#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১
স্কুল জীবনের এক বান্ধবী হুট করে কল দিয়ে বলল সে পালিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে তার বিয়েতে যেন আমি সাক্ষী হই।আমিও ওর কথা শোনে তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিয়ে ওর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে গেলাম। কারন আমার জীবনের ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছি কিছুদিন হলো। তাই তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে সাহায্য করতে পারলে নিজের মধ্যে একটা শান্তি লাগবে। ভালোবাসা হারানোর ব্যাথা কতটা ভয়ানক সেটা হয়তো বলে প্রকাশ করার মতো না। সারাটাদিন চোখের সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয় এই বুঝি পানিটা পড়ে গেল। তবুও আটতে রাখতে হয় কারন কেউ যেন না দেখে তাই।
তবে সেখানে যাওয়ার পর নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল এ আমি স্বপ্ন দেখছি না তো। নাকি এটা আমার কল্পনা। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার বান্ধবী আরশি বলে উঠল
– আয়রা চলে এসেছিস তুই। যাক ভালোই হয়েছে। আয় তোকে পরিচয় করিয়ে দেই। এই হচ্ছে আয়ান আমার ভালোবাসার মানুষ। আমাদের রিলেশন ৬ মাস যাবত। এতদিন বিয়ে করার সাহস হয়ে উঠেনি। আজকে সাহস করে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলাম। তুই তো জানিস আমার মা, বাবা দেশে থাকে না। আর আয়ানের পরিবারেও একটু সমস্যা তাই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে পরিবারকে জানাব। ঠিক করেছি না?
আরশির কথাটা শোনে আয়ানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে চুপ হয়ে রইলাম। সামনে যে আয়ান নামে ভদ্রলোকটা বসে আছে সে আর কেউ না আমারেই প্রাক্তন। যার সাথে আমার দীর্ঘ ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। যা সে হুট করেই কারন ছাড়া ইতি টেনেছে ছয় মাস হলো। তখন কারনটা জানতে না পারলেও এখন জানতে পেরেছি। কারন সে আরশির প্রেমে পড়েছিল। আরশির সাথে আমার তেমন যোগাযোগ না থাকায় আয়ানের ব্যাপারটা আরশির অগোচরে ছিল। আমি ছলছল চোখে শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আয়ান ও আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো সে আমাকে আশায় করেনি এখানে। আমাদের হতবাক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশি আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল
– কী রে কী দেখছিস? আর এত চুপচাপ হয়ে গেলি কেন?
আরশির ধাক্কা খেয়ে চোখের জলটা বেশ যুদ্ধ করে আটকে নিয়ে মুখটা প্রশস্ত করে হালকা হেসে বললাম
– কিছু না রে। তা কি করতে হবে বল।
– তেমন কিছুই না। তুই আমাদের বিয়েতে থাকবি। আরও দুজন সাক্ষী আছে তারা আসতেছে। বাংলাদেশে তো তুই ছাড়া আমার ভালো কোনো বান্ধবী নেই তাই তোকে ডাকা।
আরও কিছু বলতে নিবে এমন সময় আরশির ফোনটা বেজে উঠল। আরশি ফোনটা ধরে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুমে এখন শুধু আমি আর আয়ান। আমি হতভাগীর মতো দাঁড়িয়ে আছি। আর আয়ান আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। অনেক প্রশ্নই আয়ানের দিকে ছুড়ে দিতে ইচ্ছা করছে তবে সে প্রশ্ন করার পরিস্থিতিতে এখন নেই আমি। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখের কোণের জলটা টুপ করে পড়ে গেল। আয়ান দেখার আগে জলটা মুছে নিলাম।
আয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে পড়লাম।এর মধ্যেই আয়ান বিরক্ত গলায় বলে উঠল
– তুমি কী আমার পিছু ছাড়বে না? এত ছেছরা কী করে হয় মানুষ? খুঁজে খুঁজে এখানেও চলে এসেছ? আমাকে মুক্তি দিবে না তাই তো?এখন চাচ্ছ আমার আর আরশির মধ্যে গন্ডগোল পাঁকাইতে। পারও তুমি৷ একজন যোগ্য ছেলেকে পেতে কত বাহানা তোমার।
কথাগুলো শোনে বুক চিঁড়ে কান্না আসছে। আমি নাকি তার মতো যোগ্য ছেলেকে পেতে বাহানা করছি। হায়রে ভালোবাসা কার জন্য ছিল এতসব। তার যোগ্যতা হওয়ার আগেই তাকে ভালোবেসেছিলাম। আর যোগ্যতা হওয়ার পর আমার অস্তিত্ব টা বিলীন করে দিয়ে বলে আমি নাকি তার যোগ্যতার জন্য তার পিছনে ঘুরছি। কথাটা ভাবতেই গড়গড়িয়ে চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। হাজারটা কথা বলতে চাইলেও বলতে পারছিলাম না। নিজের চোখের জল মুছায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।এর মধ্যে আরশি আরও দুজনকে সাথে নিয়ে এসে বলল
– বিয়ের জন্য সবাইকে আনা শেষ।এবার কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা করা বাকি শুধু।
তারপর আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
– কি ব্যাপার উঠছো না কেন? উঠো।
আয়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। আরশি আয়ানের হাতটা ধরল।মনে হচ্ছে আরশি আয়ানের হাত না আমার কলিজাটা ধরে আঘাত করছে। নিজেকে সামলে নিতে চেয়েও কষ্ট হচ্ছিল। সারা শরীর যেন কাঁপছিল।সামনের দিকে পা এগুতেই পারছিলাম না। তাই একটু দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়ান আর আরশি আমাকে পার হয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে হাতটা আমার ধরার কথা ছিল, যে হাতটা দীর্ঘ ছয় বছর আমি ধরে হেঁটেছি সে হাতটায় আজকে অন্য কেউ ধরে আছে। কথাটা ভাবতেই গা টা শিউরে উঠল। সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। বুকের স্পন্দন যেন প্রবল গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে। এর মধ্যে আরশি পেছন ফিরে বলল
– কি রে আয়রা আসতেছিস না কেন? দাঁড়িয়ে গেলি কেন?
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলাম
-আসতেছি….. তোরা যেতে থাক।
বলেই সামনের দিকে পা বাড়াতে লাগলাম। যতই সামনের দিকে এগুতে লাগলাম ততই মনে হচ্ছিল নিজের সবচেয়ে কাছের জিনিসটা হারানোর জন্য এগুচ্ছি। হায়রে ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগ করেছি আজকে সে ভালোবাসায় অন্য কারও হাতে চলেছে। আমার কমতিটা কোথায় ছিল? তাকে তো ভালেবাসায় কমতি রাখেনি। তার যোগ্যতার প্রেমেও পড়িনি। তাহলে আজকে কেন এসব বাঁধা হলো? আরশির বাবার অনেক টাকা। আরশির বাবা, মা সবাই বিদেশ স্যাটেল। আরশিই তার নানুর বাসায় থাকে বাংলাদেশে। কারন তার অন্য দেশে গিয়ে বেশিদিন মন টিকে না। বলা যায় বড়লোকের মেয়ের বিরাট কারবার। আয়ান হয়তো আরশিকে এজন্যই বিয়ে করছে। আমার বাবার তো এত টাকা নেই। এসব ভেবে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস গুলো ফেলছিলাম আর সামনের দিকে এগুচ্ছিলাম।
গাড়ির সামনে যেতেই আরশি আমাকে তার পাশে বসাল আর আয়ানকে তার অন্য পাশে। বিষয়টা মনে আরও আঘাত দিল। আয়ানের সাথে গাড়িতে ঘুরার সোভাগ্য না হলেও রিকশায় ঘুরার সৌভাগ্য হয়েছিল অনেকবার। তখন আমি ওর পাশে বসতাম আজকে আমাদের মাঝে আয়ান একটা প্রাচীর বসিয়ে দিল যার নাম আরশি। খুব ইচ্ছা হচ্ছে ঢেকুর তুলে তুলে কাঁদতে। তবে পারছি না। কেন জানি না কান্নাটা বুকে আটকে ব্যাথার সৃষ্টি করছে।
আয়ানের সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল সেই ছোট বেলা থেকে। একই স্কুলে পড়তাম আমরা। ভালো লাগা ছিল প্রবল। জানি না কেন ভালো লাগত। তবে ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। ভাইয়ের মুখে আয়ানের হাজারটা প্রসংশা শোনতে শোনতেই ভালো লাগার সূত্রপাত ঘটে। ভালোলাগাটা ভালোবাসায় রূপ নেয় আমি অনার্সে উঠার পর। আর আজকে সে ভালোবাসাটায় কাল হয়ে দাঁড়াল।আয়ানের জন্য কত পাগলামিই না করেছি। আর আজকে সে আমার পাগলামির জন্য আমাকে বলে আমার মাথা ঠিক নেই আরও কত কী। হাস্যকর লাগে খুব।সত্যিই দোষটা আমার। কারণ স্বার্থপর এ দুনিয়ায় কাউকে জীবনের সবটা দিয়ে ভালোবাসতে নেই। কারণ এ দুনিয়ায় এ ভালোবসার মূল্য কেউ দিবে না। যে মানুষগুলো পাগলের মতো ভালোবাসে তাদেরকেই কষ্ট ভরা বুক নিয়ে হাহাকার করে জীবন পার করতে হয়।
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে এসব ভাবতেই আয়ানের কর্কশ গলা শোনে ভাবনার আকাশে ছেদ পড়ল। কখনো চিন্তা করতে পারিনি আয়ান আমার সাথে এমন জঘন্য কিছু করবে। কারন হুট করে খেয়াল করলাম-
( #তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২
কারন হুট করে খেয়াল করলাম আয়ান আরশিকে কর্কশ গলায় বলে উঠল
– কী ব্যাপার আরশি তুমি এমন করলে কেন? সত্যিই আমি তোমার কাছে এমন কিছু আশা করিনি।
আয়ানের কন্ঠস্বর শোনে নিজেকে বেশ সামলে নিয়ে চুপ করে জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লাম। আরশি আয়ানের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল
– কেন কী হয়েছে আয়ান? হুট করে এমন বলছো কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কী?
আয়ান তার কন্ঠ স্বরটা প্রশস্ত করে তীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠল
– ভেবেছিলাম তুমি আর আমি এখানে একসাথে বসে যাব। এখন সাথে তোমার বান্ধবীকে নিয়েছ। খুব বিরক্ত লাগছে। ওর সামনে তোমার হাতটাও ধরতে পারছি না। তুমি মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করো যেগুলো আমার একদম অপছন্দ। আমাদের সাক্ষী হলেই তো চলতো। তোমার বান্ধবীকে আনার কী দরকার ছিল?
আরশি আয়ানের কথা শোনে আমার দিকে ঘাড় ফেরাতেই আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। আরশিকে বুঝতে দিলাম না আয়ান যা বলছে সেটা আমি শোনেছি। আরশি আমাকে আনমনা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু হেসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আয়ানের হাতটা ধরে বলল
– আয়ান একটু আস্তে বলো ও শোনতে পেলে কষ্ট পাবে। আরে বিয়েতে কেউ থাকবে না এটা আমি মানতে পারছিলাম না। আয়রা আমার স্কুল জীবনের বান্ধবী তাই তাকে আসতে বলেছি। কে বলেছে হাত ধরতে পারবে না। এই যে আমি তোমার হাত ধরেই তো আছি। পাগল একটা। এত রাগ করলে হয়।
বলেই আরশি আয়ানের কাঁধে মাথাটা রাখল। আয়ান তার হাত দিয়ে আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। এদিকে যেন আমার বুকটা ফেটে চৌচির হচ্ছিল। আয়ান কী করে পারল আমাকে নিয়ে এমন জঘন্য মন্তব্য করতে। পৃথিবীতে সবকিছুর ভাগ দিতে পারলেও ভালোবাসার ভাগ দেওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতি মাঝে মাঝে সে ভালোবাসার ভাগটা দিতে বাধ্য করে। আয়ান যতই আরশির মাথায় হাত বুলাচ্ছে ততই আমার চোখটায় উপচে পড়ে জল আসছে। নিজের সাথে প্রতিনিয়ত এ যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। মানুষের জীবনটা যে কেন এমন হয় বুঝি না। সারাটাদিন অসহনীয় ব্যাথা নিয়ে পার করতে হয়। আয়ানকে ছাড়া আমার নিজেকে বড় একা লাগে সেটা কেন জানি না আয়ান বুঝতে পারে না। আয়ান তো ঠিকেই ভালো আছে অনেক ভালো আছে। এসব ভেবে কান্নাটা যেন আরও প্রবল বেগে পাচ্ছে।উফফ….খুব অসহ্য লাগছে। মনে হচ্ছে বুকের মাঝখানে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে আর সেটা চারদিকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে কষ্ট দিচ্ছে। এর মধ্যেই গাড়িটা ব্রেক কষলো। গাড়িটা থামার সাথে সাথে বুকের ভেতরটা আরও কেঁপে উঠল। আমার আয়ান সত্যিই আজকে অন্য কারও হতে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি আরশিকে কী আমাদের কথা একটু খুলে বলব সবটা। মনে মনে এটা ভেবেও মনটাকে পুনরায় বুঝালাম আরশিকে বলেই বা কী হবে। আরশি আর আয়ানের বিয়ে ভাঙ্গলেই বা কী হবে। আয়ান তো আর আমার হবে না। এসব ভেবে ব্যাপারটা আরশিকে বলার সাহস হলো না।থাক আয়ান সুখে থাক।
এর মধ্যেই আরশি কাঁধে হাত দিয়ে বলল
– কী রে আয়রা কখন থেকে কী ভেবেই চলেছিস? যাবি না?
আমি আরশির কথা শোনে ভাবনা থেকে বের হয়ে জবাব দিলাম
– হ্যাঁ যাব তো। আসতেছি।
বলেই গাড়ি থেকে নামলাম। আয়ান আর আরশি ওপাশ দিয়ে নামল। তারপর কাজী অফিসের দিকে এগুচ্ছি আমি আর অপরদিকে আয়ান আর আরশি। আয়ান আর আরশি সামনের দিকে হাঁটছে আমি তাদের পেছন পেছন হাঁটছি। যতই সামনের দিকে এগুচ্ছি ততই কলিজাটায় পাহাড়সম কিছু একটা চেপে বসেছে মনে হচ্ছে। পা যেন সামনে যেতেই চাচ্ছে না। বেশ যুদ্ধ করে পা কে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রণার সাথে পেরে উঠতে পারছি না। এখন যদি জোরে কাঁদতে পারতাম তাহলে হয়তো অনেক ভালো লাগত। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখটা ঝাঁপসা হয়ে গেল। চারপাশ অন্ধকার হতে লাগল। আয়ান আর আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা উল্টা হয়ে গেছে। এরমধ্যেই প্রচন্ডরকম মাথাটা ঘুরতে লাগল। কখন যে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম টের পাইনি।
যখন টের পেলাম তখন খেয়াল করলাম আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। আয়ান আমার পাশেই বসে আছে। আরশিকে কোথাও দেখতে পারছি না। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তবুও একটু শক্তি জুগিয়ে আয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম
– আরশি কোথায়?
আমার কথা শোনে আয়ান আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল
– আর কত নাটক করবে তুমি? আমাদের বিয়েতে ঝামেলা করতে এ নাটকটা করলে তো? কেন এমন করলে বলো তো? কী সমস্যা তোমার?
আমি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম
– আয়ান তুমি ভুল করছো। আমি এমন কিছুই করে নি। জানি না আমার মাথাটা কেন ঘুরে গেছিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি জ্ঞান হারাই। তুমি তো একজন চিকিৎসক, তুমি নিশ্চয় জানো কোনটা আমার ইচ্ছাকৃত আর কোনটা নিয়তির লীলায় হয়েছে।
আয়ান আমার কথা শোনে এবার চুপ হয়ে গেল। আয়ান পেশায় একজন ডাক্তার। খুব অল্প সময়ে আয়ান নিজের পরিচিতিটা করে ফেলেছে। আয়ানকে যখন ভালোবেসেছিলাম তখন আয়ান মেডিকেলে পড়ত। আর এখন আয়ান একজন বি সি এস ক্যাডার তার উপর এফ সি পি এস পার্ট ওয়ান ও হয়ে গেছে। এখন তার কাছে আমি কিছুই না। আয়ানের শখ ছিল মেডিকেলে পড়ে এমন মেয়ে বা ডাক্তার বিয়ে করবে আর আরশিও মেডিকেলে পড়ছে। তার উপর বাবার টাকাও আছে অনেক। আয়ানের জীবনে এখন আমার কোনো স্থান নেই। যোগ্যতা মানুষকে অনেক বদলে দেয়। আজকে প্রমাণ পাচ্ছি হারে হারে। এসব ভেবেই চোখটা জলে ভিজে গেল। এর মধ্যেই আরশির আগমন ঘটল। আরশি কাছে এসে বলল
– আয়রা ঠিক আছিস তো এখন?
বলেই আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
– আয়রার প্রসার টা মাপো তো আয়ান। দেখো তো ঠিক আছে কিনা।
আয়ান আরশির কথা শোনে হালকা বিরক্তি নিয়ে আমার হাতটা ধরলো প্রেসারটা মাপার জন্য। আয়ানের হালকা স্পর্শে বুকটা হাহাকার করে উঠল। কতদিন আয়ানের এ স্পর্শ টা পাই না। আয়ান হাতটা ধরে প্রেসারটা মেপে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল
– প্রেসার একটু লো। বাকিসব ঠিক আছে।
আরশি অস্থির গলায় বলল
– তাহলে তো কিছু এনে খাওয়াতে হবে। নাহয় আরও দুর্বল হয়ে যাবে। আমি বাইরে থেকে খাবার আনতে গেলাম। তুমি ওর পাশেই বসো।
আয়ান শুধু মাথাটা নাড়ল আর আরশি বাইরে গেল খাবার আনতে। এর মধ্যেই জানি না আয়ানের কী হলো। আমার কপালে হালকা স্পর্শ করলো। আমি চোখটা বন্ধ করে দিলাম। আয়ানের এ স্পর্শে কেন জানি না কোনো ছলনা পাচ্ছি না। যেটা পাচ্ছি সেটা ভালোবাসার পরম মায়া। আয়ান কপালে হাতটা রাখল মিনেট দুয়েক তারপর হাতটা সরিয়ে নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করলো। রুমালটা আর কারও না আমার দেওয়া হাতের কারুকাজ করা সেই রুমালটা। রুমালটা বের করে পানি দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে কপালে পট্টি দিয়ে দিল। আয়ানের এ ব্যবহারের সাথে আমার দীর্ঘ ছয় বছরের পরিচয়। এখন কেন জানি না মনে হচ্ছে আয়ান আরশির না আয়ান আমার। আয়ান মাথায় পট্টিটা দিয়ে পাশেই বসে রইল। আমার হাতটা ধরে আছে সে। এ আয়ানকে আমার বড্ড চেনা। কিন্তু এ আয়ানটা হুট করে বদলে গেল কেন? মনে হাজারটা প্রশ্ন জাগতে লাগল। আয়ানের এই হালকা সহানুভূতি পেয়ে আয়ানকে আবার নিজের ভাবা শুরু করে দিলাম। এর মধ্যেই আমার বিশ্বাসের ফাটল ধরল। কারণ-
(