#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ১৯
#Mst_Liza
মাহির মায়াকে ছেড়ে দিয়ে মায়ার গলার কাছে এসে চেইনটা টেনে ধরে।তারপর চেইনের সাথে ঝুলে থাকা লকেট টা দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।
মায়াঃ কি হলো?
মাহিরঃ মায়া!
মায়াঃ বলুন
মাহিরঃ এই লকেট টা তুমি কোথায় পেয়েছো?
মায়াঃ বাবা-মা হয়তো ছোটবেলায় দিয়েছিলো কেন বলুন তো?
মাহিরঃ এসো তাই বলছি। বলে মায়ার হাতটা ধরে টানতে থাকে মাহির।
মায়াঃ আরে আরে কোথায় যাবো?
মাহির মায়ার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে। মায়াকে কোলে তুলে নেয়।তারপর মায়াকে নিয়ে নিচে এসে চিৎকার করে বাড়ির সকলকে ডাকতে থাকে।
মাহিরঃ মিরা মা, মামা, বাবা-মা তোমরা কে কোথায় আছো তারাতাড়ি এসো।
মায়া কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।ভাবে কেন মাহির এমন চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে!
বাড়ির সকলে এসে মাহিরের কাছে জিজ্ঞাসা করে এভাবে চিৎকার করে ডাকার কারণ।তখন মাহির সবাইকে লকেট টা দেখায়।যা দেখে সকলের চোখে পানি চলে আসে।
রাইশাঃ ভাবি এই লকেট টা তো আমি আমাদের ছোট্ট মায়ার জন্মদিনে ওকে পরিয়ে দিয়েছিলাম।
মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে রাইশা।
মিরাঃ হ্যাঁ, এটাতো সেই লকেট।তাহলে এই মায়াই আমার মেয়ে। আমার ছোট্ট মায়া তুই।
মিরা এগিয়ে মায়ার কাছে এসে মায়ার মুখটা ধরে কাঁদে। আর মায়া অবাক দৃস্টিতে মিরাকে দেখে যায়। তারপর জানতে চায়,
মায়াঃ মিরা আন্টি আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন?
মিরাঃ একটা দেব মাকে আন্টি বলবি তুই?
মায়াঃ মা?
মিরাঃ হ্যাঁ মা।তুই আমার মেয়ে মায়া।এই লকেট টা দেখছিস? এটা তোর জন্মদিনে রাইশা তোকে পরিয়ে দিয়েছিলো।আর ওইদিনই আমরা সকলে মিলে মেলায় গিয়েছিলাম।সেদিন ভীরের মধ্যে হারিয়ে ফেলি তোকে আমরা।
রাইশাঃ হ্যাঁ তারপর আমরা তোকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি রে মা।
মায়াঃ তার মানে ভালো আংকেল আর তুমি আমার আসল বাবা-মা?
মিরাঃ হুমমম।বলেই মিরা জড়িয়ে ধরে মায়াকে।
আর সোহাগ পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছতে থাকে।
যেটা দেখে মিরা ইশারা করে বলে,বাবার কাছে যা।মায়া এবার সোহাগের কাছে গিয়ে সোহাগকে ডাকে।
মায়াঃ বাবা?
বাবা ডাকটা শুনে সোহাগের এতো বছর ধরে বুকের মাঝে জমানো কস্টগুলো হালকা হতে থাকে।মেয়েকে হারিয়ে ফেলার পরে শূণ্য হয়ে যাওয়া বুকটা আজ ভরে ওঠে।মায়াকে বুকে নিয়ে কেঁদে মনটা হালকা করে সোহাগ।তারপর পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে দরজার কাছে সাহেদ খান ও মুফতি খান দাড়ানো।
সাহেদ খানঃ তাহলে তুই তোর বাবা-মাকে পেয়ে গেলি মায়া?
মায়াঃ বাবা?
সাহেদ খানঃ নাহ ওই সোহাগ মির্জাই তোর বাবা।আমি তোর কেউ না মায়া।আমি তো তোকে শুধুই বড় করেছি।
মায়াঃ এসব কি বলছো বাবা?
সাহেদ খানঃ ঠিকই বলছি! তোকে যখন আমরা মেলাতে পাই।তখন তুই খুব ছোট্ট ছিলি।নিজের নামটা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারতি না।তাই আমরা তোকে সেদিন তোর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পারি নি।তবে নিজের মেয়ের মতোন করে বড় করেছি।আজ যখন তুই তোর বাবা-মাকে পেয়েছিস তখন আমার দায়িত্ব শেষ।চলো মুফতি।
সাহেদ খানকে থামিয়ে মুফতি মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বলে।
মুফতি খানঃ কাল তোকে রেগে অনেক কিছু বলে ফেলেছি তাই মন মানছিলো না আমার।এজন্য তোর বাবা সুস্থ হতেই ছুটে আসলাম দুজনে।এখন তো তুই তোর বাবা-মাকে পেয়ে গেছিস।আমাদের কি ভুলে যাবি মায়া?
মায়া চুপ করে কাঁদতে থাকে। মুফতি আবার বলে।
মুফতি খানঃ আমি জানি তোকে আমি খুব অপমান করি।রেগে গেলে বারবার মনে করিয়ে দিই তুই আমাদের কেউ না।আর তাই আজ তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি পারলে ক্ষমা করে দিস মা।তবুও আমাকে মা ডাকা ছেড়ে দিস না।
মায়া এবার মুফতিকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে থাকে।
মায়াঃ তুমি ভাবলে কি করে মা! যে আমি তোমায় মা বলে ডাকবো না? আমার তো এখন তিনটা মা হলো।তুমি, মিরা মা আর রাইশা মা।
মায়ার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।এমন সময়ে হুট করে কোথা থেকে যেন স্নিগ্ধা চলে আসে। ছুটে এসেই মাহিরের সামনে দাড়ায়। তারপর বলে,
স্নিগ্ধাঃ একি জান! তোমাকে আমি আজ কতোবার ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে? সকালে তো কেটে দিচ্ছিলে এখন আবার সুইসড অফ করে রেখেছো।জানো আমার কতোটা চিন্তা হচ্ছিলো? তার উপর আজ হসপিটালেও যাও নি।কেন?
স্নিগ্ধার এমন কথা শুনে সবাই মাহির আর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মাহির মায়ার দিকে।
মায়া এসে টেনে স্নিগ্ধাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
মায়াঃ কাকে জান জান বলছো তুমি? ও আমার স্বামী।
মাহিরঃ মায়া তুমি….
মায়াঃ চুপপপপ! একটা কথাও বলবেন না আপনি।
মাহিরকে থামিয়ে মায়া হাত ধরে টানতে টানতে স্নিগ্ধাকে নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর স্নিগ্ধার মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দম ছেড়ে দাঁড়ায়।
স্নিগ্ধা দরজাটায় লাথি, গুতা, কিল বসাতে থাকে।আর মায়া এপাশ থেকে স্নিগ্ধাকে চলে যেতে বলে আস্তে করে মাহিরের হাতটা ধরে রুমে নিয়ে যায়।
বাড়ির সকলে মায়ার কর্মকান্ড দেখে চুপ হয়ে যায় আর চিন্তা করে এই স্নিগ্ধাটা আবার কে? কিন্তু মায়া কাউকেই কিছু বলার সুযোগ দেয় না।
চলবে,,,,,