ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -১৬+১৭

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৬

সময়ের স্রোতে কেটে গেছে দীর্ঘ এক বছর। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। কেউ চাইলেও তাকে আটকে রাখতে পারেনা। এই এক বছরে কত কিছু পাল্টে গেছে।

মিহি বসে আছে,কলকাতা শহরের একজন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ইশান মুখার্জির অফিসে।মিহি প্রায় এক ঘন্টা সময় ধরে বসে আছে। পড়নে তার সাদা সুতির শাড়ি। সাদা হিজাবে আবৃত করে রেখেছে মাথার চুল। কালো মাষ্কে ঢেকে রেখেছে মুখ। মিহির অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, ইশান মুখার্জি কেবিনে প্রবেশ করে বলে নমস্কার মিসেস মাহমুদ। অথবা মিস ছদ্মবেশী মিসেস মাহমুদ। তা এই ইশান মুখার্জি আপনার কি সেবা করতে পারে!

– নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করতে চাই। নিজের সন্তানের স্বকৃতি চাই।

– আমি কি করতে পারি?

– আপনি চাইলে আমাকে হেল্প করতে পারেন।অবশ্য তার জন্য আপনি বিনিময় পাবেন।

– তো মিস….

– মার্শিয়া জাহান মিহি আমার নাম।

– তো মিস মার্শিয়া জাহান মিহি। আপনি আমাকে একটা কথা বলুন। আয়রা মাহমুদ আইমিন আপনার সতিন তার সাথে লাস্ট কবে দেখা হয়েছে।

– মাইন্ড ইউর ল্যাগুইজ মিস্টার ইশান মুখার্জি। শাফিনের একমাত্র ওয়াইফ আমি। কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসলেই ওয়াইফ হয়ে যায় না।

ইশান মিহির দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে রিলাক্স মিস মিহি। এতো হাইপার হলে তো হবে না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।

– আপনি আমার কাজটা করবেন কি না।

– ইন্টারেস্টিং কাজের প্রতি ইশানের বারাবর ঝোঁক বেশি। তার উপর যদি সেই কেসটা হয় কোন সুন্দরীর তাহলে তো কথাই নেই। আমাকে একটা কথা বলুন।বাংলাদেশ আপনার নিখোঁজ সংবাদ বেড় হয়েছে।শাফিন মাহমুদের মৃতুর চারদিন পর। আপনি এই কলকাতা শহর গা ঢাকা দিলেন কেন?

– সেটা জানতে হলে আপনাকে। একবছর আগের কিছু কথা জানতে হবে। আপনার কি সেই টাইম আছে?

– অবশ্যই আছে,প্রত্যেকটা কথা বলবেন, আর ডিটেইলসে বলবেন কোথাও যেনো কোন কথা ছুটে না যায়। আর আপনি আসার আগে আমি টুকটাক খোঁজ নিয়েছি এবার বাকিটা আপনার মুখ থেকে শুনবো।

-তাহলে শুনুন….

আমার হ্যাসবেন্ডের মৃত দেহ আমি নিজের চোখে দেখিনি। নুহাস আমার হ্যাসবেন্ডের সহকারী আবার ভালো বন্ধু ছিলো। তবে এখানে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় কি জানেন, সে আমাকে প্রপোজ করছিলো ভার্সিটিতে থাকতে।তবে তাকে রিজেক্ট করছিলাম আমি। অদ্ভুত ভাবে সেই হয়ে যায় শাফিনের প্রিয় আর বিশ্বস্ত একজন। আমি লাশ দেখিনি তাই আমার ধারণা ছিলো শাফিন জীবিত আছে। নুহাস আমাকে ঠিকানা দিলো কবর স্থানের। আমি গেলাম আবেগে ধরেই নিলাম সেটা শাফিনের কবর। কান্নাকাটি আর শোকে মাথায় আসেনি। একজন অফিসারের কবর তাও কিছু সময় পূর্বে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা নিশ্চয়ই ফাঁকা থাকবে না।পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবে সেখানে ফুল থাকবে।

আমি ছিলাম ফাহিনের বাসায়। রাতের শেষ ভাগে আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি বাহিরে এসে শুনতে পাই,ফাহিন বলছে, আজ রাতের মতো আর ঘুম ভাঙ্গবে না। কড়া ডোজের ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। আমি রুমে চলে আসি আর সব ঘটনা গুলো মেলাতে থাকি। শাফিনের সাথে আমার সম্পর্ক, বিয়ের তিন মাস পর থেকেই খারাপ যাচ্ছিলো। হুট করেই তিন বছরের পরিচিত মানুষটা পাল্টে গেলো। আমি সহ্য করা শুরু করলাম এক ভিন্ন রকম শাফিনকে। সবার থেকে শুনেছি। প্রেমিক আর হ্যাসবেন্ড এক হয়না তাই আমি ওর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দিনদিন ওর উগ্র আচরণের কারণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে। আমি নিজেই আগে বলি আমি এরকম ভাবে আর থাকতে চাইনা। পরে ও ডিভোর্সের কথা বলে, আমি ভাবলাম কিছুদিন আলাদা থাকলে হয়তো ও আবার আমার কাছে ফিরে আসবের।তার আগেই সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো।

– মিস মিহি। আপনি কবরের সামনে লাস্ট পাঁচ মিনিট কি করেছিলেন?

– আমি সেখানে একা ছিলাম। সবাই আমাকে কবরের পাশে একা ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়। আমি কাঁদছিলাম। ঠিক তখন একজন আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে যায়।

– সেখানে কি লেখা ছিলো।

– নিজের সন্তান আর নিজেকে বাঁচাতে চাইলে পালিয়ে যাও।

– আর কিছু লেখা ছিলো?

– না।
– সেই কাগজটা আছে?

– হুম আছে।

-মিস মিহি আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে সন্দেহের তালিকায়, ফাহিন,আয়রা,নুহাস তিনজনই। বিশ্বাসঘাতক করতে পারে আবার তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ডন ও হতে পারে?

– সন্দেহর তালিকায় আরো একজন আছে, রমিজ রাজ। উপ কমিশনার।

– তার উপর সন্দেহ হওয়ার কারণ?

– শেষ বার আমাকে কিডন্যাপ করতে সে নিজেই এসেছিলো।

– একটা কথা জানেন কেস টা ইন্টারেস্টিং। তারচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় কি জানেন। আপনার হ্যাসবেন্ড হয়তো বেঁচে আছে। হতে পারে তাকে কেউ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য গু*ম করে রেখেছে। আরো ইন্টারেস্টিং হচ্ছে যে নিজেকে আপনার হ্যাসবেন্ডের ওয়াইফ দাবী করছে আই, মিন আয়রা। আমি কেসটা ইনভেস্টিগেশন করবো। তবে আমাকে পূর্ণ সাহায্য করতে হবে। রাজি থাকলে এই ফাইলে সই করে দিন।

– মিহি সই করে দিলো।

ইশান কাগজটা হাতে নিয়ে, মিহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আশা করি আপনার সাথে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে।

– মিহি ভ্রু কুঁচকে বলে, হতে পারে তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো।আজ আসি মিস্টার মুখার্জি। নাম্বার আছে দরকার পরলে কল করে নেবেন।

মিহির চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ইশান বলে, ধানিলঙ্কা আপনার সাথে কাজ করাটা রোমাঞ্চকর হবে আমার মন বলছে।
______________________________________________
নুহাস, আয়রাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,মিহি কোথায় পালাতে পারে?এক বছর ধরে ওর কোন খোঁজ পেলাম না।

– ওকে না পেলে আমরা মেইন টার্গেট মিস করে যাবো।যে ভাবেই হোক খুঁজে বের করতেই হবে।

-মুখে বললেই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তার জন্য আরো গুপ্তচর সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

– সেটা করেছি।তবে আমার প্রশ্ন রমিজ রাজ কিছু বুঝতে পেরে যায়নি তো? না মানে ওনার উপর আমার ভরসা নেই। ধুরন্দর লোক।

– রমিজ রাজের উপর আমারও সন্দেহ আছে,আসল কার্লপির্ট সে নয় তো। এম,কের আড়ালে।

– হতেও পারে। আবার নাও হতে পারে।

– ফাহিনের সাথে তোমার সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে।

-এগোয়নি বলতে গেলো। তবে এর মধ্যেও কোন একটা কিছু আছে। যেটা আমরা ধরতে পারছিনা।
আর শাফিন স্যার বাসা থেকে যেই ফাইল গুলো কালেক্ট করেছি। তাতে তেমন কোন তথ্য নেই। তারমানে স্যারও আমাদের থেকে কিছু লুকিয়েছেন।

– হুম আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তবে শাফিনের আসল উদ্দেশ্য কি ছিলো? সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।

– স্যার হয়তো জানতেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের কে আছে এম,কের সাথে জড়িত তাই হয়তো স্যারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্যারের সংগ্রহে আরো তথ্য থাকার কথা সে পর্যন্ত আমরা এখনো পৌঁছাতে পারিনি।

– আমার তো এখন মিহিকে সন্দেহ হচ্ছে। ও কোন আলাভোলা মেয়ে নয়। মেধাবী আর বুদ্ধিমত্তা। হতেই পারে ওদের অশান্তি করাটা। বা আলাদা থাকাটা পুরোটাই সাজানো নাটক।

– তাহলে এখন আমাদের কি করা উচিৎ?

– তুমি ফাহিনকে ছেড়ে রমিজ রাজের পিছু নাও।

– ছিহহহহ বিবাহিত এক আধ বয়সী পুরুষকে ইমপ্রেস করতে হবে।

– ছিহহহহ বলছো কেন, দরকার পরলে তাই করবে।এমনিতেই তার চরিত্র গোবরের মত পবিত্র।

– ওকে।

ফাহিন একটা ইজি চেয়ারে বসে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো। হিসেবে মিলছে না। বছর কেটে গেছে কিন্তু সব যেনো সেই এক জায়গায় আটকে আছে।
ফাহিনের ধ্যান ভাঙ্গে তার মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে নাম্বারটা দেখেই ফাহিনের হাত কাঁপতে থাকে। কোনমতে কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝাল কন্ঠে কেউ বলে,তোমাকে দিয়ে একটা কাজও হয়না যে ভাবেই হোক, হয়তো মূল তথ্য নয়তো শাফিনের বউ দু’টোর একটা আমার চাই।আর কত সময় দেবো তোমাকে?

ফাহিন হতাশ কন্ঠে বললো,আমি চেষ্টা করছি।

– শেষবার তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি এরপরও না পারলে। গ্রেফতার হবে তুমি। বলেই কল কেটে দেয় ওপাশ থেকে।
______________________________________________
মিহি নিজের ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,খুব তাড়াতাড়ি তোর বাবাকে খুঁজে বের করবো। আমি আবার ফিরবে বাংলাদেশ। তবে এবার হবে ভিন্ন পরিচয় ।
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৭

মিহি নিজের মোবাইলটা সেই কখন থেকে খুঁজে চলেছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। মিহি সুস্মিতা পাল কে উদ্দেশ্য করে বলে,সুস্মিতা আন্টি তুমি আমার মোবাইলটা দেখেছো?

– না আমি দেখেনি।তা তুমি কোথায় গিয়েছিলে মেয়ে।তোমার তো বাসার বাহিরে বা রাখা রিস্ক।

– আমি একটু কাজে বেড় হয়েছিলাম। তবে আমি নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করেই বেড় হয়েছি।

– মোবাইল নিয়ে তুমি এতো টেনশন করছো কেন? মোবাইলে যোগাযোগ করার মতো তোমার তো কেউ নেই।

মিহি কোন কথা বাড়ালো নার।কলকাতা শহরে একমাত্র সুস্মিতাই মিহির ভরসার।

মিহিও শেহরোজের পাশে শুয়ে পরলো। চারমাসের শেহরোজতো জানেই না তার জন্মের শুরু থেকে কত ট্রাজেডি।

______________________________________________
ইশান চেয়ার ছেড়ে উঠে বলো,ওহহহ শিট ইশান মুখার্জির এতো বড় ভুল কি করে হলো। মিহি তো নিজেই বন্দি আছে। তারমানে মিহিকে যে এখানে রেখেছে। দাবার চাল সেই চালছে। আর মিহি সেই দাবার একটা গুটি। ইশানের সিক্রেট সহ কর্মী লিরা কে কল করে মিহির সাথে দেখা করতে বললো। ইশান কল কেটে দিয়ে বলে,বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।এইবার ঘুঘু তোমার বধিঁব প্রাণ।

মিহির ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বেলা গড়িয়ে দুপর হয়ে গেলে। হঠাৎ শেহরোজের কান্নার শব্দে মিহির ঘুম ভেঙে যায়। মিহি শেহরোজের কান্না থামিয়ে। সামনের রুমে আসতেই দেখে,সুস্মিত কারো সাথে কথা বলছে,মিহি বললো কে এসেছে গো আন্টি? এই দেখনা এই মেয়েটা কত সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় নিয়ে এসেছে। তুই তোর আর বাবুর জন্য কিছু পছন্দ করেনে। মিহি বসে পছন্দ করা শুরু করতেই। লিরা বললো,একটু জল হবে গো মাসি মা। গলাটা কেমন শুকিয়ে গেছে।

– কেন হবে না মেয়ে,তুমি বসো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।

সুস্মিত পল চলে যেতেই লিরি মিহির হাতে একটা শাড়ী দিয়ে বলে ম্যাডাম এটা আপনার জন্য। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,ইশান স্যার পাঠিয়েছে।একাএকা দেখবেন।

সুস্মিতাপল এসে বলে,গি গো মেয়ে তুমি আমার মেয়ের সাথে কি কথা কইছো?

– জল এনেছো মাসিমা তাড়াতাড়ি দাও আগে গলাটা ভিজিয়ে নেই তারপর বলছি। জলটা পান করে লিরা বললো,তোমার মেয়ের এই শাড়ীটা পছন্দ হয়েছে। আমিও বলছিলুম এই শাড়ীতে কত মানাবে তোমার মেয়েকে।

– তা কত দাম রাখবে তুমি।

– তুমি বুঝে দাও দেখি মাসি মা। তুমিতো শাড়ী কেনোই।

-সুস্মিত পল হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলে, হ্যা লো মেয়ে তোর নাম কিরে? আর থাকিস কোন পাড়ায়?

– আমার নাম ময়না। থাকি মেলা দূর ওই স্টেশনের পাশে ঝুপড়িতে।

– ঠিক আছে এবার তুই যা।

মিহি শাড়ী নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা বন্ধ করতে নিয়ে আবার করলনা। শাড়ী নিয়ে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে। শাড়ীর ভাজ খুলতেই বেড় হয়ে আসলো চিরকুট আর একটা ঔষধের প্যাকেট।

চিরকুটে লেখা ছিলো,,,,তো মিস মিহি আপনি নিজেও কিন্তু বন্দী আছেন?সেখান থেকে বেড় হওয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম বাকীটা আপনার হাতে। আমি অপেক্ষায় থাকবো রাত তিনটে অব্দি।

মিহি চিরকুটা জলে ভিজিয়ে ফেলে দিলো। ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি হচ্ছে এসব। আমি কার কথায় ভরসা করবো। আর কাকে বিশ্বাস করব?শেহরোজের কান্নার শব্দে দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে আসলো মিহি। এসে দেখে সুস্মিতা শেহরোজকে কোলে নিয়েছে। মিহির হৃদপিণ্ড কেমন কেঁপে উঠলো৷ আগে তো এমন হয়নি। শেহরোজকে তো সুস্মিতা কত আদর স্নেহ করেছে।তবে আজ কেন হচ্ছে? মিহি শেহরোজকে সুস্মিত পলের কাছ থেকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।

– কিরে তোকে এতো অস্থির কেন দেখাচ্ছে। কোন কিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস।

– না তেমন কিছু না আন্টি।আজ বাবা, মা, শাফিনের কথা খুব মনে পরছে।

-তোকে কতবার বলেছি যা ছেড়ে এসেছিস সেসব ভুলে যা।

– চাইলেই কি ভুলে যাওয়া যায়?কতশত স্মুতি জড়িয়ে আছে ওই মানুষগুলোর সাথে।

সুস্মিতা পল বের হয়ে এলেন মিহির রুম থেকে।

______________________________________________
নুহাস আয়রাকে বলছে আমাদের শাফিনকে অন্য কোথাও শিফট করা উচিৎ?

– সিঙ্গাপুরে আছে সেখানেই থাক ওইখান থেকে কোথাও নিতে হবে না। তবে আপনার প্রশংসা না করে পারছি না। কি দারুণ চাল চাললেন।

– আপনার বুদ্ধিতে সেদিন শাফিন স্যারকে আমরা গোপন করতে পেরেছি।

– আমি জানতাম ও দেশের শত্রুকে আক্রমণ করার জন্য নিজের জীবনের পরওয়া করবে না। আমি ঠিক সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি।

– আপনি যখন আড়াল থেকে গু*লি করছিলেন আমি ভিষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

– বোকা মেয়ে ঘাবড়ানো কি আছে। আমি প্রথম গু*লি*টা করি শাফিনের মাথার ঠিক কাছাকাছি। দ্বিতীয় গু*লি পায়ে, তৃতীয় গু*লি হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি। যাতে একেবারে ম*রে না যায়। ওই খানে ম*র্গ থেকে এনে একটা লা*শ রেখে শাফিনের ড্রেস পড়িয়ে তার চেহারা থে*ত*লে দিয়েছি। যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
– আমি না হলে এতো নিখুঁত ভাবে কাজটা করতে পারতেন না।

– না সেটা কষ্টকর হতো আমার জন্য। তবে মিহিকে একবার ওই লা*শ*টা দেখানো উচিৎ ছিলো।

– এসব কথা মনে করে কি লাভ। তবে আমি আশ্চর্য হয়েছি। আপনার কাজে নিজের প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সাথে এতো বড় বেইমানি।

– ভার্সিটি লাইফ থেকে ওর জন্য আমি ভালো কিছু পাইনি। প্রথমে আমার থেকে মিহিকে কেড়ে নিয়েছে। তারপর যখন এই চাকরির সুযোগ এলো তখন ও আমার উপরস্থ কর্মকর্তা আর আমি ওর সহকারী। আমি সুযোগ খুঁজে ছিলাম।ও যখন এই কেসের তদন্ত করে তখন আমি ইচ্ছে করে এমন এমন ভীতি ওর মতো সৃষ্টি করেছি। যাতে মিহির সাথে ওর সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। সব কিছুতেই দিন শেষে সাকসেস আমার হয়েছে। চাইলে মিহিকেও আমার বানাতে পারতাম।তবে মেয়েটা বড্ড বেশি বোঝে পালিয়ে চলে গেলো।

– আপনি এখনো মিহি ম্যামকে ভালোবাসেন?

– না এখন ও আমার জেদ কোন ভালোবাসা নেই। এসব কথা রাখো কাজের কাজ করো। আজ রমিজ রাজ বাসায় একা থাকবে। তার পুরো,ফ্যামেলি কোথাও বেড়াতে গেছেে।এই সুযোগ তুমি কাজে লাগাও।

– আপনি কি করে জানলেন?

– আমি তোমার মতো মাথা মোটা না। এই সামান্য সংবাদ আমি রাখবো না। এবার যাও নিজের কাজে লেগে পরো।আর হ্যা অবশ্যই ঘু*মে*র ঔ*ষ*ধ সাথে রাখবে, যদি নিজের সম্মান রক্ষা করতে চাও তো? বাকী তোমার ইচ্ছে। আর হ্যা যাওয়ার আগে এলিজাকে বলো শাফিনকে তার বাসায় নিয়ে রাখতে টাকা আমি পাঠাচ্ছি।

– অলরেডি শাফিনের পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আরো টাকা নষ্ট করা বোকামি।

– ভুলে যাচ্ছ কেনো শাফিনের জন্য যত টাকা ইনকাম হয়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ টাকাও এখনো খরচ হয়নি।

– কিন্তু সব হি*রে তো আমরা বিক্রি করতে পারিনি।

– পারিনি তার মানে এমন না পারবো না। সিঙ্গাপুর যেয়ে ডিল করবো, আরোশের সাথে। একশ কোটি টাকার ডিল।

– এতো টাকা একবারে আনতে গেলে সমস্যা হবে।

-সেটা আমি বুঝবো তুমি থার্টি পার্সেন্ট পাবে।তোমারটা তুমি বুঝে পেলেই তো হলো।

– সব বুঝলাম কিন্তু শাফিন স্যারকে বাঁচিয়ে কেন রেখেছেন?

– তোমার মোটা মাথায় সেটা ডুকবে না। যখন এই হিরের বেচাকেনার তথ্য ফাঁস হবে। তখন সবাই দেখবে শাফিনকে। তাহলো আসল অপরাধী হবে শাফিন। সিঙ্গাপুরে বাড়ি ওর নামে স্বাদে কিনি-নি। ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা আর সিঙ্গাপুরের বিলাসবহুল বাড়ি। সবার দৃষ্টিতে অপরাধী হবে শাফিন।

– এম,কে আমাদের ছেড়ে দেবে?

– সে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। কারণ আমরা সেই সুযোগ দেবো না। তবে মিহিকে আমাদের চাই। ওই চাবি না পেলে ডিল হবে চল্লিশ কোটি টাকার বাকী ষাট কোটি টাকা মিহির হাতে।

– তবে আমার মনে হয় মিহি এ বিষয়ে বেখবর।

– এতো বোকা মেয়ে মিহি না। হতে পারে সবটাও জানে।

– কোথায় খুঁজবো বাংলাদেশ আছে বলে তো আমার মনে হয়না।

– তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতেও খোঁজ লাগাও। আর এখন দ্রুত রমিজ রাজের বাসায় যাও।

______________________________________________
মিহি ইশানের দেওয়া রুলস ফলো করে পালাবে, সেই মতে সব করেও ফেলেছে বাসা থেকে বের হবে ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একজন বলে, কোথায় যাচ্ছ?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here