চাঁদ হয়ে রবো পর্ব ১৯

“চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-১৯
ঋতু রেশের কাছে এসে বলল
“জানিস তোর জন্য না পৌষীর মতো দোখতে একটা মেয়ে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু দেখ মেয়েটার কি কপাল বলতো”
রেশের অস্সতি শুরু হয়ে গেছে।
মা কেনো বার বার পৌষী কথা বলে আমার সামনে।
ঋতু বলল
“শোনো।মেয়েটা নাকি কোনো দিনো মা হতে পারবে না।এক কথায় বন্ধা”
রেশের ভেতর দিয়ে ঝর বয়ে যাচ্ছে মুখ ফসকে বলেই ফেললো।
“কি আজগুবি।মা হতে পারবে না মানে।
কে বলেছে তোমাকে এব উদভট কথাবার্তা”
“কে আবার সয়ং লিজা বেগম।তিনি তো বললেন।
তার মেজো বৌমা কখনও মা হতে পারবেন না”
“ফালতু সব মেয়েরি কথা বার্তা।”
রেশ রাগ করে ওখান থেকে চলে গেলো।
ছেলের এমন রাগ করাতে বড় অবাক হলো ঋতু।
“পরের ঘরে ব্যপার নিয়ে তার ঘরে কেন অশান্তি বুজিনা”
,
কথায় আছে গুজব রটায় বাতাসের বেগে।
একদিন একজন মহিলা পুত্র সন্তান জন্ম দিলো।
একজন লোক বলল,”ছেলেটার গায়ের রং একটু শ্যমলা হয়েছে”
অনজন একটু বারিয় বলল,”ছেলেটার গয়ের রং কালো কুচকুচে হয়েছে”
অন্যজন বলল,” ছেলেটা।কাজলের মতো কালো।হয়েছে”
অন্য একজন আবার একটু গুছিয়ে বলল,”ছেলেটা কাকের মতো কালো হয়েছে”
এনিয়ে রটে গলো হুলোস্থরি কান্ড।কেউ কেউ তো বলছে।সেই মহিলা শয়তানের জন্ম দিয়েছে।
আবার কেউ বলল।মহিলার গর্ভে থেকে শয়তানের জন্ম নিয়েছে।
,
আসফিকা অনেক করে বুজালো।রেশকে।
তবুও বুজলো না।ওর পৌষীর জন্য টেনশন হচ্ছে।
ফোনের এপাশ থেকে বুক ভার করা এক দির্ঘস্বাস ছেরে বলল,
“আস আমাকে শান্তনা দিয়ে কাজ হবে না।
আমি সেই চকলেট পেয়ে ভুলে যাওয়া বাচ্চা ছেলেটা না।বুজিরে সব বুজি”
আসফিকা এক রাশ ব্যর্থতা মিশ্রিত কন্ঠে বলল।
“সবই যখন বুঝিস তাহলে বাচ্চাদের মতো টফি না পাওয়া নিয়ে মন খারাপ করছিস কেনো”
“তুই কথার ঘোজামিলে ফেলতে চাস আমায়।”
“না মোটেই না”
“রাখছি রে।বড্ডো কষ্টো হয়।ওর কথা শুনলে কষ্ট হয়।ওর দুঃখের কথা শুনলে।কান্না পায়।বড্ডো কষ্ট হয়রে।বড্ডো,,!”
,
রেশ একটা চেয়ারে বসে অন্যটাতে পা তুলে চোখ বন্ধ করে ভাবছে।
ছোটো বেলায় তো এমন কিছু ছিলো না।
বড় হওয়াতে এমন কেনো হলো।
,
ঋতু ছেলের রুমে এসে দেখলো ছেলে পুরো ঘেমে গেছে।
ছেলের গলায় কপালে হাত ছুয়িয়ে দেখলো।
জ্বর টর আসছে কি না।
ঋতু বেগম হালকা ধাক্কা দিতে।
রেশ লাফ দিয়ে উঠলো।
” মা তুমি এখানে”
ঋতু চিন্তিত গলায় বলল।
“হ্যরে বাপ আমার এভাবে শুয়ে আছিস কেন”
“কি রকম কথা বলছো মা”
” আরে গ্রামের একটা মুভি দেখছিলাম।তাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে”
“এই সব মুভি টুভি দেখা বন্ধ করো তোমার কি মনে হচ্ছে না।তুমি আগের মতো নেই”
“আগের মতো আবার কেমন”
“কেমন যেমন”
“বাদ দে। তর্ক করবি এখন মায়ের সাথে”
বলেই কান্না করে দিলো।
“এভাবে শুয়ে ছিলি কেন।এতো বড় বিছানাটায় কে ঘুমাবে।”
“এমনি ছুয়ে ছিলাম।শরীরটা ভালো লাগছে না”
,
ঋতু হেরে গলায় বাড়ীর কাজের লোক টাকে ডেকে বলল
“সালমার মা।আমার মোবাইলটা নিয়ে আয় তো।
রেশের বাবাকে একটা ফোন দি!”
রেশ বিরক্ত দৃষ্টি নিক্ষপ করে বলল
“বাবাকে কেনো।আমার সাথে তুমি একা পারছো না তাই নাকি।আমাকে সায়েস্তা করতে।তুমি একা যথেষ্ট না বাবাকে ও লাগবে”
ঋতু কান্না করে বলল।

“তুই আমাকে এতো বড় কথা বলতে পারলি।রে বাপ।”
“উফ তোমার বাপ বাপ কথাটা থামাবে।আমি নিতে পারছি না।দেখি।আমি শাওয়ার নিতে যাবো”
ঋতু কান্না জরিতো কন্ঠে।কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ভাব করে বলল।
“সালমার মা আমাকে আর ডাকবি না।আমি কালই বাপের বাড়ী চলে যাবো।কারো কাছে আমার দাম নেই।”
রেশ দির্ঘস্বাস ফেলে সাওয়ার অন করলো।
,
কথাট আসলে তেমন না।পৌষী এখন মা হতে পারবে না মিসক্যরেজের জন্য।
এখন মা হলে।ওর অনেক প্রবলেম হবে তাই।
ডক্টর ওকে কিছুদিন পর সাজেস্ট করেছে।
আর সকলে।না না ন কথা রটে দিলো ওর ব্যপারে।
অবস্য তাতে ওর কিছুই যায় আসে না।
লোক কথায় কান দিলো ও নিকে বেশি কষ্টো পাবে।তাই অন্য কথা ভাবা বাদ দিয়ে দিয়েছে এখন।
,
বাবা মার প্রথম সন্তান হচ্ছে,
চমৎকার একটি জীবন্ত খেলনা।
এই খেলনার সবই ভালল।
খেলনা যখন হাসে,বাব-মা হাসে।
খেলনা যখন কাঁদে বাবা-মা’র,
মুখ অন্ধকার হয়ে যায়।
এই খেলনা।তাদের বাড়ীর,
বয়স্কোদের কেও।ঘিরে সবটা থাকে।
এমনটা নয় যে শুধু ছেলে সন্তানদের
তারা ভালো পাবে।মেয়ে সন্তানদের না।
,
পৌষী ড্রইং রুমে দাড়ীয়ে এই অদভুত কথাটা ভাবছে।
,
লিজা বেগমের বড় ছেলে তানিম।এসেছে।
ওর ওয়াইফ শ্রাবণী কে নিয়ে।
লিজা বেগমের অসুস্থতার খবর শুনে।লিজা বেগম আগের থেকে এখন সুস্থ্য। অনেকট।হাটতে পারে।ডান হাত দিয়ে হালকা জিনিস তুলতে পারে।ভারি জিনিস উঠাতে পারে না।আর মুখের কথা টা হালকা তোতলিয়ে বল।
ওরাও আলাদা থাকে।তবে ওদের আলাদা হওয়ার কারন।শ্রাবণী মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
জন্মের পর নাকি লিজা বেগম কোনো দিনও ওকে কোলে তুলে নি।
শ্রাবণী এই নিয়ে বেস কষ্টে আছে।
তার মুখ দেখলেই বুঝা যায়।
,
ছোট্টো একটা দির্ঘস্বাস ফেলে বলল
তাহলে আমাকেও পুত্র সন্তান জন্ম দিতে হবে।
না হলে এবাড়ীতে থাকতে দিবে না।
একটা ছেলে সন্তান কি সব দিতে পারে।
,
ছোটো তন্নি দৌড়ে এসে লিজা বেগম কে ধরতে।
ওর হাত ছাড়ীয়ে নানান বাহানা দেখিয়ে চলে গলো।
তন্নি কোনো এক ফাকে লিজা বেগমকে জরিয়ে বলল
“দাদী আমাদের সাথে খাবে এসো”
লিজা বেগম ফট করে ওকে ছাড়ীয়ে।নিয়ে বলল
“আমাকে দাদী বলবি না”
শ্রাবণী।অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
,
বিকেলের আগে চলে গেলো ওরা।
পৌষী ওদের কে এগিয়ে দিতে নিচে গলো।
তানিম কিছুটা সামনে এগিয়ে যে তে শ্রাবণী বলল।
“ভালো থেকো বোন।”
পৌষী মাথা কাত করে বলল।হুম।
শ্রাবণী অশ্রু ভরা টলমল চোখে বলল
“বোন জানো এই নিষ্ঠুর মহিলা।আমার একটা সন্তানকে মেরে ফেলেছে।”
কিছুটা থেমে বলল।
“মিসক্যরেজ হয়ে ছিলো।জানো কিভাবে।বাথরুমে সাবান জলে পা পিচলে।দ্বিতীয় সন্তানটা যখন মেয়ে হবো শোনে।বাথরুমে সাবান দিলে।আমার বড় কোনো খতি হতে পারে।তাই এবরশন করতে চেয়েছিল।মি.তানিম জানতে পারায় আর পারলো না।”
শ্রাবণী এবার হয়তো ওকে জরিয়ে কান্না করেই দিবে।এমন অবস্থা।তবে নিজেকে সামলে নিলো।
,
পৌষীরও চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে।
আমার ও দু দুটো সন্তান মেরে ফেলেছে।
ওই মহিলা একটা খুনি।নিষ্ঠুর।মহিলা।
শ্রাবণী নিজের চোখের জল মুছে বলল।
“মি.তানিম।আর তনয়।ওনার কথার গ্রাহ্য করতো না বলে ওনার বেশ খোপ।ওদের দুই ভাইয়ের কথা তুষারের কাছে বলে বলে নিজের কার্য সিদ্ধি করতো।এখন তুষার ওনার কথায় উঠে আর বসে।
তোমার প্রতি অনেক অন্য করে।প্রতিবাদ করো”
পৌষীর সব কথা এক যায়গাতে আটকে বসে।
সেই প্রতিবাদ।কিভাবে করে সেটাও তো জানে না।
“প্রতিবাদ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে”
“সবটা না হলেও।কিছুতো একটা হবে”
“প্রতিবাদ কিভাবে করে”
“সময় সব বলে দিবে।প্রকৃতি জানান দিতে পারে।
সঠিক সময়টা তোমাকে বেছে নিতে হবে”
,
পৌষীর ফেনে একটা ফোন কল এলো।
রিসিভ করে কানে ধরতে।ওপাস থেকে কেউ একজন কিছু একটা বলাতে।
পৌষী বিছানায় ধপ করে বসে কান্না শুরু করে দিলো।ফোনটা আবার চেক করে দেখলো।
যে ফোন দিয়ে সে আদো সত্যি ফোন দিয়েছে না ওর কল্পনা।রিসিভ লিস্ট চেক করে পুরো পুরি শিওর হয়ে।বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।
কান্না করতে করতে একপ্রকার হেচকি উঠে গেছে ওর তবুও কান্না করেই চলছে।
,
,
চলবে,,,
,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here