তান্ডবে ছাড়খার পর্ব -১৮+১৯

#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_১৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

পরের দিন আফিয়া বেগম কিছুক্ষণ পরে পরে নিচতলায় উঁকিঝুঁকি মেরে দেখেছেন বন্যারা বাসা ছাড়লো কিনা কিন্তু রাত দশটার পরেও যখন বাসার সামনে কোনো ট্রাক এসে থামলো না তখন উনি আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না।স্বামীর কাছে ছুটে গিয়ে বললো,
“ওরা তো বাসা ছাড়লো না।এখন কি করবো?”

মোবারক সাহেব স্ত্রীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।তারপর রয়েসয়ে বললো,
“বললেই তো বাসা ছাড়া যায় না।সময় লাগে।”

“এই সময় লাগার মাঝে যদি আবার কিছু হয়ে যায়?”

“তুমি এতো জাজমেন্টাল কেনো?ভালো কিছু ভাবতে পারো না?তাহসান তার পছন্দের কথা আমাদের জানিয়েছে এখন যদি এমন হতো যে না জানিয়ে একেবারে বিয়ে করে এসে জানাতো তখন কি করতে?”

আফিয়া বেগম মুখ অন্ধকার করে বললো,
“তুমি বন্যার পক্ষ নিচ্ছো?”

“নিচ্ছি।বন্যা ভালো মেয়ে আমার সমস্যা নেই।তাছাড়া মেয়ে যেহেতু ছেলে পছন্দ করে ফেলেছে কোনো আপত্তি থাকার কথাও না।”

“আমার আপত্তি আছে।”

তাহসান পিছন থেকে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে।আজ সারাদিন বন্যা তার সাথে কথা বলেনি।এইটুকুন সময়েই বুকে কেমন অশান্তির মাতাল বাতাস ছুটোছুটি শুরু হয়েছে সারাজীবন থাকবেনা ভাবলেই কেমন লাগে।যেভাবেই হোক মাকে মানাতে হবে।আফিয়া বেগম ছেলের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ায় না।গাল ফুলিয়ে বললো,
“আহ্লাদ করছিস কেনো?মায়ের কথার দাম আছে নাকি?”

তাহসান নরম স্বরে বললো,
“তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি তোমার ধারনা আছে?”

“ভালোবাসলে মায়ের কথা মেনে চলতি।”

“আম্মু।বন্যা ভালো মেয়ে।তুমি দেখো ওর মতো করে আমাকে আর কেউ ভালো রাখতে পারবে না।”

আফিয়া বেগমের মন নরম হয় না।উনি কঠিন গলায় বললো,
“এতো কথা জানি না।ওরা বাসা ছেড়ে যাওয়ার পরেই আমি তোর বিয়ে দিয়ে দেবো।এরপর দেখবি সব ভুলে যাবি।”

তাহসান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তার কি একটুও মায়া লাগছে না?তাহসানের আবদার,ভালোলাগার কি কোনো দাম নেই?সে তারা মাকে ছেড়ে দেয়।গলার স্বর হয় রুক্ষ।
“বাসা ছেড়ে দিলে আমিও থাকবোনা এই বাসায়।”

আফিয়া বেগম ত্যাড়া গলায় বললো,
“না থাকলে বেরিয়ে যাবি।তোর মতো ছেলে লাগবে না।”

তাহসান তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আব্বু আপনি কিছু বলবেন না?”

মোবারক সাহেব ঠান্ডা গলায় বললো,
“তোমরা এমন পাগলামি করছো কেনো?”

আফিয়া বেগম খনখন করে বললো,
“পাগলামি করছি?এই বেয়াদব মেয়েটার জন্য তোমার ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুম কি দেয়।”

তাহসান মাথা নেড়ে বললো,
“হুম কি না সত্যিই আমি এই বাসায় থাকবো না।”

আফিয়া বেগম মাথা নেড়ে ইশারা করে বললো,
“যা এখনি বেরিয়ে যা।”

তাহসান হনহন করে নিজের রুমের দিকে যায় আর বলে,
“আচ্ছা।”

তাহসান ঠিক ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।নিঃশব্দে সব গুছিয়ে বেরিয়ে দেখে আফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে কাঁদছে।তাহসান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যাচ্ছি।”

আফিয়া বেগম ছুটে এসে বললো,
“কই যাচ্ছিস?”

তাহসান কথা বলেনা।আফিয়া বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।উনার একটামাত্র ছেলে।এই ছেলে যদি চলে যায় উনি নির্ঘাত ম,রে যাবেন রাগের মাথায় বাড়ি ছাড়তে বললেও আসলে আফিয়া বেগম কখনোই চায় না ছেলে বাড়ি ছাড়ুক।তাহসান মায়ের কান্নার সুযোগ বুঝে নরম গলায় বললো,
“বন্যা ভালো মেয়ে আম্মু।মেয়েটাকে আপন করতে দাও। প্লিজ। ”

এতোকিছুর পরেও যখন ছেলের মুখ থেকে বন্যার নাম সরলো না আফিয়া বেগম চুপ করে থাকে।তাহসান মায়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো,
“ও দেখতে রাগী মনে হলেও আদতে মেয়েটা লক্ষী একটা মেয়ে।প্লিজ আম্মু রাজী হয়ে যাও।”

আফিয়া বেগম মাথা নেড়ে সায় দেয়।কিন্তু গলার স্বর যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় বললো,
“রুমে যা।সকালে কথা বলবো।”

এটা বলে উনি রুমে চলে যায়।যদিও আফিয়া বেগম সরাসরি কিছু বলেনি তারপরও তাহসানের বুকে খুশীর লাড্ডু ফুটে।সে মনে মনে আরো কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।মাকে ইমোশনাল ভাবে আটকিয়ে কোনোভাবে বিয়েটা করতে পারলেই হলো,কেল্লাফতে।সে রুমে গিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে পড়ে,মনে মনে ভাবে ইশ এই কোলবালিশটা কয়দিন পরে বন্যা হয়ে যাবে।ভাবতেই মাথা যন্ত্রনা করার মতো সুখ অনুভূত হচ্ছে।

ভোর সকালেই মোবারক সাহেব নিচতলায় গিয়ে বন্যার বাবার সাথে কথা বলতে গেলো।উনার কাছে বন্যাকে খারাপ লাগে না।ছেলে যদি পছন্দ করে থাকে তাহলে এতো কথার প্রয়োজন মনে করেন না।ছেলে সংসার করবে সেই যদি অতীত না ঘাটতে চায় তাহলে উনারা আগবাড়িয়ে কিছু করতে যাবেন কেনো?সেদিন আফিয়া বেগম বন্যার ফ্যামিলির সাথে যা আচরণ করেছে তাতে করে উনারা আর এই বাসায় থাকবে বলে মনে হয় না।এই মূহুর্তে উনারা যদি বাসা ছেড়ে দেয় তাহলে আগুন আরো লাগবে বৈ কমবে না।তাই উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাহসান আর বন্যার মতামতের গুরুত্ব দেবেন,তাদের ভালোলাগাকে সম্মান দিয়ে স্বীকৃতি দেবেন।মহিলাদের কথায় না নেচে উনি ভোর হতেই নিচে চলে গেছে।কলিংবেল দিয়ে মনের কথাগুলো আরেকবার ঝটপট সাজিয়ে ফেলেন।
দরজা খুলে মোবারক সাহেবকে দেখে রেনু বেগম চুপসে যায়।উনার মনের ভাব মোবারক সাহেব আবারো কথা শোনাতে এসেছে।
“ভাইসাহেব।আপনার ভাই এখনি বাসা খুজতে যাবে,কালকে সারাদিন খুঁজেও মনমতো হয়নি।একটা দিন সময় দিন।এতো আসবাবপত্র নিয়ে যেতে একটু টাইম লাগবে।”

রেনু বেগমের কাচুমাচু মুখের দিকে তাকিয়ে মোবারক সাহেব মুচকি হাসেন তারপর আস্তে করে রেনু বেগমকে পাশ কাটিয়ে বাসায় ঢুকে পড়েন।বন্যা এতোক্ষণ ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে মোবারক সাহেবের কথা শুনছিলো।উনাকে ভেতরে আসতে দেখে সে রুমে চলে যায়।মোবারক সাহেব সোফায় বসতে বসতে বললেন,
“বাসা ছেড়ে দেবেন নাকি?”

রেনু বেগম কিছু বলার আগে শফিক ইসলাম আসে।আয়েস করে বসতে বসতে বললেন,
“না ছেড়ে উপায় কি?আপনারাই তো ছাড়তে বলে গেলেন।”

মোবারক সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“ওর কথা ধরে লাভ নেই।
আমাদের উচিত ছেলেমেয়ের সুখের কথা ভাবা।তারা যেহেতু নিজেরা পছন্দ করেই ফেলেছে আমাদের উচিত মান সম্মান রেখে মিল করিয়ে দেয়া।”

রেনু বেগম বললো,
“ভাবীর যা মনোভাব দেখলাম।আমি চাই না আমার মেয়ে শাশুড়ির অমতে তার সংসারে যাক।”

মোবারক সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বললো,
“তা ঠিক।কিন্তু আমার মনে হয় আফিয়াও মেনে নিবে।একটু সময় লাগবে এই যা।”

রেনু গম্ভীর গলায় বললো,
“মানবে! মানলে তো আপনার সাথে আসতো আসেনি যে।”

মোবারক সাহেব শান্ত গলায় বললো,
“আসবে।একদিন আয়োজন করে এসে বন্যাকে নিয়ে যাবো।”

সারাটা দিন আফিয়া বেগম তাহসানের সাথে কথা বললো না এমনকি দেখেও চোখ তুলে তাকালো না।তাহসান মায়ের এই নিশ্চুপতা দেখেও গম্ভীর হয়ে চলাফেরা করলো,সারাদিন কিছু খেলো না।ছেলে যে উপোস সেটা আফিয়া বেগমের দৃষ্টি এড়ায়নি।সারাদিন কিছু না বললেও রাতে আর চুপ করে থাকতে পারলো না।তাহসানের রুমে গিয়ে গম্ভীর গলায় তাহসানকে ডাকে।
“সারাদিন না খেয়ে অনশন করে কি বিয়ে করতে চাস?”

তাহসান মায়ের হাটুতে মাথা রেখে গলার স্বর যথাসম্ভব কান্নাকান্না ভাব এনে বললো,
“বন্যাকে বিয়ে না করালে ম,রেও যেতে পারি।”

আফিয়া বেগম তাচ্ছিল্য করে বললো,
“বাহ!দুই দিনের বন্যাকে পেয়ে এতো বছরের বাবা মাকে ভুলে যাবি?”

তাহসান মায়ের গালে হাত রেখে বললো,
“বাবা মা তো বাবা মায়ের জায়গায়।আর ভালোবাসার মানুষটা হলো মানুষিক শান্তি।দুটোই সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।”

আফিয়া বেগক দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে উনার স্বামী মোবারক সাহেব দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছেন।সারাদিন উনি এই ব্যাপারে বুঝিয়েছেন,আফিয়া বেগম কিছুটা নরম হলেও মনে যে খচখচ আছে সেটা সম্পূর্ণ গেলো না।একমাত্র ছেলে যদি উল্টাপাল্টা কোনো কিছু করে ফেলে তাহলে?আফিয়া বেগম মনের সাথে যুদ্ধ করে তাহসানকেই জিতিয়ে দিলেন।যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুক উনার ছেলে উনার সামনে হেসে খেলে থাকলেই হলো।স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“বন্যাদের বাসায় বলে দাও,তাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে আমরা কালকে সন্ধ্যায় এনগেজমেন্ট করতে যাবো।”

মোবারক সাহেব গম্ভীর গলায় বললো,
“আমি একা বললে হবে কেনো?উনারা মেয়ে বিয়ে দেবে,শাশুড়ী হলো ঘরের প্রধান শাশুড়িই যদি না যায় তাহলে বুঝবে তুমি রাজী না।”

অগ্যতা আফিয়া বেগমও বন্যাদের বাসায় যায়।মোবারক সাহেব খালি হাতে যেতে নারাজ।শুভ কাজ,শুভ কথা মিষ্টি না হলে চলবে?মিষ্টি এনে স্ত্রী সমেত বন্যাদের বাসায় যায়।
আফিয়া বেগমকে দেখে সবাই অবাক।বন্যা ভ”য়ে রুমে বসে আছে।আফিয়া বেগম সবাইকে চমকে দিয়ে বললো,
“আপনারা চাইলে আপনাদের বাড়ির মেয়ে আমার ঘরে নিয়ে যেতে চাই।”

রেনু অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে।উনার চোখের ভাষা দেখেই আফিয়া বেগম বললো,
“আসলে সেদিন হঠাৎ করে এসব শুনে মাথা ঠিক ছিলোনা।আমি চাই আগের কথা মনে না রেখে আমরা সামনের দিকে যাবো।ছেলে মেয়ের মঙ্গল কামনা করবো।”

সবাই উনার কথা শুনে সন্তুষ্ট হয়।তাহসান যেহেতু ভালো ছেলে,চেনাশোনা আছে বন্যার পরিবার আর অমত করলো না।ঠিক করা হয় আগামীকাল এনগেজমেন্ট করা হবে।আল্লাহ চাইলে আগামী শুক্রবার বিয়ে।
#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_১৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

বন্যা আর তাহসান পাশাপাশি বসে আছে।আজকে আর কোনো লুকোচুরি নেই।আজকে প্রকাশ্যে দুজনে পাশাপাশি বসে আছে।বন্যা আড়চোখে তাহসানের দিকে তাকায়,সাদা পাঞ্জাবীতে ছেলেটাকে কি সুন্দর লাগছে!বন্যার চোখ মুখ মুগ্ধতায় ছেয়ে যায়।এই পুরুষটা তার; একান্তই তার।এই যে কিছুক্ষণ আগে সে তার নামের আংটি পড়িয়ে দিয়েছে।বন্যার চারপাশে কে আছে কিংবা কে কি বলছে এসব কথায় তার মনোযোগ নেই তার সম্পূর্ণ মনোযোগ তাহসানের গা থেকে ভুরভুর করে ভেসে আসা পারফিউমের ঘ্রানে।সে নিঃশব্দে শ্বাস টেনে ফুসফুস ভর্তি করায় ব্যস্ত।বন্যার মনে হলো সে খুব ভাগ্যবতী।ভাগ্যবতী না হলে তাহসানের মতো এমন লক্ষী ছেলে সে পাবে কেনো?লাজ লজ্জা ভুলে বন্যা তাহসানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তাহসান সারাদিন ছটফট করে কাটিয়েছে।বন্যা ফোনে কথা বলেনি,বলেছে ভিষণ কাজ;কথা বলা যাবে না।তাহসান বন্যার কথায় সায় দিলেও মনে মনে খুব চাইছিলো বন্যা কথা বলুক কিন্তু তার তৃষ্ণার্থ মন উপোস জেনেও বন্যা সারাদিন ফোন দেয়নি।সন্ধ্যা আটটায় তারা সবাই বন্যাদের বাসায় যায়।তাহসান উত্তেজনায় ছটফট করছে।বাবা মা যে এতো সহযে মেনে নেবে তা সে কল্পনাও করেনি।বন্যাকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার খুশীতে মনটা ফুরফুরে লাগছে।বন্যাকে যখন সে আংটি পড়িয়ে দিচ্ছিলো তখন তার মনে হচ্ছিলো বন্যা অর্ধেক তার হয়ে গেছে।হালকা হলুদ জামদানিতে বন্যাকে হলুদিয়া পাখির মতোই মিষ্টি দেখাচ্ছিলো।তাহসান ভদ্রতা বজায় রাখতে সবার সাথে কথা বললেও বারবার চোখের দৃষ্টি ঘুরেফিরে বন্যার মাঝে এসেই আটকাচ্ছে।বন্যাও যে তাকে দেখছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।সবার অগোচরে তাহসান বন্যার হাত ধরে,বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ঘষে চোখ টিপে ফিসফিস করে বললো,
“এতো সুন্দর লাগছে কেনো?মে.রে ফেলার পায়তারা করছো নাকি?”

বন্যা উত্তরে কিছু বলেনা শুধু মুচকি হাসে।আজকে আসলেই তাকে সুন্দর লাগছে।শাড়ি পড়তে না পারা বন্যাকে রেনু বেগম খুব পরিপাটি করে রেডি করিয়ে দিয়েছেন।বন্যাকে আজ খুব স্নিগ্ধ লাগছে,অপার সৌন্দর্যে যেনো চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।আফিয়া বেগম নিজেও বন্যাকে এই রূপে দেখে অবাক।কখনো কল্পনাও করেনি ছেলেমি করা মেয়েটা এতো সুন্দর।সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করে মোবারক সাহেব পরিবার সমেত বাসায় ফিরে আসে।ভালোবাসাগুলো পূর্ণতার পথে উল্কাপিন্ডের গতিতে ছুটে যাচ্ছে।

বন্যা তাহসানকে ফোন করেনি গায়ের শাড়িও পাল্টায়নি সবাই শুয়ে পড়লে আস্তে করে ছাদে উঠে আসে।প্রিয় পুরুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দে মনটা নেচে নেচে নিজের উচ্ছাস জানাচ্ছে।এখন তাহসানকে ফোন করলে পাগলটা একছুটে ছাদে চলে আসবে কিন্তু বন্যা ফোন করেনি।থাক কিছুটা সময় একা।ছাদে উঠার সাথে সাথে নির্মল ঠান্ডা বাতাস বন্যার গা ছুঁয়ে যায়।জুতাজোড়া একপাশে খুলে রেখে খালি পায়ে সামনে এগিয়ে যায়।চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসে।হাসিটা ভালোবাসার পূর্নতার।জীবনে সবচেয়ে বড়ো পাওয়া হচ্ছে তাহসান।এই ছেলেটা তার জীবনে আসার পর জীবনের ছন্দ পাল্টে গেছে,রঙিন হয়ে ছাড়িয়ে গেছে চারপাশ।পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হলো তাহসান তাকে চাঁদ বলে।তার মন বললো,তাহসানকে ছাড়া এই ভরা জ্যোৎস্না গায়ে মাখা অন্যায়।বন্যা এই অন্যায় করতেই পারবেনা।হঠাৎ করেই সে তাহসানকে ভিষণ মিস করছে।হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখা মোবাইলের দিকে তাকায় উদ্যেশ্য তাহসানকে ফোন করে ছাদে আসতে বলা।কিন্তু ফোন হাতে নিয়েই ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায়।তাহসানের নাম্বার থেকে পনেরোটা মিসড কল।ফোন সাইলেন্ট ছিলো বিধায় শুনতে পায়নি।বন্যা কল ব্যাক করার আগেই আবারো ফোন আসে।চিন্তিত্ব মুখে রিসিভ করার পরে তাহসানের কাতর গলার স্বর শুনতে পায়।
“আমার বউ কি খুব ব্যস্ত?একটু ছাদে আসা যাবে?আমি একটু মন ভরে দেখবো।”

বন্যা ফিক করে হেসে বললো,
“আমি ছাদেই।”

তাহসান কিছু না বলে ফট করে ফোন কেটে দেয়।মিনিট দুই পরে ছাদের সিড়িতে ধুপধাপ শব্দ শোনা যায়।বন্যার মুখে সুখের হাসির রেশ উঠে।মাথা ঘুরিয়ে তাকানোর আগে তাহসান পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তাহসানের গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণে বন্যার গা শিরশির করে উঠে।মাথাটা তাহসানের বুকে ঠেকিয়ে বললো,
“আপনাকে খুব ভালোবাসি।”

তাহসান বন্যার গালে গাল ছুঁয়িয়ে বললো,
“আমিও আমার চাঁদকে ভিষণ ভালোবাসি।”

থেমে তাহসান জিজ্ঞেস করলো,
“একা একা ছাদে চলে এলে আমাকে ডাকলে না কেনো?”

“ডাকতাম কিন্তু এর আগেই আপনি ফোন দিয়ে দিলেন।”

তাহসান আর বন্যা পাশাপাশি বসে।বন্যা যেনো আজকে কিশোরী মেয়ে হয়ে গেছে।প্রেমিকের গা ঘেষে বসতে,তার কাধে মাথা রেখে আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে ফিসফিস করে কথা বলতে একটুও সংকুচবোধ হচ্ছে না।বন্যার এই পরিবর্তনে তাহসান অবাক হলেও মনে মনে খুশী।খোলা ছাদের ফ্লোরে প্রিয় পুরুষের হাত ধরে কাধে মাথা রেখে বন্যা বললো,
“সবাই এতো সহযে মেনে নেবে ভাবতেও পারিনি। ”

তাহসান বন্যার কথায় সায় দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ আমিও অবাক।”

“আমি ভেবেছি আরো কতো ঝড় না আসে।”

“আসলে আসতো আমি ঠিক সামলে নিতাম।”

বন্যা তাহসানের গালে হাত ছুঁয়িয়ে বললো,
“আমি জানি।”

“প্রেমের তান্ডব শুরু হওয়ার আগেই আমরা এক হতে পেরেছি,শুকরিয়া।”

তারপর আবার তাহসান উচ্ছ্বাসিত গলায় বললো,
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যে তুমি আমার হতে যাচ্ছ।”

বন্যা কথা না বলে হাসে।তাহসান বললো,
“তোমাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে যে চোখ ফেরাতে পারছিনা।”

বন্যা মাথা নেড়ে সায় জানায়।মুখে ফুটে উঠে লাজুক হাসি।
“আপনাকেও সুন্দর লাগছে।রাজকুমারের মতো।”

তাহসান বললো,
“রাজকুমার!হ্যাঁ তোমার রাজকুমার।”

বন্যা তাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আজকে কেউ দেখে ফেললেও কোনো ভ,য় নেই।”

তাহসান ঠাট্টা করে বললো,
“হ্যাঁ আজকে তো অর্ধেক বউ হয়ে গেছো।”

বন্যা মিহিয়ে যায়।হাত দিয়ে তাহসানের বুকের শার্ট আঁকড়ে ধরে বললো,
“ভালোবাসি।”

তাহসান বন্যার কাতর গলার স্বর শুনে বললো,
“আজকে কি হয়েছে এতো ভালোবাসি ভালোবাসি করছো কেনো?অন্যদিন তো আবদার করেও শুনতে পারি না।”

বন্যা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো,
“ভালো লাগছে বলতে।তাছাড়া আর যদি বলার সুযোগ না পাই।”

“সুযোগ পাবে না কেনো?”

“যদি ম,রে যাই।”

তাহসান কেমন চুপসে যায়।মন খারাপের শতো শতো নৌকা এসে তার মনের আঙ্গিনায় ভীড় জমায়।
“এসব বলো না তো।আমি তোমায় নিয়ে বাঁচতে চাই হাজার বছর।”

বন্যা তাহসানের মন খারাপ লক্ষ করে বললো,
“শোনেন.”

“বলো।”

“বলেছিলাম না বিয়ের রাতে সারাটা রাত আপনার বুকে জড়িয়ে রাখবো।”

“হ্যাঁ।”

“মনে রাখবেন কিন্তু।”

তাহসান হেসে বন্যাকে বুকে জড়িয়ে বললো,
“তোমার আবদার আবার মনে থাকবেনা?সব ইচ্ছা পূরন করবো।”

বন্যা বললো,
“আমায় ভিষণ ভালোবাসবেন।সারাক্ষণ আদরে আদরে রাখবেন।”

তাহসানের শ্বাস ঘন হয়।বন্যার গালে ছোট করে চুমু দিয়ে বললো,
“খুব আদর করবো।”

“আমরা বিয়ের পরে অনেক ঘুরতে যাবো।”

“আচ্ছা।”

বন্যা তাহসানের বুকে নাক ঘষে বললো,
“আপনার গায়ের ঘ্রাণ এতো মিষ্টি কেনো? ”

“তোমার ভালো লাগছে?”

“সারাক্ষণ শ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে।”

তাহসান আদুর গলায় বললো,
“বন্যা আজকে এতো ভালোবেসে কথা বলছো যে আমার ইচ্ছে করছে এখনি বিয়ে করে ফেলি।”

বন্যা তাহসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তাহসানকে জড়িয়ে ধরলে বন্যার এক অন্যরকম শান্তি অনুভব হয়।ভিষণ আদরমাখা গলায় ফিসফিস করে বললো,
“আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন না।আপনাকে জরিয়ে ধরেও যে আমার মন ভরে না।”

তাহসান আলতো হাতে বন্যাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে।বন্যা হঠাৎ কেঁদে দেয়।তাহসানের বুকে ঢুকে যাওয়ার মিথ্যা চেষ্টা করে বললো,
“আপনার সাথে আমি আরো অনেক বছর বাঁচতে চাই।”

তাহসান বন্যাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
“আল্লাহ চাইলে বাঁচবো।”

“তাহসান..”

“হুম.”

“বউ বলে ডাকেন না একবার….”

তাহসান বন্যার চোখে চোখ রেখে বললো,
“আমার বউ,আমার মিষ্টি বউ,আমার আদুরে বউ।আমার বউটাকে এত্তোগুলা ভালোবাসি।”

তাহসানের এতো আদুরে কথা শুনেও বন্যা কাঁদে।তার কেনো জানি খুব সুখ সুখ যন্ত্রণা হচ্ছে।

চলবে……
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here