ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -১৮+১৯

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৮

মিহির পা’মনে হয় জমে গেলো। পরিচিত কন্ঠ শুনেও আজ কেমন গলা শুকিয়ে গেলো।শেহরোজকে শক্ত করে নিজের সাথে আগলে নিয়ে। সমানে তাকিয়ে বলে,আন্টি আজ তোমার ডাকে আমি আর ফিরবো না।

– তুই বিপদে পা বাড়াচ্ছিস মেয়ে। ওই পথ এতো সহজ না।

– এ পথের শেষে যদি মৃত্যুও থাকে তাও আমি এপথে এগোবো।নিজের হ্যাসবেন্ড খুঁজে বের করবো।

– সেটা এতো সহজ না। সহজ হলে এতোদিন থাকে বের করে ফেলতো খুঁজে। তুমি আমার মেয়ের মতো তোমাকে এক বছর আগলে রেখেছি। তোমার ক্ষতি করতে চাইছি না। তুমি ফিরে এসো নয়তো আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো।

– আমি তোমার মেয়ের মতো কিন্তু মেয়ে না। যদি মেয়ে হতাম তবে এভাবে আমাকে বন্দী করে রাখতে পারতে না।

– দেখো মেয়ে আমি একজনের আন্ডারে কাজ করি। এক বছর পূর্বে। আমার বস আমাকে কল করে বললো,একটা মেয়েকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি আজ থেকে ওই মেয়ের দেখাশোনার দ্বায়িত্ব তোমার। তুমি এখানে আসার পর তোমার প্রেগ্ন্যাসির কথা জানতে পারি।বসকেও জানাই সে শুধু বললো তোমাদের দেখে রাখতে সময় হলে সে আসবেে।

– তার মানে তুমিও ড্রা*গ*স সাপ্লাইয়ারদের একজন?

– না আমি…. আর কিছু বলার আগেই সুস্মিত পল পড়ে গেলেন। মিহি একবার তাকে ধরতে চেয়েও ধরলো না।দ্রুত বেড় হয়ে আসলো। ঈশানের জন্য অপেক্ষা করেও ঈশানের কোন দেখা মিললো না। অন্ধকার রাতে ল্যাম্পপোস্টের আধো আলোতে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে গন্তব্যহীন রাস্তায় হেটে চলেছে। দু’একটা দুর পাল্লা বাস সা সা করে চলে যাচ্ছে।

আরএকটু সামনে যেতেই সকালের সেই কাপড় বিক্রেতার মহিলার সাথে দেখা। লিরা মিহির থেকে কিছুটা দূরে আর একটু সামনে এসে বলে,তোমাকে শত্রু পক্ষ হয়তো ফলো করছে। তাই তুমি সোজা না হেঁটে একটু অলিগলি রাস্তায় ডুকে পরো। বাচ্চাটাকে আমার কাছে দাও।

– ম*রে*তে হলে এক সাথে ম*র*বো,তবুও শেহরোজ কে কারো হাতে ছাড়বো না।

তাহলে এক কাজ করে আর একটু সামনে যাও একটু পরেই সেখানে কিছু মানুষের জটলা দেখতে পাবে সেখানে মিশে যাবে। প্লান মতো বের হয়ে আসতে পারলো মিহি। ঈশান ড্রাইভ করছে। মিহির কোলে ছোট্ট শেহরোজ ঘুমিয়ে আছে। সারারাত ধরে গাড়ী ড্রাইভ করেছে ঈশান। এখন প্রায় ভোর। রাতের আধার কেটে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিনের সূর্য। মিহির ততক্ষণে চোখ লেগে এসেছে। সূর্যের আলো অনেকটা প্রখরতা ছাড়িয়েছে। ঈশান মিহিকে ডাকলো,এই যে মিস মিহি উঠে পরুন।

মিহি ঘুম থেকে চোখ খুলে, চোখ ডলে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে, আমরা বাংলাদেশে চলে এসেছি?

ঈশান, বুকে হাত দিয়ে বলে হায় ম্যা মারজাওয়া।কারো ঘুম জাড়ানো কন্ঠ এতো সুন্দর জানা ছিলো না।

মিহি গলা ঝেড়ে বলে, আপনার ফ্লাটিং করা শেষ হলে কাজের কথা বলুন।

– কি করবো বলুন, সিঙ্গেল ছেলে মানেই তো সুন্দরী মেয়ে দেখলে একটু আধটু ফ্লাটিং করা। আচ্ছা ছাড়ুন সেসব কথা। আসুন আমার সাথে।

মিহি গাড়ী থেকে বের হয়ে আসে। শেহরোজকে কোলে নিয়ে। ঈশান বলে,আপনি চাইলে,আপনার কলিজাটা আমার কাছে দিতে পারেন?

– না এখন কলিজা দিতে চাইছিনা। আমার কিছু খেতে হবে।

– জানি জানি আপনি না খেলে বাচ্চাটাও না খেয়ে থাকবে। কথা বলতে বলতে একটা কাঠের দো তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো দু’জন। আপনি ভেতরে যে ডান পাশের রুমে যান সব পেয়ে যাবেন। আর তারা যা, যা বলে ভদ্র মেয়ের মতো মেনে নিবেন।

– আপনাকে ভরসা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই সেটা ভাববেননা। নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য জীবন শেষ করে ফেলতে দু’বার ভাববো না।

– বাপরে আপনি তো সাংঘাতিক মেয়ে। আপনি সিঙ্গেল থাকলে আপনার গলায় ঝুলে পরতাম।

মিহি ভিতরে যেয়ে শেহরোজকে ফ্রেশ করে বেডে শুয়ে দিলো।

একজন মহিলা এসে মিহিকে একটা লাল খয়েরী রঙের শাড়ী আর শাখা সিঁদুর দিয়ে গেলো।

আর একজন মিহিকে বললো এখন থেকে আপনার পরিচয় মিসেস মুখার্জি। আপনার নাম ইরাবতী। এবার ঝটপট তৈরি হয়ে নিন।

মিহি তৈরি হয়ে বাহিরে আসলো,মেয়েটি তাকে মোটা ফ্রেমের চশমা পরিয়ে দিলোে।বাম পাশে ঠোঁটের নিচে একটা বড় তিল বসিয়ে দিলো। চশমা খুলে রেখে চোখে লেন্স পরিয়ে দিলো ব্লু রঙের। তারপর আবার চশমা পরিয়ে দিলো।

অপর মহিলাটি মিহিকে বললো তোমার ছেলের নাম নীলাদ্রি ডাকবে।কোন ভুল যেনো না হয় এখান থেকে বাসে করে বাংলাদেশে যাবে। সব কিছু যেন ঠিকঠাক থাকে।

মিহি শেহরোজ কে কোলে নিয়ে বাহিরে আসতেই। মিহিকে দেখে ঈশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

মিহি সামনে এসে বলে, অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিতে হয়না।

কে বললো অন্যের বউ আন অফিশিয়ালি এখন বউটা আমার। সেসব কথা রাখুন এবার ভাবছি বিয়েটা করেই ফেলবো।এই আপনার কোন বোনটোন নেই।

– না নেই। ফালতু কথা রেখে তাড়াতাড়ি চলুন।

ঈশান শেহরোজকে কোলে নিয়ে বলে,কোন ভুল যেন না হয়। দু’জনেই রওনা দিলো রহস্যের সমাধানে।

______________________________________________
ইরিকা শাফিনের দেখা শুনা করছে এক বছর যাবত। পেশায় একজন ডাক্তার ইরিকা। শাফিনের সেবা করতে করতে নিজের অজান্তেই শাফিনকে ভালোবেসে ফেলেছে। লাস্ট এক মাস ধরে শাফিনের সঠিক চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তুলছে। দীর্ঘ এক বছর পর শাফিনের মুখ দিয়ে আজকে কথা বের হয়েছে। ইরিকা মনোযোগ দিয়ে শাফিনের কথা শুনে বলে,আপনাকে সব রকম সাহায্য করবো। শাফিন ইরিকাকে বলে,আমাকে একটা মোবাইল আর সিমের ব্যবস্থা করে দিন। আর হ্যা আমি সুস্থ এটা যেন আপনি ছাড়া আর কেউ না জানতে পারে।

এরমধ্যেই এলিজা চলে আসলো। শাফিন আবার চোখ বন্ধ করে ম*রা*র মতো পরে রইলো। এলিজা এরিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো,আজ রাতেই রোগীকে শিফট করবো। তুমি কি আমার সাথে থাকবে নাকি নতুন ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট করবো?

– ম্যাম আমি থাকবো।

– গুড তাহলে রেডি থেকো। রাতের চারটা।

এলিজা কাউকে কল করলো,রিসিভ হতেই এলিজা বললো আয়রা একটা কথা বল এই লোকটাকে বাঁচিয়ে কেন রেখেছিস? কথা বলতে বলেতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আয়রা নামটা কানে আসতেই শাফিনের হৃদয়ে ঝড় বয়ে গেলো। উঠে বসে বলে, আয়রা আছে এসবের পিছনে?
এরিকা এগিয়ে এসে বলে,সাথে আরো একজন আছে। কি যেন নাম সঠিক জানিনা তবে সে ছেলে।

শাফিন নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,শাফিনের ডায়েরিতে গাদ্দারের কোন জায়গা নেই।

– এখন এতো উত্তেজিত হবেন না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন।

– আমাকে এক বছর আগের পত্রিকা সংগ্রহ করে দিতে পারবেন।বাংলাদেশি পত্রিকা।

– আমি যোগাযোগ করে জানাবো। আর রাতে আসার সময় মোবাইল আর সিম নিয়ে আসবো।

– আপনাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে মিস এরিকা।

– জ্বি বলুন আমি চেষ্টা করবো।
শাফিন এরিকার কানে মুখে কিছু বলল।

– ঠিক আছে আপনার কথা মতো কাজ হয়ে যাবে।

শাফিন চোখ বন্ধ করে বলে, আমি আসছি মিহি।আমি আসছি।

______________________________________________
আয়রা নুহাসকে বললো, আপনার কথা মতো রাতে গেলাম রমিজ রাজের বাসায়। ওই লোকের চেহারা যতটা কুৎসিত। চরিত্র তারচেয়েও কুৎসিত। এতো কিছু করেও কাজের কাজ কিছু হলো না। একটা কথাও বেড় করতে পারিনি।

– একদিনে অধৈর্য হলে হবে। ধৈর্য ধরে লেগে পরো। আমাদের এম,কে পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।

– আর উদয়ের কি করবেন।

– ও জেলে আছে থাকতে থাক। তোমার ওকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।

– যে কোন সময় জামিন নিয়ে বের হয়ে যাবে।তখন?

-এতো সহজ না। সহজ হলে এতোদিন বাইরে থাকতো জেলের।

মোর্শেদ চৌধুরী চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে, শেষ সুযোগ দিচ্ছি এরপরও কাজটা না করতে পারলে। পরিনাম কি হবে সেটা আর বলতে হবে না। নিশ্চয়ই।
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৯

দীর্ঘ জার্নির পর অবশেষে বাংলাদেশে পা রাখলো মিহি। নিজের দেশে আসতেই অন্যরকম এক প্রশান্তি ছেয়ে গেলো মিহির হৃদয়ে। আবেগে চোখের কোন ভরে উঠলো। হাতের উল্ট পিট দিয়ে চোখের জলটুকু মুছে নিলোে।শেহরোজ ঈশানের কোলে ঘুমোচ্ছে।কিছু সময় রেস্ট নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে এখন আবার ঢাকার বাসে উঠবে।

ঈশান বললো,আজকে রাতটা আমরা এখানেই থেকে যাবো। এক সাথে এতো জার্নি বাবুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

– কিন্তু এখানে কোথায় থাকবো?

– দিনদিন আপনার বুদ্ধি হাঁটুতে নেমে আসছে। কোথায় থাকবো মানে!হোটেলে থাকবো।

– আমি আপনার সাথে হোটেলে থাকবো। কিছুতেই না।

– এরজন্যই বলে মেয়েদের মাথায় গোবড় পোড়া থাকে। আরেহহ ডাবল রুম নেবো। এবার আসুন আর হ্যাঁ অন্যদের সামনে আপনি না তুমি বলবেন।

______________________________________________
সাজু বেপারির ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে,আসহায় দৃষ্টিতে সাথী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,যদি ওইদিন আমরা ফিরে না আসতাম। তাহলে আজ আমার মেয়েটা আমাদের সাথে থাকতো।

সাথী বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন,না জানি মাইয়াডা আমার কোথায় কেমন অবস্থায় আছে? আইজ একটা বছর মাইয়াডার কোন খোঁজ নাই।

রমিজ রাজ আর আয়রা পাশাপাশি বসে আছে,একটু আগেই আয়রা ভয়ংকর এক কাজ করে বসেছে। রমিজ রাজকে প্রপোজ করে বসেছে। রমিজ রাজ আয়রার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা একটু উপরে তুলে বলে,এই আধ বুড়োর মনে প্রেমের রঙ লাগানোর পিছনে রহস্য কি সুন্দরী রমনী?

আয়রার গা ঘিনঘিন করে উঠলো রমিজ রাজের স্পর্শে তবুও শান্ত থেকে বললো,আপনাকে তো আমার আগে থেকেই পছন্দ স্যার। কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি। ভালোবাসা তো আর বয়স দেখে হয়না।

– আমাকে ভালোবাসা এতো সহজ না নির্বোধ মেয়ে। (মনে মনে বলে,আমি এতোটাও বোকা-না)তা হঠাৎ করে আমাকে ভালোবাসার কারণ?

– কোন কারণ নেই।

– কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসবো তাকে তো কারণেই ভালোবাসবো।এক কাজ করো আজ আমার একটা বিগ ডিল আছে। সেটা তুমি সম্পূর্ণ করো।

আয়রার চোখমুখে খুশির ঝলক প্রকাশ পেলো। আয়রা বুঝেও অবুঝের মতো বললো,ডিল কিসের ডিল?

– অতোটা অবুঝ তুমি নও। তাই এসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে সোজা চলে যাবে পাওয়ার হাউস। মনে রেখে এসব কাজে রিস্ক আছে।যদি পুলিশ ইনফরমেশন পাও তাহলে নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দেবে।আর হ্যা মাথার রেখো ওটা কিন্তু ভিন্ন থানা। তাই নিজেকে সিক্রেট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেবে। যদি কাজটা ঠিকঠাক করতে পারো তাহলে তোমার ভালোবাসার উত্তরে ভালোবাসা। আর না হয় সেসব মরিচিকা।

______________________________________________
মিহিকে হোটেল রুমে রেখে বাহির থেকে দরজা লক করে চলে গেছে ঈশান। যাওয়ার সময় বলে গেছে আপনার একটা ভুল স্টেপ আপনার বেবির মৃ*ত্যু*র কারন হতে পারে। সেই ভয়ে মিহি চুপচাপ বসে আছে।কয়েকবার টেলিফোনের সামনে যেয়েও ফিরে এসেছে।

ঈশান হোটেল থেকে বের হয়ে চলে আসলো চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিমানে করে ঢাকা আসলো।আজ রাতের ডিলের ব্যপারে ইনফরমেশন আছে ঈশানের কাছে। মূলত এম,কে মাফিয়া সম রাজ্যাের কিং। ভারত, বাংলাদেশ সব বড় বড় চোর কারবারিতে তার হাত রয়েছে। ঈশানের কাঁধেই রয়েছে এম,কে, কে ধরার দ্বায়িত্ব। তাই সহজেই ঈশান মিহির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।রাত প্রায় ন’টা পার হয়েছে। ঈশান গার্ডের ছদ্ম বেশে আগেই পৌঁছে গেছে পাওয়ার হাউস। অপেক্ষার প্রহর গুনছে সঠিক সময়ের।

আয়রা নুহাসকে বলছে,আচ্ছা কোন ভাবে রমিজ রাজ এম,কে নয়তো?

– হতেও পারে আবার না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ একজন মাফিয়া ডন রমিজ রাজের মতো কেউ হতে পারে না।

– তাও ঠিক কথা বলেছেন, চেহারটা কেমন বিদঘুটে।

– তুমি কি ঠিক মতো কাজটা করতে পারবে?

– ভরসা নেই নাকি? এতো বড় বড় কাজ করে ফেললাম আর এটা তো সাধারণ কাজ।

– কনফিডেন্স ভালো তবে ওভার কনফিডেন্স ভালো না। বি কেয়ার ফুল। আর হ্যা সব ক’টার চেহারা ভালো করে দেখে আসবে।

আয়রা পাওয়ার হাউসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

______________________________________________
এরিকা শাফিনের সামনে বেশ কিছু পত্রিকা রেখে বলে,আপনার মৃত্যুর দিন থেকে এক মাসের পত্রিকা সংগ্রহ করতে পেরেছি। শাফিন পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে আর অবাক হচ্ছে। কত সুন্দর নির্মমভাবে একজন জীবত মানুষকে মৃত বানিয়ে দিয়েছে।আরো কিছু পত্রিকা ঘাটতেই চোখ আটকে গেলে একটা সংবাদে। মিহির নিখোঁজ সংবাদ। পত্রিকার পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। সিক্রেট অফিসার শাফিন মাহমুদের স্ত্রী দাবী করা মেয়েটি আগামীকাল রাত থেকে নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি হয়তো মাফিয়া চক্রের কেউ।

পত্রিকা বন্ধ করে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো শাফিন। মনে মনে আওড়ালো তোমার গায়ে যারা আচর কাটবে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।মূহুর্তেই শাফিনের চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠলো।

এরিকা শাফিনের সামনে এসে বলে,রিলাক্স মিস্টার মাহমুদ। এতো হাইপার হবেন না।

– শাফিন চিৎকার করে বলে, কিভাবে রিলাক্স থাকবো মিস আমাকে বলতে পারেন। যাকে সুরক্ষা করার জন্য এতো কিছু করলাম। শেষ পর্যন্ত আমার জন্য তাকে বিপদ পরতেই হলো। আপনাকে যে কাজটা করেছি সেটা করেছেন।

– হুম আমি এলিজা সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি। এলিজা ড্রা*গ*স সাপ্লাই করে। বিভিন্ন দেশের মা*দ*ক পা*চা*র চক্রের সাথে যুক্ত।

– আমার পাসপোর্ট আর যাবতীয় কাগজ সংগ্রহ করতে পেরেছেন?

– না পারিনি। তবে আজ রাতে কাজটা হয়ে যাবে।কারণ আমরা এখন এলিজার বাসায় অবস্থান করছি। তাই কাজটা করা সহজ আমাদের জন্য। তবে এলিজাকে কোন ভাবে বাসা থেকে দূরে রাখতে হবে। আর সেই কাজটা আমি করবো। আর আপনি নিজে খোঁজ করবেন আপনার পাসপোর্ট। পাসপোর্ট হাতে আসলে আমি ইমার্জেন্সি ভিসার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।এছাড়া সম্ভব না।

– ওকে আপনি শুধু এলিজাকে দূরে কোথায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুণ বাকিটা আমি দেখছি। কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে শাফিন আবার ম*রা*র মতো পরে রইলো।

এলিজা ভিতরে এসে বলে,আগামীকাল থেকে তোমার ছুটি।

– কেন?

-তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে চিনতে পারিনি।

– যদি চিনে থাকো তাহলে কেন বের করে দিচ্ছ।

– আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি একা থাকতে চাই। আর সেখানে নিজের রক্তের বোন আমার সাথে থাকবে অসম্ভব।

– মনে করো আমি তোমার কেউ না। আমি পেশায় একজন ডাক্তার। আর তোমার একজন কর্মচারী।

– একদম বাজে কথা বলবে না। তুমি চলে যাবে মানে চলে যাবে। যে দেশে বাবা, মা সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখে না খোঁজ নেয়না সেখানে চোখের সামনে নিজের বোনকে সহ্য করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা।

-আচ্ছা আমি চলে যাবো। তার আগে আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে।

– কোথায় যাবো?

– আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না শুধু তোমাকে কিছু জিনিস দেখাবে। শহরের বাহিরে যেতে হবে।

– ঠিক আছে এখনি চলো।

– তুমি অপেক্ষা করো আমি পেশেন্টকে ইনজেকশন পুশ করে আসছি।

এলিজা বের হয়ে চলে যেতেই এরিকা একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দিলো সাথে কিছু টাকা দিয়ে শাফিনকে বললো, আমাদের ফিরতে চার ঘন্টার মতো লাগবে তারমধ্যে যা করার করবে।কাজ হয়ে গেলে এই ঠিকানায় চলে যাবে। বলেই বেরিয়ে গেলো।

এলিজা সিকিউরিটি গার্ডকে বলে গেলো কেউ যেনো বাসায় না প্রবেশ করে।

______________________________________________
দিন পার হয়ে রাতের মধ্য ভাগ তবুও ঈশানের কোন খোঁজ না পেয়ে মিহি চিন্তিত হয়ে পরে। কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না। চিন্তা হচ্ছে ঈশানের জন্য ঈশান না ফিরে আসলে কি হবে মিহির।মনে মনে বলছে আমি কি আমার নতুন কোন বিপদে পরলাম। আমার কি ঈশান মুখার্জিকে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি!
এখন আমি কি করবো।এই মূহুর্তে ধৈর্য ধরা ছাড়া আর তো কোন উপায় নেই। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেনো চোখ লেগে গেছে মিহির। হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় মিহির। ফায়ার এলান বাজচ্ছে। তার মানে হোটেল আগুন লেগেছে। মিহির আত্মা শুকিয়ে গেলো।শেহরোজ কে বুকে জড়িয়ে ধরে দরজার সামনে এসে আওয়াজ করতে লাগলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here