনোদিন খারাপ কিছু হবেনা,, দুঃখের দিন শেষ,
কিন্তু কে জানতো ভুলের খেসারত যে দেওয়া বাকিই রয়ে গেছে এখনো,
সেই হিসাব তো এখনো মিলে নি…
প্রাপ্য যার যেটা সেটা তাকে পেতেই হবে হয়তো আগে নয়তো পরে,,
(চলবে…)