#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১২||
রিহা লামিয়া কে ধরে হসপিটালের চেয়ারে বসে আছে।রেহান ডক্টরের সাথে কথা বলছে ।
লামিয়া কান্না করতে করতে অজ্ঞান হবার মত অবস্থা।রিহার খুব খারাপ লাগছে লামিয়াকে এভাবে দেখে। বাঁধন লামিয়ার প্রাণভোমরা বলা চলে।তার এমন অবস্থা দেখে লামিয়া কি করে শান্ত থাকবে।
সেইসময় রিহা হসপিটালে এসে দেখে লামিয়ার শরীরে রক্ত লেগে আছে।রিহা লামিয়াকে দেখে মনে করে ওর কিছু হয়েছে পরে বুঝতে পারে বাঁধন অ্যাকসিডেন্ট করেছে।
রেহান রিহা বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের এমন অবস্থা দেখে কেউ ঠান্ডা থাকতে পারে ।
রেহান ডক্টরের সাথে কথা বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।রিহা লামিয়াকে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসিয়ে রেহানের কাছে যায়।
পিছন থেকে রেহানের কাধে হাত রাখতেই রেহান পিছনে ফিরে তাকায়।
রিহা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় রেহানকে দেখে ।রেহানের চোখে পানি চিকচিক করছে।
রিহা কখনো রেহানকে কান্না করতে দেখে নি।কান্না দূরে থাক মন খারাপ করতেই দেখেনি সেখানে ।সব রিহার ভাবনার বাইরে ।
রিহা মুখ দিয়ে কিছু বের করার আগেই রেহান রিহাকে জড়িয়ে ধরে।প্রথমে রিহা চুপ থাকলেও পরে নিজেকে শান্ত করে বলে
_” ডক্টর কি বলছে ? বলুন? বাঁধন ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে তো ?
রেহানের মুখে কোনো কথা নেই।রিহা আবার প্রশ্ন করতেই রেহান রিহাকে ছেড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে
_” বাঁধন কোমায় চলে গেছে
রিহা দুই কদম পিছিয়ে যায়।মুখে হাত দিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ।লামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ও চেয়ারে ঘুমিয়ে গেছে ।
_” আমি কি করে লামি কে বলবো ? ও তো পাগল হয়ে যাবে।যেই ছেলেটার জন্য ও সব কিছু ছেড়ে চলে আসলো সেই ছেলের এই অবস্থা কি করে মেনে নিবে?
রিহা ওখানের বসে কান্না করতে থাকে।রেহান ও কান্না করছে তবে সেটা নিশব্দে।
রিহার কান্না করতে করতে হেচকি উঠে যায়।রেহান পানি এনে রিহাকে খাওয়ায়।
রিহা রেহানকে জড়িয়ে ধরে বলে
_” লামি মরে যাবে।প্লীজ কিছু করুন ভাইয়া কে ফিরিয়ে দিন প্লীজ।
রেহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।বাধনকে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখতো।সেই ভাইয়ের এই অবস্থা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
সকালে লামিয়া পিটপিট করে চোখে খুলে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে।বাঁধনের কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে উঠে ।
রিহার চোখ লেগে এসেছিল।কান্নার আওয়াজে রিহা নিজের কোলে তাকিয়ে দেখে লামিয়া মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে।
রিহা অস্থির হয়ে বলে
_” লামি বোন আমার একটু শান্ত হও।সব ঠিক আছে ।ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে ।এভাবে তোর শরীর খারাপ করিস না ভাইয়াকে তো সুস্থ্য করতে হবে প্লীজ।
রিহা লামিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়। লামিয়া রিহার বুকে কান্না করছে
_” রিহা আমি বাঁচবো কি করে ? ও তো আমার সব।আমায় বলেছিল ছেড়ে যাবে না তাহলে কেনো এমন হলো বল না ? ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না ।কে আছে আমার প্লীজ ওকে ঠিক করে দে।প্লীজ!
রিহা ভাষা খুজে পাচ্ছে না কি বলে লামিয়াকে সান্তনা দেবে।এখনো তো বাঁধনের কোমার কথা জানে না ।
রেহান চোখ মুখ ধুতে গিয়েছিল।কাল সারারাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি।লামিয়াকে ওভাবে কান্না করতে দেখে রেহান ছুটে আসে।
রিহা রেহান মিলে লামিয়াকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।লামিয়ার একটাই কথা বাধনের কাছে যাবে।
রেহান অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে লামিয়াকে দুর থেকে দেখা করিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
রেহান বাঁধনের কেবিনের সামনে দাড়িয়ে হিশিসিয়ে বলে
_” যাদের জন্য তোর এই অবস্থা আই প্রমিজ তাদের কাউকে ছাড়বো না।সবাই আমার ভালো রূপটা দেখেছে এখন থেকে #গ্যাংস্টারের আসল রূপ দেখেন। #গ্যাংস্টার ইজ ব্যাক ।সবাইকে সবার শাস্তি দিতে আসছি।
রেহান ফোন হাতে বাইরে চলে যায়।
এদিকে লামিয়াকে গোসল করতে পাঠিয়ে রিহা বসে আছে ।নিজের মধ্যে কেমন অসস্তি হচ্ছে।সব থেকে প্রিয় বান্ধুবীর এই অবস্থা রিহাকে অনেক ভাবাচ্ছে।
_” আচ্ছা বাঁধন ভাইয়ার কোমায় যাওয়ার কথা শুনে লামি কি করবে ? না না ওকে আমি কিছু হতে দেবো না কিছু না। লামি নিজের ভালোবাসার জন্য কতটা ছটপট করছে এদিকে আমি পেয়েও।না না কি ভাবছি আমি সব ভুল
রিহা দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। লামিয়ার রুম থেকে উঠে নিজের রুমে গিয়ে ওষুধ খেয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে লামিয়া দাড়িয়ে আছে ।
রিহাকে বের হতে দেখে লামিয়া বলে
_” রিহা চল বাধনকে দেখতে যাই।দেরি হলে ও আমার উপর রাগ করবে ।তুই জানিস না ও কতো অভিমানী চল না প্লিজ।
লামিয়ার চোখ দেখে রিহা বুঝতে পারে বেশি কিছু বললে ক্ষতি হবে।রিহা লামিয়ার জড়িয়ে ধরে বলে
_” তুই তো জানিস বাঁধন ভাইয়া তোকে কত ভালবাসে?
লামিয়া কিছুটা বিরক্ত নিয়ে রিহাকে দূরে সরিয়ে বলে
_” তুই এখন এইসব বলবি ? ওইদিকে ও অপেক্ষা করছে ।
রিহা লামিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
_” ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে ।ভাইয়া যদি জানতে পারে তুই না খেয়ে ভাইয়ার কাছে গিয়েছিস তাহলে কিন্তু ভাইয়া অনেক রাগ করবে।তাছাড়া ভাইয়া এখন অসুস্থ্য তোর উচিৎ ভাইয়ার সেবা করে উনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য করা।এখন তুই যদি অসুস্থ্য হয়ে যাস তাহলে তো ভাইয়ার সেবা করা হবে না তখন ভাইয়া ঠিক হবে কি করে? বল?
রিহার কথা শুনে লামিয়া চিন্তায় পড়ে যায় ।কিছুটা ভেবে বলে
_” আমার কিছু হবে না আর না ওর কিছু হবে।এখনো আমাদের অনেকটা পথ চলা বাকি।অনেক স্বপ্ন পূরণ করা বাকি।
রিহা লামিয়াকে জোর করে বসিয়ে সার্ভমান্ট দিয়ে খাবার আনিয়ে খাইয়ে দেয়।
_____________________________________
রেহান একটা পুরনো বাংলোর ভিতরে দাড়িয়ে আছে তার সামনে প্রায় ৫০,৬০ জন লোক।
রেহানের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে ।রেহান হাতের মুঠি শক্ত করে বলে
_” আই ডোন্ট নিড এনি এক্সকিউজ ! বাঁধনের কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে সেটা জানতে চাই ।তাও ২ ঘণ্টার মধ্যে । নাও গো
শেষের কথাটা রেহান অনেকটা জোড়ে বলে।সবাই বেরিয়ে যায়।
রেহানকে এখন কোনো হিংস্র বাঘের মত লাগছে।যে নিজের শিকারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ।
লামিয়াকে অনেক বুঝিয়ে ঘুম পাড়ায়।কাল অল্প সময় ঘুমিয়েছিল এমন হলে ওর ক্ষতি ।রিহা লামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে ।এক পলকে এত সব হয়ে যাবে সেটা রিহা আসা করে নি।
রিহা ফোন বের করে রেহানের কাছে ফোন দিতেই ওয়েটিং পায়।
রিহা কিছুক্ষণ পর আবার দিতে গেলে রেহানের কল আসে। রিহা চিন্তিত সুরে বলে
_” আপনি কোথায়? ঠিক আছেন তো?
ওপাশ থেকে রেহান জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বলে
_” আমি ঠিক আছি।লামিয়ার কি অবস্থা ? খেয়েছে কিছু ?
প্রতিউত্তরে রিহা ডুকরে কেঁদে উঠে।রেহান রিহা কে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।রিহা নাক টেনে টেনে বলে
_” অনেক বুঝিয়ে খাইয়েছি।খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ঘুম পারিয়েছি নাহলে হসপিটালে যাওয়ার জন্য জেদ করছিলো।রেহান আমি ওকে এভাবে দেখে পারছি না ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ।
রেহান কট করে ফোন কেটে দেয়।রিহাকে কি বুঝাবে যেখানে ও নিজেই নিজেকে ঠিক করতে পারছে না।বাঁধন ছাড়া সব কিছু কেমন জটিল থেকে জটিল হয়ে যাচ্ছে ।
রেহান বিড়বিড় করে বলে
_” আমাদের বন্ধুত্বের কসম যাদের জন্য তোর এই অবস্থা তাদের সবাইকে যোগ্য শাস্তি দিয়ে তবে থামবো।ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে সব ভুল কাজ করছে ।
রেহান পাশে থাকা টেবিলে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
বিকালের দিকে লামিয়াকে নিয়ে রিহা হসপিটালের দিকে যায়।রেহানকে আগেই জানিয়েছে ।
হসপিটালের পৌঁছে লামিয়া এক প্রকার ছুটে যায় রিহা ও পিছন পিছন ডাকতে ডাকতে যায় ।
রেহান কেবিরের ভিতর বসে ছিল লামিয়াকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে রেহান কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
রেহান কিছু বলার আগেই লামিয়া বাধনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
রিহা এসে হাফাতে থাকে।রেহান পানির বোতল দিতেই রিহা খেয়ে লামিয়াকে দেয়।
লামিয়া সে তো নিজের মনের সব অভিযোগ করছে।মনে হচ্ছে বাঁধন ওর সব কথা বুঝতে পারছে ।
দূরে দাঁড়িয়ে রিহা আর রেহান দেখছে।রেহান বাইরে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিহা বাইরে গিয়ে রেহানকে খুঁজতে থাকে।
রিহা খুঁজতে খুঁজতে হসপিটালের পিছনের দিকে যায় সেখানে রেহান একটা লোকের সাথে রেগে কথা বলছে ।
রিহা আরো কিছুটা এগিয়ে যেতেই ওর কানে এমন কথা আসলো যেটা শুনে রিহা ওখানেই স্তব্ধ।
রিহা পা আর এগুচ্ছে না।রিহা আর সামনে না এগিয়ে ছুটে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায় ।
রিহার সারা শরীর কাপছে।নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
রিহা কাউকে ফোন করে দেখা করতে বলে।
রিহার গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে গেলে রিহা দূরে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখতে পায়।গাড়ি থেকে নেমে সোজা লোকটার কাছে গিয়ে গালে চর বসিয়ে দেয়।
এতেও যেনো রিহার রাগ কমছে না।
#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৩||
রিহা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। সামনে আফজাল সাহেব আর আফরান দাড়িয়ে আছে।
কারোর মুখে কোনো কথা নেই।নিরবতা ভেঙ্গে আফজাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_” এটা কি ধরনের ব্যাবহার রিহা ? আমি তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। যে মানুষটা তোমার জন্য এত কিছু করছে তাকে তুমি চর মারলে।ছি !
রিহা মাথা উচু করে নিজের আব্বুর দিকে তাকায়।লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে
_” আব্বু তুমি আমাকে খুব ভালো চিনো। আমি বিনা কারণে বা প্রুফ ছাড়া কাউকে মারিনা । ও বাঁধন ভাইয়া কে কেনো মারলো? কে দিয়েছে এই অধিকার ? তুমি জানো লামির কি অবস্থা ? মেয়েটা পাগল হবার মত।শুধু মেরেছে সেটায় হয়নি কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছে ।কেনো আব্বু কেনো ?
রিহা চোখ লাল হয়ে গেছে।শরীর কাপছে রীতিমত।নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চোখ দুইটা বন্ধ করে আবার খুলে আফজাল সাহেবের উত্তরের আসায় তাকিয়ে থাকে ।
আফজাল সাহেব আমতা আমতা করে বলে
_” বাঁধন ছেলেটা সব জেনে গিয়েছিল। সেদিন তোমাকে কিডন্যাপ করা হইছিলো আর গাড়ির নাম্বার বের করে জানতে পারে আমরা করেছি ।কপাল ভালো রেহান কে জানানোর আগেই ওদের বাসায় থাকা আমাদের লোক জানতে পারে তাই তো পথের কাটা তুলে ফেলতে হবে ।
রিহা এবার চিল্লিয়ে বলে
_” কিসের কাটা আব্বু ? রেহান জানলে কি হতো? একদিন না একদিন তো সব জানতে পারবে তো যেটা পরে জানতে পারবে সেটা এখন জানলে কি অসুবিধা?
আফজাল সাহেব রিহা কে নিজের কাছে টেনে মাথা হাত বুলিয়ে বলে
_” রিহা মা একটু শান্ত হও।তুমি রেগে আছো তাই বুঝতে পারছো না।রেহান জেনে গেলে তোমাকে মেরে ফেলতো। ও অনেক খারাপ।আমাকে কিভাবে হুমকি দিয়েছিল তুমি তো জানো
রিহা এক ঝটকায় ওর আব্বুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে
_” কিসের খারাপ ? ও যদি খারাপ হয় তাহলে আমরা ভালো হলাম কি করে ? ওর ব্যাপারে জেনে আমি এত টুকু বুঝতে পারছি টাকার জন্য ও কখনো আমাকে বিয়ে করবে না ।আর ও আমাকে এত কিছু দিয়েছে সেখানে আমার সম্পদের জন্য কেনো এত সব করবে ।আব্বু রেহানের ব্যাংক ব্যালেন্সে যত টাকা আছে আমাদের ও ওতো নেই।তোমার যুক্তি আমি মানতে পারলাম না ।সেদিন হুস ছিল না তাই যা বলেছো মেনে নিয়েছি কিন্তু এখন ভেবে দে
বাকিটা বলার আগেই রিহার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পড়ে।হটাৎ এমন কাজের জন্য রিহা প্রস্তুত ছিলো না মাটিতে পড়ে ফুফিয়ে কান্না করে ।আফরান তাড়াতাড়ি রিহা কে টেনে তুলে।
আফরান রাগান্বিত কণ্ঠে বলে
_” এটা তুমি কি করলে ? ও ভুল করছে তাই বলে মারবে
আফজাল সাহেব চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আফরান চুপ হয়ে যায় ।রিহার কাছে গিয়ে বলে
_” এই দিন দেখার জন্য তোকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছি ।একটা বাইরের ছেলের জন্য তুই নিজের আব্বুকে সন্দেহ করছিস ছি! তোর মনে হয় আমি তোকে মিথ্যে বলছি তাই তো? ঠিক আছে তুই যা তোর রেহানের কাছে
রিহা কান্না করতে থাকে।আফরান রিহার কাধে হাত দিয়ে বলে।
_” রিহা তুমি এইসব কি বলছো ? আমরা তোমাকে কেনো মিথ্যে বলবো ? রেহান কতোটা খারাপ তুমি জানোনা ।রিহা এখনো তুমি দুনিয়া চেনোনি তুমি ভাবছো রেহান তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে মানে ও তোমাকে ভালোবাসে।না ! ও শুধু তোমাকে ব্যাবহার করছে।রেহান একটা গ্যাংস্টার।মেয়েদের পাচার করা সকল ধরনের খারাপ কাজ ও করে।
রিহা আফরানের হাত সরিয়ে কিছু কড়া কথা বলার জন্য মুখ খুলতে নিতেই দেখে আফজাল সাহেব মাটিতে পড়ে আছে ।
রিহা চিৎকার দিয়ে ওর আব্বুর কাছে যায়।
______________________________________
রেহান অনেকক্ষণ ধরে রিহার ফোনে কল দিচ্ছে কিন্তু রিং হয়ে হয়ে থেমে যাচ্ছে। এদিকে লামিয়া বাঁধনের কোমায় যাওয়ার কথা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে ।
রেহান একা লামিয়াকে সামলিয়ে পারছে না।রিহার ও খোজ পাওয়া যাচ্ছে না ।রেহান বাসায় ফোন দিয়ে দেখে রিহা নেই।
রেহানের এখন পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে ।রেহান পারছে না তো কান্না করে দিতে ।
_” রিহা কোথায় তুমি ? আই নীড ইউ।প্লীজ কাম ব্যাক প্লীজ!
রেহান ডক্টরের সাথে কথা বলে বেরিয়ে আসতেই ওর বডিগার্ড এসে দাঁড়ায় ।
রেহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_” কিহলো ? রিহার কোনো খোঁজ পেয়েছো?
বডিগার্ড মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
_” স্যার! ম্যাডাম তার বাসায় গিয়েছে আপনার গাড়ি নিয়ে।
রেহানের মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়ল।কিছুটা একটা ভেবে বলে
_” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি নজর রাখো।হয়তো টেনশন কমাতে গিয়েছে। ওর উপর ও তো কম চাপ পড়ছে না। তুমি হসপিটালে বডিগার্ড বাড়িয়ে দাও।
জাহেদ (বডিগার্ড) মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। রেহান আবার কেবিনের ভিতর গিয়ে দেখে লামিয়া বাধনকে একপাশে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ।
রেহানের চোখের কোণে পানি চলে আসলো।
।
।
।
রিহা আফজাল সাহেবের হাত ধরে বসে আছে।পাশে ডক্টর চেকাপ করছে।আফরান কিছুটা দূরে গম্ভীর হয়ে দাড়িয়ে আছে।
রিহা কান্নাভেজা কন্ঠ বলে
_” ডক্টর কাকু আব্বু ঠিক আছে তো ? হটাৎ এমন অজ্ঞান হলো কি করে ?
ডক্টর সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে
_” উনি অনেকদিন থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ।খাওয়া দাওয়া হয়তো করছে না।এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো দিন স্ট্রোক করতে পারে ।যতটা পারেন উনাকে হ্যাপি রাখার চেষ্টা করুন।
ডক্টর চলে যায় ।রিহা নিশব্দে কান্না করছে।আফরান রিহার মাথায় হাত রেখে বলে
_” চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।আংকেলের কিছু হবে না ।
_” আব্বুর কি হলো? এত কি কারণে আব্বু মানসিকভাবে সুস্থ না ?
আফরান রিহার মাথা নিজের বুকে নিতে গেলে রিহা সরে যায়।আফরান স্বাভাবিক হয়ে বলে
_ ” তোমাকে নিয়ে টেনশন করতে করতে আজ এই অবস্থা । রেহানের বাসায় তোমার বিপদ হতে পারে সেইজন্য আংকেল রাতে ঘুমাতে পারে না ।
রিহা চুপ করে আছে।কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
আফজাল সাহেবকে নড়তে দেখে রিহার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো। আফজাল সাহেব আস্তে আস্তে বলে
_” রিহা মা তুই সব ভুলে নতুন ভাবে শুরু কর।আমি চাই না ওই গ্যাংস্টারের ছায়া তোর জীবনে পড়ুক
রিহা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।আফরান আর রিহা আফজাল সাহেবকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
শেষের রিহা অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে দরজা আটকিয়ে কান্না করে।
রাত প্রায় দুইটা রিহার চোখে ঘুম নেই।সব কিছু রিহার কাছে অসহ্য লাগছে ।
_” প্লীজ রেহান আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।আপনাকে আমার খুব দরকার ।আমি পারবো না আব্বুকে আর আপনাকে ছেড়ে থাকতে।কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না ।আমি জানিনা আপনি সত্যি খারাপ কি না তবে আমি আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি ।
রিহা আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এদিকে ল্যাপটপে বসে কেউ একজন রিহার কান্না দেখছে আর পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে ।
_” খেলা তো শুরু।এই খেলায় আমি হবো রাজা।রাজ্য আমার রানী আমার
কথাটা বলে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো ।
(লেখিকা : রানু মন্ডল হবে তোর।হ্ন ঢং আমি যা বলবো তাই হবে বেশি পাকনামি করলে গল্প থেকে কিক মারবো হি হি )
রেহান লামিয়াকে বাসায় পাঠিয়ে বাঁধনের পাশে বসে আছে।সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমের ঢুলে পড়ছে তবুও চোখ খোলা রাখছে।অলরেডী ৪কাপ কফি শেষ ।দুইদিন ধরে না ঘুমানো এখন কি কফি খেলে কাজ করে ।
পকেট থেকে ফোন বের করতেই ওয়ালপেপারে রিহার হাসিমাখা ছবি ভেসে উঠলো।রেহান ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে ।
গ্যালারি ঘেঁটে রিহার অনেকগুলো ছবি পেলো।রিহা ফাঁক পেলেই রেহানের ফোন দিয়ে ছবি তুলতো।রেহান তো একবার রাগ করে বকা দেয় তখন রিহা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
_” আমি আছি তাই ছবি তুলছি।যেদিন থাকবো না সেদিন এই ছবি দেখে দিন পার করবেন।
রিহার সেদিনের কথা আজ সত্যি হয়ে গেলো।রেহান মিনমিনিয়ে বলে
_” পাগলী তাহ। কোথায় গিয়ে বসে আছো।তোমার এই মুখ দেখে একটু শান্তি লাগছে।সামনে এসো বুঝ জড়িয়ে ধরে সব ক্লান্তি দূর করবো।
রিহার ছবিতে নিজের ঠোট ছোঁয়ায়।
কেউ অপেক্ষায় আছে ভালোবাসার মানুষের আর কেউ অপেক্ষা করছে প্রিয় মানুষটির ।আবার কেউ ওদের জীবন উলোট পালোট করতে ব্যাস্ত। কার ভাগ্যে কি আছে কে জানে।
সকালে
লামিয়া রেহানকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়।রেহান ও আর জোর করেনি রিহা কে আনতে যেতে হবে।এক কিছুক্ষণের জন্য দূরে থাকা রেহানের কাছে অনেক বছর মনে হচ্ছে ।
যতই সমস্যা হোক না কেনো প্রিয় মানুষগুলো পাশে থাকলে একটু শান্তি লাগে।
রেহান রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়ে রিহার বাড়ির উদেশ্যে।
এদিকে রিহা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।আফরান অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে ।
রিহা বিরক্ত নিয়ে পাশে হাত দিয়ে বলে
_” রেহান কে যেনো দরজায় আসছে ?দেখেন তো লামি কি না আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ।
দরজায় বারি পরেই যাচ্ছে ।রিহা রাগী চোখে রেহান বলে ডাক দিতেই চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
পরে বুঝতে পারে ও কোথায়।রিহা আস্তে করে নেমে দরজা খুঁজে দিতেই আফরান হুড়মুড় করে ঢুকে।
রিহাকে দেখে অস্থির কণ্ঠে বলে
_” তুমি ঠিক আছো? চোখ ফোলা ফোলা লাগছে কেনো ?
রিহা অন্যদিকে ঘুরে বলে
_” আমি ঠিক আছি।আব্বু কি উঠছে ?
আফরান না জবাব দিতে রিহা বলে
_” তুমি এখন যাও আমি ফ্রেশ হবো।
আফরান আর কিছু বলতে না দিয়ে রিহা ওয়াশরুমের ভিতর যায় ।
রিহা ওর আব্বুকে খাইয়ে দিচ্ছে তখন বাইরে থেকে বিকট আওয়াজ হয় ।রিহা আফজাল সাহেব দুইজন চমকে যায়।
আফরান একটু কাজে বাইরে গিয়েছে ।
রিহা আফজাল সাহেব বাইরে আসতেই অবাক হয়ে যায়।রিহা ছোট করে রেহান বলে চিৎকার দিতেই।রেহান দৌড়ে রিহার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে।
রিহা অস্থির হয়ে বলে
_” এইসব কি আপনার শরীরে এত আঘাত কিসের ?
রেহান কোনো কথা না বলে একবার আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে রিহার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।
আফজাল সাহেব রেহানকে আটকানোর চেষ্টা করছে ।
রেহান কারোর কোনো কথা শুনছে না রিহাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসানোর আগে আরেকটা হাত রিহার অন্য হাত ধরে ফেলে ।
রেহান পকেট থেকে গান বের করে।
চলবে
(