গ্যাংস্টার পর্ব ৩

#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ০৩
।।
রানি হাপাতে হাপাতে সামিয়ার কাছে যায়। সামিয়া তাকে দেখে অবাক হয়।

“কিরে স্যার তোকে কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল? আর এমন হাপাচ্ছিস কেন?”
“বইন তাড়াতাড়ি চল না হলে রাক্ষস টা আমায় খেয়ে ফেলবে তাড়াতাড়ি চল।”
“মানে কে তোকে খেয়ে ফেলবে?”
“আগে চল তো।”

রানি সামিয়ার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে। গেটের কাছে আসতেই রিক কে দেখতে পায়।

এই একমাত্র ছেলে যাকে রানি এত এত কথা শুনায় তবুও সে রানির পিছু ছাড়ে না। রানির খুব বিরক্ত হয় ওকে দেখলে। এত বেহায়া মানুষ এর আগে সে একটাও দেখেনি। রিক খুব বাজে আর বখাটেও বটে। না হলে কেউ অপমান করলেও বারবার পিছু ঘুরে?

“হাই রানি। মাই ড্রারলিং সরি কাল আসতে পাড়ি নি। একটু বিজি ছিলাম।”

রানি সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে সামিয়া কে বলল,
“সামু তাড়াতাড়ি চল।”

তাদের পথ আটকে রিক আবার বলে,
“আরে আরে যাচ্ছো কোথায়? চলো না একটু কফি খাই। তোমাকে কাল না দেখতে পেয়ে মন আনচান করছিল। আর তুমি আমার কষ্ট টা না বুঝে চলে যাচ্ছো?”
“আপনার মতো কুত্তা আর আমি একটাও দেখিনি। রাস্তার কুত্তা কেও পা দিয়ে লাথি দিলে সে আবার ফিরে আসতে ভয় পায়। আর আপনি সেই কুত্তাও নন। যতসব ফালতু খারাপ লোক।”
“কি করব বলো? তোমাকে না দেখে যে থাকতে পাড়ি না।”
“আপনি কুত্তার সাথে গলায় গলাগলি করে বসে থাকুন এটাই আপনাকে মানাবে। মিডিল ক্লাস লোক কোথাকার ”

রানি আর কিছু না বলে সামিয়া কে নিয়ে রাগে চলে যায়।

দূর থেকে এক জোড়া চোখ আবার রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। এবার আর তার চোখে ছিল না মুগ্ধতা।
শুধু ছিল রাগ আর ক্ষোভ।

বিকেলে রানি ব্যালকুনিতে যায়।
সেখানে থাকা গাছ গুলিতে পানি দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু আজ আর এক জোড়া চোখ মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখল না।

রাতে খেয়ে রানি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।

একটু পর তার রুমে তার বাবা আসে।
“রানি রানি মা।”

রানি তখন ঘুমিয়ে গিয়েছে। বাবা এসে মুচকি হেসে তার গায়ের উপর চাদর টেনে দেয়। তারপর লাইট টা অফ করে চলে যায়। এসেছিল মেয়ের সাথে একটু কথা বলবে কিন্তু ঘুম পাগলি রানির জন্যে তা আর হলো না। অজ্ঞাত তিনি চলেই গেলেন।

সকালে উঠে সামিয়া আর রানি কলেজের জন্যে রওনা দেয়।

গেটের ভেতরে গেলেই কোথা থেকে দৌড়ে রিক আসে। হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে।

সামিয়া আর রানি বেশ অবাক হয়।
আবার প্রোপজ ট্রোপজ করে বসবে নাকি?

পাশ থেকে শুষ্ক নিজের গাড়ির চাবি আঙ্গুলের ঢগায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অফিস রুমে যাচ্ছিল। সবে মাত্র গাড়ি পার্ক করে সে এসেছে।

চলে যেয়েও আবার রানির কাছে ফিরে আসে।
“হোয়াট হ্যাপেন?”

রিক বিমড়ি খেয়ে শুষ্কের পায়ে পড়ে,
“স্যার আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর হবে না।”
“মানে? কিছু বুঝলাম না।”
“স্যার আমি রানি কে মানে উনাকে প্রতিদিন বিরক্ত করতাম। আর এমন করব না আমি। মাফ চাইছি।”
“এখানে আমার কাছে মাফ চাওয়ার কি আছে? যাকে এতদিন বিরক্ত করেছিস তার কাছে মাফ চা।”

রিক তড়িঘড়ি করে রানির পায়ে হাত দিতে চাইলে রানি এক হাত দূরে সরে যায়।

“আমায় মাফ করে দিন। আমায় মাফ করে দিন। এমন আর হবে না।”
“আরে আরে করছেন কি? মাফ চাইতে হবে না। শুধু আর বিরক্ত না করলেই চলবে।”
“আমি আর আপনাকে বিরক্ত করব না। আমায় শেষে বারের মতো মাফ করে দিন।”
” সত্যি তো? মনে থাকে যেন। ঠিক আছে আপনি যান।”

রিক একবার শুষ্কের দিকে তাকিয়ে চলে যায় আস্তে আস্তে।

রানির সে কি লাফালাফি।
“ইয়ে আমাকে আজ থেকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। ইয়ে কি মজা।”

রানি বেশ খুশি হয়ে সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে।
পাশ ফিরে শুষ্কেও জড়িয়ে ধরতে চায়। কিন্তু তার অনেক টা কাছে গিয়ে রানি তার প্রসারিত হাত গুটিয়ে নেয়।

ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“স সরি স্যার”
“মন্দও ছিল না।”

শুষ্ক রানির দিকে তাকিয়ে এক গালে হেসে চলে যায়। রানি হা করে দেখছিল সেই হাসি। কি সুন্দর কত টা মায়াময় সে হাসি।

রানি খুশি তে আবার লাফালাফি শুরু করে।

সামিয়া তখন বলে উঠে,
“রানি এটা তোর বা আমার বেডরুম না। কলেজ এটা।”

রানি নিজেকে সামলে আশপাশ তাকায়। তারপর সামিয়া কে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়।

প্রতিদিনের মতো শুষ্ক আজো প্রথমে ক্লাসে এলো। সবাই কে ক্লাস করায়। কিছু টপিক হাতে কলমে বুঝিয়ে দেয়। ক্লাস শেষে আজো রানি কে তার অফিস যেতে বলে।

“আসব?”
“হুম কাম।”
“স্যার আমি আপনাকে আবারো বলেছি আজো বলছি প্লিজ আমাকে এই ভাবে আর ডেকে পাঠাবেন না।”
“আমি কেন ডাকব। কেন ডাকব না তা তোমাকে বলে করতে হবে নাকি? অযথা কথা বাড়াচ্ছো রানি।”
“স্যার এই গুলি সবাই ভালো চোখে নেয় না।”
“ও রেয়লি? তো কোন গুলি ভালো চোখে নেয়? তোমাকে বিরক্ত করা গুলি? কই এত দিন সে কলেজের সামনে তোমাকে ও বিরক্ত করেছে তাতে তো তারা কিছু বলেনি। তারমানে ও গুলি ওরা ভালো চোখেই নিয়েছে। তাই কিছু বলেওনি করেওনি।”
“…

“তোমাকে আমি এমনি এমনি তো ডেকেও পাঠাই না। কিছু টপিকও বুঝিয়ে দেই।”
“….
“এই কথাটা যেন আর মুখে না আসে। বসো।”
“…
“কি হলো?”
“হুম।”

রানি গিয়ে চেয়ারে বসে।

শুষ্ক পাঁচ মিনিট রানির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর পড়া শুরু করে।
রানিও মন দিয়ে পড়ে।

যাওয়ার আগে রানি কে পিছু ডেকে বলে,
“রানি আমার কথার অবাধ্য হইও না ফলসরূপ খুব ভালো হবে না।”

রানি চলে যায়। যেতে যেতে ভাবতে থাকে,
“রাজ চৌধুরীর বিষয়ে স্যার কে কিছু জিজ্ঞাস করব? যদি উনি কিছু জানে। না না থাক। কি না কি ভাববে।”

বাকি আরেক টা ক্লাস করে রানি আর সামিয়া বসায় চলে যায়।

আজ মন টাও ভালো লাগছে। রিক নামক বিরক্ত তার এখন থেকে দূর হলো। কিন্তু যাকে এত বকার পরেও কোনো কাজ হলো না। সে নিজ থেকে এসে এমন ভাবে মাফ চাইল কেন? বিষয়টা রানি ভেবে উঠতে পারে না। তবুও মনে মনে খুশি হয়।
..
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে ঘরে আসতেই রানির কল আসে। ফোন নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার।

তাই সে আর কল রিসিভ না করে বিছানার উপর রেখে দেয়।

পরপর দুই বার কল হয়ে কেটে যায়। তিন বারের সময় রানি বিরক্ত নিয়েই কল ধরে। শক্ত গলায় ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আরে কে মশাই এত বার কল দি..”
“শাট আপ। রাবিশ কল ধতে এত সময় লাগে? কি করছিলে?”

রানি শুকনো ঢুক গিলে। মানুষটা তার নাম্বার পেলো কোথায়?

“কি হলো? আমি কল দিচ্ছিলাম না?”
“আ আসলে..”
“নিচে নামো।”
“কি?”
“তোমার বাসার নিচে নামে।”
“শুধু শুধু নিচে নামতে যাবো কেন স্যার? এখন আমি পারব না।”
“ডেমেট আমি দাঁড়িয়ে আছি। আড়লি নিচে আসো।”

শুষ্কের কথা শুনে রানি চমকে যায়। বলে কি লোক টা? নিচে মানে? সত্যিই চলে এলো নাকি?

রানি জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয়।
হ্যাঁ সত্যিসত্যি শুষ্ক কালো একটা ফিটফাট শার্ট পড়ে তার সাদা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কানে ফোন ধরে রাখা। চোখে কালো সানগ্লাস।

এক কথায় দিল কেড়ে নেওয়ার মতো স্টাইল। রানি হা করে আছে। জিম করা বডি যেন শার্ট বেদ করে আসবে আসবে। রানির বুক টা ধক করে উঠে এমন রূপ দেখে। এই প্রথম এই ভাবে কোনো ছেলে কে দেখছে। যেন কোনো সিনেমার হিরো শুটিং করছে।

রানি আমতাআমতা করে বলল,
“আ আপনি এখানে কি করছেন? আর আ আমার বাসায় চিনলেন বা কি করে?”
“চুরের মতো জানালা দিয়ে উঁকি না দিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”
“কি কি বলতে চাইছেন? আমার বাসায় আমি চুরি করতে যাবো কেন?”
“চুরি করেই তো আমায় দেখছো।”

রানি জানালার পাশ থেকে সরে এসে বলে,
“মু মুটেও না। আমি আ আপনকে দেখছিলাম না।”
“সেটা আমি বেশ দেখেছি। আর কি বললে? তোমার বাড়ি? মেয়েদের আসল বাড়ি হয় তার অর্ধাঙ্গের বাড়ি। মানে নিজের হাজবেন্টের বাড়ি। বাজে বকবক না করে নিচে নামো।”
“ন না আমি নামব না।”
“ওকে ফাইন আমিই উঠছি উপরে।”
“না না আ আমি নামছি।”
“গুড গার্ল। ফাস্ট আসো।”
“…..

রানি ফোন হাতে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে।

তার মা সোফায় বসে টিভি দেখছিল,
“কিরে কোথায় যাস?”
“আম্মু আসছি একটু।”

রানি কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। গেইট খুলে এগিয়ে যায় সামনের দিকে।

শুষ্ক গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রানি শুষ্কের এই রূপের দিকে তাকাতে চাইছে না। কারণ শুষ্কের এমন স্টাইল দেখে রানির কেমন কেমন লাগছে। তাই মাথা নিচু করে আছে।

আর ও দিকে শুষ্ক রানি কে দেখেই চলছে।

“তাকাচ্ছো না কেন? আমাতে ফেঁসে যাবে নাকি?”

শুষ্কের কথায় রানি ঘাবড়ে যায়। শরীর দিয়ে যেন ঘাম বের হয়। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,
“কে কেন আসতে বললেন আমায়?”
“…
“কি হলো?”
কথাটা রানি শুষ্কের দিকেই তাকিয়ে বলেছে।

“কি কি দেখছেন?”
“নিশ্চয় তোমাকে না। বাড়ি টা দেখছিলাম।”

রানি মনে মনে বলতে লাগল,
“ছিঃ কি মিথ্যা কথা বলে ডেভিল টা। আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে কি না বাড়ির দিকে? ড্রাগন একটা।”

শুষ্ক গাড়ির ভেতর থেকে একটা শীট বের করে আনে। সেটা রানির দিকে এগিয়ে দেয়। রানি চোখ বুলিয়ে শুষ্ক কে প্রশ্ন করে,
“কি এটা?”
“তোমার মতো পিচ্চি কে তো আর লাভ লেটার দিব না।”

“কি আমি পিচ্চি? আরে ডেভিল তুমি তো জানো না কত ছেলে আমার পিছন ঘুরেছে। এখনো যদি হ্যাঁ বলি ছেলের লাইন লেগে যাবে আর তুমি কিনা বলছো আমায় পিচ্চি? খাডাস।”

কথা গুলি রানি মনে মনে আওড়াতে লাগল।

শুষ্ক আবার বলে উঠে,
“তুমি পিচ্চি কি না সেটা মনে মনে আর ভাবতে হবে না। এটা নাও আর বাসায় ঢুকো।”

শীট টা শুষ্ক রানির হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাড়ির ভেতর বসে। তারপর রানির সামনে দিয়ে সাই সাই করে চলে যায়।
রানি ভ্যাবলার মতো চোখ বড় বড় করে শুষ্কের গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।

গাড়ি টা আড়াল হয়ে গেলে রানি ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে পরে একটা ঢুক গিলে বাসার ভেতরে যায়।

মায়ের প্রশ্ন,
“কি রে কোথায় গিয়েছিলি?”
“আম্মু শীট আনতে।”

শুধু এটা বলে রানি দৌড়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়।

শীট টা ভালো ভাবে দেখে বুঝে এটা বেশ কাজের। তাই সাথে সাথে বই নিয়ে বসে পড়ে। শীট টা শেষ করার প্রচেষ্টা করে।

রাতে খেয়ে এসে ঘুমাবে এমন সময় তার কল আসে।

স্কিনে “ডেভিল রাক্ষস” এর নাম ভেসে আসে। রানি ইচ্ছা করে কল টা না ধরে ফোন রেখে দেয়।

দুই বার কল দিলেই রানি ধরে। ওপাশ থেকে বলে উঠে,
“হাউ ডেয়ার ইউ? আমার কল পিক করছিলে না কেন? ডেমেট বাসায় কি করো তুমি?”
“….
“তোমাকে না..”
“ডেভিল রাক্ষসের মতো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে না?”
“হোয়াট?”
“ন না আ আসলে আমি নিচে ছিলাম।”
“খেয়েছো?”
“হুম।”
“আমি খেয়েছি কি না জিজ্ঞেস করবে না?”

রানি বিড়বিড় করে বলল,
“আমার কিসের ঠেকা লাগছে?”
“কি বললে তুমি?”
“কিছুই না স্যার।”
“না আমি শুনলাম তুমি কিছু একটা বলেছো।”
“না স্যার আসলে বলছিলাম শীট টা দেওয়ার কারণে আপনাকে একটা ধন্যবাদ দিব।”
“রা.. আসলে আমি শুকনো ধন্যবাদ নেই না।”
“তাহলে?”
“আমি তার সাথে সময় মতো যা নেওয়ার নিয়ে নিব।”
“কি বললেন স্যার?”
“পড়া শুনা কেমন চলছে বলো।”

রানি শুষ্কের সাথে বেশ কিছুক্ষণ পড়া নিয়ে কথা বলল। রানিও সে গুলি মনোযোগ দিয়ে শুনল। শুষ্ককে তার ভালো না লাগলেও। পড়া নিয়ে কথা শুনতে সে নারাজ হয় না।

শুষ্ক ঘড়িতে সময় দেখে বলে,
“রাত ১১ টার উপরে বাজে যাও শুয়ে পড়ো।”
“ওকে বাই।”
“বাই।”

শুষ্ক ফোন রেখে ঠোঁটের কোণায় একটা হাসি ফুটিয়ে আনে। রানি ফোন রেখে তার স্বপ্নের রাজ কে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here