পর্ব-০৬
#তমিস্র_প্রভা🍁
#লেখিকা-লামিয়া_রহমান_মেঘালা
বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে যায় ছায়া,
–তুষা,
তুষা গায়ে হলুদের জন্য কি গয়না পরবে সেটা ঠিক করছিল পেছন থেকে বোনের কন্ঠ পেয়ে তার দিকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকায়,
–হ্যাঁ আপু বল.
ছায়া গিয়ে তুষাকে জড়িয়ে ধরে,
তুষা বুঝতে পারে না হটাৎ করে ছায়ার কি হলো,
–কি হয়েছে আপু?
–কিছু না বোন।
–ও বুঝেছি চলে যাবি বলে মন খারাপ তাই না?
ছায়া কিছু বলে না৷
সে যে কোথায় যেতে চলেছে তা শুধু সেই জানে,
–তুষা,
–হ্যাঁ বল
–আমি যদি সারা জীবনের মতো কোথাও চলে যাই তবে খুজবি না।
তিন কাঠি কোথাও এক জায়গায় দেখলে সেটা ছুবি না,
লাল, নীল, হলুদ, রং সেখানে এক সাথে মিলে সেখানে কখনো পা রাখবি না।
–আপু তুই এগুলো কি বলছিস বলত,
–আমার কথাগুলো মাথায় রাখিস,
আমি কি বলছি এর মানে তুই ধিরে ধিরে বুঝতে পারবি,
–ছায় চলো তোমার গায়ে হলুদ দেওয়া হবে,
আর আমি বুঝি না কাল যে মেয়ের বিয়ে সে কি করে এই সকাল সকাল।বের হয়,
তুই যদি অসুস্থ হয়ে পরিস,
–মা আমার কিছু হবে না
(সব থেকে বড়ো যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছি অন্যের বাড়ি সেখানে অসুস্থ হয়ে যায় তুচ্ছ,)
ছায়াকে কাঁচা হলুদ রঙা শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়,
আশে পাশে যে মধ্যে বয়স্ক মহিলারা আছে ওদের নিয়ে ছায়ার গায়ে হলুদ শেষ হয়,
–হলুদের রং পরতে মেয়েদের চেহারা আরো সুন্দর হয় জানিস আপু (তুষা)
ছায়া তুষার দিকে তাকায়,
–তোরে বলছে,
ছায়া রুমে চলে আসে,
–যাহ বাবা এ মেয়ে এমন হয়ে গেছে কেন উপর আল্লাহ জানে,
তুষা চলে এলো,
তুষা ছবি তুলছে তার ফোন বেজে ওঠে,
নির্ঝর ফোন করেছে,
–হ্যাঁলো আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,
–ওয়ালাইকুম সালাম বনু কেমন আছো?
–এই ত আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি
–হ্যাঁ ভালো ত তোমার বোনের কিছু ছবি দেও ত,
–ওর সাজুগুজুর ছবি?
–হ্যাঁ,
–ওয়াউ ভাইয়া আপনি কতো রোমান্টিক,
–হ্যাঁ একটু একটু দেও,
তুষা মুচকি হেসে ফোনটা কেটে দেয়,
বোনের ছবি গুলো নির্ঝর কে দিয়ে দেয়,
নির্ঝর ছবি গুলো পেয়ে দেখা শুরু করে
–তুমি অনেক শান্ত একটা মেয়ে ছায়া,
তুমি কেন এতো নিষ্পাপ আমি জানি না,
আমায় সাদা কাগজ তুমি,
যা লিখি তাই ছাপা হয়ে যায়,
আমার মায়াবী পরি,
নির্ঝর রবিকে ইসারা দেয়,
(চলুন রবির ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলি,
কাল এতো লোকে কমেন্ট করেছে রবি কি করে আসলো?
কাহিনি পরে বুঝতে পারবেন রহস্য আছে ধৈর্য ধরে পড়ুন)
রবি ফোন হাতে নেয়,
ছায়ার বাবার নাম্বার ডায়েল করে,
–আসসালামু আলাইলুম আঙ্কেল,
–ওয়ালাইকুম সালাম বাবা বলো,
–বলছিলাম যে বিয়েটা আজ রাতে দিলে ভালো হতো,
–কি বলছো বাবা,
–হ্যাঁ হলুদ ত শেষ আসলে নির্ঝর এর একটা কাজ পরে গেছে,
আপনি যদি অনুমতি দিতেন তাহলে ভালো হতো,
–ঠিক আছে বাবা৷
–ধন্যবাদ আঙ্কেল আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো,
রবি ফোন কেটে দেয়,
,
ছায়াদের বাসায়,
ছায়াকে সাজানো হচ্ছে,
ছায়া একটা পুতুলের মতো বসে আছে ভেতরে কোন অনুভূতি হচ্ছে না,
ছায়াকে সাজানো শেষ হলে,
সবাই চলে যায়,
বর এসেছে,
সকল নিয়ম মেনে ছায়ার সাথে বিয়েটা নির্ঝর এর হয়ে যায়,
ছায়া নির্ঝর বাঁধা পরে যায় এপার ওপার দুই পারের জন্য ই,
ছায়াকে নির্ঝর এর গাড়িতে উঠিয়ে দেয় তার বাবা,
ছায়া কান্না করছে না,
অতি শোকে পাথর একটা কথা আছে,
হয়ত ছায়ার বর্তমান অবস্থা তাই,
–প্রিন্সেস,
তুমি এখন আমার প্রাসাদের রানি হয়ে গেলে,
ছায়ার হাত ধরে,
নির্ঝর ভিশন ঠান্ডা,
–আ আপনি এ এতো ঠান্ডা কেন?
–কেন তোমার পছন্দ হচ্ছে না,
ছায়া চুপ করে আছে,
পথটা কেটে গেল নিরবতায়,
সারাটা পথ নির্ঝর ছায়ার হাত ধরে ছিল,
ছায়া এই প্রথম নির্ঝর কে খেয়াল করলো,
তার চোখ নাক,
তার চুল গুলো,
সবি স্বপ্ন দেখা এক পুরুষের মতো,
সবাই ত এমন স্বামী ই চায় তাই না,
ছায়া মাথা নিচু করে নিলো,
অর্ধেক রাস্তা আসতে ছায়ার ভীষণ ঘুম পায়,
ছায়া মাথাটা নির্ঝর এর বুকে ঢুলে পরে,
নির্ঝর হেসে দেয়,
–প্রিন্সেস তুমি শুধু আমার,
ছায়ার কপালে চুমু দিয়ে সামনে তাকায় নির্ঝর,
নির্ঝর এর বাসায় পৌঁছে নির্ঝর ছায়াকে পাজকোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে,
ছায়াকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ছায়ার পাশে বসে,
কিছুক্ষণ পরেই ছায়ার ঘুম ভেঙে যায়,
–তুমি ঘুম থেকে উঠলে কেন,
–একটা কথা বলব? (একটু সাহস নিয়ে)
–হুম বলো,
–আমার না কষ্ট হচ্ছে এগুলো পরে থাকতে
–ওহ উঠো এসো,
নির্ঝর ছায়াকে তার কাবার্ড খুলে দেখায়,
সব কাপড় আছে সেখানে,
ছায়া অবাক হয়ে যায়,
ছেলেটা সব রেখেছে,
ছায়া একটা জামা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়,
গোসল করে বের হয়,
ছায়ার চুল বেয়ে টুপ টুপ পানি পরছে,
নির্ঝর তোয়ালে নিয়ে ছায়াকে নিজের কেলে বসায় ছায়া ও কিছু বলে না,
ছায়ার চুল মুছে দেয়,
–প্রিন্সেস,
–হুম।
–তুমি জানো এই প্রথম তোমাকে এভাবে দেখছি এতো কাছ থেকে,
–আমাকে কোথায় পাবেন আপনি আগে?
–তুমি ছিলে আমার জীবনে,
আমার সবটা জুড়ে,
আবার এক দমকা হাওয়ার মতো আমার জীবন টাকে বিষন্ন করে দিয়ে চলে গেলে,
আমায় পুরো নিশ্ব করে দিয়ে চলে গেলে,
–আমি কোথায়৷ চলে গেলাম।
আমার সাথে কি আপনার আগে কখনো দেখা হয়েছে?
নির্ঝর মৃদু হাসে
–তোমার ঘুম পাচ্ছে?
–হুম।
–ঠিক আছে,,
নির্ঝর ছায়াকে শুইয়ে দেয়,
ছায়া পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে নেয়,
(সে কি একটু ভালোবাসা বাদে আর কিছু চায় না? উনি এসব কি বলছেন? আমার সাথে ওনার কবে দেখা হলো,? উফ সব যেন গোলকধাঁধা হয়ে গেছে।)
কিছুক্ষণ পরে ছায়া নিজের পেটে কারোর হাতের উপস্থিতি টের পায়,
ছায়া জানে এটা কে তাই কিছুই বলে না,
নির্ঝর ছায়ার চুলে মুখ গুজে ঘুমিয়ে যায়,,
,
,
,
পরের দিন,
ছায়ার বাড়িতে,
–আপুর ব্যাবহার এমন ঠেকছিল কেন?
ও আমায় কিছু বললো ও না সব সময় এমন করে ও।
তুষা পায়চারি করছে কিন্তু সে নিজেও জানে না এতো চিন্তা কেন হচ্ছে তার,
–তুষা,
–জি মা,
–কি করছো মা,
–কিছু না,
–আমায় একটু আলুবোখারা কিনে এনে দেও সপ থেকে,
–আম্মু একটা কথা বলব
–হুম বল
–আপু ঠিক আছে?
–এ কেমন কথা,
আপু ঠিক থাকবে না কেন?
–না মানে দেখেছো বিদায় এর সময় ও কাদেঁ পর্যন্ত নি,
–ওদের প্রেমের বিয়ে তুমি বুঝবে না,
–প্রেম ত আপু করে নি কখনো আমি সিওর,
–তুই জানতি তোর আপুর সম্পর্কে সব,
–,হ্যা,
–আমার মেয়েটা বড্ড ভালো হয়ত ভেবেছে বাসায় সবাই খারাপ ভাব্বে তাই বলে নি৷
–কিন্তু৷
–কিন্তু কি?
–আমার না সব কিছু ভালো লাগছে না।
–তুষা,
–আচ্ছা সরি দেও টাকা দেও,
–নে,
তুষা বাইরে চলে আসে,
কিন্তু মাথা থেকে ছায়ার কথা নামছে না৷
,
,
,
সূর্যের আলো ছায়ার চোখে পরতে ছায়া পাশে তাকায়,
নির্ঝর চোখ বন্ধ করে আছে,
কি মিষ্টি দেখতে ছেলেটার ঘুমন্ত চেহারা,
কিন্তু ভীষণ ঠান্ডা ছেলেটা,
ছায়া সরে আসে,
খুদা পেয়েছে ভীষণ,
ফ্রেশ হয়ে নির্ঝর এর কাছে আছে,
ডাকবে কি ডাকবে না দোটানে,
কিন্তু না ডাকলে কি খাবে,
ছায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্ঝর টান দেয় ছায়াকে,
ছায়া গিয়ে নির্ঝর এর বুকে পরে,
চলবে,