#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৬।
ঝলমলে রাত। মৃদুমন্দ হাওয়ায়। ঝিলমিল মরিচ বাতি। হালকা সোনালী আলোয়… শেখ বাড়িটি তাকিয়ে আছে মার্জানের দিকে। যেন অধির আগ্রহ নিয়ে বলছে,
” মার্জান এসো, তোমার বাড়ি তোমার অপেক্ষায়।”
মার্জান গ্রীষ্মের বুকে এখনো মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। গ্রীষ্ম এবার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
“মার্জান তুমি কাঁদছো কেন? সারপ্রাইজ পছন্দ হয়নি।”
মার্জান ম্লান মুখে বাড়িটির দিকে চাইলো, আহত কন্ঠে বলে উঠলো,
” আপনি এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? এখানের মানুষদের সাথে আমার সম্পর্ক কবেই ছিন্ন হয়ে গেছে।”
গ্রীষ্ম ব্রু কুটি কুঁচকে ফেলল,
“এ বাড়িতে কোনো মানুষ নেই মার্জান।”
মার্জান চকিতে তাকালো, গ্রীষ্মের চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
“বাড়িতে মানুষ নেই মানে?”
গ্রীষ্ম হাসি মুখে মার্জানের দু’বাহু ধরে বলে উঠলো,
“কারণ এটা তোমার বাড়ি, তোমার আর মৃণালের।”
মার্জান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো গ্রীষ্মের দিকে। গ্রীষ্ম বুঝতে পেরে আবার বলল,
“অবাক হচ্ছো কেন? আমি সত্যি বলছি।”
মার্জান বলল,
“কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? ”
গ্রীষ্ম হাসলো। মার্জানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মার্জান অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে হাত এগিয়ে দিতেই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো গ্রীষ্ম। চতুর্দিকের সাজানো গোছানো সব কিছু। ঠিক আগের মতোই আছে, যেমনটি মার্জান লাষ্ট দেখে গেছিলো।
মার্জান আবারো প্রশ্ন করলো,
“কিভাবে সম্ভব? ”
গ্রীষ্ম মার্জানের হাতে হাত রেখে বলল,
“কেনো নয় সম্ভব? তুমি আমার গার্ল ফ্রেন্ড, আর আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে অবশ্যই ছোট খাট কিছু দিতে পারতাম না!”
মার্জানের চোখের কোনে আবারো জমাট বাঁধছে জল।গ্রীষ্ম মার্জানের মুখটা দু’হাতে তালুতে ভরে নিলো,
” মার্জান নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে শেখো। আমার অন্য কোনো ইনটেনশন ছিলো না। আমি গোপনে খবর পেয়েছিলাম, তোমার পরিবারের সদস্য বাড়িটি বিক্রি করে দিচ্ছে। তুমি খুশি হবে ভেবেই কিনে ফেলেছি।”
মার্জান আরো এক দফা অবাকের শির্শীর্ষে। কিন্তু এবার যেন ঝটকা খেলো মার্জান,
“আজ থেকে তুমি এ বাড়ি মালিক।”
এবার ঝড়ে পড়লো জমাইতো অশ্রু। গ্রীষ্মকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“এটা আমি নিতো পারবো না, মি: গ্রীষ্ম।”
মার্জানের ভিতরে এ মুহূর্তে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। একদিকে মনের বিভীষিকা বলে চলছে,
“মার্জান তুই একটি বাড়ির জন্য নিজেকে বিকি দিস না।”
তো অন্যদিকে মস্তিষ্ক চিৎকার করে বলছে,
“খারাপ কি মার্জান? তুই তো এই জন্যই এসেছিলি?”
কিন্তু বেচারা মার্জান ভাবনার তলে ডুবে চলে। গ্রীষ্ম এবার ওঁর কাঁধে হাত রাখে,
“মার্জান, এই বাড়ি আগেও তোমার ছিলো, এখনো তোমার আছে, পার্থক্য শুধু সময়ের। আমি বলবো না, তুমি এখনি বাড়িটি গ্রহন করো। বাড়িটি তোমার ছিলো, থাকবে, আছে।”
মার্জান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো গ্রীষ্মের দিকে। লোকটি বুঝি তাকে সত্যি ভালোবাসে? নাকি সবার মতো কোনো মতলব এঁটে আছে?
———
দিনটি আজ মরা মরা। আকাশে গোলাকার সূর্যের আজ তেজ নেই। মেঘলা দিনের মতো আকাশের বুকে ঘিরা নরম তুলতুলে মেঘমালা। এমন দিনের শুটিং স্পটে সায়নের মেজাজ আজ ফুরফুরে। ওদের অফিসিয়ালী ড্রামাটি আজ মুক্ত পাবে টিভির বিখ্যাত একটি চ্যানালে। তবে ওঁর রেটিং এর উপর ডিপেন্ডেবল সায়নের শোটি চলবে কি না! ঠিক ওই সময় সায়নের কেবিনে কড়া নারলো কেউ,
“কামিং।”
বলতেই রিয়ানা এসে ঢুকলো। রিয়ানার মতো এত বড় নায়কাকে ওঁর কবিনে দেখেই সায়ন বিস্মিত,
“মিস রিয়ানা, আপনি এখানে?”
রিয়ানার পেট এখন অনেকটাই ফুলেছে, পাঁচ মাস ক্রস করে ছ’মাসে পড়েছে। কিছুটা হেলদি ও হয়েছে বটে। নিজের পেটে হাত রেখে ভিতরে ঢুকলো ওঁ,
“আপনার সাথে কাজ আছে আমার।”
সায়ন চিন্তায় পড়ে গেলো। রিয়ানার মত নাম করা হিরোইন ওঁর সাথে কি কাজ। সায়ন ভালো করে জানে, এই ব্যক্তিটি, কখনোই নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা বাড়াবে না।নির্ঘাত কোনো মতলব এঁটে এসেছে তাই বলল,
“হ্যাঁ বলে ফেলুন তাহলে।”
রিয়ানা কালবিলম্ব না করেই গড়গড় করে বলে উঠলো,
“আমি চাই আপনিই মার্জানকে রিপ্লেস করে অন্য কাউকে নিন।”
সায়ন হেলে বসলো চেয়ারে। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আর তা আমি কেনো করবো?”
রিয়ানা রেগে বলল,
” কারণ আমি বলছি।”
সায়ন ঠোঁট বাকিয়ে ফেললো,
” আপনি অবশ্যই আমার কাছে এমন কোনো ব্যক্তি নন, যার জন্য আমার হিট যাওয়া শোর মেিন লিড বাদ দিবো।”
রিয়ানা ক্ষেপে গেলো,
” সায়ন আমি চাইনা আমাদের পার্সোনাল মেটারের সাথে তুমি প্রোফেশনাল মেটার গুলো মিলিয়ে ফেলো।”
সায়ন রিয়ানার কথা রিপিট করে বলে উঠলো,
” আমিও একই কথা বলতে পারি।”
রিয়ানা রাগে পা মারিয়ে চলে গেলো কেবিন থেকে। সায়ন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো চোখ বুঁজে। একটা সময় ছিলো, রিয়ানার সাথে ওঁর প্রণয় ছিলো। কিন্তু হুট করেই পালটে গেলো সব। রিয়ানা ওঁর হাত ধরেই ফিল্মি ইন্ডাস্ট্রিজ পা রেখেছিলো। কিন্তু ও যেই ফেমাস হলো? ছুঁড়ে ফেললো সায়নের ফিলিংস। পরবর্তীতে সায়ন জানতে পারে, সায়নকে শুধু রিয়ানা ইউস করেই গেছে। ভালোবাসে তো সে ভাদ্রকেই। এদিকে রাগে গজগজ করতে করতে রিয়ানা বের হচ্ছিলো অফিস থেকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে যায় রিয়ানা। মার্জান নিজেও চমকে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নেয়। রিয়ানা মার্জানকে দেখেই চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
” তোমার সাহস কত আমাকে ধাক্কা দিবার?”
মার্জান কিছু বলবে তার আগেই কেউ ওঁর বাহু ধরে টান দিয়ে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলো। মার্জান হতভম্ব।
” তুমি রিয়ানাকে ধাক্কা দিলে কোন সাহসে?”
মার্জান কিছুই বুঝলো না। ওঁ রিয়ানার দিতে তাকাতেই রিয়ানার শয়তানী মার্কা হাসি দেখে মার্জান বুঝে গেলো। এ সব রিয়ানার প্লেন। ভাদ্র রিয়ানাকে সাহায্য করে তোললো। মার্জান মুচকি হেসে হাতে তালি বাজি বলে উঠলো,
” রিয়ানা? তোমার কি মনে হয় না… এসব ট্রিক্স পুরনো হয়ে গেছে? আপডেট কিছু করা উচিত? ”
রিয়ানা কাঁদো কাঁদো মুখ ভঙ্গি করে আছে ভাদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাদ্র আমার মনে হয়, এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে, দেখ কেমন আবোলতাবোল বকছে। মানছি ওঁকে আমি দেখতে পারি না। তবে আমি এতটাই কি নিচ বলো? ওঁর জন্য আমার সন্তানকে কষ্ট দিবো?”
ভাদ্রের চোখে মুখে লাভা,
” মার্জান কেন করছো এমন? কমছে কম এই ছোট জানটিকে ছেঁড়ে দিতে?”
মার্জান এবার হো হো করে হেসে ফেললো,
” ওহো প্লিজ, তোমাদের এ সব ড্রামা বন্ধ করো। আমার কোনো শখ নেই তোমাদের মুখ লাগবার। ওকে। আর রইলো তোমাদের বাচ্চার কথা? আমি মাত্র যা দেখলাম তাতে আমার মাথায় দুটো প্রশ্ন জাগছে, ১। বাচ্চাটা চিন্তা কি আসলেই আছে রিয়ানার? ২। বাচ্চাটা কি আসলেই তোমার ভাদ্র? ”
ভাদ্র এবার চিন্তায় পড়ে গেলো। আর রিয়ানার মুখে চিন্তা আর ভয় মিশ্রিত ছাপ। তোতলান কন্ঠে বলল,
” এই এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে, কি উল্টো পাল্টা বকছে।”
মার্জান শুধু ওঁদের উপর তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিলো। এর পর চলে গেলো নিজ গন্তব্যে। ভাদ্র মার্জানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
” রিয়ানা, মার্জানের হাবভাব ভালো ঠেকছে না আমার কাছে, তুমি জানো তোমার নানাজানের বাড়িটা যে মার্জান কিনেছে?”
চমকে তাকালো রিয়ানা। চোখ দুটো যেন কৌটা থেকে বেড়িয়ে আসবে,
“কি বলছো এসব?”
“সত্যি বলছি।”
রিয়ানা মনে মনে ভাবলো,
” এর পিছনে সায়ন তো নয়? এই জন্যই বুঝি ওঁকে বের করছে না? কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব, সায়ন তো বিয়ে করে ফেলেছে আর ওঁর বাচ্চাও আছে,ওকে আমি ভালো মতোই চিনি ওঁ কখনো ঠকাবে না ওঁর বউকে, তাহলে এর পিছনে কে?”
————–
আজ সাত দিন যাবত কোনো খবর নেই গ্রীষ্মের। মার্জান নিজেও আর কল করে না। ও যেন বেমালুম ভুলেই গেছে। মৃণাল ওঁর মমিকে প্রতিটা সময় পর্যবেক্ষণ করছে। মৃণাল বলল,
” জান? সামার আঙ্কেল এখন আসে না কেন? সে কি আমাদের উপর রাগ করেছে?”
মার্জান মৃণালের জন্য ফল কাঁটছিলো। মৃণালের কন্ঠে হাত থেমে গেলো। পরক্ষণেই বলল,
” না, হয়তো তোমার সামার আঙ্কেল ব্যস্ত।”
মৃণাল আর কিছু বলল না। তখনি উপস্থিত হলো রাফান। হাতে এক গাদা শপিং ব্যগ। মৃণালকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
” মৃণাল , আঙ্কেল তোমার জন্য গিফট এনেছে।”
মৃণাল মুখ বাকিয়ে বলল,
” আঙ্কেল মৃণালের কাছে ওল রেডি এত এত গিফট আছে, ওঁ আর কি করবে এসব দিয়ে?”
মৃণালের কথায় রাফান খানিকটা অপমানিত বোধ করলো। তা বুঝতে পেরে মার্জান বলল,
” রাফান তুমি কেন এসব আনতে গেলে।”
” কেন মৃণাল আমার কি কিছু হয় না?”
মার্জান হাসলো। এরপর দু’জন কথা বলতে বরতে বেড়িয়ে গেলো, কেবিন থেকে। মৃণাল চট করে তখন ওঁর ফোন বের করে মেসেজ করলো গ্রীষ্মকে।
” সামার আঙ্কেল? আপনি কি রাগ করেছেন আমাদের উপর? আপনি কি জানেন? জানের মন জয় করার জন্য রাফান আঙ্কেল কত কসরত করছে? আমার মনে হচ্ছে রাফান আঙ্কেল আমার পাপা হতে চলেছে।”
মৃণাল ফোন রেখে দিলো। মার্জানের কাঁটা ফল খেতে খেতে মুচকি হাসলো। ওঁর মায়ের জন্য সামার আঙ্কেল বেষ্ট। সামার আঙ্কেল ছাড়া কাউকে চায় না মৃণাল।
———–
একটা সুপার শপে ঢুকেছে শীপ্রা। বাসায় আজ ওঁর ভাই রান্না করবে, দু’বোনের শুধু দায়িত্ব্য কব্জি ডুবিয়ে খাবে। কিন্তু বাড়িতে বাটার আর চিজ ছিলো না। তাই নিতে এসেছে ওঁ। শীপ্রা শপের ভিতরে ঢুকে নিজের জিনিজ গুলো নিলো। পাশেই ছিলো কিছু স্নাক্স এর প্যাকেট ও গুলো দেখতে লাগলো। ঠিক তখনি একটি পরিচিত গলা ভেসে আসতে লাগলো। শীপ্রার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। পিছনে ফিরে ওঁর চিরচেনা লাভকে দেখে থমকালো। লাভ একটি মেয়েকে নিয়ে শপিং করছে। শীপ্রা মেয়েটিকে দেখলো ভালো করে, লাভের ছোট হবে মনে হচ্ছে, সুন্দর আর পরনের শর্ট টপস আর জিন্সে আরো সুন্দর লাগছে। যেন মেইড ফর ইচ আদার। শীপ্রা আহ্ করে শ্বাস ছাড়লো। লাভ ওঁকে সত্যি ডিজার্ভ করে না। ওঁর উচিত শীপ্রা থেকে দূরে থাকবার। শীপ্রা পাশ কেঁটে এবার চলে যাচ্ছিলো। চোখে ওঁর জালা করছে যে কোনো মুহুর্তে উপচে পরবে পানি। কিন্তু ওঁর বুকে জ্বালা বাড়িয়ে দিতে লাভ ওঁকে ডাকলো। লাভ শীপ্রাকে দেখেই ওঁর জসানো অভিমান ঝেঁকে বসেছে। ও ওঁর পাশের মেয়েকে শক্ত করে ওঁর হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে দাড় করালো শীপ্রার সামনে,
” হোয়াট এ কোইন্সিডেন্স শীপ্রা। বাই দ্যা ওয়ে, আসো তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই, শীপ্রা মিট মাই ফিয়ান্সে রাত্রী। রাত্রী, ওঁ হচ্ছে শীপ্রা আমার এক্স। ”
রাত্রী অদ্ভুত ভাবে তাকালো শীপ্রার দিকে। শীপ্রা নিজেও অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। তবুও চাপা হেসে বলে উঠলো,
” হ্যালো। কংগ্রাচুলেশন। তোমাদের দু’জনকে মানিয়েছে খুব, সুখী হও। ”
বলেই পা বাড়ালো সামনে। লাভ এতে আরো ক্ষেপে গেলো। লাইক সিরিয়াসলি, এই মেয়ের মনে ওঁর জন্য বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা জম্ম নেয় নি? লাভ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো, শীপ্রার হাত টেনে নিয়ে ওঁর মুখোমুখি দাঁড় করলো,
” ইউ নো হোয়াট শীপ্রা, আজ তুমি প্রামণ করে দিলে, তোমার জন্য আমার মনে বিন্দু পরিমাণ অনুভূতি ছিলো না।”
বলেই ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। এবং রাত্রীর হাত টেনে নিয়ে চলে গেলো। শীপ্রা সেখানেই বসে পড়লো। এবং বুক ফাঁটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। নিজেকে ওঁর আজ শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
———-
মার্জান আর রাফান একটি কফি শপে বসে আছে। দু’জনের মাঝে চলছে ছোট বেলার বিষয়ক কথা বার্তা । মার্জান কথার এক পর্যায় বলে উঠলো,
” রাফান, তোমার মনে আছে ছোট বেলায় আমার আর তোমার পরিবার ঘুরতে গেছিলো বান্দরবান। তখন সেখানে আমার ছোট এক্সিডেন্ট হয়, এবং তুমি আমাকে বাঁচাও।”
রাফান মার্জানের হাতে হাত রেখে বলল,
” মনে কেন থাকবে না আমার, সেদিন তোমার কিছু হলে আমার কি হতো বলো?”
মার্জান চকিতে তাকালো। রাফান বরে উঠলো,
” হ্যাঁ মার্জান, আমি… আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ছোট থেকেই। তোমাকে প্রপোজ কিভাবে করবো? ভেবেই পাচ্ছিলাম না। তাই আজ সুযোগ বুঝে বলেই ফেললাম।”
বলেই রাফান একটা রিং এর বক্স বের করলো,
” এটা আমি তোমার জন্য কিনেছিলাম মার্জান। যদি তুমি রাজি থাকো, আমি পড়াতে চাই।”
বলেই রিং বের করে মার্জানের হাত ধরলো। অকস্মাৎ ঘটনায় মার্জানের যেন কথা বলতেই ভুলে গেলো। রিং পরাবার ঠিক আগ মুহূর্তেই একটি হাত মার্জানের হাতেকে শক্ত করে চেপে ধরে উঠলো। চিৎকার করে বলল,
” জান, তুমি অন্য কোনো লোকের সাথে কি করছো? তুমি কি ভুলে গেছো? তুমি আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ? তারপরেও সাহস কি করে হয় তোমার?”
মার্জান হঠাৎ করে গ্রীষ্মকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। গ্রীষ্সের রাগ সম্পর্কে ভালো ভাবে জানা মার্জানের। গ্রীষ্মকে দেখে থরথর করে কাঁপছে ওঁ। কোনো রকম নিজেকে সামলে বলে উঠলো,
” রাপান আমার বন্ধু। ”
গ্রীষ্ম ঠোঁট গোল করে বলল,
” বন্ধুরা বুঝি রিং পড়ায়?”
মার্জান কিছু বলতে পারলো না। কিন্তু গ্রীষ্মের রাগতো কমবার নয়। ওঁ মার্জানকে টেনে হিছড়ে সেখান থেকে নিয়ে আসে। মার্জানকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে বসায় । এবং নিজে ড্রাইবিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে শুরু করে। মার্জানের যেন আত্মা বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ভয়ে ওঁর গলা শুকিয়ে কাঠ, এক ফোঁটা রা নেই ওঁর মুখে। এর আগে যখন রাগ দেখিয়ে ছিলো ওঁ, তখন তো ওঁর জান টাই নিয়ে ফেলেছিলো প্রায়… এবার কি করবে এই পাগলটায়? কি করবে ওঁ?
চলবে,