#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১৫
সায়ান দোতলার দ্বিতীয় রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, রুমটি সম্পুর্ণ অন্ধকার তা বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে। রুমের দরজা ভিড়ানো, এই বিদঘুটে অন্ধকার রুমে রুশি আদোও আছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সায়ান। ও দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো,আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে দরজার এপাশটা এতো বিদঘুটে অন্ধকার অথচ বারান্দার পাশটায় কি সুন্দর জোছনার আলো!আজ পূর্ণিমা নয় তবে আকাশের ওই মাঝারি আকারের চাঁদটি যেন উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। সায়ান ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো, মনের মাঝে কোথাও একটা জোর দিয়ে কেউ বলে উঠছে
“যাকে খুজছিস সে এখানেই আছে, তোর খুব নিকটে”
সায়ান নিশ্বাস ভারী হতে শুরু করলো, যখনই রুশি নামটা মনে পড়ে তখনি কেমন এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করে ওর মাঝে। তাকে এক নজর দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগে যা চেয়েও মন থেকে সরাতে পারেনা। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছাড়লো সায়ান, এই অনুভুতি বড্ড জটিল জিনিস! কখন কার প্রতি কেমন অনুভুতি কাজ করে যা বুঝা যায় না আর তার কোন নাম দেয়া যায়। শুধু অনুভব করা যায় তাকে আমার চাই যেকোন মুল্যেই চাই, আচ্ছা রুশিকে কি ওর সত্যিই চাই?
সায়ান নিজের চুল চেপে ধরলো, মনে হচ্ছে আর কয়দিন এভাবে চলতে থাকলে ও পাগল হয়ে যাবে। এই নারী জিনিসটা খুব ভয়ংকর! একবার মাথায় চেপে বসলে আর শান্তি দেয়না।ওর মাথায় রুশি আর মনে চন্দ্রিকা চেপে বসে আছে নাকি মাথায় চন্দ্রিকা আর মনে রুশি সেটাই বুঝতে পারছে না!
মাথার চুল ছেড়ে সামনে তাকাতেই একজন নারীকে দেখতে পেলো,লম্বা চুলগুলো বাতাসের তালে তালে দুলছে। চাঁদের আলোয় তার মুখখানি ঝলঝল করছে, একটা হলদে ভাব চেহারায় ফুটে উঠেছে। সায়ান সেদিকে এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে, রুশির ঠিক কিছুটা দূরে থামলো তারপর বুঝতে ওই উজ্জ্বল মুখখানি বেয়ে দুফোটা জল গড়াচ্ছে।
রুশি কি তাহলে কাঁদছে! কিন্তু কেনো?ও কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো তারপর রুশির কাঁধে হাত রাখলো! রুশি চমকে উঠে দ্রুত নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো তা দেখে সায়ান প্রশ্ন করলো
“তুমি ঠিক আছো?”
কথাটা রুশি খুব ভালোভাবে নিলো না, মুহুর্তেই ওর চেহারার রঙ বদলে গেলো। সায়ানের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে বললো
“আমার ঠিক থাকা বা না থাকাতে কার কি যায় আসে?”
রুশির কথায় তীব্র অভিমান প্রকাশ পেলো যা দেখে সায়ান মনে মনে খুশি হলো, কারণ কাছের মানুষের প্রতিই মানুষের অভিমান জন্মায়! তবে কি ওর রুশির কাছের কেউ?সায়ান মুচকি হেসে আবারও কাঁধে হাত রাখলো, রুশি সরাতে চেয়েও সায়ানের সাথে পেরে উঠলো তাই রেগে গিয়ে হাল ছেড়ে দিলো! সায়ান নিঃশ্বব্দে হেসে বললো
“যখন জানো পারবে না আমার সাথে তখন এতো জিদ ধরে লড়তে আসো কেনো?আর এখন ঠান্ডা লাগতেছে আর তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো? ঠান্ডা লাগবে তো! চলো ভিতরে চলো”
সায়ানের আচমকা এতো কেয়ারিং দেখে রুশি বেশ অবাক হলো! তার ঠান্ডা লাগলো বা না লাগলো তাতে সায়ানের কি যায় আসে?নিশ্চিয় দয়া দেখাতে আসছে!আমার কারো দয়া চাইনা। রুশি কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো
“বাই এনি চান্স দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান আমার কেয়ার করছে? হাহ আই উইল বি ফ্লেটারড! ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি আমার সন্তানের বাবা তো আপনি! তাই হয়তো নিজের সন্তানের জন্য চিন্তা হচ্ছে আপনার। ডোন্ট ওয়ারি বাচ্চাটা আমারো আর আমার মাঝেই বড় হচ্ছে। আপনার থেকে চিন্তাটা আমারই বেশি!আমার সন্তান হিসেবে এতটুকু ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা ওর আছে ”
রুশির কথায় সায়ান দমে গেলো আর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিলো, ও সত্যিই রুশির কথা ভেবেই কথাগুলো বলেছে। রুশি হাল্কা কাপড় পরে আছে আর যা শীত পড়েছে তাতে ঠান্ডা লাগার চান্স অনেক বেশি।তারউপর রুশি কাঁদছিলো তাই ভাবলো ওকে ওখান থেকে নিয়ে আসবে কিন্তু রুশির কথা শুনে ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ও তাড়াতাড়ি রুশিকে এক্সপ্লেইন করতে চাইলো
“তুমি যা ভাবছো ঠিক তা নয়, আমি সত্যিই তোমার…”
“থাক মি.সায়ান আমাকে আপনি আপনার দয়া আপনার কাছেই রাখুন, আমাকে কষ্ট করে তা দেখাতে হবে না। আপনি এখানে নিজের সময় নষ্ট করে আমার প্রতি দয়া দেখাচ্ছেন সেটা জানলে কেউ একজন বড্ড অখুশি হবে।আমি দ্বিতীয়বার কারো থাপ্পড় খেতে চাইনা আর না আপনাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে থাকবো!”
রুশি কথাগুলো শেষ করে রুমে এসে লাইট জালিয়ে দিলো তারপর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো
“কারো রুমে আসতে হলে দরজায় নক করতে হয় তা কি কেউ আপনাকে শেখায়নি?যদিও এই ঘর বাড়ি সবই আপনাদের তবুও যেহেতু দয়া করে থাকতে দিয়েছেন তাই এতোটুকু প্রাইভেসি তো আশাই করতে পারি তাইনা?”
রুশির কথায় সায়ানের মুখের মাঝে ঝুলে থাকা হাসি নিমিষেই হারিয়ে গেলো, রুশি ঠান্ডা মাথায় ওকে অপমান করেছে এটা ও বেশ বুঝতে পারলো কিন্তু ও রিয়াক্ট করলো না। রুশি যা বলছে তার সবই সঠিক, ও তো সত্যিই ব্যার্থ রুশি যা চায় তা দিতে কিন্তু প্রচণ্ড খারাপ লাগা কাজ করছে।
রুশি সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সায়ান কথাগুলো ভালো ভাবে নেয়নি। ওকি একটু বেশি বলে ফেলেছে? কিন্তু ওর তো সবটা ক্লিয়ার করার দরকার ছিলো যে ও তাদের মাঝে ইচ্ছে করে আসেনি আর না তাদের মাঝে থাকবে। বিয়ে হয়েছে বলেই যে নিজের আত্মসম্মানের জলাঞ্জলি দিয়ে সায়ানের গলায় ঝুলে থাকবে এমন মেয়ে ও নয়। আত্মসম্মান খোয়ানোর চেয়ে ওর কাছে মৃত্যু শ্রেয়! তাই মুখের ভাব ভংগি পরিবর্তন না করেই বললো
“যা বলতে এসেছেন তা বললে খুশি হবো!”
সায়ান রুশির দিকে তাকালো, এই মুহুর্তে রুশির মাথায় কি চলছে তা ওর বোধগম্য হচ্ছে না তাই ও শান্ত স্বরে বললো
“ফার্মহাউজ থেকে এখানে কেনো শিফট হয়েছো? আমি তো সেই দিনই না করে দিয়েছি মিসেস খানকে তবুও তুমি তার সাথে এখানে এসেছো কেনো?”
“ওহ তো আজ তিনদিন পরে মনে হলো আমি এখানে কেনো এসেছি তা জিজ্ঞেস করা দরকার আপনার?উপস আপনি তো জানেনই না যে এখানে আমি তিনদিন আগে এসেছি!সে যাইহোক আমার মনে হলো আপনার ওইখানে থাকলে আপনার প্রেমিকা আবারও এসে আমাকে মারতে চাইতে পারে কিংবা আমার সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারে তাই এখানে চলে আসা আমার কাছে সেফ মনে হলো”
“চন্দ্রিকা এমন কাজ করবে না, অন্তত কোন নিষ্পাপ প্রাণের ক্ষতি করবে না”
“আপনি তাকে ভালোবাসেন তাই আপনার তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস কিন্তু সে আমার কেউ না তাই বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। মানুষ জেলাসির বসে অনেক কিছুই করতে পারে আর সেটার প্রভাব আমার বাচ্চার উপর পড়ুক আমি তা কখনোই চাইনা। আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো!”
“আমি চাইনা তুমি এখানে থাকো,এই খান বাড়িতে থাকার কোন দরকার নেই তোমার। আমার বউকে রাখার মতো জায়গা আমার আছে”
রুশি সায়ান কথা শুনে বেশ অবাক হলো, তার বেশ তাচ্ছিল্য নিয়ে বললো
“বউ!হাহ ভালোই মজা করতে জানেন দেখছি। শুনুন আপনার এই বাড়ির সাথে যা সমস্যা সেটা নিতান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু আমি কোথায় থাকবো সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার সেটাতে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আমি আপনাকে দেইনি।এখানে কিছু ভালো মানুষ আছে যাদের ছায়াতলে আমার সন্তান ভালো কিছু শিখবে। এনিওয়ে আপনি এখন আসতে পারেন! এসব ফালতু কথাবার্তায় সময় নষ্ট করার মতো অঢেন সময় আপনার থাকলেও আমার নেই”
রুশির এমন কথায় সায়ানের পিণ্ডি জ্বলে উঠলো, এই মেয়ে সেই তখন থেকে ওকে অপমান করে যাচ্ছে। আর ও মিথ্যে কি বলেছে ও কি ওর বউ না নাকি?নাকি ওর বউ হওয়া লজ্জার বিষয়?আর এটা ফাউল কথা! সায়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মেকি হেসে বললো
“আসলে কি বলোতো আমি আমার বউ বাচ্চাকে ছেড়ে যেতে চাইনা, তাই ভাবছি আমিও এখানে থাকবো। আর বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী তো একরুমেই থাকে তাই আমিও এই রুমেই থাকছি”
“আরেহ মানে কি?এখানে থাকবেন মানে?আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
সায়ান আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো, এই মুহুর্তে ওর মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন। এই মেয়ে আস্ত ধানিলংকা! একে দেখে বুঝাই যায়না এতো সুন্দর করে সুন্দর ভাষায় কেউ অপমান করতে পারে! উফ রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর।
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১৬
রুশি ভ্রু কুচকে বসে আছে বিছানায়, রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আজ হঠাৎ করেই কেনো এই মানুষটিকে বড্ড বিরক্ত লাগছে! ঠিক তার সাথে কি করলে শান্তি পেতো তা মাথায় ঢুকছে না, একবার মনে হচ্ছে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে টুপ করে নিচে ফেলে দিক আবার মনে হচ্ছে ফুচকার মতো কটমট করে যদি ভাংতে পারতো তবে হয়তো শান্তি লাগতো। রাগে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে এলোমেলো ভাবে।
ওয়াশরুম থেকে ঝরঝর পানির আওয়াজ আসছে সাথে যেনো ওর মাথার বুদ্ধিগুলো ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দশমিনিট ধরে ভেবেই চলছে যে এই তীব্র অসহ্যকর মানুষটিকে কি করে এই রুম থেকে তাড়ানো যায় কিন্তু কিছুই আসছে না মাথায়। এদিকে নক কামড়াতে কামড়াতে কখন চামড়াতে কামড় দেয়া শুরু করেছে তাতে ওর খেয়ালই নেই।হঠাৎ ব্যাথা অনুভব হতেই “আহহ” শব্দ করে উঠলো, হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত লাল হয়ে আছে। এতে যেনো রাগ তরতর করে আরো কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেলো
“ইশশ কি মনে পড়ছে না কেনো,এমনিতে তো তোর ভারী বুদ্ধি রুশি তাহলে আজ কি হলো। বুদ্ধির সাগর কি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো?নাহ এই লোকের সাথে এক রুমে থাকা অসম্ভব। ব্যাটা বিয়ে করে বউ মানবে না, বাইরে গার্লফ্রেন্ড রাখবে আবার এখন বউ বলে আদিক্ষেতা দেখানো হচ্ছে?হাহ এমন যেনো গাছের টাও খাবে তলার টাও কুড়াবে। নাহ বাপু এতো সহজে তোমার আশা তো পুরণ হতে দেয়া যাচ্ছে না। এই রুশি সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসকে এক্সেপ্ট করেনা।ভাব রুশি ভাব কিছু তো একটা উপায় আছে যাতে একে জব্দ করা সম্ভব!”
রুশি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে সায়ানের ফোনের দিকে নজর গেলো, খুশিতে ওর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। এই ফোন দিয়ে নিশ্চই তাকে জব্দ করা যাবে!কিন্তু যতোটা খুশি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছে তার থেকেও বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। পাসওয়ার্ড সেট করা! উফফফফ। হঠাৎ করেই রুশির মাথায় এলো যে চন্দ্রিকা রুশিকে পছন্দ করেনা আর সে যদি কোনভাবে জানতে পারে যে সায়ান ওর কাছে তাহলে সায়ানকে এখানে থাকতে কিছুতেই দিবে না। তাই কথাটা চন্দ্রিকার কান পর্যন্ত পৌছাতে হবে। রুশি শয়তানি হাসি দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে ইমার্জেন্সি নাম্বার লিস্টে গেলো কিন্তু চন্দ্রিকার নাম্বার খুজে পেলো না, এমনকি লাভ, লাইফলাইন এমন কিছুও নাই। রুশি রেগে ফোনটা আগের জায়াগায় রেখে দিলো,বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
“এই ছেলে কি ওই মেয়েকে ভালোবাসে না নাকি?নিজের ভালোবাসার মানুষের নাম্বার কেউ ইমার্জেন্সি লিস্টে রাখেনা!”
রুশি ফোন রাখতেই ফোনটা বেজে উঠলো আর হাতে নিয়ে দেখে সেটাতে লিখা “ছোট্ট পরী”। রুশি নামটার দিকে তাকিয়ে থাকলো, খুব আদর করে যদি কাউকে এমন নামে ডাকা হয়। রুশি জানে এটি চন্দ্রিকা তাই দেরি না করে ফোন তুলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই ফোনটা হাত থেকে হাওয়া হয়ে গেলো। হাত মুঠ করে পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান উদাম শরীরে দাঁড়িয়ে আছে, রুশি অন্যদিকে ফিরে দিলো এক চিৎকার।এই ভাবে কেউ খালি গায়ে শুধু একটা তোয়ালে পরে ঘুরে বেড়ায়?এর একটু হলে তো শক খেয়ে হার্ট এটাক করতো। সায়ান রুশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোন তুললো আর অপরপাশ থেকে কেউ একজন কিছু একটা বললো যা রুশি শুনলো না।সায়ান হঠাৎ বলে উঠলো
“আমি ব্যাস্ত আছি তাই ফিরছিনা। তুমি জানো আমি বাড়ি ফিরিনা তাই অযথা আমার জন্য কেনো বসে থাকো? যাও ঘুমিয়ে পড়ো নাহয় অসুস্থ হয়ে পড়বে”
“……………”
রুশি বুঝতে পারলো যে চন্দ্রিকার সাথে কথা বলছে তাই ইচ্ছে করেই বলে উঠলো
“আপনি এই রুমে…”
কিন্তু পুরো কথা বলার পুর্বেই সায়ান মুখ চেপে ধরলো যা রুশি ছাড়াতে পারলো না।ওপাশ থেকে হয়তো কিছু একটা বলেছে তাই সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“কেউ না! শুধু অফিসের কয়েকজন এমপ্লয়ি আছে। তুমি খেয়াল রেখো নিজের দিকে।”
বলেই খট করে কেটে দিলো আর রুশির মুখ চেপে ধরেই বললো
“কথা বলেছিলে কেনো?কারো কথার মাঝে কথা বলতে হয়না জানো না?”
রুশি সায়ানের হাতের বন্ধনী হাল্কা হতেই ঝাড়া মেরে ফেলে দিলো তারপর রাগি কন্ঠে বললো
“কেনো আপনার গার্লফ্রেন্ড এর সামনে সব কুকীর্তি ফাঁশ হয়ে যেতো?ভালোই হতো তাহলে, আপনার স্বভাব ভালো মতো জেনে যেতো সে”
“ওহ তারমানে তুমি প্ল্যান করে বলেছো তাইনা?তারমানে আমার সাথে থাকতে তোমার বড্ড অসুবিধা হচ্ছে?”
“হ্যা সেটাই আপনার মতো অসহ্যকর একটা মানুষের সাথে থাকা জাস্ট অসম্ভব! গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্তেও আবার ছুকছুকানির স্বভাব”
“মুখ সামলে কথা বলো।ভেবেছিলাম সুন্দর মতো এখান থেকে ফ্রেশ হয়ে পাশের রুমে ঘুমাবো বাট গেস হোয়াট! আমি এখন এখানেই থাকবো বুঝলে। যা করার করতে পারো।”
বলেই কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে পরা শুরু করে দিলো যা দেখে রুশি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরে বললো
“আর এইযে একটা মেয়ে ঘরে আছে জেনেও এইভাবে খালি গায়ে ঘুরা কোন ধরনের ম্যানার্স?তারউপর আবার জামাকাপড় চেঞ্জ করছেন। লজ্জাশরমের কি মাথা খেয়েছেন?”
“কারো পার্মিশন ছাড়া তার ফোন ধরা কোন ধরনের ম্যানার্স? তারউপর তুমি কথার মাঝখানে কথা বলেছো আবার ঝগড়াও করছো। আমি কি কিছু বলেছি?তারউপর তুমিই তো বললে আমার ছুকছুকানির স্বভাব তাই এমনটা করা তো আমার কেরেক্টার এর সাথে সম্পুর্ণ যায়”
“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার,আমি এতোক্ষন এই রুমে আছিই কেনো উফফ।আপনার রুম আপনাকে মোবারক, থাকুন এখানে”
বলেই গটগট করে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল তারপর দরজা টানতে থাকলো কিন্তু দরজা খুলছে না। রুশি কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন খুললো না তখন বুঝতে পারলো বাইরে থেকে কেউ ইচ্ছে করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। ও অসহায় দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকালো আর বুঝতে পারলো সায়ান ব্যাপারটায় বেশ মজা পাচ্ছে!ও রেগে দরজায় দিলো এক লাথি কিন্তু ব্যাথা পেয়ে দমে গেলো। ও বুঝলো রেগে কিছু বলে লাভ নেই তাই শান্ত স্বরে বললো
“প্লিজ দরজাটা খুলে দিতে বলুন”
“তোমার সমস্যা তুমি বলো খুলতে, ইটস নান অফ মাই বিজনেস।তবে আজ বেরুতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না, আমার মন বড় তাই তুমি এই রুমে থাকলে আমি মাইন্ড করবো না সত্যিই!”
বলেই বিছানায় উঠে ব্লাংকেটের ভেতরে ঢুকে পড়লো, রুশি এটা দেখে দেখে আকাশ থেকে পড়লো। এখন কি রুমের সাথে সাথে বেডও শেয়ার করতে হবে নাকি?রুশি তাই মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো
“আপনি যদি বেডে ঘুমান তবে আমি কোথায় ঘুমাবো? তাই যদি আপনি…”
“তুমি বেডে ঘুমাতে না চাইলে সেটা তোমার সমস্যা, আমার বেড শেয়ার করতে কোন সমস্যা নেই। তুমি চাইলেই ওইপাশটায় শুতে পারো। বেড যথেষ্ট বড় আছে”
সায়ান রুশির থেকে দ্বিগুণ হাসি মুখে ঝুলিয়ে বললো তারপর আবার ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। রুশি সেদিকে তাকিয়ে রইলো, ওর পক্ষে সায়ানের সাথে একই বিছানায় ঘুমানো সম্ভব নয়। সায়ান যতোই ওর স্বামী হোক তবে সেটা নামের, তাই ও প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। রুশির কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সায়ান মাথা বের করে দেখলো রুশি আগের জায়াগায় দাঁড়িয়ে আছে মাথানিচু করে। তাই সায়ান একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর বালিশ নিয়ে সোফায় যেতে যেতে বললো
“আমার মনটা খুব বড়ো কিনা তাই ভাবলাম একটা অসহায় মেয়েকে বেডে শুতে দেই। আমি নাহয় আজ রাত সোফায় কাটিয়ে দিলাম তবে এরপরের বার কিন্তু বিছানা ছাড়বো না বলে দিলাম”
বলেই সায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো আর রুশি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।ওর হঠাৎ মনে হলো নাহ মানুষটিকে ঠিক যতোটা অসহ্যকর মনে হয়েছে সে ততটা নয়!একটু কম অসহ্যকর যেমনটা সহ্য করা যায়।একজন ছেলের হিসেবে সায়ান প্রতি রুশির সম্মানটা বেড়ে গেলো, আর যাইহোক ওর অস্বস্তি বুঝতে পেরেও ওকে বিছানায় শুতে বাধ্য করেনি। চাইলেই সে সো কল্ড স্বামীর অধিকার দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারতো তবে সে কিছুই করে নি।রুশির সায়ানকে সম্মান করে কারণ রুশির সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে সে আবার অন্যের মতো নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত ছেড়ে দেয়নি।নাহয় আজকাল কিছু মানুষ ভালোবাসার ওয়াদা করে তারপর মাঝপথেই হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, তার থেকে সায়ান অনেক ভালো,নিজের ভালোবাসার সম্মান করতে সে জানে!
রুশি কি মনে করে উঠে বসলো তারপর আলমারি থেকে অতিরিক্ত ব্লাংকেট বের করে সায়ানের গায়ে দিয়ে দিলো। সায়ান বাচ্চাদের মতো সেটাতে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো, রুশি নিজের জায়াগায় এসে শুয়ে পড়লো তারপর সায়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঘুমন্ত অবস্থায়ও লোকটিকে অনেক সুন্দর লাগে। রুশির মাথায় হঠাৎ করেই একটা প্রশ্ন জাগলো
“আচ্ছা বাচ্চাটা কার মতো হবে? আমার মতো নাকি তার বাবার মতো?বাবার মতো হলে নিঃসন্দেহে অনেক সুদর্শন হবে!”
#চলবে
(ছোট করে দেয়ার জন্য স্যরি)
#চলবে