#তি_আমো
পর্ব ১৪
লিখা- Sidratul Muntaz
মোহনা আন্টি চলে যাওয়ার পর আমি যে কারণে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো। ভাইয়া আমাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে জেরা শুরু করল। সেখানে মা-ও ছিল। মায়ের সামনে ভাইয়া আমাকে তার পাশে বসিয়ে প্রশ্ন করল,” সত্যি কথা বল তারু,ওই ছেলেটা কে ছিল?”
আমি ভীত কণ্ঠে বললাম,” জানি না ভাইয়া। আমি চিনি না তাকে।”
ভাইয়া ঠান্ডা দৃষ্টিতে আমাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,” তোর মুভমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে খুব বড় কিছু একটা লুকাচ্ছিস। এমন কেন মনে হচ্ছে আমার? দ্যাখ তারু, পরে যদি জানতে পারি তাহলে খুব খারাপ হবে।”
ভেতরে আমার কলিজা থরথর করে কাঁপছে। আমি হাসার ভাণ ধরলাম,” তোমার কাছে কি লুকাবো ভাইয়া?”
” ওই ছেলেটার ব্যাপার তো লুকিয়েছিস। তোকে একটা ছেলে চিঠি দিচ্ছে, বিরক্ত করছে আর তুই এসব তোর ভাইকে না জানিয়ে বান্ধবীর মামীকে গিয়ে জানাস? কেন? তোর ভাই কি মরে গেছে?”
মা এই কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বলল,” তারুকে কোন ছেলে চিঠি দিয়েছে? কি বলছিস এসব?”
ভাইয়া মায়ের দিকে চেয়ে বলল,” ওর ভার্সিটির ছেলে। একটা ফাংশনে ওর সাথে মিসবিহেভ করেছিল। মিসবিহেভ মানে বোঝো? গায়ে হাত দিয়েছিল।”
মা ভয়ে আৎকে উঠে মুখ চেপে ধরল। ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে চোখ ছোট করে বলল,” আচ্ছা, কবের ফাংশন ছিল এটা?”
আমি ভাইয়ার চোখের দিকে চেয়ে কখনও মিথ্যা বলতে পারি না। তাই মাথা নিচু করে বললাম,” সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল।”
” কবে? ডেইট জানতে চাইছি।”
আমি নিহার এংগেজমেন্টের তারিখটাই বলে দিলাম। তাড়াহুড়োয় অন্য কোনো তারিখ মাথায় আসছিল না। আমার উত্তর শুনে মা সবকিছু বুঝে ফেলল। কারণ শুধু মা জানতো যে আমি সেদিন কোথায় গিয়েছিলাম! মা চোয়াল শক্ত করে বলল,” ওইদিনই কি তোর সাথে এই ঘটনা ঘটেছে?”
আমি হ্যাঁবোধক মাথা নাড়লাম। মা খুব রেগে জিজ্ঞেস করল,” তুই আমাকে বলিসনি কেন?”
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম,” এটা তেমন কিছু না, মা। কারেন্ট চলে গেছিল। জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট!”
ভাইয়া চোখ বড় বড় করে বজ্রকণ্ঠে বলল,” এক্সিডেন্ট মানে বুঝিস তুই? যদি এক্সিডেন্টই হবে তাহলে ওই ছেলে তোকে চিঠি দিল কেন?”
আমি আমতা-আমতা করে বললাম,” সে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল ভাইয়া!”
ভাইয়া হেসে দিল। তার হাসি দেখে আমার ভয় আরও বেড়ে গেল। ভাইয়া অতিরিক্ত রেগে গেলেই এভাবে হাসে। মায়ের দিকে কটমট করে চেয়ে ভাইয়া বলল,” তোমার মেয়ে ফেঁসে গেছে, মা। একদম ফেঁসে গেছে। আমি নিশ্চিত, ওই ছেলেকে ও চেনে। আমাদের সামনে নাটক করছে। নাম বলছে না। কারণ ও ছেলেটাকে বাঁচাতে চায়। কিরে, আমি ঠিক বললাম? কেন বাঁচাতে চাস ওই ছেলেকে? প্রেমে পড়েছিস? ”
ভাইয়া যেন আমার মনের কথাই পড়ে নিল। আমি কাঁচুমাচু দৃষ্টিতে তাকালাম। ভাইয়া থমথমে কণ্ঠে বলল, ” তুই খুব বোকা তারু। আমি জানতাম তুই ঠিক এই ভুলটাই করবি। আজ-কালকের ছেলেরা ঠিক কি পরিমাণ খারাপ তা বোঝার মতো জ্ঞান তোর হয়নি। ওই ছেলে যদি সত্যি ভালো হতো তাহলে নিশ্চয়ই অন্ধকারে সুযোগ নিতো না। তোর কি ধারণা ওই ছেলে তোকে বিয়ে করবে? সেই উদ্দেশ্য থাকলে সে তোকে চিঠি দিতো না। সরাসরি আমার কাছে আসতো। এই সাহস যার নেই, সে তোর যোগ্য হতে পারে না।”
আমিও ভাইয়ার কথায় কেন যেন পিছলে পড়লাম৷ আসলেই তো, ঈশান যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসে তাহলে ভাইয়ার কাছে কেন বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে না?তার তো সবকিছু আছে৷ গাড়ি, বাড়ি, টাকা-পয়সা, ভাইয়া হয়তো সহজেই রাজি হয়ে যেতো। সেটা না করে সে এসব কি করছে? ভাইয়া বলল,
” ওই ছেলেকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তোর ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ!”
আমি আর্তনাদের সুরে বললাম,” সামনে আমার এক্সাম!”
” এক্সামের সময় আমি তোকে ভার্সিটি নিয়ে যাব। যতক্ষণ এক্সাম চলবে, আমি হলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব। ”
মা রাগী গলায় বলল,” এসব করে কোনো লাভ নেই তারিফ। কারণ ওই ছেলে তারুদের ভার্সিটিতে পড়ে না।”
মায়ের কথায় আমি বিস্মিত হয়ে চাইলাম। ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,” তুমি জানলে কি করে?”
আমি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মা কি ভাইয়াকে বলে দিবে? আমি ইশারায় নিষেধ করলাম। কিন্তু মায়ের কাছে ব্যাপারটা গোপন করায় সেও আমার উপর রেগে আছে। তাই মা ভাইয়াকে বলে দিল,” ওইদিন তারু ভার্সিটি যায়নি। গিয়েছিল নিহার এংগেজমেন্ট পার্টিতে। সেখানেই এই দূর্ঘটনা ঘটেছে।”
আমি প্রায় কেঁদে ফেলে বললাম,” না মা, সেখানে কিছু হয়নি।”
মা ধমকে উঠল,” একদম মিথ্যা বলবি না তারু।”
আমি চুপ করে গেলাম। মা ভাইয়ার দিকে চেয়ে বলল,” ওর ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে কোনো লাভ নেই। আমি বলব, নিহাদের বাড়ি যাওয়াটা বন্ধ কর।”
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুধু বলল,” তুমিও তাহলে সবকিছু জানো? বাহ! তাহলে এখানে রামগাঁধা কেবল আমিই? আমার সত্যি আর কিছু বলার নেই।”
তারপর আহত দৃষ্টিতে ভাইয়া আমার দিকে চাইল। প্রশ্ন করল,” আর কত মিথ্যা বলেছিস আমাকে তুই?”
আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে জল গড়াচ্ছে। ভাইয়া আমার উত্তরের অপেক্ষাও করল না। সোজা ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি করুণ স্বরে বললাম,” তুমি এটা কেন করলে মা?”
” সত্যি কখনও লুকানো যায় না। আজ বাদে কাল তারিফ জানতোই।আমার মনে হচ্ছে তোকে আমি বেশি স্বাধীনতা দিয়ে ফেলেছি। এটা আমার করা উচিৎ হয়নি। এখন থেকে তারিফকে না জানিয়ে তোকে আমি কোনোকিছুর অনুমতি দেব না তারু। মনে রাখিস।”
মা এই কথা বলে সেও ঘর থেকে চলে গেল। আমি বসে রইলাম একা। বড্ড অসহায় লাগছিল নিজেকে।
ঈশান বাড়ি ফিরল খুব রাত করে। মা তার চিন্তায় অস্থির হয়েছিলেন। ভাইয়া না ফিরলে মা যেভাবে দুশ্চিন্তা করে ঈশানের বেলাতেও সেভাবে দুশ্চিন্তা করছিল। আমরা কেউই ঘুমাতে গেলাম না। সবাই উঠানে পায়চারী করতে লাগলাম। বুড়ি পর্যন্ত ঈশানকে নিয়ে ভাবছে। ভাইয়া তার ওয়ার্কশপের একটা ছেলেকে দিয়ে দুইবার ঈশানকে পুরো এলাকায় খুঁজতে পাঠাল। একবার তো নিজেও গেল। মা আমাকে পাগল করে ফেলছিল ঈশানকে ফোন করার জন্য। আমি সন্ধ্যা থেকে তার ফোন সুইচড অফ পাচ্ছি। অবশেষে যখন ঈশান বাড়ি ফিরল, তখন আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম সদর দরজার সামনে। ভাইয়া যদিও বিরক্ত গলায় বলছিল,” সবার একসাথে উঠে আসার কি দরকার? আর এতো চিন্তারই বা কি আছে? এখানে তো কেউ মরে যায়নি। ”
কিন্তু ঈশান ফিরে আসার পর ভাইয়ার চেহারাতেই সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি দেখতে পেলাম। বাড়ির পরিবেশ শীতল হলো। ভাইয়া তো ঈশানকে ধমকেও দিল, হুট করে না বলে-কয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অপরাধে।
” তুমি আমাদের কি মনে করো? সারা রাত তোমার চিন্তায় না ঘুমিয়ে বসে থাকব? আমাদের কি আর কাজ নেই? আশ্চর্য তো! আর কখনও যেন এরকম না হয়। রাত ১২টার মধ্যে বাড়ির গেইট বন্ধ হয়ে যাবে৷ এরপর হাজার বললেও আর গেইট খোলা হবে না। ১২ টার আগেই বাড়ি ঢুকতে হবে এটা মনে থাকে যেন।”
বুড়িকেও দেখলাম ঈশানের কাছে গিয়ে বলল, “শুনো নওজোয়ান, এখন থেকা তুমি আমাদের পরিবারের একজন। তাই কোথাও যাওয়ার আগে আমাদের জানানো তোমার দায়িত্ত। তুমি আমাদের আপন না ভাবতে পারো, আমরা কিন্তু তোমারে আপন ভাইবাই থাকতে দিছি। কথাডা মাথায় রাইখো।”
বুড়িকে আমি এর আগে এতো মিষ্টি করে কারো সাথে কথা বলতে দেখিনি। ঈশান লজ্জিত ভঙ্গিতে হেসে বলল,” স্যরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। এরপর থেকে কোথাও গেলে আপনাদের জানিয়ে যাব। আর রাত করে বাড়িও ফিরব না।”
মা অত্যন্ত নরম স্বরে বলল,” সারাদিন খেয়েছ কিছু?”
ঈশান দুইপাশে মাথা নাড়ল। মা বলল,” টেবিলে বসো। আমি খাবার দিচ্ছি।”
ঈশান যতক্ষণ টেবিলে বসে খেল, ততক্ষণ মা তার পাশে বসে রইল। আমি সবটা অবাক হয়ে দেখলাম। উপলব্ধি করলাম, কত অল্প দিনেই ঈশান আমাদের এতো আপন হয়ে গেছে, যেন সে কখনও অচেনা ছিলই না!
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। বাহিরে থেকে ভাইয়ার চেঁচানোর তীক্ষ্ণ শব্দ কানে আসছে। আমার কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। আমি কৌতুহল মেটাতে উঠানে এলাম। ভাইয়া কি নিয়ে এতো চেঁচাচ্ছে?
ভাইয়ার অতি প্রিয় মোটরসাইকেলটা চলছে না। সকাল সকাল এজন্যই ভাইয়ার মেজাজ গরম। আমি ঘরে ফিরে যাচ্ছিলাম। তখন চোখাচোখি হল ঈশানের সাথে। সদ্য ঘুম থেকে জাগার কারণে চোখ গুলো হালকা ফুলে আছে তার। চুলগুলো লাগছে লম্বা দূর্বা ঘাসের ব্ল্যাক ভারসনের মতো। সদর দরজার সামনে থেকে ঈশানকে জোর গলায় ডাকল ভাইয়া। ঈশান এগিয়ে গেল। আমি ঘরের দিকে গেলাম। ব্যাগ গুছিয়ে, নিজেকে গুছিয়ে টেবিলে এসে বসলাম নাস্তা করতে। এরই মধ্যে ভাইয়া ঈশানকে বাইক ঠিক করার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। খুবই অপার্থিব লাগছে বিষয়টা। আমাদের বাড়িতে এসে কত কি- ই না করতে হচ্ছে বেচারাকে। মা আমাকে ওমলেটের সাথে পাউরুটি খেতে দিল। আমি খাচ্ছি আর ঈশানের কাজ দেখছি। বুড়িটা আশেপাশেই ঘুরাঘুরি করছে। হাতে পাউডার নিয়ে মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে দাঁত মাজছে। ব্রাশ আর পেস্ট থাকতেও বুড়িটা যে কেন এইভাবে দাঁত মাজে, সেই রহস্য আজও অজানা। ভাইয়াকে দেখলাম বাইক স্টার্ট দিতে পারল। ঈশান পাশে দাঁড়িয়ে ঘাম মুছে হাসল। তার হাতে বাইক ঠিক করার সরঞ্জাম। বাইক স্টার্ট নিতেই ভাইয়া উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল,
” বাহ! তুমি তো বেশ কাজের ছেলে। এতো জটিল স্ট্রাকচার ঠিক করে দিলে? এই শোনো ঈশান, আমাদের গলির মাথায় একটা গ্যারেজ আছে। তুমি ওখানে পার্ট টাইপ জব করবে?”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার গলায় খাবার আটকে গেল। কাশতে শুরু করলাম আমি। যার কি-না নিজের বাড়িতে গ্যারেজ ভরা গাড়ি সে কি-না করবে গ্যারেজে পার্ট টাইম জব! বুড়িটা আমার কাশি শুনে দূর থেকে বলল,
” শাঁট শাঁট! বালাইশাঁট! ধীরে-সুস্থে খা ছেমড়ি৷ তোর কি ট্রেইন ছুটতাছে?”
মা রান্নাঘর থেকে পানি এনে দিল। আমি পানি খেয়ে ভাইয়া আর ঈশানের আলাপ শুনতে লাগলাম।ঈশান আকার- ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইল তার কোনো পার্ট টাইম জব লাগবে না। কিন্তু ভাইয়া নাছোড়বান্দা। ঈশানকে বলল,
” আরে বেশিরভাগ সময় তো বাসাতেই থাকো। পার্ট টাইম জব করলে সময়টা কাজে আসবে। আর ইনকামও ভালো হবে। বোকামি করো না। যা বলছি শোনো। ওরা লোক খুঁজছে। তুমি বললে আমি ব্যবস্থা করবো।”
আমি বিরক্ত নিয়ে উঠে দাড়ালাম। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
” আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।”
ভাইয়া চোখ গরম করে তাকাতেই আমি নিম্ন স্বরে বললাম,” আজ আমার পরীক্ষা আছে।”
ভাইয়া গম্ভীর গলায় বলল,” আজকেই তোর পরীক্ষার ডেইট পড়তে হলো? আমাকেও একটু পর গাজীপুর যেতে হবে। জরুরী কাজ ছিল। পরীক্ষা মিস দেওয়া যায় না?”
আমি অসহায় স্বরে বললাম,” কি বলছো ভাইয়া? এটা ইনকোর্স। ”
ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” ঈশান, তুমি বের হবে কখন?”
ঈশান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” কোথায় ভাইয়া?”
” তুমি গাড়ি নিয়ে বের হবে না? সকাল সকাল না বের হলে পেসেঞ্জার পাবে কিভাবে?”
ঈশান অপ্রস্তুত গলায় বলল,” ওহ, হ্যাঁ। এখনি বের হবো।”
” তারুকেও নিয়ে যাও। ওকে ভার্সিটি নামিয়ে তুমি তোমার কাজে চলে যেও। আর শোনো, ওকে কিন্তু একদম হলে ঢুকিয়ে তারপর তুমি বের হবে। আর আশেপাশে একটু নজর রাখবে। আসলে ইদানীং একটা হারামজা*দা আমার বোনের পেছনে লেগে আছে। তাকে খুঁজে না বের করা পর্যন্ত আমি কোনো কাজে শান্তি পাচ্ছি না। ”
ঈশান আমার দিকে চাইল। আমিও তখন ঈশানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
গাড়িতে ওঠার পর আমি যখন সিটবেল্ট বাঁধছিলাম তখন ঈশান শান্ত গলায় আমাকে বলল,” তোমার ভাইয়া আমাকে হন্যি হয়ে খুঁজছে তারিন।”
আমি হেসে প্রশ্ন করলাম,” আপনার কি ভয় লাগছে নাকি?”
ঈশান নির্বিকার উত্তর দিল,” জানি না। তবে মিথ্যা বলতে ভালো লাগছে না।”
” এতোই যদি সত্যি বলার শখ, তাহলে বলে দিন ভাইয়াকে সবকিছু!”
” তুমি কি এটাই চাও?”
আমি একটু রহস্য করে বললাম,” আপনার জায়গায় আমি হলে হয়তো এটাই করতাম। অবশ্য আপনার ব্যাপার আলাদা। আপনি অত সাহসী কখনোই হতে পারবেন না। যদি হতেন তাহলে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে আমার ভাইয়ার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। সেটা করতে পারেননি মানে আপনার সাহসের অভাব। আর ভাইয়াও বলেছে, যার ভাইয়ার সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই সে কখনও আমার যোগ্য হতে পারে না।”
এই পর্যায় গাড়ি প্রচন্ড জোরে ব্রেক কষল। আমি অনেকটা সামনে ঝুঁকে এলাম। ঈশান দ্রুত বেগে গাড়ি ঘোরাতে লাগল৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,” ওদিকে কই যাচ্ছেন?”
ঈশান শীতল গলায় বলল,” তোমার ভাইয়ের ওয়ার্কশপে। ”
আমি চোখ বড় করে বললাম,” কেন?”
” তাকে সব সত্যি জানিয়ে তোমাকে চাইব।”
” ভাইয়া আপনাকে মেরে ফেলবে।”
” কপালে যা আছে হবে।”
” আমি মজা করছিলাম, ঈশান!”
” কিন্তু আমি মজা করছি না!”
আমি দুইহাতে মুখ চেপে ধরলাম। হয়তো ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে আজ। সবটাই আমার জন্য। এ আমি কি করলাম?
চলবে#তি_আমো
পর্ব ১৫
লিখা- Sidratul Muntaz
ঈশানকে থামানোর কোনো উপায়ন্তর পাচ্ছিলাম না। আমি রীতিমতো মিনতি করতে লাগলাম,” দয়া করে থামুন। প্লিজ ভাইয়ার কাছে যাবেন না। এখন সাহস দেখানোর সঠিক সময় না।”
” সঠিক সময় বলে কিছু হয় না, তারিন। যখন নিজেকে প্রস্তুত মনে করব তখনি সঠিক সময়। ”
” আপনি কি আসলেই প্রস্তুত?”
” তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত। ”
” আপনার পায়ে পড়ছি। আমার ঘাঁট হয়েছে, মস্তবড় ভুল করেছি। আপনি অনেক সাহসী। আমি মেনে নিলাম। তবুও গাড়ি থামান প্লিজ।”
ঈশান আমার কথার কোনো উত্তর দিল না। যেন শুনতেই পাচ্ছে না৷ সে তার লক্ষ্যে অবিচল। আমি ক্লান্ত হলাম তবে হাল ছাড়লাম না। কঠিন স্বরে বললাম,” আপনি যদি আমার কথা না শুনেন তাহলে আমি চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিব।”
ঈশান তবুও দমল না। কারণ সে জানতো, আমি শুধুই তাকে ভয় দেখানোর জন্য এই কথা বলছি। কিন্তু আমি যে সত্যি সত্যি ঝাঁপ দেব তা হয়তো ঈশান কল্পনাও করেনি। শুধু ঈশান কেন? আমি নিজেও কল্পনা করিনি।
যখন গাড়ির দরজা খুলে আমি ছিটকে বেরিয়ে গেলাম তখন ভারী একটি বিকট শব্দে আমার কান বন্ধ হওয়ার অবস্থা। চারদিক অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়ার আগে আমি শুধু একবার শুনলাম ঈশান খুব দূর থেকে ডাকছে,” তারিন!”
তার ওই চিৎকার আমার কানে হালকাভাবে এলেও পুরো ব্যস্ত রাস্তাটাই থমকে গিয়েছিল।
______________
চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আমি সর্বপ্রথম যে মানুষটিকে দেখলাম, তার পুরো নাম তারায জোহান ঈশান। সে অতি যত্নে আমার হাতটি নিজের হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছে। আমি চোখ খোলার পর ঈশানের চেহারায় অদ্ভুত স্বস্তিময় একটি সুক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠল। তার ওই চোখ দু’টো যেন পৃথিবীর সমস্ত ভরসা ঢেলে দিয়ে বলছে,’ ভয়ের কিছু নেই। এইতো পাশে আছি। ‘ আমি একে একে ঈশানের পেছনে দেখতে পেলাম বড়ভাই আশফাক তারিফকে, মা আয়শা খাতুনকে, দাদীজান সূর্যবানু বেগমকে এবং তাদের সাথে আমার প্রাণসখী জান্নাতুল ফেরদৌস নিহাকেও। প্রত্যেকের চেহারায় কান্নামাখা হাসি। আমার মনে হলো, আমি বুঝি এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী। আমার কাছে সব আছে। আমার কমতি কিসের? কিন্তু ঈশান আমার হাতটা এইভাবে ধরে আছে কেন? তার কি ভয় লাগছে না? ভাইয়ার সামনে সে কিভাবে এতো অবলীলায় আমার সামনে বসে রয়েছে? এটা কি বাস্তব নাকি ভ্রম?
আমার মাথায় একটা প্রাইমারী ইনজুরি হয়েছিল। কিছুদিন হসপিটালে থাকার পর আমি বাড়ি ফিরলাম। ঈশানের সাথে যতবার দেখা হলো, ভেজা কণ্ঠে সে ততবার বলল,” স্যরি তারিন। আই এম স্যরি।”
প্রথম যেদিন আমার এক্সিডেন্ট হলো, সেদিন হসপিটালে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়া ঈশানকে প্রশ্ন করেছিল,” তুমি থাকতে এসব কিভাবে হলো ঈশান? আমি তো আমার বোনকে তোমার হেফাজতে পাঠিয়েছিলাম।”
ঈশান বলল,” আমাকে ক্ষমা করে দিন ভাইয়া। আমার জন্যই এই দূর্ঘটনা হয়েছে। আমি তারিনকে রক্ষা করতে পারিনি। যদি তারিনের কিছু হয়ে যায় তাহলে সব দায় আমার। আপনারা আমাকে শাস্তি দেওয়ার আগে হয়তো আমি নিজেই নিজেকে শাস্তি দিয়ে ফেলব।”
ঈশানের ভেঙে পড়া দেখে ভাইয়া হার মেনে বলেছিল,” নিজেকে এভাবে দোষ দিও না৷ ভাগ্যের উপর কারো হাত থাকে না। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আর আমি জানি, তুমি তারিনকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলে। তারিন যে এখনও শ্বাস নিচ্ছে, এটাও তোমার জন্য।”
” কোনো সন্দেহ নেই, তোর এক্সিডেন্টে সবচেয়ে বেশি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ঈশান ভাইয়া।”
নিহার এই কথায় ভ্রু কুচকে চাইলাম আমি,” তুই কি করে বুঝলি?”
” বুঝেছি। তুই তো পুরো সময় বেডেই শুয়েছিলি। তোকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছুটোছুটি কে করল বলতো? ডাক্তার ভেবেই নিয়েছিল ঈশান ভাইয়া তোর হাজব্যান্ড। তারিফ ভাইয়ার সামনে ডাক্তার বলল, আপনি কেবিনে যাবেন না। উনার হাজব্যান্ড ভেতরে আছেন।”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,” সত্যি? ভাইয়ার সামনে ডাক্তার এই কথা বলেছে?”
” হুম। তারিফ ভাইয়ার চেহারা তখন দেখার মতো হয়েছিল। ”
আমি আর নিহা একসঙ্গে হাসতে লাগলাম।
নিহা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল,” তুই কি বুঝতে পারছিস তুই কত ভাগ্যবতী?”
আমি মাথা নাড়লাম। নিহা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলল,” কচু বুঝেছিস তুই। বোঝার জন্য যা জানার দরকার তার কিছুই তুই জানিস না।”
” তাই? আমি কি জানি না?”
” ঈশান ভাইয়া তোকে মারাত্মক ভালোবাসে। এটা কি তুই জানিস?”
আমি মাথা নিচু করলাম। নিহা আমার থুতনি উপরে তুলে বলল,”শোন তারু, তুই খুব লাকি। ঈশান ভাইয়ার মতো মানুষ পাওয়া চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। উনার প্রতি বিশ্বাস আর সম্মানটা আমার আগে থেকেই ছিল। আর এখন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না। নিহা আমার দিকে ঘুরে বসে আমার কোল স্পর্শ করে বলল,
” আচ্ছা তুই এই কথাটা চিন্তা কর!শুধুমাত্র তোকে বাঁচাতে গিয়ে উনি নিজে কয়টা মিথ্যে কথা বললেন?যেখানে উনি মিথ্যে কথা বলা সবথেকে অপছন্দ করতেন। আর এখন উনি মিথ্যে বলাটা কি চমৎকার ভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছেন। তোর খাতিরে!আচ্ছা নিজের বাড়ি ছেড়ে, একটা ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন জায়গায় নিজেকে খাপ খাওয়ানোটা কি কোনো নরমাল ব্যাপার মনে হয় তোর কাছে? যেখানে উনার পৃথিবী আর তোর পৃথিবী সম্পুর্ণ আলাদা। তুই পারবি নিজের বাড়ি ছেড়ে, ভাইয়া আন্টি কে ছেড়ে ঈশান ভাইয়ার বাড়ি গিয়ে থাকতে? এই কথা চিন্তা করতে গেলেও তো তোর অস্বাভাবিক মনে হয় রাইট?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম। নিহা বলল,
” কিন্তু বিয়ের পর সব মেয়েদের ঠিকই এডজাস্ট করে নিতে হয় ভিন্ন পরিবেশে। এমন ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। শুধু মেয়েদেরই থাকে। আর একটা ছেলের পক্ষে এই সেইম কাজটা যে কতটা কঠিন সেটা তুই আন্দাজও করতে পারবি না। অথচ এই কঠিন কাজটাই ঈশান ভাইয়া করছেন। উনি যে কতটা স্ট্রাগল করে এইখানে আছেন, সেটা আর কেউ না বুঝুক আমি বুঝতে পারছি। এটা ঠিক যে আন্টি খুব টেক কেয়ার করছে ঈশান ভাইয়ের। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তুই তো ঈশান ভাইদের বাড়ি গিয়েছিলি। একবার ভেবে দেখ তো, ওই পরিবেশ আর এই পরিবেশ কতটা আলাদা! বলতে গেলে আকাশ পাতাল তফাৎ। যেখানে উনি এসি ছাড়া এক মুহুর্ত বসতে পারেন না। সেখানে তোদের বাসার টিনের গরমেও উনি ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে নির্দ্বিধায় বসে থাকছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। ফ্যানের শা শা শব্দটাও উনার সহ্য হয়না। অথচ তোদের ওই চিলেকোঠার ফ্যানের ঘটর ঘটর শব্দ শুনেই উনি রাত্রিযাপন করছেন। আন্টি খাবারে যে পরিমাণে ঝাল দেয়, ঈশান ভাইয়া তো জীবনে এতো মশলাযুক্ত খাবার খাননি। কিন্তু এবার উনাকে তিনবেলা মশলাযুক্ত ঝাল খাবার খেতে হচ্ছে। বেলায় বেলায় চা-কফি খাওয়ার অভ্যাসও উনার ছিল না। উনি ঠান্ডা জুস পছন্দ করতেন।আর এখন তোদের বাসায় সকাল বিকাল চা খাচ্ছেন কি অবলীলায়! তোদের ওয়াশরুম, বেডরুম, ড্রয়িং রুম সব জায়গাতে উনাকে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে হাসিমুখে। বোঝাতে হচ্ছে উনি খুব ভালো আছেন। খুব শান্তিতে আছেন। কিন্তু আসলেই কি এখানে উনি কমফোরটেবল? এরপরেও বলবি উনি স্ট্রাগল করছেন না? আর তোর হসপিটালে ভর্তির পর থেকে তো উনার জীবন জাহান্নাম হয়ে গেছে। উনি হাসতেই ভুলে গেছেন। যে জুমুআর নামায পড়তো না, সে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও পড়ছে। আমি যতবার তোর কেবিনে গিয়েছি, ততবার ঈশান ভাইয়াকে বসে থাকতে দেখেছি। চোখ দু’টো লালচে আর ফোলা ফোলা। তুই তো ঘুমে বিভোর। ভাগ্যিস মোহনা আন্টি এখানে নেই। ছেলের এমন পরিবর্তন দেখলে আন্টি স্ট্রোক করে মারা যেতেন। সত্যি ভালোবাসার জন্য মানুষ কিনা পারে! নিজের বাড়ি ছেড়ে ছোট্ট চিলেকোঠার ভাড়াটেও হয়ে যেতে পারে। এমনকি উবার ড্রাইভারও হতে পারে। আর কোচিং এর টিচারও।”
নিহা কথা শেষ করে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। আমিও নিশ্চুপ। কথা বলতেও লজ্জা লাগছে। সত্যি ঈশান এতো ভালোবাসে আমাকে? কেন? হুট করে এভাবে পেয়ে যাওয়া ভালোবাসার মূল্য আমি কিভাবে শোধ করি? একটু পর বললাম,” আচ্ছা, মোহনা আন্টি তো একবারও আমাকে দেখতে এলেন না।”
” তুই যেদিন এক্সিডেন্ট করলি সেদিন এসেছিল না? তোর জ্ঞান ফেরার আগেই চলে গেছেন।”
” তারপর তো আর এলেন না।”
” আসবেন কিভাবে? উনি নিজেই ঝামেলায় আছে!”
” কি ঝামেলা?”
” তুই ওসব শুনে কি করবি? বাদ দে!”
আমি উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম,” না, না, আমি শুনতে চাই। তুই বল।”
নিহা মনখারাপ করে বলল,” ঈমান আঙ্কেলের সাথে মোহনা আন্টির ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
আমি অবাক হলাম না। কারণ এই ঘটনা আমি আগেই জানতাম। তবুও একটু বিস্মিত হয়ে বললাম,” কবে? আর কেন হলো ডিভোর্স? তুই তো বলেছিলি তাদের মধ্যে নাকি খুব ভালো সম্পর্ক? তাহলে ডিভোর্স হয় কিভাবে?”
নিহা হতাশামাখা গলায় বলল,” দ্যাখ তারু, দূর থেকে দেখলে মানুষকে খুব সুখী মনে হয়। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় তাদের জীবনের অপূর্ণতাগুলো। আমরা কখনও ভাবতেও পারিনি যে তাদের ডিভোর্সটা এইভাবে হয়ে যাবে। অনেকদিন আগেই তারা অফিশিয়ালি ডিভোর্স নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা জানাজানি হলো কিছুদিন আগে। এজন্যই ঈশান ভাইয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। তুই আবার ভাবিস না, তার যাওয়ার জায়গা ছিল না বলে তোদের বাড়িতে এসেছেন। ঈশান ভাইয়ের থাকার জায়গার অভাব নেই। তার নামে ঢাকা শহরেই দুইটা বাংলো বাড়ি আছে। কক্সবাজারে ফ্ল্যাট আছে। উনি চাইলে বিদেশেও যেতে পারতেন। কানাডায় স্কলারশীপ পেয়েছিলেন। কিন্তু উনি যাননি। কারণটা হচ্ছিস তুই।”
আমার এই মুহূর্তে নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। এতো খারাপ কেন আমি? কখনও ঈশানকে একবারের জন্যেও বুঝতে চেষ্টা করিনি। কতবার তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলাম। এখন সবকিছুর জন্য আফসোস হচ্ছে। দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। নিহা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আরে ঈশান ভাইয়া, অনেকদিন বেঁচে থাকুন। আপনার ব্যাপারেই গল্প করছিলাম।”
আমি দরজার দিকে তাকালাম না। মাথা নিচু করে আছি। নিহার থেকে এতোকিছু শোনার পর আমার নিজেকে খুব ছোট লাগছে। আচ্ছা, আমি কি নিজের কাছে বেশি ছোট হয়ে গেছি নাকি ঈশান আমার চোখে বেশি বড় হয়ে গেছে? ঈশান শান্ত গলায় বলল,” আমার তারিনের সাথে একটু কথা ছিল। তুই কি পরে আসতে পারবি নিহা? ”
” অবশ্যই। বসুন আপনি।”
নিহা আমাদের একা ছেড়ে চলে গেল। ঈশান আমার বিছানার উপর বসতে বসতে প্রশ্ন করল,” কেমন আছো, তারিন?”
” ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
ঈশান মাথা নেড়ে বোঝালো, সেও ভালো আছে। তারপর সে প্রতিদিন যেটা বলে, আজও তাই বলল,” আই এম স্যরি তারিন। এক্সট্রিমলি স্যরি।”
” বার-বার স্যরি বলবেন না। যেটা হয়েছে সেটা আমার ভাগ্যে ছিল। আর গাড়ি থেকে তো আমিই ঝাঁপ দিয়েছিলাম৷ তাহলে আপনার কি দোষ? ”
” আমি যদি তখন তোমার কথা একবার শুনতাম, তাহলে হয়তো এটা হতোই না!”
” যেটা হওয়ার সেটা যেকোনো মূল্যে হতোই। সেদিন যদি আপনার জায়গায় ভাইয়া আমাকে ভার্সিটি নিয়ে যেতো তাহলেও এক্সিডেন্ট হতো। কথায় আছে, ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। তকদীরে বিশ্বাস করেন তো?”
ঈশান মাথা নেড়ে বলল,” করি।”
আমি হাসলাম। ঈশান রসিকতার সুরে বলল,” তোমাকে দেখলে কিন্তু বোঝা যায় না যে তুমি এতো জেদি।”
আমি খিলখিল করে হেসে বললাম,” এখন তো বুঝলেন! এরপর থেকে সাবধান থাকবেন।”
বুড়ি হঠাৎ ঘরে ঢুকে বলল,” আবার কি হইল? কিয়ের লাইগা সাবধানে থাকব?”
আমি বিব্রত হয়ে বললাম,” কিছু না দাদী। তুমি এসব বুঝবে না।”
ঈশান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি তাহলে আসি।”
বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে বলল,” আরে মাষ্টর! বও, বও। তোমার লগে কথা কওয়ার লাইগাই তো আইছি।”
ঈশান বসল। বুড়ির চেহারার হাসি দেখে আমার খটকা লাগছে। কি এমন জরুরী কথা বলতে এলো বুড়ি? আবার বিয়ের ব্যাপারে বলবে না তো? আমার এক্সিডেন্টের পর থেকে ঈশানের সাথে বিয়ে নিয়ে বুড়ি আরও বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে।
চলবে