#গল্পটা_আমারই
পর্ব : ২৩ (অন্তিম পর্ব)
(সুরমা)
সেদিনটা ছিল আমার জীবনের একটা অভিশাপ। আমার আর অর্ণবের সম্পর্কের ইতি হওয়ার দিন। কোনোদিন ভাবীনি তিনটা বছরের সম্পর্কটা এভাবে শেষ হবে। আমি অর্ণবের জন্য সব কিছু করতে রাজি ছিলাম।
যে আমি কোনোদিন রান্না করতে কি কি লাগে জানতাম না সেই আমি অর্ণব পছন্দ করে শোনে সব রকম রান্না শিখেছি। ওও যেগুলো পছন্দ করে না। আমার পছন্দ থাকার পরও আমি সেগুলো পরিত্যাগ করেছি। ওর চাওয়া পাওয়া গুলোকে প্রায়োরিটি দিয়েছি। আমি প্রতিটা সেকেন্ড অর্ণবকে নিয়ে চিন্তা করেছি।
অর্ণবের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। অর্ণব আমাকে সব চেয়ে সুখকর মুহূর্ত গুলো উপহার দিয়েছে। যেগুলোর স্মৃতি আজ আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে।
অর্ণবকে ছাড়া একটা মাস কিভাবে যে কেটেছে একমাত্র আমিই জানি। এমন কোনো সময় নেই আমি কাঁদি নি। এমন কোন সময় নেই আমি বিরহ ব্যাথায় চটপট করি নি। প্রতিটা রাত কেঁদেছি। অল্প আঘাতে বেশি কষ্ট অনুভব করেছি।
একটু পর বরযাত্রী আসবে। আমার অনিচ্ছার সত্ত্বেও বিয়েটা হবে। আজও কেন জানি অর্ণবকে আমি ফিল করছি। এখনও আশায় আছি, অর্ণব আমায় অন্য কারো হতে দিবে না। এতো কিছুর পরও মনটা কতো কি যে চায় বলে বোঝাতে পারবো না।
কথায় আছে যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। নিঃশ্বাস শেষ হওয়ার আগে মনে হয়না কেউ নিজের ইচ্ছার মৃত্যু ঘটায়। আমি আমার এক জীবনে অর্ণবকে ভুলতে পারবো না। অর্ণব তো আমার প্রথম ভালোবাসা। অর্ণব আমার সব কিছু।
দোয়া করি, ও যেন সারাজীবন সুখে থাকে। ভালো থাকে। অর্ণব নিজের মনের মতো সঙ্গী পাক। আমি নাহয় ওকে স্বপ্নে কাছে পাবো। গোপনে আমি আমার হৃদয়ে ফিল করবো। বাস্তবে আর সম্ভব হবে না।
ব্যালকনির গ্রিল ধরে আকাশ দেখছি। আমার দুহাত মেহেদি রাঙ্গানো। আর মনটা রক্তে। আমার হাতে কি সুন্দর করে পার্লারের মহিলা আবির নাম লিখে দিয়েছে। কিন্তু পুরটা না। ইংরেজি A লেটারটা শুধু। আমার মনে হচ্ছে এটা অর্ণবের প্রথম অক্ষর।
এখন আর কাঁদতেও পারছি না। আর কতো কাঁদবো? চোখের পানি যে শুকিয়ে গেছে। এখন কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার বিয়ের কোনোদিক দিয়ে কমতি রাখেনি আব্বু। বাড়িটা ইচ্ছে মতো সাজিয়েছে। আমি আমার ব্যালকনি থেকে বাহিরটা দেখছিলাম। তখনেই দিপ্ত রুমে আসে।
দিপ্ত আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। আমি বাসায় থাকলে ও সব সময় আমার কাছে আসবে। আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। ওখানের পেয়াজু আমার খুব ভাল্লাগে।
বাসায় আসলে প্রতিদিন দিপ্ত আমার জন্য কিনে আনবে। আমিও দিপ্তকে খুব ভালোবাসি। আমার বিয়ে ঠিক হওয়া থেকেই দিপ্ত কেমন হয়ে গেছে। আমাকে দেখলে জোর করে হাসার চেষ্টা করবে।
দিপ্তর মুখটা এখনও মলিন। আমি ওকে কাছে এনে বললাম,,,,
– কিরে, তোর কি শরীর খারাপ?
– না আপু। আমার শরীর ভালো আছে।
– তাহলে তোকে করুণ লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?
– না। আপু, আমি তোমাকে একটা কথা বলি?
– বল,
– তুমি এই বিয়েতে খুশি তো? মন থেকে মেনে নিয়েছো তো? অর্ণব ভাইয়াকে ভুলে থাকতে পারবে তো? দিপ্তর কথা বলার স্টাইল বদলে গেছে। আগে আমাকে তুই বলতো। এখন কেমন তুমি তুমি করছে।
এতক্ষণ কষ্ট টা ধমে ছিল। এখন মনে হচ্ছে ক্ষতটায় কেউ লাঙল চালিয়ে দিয়েছে। আমার চোখ দিয়ে অটো পানি ঝরতে থাকে। আমি দিপ্তকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আমি বললাম,,,
– আমি অর্ণবকে ভালোবাসি রে। খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি কিছুই কল্পনা করতে পারিনা। আমি ওকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো দিপ্ত। কিভাবে থাকবো।
আমি যে ওকে নিয়ে একটা রাজ্য তৈরি করেছিলাম। আমি ওকে নিয়ে একটা জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার কান্না দেখে দিপ্তর চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। আম্মু এসে দেখে আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।
আম্মুকে দেখে আমি কান্না থামিয়ে চোখ মুছে ফেলি। আম্মু আমার পাশে বসে বলে,,,
– এখানে বসে বসে দুই ভাই বোনের কান্না করা হচ্ছে? আম্মুর কথা শোনে দিপ্ত বলে,,,,,,
– আম্মু আপুকে বিয়ে দিও না। আপুকে আমি যেতে দিবো না। আপু আমাদের সাথে থাকুক। আপু চলে গেলেযে আমি অসহায় হয়ে যাবো। আমি একা হয়ে যাবো। এবার আম্মুর চোখেও পানি। আম্মু দিপ্তর মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,
– পাগল একটা। আপু কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে? তোর যখন মন চাইবে তখন তুই চলে যাবি আপুর কাছে। মীরার যখন মন চায়বে তখন সেও চলে আসবে এখানে।
আম্মু বারবার চোখ মুচ্ছে। আম্মু জানে আম্মু এখন কান্না করলে আমাকে সামলানো কঠিন হবে। তাই কান্নাটা আটকাতে চাইছে। আম্মু চোখ মুছে বলে,,,,,
– মীরা, চল। পার্লার থেকে লোকজন চলে আসছে সাজাতে। আমিও চুপচাপ আম্মুর সাথে গেলাম। আমাকে বউ সাজানো হয়েছে। ঠিক একটা লাল পরী। আজকের এই সাজটা সার্থক হতো যদি অর্ণব আমার জীবন সঙ্গী হতো।
আমি তো কতো স্বপ্ন দেখেছি। বউ সাজবো। অর্ণবের জন্য একদিন খুব সাজবো। কিন্তু,,,,,,
সারা বাড়ি হৈচৈ করছে। আমি আমার কোনো বান্ধবীদের দাওয়াত দেইনি। এমনকি তন্বী আপুকেও বলি নি। তন্বী আপুকে অর্ণবের জন্যই বলি নি। আজ বিয়ে বাড়িতে সবাইকে অচেনা লাগছে। সবাইকে নতুন লাগছে। মনে হয় আজই প্রথম দেখলাম সবাইকে।
বরপক্ষ চলে এসেছে অনেক আগেই। আমারও সাজগোজ শেষ। এখন বসে আছি কখন স্টেজে যাবো তার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ আগেও মনে হয়েছিল এই বিয়েটা আমার একটা দুঃস্বপ্ন হতো। ঘুম ভাঙ্গলে দেখতাম আমি আগের মতোই আছি। অর্ণবও আছে।
এখন মনে হচ্ছে বসে বসে কেউ স্বপ্ন দেখে না। আর আমারটা যেহেতু স্বপ্ন না সেহেতু দুঃস্বপ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আমি এখন মানব মূর্তি। দেহ আছে প্রাণ আছে কিন্তু কোনো ফিলিংকস নাই। কাজিনরা সবাই আমাকে স্টেজে নেওয়ার জন্য এসেছে। ওরা আমাকে স্টেজে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও যাচ্ছি।
মনে মনে কতো কথা যে চিন্তা করছি। কখনও কখনও মন বলতেছে এখন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে মরে গেলে বেশ হতো। সারা বাসা ভর্তি লোকজন। সবাই আফসোস করতো।
বলতো, ইশ! এতো অল্প বয়সে একটা মেয়ে মারা গেছে। আজকে বিয়ে ছিল মেয়েটার। কতো স্বপ্নই না দেখেছিল এই বিয়েটা নিয়ে। কিন্তু কিছুই সত্যি হলো না।
কিন্তু পৃথিবীর কেউ জানতো না আমি কতো কষ্ট নিয়ে মরে গেছি। এই মৃত্যুতে আমি কতোটা হেপি হতাম। যে কষ্ট বেঁচে থেকে পেয়েছি সেই কষ্টগুলোরও মৃত্যু হতো আমার মৃত্যুর সাথে সাথে।
আমি কতো কষ্ট থেকে মুক্তি পেতাম। আমি আনমনে এসব ভাবছি। ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কোনদিকে যাচ্ছি। আমার খেয়াল নেই। হঠাৎ দিপ্ত এসে আমার হাত ধরে ঝাকি দিয়ে বলে,,,,
-আপু দেখ কে এসেছে। তোকে কখন থেকে ডাকছি। তুই কোথায় হারিয়ে গেছিস। কিছু বলছিস না কেন? দিপ্ত আমার হাত ধরে টানতে থাকে। আমি আমার কল্পনার রাজ্য থেকে বের হয়ে আসি। আমি হকচকিয়ে বললাম,,
-কি হয়েছে? কোথায় কি হয়েছে?
-আপু তুই দেখ। ঐদিকে তাকা। দেখ কে আসছে। আমি দিপ্তর হাত অনুসরণ করে চমকে উঠলাম।
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আমি সত্যি দেখছি নাকি এটাও কল্পনা? আমি আমার কাজিনদের দূরে সরিয়ে দিলাম। আমি দৌঁড়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। অর্ণব। অ র্ণ ব এসেছে।
আমি জানতাম ওও আসবে। আমাকে অর্ণব খুব ভালোবাসে। আমাকে ছাড়া ওও থাকতে পারবো না। কিন্তু হুট করেই আমার মুখ থেকে হাসি উদাও হয়ে যায়। আমি কিছুটা পিছিয়ে আসি।
অর্ণব কেন এসেছে? কিসের জন্য এসেছে? ওও কিভাবে জানলো? ঠিকানা পেলো কোথায়। কেন এসেছে আমার ভেতরের আগুনটা জ্বালিয়ে দিতে। কেন এসেছে। না আসলেই তো পারতো। কি দরকার ছিল এখানে এসে আমার কষ্টটা বাড়িয়ে দেওয়ার।
আমার চোখ দিয়ে পানির বন্যা বইছে। আমাকে দেখে অর্ণব আমার দিকে ছুটে আসে। অর্ণবের চোখে জল। ওও আমার থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,
-মীরা, তুমি এসব কি করতে যাচ্ছিলে? কেন এতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে? আমার ভালোবাসাটা এতোই ঠুনকো ছিল? আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো নি? অর্ণবের চোখ দিয়ে ঢেলে পানি পড়ছে।
ওর চোখের পানিটা দেখে আমি আরো কাঁদতে লাগলাম। আমার কষ্ট আরো বাড়তে লাগলো। অর্ণবের সাথে তন্বী আপুও আছে। তন্বী আপু আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে বলে,,,
-মীরা, এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনন্ত আমাকে জানাতে পারতি। অর্ণব আমার যত ভালো বন্ধু হোক তুই কিন্তু আমার রুমমেট ছিলি। আমি তোকে নিজের বোনের মতো দেখতাম। অর্ণব তোর সাথে অন্যায় কিছু করলে আমি প্রতিবাদ করতাম।
তুই নিজের ভেতরে রাগ পোষে রাখলি? তুই অর্ণবের এমন আচরণের কারণটা একবার জানতে চেয়েছিস? কেন অর্ণব তোকে সময় না দিয়ে পড়াশোনা নিয়ে এতো বিজি হয়ে গেছিল একটাবার খুঁজ নিয়েছিস?? অর্ণব বলে,,,,,
-তন্বী প্লীজ, এখন ওসব কথা থাক।
-থাকবে কেন? বলছি যখন সবটাই বলবো। মীরা শোন, তোর বিয়ে হয়ে যাবে শোনে অর্ণবের একটা চাকরী খুবই প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে আন্টি, মানে অর্ণবের মা হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আন্টি অসুস্থ এটা শোনে আমার বুকটা কেঁপে উঠে। আমি তন্বী আপুর দুই বাহু ধরে বলি,,,,
– আন্টি? আন্টির কি হয়েছে?
– উনার বেস্টে প্রবলেম ছিল। ডাক্তার বলেছিল উনার চিকিৎসা না করালে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আন্টি অর্ণবকে এসব জানায় নি। এখন হঠাৎ সমস্যাটা খুব বেড়ে গেছে। আর তুই জানিস অর্ণবে আপন বলতে তার মা।
আর আন্টির পরেই তুই। আর অর্ণব বেচারা দুটো মানুষকেই একসাথে হারাতে বসেছিল। আন্টির চিকিৎসার জন্যও বেশ টাকা দরকার ছিল। সেই সময় অর্ণব তোর সাথে কথা বলার থেকে একটা জব বেশি প্রয়োজন মনে করেছিল।
তুই কষ্ট পেয়েছিস অর্ণব তোকে কেন কল করে না। তুই কল করেছিস ওকে? ওও কি করছে না করছে জানতে চেয়েছিস? অর্ণব আন্টিকে হসপিটালে ভর্তি করায়। আন্টির অবস্থাও সিরিয়াস ছিল।
অর্ণব দিন রাত হসপিটালে আন্টির সেবা করতো। এই সময় তোর অর্ণবের পাশে থেকে ওকে সাপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। ওকে ভরসা দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু তুই তা না করে ওর উপর রাগ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? আমি কাঁদতে কাঁদতে অর্ণবের দিকে তাকালাম। বেচারার চেহারার কি হাল হয়েছে। এতো কষ্ট পেয়েছে ওও? আর আমি কিনা,,,,,,।
নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। সত্যি আমি অর্ণবের যোগ্যই না। আমি অসহায় হয়ে অর্ণবের দিকে তাকালাম।
আমরা এতো কথা বলছি। লোকজন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মামা এসে বললেন,,,
– কি হচ্ছে সব? এরা কারা? আব্বু, আম্মু ভাইয়া আমার নিকট আত্মীয় স্বজন সবাই আমাদের ঘিরে ধরে। দিপ্ত আব্বু কাছে গিয়ে বলে,,,,
– আব্বু। উনি অর্ণব ভাইয়া। আপু যাকে ভালোবাসে বলেছিল। আমি আপুর ফোন থেকে ভাইয়াকে কল দিয়ে আপুর বিয়ের কথা বলেছি। বাসার ঠিকানাও দিয়েছি।
আব্বু আপু সত্যি অর্ণব ভাইয়াকে ভালোবাসে। তুমি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দাও। আপু অর্ণব ভাইয়াকে ছাড়া সুখি হবে না। আব্বু আমি দেখেছি আপু সব সময় অর্ণব ভাইয়ার জন্য কেঁদেছে। কিন্তু কাউকে বলে নি।
আব্বু আম্মু সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি তাকিয়ে আছি নিচের দিকে। অর্ণব বলে,,,
– আংকেল, আমি মীরাকে সুখি রাখতে পারবো। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আব্বু বলে,,
– মীরা? আমি আব্বুর ডাক শোনার পরও চোখ তুলে তাকায় নি। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছি। আমার কারো চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
আমার একটা ভুল আজ কি থেকে কি হতে চলেছে। আব্বু বলে,,,,
– মীরার যে বিয়ের কথা হচ্ছে তোমাকে বলেনি? বলেনি আমার সাথে কথা বলার জন্য? আব্বুর কথা শোনে অর্ণবও মাথা নিচু করে রাখে। আব্বু আবার বলে,,,,
– তখন যেহেতু আসো নি এখন কেন এসেছো? অর্ণব হাঁটু ভাজ করে আব্বুর দিকে দুহাত জোর করে বলে,,,
– আংকেল, মীরাকে আমার লাইফে খুব দরকার। আমি ওকে ভালোবাসি। আমার জব নেই। আমি নিজেই অনেক কষ্টে জীবন যাপন করি। সেই অবস্থায় আমি কিভাবে এসে আপনার সামনে দাঁড়াবো? কিভাবে আপনার কাছে আপনার মেয়েকে চাইবো বলুন?
আমি মীরার কাছে সময় চেয়েছিলাম। আংকেল প্লীজ, আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। অর্ণবের কথা গুলো আমার কলিজায় এসে লাগছিল। আমার জন্য ওকে কতোটা অপমান সইতে হচ্ছে।
কতো লোক আমার অর্ণবকে নিয়ে কথা বলছে। আমি কিভাবে এমনটা করতে পারলাম। অর্ণবকে তিন বছরে কখনও কারো কাছে নত হতে দেখিনি। আমার এই কাজের জন্য অর্ণবকে এতোটা ছোট হতে হলো।
আমি যদি একটু বুঝতাম তাহলে হয়তো অর্ণব সম্মানের সহিত আব্বুর থেকে আমাকে চেয়ে নিতো। গত দিন গুলোর কষ্টের চেয়ে আজকের কষ্টটা অনেক অনেক বেশি। মামা বললেন,,,,,
– জব নেই তাহলে কিভাবে আসছো ওকে বিয়ে করতে? আমাদের মেয়েকে খাওয়াবে কি? পড়াবে কি? মামার কথা শোনে অর্ণব উঠে দাঁড়ায়। নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে মামার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,
– দেখুন আমি বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং এ সিলেক্ট হয়েছি। সামনে সপ্তাহ থেকেই জয়েন করবো। আমি আরো কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছি। আশা করি ওগুলোও হবে। ওকে আমি আমার মতো সুখে রাখতে পারবো।
ওও আপনাদের কাছে কোনো রকম অভিযোগ করতে পারবে না। আংকেল প্লীজ, আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল মীরাকে নিজের ঘরে তোলার। আমি আমার মাকে কথা দিয়েছি। অর্ণবকে কতোটা অসহায় লাগছে।
আগে কখনও অর্ণবকে এতটা ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। এতোটা অসহায় ওকে কখনও হতে দেখিনি। আব্বুর আমার দিকে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আমি কাঁদছি। আমার চোখ থেকে বৃষ্টির ফোটার মতো ঘন বর্ষণ হচ্ছে। আব্বু বলে,,,,
– মামনি, তুমি কি চাও? তোমার সুখের চেয়ে বড় আমার কাছে কিছুই না। এই মুহূর্তে বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে হয়তো লোকে আমাকে কথা শোনাবে। কিন্তু এগুলোর থেকেও তুমি আমার কাছে দামি। বলো। তুমি যা চাইবে আমি তাই করবো। আব্বুর কথা শোনে মামা বলেন,,,,
– কিন্তু দুলাভাই ওরা?
– বললাম না, আমার মেয়ে আগে। আমি আব্বুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম। আমার এখন কষ্ট হচ্ছে না। এখন আমার সুখ সুখ লাগছে। সবাই আমাকে এতো ভালোবাসে। কিন্তু আমি তো এতো ভালোবাসা পাবার যোগ্য না।
একটা মেয়ে কতোটা ভাগ্যবতী হলে অর্ণবের মতো জীবন সঙ্গী। অর্ণবের মায়ের মতো একজন শাশুড়ি মা আর আমার পরিবারের মতো একটা পরিবার পায়। আর আমি নিজের ইগোকে বড় করে প্রত্যেকটা মানুষকে ছোট করেছি।
আমি বুঝতে পেরেছি। জীবনটা রঙিন। খুবই রঙিন। যদি চলার পথে ছোট ছোট কিছু জিনিসকে এড়িয়ে চলে। কখনও জেদকে প্রশ্রয় না দেয়। যদি আমি একবার অর্ণবকে বুঝার চেষ্টা করতাম। অর্ণবকে একটু সময় দিতাম।
নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে বলতাম তাহলে হয়তো আমার জীবনে দুঃসময় গুলো আসতো না। আমাকে আর অর্ণবকে এই কঠিন সময়ের মুখোমুখিও হতে হতো না। লোকে বলে মেয়েরা একটু বেশি বুঝে। আজ তার প্রমাণ আমি নিজেই।
আমি উপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললাম,,
‘ হে প্রভু। আমাকে ক্ষমা করো। আমি অনেক বড় ভুল করেছি। প্রিয় মানুষ গুলোর চোখের জল ঝরিয়েছি। আমাকে একটা সুযোগ দাও, কথা দিচ্ছি, আমি আমার ভালোবাসা যত্নে রাখবো। কখনও তিল পরিমাণ কষ্ট পেতে দিবো না। কখনও এমন অবুঝের মতো আচরণ করবো না। আমাকে লাস্ট একটা সুযোগ দাও প্রভু। অর্ণবকে আপন করে নেওয়ার তওফিক দাও।’
সমাপ্ত-
‘গল্পটা শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগে। মাঝখানে পরীক্ষার কারণে লিখতে পারিনি। তবুও অনেক পাঠক ধৈর্য ধারণ অপেক্ষা করেছে গল্পটা পড়ার জন্য। পাশে থেকেছে। জানিনা গল্পটা কেমন হয়েছে। নিজের যতটুকু সামর্থ্য আছে আমি চেষ্টা করেছি। সামনের দিন গুলোতে আরো চেষ্টা করবো। আপনাদের ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা আমার গল্প পড়েন কিন্তু কমেন্ট করেন না তাদের কাছে আমার অনুরোধ। আমার গল্পের শেষ পর্বে কষ্ট করে হলেও একটা কমেন্ট করবেন। জানাবেন গল্পগুলো কেমন লিখি। কোথায় গ্যাপ পড়েছে। কি যোগ করা উচিত। কোথায় প্রমোট করা উচিত। কোন জিনিস গুলো বর্জন করা উচিত। আপনাদের কমপ্লিমেন্টে আমি আমার গল্পের দিক গুলো পরিষ্কার বুঝতে পারবো। অন্য পর্বে লাইক কমেন্ট না করলেও আমার সমস্যা নেই। কিন্তু প্লীজ প্লীজ লাস্ট পর্বে একটা কমেন্ট আশা করছি। অবশ্যই নাইস, অসাধারণ এমন কমেন্ট না। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।’
আমার পেইজের লিংক। লাইক দিয়ে পাশে থাকুন।
https://www.facebook.com/pg/Sheikh-Surma-121806009221449/reviews/