গ্যাংস্টার পর্ব ১১

#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১১
..
রাতে ঘুমানোর আগে রানির খুব অস্বস্তি ফিল করছিল। অস্থিরতার জন্যে শুতে যেতেও ভালো লাগছিল না।

অবশেষে বুকের হাজার প্রশ্ন আর অস্থিরতা নিয়ে সে ব্যালকুনিতে চলে যায়। রাতের ঘন কালো নিস্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে খেলা করছিল সে।

রাজ পেছন থেকে তার কানো এসে ফোন রাখে। আস্তে করে বলে,
“আঙ্কেল কথা বলো।”

রানি একবার রাজের দিকে তাকিয়ে ফোন নেয়। বাবা সাথে খুব কথা বলে। তারপর মায়ের সাথে কথা বলে মন টা তার একটু হাল্কা হয়।

কথা শেষ করে পাশ ফিরলে রাজ কে দেখে না।
ফোনের স্কিনে নজর দিলে দেখে লক পেপারে তার একটা ছবি। এটা সেই ছবি যেদিন সে বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করছিল পার্কে। হয়তো রাজ লুকিয়ে ছবি তুলেছিল।
রানি তার নিজের ছবির দিকেই তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। রাজ কে নিয়ে খুব করে ভাবছে সে।

রাজ তার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বিছানাট উপর ছুঁড়ে মারে।

রানির হাত ধরে টেনে ব্যালকুনির ডিভানে বসে। নিজের কোলে রানি কে বসায়। রানি উঠে যেতে চাইলেও রাজ তার কোমর পেঁচিয়ে রাখে। তাই চাইলে আর উঠা হয়ে উঠে না তার।

এক কাপ কফি তে রাজ নিজের ঠোঁট ডুবায়। রানি কেও কয়েক বার খাওয়ায়।

রাজ রানি এই এক কাপ কফিই শেয়ার করছে দুজন মিলে।

“কফির স্বাদ টা তেঁতো হয়ে যাবে যদি ওই তোমার মিষ্টত্বের ছুঁয়া না পায়।”
কথাটা বলেই রাজ রানির ঠোঁটে নিজেকে উৎসর্গ করে।

রানিও কেন যেন রাজের এমন আচরণের প্রতিউত্তর দেয়। যার ফলে মুহূর্তে পরিবেশ টা মধুময় হয়ে উঠে।

রানি রাজ কে ঝাপটে ধরে।
রাজ মুচকি হেসে তাকে কোলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।

ভালোবাসার আরেকটা রাত দুজনে মিলে পারি দেয়। গভীর ভালোবাসায় মেতে উঠে দুজনে।

সকালে রানি তাকিয়ে দেখে রাজ তার বুকে মাথা রেখে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। রানির ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি আসে।

রাজ একটু নড়েচড়ে উঠলে রানি আগের মতো চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে।

রাজ চোখ ডলে রানির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে রানির চুল গুলি কানের পাশে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। মাথা এগিয়ে দিয়ে রানির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,
“প্রেয়সী কে যে খুব ভালোবাসি।”

রাজ তারপর উঠে যায়। ওয়াশরুমে গেলে রানি চোখ খুলে তাকায়। খুশিতে তার কান্না চলে আসে।

“মানুষ টা তাকে এতটা ভালেবাসে। এত কেয়ার নেয়। যেন বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখলে তিনি স্বস্তি পায়। সেই মানুষটা কে কি করে অবিশ্বাস করছি? এটা কি সন্দেহ? কেন একজনের কিছু কে বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসা কে দূরে রাখছি আমি? খুব ভুল করছি কি আমি?”
রানি নিজের মনে মনে কথা গুলি বিড়বিড় করছিল।

মনে মনে সে ভেবেই নিয়েছে রাজের সাথে এই বিষয়ে সে কথা বলবে।

রাজ ওয়াশরুম থেকে এসে চুপচাপ রেডি হতে থাকে অফিস যেতে হবে তার।

রানি সেই আগের মতো বিছানায় বসে আছে। গায়ের উপর চাদর টেনে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। রানির মুখের ভাব আর চুপ থাকা দেখে রাজ বলল,
“বাচাল পরী চুপ কেন?”
“…..
“রেডি থেকো মিটিং টা শেষ করে তোমায় আঙ্কেল আন্টির কাছে নিয়ে যাবো।”
“আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
“বলে ফেলো কি কথা। কথা আছে তবে চুপ কেন প্রেয়সী?”
“আপনি আগে আরেকটা বিয়ে করেছেন?”

ততক্ষণ পর্যন্ত রাজ রেডি হচ্ছিল কিন্তু রানির কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায়।

রানির চোখ রাজে আবদ্ধ আর রাজের চোখ রানি তে আসক্ত।
রাজ প্রায় ১ মিনিট রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। রানি চোখ বড়বড় করে কৌতূহলী চোখ নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু রাজ তাকে অবাক করে দিয়ে আবার নিজের মতো রেডি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত।

“কি হলো বলুন? আমার কথার জবাব দিন।”

রাজ হাতে ঘড়ি লাগাতে লাগে। আর বলল,
“লেইট হয়ে যাচ্ছে আসছি। যা বললাম তাই করো রেডি হয়ে থেকো।”

গাড়ির চাবি টা নিয়ে রাজ সুসু করে বের হয়ে গেল। রানি চোখের পানি ফেলতে থাকে। কান্না করতে করতে বলে,
“আমি জানতাম আপনি বিয়ে করেছেন। তাই চুপ ছিলেন। আপনি যদি বিয়ে না করতেন তাহলে তো আমায় বলেই দিতেন সোজা সাপ্টা কথা। আপনি একটা ঠকবাজ। আমি আপনার সাথে আর থাকব না। আব্বুর কাছে গেলে আমি আর আসব না। আমার জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি মিছে খেলা পেয়েছেন? আপনার মতো রাক্ষস কে আমি আর ভয় পাবো না। আপনি গ্যাংস্টার আছেন আপনার গ্যাং এ আমার কাছে নয়। আমি, আমি আপনাকে ডি ডিভোর্স দিব। আমার লাইফ চোরাবালি হয়ে গেল।”

রানি মাথায় হাত দিয়ে জোরে জোরে কান্না করছে আর নিজের সাথে বিড়বিড় করছে।

রাজ মিটিং শেষ করে ১২ টা ২০ এ বাসায় চলে আসে।
রুমে গিয়ে দেখে রানি কান্না করছে।

“তোমায় কি বলেছিলাম আমি?”
“…..
“কি হলো রানি?”
“আপনি আপনার লাইফ টা খেয়ে ফেলেছেন আপনি একটা রাক্ষস।”

রানির কথা শুনে রাজ বিশম খেয়ে যায়। শুকনো কাশতে থাকে। রানির কাছে গিয়ে তার পাশে বসে,
“মানুষের লাইফ কি খাওয়া যায়?”
“হ্যাঁ আপনি আমার লাইফ খেয়েছেন।”

রাজ শুষ্ক ঢুক গিলে শান্ত কন্ঠে বলে,
“কি ভাবে বলো আমায়?”
“আপনি আগে একটা বিয়ে করেছেন তাকে ঠকিয়ে আপনি আবার আমায় ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন। আপনি একটা ঠকবাজ বাটপার।”

রানির কথা শুনে রাজ শান্ত থাকতে পারল না। রেগে গিয়ে রানি কে ধমক দিল।
“শাট আপ ডেমেট। স্টপ দিজ ননসেন্স। চুপ কান্না থামাও।”

রানি এবার ভ্যা ভ্যা করে হাতা পা ছুড়াছুড়ি করে কান্না করছে। তাকে একটা বাচ্চার মতো লাগছে।

রাজ ধমক দেয় তো রানি তার কান্নার জোর বাড়িয়ে দেয়।
রাজ উপায় না পেয়ে রানি কে কোলে তুলে নেয়। তারপর নিচে যেতে থাকে।

রানি হাত পা নাচাতে নাচাতে,
“এই #গ্যাংস্টার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”
“….
“আ আপনি আমায় মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছেন তাই না? আপনার গোপন কথা জেনে গিয়েছি বলে। আপনি ডেভিল জামাইয়ের মতো আমায় মেরে ফেলতে চাইছেন।”
“জাস্ট শাট আপ ননসেন্স। এখন সত্যিই মার খাবে যদি কান্না না থামাও।”
“আল্লাহ আল্লাহ আমায় বাঁচাও তুমি। এই রাক্ষসের কাছ থেকে..”

রানির এই আবিল্লি পেঁচাল রাজের অসহ্য লাগছিল। রানি কে কোলে নিয়ে থেমে যায় সে। না পেরে বলল,
“রানি প্লিজ চুপ করো। তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। প্লিজ স্টপ দিজ।”
“ওও এখন আমার লাইফ টা খেয়ে আপনি আপনার আগের বউ কে নিয়ে আসবেন তাই না? আমি বুঝি না ভেবেছেন? আমি সব জানি। ওকে আসেন নিয়ে আসেন আপনার ডাইনি বউ কে। থাকব না আমি আপনার কাছে। আমি আপনাকে ডিভোর্স দিব।”

রানির কথায় রাজ পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের মতো করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
..
রানির বাসায় গাড়ি থামে। রাজ গিয়ে দরজা খুলে দিলে রানি সেখান থেকে বের হয়ে আসে।

রাজ পেছনের সিট থেকে মিষ্টি ফল যা যা এনেছে সব নিয়ে ভেতরে যায়। রানিও যায় রাজের পিছুপিছু। যেন ও পথদ্রষ্টা।

রানি কে দেখে তার বাবা মা খুব খুশি হয়। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। রাজ সোফায় বসে আছে। রানি মুখ ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে গিয়েছে। রানির মা রাজ কে নাস্তা দেয়।

রাজ অল্প কিছু খেয়ে বসে শ্বশুরের সাথে আড্ডা দেয়। তারপর শাশুড়ির কথায় রানির রুমে যায়।

রানি আয়নার সামনে বসে বসে কান্না করছিল।

“কিভাবে কান্না করো তা বুঝি আয়নার সামনে বসে বসে দেখছো?”

রাজের কথায় রানি তার দিকে তাকায়।
“তবে জানো তো। কান্না করলে তোমায় পেঁচার মতো লাগে। যেন কোনো এক রামপেঁচা।”

রাজের কথায় এভার রানির শরীর জ্বলে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি এখন পেঁচা হয়ে গেলাম তাই না? জানি তো। এখন আমায় ভালো লাগে না। আপনি তো ঠকবাজ। একজন কে বিয়ে করে ঠকিয়েছন, তারপর আমায় ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন। আপনি এখন আবার ওকে ঘরে আনবেন নাকি আরেকজনকে নিয়ে আসবে ঠকিয়ে?”

রানি ততক্ষণে রাজের সামনে এসে তার কলার চেঁপে ধরে।

“হোয়াট রাবিশ? হোয়াট আর ইউ ডোয়িং ননসেন্স? জাস্ট স্টপ ইট। ডেমেট স্টপ দিজ।”

রাজ রানির হাত ছাড়ায়। একটু দূরে গিয়ে ভেতরের নিশ্বাস ছেড়ে দেয়। রানি দাঁড়িয়ে এখন আরো বেগে কান্না করে।

“আপনি তাহলে সত্যিই এমন করেছে? তা না হলে..”
রানির কথা থামিয়ে রাজ নিজেই বলল,
“কাজ আছে আমার। পরে দেখা হবে। টেইক কেয়ার প্রেয়সী।”

ব্যাস এইটুক বলেই রাজ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পিছন ফিরে আর একবারও তাকিয়ে রানিকে দেখে না। রানি এই ব্যবহার পেয়ে তার কলিজাটা চিঁড়ে যায়। সেখানে বসেই পড়ে কান্নারত অবস্থায়। বুক ডুকরে কান্না করছে সে।

রাত তখন কয়টা বাজে রানির খেয়াল নেই। ঘুম টা তার হাল্কা হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন তার উপর ঝুঁকে আছে।

রানি চোখ মিটমিট করে তাকায়। হ্যাঁ রাজ নেশা ভরা চোখ নিয়ে তার উপর ঝুঁকে আছে। দুই হাত তার দুই পাশে রেখে অপলক দেখছে তাকে।

রাজ না চলে গিয়েছিল? কখন এলো আবার? রানি চোখ ঢলে আবার তার দিকে তাকায়।
রাজ তো আগের মতোই তার দিকে মাতাল করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।

রানি উঠে বসতে চাইলে রাজ তাকে মানা করে। তারপর নিজেই রানি কে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে যায়।

রানি আশপাশ দেখে আরো অবাক হয়। কারণ এটা রাজের বাসা। তারা তো ও বাড়ি ছিল। তাহলে এখন এখানে এলো কি করে? সে তো ঘুমিয়ে ছিল তাহলে? রানি কিছুই বুঝতে পারছে না। তারা কি চলে এসেছে? নাকি ও বাড়িই যায় নি? সব কিছু রানি কি স্বপ্নে দেখেছিল? রানির মাথা হ্যাংক হয়ে আসছে। এই গ্যাংস্টারের কিছুই রানি বুঝে উঠতে পারে না। হয়তো তার বুঝার শক্তিও নেই পুরো গ্যাংস্টার টা কে।

“আমরা না..”
“চলে এসেছি।”
“ম মানে..”
“তখন দরকার ছিল তাই গিয়েছি। পরে আবার রাতে গিয়ে আন্টি আঙ্কেল কে বলে তোমায় নিয়ে এলাম এখানে।”
“কিন্তু আমি তো ঘুমে ছিলাম তাহলে কি ভাবে এল..”
“এখানে যেভাবে আছেন মহারানী সেভাবে নিয়ে এসছি আপনায়।”
“মানে আপনি আমায় আম্মু আব্বুর সামনে?”
“ইয়েস আমি আপনাকে আপনার পিতা মাতার সামনে দিয়েই আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে কোলে তুলে নিয়ে এসেছি।”
“ইউ..”

রানি রাজ কে এলোপাথাড়ি কিল চর দিতে থাকে। রাজ হেসে হেসে রানি কে নিজের কোল থেকে নামায়।
রানি কে শান্ত করতে নিজের শক্ত বাহুডোরে জড়িয়ে নেয়।

ক্ষণিকের মাঝে রানি শান্ত হয়ে যায়। হাত পা নাড়ানাড়ি করা বন্ধ করে দেয়।

রানি কে নিজের বাহুডোরে জোড়ালো ভাবে আবদ্ধ করে নেয়। শান্ত কন্ঠে রানি কে প্রশ্ন করে,
“আমার বিরুদ্ধে তোমার কি কি অভিযোগ আছে তা ব্যক্ত করো।”
“….
“প্লিজ টেল মি।”

রানি কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার কি সব কিছু বলা উচিৎ? কেন নয়? যেখানে রাজ নিজেই তার সম্পর্কের অভিযোগ গুলির কথা শুনতে চেয়েছে। অবশ্যই বলা উচিৎ তার।

রানি কাঁদোকাঁদো ভাবে রাজের বুক থেকে সরে এলো। রাজের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।
ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না করে বলে,
“আপনি আমার আগেও একটা বিয়ে করেছেন। তাকে ঠকিয়েন।”
“তা এটা আপনায় কে বলল শুনি একটু।”
“আমি জানি। আপনি..”
“কানের নিচে একটা দিব। যা বললাম তার উত্তর দাও।”

রাজের ধমকে এবার রানি জোরে কান্না করে দেয়।
রাজ বেচারার মাথায় হাত। রানি কে সামলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

গালের দুই পাশে হাত রেখে শান্ত হয়ে বলে,
“তুমি না আমার জানপাখি। আমার কলিজা। বলো তোমায় কে বলল।”
“যেদিন আপনি বিদেশ থেকে ফিরবেন বলে আমায় কল করে জানিয়েছেন। সেদিন আমার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আমায় বলা হয় আমি যেন আমাদের বাসার সামনের ক্যাফেতে যাই। না হলে পরে পস্তাতে হবে। আগ্রহ নিয়ে বোরকা পরে গেলাম সেখানে। সেখানে এক মহিলা আমার জন্যে বসে ছিল।
আপনার সম্পর্কে অনেক কথা বলে আমায়। সব মিলে গিয়েছিল। আপনি নাকি তাকে বিয়ে করেছেন, তার সাথে ১/২ মাস সংসার করছেন। আরো কত কি। আমি বিশ্বাস করছিলাম না বলে আপনাদের বিয়ের পেপার দেখায় আমার। আর তা দেখেই বিশ্বাস করি। আর আপনাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করি।
আপনায় আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসি। আপনাকে নিয়েই আমি বিয়ের স্বপ্ন দেখতাম। সেই আপনি আমায় ঠকালেন।”

এই বলে রানি আরো জোরে জোরে কান্না করা শুরু করে দেয়।

রাজ তাকে শান্ত ভাবে বলে,
“হায় আল্লাহ এত বোকা তুমি? আসলেই তুমি বোকার ডিম একটা। ওটা বিশ্বাস করে আমার সাথে এমন করছো তুমি? ওই কাগজ তুমি বিশ্বাস করে নিলে রানি?”

রানি নাক টেনে জবাব দেয়,
“তো? নিজের চোখ কে কি করে অবিশ্বাস করব?”

রাজ নিজের প্যান্টের প্যাকেট থেকে একটা পেপার বের করে রানির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই সেই পেপার তো?”
রানি চোখ মুছে সেই পেপার হাতে নেয়। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে বলে,
“হ্যাঁ এটাই তো সেই পেপার। আপনার সাইনও আছে আর ওই মেয়েটারও।”
“হায়রে বুদ্ধু। এটা আমার নকল করা সাইন।”
“কি?”
“জ্বি। তুমি ছাড়া আমার দুনিয়াতে কেউ নেই তা আমার শত্রু শাহিন জেনে যায়।”

রানির গালের হাতে হাত রেখে রাজ আবার বলে,
“তুমি যে আমার লিটল এঞ্জেল। আমার কলিজা আমার সব টা দুনিয়া তা শাহিন জেল থেকে এসে জানে। আমার উইক পারসোন তুমি তাই তোমাকে তার খেলার গুটি হিসেবে নিয়ে আমায় শেষ করতে চেয়েছে। ‘অদম্য মানুষকে দমন করতে হয় তাদের উইক পারসোন দিয়ে।’ শাহিনও সেই পথ বেঁচে নিয়েছে। তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে আমায় আঘাত করতে চেয়েছে। ভেবেছে তুমি চলে গেলে আমি দুর্বল হয়ে যাবো। সহজে তার পথ থেকে আমায় সরিয়ে দিতে পারবে। তাই তার গালফ্রেন্ড কে দিয়ে এমন একটা নাটক সাজিয়েছে আমার নকল করা সাইন দিয়ে যেন তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাও। ও কিন্তু ওর চালে সফল হয়ে যেত। যদি না আমি এমন কিছু একটা আঁচ করে বিয়ে টা না করতাম। আমি জানি বিয়ে ছাড়া তোমার রাগ আমি ভাঙ্গাতে পারতাম না। কারণ তাহলে তোমার গভীরে প্রবেশ করতে হতো আমায়। যা বিয়ের আগে যিনা হতো। তাই সিদ্ধান্ত নেই বিয়ে করি আর শাহিনের প্লেনে পানি ঢেলে দেই।”

রানি ফ্যালফ্যাল করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। লোক টা বলছে কি?

“বিশ্বাস হচ্ছে না তো? জানি হবে না। জাস্ট এ মিনিট।”

রাজ নিজের ল্যাপটপ অন করে। কানে ইয়ারফোন নিয়ে বলে,
“ভিডিও অন কর ”

সাথে সাথে ল্যাপটপের স্কিনে ভিডিও অন হয়ে যায়।
সেখানে তারি নামের মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে। যে কি না রানি কে বলেছিল তার সাথে রাজের বিয়ে হয়েছে।

রানি চোখ মুছে অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,
“এটা তো ওই মেয়েটা।”
“তোমার যা জিজ্ঞেস করার করো ওকে।”
“….

রানি চুপ থেকে কিছু বলার আগে মেয়ে টা বলল,
“প্লিজ আমায় ছেড়ে দিতে বলো রানি। আমার কোনো দোষ নেই আমি তো শাহিনের কথায় এমন করেছি। ওকে তো নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তাই এমন করেছি। ও যা বলেছে তাই করেছি। রাজ চৌধুরীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বিয়েও হয়নি কখনো। এটা একটা মিথ্যা নাটক ছিল তোমার থেকে রাজ চৌধুরী কে আলাদা করার। আর শাহিন আমাকে আর তোমাকে এই খেলার গুটি বানিয়েছে। দেখো আমার আর শাহিনের সব ছবি। আমার কোনো দোষ নেই। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিতে বলো।”

তারি নিজের ফোনের ছবি দেখাতে লাগল যেখানে শাহিন আর তার অন্তরঙ্গের ছবি ভরপুর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here