” চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-২০+২১
,
,
,
,
পর্ব-২০,,
,
দরজা কেউ নক করতে পৌষী।ছুটে গেলো।
ম্যাজিক আই দিয়ে ওপাশে কে দাড়ীয়ে দোখতে।
পৌষী কেপে উঠলো।রেশ দাড়ীয়ে।
কন্টনিউআসলি বেল টিপেই যাচ্ছে।
মনে হয় এর প্লেন ছারলো বলে।এ লেট হচ্ছে।
ভিতরো লিজা বেগম ভাত ঘুম দিয়েছে।
কলিং বেলের এমন বিকট শব্দ।
তার উপর বারবার বাচ্ছে।
একবার ঘুম থেকে উঠে পরলে।ওকে অনেক কথা শুনতে হবে।তিনে যেসব কথা বলেন।সে গুলো মানুষের শোনার শক্তি থাকতে হয়।
থাক ওসব কথা নাইবা বললাম।
দরজা খুলে দিয়ে শান্ত দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে তাকিয়ে রেশের দিকে।যেনো।ও রেশ বলতে কাউকে চিনে না।
রেশের চোখে মুখে আনুন্দের ঝিলক
“ভিতরে আসতে পারি”
“না।বাড়ীতে আমার হাসবেন্ড নেই।বেশি দরকার থাকলে আমায় বলুন আমি বলে দিবো”
“আমি আপনার হাসবেন্ডের কাছে আসিনি।আপনার কাছে এসেছি।সে ক্ষেত্রে ভিতরে আসতে পারি”
“আমার আপনার সাথে কোনো দরকার নেই”
“আমি আমার দরকারে কথা বলছি তোর না”
“আপনি তুই তুকারি করছেন কেনো”
রেশ ভিতরে ঢুকে বলল
“তুই হয়েছিস এক পুষী ক্যট”
“কি যা তা বলছেন”
“শোন।আমি তোকে কিছু কথা বলবো।সেটা বাহিরে দাড়ীয়ে বললে।পাঁচ জন লোকে পাঁচ কথা বলবে”
রেশ পৌষীর বেড রুমে গিয়ে ঢুকে পরলো।
পৌষী দাঁত চেপে চাপা গলায় বলল.
“আপনি।বেড রুমের দিকে যাচ্ছেন কেনো।ড্রইং রুমেই বসেন।যা বলার ওখান থেকে বলে চলে যান”
“ভয় করছ”
“ভ ভ ভয়য়য়!!কিসের ভয়!”
“বাদ দে।তোকে আজ পর্যন্ত আমি কিছু বুজাতে পারলাম কৈ।যে আজ তুই বুজেস্বরী হবি”
“আপনি বেরিয়ে জান বলছি।বাড়ীতে আমার হাসবেন্ড নেই।বাড়ীর বাহিরে বললেও মানুষ পাঁচ কথা বলবে।ভিতরে বসে বললেও বলবে”
“ভয় করছে কেনো তোর।তুই তো বাড়ীতে একা না।তোর শ্বাশুড়ি আছেন”
পৌষী বিড়বিড় করে বলল।
এটাই বড় সমস্যা।তুই বুজবি না রে।
রেশ রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিলে।
পৌষী ভয়ে কাপা কাপা গলায় বলল।
“আপনি দরজা লক করলেন কেনো”
রেশ পৌষীর কাছে গিয়ে দু বাহুতে হাত রেখে বলল।
“খুব সিক্রেট একটা কথা বলবো তাই”
“জলদি বলুন।”
“আগে একটা গান শোনাই”
রেশ সাথে করে যে গিটার এনেছে ও খেয়ালই করেনি।
“এই গান শোনা বুঝি আপনার সিক্রেট কথা।তাহলে আসতে পারেন।আমি কোনো মিউজিক ডিরেক্ট নই যে আমাকে গান শুনাবেন”
“খুব বুলি ফুটেছে।না।চুপ।একটা কথাও বলবি না”
এমন ভাবে বলিস কেন তুই আমার যে নিজেকে আটকে রাখতে খুব কষ্ট হয়।
তুই তো চলে যাবি তারপর আমার কি হয় তুই জানিস।জানিস না
চোখের সামনে সেই দিনের কথা মনে পরতে।
চোখ বেয়ে জল গরিয়ে পরলো।
সেই দিন।পৌষী ফুফু বাড়ীতে বেরাতে গেছিলো।
ওর ফুফাতো বোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পরতে যাওয়াতে।ওর ফুফু বোনকে আনতে গেছিলো।
ওর ফুফা।অফিস থেকে জলদি বাড়ী ফিরে এলো।
দরজা খুলে দেওয়ার পর তিনি নিজের বেড রুমে চলে যায়।পৌষী ওর কাজিনের রুমে।
কিছুক্ষণ পর তিনি এসে হঠাৎ করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
,
সেদিনের কথা মনে পরতে শিওরে ওঠেও।
দু চোখ জল ছলছল করছে।
তবে ওর সাথে কিছুই করতে পারেনি সেদিন।
ওর ফুফার হাতে কামর দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসে।অন্য রুমে নিজেকে আটকে রাখলো।
,
রেশও কি আজ আমার সাথে এমন করবে ভাবতে।
মেঝেতে বসে পরলো। ওর সামনের ছোটো ছোটো চুল গুলো আচরে পরলো ওর চোখের উপর।
রেশওর সামনা সামনি বসে।পরলো।
গিটারে টুং টাং শব্দ করে গান ধরলো।
,
🎶🎶🎶
ভ্রমর কই ও গিয়া।
রাধা বিচ্ছেদের অনলে।
অঙ্গ যায় জ্বলিয়া।
ভ্রমর কইও গিয়া।
,
ভ্রমর রে…
কইও কইও কইওরে ভ্রমর।
রাধারে বুঝাইয়া।
মই কৃষ্ণ মইরা যাইমু।
রাধা হারা হইয়া রে।
ভ্রমর কইও গিয়া।
,
ভ্রমর কইও গিয়া।রাধা বিচ্ছেদের অনলে।
অঙ্গ যায় জ্বলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া।।।
🎶🎶🎶
গানটা শোনার পর পৌষীর কি রিয়েকশন দেওয়া উচিৎ বুজতে পারছে না।শুধু ফ্যলফ্যল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ।এই বুজি এখনি কান্না করে দিবে ও ।তখন কি হবে ভাবতেই এখনই শিহরন দিয়ে উঠলো ওর মাঝে।,,,
,
,
চলবে,,,
,
,
,
“চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-২১
,
,
রেশ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে গানটা গাইলো।মৃধূ হেসওছে।নিজের মতো করে।
গান শেষ হতে পৌষী কঠিন গলায় বলল।
“হয়োছে আপনার এবার তাহলে আসুন”
রেশ পা বিছিয়ে বসে পরলো।
“আমার কথাটাতো বলা হলো না।
“বলুন আমি শুনছি”
“আমি চলো যাচ্ছি আজই।
এই শহর থেকে দূরে।
যেখান থেকে তোকে জ্বালাতে আর আসবো না”
পৌষীর কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।তারপরও স্পষ্টস্বরে বলল
“বেস ভালো একটা সিদ্ধান্ত।অন্যের ঘরের বউকে।
না জ্বালিয়ে।নিজে একটা বিয়ে করলেতো পারেন”
ওর কথাটা রেশের সোজা বুকে গিয়ে লাগলো।কষ্ট হচ্ছে তবে বলে কোনো লাভ নোই
“আমি বিয়ে করলে তুই খুশি হবি”
“এতে খুশি না হওয়ার কি আছে”
“বড্ডো প্যচ লাগা কথা বলিশ”
পৌষী নিশ্চুপ হয়ে।শক্ত করে বসে রইলো।
কিছুখন পর বলল
“এখনও।কি বলা বাকি আছে”
“হুম।আমি একটা।কন্ট্রক সাইন করেছি।
মুভিতে একটা গান গাইবো।উফস!!
মিষ্টি আনা উচিৎ ছিলো বল।।
তুই তো খাবি না তাই কষ্ট করে আনলাম না।।
ওহহ!!হ্যা!!শোন!! ”
-” কি?”
“এখন আর লুকিয়ে লুকিয়ে গান শুনতে হবে না।
সোজা।মিউজিক প্লেয়ারে ছেড়ে শুনবি”
পৌষী চোখ ছানাবড়া হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“তুই তাহলে এবার আয়।বাড়ীতে কেউ আসলে।
কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে”
“জানি তাই তো এখন এলাম।তোর হাসবেন্ড এখন আসবে না।আর হ্যা জানিস।আমি রোমান্টিক স্যড সং গাইবো”
ওর চোখ বেয়ে জল গরিয়ে পরলো
“তাহলে যা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দে”
“শান্তি দিতেই তো এসেছি।চলেই তো যাবো শেষ বারের মতো মন ভরে তোকে দেখতে একটু দে”
,
পৌষী বলল
“এখন যা তাহলে”
“আর একটা গান শুনবি”
“না”
“তুই না বললেও আমি গাইবো।আমার তো এই গানটার উপর দিয়ে শেখতে হবে”
এবার গিটার বাজানোর কোনো শক্তি পেলো না
খোলা গলায় গাইলো।
,
🎶🎶🎶🎶
,
আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়
মনে পড়ে মোরে প্রিয়
চাঁদ হয়ে রব আকাশের গায়
বাতায়ন খুলে দিয়ো
,
সেথা জোছনার আলোর কণিকা
যেন সে তোমার প্রেমের মণিকা
,
কলংক সাথে জড়ায়ে রয়েছে
প্রেমের কলংক সাথে জড়ায়ে রয়েছে
আঁখি ভরে নীড় প্রিয়
চাঁদ হয়ে রব আকাশের গায়
বাতায়ন খুলে দিয়ো
,
ভুলি নাই প্রিয় ভুলি নাই
খুলি নাই রাঙ্গা রাখি
মুছি নাই প্রেম চন্দন লেখা
দিয়েছ যা ললাটে আঁকি
ভুলি নাই প্রিয় ভুলি নাই
,
চৈত্র দিনের অলস বেলায়
যদি গানখানি মোর
মনে পড়ে হায়
,
ঝরানো পাতার মর্মর গানে
সেই সুরভিতে শুনিও
চাঁদ হয়ে রব আকাশের গায়
বাতায়ন খুলে দিয়ো
🎶🎶🎶🎶
,
গানটা শেষ করে।চোখ থেকে জল গরিয়ে পরলো।
শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিলো।চলে জাওয়ার জন্য উঠে দারালো।নিচে ঝুকে আবার দেখে নিলো।ওকে।ফিসফিস করে বলল।
“জানি না আর কোনো দিনও কি দেখতে পাবো কিনা এই চাঁদ মুখটা”
হনহন করে হেটে গেলো।
দরজা খুলে বেরিয়ে অবাক হলো।
তুষার দারিয়ে।মাত্রই এলো মনে হয়।
,
পৌষী মেজেতে পা ধাপিয়ে কাধছে।
মেজেতে কয়েক বার হাতও বাড়ী দিয়েছে।
শুধু কান্না করছে।মনের ভিতর খুব কষ্ট হচ্ছে।
কাউকে জরিয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।
তখনই তুষার ঘরে ঢুকে পৌষীকে এলো মেলো হয়ে।কাদতে দেখে ভিষন ঘাবরে গলো।
কিছুখন নিজের মতো থাকতে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
রেশ বিস্ফারিত কন্ঠে বলল
“আপনি যেটা ভাবছেন তেমনটা কিছুই নয়।
আপনি যেমন আপনার ওয়াইফ কে রেখে গিয়ে ছিলেন।তেমনই আছে।শুধু শুধু ভুল ধারনা করে নিজেদের মধ্যের দূরত্বটা বারবেন না।আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।বাকিটা আপনার উপর।আপনার বিকৃত মস্তিষ্কের উপর”
তুষার থমেরে দাড়ীয়ে রইলো।
“এই ছেলেটা কি ওদের নিজেদের।দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে।নাকি আমি যা শুনলাম।এতোখন সব ভুল”
চোখ ঘুরিয়ে বেড রুমের ভিতর একপলক আবার তাকালো।পৌষী কান্না করতে করতে।হাপিয়ে।গিয়ে।ব্যথিত মুখে।একরাশ কালো মেঘের রেখা টেনে।মুখ ভার করে মেঝেতে বসে।এবারও কাদছে।তবে হাউমাউ করে না এতোক্ষন যেভাবে কাঁদছিলো ঠিক তেমন না।গুছিয়ে।নিঃশব্দে চোখের,জলধারা ফেলছে।গাল বেয়ে গরিয়ে সেই জল ওর শাড়ী ভিজিয়ে রং বদলে দিচ্ছে।
,
পৌষী বেলকনিতে পা বিছিয়ে দৃষ্টি বাহিরে নিঃক্ষেপ করে ভাবছে।
,
কয়েক দিন আমার কাছে কিছু ফোন কল আসছে একজন সুরেলি কন্ঠি মহিলা।আমাকে অনেক কথা বলে।তুষারের সম্পর্কে।অনেক কথার মাঝে।কয়েকটা কথা বারবার আমার কানে বাজে।
“আপনার হাজবেন্ডের আমার সঙ্গে রিলেশন আছে।
উনি আপনাতে খুশি না।
আপনি ওনাকে জোর করে ধরে রেখেছেন।
যে আপনাতে খুশি না জের করে তাকে বেধে রেখেছেন কেনো।
আমরা খুব সিগ্রহী বিয়ে করবো।
তুষার আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
আপনি ওকে কি দেতে পেরেছেন।
আমি ওকে সব দিবো।”
মহিলা শেষমেশ বলল
–” আপনি আমার কথা বিশ্বাস না করলে।আমি আপনাকে প্রমান দিতে পারি।ওর আর আমার কিছু চেটের স্ক্রিন সর্ট দিতে পারি।”
তার পরই মেয়েটা ফোন কেটে।কয়েকটা স্ক্রিন সর্ট দিলো আমায়।আমি অবাক বা কিছুই হলাম না।কারণ স্ক্রিন সর্ট গুলো একটা মেয়ে আর ছেলের ঠিকই কিন্তু এটা যে তুষার না আমি হান্ডেড পার্সেন্ড শিওর।কারন অন্য একটা নাম আছে এখানে তুষারের নাম নেই।
মহা আনুন্দ ছিলাম আমি।এর মধ্যে দেখতে পেলাম তুষার কিছু দিন যাবত আমাকে এরিয়ে চলছে।
আগেও আমাকে তেমন বিশেস করে সময় দিতো না।তাই এখন এসব গায়ে মাখি না আমি।
আজও আবার সেই নাম্বার থেকে কল এলো।
মেয়েটা রাগি গলায় বলল আমি জানো ভালোয় ভালোয় তুষারকে ছেরে দি।আর এ ও বলল।ব্যপারটা জানো হালকা ভাবে না নি।
আবারো কিছু স্ক্রিন সর্ট।পাঠালো।
সেগুলো এমন চ্যট ছিলো যা পড়ার সাথে সাথে আমার হরহর করে বমি চলে এলো।দৌড়ী বেসিনে হিয়ে কিছুখন বমি করে নিলাম!!!!!
,
,
চলবে,,,
,
,
(