গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ৩২+৩৩

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৩২ (বিবাহ ধামাকা)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

লাল টকটকে লাল বেনারসি পড়ে বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আজ আমার বিয়ে। ভাবতে-ই’ অবাক লাগে। রুদ্রিকের একটি কথা খুব করে মনে পড়ছে

“সবকিছু-ই’ ভাগ্য কাজল । কখন কি হয়ে কে কি বলতে পারে বল? জীবন তো অদ্ভুদ। জীবন মুহুর্তে-ই’ নিজের গতি পরিবর্তন করতে পারে। ”

রুদ্রিকের কথাটি তখন না বুঝলেও, আজকে খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।

আমার চোখ দিয়ে অনাবরত নোনাজল গড়িয়ে-ই’ পড়ছে। আমাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে
পার্লারের মেয়েরা কিছুটা বিরক্ত হয়।

একজন বলে উঠে,

—“ম্যাম আপনি এইভাবে কান্না করলে আপনার সাঁজটা তো নষ্ট হয়ে যাবে। ”

আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,

—“যেখানে গোটা জীবনটা-ই’ নষ্ট হতে চলেছে,সেখানে আবার বিয়ের সাঁজ। ”

মেয়েগুলো হয়তো আমার কথা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারলো নাহ।

তখনি আমার মা রুমে প্রবেশ করে বললেন,

—-“তোমরা আপাতত যাও। ”

মায়ের কথা শুনে তারা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

মা আমার কাছে এসে আমার থুত্নি উঁচু করে বললেন,

—❝মাশালাহ আমার মা টা কত্ত সুন্দর লাগছে বধু সাঁজে। ❞

আমি চুপ হয়ে রইলাম।

নিজের মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে কাজলের মা
হতাশার সুরে বললেন,

—” মা রে আমাদের উপর রাগ করে থাকিস না। আমরা তোর ভালো চাই। সবসময়-ই’মনে রাখবি তোর বাবা-মা সবসময় তোর ভালো টাই চাইবে।
নিজের বাবার উপর রাগ করে থাকিস না। তিনি তোকে খুব ভালোবাসে। ”

আমি মায়ের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাঁকিয়ে বললাম,

—” মা আমি জানি পৃথিবীতে বাবা-মায়ের থেকে বেশি সন্তানের ভালো কেউ চাইতে পারেনা,কিন্তু তোমরা তো একটা ভূলের মধ্যে আছো। তোমাদের কেউ অনাবরত ভূল বুঝিয়ে যাচ্ছে। যা তোমরা বুঝতে পারছো নাহ। ”

মা কিছুটা কড়া কন্ঠে বললেন,

—-“অনেক কিছু শুনেছি আমি। কাজল কিছুক্ষন পরে-ই’ বরপক্ষ চলে আসবে। এইসব কথার কোনো মানে-ই’ হয়না। আমি আসছি…

কথাটি বলে মা রুম ত্যাগ করে।

_______

অন্যদিকে রুদ্রিক আজ খুব ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আছে।কালকের রাতের প্রযেক্টে সে যথেষ্ট সাকসেসফুল। এইবার আজকের প্রযেক্টে তাকে সাকসেসফুল হতে হবে।
সে একবার নিজের ফোন অন করলো। কাজলের হাজারো মিসড কল। রুদ্রিক তা দেখে বাঁকা হেঁসে আনমনে বলে,

—❝জানেমান কিছুসময় কষ্টগুলোও আমাদের জীবনে খুব জরুরী। না চাইলেও তোকে কষ্ট পেতে হবে। ❞

কথাটি ভেবে রুদ্রিক নিজের ফোনটা বন্ধ করে, আরেকটা ফোন বের করে কাউকে ফোন করে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়। তারপর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রুদ্রিক নিজের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে গাড়ি ঢুকে,গাড়ি স্টার্ট দেয়। রুদ্রিকের মাথায় এখন ভয়ংকর প্ল্যান ঘুড়পাক খাচ্ছে।

ছুটকি ও ঘরে প্রবেশ করলো। বধূ বেশে তার আপাইকে সত্যি সুন্দর লাগছে। হাল্কা সোনার গয়নাতে বেশ মানিয়েছে তার আপাইকে।
লাল টকটকে গালদুটো গোলাপের মতো লাল টকটকে হয়ে রয়েছে। চোখে কাজল না থাকলে চোখে রয়েছে জলে পরিপূর্ন। ছুটকির বুকে অজানা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। তার বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
বাবা ঠিক করেছেন ঘরোয়া ভাবে-ই’ খুব কম সংখ্যক মানুষকে নিয়ে-ই’ বিয়ের কাবিনের কাজ সেরে ফেলবেন। কিন্তু আমি কিছুতে-ই’ তনয় ভাইকে বিয়ে করতে পারবো নাহ। আমি তো রুদ্রিককে ভালোবাসি। আমার মাথা কাজ করছে নাহ। কি করবো আমি। আমার ফোনটা ও রাগে ভেঙে ফেলেছি। রুদ্রিকের সাথে যোগাযোগ করবো কীভাবে? কথাটি ভেবে আমি শব্দ করে কেঁদে দেই।

ছুটকি এগিয়ে গিয়ে কাজলের পাশে বলে,

—“আপাই। ”

আমি ছুটকির হাত ধরে বললাম,

—“আমি কি করবো রে ছুটকি? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ।৷ বাবা-মাকে কেউ ভুল বুঝাচ্ছে রুদ্রিকের ব্যাপারে। ”

ছুটকি আমাকে শান্ত করে বলে,

—-“শান্ত হও আপাই। আমার ফোন টা নিয়ে রুদ্রিক ভাইয়াকে ফোন কর। ”

ছুটকির ফোন হাতে পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি করে ছোটসাহেবের নাম্বারে ফোন দিলাম,কিন্তু বরাবরের মতো ফোনটা বন্ধ। আমি হতাশ হয়ে বললাম,

—-“উনার ফোন নাম্বার টা-ই’ তো বন্ধ। আমি কীভাবে যোগাযোগ করবো? ছুটকি আমি করবো টা কী? যখন-তখন বরপক্ষ চলে আসবে। ”

আমার কথা শুনে ছুটকি বলল,

—” তুই তো এমন না। তুই তো সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করিস। তাহলে এইরকম একটা পরিস্হিতিতে অধৈর্য্য হয়ে পড়ছিস কেন? একটু শান্ত হও। ”

ছুটকির কথার মাঝে-ই’ সিথি রুমে প্রবেশ করে বলে,

—-“ছুটকি একদম ঠিক বলেছে। তোকে এইরকম ছিচকাদুনি হিসেবে একদম মানায় নাহ কাজল। তুই তো কত্ত স্ট্রং। এইভাবে কেউ কান্নাকাটি করে? ”

সিথিকে দেখে আমি ছুটে গিয়ে সিথিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললাম,

—–“ভালোবাসার এমন একটা শব্দ । যার কাছে সকলে অসহায় রে সিথি। আমি কী করে নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসাকে শেষ হয়ে যেতে দেখবো? ”

—-“আচ্ছা কাজল তোর কি নিজের ভালোবাসার প্রতি একটুও ভরসা নেই? ”

সিথির প্রশ্নে আমি বলে উঠলাম,

—-“অবশ্য-ই’ ভরসা আছে। আমি জানি আমার ভালোবাসা ঠিক কতটা খাটি। ”

—-“ভাইয়ূর প্রতি বিশ্বাস আছে তোর? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,

—-“বিশ্বাস থাকবে নাহ? উনাকে তো আমি ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসি তার প্রতি বিশ্বাস না রেখে কি করে থাকতে পারি। ”

সিথি আমার গালে হাত রেখে বললো,

—-“তাহলে নিজের ভালোবাসার প্রতি একটু ভরসা রাখ। দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি আসছি…”

কথাটি বলে সিথি চলে গেলো। সিথির পিছন পিছন
ছুটকি ও চলে গেলো।

___________
ইশানি শেখ আজকে অনেক খুশি। ফাইনালি আজ তার মনের আশা পূরন হবে। আজকে কাজলের বিয়ে। ভালো ভালো-ই’ বিয়েটা হয়ে গেলে ইশানি নিশ্চিন্ত। তারপর রুদ্রিক চলে আসলে, কাজলের নামে এইটা সেইটা ভূল বুঝিয়ে মিশুর সাথে এন্গেজমেন্ট করতে রাজি করিয়ে দিবে।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
একটিবার ইকবাল শেখের মেয়ের সাথে রুদ্রিকের বিয়েটা হয়ে গেলে-ই’ ইশানি শেখের কম্পানিটা আবারো আগের জায়গায় চলে যাবে। ইশানি শেখের ভাবনার মাঝে-ই’
জেসমিন শেখ এবং আফজাল শেখ চলে আসেন।
ইশানি শেখ তাদের দেখে বলে,

—“কোথায় যাচ্ছিস তোরা? ”

আফজাল শেখ বললেন,

—-“আজকে কাজলের কাবিন। বেশ ঘরোয়া ভাবে-ই’ হচ্ছে তাই আমি ও জেসমিন ঠিক করেছি সেখানে যাবো। কাজল মা তো আমাদের মেয়েদের মতো-ই’।”

—-“শুধু তোরা দুজন-ই’ যাবি? ” (ইশানি বলল)

—-“সিথি তো কাজলের বন্ধু, তাই সিথি সকাল সকাল চলে গিয়েছে। দিয়া বোধহয় যাবে নাহ। দিয়াকে তো সকাল থেকে বাড়িতে দেখছি-ই’ নাহ।ফোনটাও ধরছে নাহ। ”

জেসমিনের কথায় ইশানি শেখ বললেন,

—-“আমিও যাবো তোমাদের সাথে। ”

ইশানির কথায় আফজাল ও জেসমিন শেখ চমকে উঠেন।

ইশানি শেখ হাঁসিমুখে বললেন,

—-“এতো অবাক হওয়ার কিছু-ই’ নেই। মতিউর আমাদের এতো পুরোনো কর্মচারী। তার মেয়ের বিশেষ দিনে আমাদের উচিৎ অংশগ্রহণ করা। ”

আফজাল শেখ অবাক হয়ে-ই’ বললেন,

—-“তোর কথাতে অবাক হলেও,তোর কথা ঠিক। তাহলে চল এখন। ”

ইশানি শেখ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

আমি বধূ বেশে বারন্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রতিবারের মতো আজকেও গোধূলীর বেলা পড়েছে।

হাওয়ার দুপুর উড়ে যায় পালে পালে, দূরে দিগন্তে, আকাশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একরাশ নীল। বিকেলের লাল সূর্য আলো ছড়ায় নদীর জল আর প্রকৃতিতে।
গোধুলীতো সব প্রান্তেই অস্তমিত হয়,তবু কোন কোন সন্ধ্যা ভীষন অন্যরকম,
কোন কোন বিকেল বিষন্ন কুহেলী।
আজকের গোধূলী সকলের জন্যে সুখকর হলেও আমার জন্যে আজকে এই গোধূলীর সময়টি ততোটা-ই’ বিষাদময়।

আমি আর পারছি নাহ। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার।
বাইরে থেকে বর চলে এসেছে এইরকম ‘একটি প্রতিধ্বনি ‘ কানে আসছে। তার মানে তনয় ভাই চলে এসেছে।

আমি এখন কী করবো? পালিয়ে যাবো? কিন্তু পালিয়ে চলে যাওয়া মানে তো নিজেকে ভিতু প্রমান করা। আমি তো ভিতু নই। নাহ আমি পালাবো নাহ।

আমার কথার মাঝে-ই’ আমার এক কাজিন নিপা এসে বলে,

—“কাজল আপু বর এসেছে। তোমাকে এখন আমার সাথে যেতে হবে। তুমি চলে এসো। ”

আমি এক পলক আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আনমনে বলে উঠলাম,

—- “আপনি কথা দিয়েছিলেন রুদ্রিক। যেকোনো মূল্যে আমাদের ভালোবাসাকে আপনি আগলে রাখবেন। আপনার উপর সম্পুর্ন ভরসা রেখে-ই’ আমি বিয়ের আসরে গিয়ে বসছি। ”

কথাটি বলে আমি নিপার সাথে চলে গেলাম।

কাজলকে তনয়ের পাশে বসানো হলো।
নিতিয়া ও খুব খুশি তনয় এবং কাজলের বিয়েতে।

তনয় একপলক কাজলকে দেখে নিলো। কাজলকে দেখে-ই’ তার বুক ধক করে উঠলো। দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে কাজল সারারাত কান্না করেছে। তনয় ও বুঝতে পারছে যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে নাহ।

ছুটকি দূর থেকে-ই’ কাজল ও তনয় দেখে যাচ্ছে। তনয়কে বরের বেশে বেশ মানিয়েছে। দুজনকে একসাথে দেখে ছুটকির বুকে মোচর দিয়ে উঠলো।

ইশানি শেখ ও চলে এসেছেন। মতিউর রাহমান ইশানি শেখ ও আফজাল শেখকে দেখে তাদের বসার
বিশেষ জায়গা করে দেন। ইশানি শেখ তো খুব খুশি।

কাজি সাহেব ও চলে এসেছেন। মতিউর রাহমান ইশানি শেখকে একপ্রকার দেখিয়ে-ই’ কাজি সাহেবের কাছে গিয়ে বললেন,

—“কাজি সাহেব আপনি শুর‍ু করুন। ”

এদিকে আমার অবস্হা নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। আমার বিয়েটা কী এইবার সত্যি হয়ে যাবে?

আমি সিথির দিকে তাঁকানোর সাথে সাথে সে আমাকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে,কিন্তু আমি শান্ত হতে পারছি নাহ। কী হবে এখন?

মতিউর রহমানের কথা শুনে কাজি সাহেব বিয়ের পেপার রেডি করতে যাবেন তখনি বাইরে থেকে বড় বড় লাউড স্পিকারে গান বেজে উঠে,

Tere ghar aaya main aaya tujhko lene
Dil ke badle mein dil ka nazraana dene
Tere ghar aaya main aaya tujhko lene
Dil ke badle mein dil ka nazraana dene
Meri har dhadkan kya bole hai
Sun sun sun sun

Saajanji ghar aaye
Saajanji ghar aaye
Dulhan kyon sharmaaye
Saajanji ghar aaye

বাইরে এতো জোড়ে গান শুনতে পেয়ে সবাই তনয়সহ কাজলের বাবা-মা,ইশানি, আফজাল শেখসহ বাইরে একপ্রকার ছুটে গিয়ে, যেনো একপ্রকাস স্তব্ধ হয়ে যায়।

সাদিসহ রুদ্রিকের অনেক বন্ধুরা গান বাজনার ব্যান্ড নিয়ে একপ্রকার বরপক্ষের মতো নাঁচতে নাঁচতে কাজলদের বাড়ির গেটে প্রবেশ করছে। সাথে দিয়া ও লাজুকও রয়েছে।

দিয়া নাঁচের তালে লাজুকের সাথে সেল্ফি তুলছে।

মিউজিক বক্সে জোড়ে জোড়ে গান বেজে চলেছে।

রুদ্রিকের বাবা এগিয়ে এসে বলল,

—“সাদি এইসব কি হচ্ছে? তোমরা এখানে কেন? ”

—“কেনো আবার আমরা-ই’ তো বরপক্ষ। তাই একটু নাঁচানাঁচি করছি। ” (সাদি বলল)

—-“মানে টা কী এইসবের? ”

কাজলের বাবার কথার মাঝে-ই’ পলক বলে উঠে,

—“আসল বর চলে আসলে-ই’ বুঝতে পারবেন।”

তনয় এগিয়ে এসে,

—“আসল বর কে? কি হচ্ছে কি এখানে? ”

তনয়ের কথা বলার সাথে সাথে রুদ্রিকের কালো গাড়িটি গেটে প্রবেশ করে যা ফুলে পরিপূর্ন।

গাড়ি থেকে রুদ্রিক একদম একটা স্টাইল নিয়ে বেড়িয়ে আসে। তাকে দেখে সবাই যেনো আরেকদফা চমকে উঠে। কেননা তার গাঁয়ে বিয়ের ব্লাক হোয়াইট স্টোনের কমবিনেশনে দামী কালো শেরওয়ানী। চুলগুলো হাওয়া-ই’ উড়ছে। মুখে বরাবরের মতো সেই বাঁকা দাঁতের হাঁসি। রুদ্রিক নিজের সানগ্লাস টা পড়ে নেয়।

কাজলের কাজিনরা ড্যাভড্যাব করে রুদ্রিককে দেখে যাচ্ছে।

ইশানি শেখ ও এইসময় রুদ্রিককে আশা করেনি।

রুদ্রিক এসেছে শুনে আমিও বাইরে চলে আসলাম।

রুদ্রিককে দেখে যেনো আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেলো। রুদ্রিক তার কথা রেখেছে। আমি হেঁসে উঠলাম।

আফজাল শেখ বললেন,

—“রুদ্রিক তোমার এইরকম পোষাকের মানে কি? ”

রুদ্রিক বাঁকা হেঁসে বলে,

—“আজকে তো আমার বিয়ে। তাই আমার এইরকম
পোষাক। ”

ইশানি শেখ বললেন,

—“কিসব বলছো রুদ্রিক? আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ। ”

রুদ্রিক একপলক কাজলকের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

—-“মানে টা খুব-ই’ সিম্পল। আজকে কাজলের বিয়ে তো হবে-ই’ কিন্তু আমার সাথে হবে। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক এগিয়ে সকলের সামনে কাজলকে পাজকোলে তুলে নেয়। সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। আমি রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরি।

—-“তোমার রুদ্রিক তার কথা রেখেছে জানেমান। “#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৩৩ (শুভ বিবাহ)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

—“কাজিসাহেব আপনি বিয়ের কাজ শুরু করুন। এখন এই মুহুর্তে আমাদের বিয়ে হবে তাও সকলের সামনে।” কথাটি বলে রুদ্রিক আমাকে চোখ টিপ দেয়। আমি রুদ্রিকের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে। রুদ্রিক সত্যি আজ তার কথা রেখেছে।

রুদ্রিক সাদি এবং বাকিদের ইশারা করে। সাদি রুদ্রিকের ইশারা অনুযায়ী স্টেজে গিয়ে কিছু লোকদের দিয়ে স্টেজের ভিতরে একটা বড় সাদা পর্দা টানিয়ে দেয়। পর্দার দুইপাশে একটি আসন বরের জন্যে। অপরপাশে কনের জন্যে রেখে দেয়।

তনয় বলে উঠলো,

—“তোমার সাথে আজকে কাজলের বিয়ে মানে? ”

রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

—-“হুম আজকে আমাদের বিয়ে। সকলের সামনে-ই’ আমাদের বিয়ে হবে। ”

কথাটি বলে ছোট সাহেবকে আমাকে নিয়ে যেতে নিলে, তনয় ভাই মাঝখানে দাঁড়িয়ে এসে বললেন,

—-” ওয়েট রুদ্রিক আমাকে সবকিছু ভালো করে বুঝতে দাও। আজকে আমার সাথে কাজলের বিয়ের কথা ছিলো। ”

রুদ্রিক আমাকে কোল থেকে নামিয়ে, তনয় ভাইয়ের কাছে গিয়ে তনয় ভাইয়ের গলার শেরওয়ানীটা ঠিক করে কিছুটা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,

—-“মিঃ তনয় নিজের রাস্তা ছেড়ে কখনো অন্য কারোর রাস্তায় বাঁধা হতে যাবেন নাহ। বিশেষ করে রাফসিন শেখ রুদ্রিকের রাস্তায় তো একদম-ই’ নাহ।
কেননা এর ফল এতোটা-ই’ ভয়ানক হবে যা আপনার কল্পনার বাহিরে। ”

ইশানি শেখ এইবার এগিয়ে এসে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা এইসব ছেলে-মানুষির মানে কি? ”

ইশানি শেখকে থামিয়ে রুদ্রিক রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,

—-“মিস ইশানি শেখ আপনি অন্তত এখন কোনো কথা বলবেন নাহ। আপনি কি ভেবেছেন আপনি এতো বড় ষড়যন্ত্র করেছেন আমাকে এবং কাজলকে আলাদা করতে,কিন্তু আমি তা কিছুতে-ই’ জানবো নাহ?”

ইশানি শেখ চমকে উঠেন। এই প্রথম তাকে রুদ্রিক তার নাম ধরে ডেকেছে তার মানে রুদ্রিক সবকিছু-ই’ জানে।

রুদ্রিকের কথায় মতিউর রাহমান বললেন,

—-“ছোটসাহেব তার মানে তুমি সবকিছু-ই’ জানো? ”

রুদ্রিক বাঁকা হেঁসে বলল,

—“ইয়েস আমি সবকিছু-ই’ জানি। ”

আফজাল শেখ বললেন,

—“আমার কাছে বিষয়টা কেউ ক্লিয়ার করে কেউ বলবে? ”

—-“মিস ইশানি শেখ ভেবেছিলেন আমার নামে কাজলের বাবা অর্থাৎ আমার শ্বশুড়জ্বীকে আমার নামে এইটা সেইটা ভূল বুঝিয়ে কাজলের সাথে তনয়ের বিয়ে ব্যবস্হা করবেন। যাতে আমি যখন ফিরে আসবো তখন যেনো আমাকে উনি কাজলের নামে মিথ্যে ভূল বুঝিয়ে কোনোরকম মিঃ ইকবাল শেখের সাথে মেয়ের সাথে বিয়েটা দিতে পারেন। উনার প্ল্যান মতো আজকে তনয়ের সাথে কাজলের বিয়েটা হতে যাচ্ছিলো,কিন্তু মাঝখান থেকে আমি এসে ইশানি শেখের প্ল্যানের বারোটা বাজিয়ে দিলাম।”

আমি রুদ্রিকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,

—-“কিন্তু আপনি এতোকিছু কী করে জানলেন? ”

উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

—-“জানেমান এইসবকিছু জানা আমার কাছে কোনো ব্যাপার ছিলো নাহ,তবুও যখন জানতে চাইছো তখন বলি। আমি যখন ইশানি শেখের সাথে অফিসে দেখা করে ফিরে আসছিলাম তখন আমি খেয়াল করি মতিউর আংকেল ইশানি শেখের কেবিনে রুমে প্রবেশ করছেন।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
তখনি আমার চোখ চলে গেলো ইশানি শেখের কেবিনের সিসিটিভির ফুটেজের দিকে। আমার কেমন যেনো খটকা লাগলো, তাই আমি ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখার জন্যে
কেবিনের কাছে গেলাম,তখনি আমার কানে ইশানি শেখের কথা কানে চলে আসলো। ”

রুদ্রিকের কথার মাঝে-ই’ সাদি বলে উঠলো,

—“তারপর রুদ্রিক আমাদের সবাইকে নিয়ে এই বিয়ের প্ল্যানটা করে নিলো।”

দিয়াও হাত নাড়িয়ে বলল,

—-” আমিও এবং নাকবোচা এ্যাসিস্টেন্ট ও কিন্তু আছি এই প্লেনে। ”

লাজুক মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে বলে,

—“দিয়া ম্যাম এখানে ও কি আমার এই নামটা না নিলে হতো নাহ? ”

দিয়া মুখ বেঁকিয়ে বলে,

—“নাহ হতো নাহ হুহ। ”

সিথিও মিটিমিটি হাঁসছে।

আমি এইবার সিথির দিকে চোখ পাঁকিয়ে বললাম,

—“তারমানে তুই ও সবকিছু জানিস? তাহলে আমাকে বলিস নি কেন? ”

সিথি হাঁসি থামিয়ে বলল,

—“বলে ফেললে সারপ্রাইজ থাকবে কীভাবে? ”

জেসমিন শেখ বললেন,

—-“রুদ্রিক তুমি এবং কাজল একে-অপরকে ভালোবাসো তা তো আমরা জানতাম-ই’ নাহ। ইশানি আপা তো উল্টো আমাদের বলেছেন তুমি বিয়েতে রাজি। ”

রুদ্রিক ইশানি শেখের তাঁকিয়ে বললেন,

“উনি আমাকেও ভূল বুঝিয়েছেন। আসলে উনি চাইছিলেন কোনোভাবে আমার সাথে ইকবাল শেখের মেয়ের বিয়ে দিয়ে, কম্পানিকে আবারো আগের পজিশনে নিয়ে যেতে। যেহুতু কম্পানির অবস্হা খারাপ তাই। উনি জাস্ট আমাকে ব্যবহার করতে চাইছিলেন। ”

আফজাল শেখ মাথা নিচু করে বললেন,

—“ছিহ ইশানি আমি ভাবতেও পারছি নাহ। কম্পানির জন্যে তুই শেষে কিনা রুদ্রিককে ব্যবহার করেছিস? ”

ইশানি শেখ বললেন,

—-“আমি কম্পানির জন্যে বিয়েটা দিতে চাইনি। রুদ্রিক আমার কথাটি বিশ্বাস করো…

ইশানি শেখকে থামিয়ে রুদ্রিক বলে উঠলো,

—-“মিস ইশানি একটা কথা কী জানেন?
বিশ্বাস হলো সুক্ষ্য কাঁচের মতো। একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে তা কখনো জোড়া লাগে নাহ। তেমনি
আপনিও আজ আমার বিশ্বাসে আঘাত করে আমাদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে ফেলেছেন। আপনি এখন আসতে পারেন। ”

ইশানি জানে এখন কিছু বলে লাভ নেই তাই সে যত দ্রুত সম্ভব বেড়িয়ে পড়েন।

ইশানি শেখ চলে যেতে-ই’ রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

—“স্টেজের দিকে যাওয়া যাক..

—‘এক মিনিটি ‘ কথাটি বলে
আমি তনয় ভাইয়ের কাছে অনুরোধের সুরে বললাম,

—“তনয় ভাই আজকে যা কিছু হলো তাঁতে আপনি বোধহয় কিছুটা অপামানিত হয়েছেন,কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনাকে অপমান করার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিলো নাহ। আমি নিরুপায়। ”

তনয় হাঁসিমুখে বলল,

—“তুমি যদি রুদ্রিকের সাথে খুশি থাকো তাহলে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? আমি জানি তুমি রুদ্রিকের সাথে ভালো থাকবে। এইটা কথা কি জানো তো কাজলরেখা? ‘ভালোবাসার মানুষ জীবনে থাকার চেয়ে ভালো রাখার মানুষটির থাকার বেশি প্রয়োজন। ‘
(লেখিকাঃ রিমি)

তনয় ভাইয়ের কথা শুনে যেনো আমি স্বস্হি পেলাম।
আমি নির্ভয়ে রুদ্রিকের কাছে গিয়ে, রুদ্রিকের হাতে হাত রেখে স্টেজে পা রাখি।

মতিউর রহমান কিছু বলবে তার আগে-ই’ আফজাল শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

—“যা হচ্ছে হতে দাও মতিউর। আমার ছেলে যা চাইছে তা-ই’ হোক। ”

মতিউর রহমান আফজাল শেখের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“বড় সাহেব আপনি এই কথাগুলো বলছেন? ”

আফজাল শেখ বললেন,

—-“হুম আমি চাই আমার ছেলে সুখি থাকুক। আমার ছেলে এমনিতে অনেক ভালো। আজ শুধু আমাদের কিছু ভূলের জন্যে রুদ্রিক অন্যরকম হয়ে গিয়েছে,কিন্তু এখন কাজল মা চলে এসেছে রুদ্রিকের জীবনে। এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

জেসমিন শেখ ও এগিয়ে এসে বললেন,

—“কাজলকে আমার সবসময়-ই’ ভালো লাগে। কাজল আমাদের বাড়ির বউ হলে, আমি জানি কাজল সবকিছু ঠিক করে দিবে।”

মতিউর রহমান যেনো আফজাল শেখ ও জেসমিন শেখের স্বস্হি পেলেন।

দিয়া পিপি ও সিথি মিলে

আমাকে পর্দার এক পাশে বসিয়ে দেয়।

রুদ্রিককেও সাদি ও তার বন্ধুরা তাকে পর্দার আরেকপাশে বসিয়ে দিলো।

কাজি সাহেব এসে বিয়ের কার্যকম শুরু করে দিলেন।

কাজি সাহেব বিয়ের পেপার সাইন করতে বললেন

রুদ্রিক ও কাজল দুজনে-ই’ সাইন করে দিলো।

অবশেষে আপাই তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেলো কথাটি ভেবে ছুটকি খুশি হয়ে উঠে। এছাডাও ছুটকির খুশি হওয়ার বিশেষ কারন আছে। ছুটকি বুঝে গেছে ছুটকির মনে তনয়ের জন্যে আলাদা ভালোলাগার জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে।

ছুটকি একপলক তনয়ের দিকে তাঁকায়।

তনয় কাজলকে দেখে যাচ্ছে,কিছুক্ষন আগেও মেয়েটার চোখ জলে পরিপূর্ন ছিলো। অথচ এখন কি সুন্দর হাঁসছে। সত্যি কাজল রুদ্রিকের সাথে-ই’ ভালো থাকবে। কথাটি ভেবে তনয় দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

নিতিয়া তনয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলে,

—-“ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

তনয় কিছুটা ক্লান্তিমাখা হাঁসি দিয়ে বলল,

—-“আমি একদম ঠিক আছি। তুই থাক বিয়েটা ইঞ্জয় কর। আমি বরং একটু ছাঁদের থেকে আসছি…

কথাটি বলে তনয় ছাদের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।

—“ভাইয়া আমার কথাটা তো শুনো যাক বাবা চলে গেলো।”

কাজি সাহেব আমাকে কবুল বলতে বললেন। আমার হাত-পা অনাবরত কাঁপছে। যদিও জীবনের এইরকম একটা পর্যায়ে এসে সকল মেয়ের অবস্হা-ই’ খারাপ হয়ে যায়। তবুও আমার যেনো বেশি করে হাত-পা কেঁপে চলেছে।

রুদ্রিক পর্দার অপরপাশ থেকেও কাজলের অবস্হা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। তাই মৃদ্যু হেঁসে বলল,
—“কাজল ডোন্ট বি নার্ভাস ওকে? আমি তোমার স্বামী হয়ে পাশে থাকবো সময়ময় তোমার। তুমি শুধু আমাদের ভালোবাসা এবং তোমার রুদ্রিকের অপর ভরসা রেখে কবুল বলে ফেলো।দেখবে তোমার মধ্যে নার্ভাসনেস কাজ করবে নাহ। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে যেনো আমি যেনো আমি ভরসা পেলাম। সত্যিতো কবুল বলার এইরকম একটা পর্যায়ে আমাকে নার্ভাস হলে চলবে নাহ।

আমি মাথা নিচু করে রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—“আপনি ঠিক বলেছেন।শুধুমাত্র এই কবুল শব্দের মাধ্যেমে আমরা বিয়ের মতো একটি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবো সারাজীবনের জন্যে। কবুল শব্দটি খুব বিশেষ ভূমিকা রাখে একটি বিয়ের জন্যে। আপনি শুধু আমার পাশে থাকুন। তাতে-ই’ চলবে। ”

রুদ্রিক হাঁসে। পর্দার মাঝখান দিয়েও তার বাঁকা দাঁতের হাঁসি আমার মধ্যে ভালোবাসার ঢেউ খেলিয়ে দিলো। আমি মুঁচকি হাঁসি দিয়ে ‘কবুল ‘ বলে ফেললাম।

রুদ্রিক হাঁসে যাকে বলে প্রাপ্তির হাঁসি। রুদ্রিক ও কবুল বলে ফেললো।

সবাই একসাথে
‘আলহামদুলিল্লাহ ‘বলে উঠলো। অবশেষে রুদ্রিক এবং কাজলের বিয়ে সম্পূর্ন হলো।

আমাকে এবং রুদ্রিককে এক-ই’ স্টেজে বসানো হলো।

রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার মেহেদী রাঙা হাতের অনামিকায় স্বর্নের একটি আংটি পড়িয়ে দিলেন।

উনি হাঁসিমুখে বললেন,

—“আমাদের বিয়ের ছোট্ট একটি উপহার। এই উপহার কিন্তু আপনার স্বামী নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে কিনেছে। ”

আমি বলে উঠলাম,

—“খুব সুন্দর আন্টি। আমার স্বামীর দেওয়া প্রতিটি উপহার আমার কাছে বিশেষ। আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে এইটাই আমার কাছে সারাজীবনের পরম পাওয়া। ”

আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,

—-” জানো কাজল? আজকে আমি সব থেকে খুশি। তুমি শুধু আমার ভালোবাসার মানুষ-ই’ নও বরং তুমি আজকে থেকে আমার স্ত্রী আমার অর্ধঙ্গিনী। নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের স্ত্রী রুপে পাওয়া কম ভাগ্যের ব্যাপার নয়। ”

আমি মুঁচকি হাঁসলাম। উনিও হেঁসে দিলেন।

সবাই মুগ্ধতা নিয়ে রুদ্রিক এবং কাজলকে দেখছে।
_________

আমি বাবা-মায়ের কাছে তাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

বাবা কেঁদে বললেন,

—“সুখি হও মা। ”

মা ও কেঁদে দিলেন। ছুটকি ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

আমি বড়সাহেব ও বড়ম্যাম সাহেবের কাছে দোয়া চাইলাম।

বড় ম্যামসাহেব আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

—“আমার ছেলের দায়িত্ব কিন্তু এখন তোমার। আমাদ ছেলেকে দেখো মা। আমার ছেলেটা বড্ড অবুঝ।”

আমি বলে উঠলাম,

—“আমাকে দোয়া করবেন। ”

রুদ্রিক কাজলকে কিছুটা তাড়া দিয়ে-ই’ বলল,

—“কাজল আমাদের যেতে হবে। ”

আমি মাথা নাড়ালাম
বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে আমি রুদ্রিকের গাড়িতে উঠে পড়লাম।

তনয় ছাদ থেকে-ই’ কাজলকে বিদায় দিলো। সত্যি জীবন বড়-ই’ অদ্ভুদ। তনয়ের ভাবনার মাঝে-ই’ তনয় খেয়াল করে তার পাশে ছুটকি দাঁড়িয়ে আছে।

আমাদের গাড়ি চলল ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির উদ্দেশ্যে। রুদ্রিক ঠিক করেছে মায়া কুঞ্জ বাড়িতে-ই’ একেবারে বৌভাত সেরে আসবে।

আমাদের গাড়ি এসে ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সামনে থামলো।

—-“নেমে পড়ো জানেমান। আজকে থেকে আমাদের জীবনের নতুন পথচলা না হয় ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ি থেকে-ই’ শুরু হোক। ”

রুদ্রিক হাঁসিমুখে কথাটি বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি বাড়িটির দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাঁসলাম। একদিন বলেছিলাম ছোট সাহেব যখন আমাকে নিজে এই বাড়িতে নিয়ে আসবে তখনি আমি এই বাড়িতে আসবো।

কথাটি ভেবে আমি রুদ্রিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here