#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-১১
কলেজ শেষে বের হতেই পুতুল সূর্যকে দেখতে পায়।গেইটের সামনা-সামনি ঠিক রাস্তার বিপরীত পাশে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন গুতাচ্ছে সূর্য। সাদা টিশার্টের উপরে স্কাই কালারের শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে রাখা তার সাথে কালো জিন্স আর পায়ে সাদা কেডস পড়ে কালো চশমা লাগিয়ে হিরো সেজে দাঁড়িয়ে আছে।পুতুল মনে মনে একটা বৃহৎ আকৃতির ভেঙচি কেটে বলল স্টুপিড কেপ্টেন আমাকে নিতে এতো হলিউডের হিরো সেজে আসার কি আছে? যত্তসব।এসব ভাবতে ভাবতে পুতুল মৃদু পায়ে হেটে সূর্যের সামনে গিয়ে দাড়ায়।পুতুল কিছু বলবে তার আগেই কেউ বলে উঠে,
-” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?”
কথাটা শুনেই পুতুল ভ্রু কুঁচকে তার পিছনে ঘুরে দেখে তিতিয়া দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।তার পিছু পিছু যে এই গাধিটা এসেছে সে তো বুঝতেই পারেনি।
তিতিয়ার কথা শুনে সূর্য সোজা হয়ে দাড়িয়ে ফোন টা পকেটে রেখে সালামের জবাব দিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে যার অর্থ সে চিনতে পারেনি।তিতিয়া বুঝতে পেরে হেসে বলল,
-” ভাইয়া, আমি তিতিয়া।পুতুলের ফ্রেন্ড।”
তিতিয়ার পরিচয় জেনে সূর্য একগাল হেসে বলল,
-” ওহ আচ্ছা, নাইচ টু মিট ইউ তিতিয়া।”
বলে আরো গল্প করতে শুরু করে দুজন।আর পুতুল তো বিস্ফোরিত চোখে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।এই ইডিয়ট টা এতো ভয়ংকর সুন্দর করে হাসতে পারে। ইসস,,,,এই বাজে কেপ্টেন টার হাসি দেখে তার এতো অস্থির লাগছে কেন? আচ্ছা কোথায় এতো ধুকপুক করছে, ওহ নো! সিনেমার নায়িকাদের মতো তারও কী হার্ট ধুকধুক করছে!তাও আবার এই থ্রেটার,ইডিয়ট কেপ্টেন টার জন্য! ভেবেই আবার সূর্যের দিকে তাকায়। উফফ,,,,সেই একইভাবে বাঁকা দাঁত বের করে প্রাণবন্ত হাসি হাসছে।নাহ,,,, এখানে আর থাকা যাবে না ভেবেই ফটাফট পা ফেলে গাড়িতে উঠে বসে পুতুল।
অনেকক্ষণ হলো গাড়ি চলছে আপন গতিতে, এটা যে বাড়ি যাবার রাস্তা নই পুতুল বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু সে কিছু বলছে না চুপচাপ বসে আছে।সূর্য কয়েক বার পুতুলের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এতো চুপচাপ বসে আছে কেন? অনেকক্ষণ হলো কিছু না বলায় সূর্যই নিরবতা ভেঙে গমগমে গলায় বলল,
-” এভাবে স্টাচু হয়ে বসে আছো কেন, কোন সমস্যা?”
সূর্যের কথা শুনে পুতুলের রাগে গা দপদপ করে জ্বলে উঠে।অন্য সবার সাথে তো কি সুন্দর হেসে কথা বলে আর আমার বেলায় লঙ্কারাজ হয়ে যায়।বেয়াদব ছেলে আমি কি তোর বিয়ে ভেঙেছি, অসভ্য কোথাকার।আমার সাথে হাংকি পাংকি? দাড়া না দাড়া কি করি দেখ শুধু।
-” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
-” অবাক ভাইয়া, আমরা কোথায় যাচ্ছি?” মিষ্টি হেসে বলল পুতুল।
পুতুলের কথায় সূর্য ফট করে ব্রেক কষে ধরে।পুতুলের দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,
-” কী বললে?”
-” বলছি আমরা কোথায় যাচ্ছি,এটা তো বাসার রাস্তা নই।”
সূর্য আরো রেগে বলল,
-” তার আগে কী বললে?”
-” অবাক ভাইয়া আপনি কী কানে কম শুনেন, আমি বলছি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি।”
সূর্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” তোমাকে ভাইয়া ডাকতে নিষেধ করেছি না!!”
পুতুল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-” ডাকলে সমস্যা কোথায়, তিতিয়াও তো আজকে আপনাকে ভাইয়া বললো কই ওকে তো নিষেধ করেন নি।”
সূর্য কিরমির করে বলল,
-” পৃথিবীর সবাই ভাইয়া বলে ডাকবে তবুও তুমি বলবে না।”
-” কেন বলবো না?”
-” আমি বলছি তাই বলবে না।”
-” নাহ,,,, আমি বলবো ।”
-” না,,,বলবে না।”
-” বলবো,বলবো,বলবো।একশো বা….ওহ গড।”
কথা শেষ হবার আগেই সূর্য ফট করে পুতুলের নাকে জোরে কামড়ে দেয়।কামড় টা বেশ জোরে লাগাই চোখে পানি চলে এসেছে পুতুলের।টলটলে চোখে নাক ধরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে পুতুল।সূর্য তার নাক ফুলিয়ে বলল,
-” আর একবার ভাইয়া বললে এর থেকেও জোরে কামড়ে দেব।”
পুতুলের ঠিক কী বলা বা করা উচিত বুঝতে পারছে না।এতো বড় একটা ছেলে কথায় না পেরে বাচ্চাদের মতো তার নাক কামড়ে দিল!! তারও কী বাচ্চাদের মতো এখন সূর্যর চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলা উচিত।না,,,, ব্যাপার টা খারাপ হবে না।প্রতিশোধ নেয়ার একটা পারফেক্ট উপায় ভেবেই সূর্যের দিকে তাকায় পুতুল। অসভ্য টা নাক ফুলিয়ে ড্রাইভ করছে, নাহ এখন কিছু করলে যদি আবার কামড়ে দেয় ভেবেই চুপচাপ নিজের নাক ডলে বসে থাকে পুতুল।
শহর থেকে বেশ দূরে রাস্তার পাশে একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামায় সূর্য।গাড়ি থেকে নেমে পুতুলকে নামার ইশারা করে হাঁটা ধরে।আগত্য পুতুলও নেমে তার পিছু পিছু যায়।’সঙ্গসুখ’ হোটেলের নাম দেখে একটু ভ্রু কুঁচকে ফেলে পুতুল।বসার সাথে সাথেই একটা ছেলে এসে হেসে বলল,
-” সূর্য ভাই কেমন আছেন?এবার তো অনেক দিন পরে এলেন।”
-“হুম ভালো আছি, তোদের কী খবর?”
-” জি ভাই ভালো আছি, বাকি সকলে কই ভাই? ”
-” ওরা সবাই আছে পরে আসবে, এখন যা তো ফটাফট খাবার গুলো নিয়ে আয় চরম খিদে পেয়েছে।”
-“আচ্ছা ভাই।”
বলে কিছুদূর যেতেই সূর্য চেচিয়ে বলল,
-” ফিরোজ তোর এই আপা মনির ভর্তাই অল্প ঝাল দিস।”
-” ঠিক আছে ভাই।”
এতক্ষণ পুতুল হোটেলের ভেতরটা ভালো করে দেখছিল।ছোট ছোট টেবিলের দুই পাশে দুজন বসার উপযোগী বেঞ্চ দিয়ে খুব পরিপাটি করে সাজানো হোটেলটা। জায়গা টা বেশ নিরিবিলি খুব বেশি কাস্টমার নাই।তাদের একটা টেবিল পরে তিনজন মধ্যবয়স্ক লোক বসেছে। আর ডান সাইডে দুইটা টেবিল পরে আট নয়জন ছেলেমেয়ে দুটো টেবিল এক করে চেচামেচি করে খাবার খাচ্ছে।
খাবার আসতেই সূর্য পুতুলকে খেতে বলে নিজে ফটাফট খেতে শুরু করে।ধোঁয়া ওঠা ভাতের সাথে বারো তেরো রকমের বিভিন্ন ধরনের ভর্তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে পুতুল। আলু ভর্তা ছাড়া কোনোটাই চিনতে পারে নি পুতুল।সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে সে বেশ মজা নিয়ে খাচ্ছে।একবার ভাবলো সূর্যকে ভর্তা গুলোর নাম জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু পরক্ষনেই কামড়ের কথা মনে পড়ে কিছু বললো না, সে যতখন না প্রতিশোধ নিতে পারবে একটুও কথা বলবে না সূর্যের সাথে।
পুতুলের কোনো সাড়া না পেয়ে একবার মাথা তুলে তাকালো সূর্য।সে চিংড়ি ভর্তা দিয়ে একটু একটু করে মুখে দিচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে গরম ভাত খেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।কামড় দেওয়ায় ফর্সা নাকে লাল হয়ে হালকা রক্ত জমে গেছে।সূর্যের এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে, এতো জোরে কামড় দেয়ার কি ছিল একটু আস্তে দিলেই তো পারতো।সূর্য ফিরোজ কে ডেকে একটা হাত পাখা নিয়ে পুতুলের প্লেটে হাওয়া দিয়ে ভাতটা একটু ঠান্ডা করে দেয়।কিন্তু পুতুল একটুও কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয়।সূর্য বেশ বুঝতে পেরেছে পুতুল তার উপর রেগে আছে, এখন সে মোটেও তার সাথে কথা বলবে না। তাই সূর্য আর না ঘেটে চুপচাপ খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষে পুতুলকে নিয়ে বেরিয়ে যায় সূর্য।গাড়িতে সূর্য অনেক কথা বললেও পুতুল মুখে সুপার গ্লু দিয়ে বসে ছিল।স্কুল থেকে ছন্দকে নিয়ে বাড়িতে রওনা দেয় সূর্য।সারাপথ দুই ভাই-বোন গল্পের ঝুলি নিয়ে বসলেও পুতুল ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ করে সূর্যর থেকে প্রতিশোধ নেয়ার প্ল্যান করে। বাসার সামনে গাড়ি থামতেই ছন্দ গাড়ি থেকে নেমে লাফাতে লাফাতে ভেতরে যায়।সূর্য পুতুলকে ডাকার আগেই পুতুল ফট করে সূর্যর হাতে ভীষণ জোরে কামড় দিয়ে পট করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজাতে উঁকি দিয়ে বলল,
-” টিট ফর ট্যাট অবাক ভাইয়া।”
বলেই ভো দৌড় দেয় পুতুল।সূর্যের ঠিক কী রিয়াক্ট করা উচিত বুঝতে না পেরে একবার নিজের হাতের দিকে আরেক বার পুতুলের দৌড়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠে।
সূর্যর ভয়ে আজ সবার আগে ডিনার করে রুমে দরজা বন্ধ করে পড়তে বসেছে পুতুল।ডিনারে পুতুলকে না দেখে মি. মাহবুব মিসেস মধুমিতাকে জিজ্ঞেস করেন,
-” পুতুল কোথায়?”
-” ওর নাকি খুব ক্ষুধা পেয়েছিল তাই আগেই খেয়ে নিয়েছে।”
মায়ের কথায় সূর্য মুচকি হেসে বা হাতে কামড়ের দাগটা দেখে নেয়।
দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে পুতুল কান উঁচু করে বোঝার চেষ্টা করছে সূর্য এসেছে কিনা।ছন্দর গলা পেয়ে উঠে দরজা খুলে দেয় পুতুল।ছন্দ একটা ফোন হাতে হাসিমুখে গটাগট রুমে ঢুকে।বিছানায় বই দেখে ছন্দ অবাক হয়ে বলল,
-” এই আপু তোমার বেডের এই অবস্থা কেন?”
পুতুল বোকা হাসি দিয়ে ফটাফট বইগুলো এক জায়গা করে বসার জায়গা করে বলল,
-” আরে এমনিতেই একটু দেখছিলাম, তুমি বসো তো।”
ছন্দ বিছানায় বসে পুতুলকে টেনে বসিয়ে বলল,
-” আপু এই ভিডিও টা ভীষণ ফানি একা একা দেখে মজা পাচ্ছিলাম না তাই তোমার সাথে দেখবো বলে নিয়ে এসেছি।”
পুতুল আর ছন্দ হেসে গড়াগড়ি খেয়ে প্রত্যয় হিরণের ‘একটি জুতা কাহিনী’ ভিডিও টা দেখছিল ঠিক সেই সময় সূর্য ব্যস্ত ভঙ্গিতে পুতুলের রুমে ঢুকে বলল,
-” টুকটুকি মা তোকে ডাকছে, জলদি নিচে যা।”
সূর্যের কথা শুনে তার দিকে তাকাতেই পুতুলের প্রাণপাখী ফুসস।কী করবে ভেবে একবার ওয়াশরুম আরেক বার দরজার দিকে তাকায়।পুতুল কোনদিকে না তাকিয়ে পট করে উঠে ভো দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।ঘটনার আকস্মিকতায় দুই ভাই-বোন কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে কি হলো দেখার জন্য তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
চলবে
ভীষণ ব্যস্ত আমি, রোজার সময় এমনিতেই বেশি ব্যস্ত সময় কাটে।তাই মনযোগ দিয়ে লিখতে পারিনি।তার উপর কর্তা হুমকি দিয়েছেন, এন্ড্রয়েড ফোন নিয়ে ড্রয়ারের রাখা বাটন ফোন হাতে ধরিয়ে দেবেন।তাই ভদ্র বউ হয়ে ফোন থেকে দূরে দূরে ঘুরঘুর করি🙈🙈।
I am feeling bad for orko…
I am feeling bad for orko… He is a good soul.