গল্পটা_আমারই পর্ব : ২১

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ২১
(সুরমা)

সেদিন থেকেই শুরু হলো আমার কষ্ট। সেদিন এতো কান্নার পর আমার বাসার সবাই আমাকে প্রশ্ন করলো। আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম। দিপ্ত আসলো আমার রুমে তখনও আমার চোখে পানি।

দিপ্ত রুমে ঢুকে বললো,,,
– আপু আমাকে ভাইয়ার ছবি দেখা। দিপ্তকে দেখে আমি চোখের পানি মুছে উঠে বসলাম। দিপ্ত এসে বসলো আমার পাশে। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। দিপ্ত আবার বললো,,,,

– আপু, আমার যদি ভাইয়াকে পছন্দ না হয় তাহলে আমি কিছুতেই তোর বিয়ে হতে দিবো না। যদি আমার পছন্দ হয় তবেই আমি বিয়ে হতে দিবো। দিপ্তর কথা শোনে আমার কান্না আসছে।

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি চোখের পানিটা আটকানোর। কিন্তু কেন জানি চোখটার সাথে যুদ্ধ করে পারছি না। তবুও আমি বারবার স্বাভাবিক হতে চাইছি। দিপ্ত বললো,,,,,

– আপু, ভাইয়ার ছবি দেখা। ভাইয়ার নাম্বার দে আমি কথা বলবো। দেখি কেমন লোক সে আমার প্রিয় আপুমনির মনটা নিয়ে বসে আছে। দিপ্ত এতো কিছু বলছে তবুও আমি আমি বলছি না।

কারণ কিছু বলতে গেলে যে আমি কেঁদে দিবো। কিন্তু এতো কিছুর পরও আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। দিপ্ত আমার চোখে জল দেখে বেকুল হয়ে বললো,,,,

– আপু, তুই কাঁদছিস কেন? আমাকে বল। তুই এতো কাঁদছিস কেন? দিপ্ত আমার চোখের পানি মুছে দিতে চাইলো। কিন্তু আমি এবার কেঁদে দিলাম।

শব্দ করে কাঁদছি। কান্নার গতি বাড়তে লাগলো। আমাকে এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে দিপ্ত গিয়ে মা বাবাকে ডেকে আনলো। তখন আরো বিপত্তি হলো। মা বাবাও বেকুল হয়ে গেলো।

তাঁরাও আমার কান্নার কারণ জানতে চাইছে। আমি তো কিছু বলতে পারছি না। কি বলবো আমি। আব্বু আমার কান্না সহ্য করতে পারে না।

আব্বু যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। আমি যে আব্বুর একটা অংশ। আব্বু আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো,,,,,

– বল মা। তোর কি হয়েছে আমাকে বল। আমি শুধু কাঁদলাম। কিছু বলতে পারলাম না। বাসায় আমি চারদিন থাকলাম। এই চারদিন একবারো অর্ণব আমাকে কল দেয়নি।

আমিও করিনি। চারটা দিন যেন আমি নরকে ছিলাম। জানিনা নরকে এতো কষ্ট পেতে হয় কিনা। বা আরো বেশি কিনা। তবে আমার কাছে এই দিন গুলো নরকের চেয়ে কম মনে হয়নি।

যার সাথে এক মুহূর্ত কথা না বলে থাকতে পারিনা তার সাথে কথা না বলে আমার চারটা দিন চলে গেছে। আব্বু প্রত্যেকদিন অর্ণবের কথা জিজ্ঞেস করতো। কবে আসবে আমাদের বাসায়। আব্বু কয়েকবার অর্ণবের সাথে কথা বলতেও চেয়েছে।

কিন্তু আমি নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেছি। আব্বু আম্মু চেয়েছিল আরো কিছুদিন আমি বাসায় থাকি। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিললাম। প্রতিদিন রাতে আমি কাঁদতাম। মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

এই বুঝি অর্ণব কল দিবে। কিন্তু না। ওও কল করে না। আমি বারবার ফেইসবুকে ঢুকে দেখতাম অর্ণব আছে কিনা। কিন্তু চারদিনের মধ্যে একবারের জন্যও ওকে পাইনি। ঢাকা গেলে হয়তো আবার আমাদের সম্পর্কটা নরমাল হবে এই ভেবে আমি ঢাকায় ফিরে যাই।

ঢাকা গিয়েও আমার শান্তি নাই। আব্বু প্রতিদিন কল করবে । আব্বু যেন আমার বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে গেছে। কল করেই বিয়ের কথা বলবে। ওই ছেলেও নাকি আব্বুকে কল করে বিয়ের কথা বলে। এখনো ওরা আমার পিছু ছাড়ছে না।

নাছোড়বান্দা লোকগুলো। এদিকে অর্ণবের কোনো খোঁজ নেই। অর্ণব হঠাৎ করে যেন গায়েব হয়ে গেছে। ঢাকা গিয়ে আমি অর্ণবকে কল করি। কিন্তু ওর ফোনও অফ।

আর আমি এই কয়দিনে অর্ধেক শেষ হয়ে গেছি। হাসতে ভুলে গেছি। শরীরও নষ্ট হয়ে গেছে। তন্বী আপু মানুষটা অদ্ভুত। কিভাবে আমার মনের কথাগুলে বুঝে ফেলে। আমাকে শান্তনা দেয়।

একদিন দিনের বেলায় আব্বু কল করে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল না কথা বলতে। কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। কল রিসিভ না করলে আব্বু আরো অস্থির হয়ে যাবে। তাই কলটা রিসিভ করলাম। আব্বু বলে,,,,,,

– কেমন আছো মামনি?
– আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
– এইতো আলহামদুলিল্লাহ। কি করো?
– শুয়ে আছি। তোমরা কি করছো?

– তোমার মামা আসছে। তার সাথে কথা বলি। আব্বু মামার কথা বলতেই আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি। বিয়ের প্রস্তাবটা মামাই এনেছিল। এখন আবার বাসায় মামা এসেছে। নিশ্চয় কারণ আছে। আমি কেঁপে কেঁপে বললাম,,,,,

– মামা কেন?
– ওই ছেলের বাড়ির লোকজন পাঠিয়েছে। ওদের নাকি তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আমি মানা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ছাড়ছে না। তুমিতো অর্ণবের কথাও কিছু বলছো না ক্লিয়ার করে।

তোমাকে বলেছি অর্ণবের নাম্বার দাও আমি কথা বলি। ওর গার্ডিয়ানের নাম্বার দাও। তোমি কিছুই বলো না। অর্ণবকে বলেছো? ওও কি বলে? ওকি তোমাকে বিয়ে করতে চায়না?

আব্বুর কথা শোনে আমি চুপ করে থাকি। মনে মনে বলছি, ‘ আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমার আর এসব সহ্য হচ্ছে না। আমি কি করবো? আমাকে কোনো রাস্তা দেখাও।’ আব্বু আবার বললো,,,,

– চুপ করে আছো কেন? তোমার মামার সাথে কথা বলবে???
– না আব্বু। আমি মামার সাথে কি বলবো? তুমিই বলো। না করে দাও। বলো ছেলেকে আমার পছন্দ হয়নি।

আব্বুকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। কলটা কেটে আমি কাঁদতে লাগলাম। এই মুহূর্ত কেবল মনে হচ্ছে মরে যাই। মৃত্যুতেই মনে হয় আমার সুখ। তন্বী আপু রুমে এসে আমার কান্না শুনে অস্থির হয়ে যায়।

আপুকে দেখে আমি আরো কাঁদলাম। তন্বী আপুকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলাম।একসময় আমি নিজের থেকেই কান্না থামালাম। অন্বী আপু বলে,,,,

– কি হয়েছে আমাকে সবটা খুলে বলতো? আমি তন্বী আপুকে সবটা খুলে বললাম। তন্বী আপু আমার কথা শোনে বলে,,,,,,

– অর্ণব এখন আর আমাদের সাথেও আসে না। সারাদিন পড়াশোনা করে। সকাল ছয়টায় পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে দাঁড়ায় রাত দশটায় রুমে আসে। রুমে এসেও বই নিয়ে বসে। ওর নাকি একটা জব খুব বেশিই দরকার এই মুহূর্তে।

এই কারণেই হয়তো ওও তোকে সময় দিতে পারে না।
– আপু, আমি কি কিছুই না? আমাকে মানুষ মনে হয়না? একটা বারও কি আমাকে কল করা যায় নি? ওও জানে আমি কিভাবে আছি। তারপরও একবার আমার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

আমার সাথে দুমিনিট কথা বললে ওর কি ক্ষতি হতো বলতে পারো? অর্ণব এতোটা কেয়ারলেস কেমন করে হতে পারে?? কিভাবে?? আমি আবার কাঁদছি।

জানিনা আমাকে আর কতো দিন এতো কষ্ট পেতে হবে। কতোদিন আমাকে কাঁদতে হবে। অন্বী আপু আমাকে শান্তনা দিয়ে বলে,,,,

– আচ্ছা তুই বস। আমি অর্ণবকে একটা কল করি।
– কিন্তু ওর তো ফোন অফ আপু।
– আজ লাইব্রেরি অফ। অর্ণব রুমেই আছে। আমি ওর রুমমেটকে কল করছি। তন্বী আপু আমার কাছে বসেই কল দেয়।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here