#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ১৫]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
তিশা ধ্রুবর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — কিছুই হবে না আপনি এই ভাবে কান্না করবেন না প্লিজ আমার খুব খারাপ লাগছে। আপনি শান্ত হোন প্লিজ।
এমন সময় ধ্রুবর ফোন বেজে উঠে। ধ্রুব ফোন বের করে দেখে অচেনা নাম্বার। ধ্রুব আর দেরি না করে ফোন রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই ফোনের উপাস থেকে বলল — হ্যালো আমি নিহান চৌধুরী বলছি।
— কি জন্য ফোন দিয়েছেন আপনি?
— একটা গুড নিউজ দিতে।
— কিসের গুড নিউজ?
— আগামীকাল আমাদের ক্যাচটা আদালতে তোলা হবে৷ আর জিতব তো আমিই।
ধ্রুব চুপচাপ নিহানের কথা শুনেই যাচ্ছে। কারণ ধ্রুব নিহানকে কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে। তাই সে আর কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দিলো।
তিশা বলল — কে ফোন দিয়েছে?
— নিহান ফোন দিছে। বলল আগামীকাল নাকি ক্যাচ আদালতে তোলা হবে। তিশা আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। যা করার আজকে রাতেই করতে হবে।
ধ্রুব এই কথা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে জয় আর সিয়াম কে কল দিয়ে বলল ক্লাবে আসতে। ধ্রুব তিশাকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো ক্লাবের উদ্দেশ্যে। ক্লাবে গিয়ে ধ্রুব সিমার আর জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওঁরা চলে আসে। ওরা এসে দেখে ধ্রুব মন খারাপ করে বসে আছে। দুজনেই বুঝতে পারে কিছু একটা হইছে কারণ ধ্রুবকে সচারাচর এমন দেখা যায়না৷
জয় ধ্রুব কাছে গিয়ে বলল — কিরে কি হইছে তোর? তোকে খুব চিন্তিত লাগছে? কিছু হয়েছে নাকি?
ধ্রুব সিয়াম আর জয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। ধ্রুব এমন অবস্থা দেখে দু’জনেই অবাক হয়ে যায়৷
সিয়াম বলল — কিরে কি হইছে তোর? বাচ্চাদের মতো করছিস কেন? কারো কি কোনো সমস্যা হইছে নাকি বাসায়?
— ভাই তোদের আমার পাশে খুব প্রয়োজন।
এবার ধ্রুব সব ঘটনা খুলে বলল ওদের। সবাই তো অবাক হয়ে গেলো।
সিয়াম বলল — আমাদের কি করতে হবে সেটা বল। আমরা তোর জন্য সব কিছুই করতে পারি।
তারপর ধ্রুব আর ওঁরা দুই জন মিলে বের হয়ে গেলো ক্লাব থেকে। আর যেতে যেতে ধ্রুব ওদের বলল — আমরা আগে দেখবো এই নিহান কি আসল নিহান কিনা।
জয় বলল — আগে আমাদের নিহানের বাসায় যেতে হবে তার জন্য। নিহানের মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে আমদের।
— হুম সেটাই ভালো হবে।
তারপর তিন জন মিলে নিহানের বাসায় চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে নিহানের বাসার সামনে চলে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই নিহানের মা এসে দরজা খুলে বলল — কারা তোমারা বাবা?
ধ্রুব বলল — আন্টি আপনি আমাদের চিনবেন না। আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো আমরা কি ভিতরে আসতে পারি?
— হুম আসো ভিতরে।
তারপর সবাই ভিতরে গিয়ে বসলো।
নিহানের মা জিজ্ঞেস করলো — কি কথা আছে বাবা?
— আন্টি নিহান নাকি ফিরে এসেছে?
— হুম।
— যে ফিরে এসেছে সে কি সত্যিই আপনার ছেলে নিহান নাকি?
— হুম বাবা আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের ছেলেনা পরে শিউর হলাম ওইই আমাদের নিহান৷
— ওহ।
— বাবা তোমাদের পরিচয় তো দিলেনা।
— আন্টি আমি ধ্রুব। এইটুকু জানলেই চলবে। এখন আশি ভালো থাকবেন।
এই কথা বলে সবাই বেরিয়ে চলে গেলো। আবার সবাই চলে গেলো ক্লাবে। এবার কি করবে বুঝতে পারছেনা তারা। নিহান মাথা নিচু করে বসে আছে। জয় বলল — দেখ চিন্তা করিস না। আদালতে মামলা উঠলে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। এখানে তো তিশার ও একটা অধিকার আছে সে কোন হাসবেন্ড এর সাথে থাকবে। তিশা তোর পাশে থাকলে আত ভয় কিসের?
— আমার কিছুই ভালো লাগছেনা আমি বাসায় চলে যাচ্ছি কাল সকালে আসিস ফোন দেবো তোদের।
এই কথা বলে ধ্রুব বেরিয়ে চলে গেলো। হেটে হেটে বাসায় রওনা দিলো। হঠাৎ করেই ধ্রুবর ফোন বেজে উঠলো। ফোন পকেট থেকে বের করে দেখে নিহান ফোন দিয়েছে। ধ্রুব ঠান্ডা মাথায় ফোন রিসিভ করলো।
আ
ধ্রুব — হ্যালো! কিছু বলবেন আপনি?
— আপনি নাকি আমার বাসায় এসে আমার খোঁজ নিয়েছে?
— হুম।
— আপনি যাই করুন কোনো লাভ হবেনা। তিশা আমার ছিলো আমারি হবে। বাকিটা কাল আদালতে দেখবেন। বায়।
এই কথা বলে নিহান ফোন রেখে দিলো। ধ্রুব সে তার নিজের বাসায় চলে গেলো। ধ্রুব গিয়ে খাটের এক কোণে বসে রইলো মন খারাপ করে। তিশা ধ্রুবর কাছে এসে বলল — কি হয়েছে কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?
— নিহান দের বাসায়।
— কেন গিয়েছিলেন?
— দেখতে ওটা আসল নিহান কিনা। কিন্তু ও আসল নিহান। কি হবে আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা তিশা। আমি তোমাকে হারাতে পারবোনা। তুমি না থাকলে আমি মরেই যাবো তিশা।
তিশা ধ্রুব মুখ আঁটকে দিয়ে বলল — এসব কি বলছেন পাগলের মতো? আমি আপনাকে ছেড়ে কারোর কাছেই যাবোনা।
সারারাত কি পার হয়ে গেলো। সকালে সবাই মিলে নাস্তা করে বের হয়ে চলে গেলো কোডের দিকে। সকাল ১০ টায় শুরু করা হলো। সব কিছুই ধ্রুবর বিপক্ষে চলে গেলো। আদালত রায় দিয়ে দিলো নিহানের পক্ষে। কারণ নিহান তিশার প্রথম স্বামী। আর তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়নি। তাই ধ্রুবর সাথে তিশার বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে দেয় আদালত। আর তিশার উপরে সব অধিকার নিহান কে দিয়ে দেওয়া হয়ে। আদালতের রায় দেখে নিহান অনেক খুশি হয়ে যায়। আর ধ্রুব লাফ দিয়ে তিশার কাছে চলে যায়। আর ধ্রুব গিয়ে তিশার হাত ধরে বলে — তিশা আমি তোমাকে কারোর হতে দেবোনা। আমি এই রায় মানিনা।
নিহান তিশার সামনে এসে ধ্রুব দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ধ্রুব হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল — তিশার গায়ে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই। আমি তিশাকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
— নিহান আমি তিশাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। ওকে তুমি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও ভাই প্লিজ। তিশা তুমি আমাকে রেখে এই ভাবে চলে যেতে পারো না।
ধ্রুব অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি চলে আসলো। মানুষ কাওকে কতোটা ভালোবাসলে এমন পাগলামি করতে পারে?
নিহান ধ্রুবকে নিয়ে যাচ্ছে তখন দৌড়ে গিয়ে আবার তিশার হাত ধরে ফেললো।
— তিশা প্লিজ যেওনা। তিশা তুমি চুপচাপ হয়ে আছো কেন? তুমি না বলছিলে আমাকে একা করে তুমি চলে যাবে না। তাহলে কেন এখন আমাকে একা করে অন্য কারোর সাথে চলে যাচ্ছো। তাহলে কি আমার সাথে সব তোমার অভিনয় ছিল? তিশা কিছু বলো প্লিজ।
এই দিকে তিশা নিশ্চুপ হয়ে চোখের পানি ফেলছে। আর ধ্রুবর দিকেই তাকিয়ে আছে। আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
এবার ধ্রুব তিশার হাত আবার ধরলে নিহান ধ্রুব হাত ধরে নিহানের নাকে একটা ঘুষি মেরে দেয়। আর নিহান ঘুষির টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরের উপরে এসে পড়ে। ধ্রুবর নাক থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এটা দেখে ধ্রুবর বাবা আর জয় সিয়াম এগিয়ে আসে। মিজান সাহেব তার ছেলেকে ধরে ফেলে আর জয় সিয়াম নিহানের দিকে রাগি ভাবে এগুতে থাকে তখন ধ্রুব ওদের থামিয়ে দেয়।
এবার ধ্রুব তিশার সামনে গিয়ে বলল — তিশা আমি
🌺”জানি তুমি ফিরবে”🌺
ঠিকি ফিরবে। চলে যাও তুমি আমার কোনো কষ্ট হচ্ছেনা। বাবা মা চলো বাসায় চলে যাই। ভালো থেকো তিশা।
এই কথা শুনে নিহান তিশাকে নিয়ে যেতে থাকে। আর ধ্রুবকে নিয়ে মিজান সাহেব আর ধ্রুবর বন্ধুরা চলে যেতে থাকে। ধ্রুব সবার থেকে ছুটে আবার তিশার কাছে এসে বলে — তিশা একটি বার কথা বলো প্লিজ। আমার সাথে কেনো এমন অন্যায় হলো? কি দোষ ছিলো আমার? আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা তিশা। আমাকে রেখে যেওনা তিশা। এবার নিহান তিশাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। আর সবাই ধ্রুবকে ধরে রাখে। আর সবাই মিলে ধ্রুবকে বাসায় নিয়ে চলে যায়।
চলবে?