ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৩৬

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৩৬

পুতুলকে ফেলে বেরিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই আবারও হনহনিয়ে বেলকনিতে এসে পুতুলের হাত ধরে রুমে নিয়ে আসে অর্ক।পুতুলের ফোন আর ব্যাগপত্র গোছাতে গোছাতে বলল,
-” তুই আমাকে সারাজীবন ভালো না বাসলেও চলবে পুতুল।কিন্তু চোখে অন্যের ভালবাসা না পাবার যন্ত্রণা নিয়ে আমার সাথে থাকবি সেটা আমি কোনদিন মেনে নেবো না।
-আমার তোকে ভালবাসার জন্য তোর বা তোর ভালবাসার কিছুর দরকার নেই পুতুল, কিচ্ছু না।”
বলে পুতুলের ব্যাগ-ফোন নিয়ে পুতুলের হাত ধরে টানতে টানতে সবার সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় অর্ক।পিছন থেকে মা,খালামনি কারো ডাকের পরোয়া না করে পুতুলকে নিয়ে বেরিয়ে যায় অর্ক।

রাত এগারোটা নাগাদ অর্ক শেখ হাসিনা হল এর সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পুতুলকেও টেনে বের করে।পুতুলকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অর্ক টেনে গেইটের সামনে দাড় করিয়ে বলল,
-”ভেতরে যা।”
পুতুলকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অর্ক চেচিয়ে বলল,
-” ভেতরে যা পুতুল।”
অর্কর চিৎকার শুনে দারোয়ান মামা গেইট খুলে এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন।অর্ক দারোয়ান কে দেখে স্বাভাবিক গলায় বলল,
-” সরি মামা।”
বলেই আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে।পুতুল একপলক গাড়ির দিকে তাকিয়ে গেইটের দিকে পা বাড়ায়।সে জানে, সে ভেতরে না যাওয়া পর্যন্ত অর্ক গাড়িতে বসে থাকবে।দারোয়ান মামা একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে গেইট টা বন্ধ করে নিজের স্থানে চলে যায়।

শেখ হাসিনা হল এর ৩১১ নাম্বার টু সিটেড রুমে কম্বল-টম্বল চাপিয়ে স্ক্রিনে নিউজ ফিড স্ক্রোল করছিল তিতিয়া।হঠাৎ দরজার ঠকঠক শব্দে চরম বিরক্তি নিয়ে সময় টা দেখে নেয়।সিনিয়রদের গুটিকয়েক শক্ত গালি দিতে দিতে কম্বল ছেড়ে উঠে দাড়ায় তিতিয়া।দরজা খুলে পুতুলকে দেখে হতবাক হয়ে যায় তিতিয়া।এই শীতের ভেতর এরকম পাতলা শাড়ী পড়ে চোখ-মুখ ফুলিয়ে পুতুলকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত টেনে ধরে ভেতরে নিয়ে আসে পুতুলকে।বিছানায় বসিয়ে নিজের গরম কম্বল টাই গায়ে চাপাতে চাপাতে বলল,
-” এরকম পাগলামি কেন করিস তোরা বলবি? তোদের মাঝে পড়ে আমার জীবন ডা চানাচুর হয়ে যাচ্ছে। উফফ,,,, তোদেরকে বোঝানোর ক্ষমতা কেন যে আল্লাহ আমাকে দিলেন না?”
পুতুল কিছু না বলে চুপচাপ বিছানার পাশে জানালা ঘেঁষে বসে জানালা টা খুলে দেয়।
-“এই,এই এতো ঠান্ডায় জানলা খুলিস না।বন্ধ কর বলছি, বন্ধ কর।”
-” বন্ধ করিস না,আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। খোলা থাক।”
পুতুলের কথায় তিতিয়া ফোঁত করে একটা নিশ্বাস ফেলে চুপচাপ নিজের বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে।

____________

রাত তিনটা নাগাদ মি. মাহবুব ও মিসেস মধুমিতা বাড়িতে এসে পৌঁছান।দেড়টা নাগাদ অর্ক বাসায় ফিরলে তারা বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন। ছন্দ ঘুমিয়ে যাওয়ায় মিসেস প্রীতি তাকে রেখে দিয়েছেন।মেইন ডোর পেরিয়ে লিভিং রুমে আসতেই রান্নাঘর থেকে খুটখাট আওয়াজ পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যান মিসেস মধুমিতা।স্ত্রীকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে নিজেও এগিয়ে যান, তাছাড়া একটু পানি তৃষ্ণার উপস্থিতিও টের পাচ্ছেন মি. মাহবুব।

ব্যান্ডেজে মোড়ানো ডান হাত দিয়ে কোনরকম ওভেনের ঢাকনাটা ধরে বাম হাত দিয়ে কিছু একটা বের করার চেষ্টা করছে সূর্য।মিসেস মধুমিতা এগিয়ে এসে নিজেই ওভেন থেকে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর মাংস ভোনার প্লেট টা বের করে টেবিলে এনে দিলেন।মি. মাহবুব সূর্যর দিকে একপলক তাকিয়ে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন।সূর্য মায়ের পিছু পিছু এসে চেয়ারে বসে পড়ে।মিসেস মধুমিতা ছেলের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন।দীর্ঘ দেড় মাস পরে ছেলের মুখটা দেখছেন।এই চারটা বছরে তার বলিষ্ঠ, সুঠাম দেহী ছেলেটা অনেকটা শুকিয়ে গেছে।হাসিতে মাধুর্য থাকলেও চোখে লেগে থাকে একরাশ অভিমানের ছায়া।
সূর্য এক পশলা হাসি দিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” মা, তোমার পুত্রবধূর বিয়ে খেতে গেছিলে শুনলাম।”
মিসেস মধুমিতা সূর্যের কথা শুনে ফট করে সূর্যর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।থাপ্পড় খেয়ে সূর্য একবার গালে হাত বুলিয়ে আবারও একটা হাসি উপহার দিলো।ব্যাপারটা এমন মনে হচ্ছে এই থাপ্পড় খাওয়াটা তার কাছে দুধভাত টাইপ।
-” মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে কী সুখ পাচ্ছিস অবাক? ”
-” তোমার পুত্রবধূকে আমি কখন কষ্ট দিলাম? তাকে ভালবেসে তো আমি নিবেদিত প্রাণ মা।”
-” মেয়ে টা তোকে ভালবেসে কষ্ট পাচ্ছে অবাক।”
-” তোমার পুত্রবধূ শর্তহীন ভালবাসলে এতো কষ্ট পেতে হতো না মা।তুমি কী আমাকে খাইয়ে দেবে নাকি আমিই খেয়ে নেবো?”
-” না দেবো না।”
রেগে কথাটা বলেই হনহন করে বেসিনের দিকে এগিয়ে যান।সূর্য ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিসেস মধুমিতা হাত ধুয়ে এসে খাবার প্লেট টা নিয়ে চুপচাপ ছেলেকে খাওয়াতে শুরু করেন।

_____________

সকাল আটটা বেজে গেলেও চারপাশে ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশায় অন্ধকার ভোরের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।আর সেই ধোঁয়ার মতো কুয়াশা মোড়ানো সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল এর সামনে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে সূর্য।পায়ে সাদা কেডস, ধুসর গেবাডিং এর সাথে গায়ে কালো হুডি চাপিয়ে ফোন হাতে লাগাতার পুতুলকে কল করছে সূর্য। ফোন না রিসিভ হওয়ায় একটা মেসেজ দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। আশেপাশের চিকন রাস্তায় কিছু স্বাস্থ্য সচেতন ছাত্র-ছাত্রী কে দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ কাগজ-পত্র নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে পরীক্ষা দিতে ছুটছে।সূর্য আশেপাশে একপলক তাকিয়ে আবারও একটা মেসেজ সেন্ড করে।

” পাঁচ মিনিটে নিচে না নামলে আমি উপরে উঠে আসবো পুতুল।জাস্ট পাঁচ মিনিট।”

এতক্ষণ সূর্যর কল,মেসেজ সবই দেখেছিল পুতুল।কিন্তু এবারের মেসেজ টা দেখে কম্বল-টম্বল ফেলে উঠে পড়ে পুতুল।কোনরকম স্লিপার টা চাপিয়ে চটপট পায়ে হাঁটা শুরু করে।
পুতুলকে এলোমেলো হয়ে ছুটে নিচে নামতে দেখে অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে ফোঁত করে নিশ্বাস ফেলে।কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের ক্রেজি গার্ল প্রিয়ন্তিকা জামান সম্পর্কে তিন বছরে মোটামুটি সকলেই জানে।তিনবছরে কয়েকশো দফায় তাকে রাস্তার যেখানে সেখানে বসে কাঁদতে দেখা গেছে।অবশ্য এমনিতে কাঁদে না তার বয়ফ্রেন্ডের আবির্ভাব হলেই তার ক্রেজি মুর্তিরও আবির্ভাব ঘটে।অবশ্য ছেলেটা তার বয়ফ্রেন্ড না হাসবেন্ড তা নিয়ে অনেকেরই মতবিরোধ রয়েছে।

পুতুল গেইট থেকে বেরিয়ে সূর্যর সামনে দাড়াতেই সূর্য সোজা হয়ে দাড়ায়।একনজরে পুতুলকে স্ক্যান করে বলল,
-” বাসর ঘর থেকে উঠে আসলে নাকি?”
বলে শাড়ির আঁচল টা টেনে ভালো করে কাঁধে তুলে দেয় সূর্য।তারপর কপালের টিপটা ঠিক করে দিতে গেলেই পুতুল সূর্যর হাত টা ঝট করে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো।

চলবে

এখন থেকে গল্পটা রাতে দেওয়া হবে।হ্যাপি রিডিং 😉

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here