#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব-৩৪ (Special forever)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ইশানি মাহিরের বাড়িতে ঢুকে-ই’ একপ্রকার হাতের পার্সটা ছুড়ে ফেললো। ইশানিকে দেখে মাহির এগিয়ে এসে ইশানির পাশে বসে বলে উঠলো,
—“কি হয়েছে ইশানি? তোমাকে দেখে ঠিক লাগছে না। তোমার কি হয়েছে বলো তো? ”
ইশানি পানির গ্লাস ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে।
—-“আর ইউ ওকে? ”
মাহিরের প্রশ্নে ইশানি কোনোরকম বলে উঠে,
—“হ্যা আমি ঠিক আছি,কিন্তু রুদ্রিক আমার প্ল্যান সম্পর্কে জেনে গেছে। ”
মাহির ইশানিকে থামিয়ে বলে,
—-“তুমি একটু শান্ত হও প্লিয। আগে পুরো ঘটনা আমাকে খুলে বলো। ”
ইশানি এক এক করে সব খুলে বলে। মাহির চুপ হয়ে যায়। ইশানি মাহিরের হাত ধরে বলে,
—-“তুমি বুঝতে পারছো মাহির? রুদ্রিক এখন আমাকে আগের মতো ভরসা করবে নাহ। তার মধ্যে ওই কাজল মেয়েটাট সাথে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি জানি কাজল মেয়েটা একবার যদি শেখ বাড়িতে ঢুকে সব অতীত ঘাটে,তাহলে তো আমাদের সবকিছু সকলের সামনে চলে আসবে। রুদ্রিককে আমি যা তা বুঝিয়েছি কিন্তু এখন কি করবো? ”
ইশানিকে শান্ত করে মাহির বলল,
— “শান্ত হও ইশানি। আমি দেখছি তুমি শুধু একটু শান্ত হও। তোমার কথা শুনে আমারোও এখন চিন্তা হচ্ছে। অতীত কিছুতে-ই’ সামনে নিয়ে আসা যাবে নাহ। ”
ইশানি উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—“এছাড়াও রুদ্রিক আমাকে সকলের সামনে আমাকে এই ইশানি শেখকে অপমান করেছে ওই কাজল মেয়েটির জন্যে। ওই মেয়েকে আমি কিছুতে-ই’ শেখ বাড়িতে ঢুকতে দিবো নাহ। ”
মাহির মাথা নাড়ায়।
রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে ‘মায়া কুঞ্জের’ সদর দরজায় প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উপর ফুলের বর্ষন শুরু হতে শুরু হয়। আমি একপ্রকার হা হয়ে যাই। মায়া কুঞ্জের ‘ বাড়ির প্রতিটি কোণায় আজ আলোয় পরিপূর্ন। বাচ্ছারা সবাই ‘রুদ্রিক ভাইয়া ‘ বলে ছুটে চলে আসে। তারা যেনো নতুন বউকে নিজ হাতে বরণ করতে চলে এসেছে।
বাচ্ছাদের সাথে দিদুন ও বাকিরা ও চলে আসে। দিদুন বলে উঠলো,
—“মাশাল্লাহ কি সুন্দর লাগছে দুজনকে। কারো যেনো নজর না লাগে। তা রুদ্রিক দাদুভাই বউকে একটু কোল থেকে নামাও। আমরা দেখি তোমার বউকে। ”
—“দেখে নাও আমার বউকে যত খুশি,কিন্তু মনে রেখো বউটা কিন্তু আমার।”
রুদ্রিকের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠে।
রুদ্রিক আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। ছোট্ট মুসকান এসে গাল ফুলিয়ে আদো আদো গলায় বলে,
—“তুমি বফ্রেন্ড এর বউ? তুমি শুনো তুমি বফ্রেন্ড এর বউ হলেও আমি কিন্তু বফ্রন্ড এর গার্লফ্রেন্ড। আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে। ”
রুদ্রিকও হেঁসে আমার পাশে বলে উঠে,
—“এইযে আমার গার্লফ্রেন্ডের সব কথা শুনতে হবে।”
আমি মুসকানকে কোলে নিয়ে বলে উঠলাম,
—“জ্বী ম্যাডাম বুঝেছি আর কিছু? ”
—-“তুমি না অনেক কিউট..
কথাটি বলে মুসকান আমার গালে চুমু খায়।
আমিও মুসকানের গালে চুমু খাই।
তখনি দিদুন এসে বলে উঠে,
—-“মুসকান আপাই অনেক রাত হয়েছে। ব্রফ্রেন্ড এর বউ দেখেছো? এখন চলো সবাই ঘুমাতে চলো। ”
দিদুন এর কথা শুনে সবাই মাথা নাড়ায়।
পিছন পিছন সাদি ভাইয়াসহ রুদ্রিকে সব বন্ধুরা ও চলে এসে বলে,
—“দিদুন আপনার কথামতো সব হয়ে গিয়েছে। বাসরঘর রেডি। ”
রুদ্রিক প্রশ্নে ছুড়ে বলে,
—“তোরা কখন এলি? ”
রুদ্রিকের কথার মাঝে-ই’ সিথি আমাকে পিছন থেকে ইশারা করে। আমি ও সিথির ইশারা শুনে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাই। ছোটসাহেবকে ফাঁকি দিয়ে।
সাদি রুদ্রিককে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“তোমার আগে-ই’ চলে এসেছি আমার বন্ধু। ”
বন্ধু হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিলো তোমার বাসরঘর সাজানো।।”
শোভন বলে উঠে,
—“হুম,কিন্তু এখন সহজে ঢুকতে দিবো নাহ।”
—“মানে কি? ”
রুদ্রিকের প্রশ্নে সাদি বলে উঠে,
—“তা নয় তো কী আগে টাকা ছাড় তারপর সবকিছু হবে ওকে? ”
রুদ্রিক এইবার কিছুটা রেগে-ই’ বলে,।
—“আমার বউ আমার বাসরঘর আমি তোদের টাকা দিবো কোন দুঃখে? ”
—-“বাসর না করার দুঃখে। তাছাড়া তোর বউ এখন বাসরঘরে। বাসরঘরে না গেলে বউকে পাবি কীভাবে? টাকা না দিয়ে বাসরঘরে এক পা ও এগোতে পারবি নাহ। ”
ইথানের কথায় তনয় ও পলক হেঁসে উঠে।
______________
বাসরঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রিক। সবকটা বন্ধুগুলো মিলে হাত থেকে গুনে গুনে দশ হাজার টাকা নিয়ে নিলো। আজকে একটা বিশেষ দিন বিশেষ একটি রাত। এই দিনে সবকিছু-ই’ মেনে নেওয়া যায়। কথাটি ভেবে রুদ্রিক বাসরঘরে ঢুকে ফুল দিয়ে সজ্জিত রয়েছে পুরো ঘর। কাঠগোলাপ ও বেলিফুলের মিশ্রনে পুরো ঘরটা ফুলের সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। পাশে ছোট্ট একটি পুলে বেলীফুলগুলো ভাঁসছে। রুদ্রিক হাঁসে। তার কথামতো-ই’ ঘরটা সাজানো হয়েছে।
কিন্তু কাজল কোথায়? হয়তো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গিয়েছে।
কথাটি ভেবে রুদ্রিক খেয়াল করে খাটের পাশে এক কোণে শুভ্র রংয়ের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ডিজাইন্টা কিছুটা ইউনিক। কিন্তু পাঞ্জাবি টা কে রাখলো?রুদ্রিকের পছন্দ হলো তাই সে না ভেবে পড়ে নিলো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্রিক তার কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিলো।
নিজের হাতের ওয়াচটা খুলতে গিয়ে রুদ্রিকের নজর গেলো ওয়াশরুমের দিকে। সেখানে তো কেউ-ই’ নি। তাহলে কাজল কোথায় গেলো?
তখনি বারান্দা থেকে কারো নুপুরের আওয়াজ পেলো রুদ্রিক। রুদ্রিক বারান্দায় চলে গেলো সেখানেও কাজল নেই। মেয়েটা বড্ড দুষ্টু হয়েছে। রুদ্রিকের সাথে লুকোচুরি? কথাটি ভেবে রুদ্রিক বলে উঠে,
—“দেখো কাজল আজকে দুষ্টুমি একদম লাভ হবে নাহ। আজকে তুমি রুদ্রিকের রোমান্স থেকে কোথাও পাড় পাবে নাহ। সো লুকিয়ে লাভ নেই। ”
রুদ্রিকের কানে আবারোও চুরি ভেঙ্গে যাওয়ার আওয়াজ এলো। রুদ্রিক পিছনে তাঁকিয়ে দেখলো বারান্দার পাশে-ই’ বাগানের থেকে শব্দ টা আসে।
রুদ্রিক এগিয়ে গেলো।
রুদ্রিকের কানে এইবার কারো মিষ্টি কন্ঠের গান ভেসে উঠলো।
রুদ্রিক এগিয়ে গিয়ে নিজে-ই’ যেনো শকড হয়ে গেলো।
বাগানের পাশে ছোট্ট একটি পুকুর আছে। যা আজ শুধু ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে পরিপূর্ন।
কাজল ক্যন্ডেল লাইটগুলো একটি একটি করে পানিতে ছেড়ে দিচ্ছে এবং গান গেঁয়ে যাচ্ছে।
তোমাকে ছাড়া এ আকাশ সাজে না
সহজে তো বাঁশি বাজে না,
চলনা আজ এ রূপকথা
তোমাকে শোনাই ।
কাজল রুদ্রিকের কথামতো আজকে নিজেকে সাঁজিয়েছে। কাজলের গাঁয়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি। ঠোটে ঘাড়ো লিপ্সটিক। হাতে সর্নের বালা। গাঁয়ে কোনো গয়না নেই। চুলগুলো আকাশে উড়ছে। পায়ে রুদ্রিকের দেওয়া সেই সোনার নুপুর।
রুদ্রিক ঘোরলাগা দৃষ্টিতে কাজলের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাজলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাল মিলিয়ে গেঁয়ে উঠে,
—”
আকাশ হারায় যেখানে
ও.. তোমায় ছোঁবো সেখানে,
ও.. ভালোবাসো এখনি
হো.. পরে কি হয় কে জানে ।
কাজল মুঁচকি হেঁসে জলের দিকে তাঁকিয়ে গাইতে থাকে…
ভালো লাগা সারাক্ষণ
ও.. জানিনা তার কি কারণ,
হা.. ভেসেছি স্বপ্নে আমি
ও…তোমাকে পেয়েছে মন ।
রুদ্রিক ও কাজল একে অপরকে দিকে তাঁকিয়ে একসাথে গেঁয়ে উঠে,
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন ।
রুদ্রিক আমার পাশে বসে বলে উঠে,
—-“আজকের রাতটি যেনো আরো স্পেশাল হয়ে গেলো। ”
কাজল একটি ছোট্ট ক্যান্ডিল উঠিয়ে নিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—-“এই ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডিলের আলো যেনো আমাদের জীবনটার নতুন অধ্যায়কে আরো আলোকিত করে তুলবে। ”
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে বলে,
—“কাজল আজকে এই সাঁজে তোকে একদম মোহনীয় লাগছে। যার রুপে বার বার আমি মোহিত হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বারবার। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—“রুদ্রিক সাহেব আপনি কিন্তু আজকাল বেশি বেশি প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। ”
উনি হেঁসে বলল,
—“নিজের বউয়ের প্রেমে হাজারো বার পড়তে রাজি আছি বুঝেছো জানেমান। ”
—-“আপনার মুখে ‘তুমি ‘ ডাকের চেয়ে ‘তুই ‘ ডাকটা বেশ লাগে। ”
আমার কথায় উনি বললেন,
—“তোর মুখে আপনি ডাকের চেয়ে ‘তুমি ‘ ডাকটা ভালো লাগে। আজকে থেকে তো আমরা স্বামী স্ত্রী। তাহলে তুই ও আমাকে তুমি করে ডাকবি। ”
আমি মুখ বেকিয়ে বলি,
—“পারবো নাহ হুহ।
আমার কথার মাঝে-ই’ রুদ্রিক আমার কপালে চুমু খেয়ে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
—“কাজল তুই কি জানিস? আজ আমার চোখে শুধু তোকে কাছে পাওয়ার নেশা। তুই কি দেখতে পারছিস? ”
কাজলের গালগুলো লজ্জায় লাল আভা ধারণ করে। রুদ্রিক ঘোরলাগা চাহনিতে সেই মুখপানে তাঁকিয়ে থাকে।
রুদ্রিক কাজলের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলে,
—-“ইউ নো কাজল আমি জাস্ট তোর লজ্জামাখা সেই চাহনীতে জাস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি কি করে নিজেকে সামলাবো বলতো?
কাজল জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তার মধ্যে আলাদা ভালোলাগার শিহরন বয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক কাজলের কোমর টেনে নেয়। কাজল রুদ্রিকের কলার চেপে ধরে। কাজলের গলার মুখ ডুবিয়ে
জড়ানো কন্ঠে বললেন,
—জানেমান আজকের আমাদের বিশেষ দিনটিকে
তোকে নিজের করে আপন করে নিলে খুব বেশি কি ক্ষতি হবে? তোর প্রতি ভেজা চুলের কারণ হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে? আজকে তোকে সম্পূর্ন রুপে পেতে চাইলে খুব কী ক্ষতি হবে জানেমান। ”
আমি উনার বুকে মাথা রেখে বলি,
—” রুদ্রিক আপনি আমার স্বামী।নিজের অস্তিত্বকে আপনার কাছে বিলিয়ে দিতে
হাজারো বার প্রস্তুত আমি। ভালোবাসি আপনাকে। ”
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে কাজলকে কোলে তুলে বিছানায় আলতো করে শুয়িয়ে দিলো। রুদ্রিক কাজলের ওষ্টদ্ধয় চেপে ধরলো। কাজল বিছানার চাঁদর চেপে ধরলো।
চারপাশের ফুলের সুগন্ধিতে দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ যেনো একত্রিত হয়ে গেলো।
হোক না আজ রাতটি সুখকর। 💙🌹
(বাকিটা মুই জানিনা। লাইট অফ ছিলো 🙈।৷ এই তোমরা কি করো? যাও কমেন্ট করে আসো)
#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
শান্ত ভোরের স্নিগ্ধ আলো এসে আমার মুখে পড়তে-ই’ আমি নিজেকে রুদ্রিকের বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্হায় অবিষ্কার করি। ঘুমের মধ্যে কি নিশ্পাপ লাগছে রুদ্রিককে। কেউ দেখলে বলবে? এই ছেলে এতেটা দুষ্টু। রুদ্রিকের কপালে লেপ্টে থাকার চুলগুলো সরিয়ে রুদ্রিকের কপালে চুমু খেলাম। রুদ্রিক ঘুমের মধ্যে-ই’ আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি রুদ্রিককে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করে বললাম,
—“রুদ্রিক ছাড়ো আমাকে। কি করছো কী? ”
রুদ্রিক নিজের চোখজোড়া খুলে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে,
—“কাজল তুই আমাকে তুমি করে বলছিস? তারমানে রাতের রোমান্টিক ট্রিটমেন্ট কাজে লেগে গেছে। ”
আমি রুদ্রিকের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলি,
—“তোমার মুখে সত্যি কিছু আটকায়না অসভ্য লোক। ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে রুদ্রিক আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আলতো সুরে বলল,
—“একটু কাছে থাকলে কী হয়? শেষে তো এই রুদ্রিকের কাছে-ই’ ফিরে আসতে হবে জানেমান। ”
আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,
—” রুদ্রিক জানো? আজকের সকাল সত্যি অন্যরকম সুন্দর লাগছে। সবকিছু-ই’ যেনো আজকে আমার কাছে স্বপ্নের মতো সুন্দর লাগছে। অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।হয়তো তোমার জন্যে-ই’ এতোটা ভালো লাগছে আমার কাছে সবকিছু। ”
কথাটি বলে আমি রুদ্রিকের বুকে মাথা রাখলাম রুদ্রিকের আমার হাতে নিজের ধরে বলে উঠলো,
—“আমার কাছে তোর মায়াবী সৌন্দর্য়ের এই সকালের সৌন্দর্য ফিকে মনে হচ্ছে। হয়তো ভালোবাসি বলে। ”
আমি হাঁসলাম। সত্যি এই মানুষটিকে পেয়ে আমি নিজেকে সুখী মনে করি। হয়তো সব মেয়ে-ই’ এইরকম স্বামী কাম্য করে যে সবসময় ভালোবাসা
দিয়ে আগলে রাখবে।
____________
তনয় উঠে দাঁড়ালো। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
তনয়ের চেয়ারের পাশে ছুটকি চেয়ারে বসে একপ্রকার ঘুমিয়ে-ই’ পড়েছে। ছুটকির জন্যে একপ্রকার বাধ্য হয়ে-ই’ তনয় কালকে সারারাত ছাদে কাটিয়েছে। কালকে যখন তনয় ছুটকিকে নিজের পাশে দেখেছিলো তখন ছুটকি একটা কথা বলেছিলো….
—“আপনি কী বলবেন জানিনা,কিন্তু আমি কিছু কথা বলতে চাই। আজকের রাতটুকু সময় আমাকে দিবেন? শুধু এই রাতটুকু আপনার ভিতরের সব কথা শুনতে চাই আমি। অনুরোধটুকু রাখবেন আমার? ”
ছুটকির কথাগুলো শুনে কেনো যেনো তনয় ফেলতে পারেনি।
তনয় দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অনেক হয়েছে এইবার তাকে সিলেটে ফিরে যেতে-ই’ হবে। কথাটি ভেবে তনয় এক পলক ছুটকির দিকে তাঁকালো। ছুটকির গাঁয়ে ভালো করে চাঁদরটা জড়িয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
_________
রুদ্রিক ছাদে উঠে দেখে সাদিসহ বাকিরা সবাই ঘুমাচ্ছে। পাশে বেয়ারের বোতল দেখে রুদ্রিক রেগে যায়। সবকটা রাতে পার্টি করেছে। কথাটি ভেবে রুদ্রিক রাগান্বিত কন্ঠে চেচিয়ে বলে,
—-“সবগুলো তাড়াতাড়ি উঠ। ”
রুদ্রিকের চিৎকারে সবাই ধরফরিয়ে উঠে বসে।
সাদি কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–“এইভাবে ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন?”
রুদ্রিক বলে উঠে,
—“এখানে সব ছোট ছোট বাচ্ছারা আছে আর তোরা সারারাত ধরে পার্টি করছিলি? ”
পলক মুখে হাত দিয়ে বলে,
–“তো কী করবো? তুই তো ব্যাটা দিব্যি ছিলি বাসর…
পলকের কথা শেষ হওয়ার আগে-ই’ রুদ্রিক পলকের পেটে ঘুসি দিয়ে বলে,
—“আর একটা কথা বললে খবর আছে তোদের। এখানে না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। আজকে রিসেস্পশন ভুলে গেলি? রান্নার দিকটা কারা দেখবে? ”
ইথান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—“হু ভাই এখন তোর ভৌ ভাতের কাজগুলোও আমাদের-ই’ করতে হবে। ”
—“তা নয়তো কী তোরা কী ভেবেছিস?আমি তোদের ফ্রি ফ্রি খাওয়াবো?
রুদ্রিকের কথা শুন্র সাদি মুখটা কাচুমাচু করে ফেলে।
______
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেজা চুলগুলো মুছে নিলাম। আজকে সত্যি নিজেকে পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে। শাড়ির আঁচল মাথা দিয়ে নীচে নেমে এলাম।
আমাকে নিচে নামতে দেখে দিদুন এগিয়ে এসে বলে,।
—-“দিদিভাই কেমন হলো ঘুম? ”
—“খুব ভালো হয়েছে। ”
দিদুন এইবার একজন বাড়ির সার্ভেন্টকে ডেকে বললো,
—“তুমি বড়দের রান্না করো নাও। একটু বেশি করে রান্না করো। রুদ্রিক বাবার বন্ধুরাও আছে। আমি বরং গিয়ে বাচ্ছাদের জন্যে রান্নার ব্যবস্হা করে আসি। ”
দিদুনের কথার মাঝে-ই’ আমি বলে উঠলাম,
—-“দিদুন বাচ্ছাদের জন্য আজকের রান্না আমি করি? ”
আমার কথায় দিদুন চমকে বলে উঠে,
—-“সেকি কেন? তুমি নতুন বউ। এখন রান্নাঘরে ঢুকার কোনো দরকার নেই। ”
আমি কিছুটা আবদারের সুরে বললাম,
—“প্লিয দিদুন। আজকের রান্নাটা আমি করি? আমার কোনো অসুবিধা হবে নাহ। তাছাড়াও আমিও তো মায়া কুঞ্জ পরিবারের সদস্য। তাহলে আমি কি নিজের পরিবারের জন্যে রান্না করতে পারিনা? ”
দিদুন হেঁসে বললেন,
—-“তোমার কথার সাথে পারবো নাহ। আচ্ছা তুমি বরং খুশিমনে রান্না করতে চাইছো। তাহলে সেইটাই করো। ”
দিদুনের কথা শুনে আমি মাথা নাড়াই।
রুদ্রিক সবাইকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চোখ যায়।
রুদ্রিক এগিয়ে যায় সেদিকে। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে কাজল কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে রান্না করছে। বাচ্ছারা তার পাশে ঘুড়ঘুড় করছে। কাজল রান্না করছে এবং বিভিন্ন গল্প বলে শুনাচ্ছে।
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বাচ্ছাদের এবং কাজলের কান্ড।
আমি রান্না করছি তার মাঝে-ই’ টিংকু বলে উঠে,
—“ভালো আপু আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। ”
আমি বলে উঠলাম,
—“টিংকু সোনা কিছুক্ষন অপেক্ষা করো এখুনি হয়ে যাবে। ”
তখনি পটল মুখ ফুলিয়ে আসে। আমি পটলকে দেখে বলি,
—“কি হয়েছে পটল সোনা মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেন? ”
পটল বলল,
—” রুদ্রিক ভাইয়া আমাকে অনেকগুলো চকলেট দিয়েছিলো তা খুঁজে পাচ্ছি নাহ। ”
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম,
—-“সত্যি তো কোথায় গেলো? ”
মুসকান আমার আঁচল ধরে টানে। আমি কিছুটা ঝুঁকে বলি,
—“কি হয়েছে মুসকান সোনা? ”
মুসকান আদো আদো গলায় বলল,
—“আমি পতল ভাইয়ার চকলেত খেয়ে ফেলেছি। তুমি পতল ভাইয়াকে বলো নাহ ওক্কে? ”
আমি হেঁসে বললাম,
—“আচ্ছা বলবো নাহ। ”
দিদুন রুদ্রিকের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
—“সত্যি একদিন-ই’ কাজল সবাইকে কতটা আপন করে ফেলেছে। বাচ্ছারা ও এখন কাজল বলতে অজ্ঞান। ”
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে-ই’ বলে,।
—“এইজন্য-ই’ তো কাজলকে এতোটা ভালোবাসি। ”
রুদ্রিক রান্নাঘরে প্রবেশ করে বলল,
—“এইযে পুঁচকি বাহিনী ও আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড বাইরে আপনাদের কথামতো সব খেলনা নিয়ে আসা হয়েছে। আপ্নারা গিয়ে দেখে আসুন। ”
রুদ্রিকের কথায় বাচ্ছারা একপ্রকার খুশিতে লাফিয়ে-ই’ বের হয়ে যায়।
আমি মু্ঁচকি হেঁসে আবারো রান্নার দিকে মনোযোগ দিলাম।
রুদ্রিক আমার হাতধরে বলল,
–“কাজল একটা কথা রাখবি? ”
—“হুম বলো। ”
—“তুই সবসময় এইভাবে-ই’ মায়া কুঞ্জের বাচ্ছাদের আগলে রাখিস। মায়া কুঞ্জের প্রতিটি সদস্য আমার শুধু দায়িত্ব নয় বরং আমার ভালোবাসাও বটে। এইসব মাসুম অনাথ বাচ্ছাদের সাথে থাকলে আমি নিজের সুখ খুঁজে পাই। ওরা আমার কাছে ঠিক কতটা মূল্যবান তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ।
আমি রুদ্রিকের হাত ধরে বললাম,
—“এই একদিনে ‘মায়া কুঞ্জের ‘ প্রতিটি সদস্য আমার মনের গহীনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। এখন থেকে তো আমিও এই পরিবারের সদস্য। এখন থেকে এই পরিবারকে আগলে রাখা আমারোও দায়িত্ব। ”
রুদ্রিক প্রাপ্তির হাঁসি হাঁসলো। আমি রুদ্রিককে প্রশ্ন করে বললাম,
—“এই বাড়ির নাম ‘মায়া কুঞ্জ কেন? ”
আমার প্রশ্নে রুদ্রিক বাচ্ছাদের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
—“আমার ফুপিয়াম্মুর খুব ইচ্ছে ছিলো। এইরকম একটা অনাথ আশ্রম করার। তাই ফুপিয়াম্মুর নামের সাথে মিলিয়ে এই বাড়ির নাম রেখেছি ‘মায়া কুঞ্জ’
একটি বাড়ি তখনই গৃহ হয়ে ওঠে যখন সেখানে থাকে মায়ার বাঁধন ও ভালোবাসা। ‘ ‘মায়া কুঞ্জ’ নামটি তারই প্রতীক। মায়ার বন্ধন দিয়ে প্রত্যেকটি পরিজনদের একত্রে বেঁধে রাখার অঙ্গীকার স্বরূপ কাজ করবে এই নামটি। ”
রুদ্রিকের কথা আমি মুগ্ধ হয়ে শুনলাম।
____________
ভারি লেহেঙ্গা পড়ে রুমে বসে আছি আমি। সিথি এবং দিয়া পিপি সেই কখন আমাকে সাঁজিয়ে স্টেজের দিকে চলে গেছে,অথচ আমাকে এখনো নিতে আসলো নাহ। নাহ আমাকে-ই’ যেতে হবে কথাটি ভেবে আমি বাইরের দিকে পা বাড়াতে নিলে-ই’ কেউ বলে উঠে,
—“ভালো-ই’ তো রুদ্রিককে ফাঁসিয়ে ড্রাইভারের মেয়ে থেকে শেখ বাড়ির বউ হয়ে গেলে। ”
আমি পিছনে তাঁকিয়ে দেখি ইশানি ম্যাম।
—“আপনি এসেছেন? ”
ইশানি ম্যাম এগিয়ে এসে বললেন,
—“না এসে কী করে পারি বলো? দেখতে এসেছিলাম। আমার ভাইপো ও ড্রাইভারের মেয়ের বউভাত কেমন হচ্ছে। ব্রাহ্মণ হয়ে তো ভালো-ই’ চাঁদে হাত বাড়িয়ে চাঁদ নিয়ে নিলে। তো তুমি কী ভেবেছো? শেখ বাড়ির বউ হয়ে নিজের নামের পাশে ড্রাইভারের মেয়ের ট্যাগ সরিয়ে ফেলবে?”
(লেখিকাঃ রিমি)
আমি হেঁসে বললাম,
—“সত্যি ইশানি ম্যাম আপনি আমাকে হাঁসালেন।
আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার এইসব চিপ কথা শুনে আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে মন খারাপ করে আজকের দিনটি খারাপ করবো তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। প্রথমত কোনো পেশায়-ই’ ছোট নয়। আমার বাবা ড্রাইভার হলেও সৎ পয়সায় উপার্জন করে। আপনার মতো নিজের কম্পানির লাভের জন্যে, নিজের ভাইপোর সাথে ছলেনার মতো খারাপ কাজ করেনি।”
কাজলের কথা শুনে ইশানির রাগে কিছু বলতে যাবে তখনি তার ফোন বেজে উঠে। কম্পানির ফোন। ইশানি নিজের হাত ও অপর ফোনটি রেখে,রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে পড়ে।
ইশানি ম্যাম বেড়িয়ে যেতে-ই’ উনার আরেকটি ফোন বেজে উঠে। সেই ফোন মাহির (হাজবেন্ড) নামটি দেখে আমি যেনো একপ্রকার শকড হয়ে যাই। আমি যতটুকু জানি ইশানি ম্যামের তো ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে তাহলে এই মাহির পাশে লেখা হাজবেন্ড টা কে? ফোনটা অনবরত বেজে চলেছে। আমি ফোনটা তুলতে-ই’ সেখানে….
বাকীটা আগামী পর্বে…
চলবে কী?
(