#তি_আমো
শেষপর্ব (৬০)
লিখা- Sidratul Muntaz
ঈশান ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই নিহা বাইরে উঁকি দিয়ে দেখল কেউ আছে কি-না! তারপর দ্রুত দরজা বন্ধ করে ফেলল। তারিন ততক্ষণে চোখমুখ মুছে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈশান ঠিক তার সামনে এসেই দাঁড়ালো। তারিন কোনো কথা না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ঈশানের চোখে পানি জমল। আকুতি ভরা দৃষ্টিতে সে দেখছে তারিনের রক্তিম মুখটা। একটু পর খুব আফসোস নিয়ে বলল,” কেন এটা করলে তারিন?”
তারিন ভ্রু কুচকে বলল,” কি করেছি আমি?”
” বিয়ের আগে আমাকে একটিবার জানাতে পারতে! আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করতাম। ”
তারিন রুদ্ধ কণ্ঠে বলল,” কিছুই করার ছিল না। আর এখনও কিছু করার নেই। নিজে সুখে থাকার জন্য আমি ফাহিম ভাইয়ের মতো মানুষকে কষ্ট দিতে পারব না। আপনি যখন ছেড়ে গেছিলেন তখন তিনিই ছিলেন আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল। এই কথা ভুলে যাই কি করে?”
তীব্র অভিমান ছুঁড়ে দিয়ে শেষ প্রশ্নটা করল তারিন। ঈশান মাথা নিচু করে বলল,” মানছি সব দোষ আমার। আমার ভুলের জন্যই আমাদের সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি চাইলেই আমি আবার সবকিছু ঠিক করে দিবো। তবুও তোমাকে এমন কষ্টে দেখতে পারব না। প্রয়োজনে ফাহিমের সাথে আমি কথা বলি?”
তারিন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল,” এসব কি বলছেন? এটা কখনোই সম্ভব না। আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি এখন আমার স্বামী। আপনি তার সাথে কি বিষয়ে কথা বলবেন? আর কখনও আমাদের মধ্যে কিছু হতে পারে না ঈশান।”
ঈশান অসহ্য হয়ে বিছানায় বসে পড়ল। দুইহাতে মাথা চেপে ধরে বলল,” তাই বলে সারাজীবনই কি পুড়তে হবে এই যন্ত্রণায়?”
” অভ্যাস হয়ে যাবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” তুমি সুখে থাকবে তো?”
” নিশ্চয়ই থাকব। আমি তো ফাহিম ভাইয়ের সঙ্গে ভালোই ছিলাম। মাঝখানে আপনি চলে এলেন। আপনার কষ্ট দেখে আমার সমস্ত সুখ নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমার ভালো থাকা শুধু আপনার হাতে। আপনি যদি কথা দেন আবার আগের মতো খুশি থাকবেন, নিজের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে আমাকে অপরাধী বানাবেন না, বিয়ে করবেন, আবার নতুন করে ভালোবাসবেন তাহলে আমি সত্যি খুব সুখে থাকবো।”
কথাগুলো শেষ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলল তারিন। ঈশান ভেজা কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” তুমি কি নতুন করে ভালোবাসতে পেরেছো?”
” না। কিন্তু পারব। আপনাকেও পারতে হবে।”
” বলা সহজ। কিন্তু করা অসম্ভব।”
” পৃথিবীর সব মানুষ যদি পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না। বিচ্ছেদ কি শুধু আমাদেরই হয়েছে? আর কারো হয়নি?”
” কেন উপায় থাকা সত্ত্বেও আমরা আবার এক হতে পারব না? তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। শুধু একটা বিয়ের জন্য আমরা দু’জন সারাজীবন কষ্ট করে যাবো? এটা কেমন কথা? এই বিয়েটা ভেঙে দিলে কি হয়?”
” অবুঝের মতো কথা বলছেন ঈশান। ”
ঈশান ব্যথাতুর দৃষ্টিতে বলল,” এতো বুঝতেও চাই না আমি৷ আই লভ ইউ। আমার তোমাকেই লাগবে যেকোনো মূল্যে!”
তারিন আনম্র হেসে বলল,” এটা ভালোবাসার কথা নয়, জেদের কথা।”
” তুমি সুখে থাকলে আমি কখনও ফিরে চাইতাম না বিশ্বাস করো। কিন্তু তুমিই তো ভালো নেই।”
” বললাম তো, আমি ভালো থাকব।”
” কথা দিচ্ছো?”
” হ্যাঁ। কিন্তু আপনাকেও কথা দিতে হবে। এখন থেকে কখনও কাঁদবেন না। আমার কথা ভেবে হলেও খুশি থাকবেন। যদি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকেন তাহলে ঠিক আমার মতো করেই অন্য কাউকে আবার ভালোবাসবেন।”
ঈশান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল৷ কিচ্ছু ভালো লাগছে না। বাতাসে মিশে আছে বিষ। নিশ্বাসেও ঢুকে যাচ্ছে তা। তারিনেরও একই অবস্থা। তবুও কান্নারোধ করে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল,” মানুষ চেষ্টা করলে কি-না পারে ঈশান!”
ঈশান বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলল,” ঠিকাছে। তুমি যা বলছো তাই হবে।”
” ভালো থাকবেন কিন্তু। আর কখনও আমার স্বপ্নে এসে আমাকে বিরক্ত করবেন না।”
” সেইম টু ইউ।”
ঈশান কান্নারত মুখেই হাসল। তারিনও হাসল। হাসতে হাসতেই দু’জন আবার কেঁদে ফেলল। নিহা দুঃখভরা কণ্ঠে বলল,” অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দরজা আটকে রেখেছি। কেউ দেখে কি ফেললে কি-নাকি ভাববে। দ্রুত কথা শেষ করুন।”
তারিন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,” কথা শেষ। দরজা খুলে দে এবার।”
তারিন যেতে নিলেই ঈশান তার হাতটা চেপে ধরল। তারিন আহত দৃষ্টি মেলে তাকালো। কিছুক্ষণ এভাবে একজন্য-অন্যজনের দিকে তাকিয়েই রইল। দেখা যেন শেষ হয় না। বাড়ে শুধু আফসোস। ঈশান কাতর গলায় অনুরোধ করল,” আরেকবার ভেবে দেখো না তারিন। কিছুই কি করা যায় না? তোমাকে আবার ফিরে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে রাজি।”
তারিন নিশ্চুপ রইল। ঈশান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,” আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তারিন।”
” আমারও। কিন্তু সয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। বললাম তো!”
ঈশান মাথা নিচু করল। তারিন মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলল,” হাতটা ছাড়ুন এবার!”
ঈশান হতাশ হয়ে ছেড়ে দিল তারিনের হাত। তারিন এক নিশ্বাসে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আর কিছুক্ষণ সেখানে থাকলেই সে কোনো পাগলামি করে ফেলতো। বিবেকবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, নিয়তি সবকিছুই আজ তাদের অনুভূতির অন্তরায়।
ফাহিম আসার পর থেকে তারিন আর ঈশানের সামনে গেল না। ঈশানকে দেখলে তার খারাপ লাগবে। সেই ব্যাপারটা ফাহিম লক্ষ্য করলে খুবই অস্বস্তিজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এভাবেই কাটছিল সময়। তারিন অকারণেই শুধু ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আজ। ঘণ্টাগুলো যেন বছরের মতো পার হচ্ছে। যত দ্রুত সন্ধ্যা হবে তত দ্রুত সে এখান থেকে বের হতে পারবে। উর্বশীর সঙ্গে তারিনের বিকালে আরেকবার দেখা হলো একান্তে। তারিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। উর্বশী গাছে ওঠার চেষ্টা করছে। মেয়েটা খুব চঞ্চল। তারিন হাত বাড়িয়ে ডাকল,” শুনে যাও উর্বশী।”
” হায় তারিন। কেমন আছো? তুমি কি তখন আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিলে? এক্সট্রিমলি স্যরি।”
” আমি একদম কষ্ট পাইনি। বরং খুশি হয়েছি।”
” সিরিয়াসলি?”
” হুম। তুমি ঈশানকে খুব ভালোবাসো তাই না? ”
” অনেক।”
তারিন উর্বশীর হাতের উপর হাত রেখে অনুরোধ জানাল,” ওকে সবসময় ভালো রেখো প্লিজ।”
” নিশ্চয়ই রাখবো। কিন্তু ও তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসে।”
” চিন্তা কোরো না। তোমাকেও একদিন ভালোবাসবে।”
” সত্যি? তুমি ওকে কিভাবে ইমপ্রেস করেছিলে বলো না? গিভ মি সাম টিপস।”
” আমি তো ওকে ইমপ্রেস করিনি। ও নিজেই আমাকে ইমপ্রেস করেছিল।”
” ওয়াও, মিস্টার পাথর আবার কাউকে ইমপ্রেসও করতে পারে? ইন্টারেস্টিং। প্লিজ আমাকে বলো না সবকিছু। ও কি কি করতো?”
তারিন পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে যেতে যেতে বলল,” একদম পাগল ছিল। আমাকে অনেক বিরক্ত করতো। জানো প্রথম দিন কি করেছিল? সেদিন নিহার এংগেজমেন্ট পার্টি ছিল। নিহাকে চিনেছো? আমার বেস্টফ্রেন্ড।”
তারিন আবার হারিয়ে গেল জীবনের ফেলে আসা রঙিন অধ্যায়গুলোতে। যা আজ কেবল শুধুই ধূসর স্মৃতি। ঘটনাগুলো বলতে বলতে তারিনের হৃদয়টা আবার ভার হয়ে গেল। হঠাৎ খেয়াল করল দূরে দাঁড়িয়ে ঈশান তাদের কথাগুলো শুনছে। তার চোখে পানি। তারিনের কণ্ঠ থেমে গেল সাথে সাথে। তার নিজেরও চোখে জল চলে এলো। উর্বশী বলল,” হোয়াট হ্যাপেন্ড তারিন? তারপর কি হয়েছে বলো না?”
” কিছু না।” তারিন তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে গেল। আলগোছে চোখটাও মুছে নিল। বিছানায় ফাহিম বসে ছিল। তারিনকে দেখেই হাসল সে। তারিনও হেসে তার পাশে বসল। প্রশ্ন করল অস্থির হয়ে, ” আচ্ছা আমরা কখন বের হবো?”
ফাহিম সুন্দর করে হেসে বলল,” এতো পাগল হচ্ছো কেন যাওয়ার জন্য? সবার সাথে থাকতে তোমার ভালো লাগছে না?”
” হ্যাঁ ভালো লাগছে। কিন্তু কোথাও যাওয়ার আগে আমার এরকমই এক্সায়েটমেন্ট কাজ করে। চলেন না আমরা একটু আগে চলে যাই?”
” এতো আগে? অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”
” অপেক্ষা করব। তাও ভালো।”
ফাহিম একটু অন্যরকম কণ্ঠে বলল,” তোমার কি হয়েছে তারিন? এরকম অধৈর্য্য হচ্ছো কেন? ঈশান ভাইকে নিয়ে প্রবলেম?”
” একদম না। উনাকে নিয়ে আমার কেন প্রবলেম থাকবে?”
” জানি কোনো প্রবলেম নেই। তবুও শিউর হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।”
তারিন অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসল।
সন্ধ্যায় হালকা রঙের একটা সেলোয়ার-কামিজ পরেছিল তারিন। কিন্তু ফারজানা তাকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দিল। নতুন বউ সেলোয়ার-কামিজ পরে বেড়াতে গেলে নাকি একদম ভালো লাগে না। ফারজানা বিসমিকে ডেকে আদেশ করলেন তারিনকে যেন সাজিয়ে দেয়। বিসমি সুন্দর করে তারিনকে সাজালো। গাঢ় রঙের শাড়ি, চোখ ভরা কাজল, লিপস্টিক, সব মিলিয়ে তারিনকে দেখতে অপরূপা লাগছিল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে তারা ট্যাক্সিতে উঠল। কিন্তু ঈশান ওইসময় সেখানে ছিল না। তারিন আশেপাশে ঈশানকে খুব খুঁজল। শেষবারের মতো আরেকটু দেখবে বলে। তারপর হঠাৎ ছাদে নজর যেতেই দেখল ঈশান তাকিয়ে আছে তার দিকে, একদৃষ্টে! তারিনের খুব কান্না পেয়ে গেল। কিছু না বলেও যেন অনেক কিছু বলছিল ঈশানের ওই শান্ত চোখ, নিস্তব্ধ মুখ।
ট্যাক্সিটা চলে যাওয়ার পরেও ঈশান তাকিয়েই রইল। তারিনকে শাড়ি পরা অবস্থায় কত সুন্দরই না লাগছিল! ঈশান তার বুকের পাজরে টান অনুভব করল। সেই টান ধীরে ধীরে বাড়তেই লাগল৷ উর্বশী ছাদে উঠে এলো। ঈশানকে একা দাঁড়ানো দেখে সে অবাক কণ্ঠে বলল,” আরে, আপনি এই অন্ধকারে কি করছেন? আপনার ভয় লাগে না?”
উর্বশীর কথা তার কানে পৌঁছালো না। ঈশান প্রথমে চোখে ঝাপসা দেখল। তারপর তার মাথা ঘুরে উঠল। হঠাৎই সে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। উর্বশী এই অবস্থা দেখেই বিকট শব্দে চিৎকার দিল।
ট্যাক্সি মেইনরোডে চলে আসার পর ফাহিম হঠাৎ বলল,” ভুল হয়েছে। গাড়ি ঘোরাতে হবে। কিছু একটা ফেলে এসেছি।”
ফারজানা জিজ্ঞেস করলেন,” কি ফেলে এসেছিস?”
” জরুরী জিনিস।”
” জিনিসটা কি?”
” তুমি বুঝবে না মা। ড্রাইভার সাহেব, বামদিকে টার্ন করেন।”
ফারজানা খুব বিরক্তবোধ করছেন ছেলের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে। এখন অনেকটা সময় নষ্ট হবে। ট্যাক্সি তারিনদের বাড়ির সামনে থামানো হলো। কিন্তু বাড়িতে পিনপিতন নীরবতা। যেন ভয়াল কিছু একটা ঘটে গেছে। ফাহিম ট্যাক্সি থেকে নামল। তার সাথে তারিনও নামল। আয়েশা আর সূর্যবানু বেগম উঠানের কাছে বসে আছেন। দু’জনের চেহারাই চিন্তিত। আয়েশা স্বগতোক্তি করছেন,” কি থেকে কি হয়ে গেল। ছেলেটা তো সুস্থই ছিল। হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ কি?”
তারিন প্রশ্ন করল,” কি হয়েছে, মা?”
সূর্যবানু বেগম ত্বরিতে উঠে এসে বললেন,” তোরা এইখানে কি করস? হাসপাতালে যা! ঈশানরে হাসপাতালে নিয়া গেছে।”
তারিন বুকটা ধ্বক করে উঠল। মাথার মধ্যে বিকট একটা আওয়াজ হলো। পুরো পৃথিবীটাই যেন চোখের সামনে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। ফাহিম তারিনের হাত ধরে বলল,” তারু, আমার সাথে এসো।”
আয়েশা তাগাদা দিলেন,” দ্রুত যাও বাবা। আমাদের খবর জানিও।”
কিভাবে তারিন হসপিটাল অবধি পৌঁছেছিল তা সে নিজেও জানে না। ওয়ার্ডের সামনে বেশ খানিকক্ষণ পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। সবাই ভীড় জমিয়ে রেখেছে একইভাবে৷ মোহনা কেঁদে অস্থির। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ। ফাহিম তারিনের পাশে দাঁড়ালো।তার হাতে একটা র্যাপিং পেপারে মোড়ানো খাম। তারিনের হাতে খামটা তুলে দিয়ে বলল,” তোমার জন্য।”
তারিন শুনতে পেল না। দাঁড়িয়ে আছে স্থিরমূর্তির মতোই। ফাহিম আবার ডাকল,” তারু!”
এবার কিছুটা জোরেই ডাকল ফাহিম। তারিন থতমত খেয়ে বলে উঠল,” জ্বী?”
” এটা তোমার জন্য।”
” কি এটা?” তারিন বিভ্রান্ত। ফাহিম হেসে বলল,” খুলে দেখো।”
তারিনের এই মুহূর্তে খুলতে ইচ্ছে করছে না। সে বিরস মুখে বলল,” থাক পরে খুলব। ঈশানের কি অবস্থা?”
” এখনও জানা যায়নি৷ ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে হবে। তুমি এবার খোল এটা।”
তারিন নিতান্তই অনাগ্রহের সাথেই খামটা খুলল। সে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না। গায়ে বল নেই একফোঁটা। এইটুকু জিনিস খুলতেই তার অনেকটা সময় লাগল। ফাহিম তাকে একটা আসনে বসিয়ে বলল,” রিল্যাক্স!”
তারিন খাম খুলে প্রথমেই কিছু বুঝতে পারল না। তারপর হঠাৎ তারপর মস্তিষ্ক সচল হলো। সবিস্ময়ে উচ্চারণ করল,” তালাকনামা?”
” তোমার জন্মদিনের উপহার।”
তারিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেল। ফাহিম খুব সহজভাবে বোঝালো,” বলেছিলাম না? তোমাকে সবসময় খুশি রাখবো! যদি সেজন্য আমাকে নিঃস্ব হতে হয় তাও সই!”
” আপনি আমাকে তালাক দিলে আমি খুশি থাকব এটা আপনার কেন মনে হলো? আপনি আমার সাথে মজা করছেন না তো?”
” আমি একদম সিরিয়াস। আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো তারু। বিয়ে মানুষ কেন করে? সুখী হওয়ার জন্য তাই না? এই বিয়েটাই যদি হয় অসুখের কারণ তাহলে এমন বিয়ে দিয়ে হবেটা কি? তার চেয়ে ভালো বিয়ে ভেঙে যাক।”
তারিন স্তব্ধ প্রায়। ফাহিম হাত ভাঁজ করে বলল,” তুমি কি ভেবেছিলে? আমি তোমাকে সারাজীবন নিজের কাছে আটকে রাখব? আগে যদি একবার সাহস করে বলতে তাহলে এই বিয়েটাই হতো না। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঈশান ভাইকে ভুলে গেছো। কিন্তু এখনও তোমরা দু’জনেই কষ্ট পাচ্ছো। মাঝখানে আমি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।”
” ফাহিম ভাই, প্লিজ এমন করবেন না। আমি মানছি যে আমি ভালো নেই। কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে। ঈশানকে ভুলে যাবো।”
” জানি। কিন্তু আমি এটা চাই না। তুমি আমাকে ভালো রাখার জন্য নিজে হাসতে ভুলে যাবে তাহলে সেই ভালো থাকা আমার দরকার নেই।একদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। যখন কষ্ট পেতে পেতে তুমি পাথর হয়ে যাবে। কিন্তু কি দরকার এতো কষ্টের? একবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয় তারু। এভাবে কতদিন প্রচলিত নিয়ম রক্ষা করতে আমরা মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাবো বলোতো? এটাকে তো বেঁচে থাকা বলে না! সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য, মানুষ কি ভাববে, মানুষ কি বলবে, এইসবের কারণে মনের সুখ-শান্তি নষ্ট করে সারাজীবন এডজাস্ট করে চলতে হবে? কি অদ্ভুত নিয়ম আমাদের তাই না? জানি আটদিনের মাথায় ডিভোর্স হওয়ার ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটূ। কিন্তু সারাজীবন আক্ষেপের চেয়ে তো ঢের ভালো। তারু বিয়ে শুধু একটা চুক্তি না। আত্মার বন্ধন। যে বন্ধনটা আমার দিক থেকে এলেও তোমার দিক থেকে কোনোদিন আসবে না৷ সারাজীবন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার সাথে থেকে যাওয়ার চেয়ে ভালো মুক্ত হয়ে চলে যাও তুমি। তবুও প্রাণ খুলে বাঁচো। খুশি নিয়ে বাঁচো। তোমাকে নিজের সাথে দেখার চেয়ে খুশি দেখতে পাওয়াটা আমার জন্য বেশি সৌভাগ্যের। বোঝার চেষ্টা করো।”
তারিন মুখে হাত চেপে ধরল। তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ফাহিম তারিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” মাকে আমি ম্যানেজ করে নিবো। তুমি বাসায় ফিরে যাও। সবাইকে বলবে, মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি তাই তোমাকে রেখে গেছি। ফিরে এসে আমি সব ঠিক করে দিবো। ভালো থেকো। আমার আকাশের না হোক, অন্যকারো আকাশের তারা হয়ে।”
তারিন তীব্র গলায় বলল,” আপনি আমাকে আর কত ঋণী করবেন বলেন তো? এখন যে আমার নিজেকে খুব শূন্য লাগছে। আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
” শেষবারের মতো তোমার কাছে একটা জিনিস চাইলে দিবে?”
” বলুন। আপনি যদি জীবন চান সেটাও দিতে রাজি আমি।”
” তাহলে কখনও আর এভাবে কেঁদো না।”
তারিন খুব জোরে কেঁদে উঠল। নিজেকে সামলাতেই পারছে না সে!যা কিছু ঘটে গেল তার কিছু এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। শুধু মনে হলো এতোদিন সে শুধু দুঃখের স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিল। আর আজ একটু সুখের স্বপ্ন দেখছে। এই সুখ ক্ষণস্থায়ী নয়তো? ঈশানকে নিয়ে সবাই এতো বিচলিত যে তারিনরা কেনো ফিরে এসেছে এই বিষয়ে কেউ প্রশ্নই করল না। একটু পর একজন নার্স এসে বলল,” এখানে কি তারিন নামের কেউ আছে?”
সবাই চমকে উঠল। তারিনের দিকেই নিবদ্ধ হলো উপস্থিত সবার বিস্মিত দৃষ্টি। তারিন সবেগে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ” আমি।”
” ভেতরে আসুন।”
তারিন ফাহিমের দিকে একবার তাকালো। ফাহিম নিঃসংকোচে বলল,” যাও।”
তারিন স্ত্রস্ত পায়ে হেঁটে গেল। ঈশান শুয়ে আছে বিছানায়। সে চোখ মেললেও কারো কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। প্রায় অর্ধচেতন। তারিন ঈশানের খুব কাছে এসে বসল। ফ্যানের শব্দ আর তারিনের এলোমেলো নিশ্বাসের গতিবিধি ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। ঈশান আবছা দৃষ্টিতে তারিনকে দেখল৷ তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটল। বিড়বিড় করে বলল,” তুমি কি সত্যি এসেছো তারিন? নাকি এটা কোনো স্বপ্ন?”
তারিন আরও একটু কাছে এলো। ঈশানের মাথায় হাত বুলাতে লাগল। ঈশান পরিতৃপ্তি নিয়ে চোখ বুজল। বলল,” যদি এটা স্বপ্ন হয়, তাহলে আমি এমন সুন্দর স্বপ্ন থেকে কখনও বের হতে চাই না তারিন।”
তারিন ঈশানের কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,” আমিও চাই না।”
তারিনের চোখ থেকে একফোঁটা তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়ল ঈশানের চোখে। দু’জনের অশ্রু মিশে গেল একইসাথে।
______________
সকাল থেকে জিতুর মায়ের মনখারাপ। মাকে সে কাঁদতেও দেখেছে। জিতু অবশ্য মায়ের কান্নার কারণটা জানে। বাবার সাথে গেইমে হেরে গেলেই মা এইভাবে কাঁদে। জিতুর বাবা-মা প্রত্যেক সপ্তাহে দাবা, লুডু, বাস্কেট বল, যুক্তি-তর্ক ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচে যে জিতবে, পুরো সপ্তাহ তার কথা শুনেই চলতে হবে। জিতু মায়ের থেকে গল্প শুনেছে। বাবা নাকি বিয়ের আগে মায়ের সাথে একটা অন্যায় করেছিল। দুইবছর মা কষ্ট পেয়েছে৷ তাই প্রতিশোধ নিতে সপ্তাহে তিনদিন মা বাবার সাথে কথা বলে না। কিন্তু জিতুর বাবা তো খুবই বুদ্ধিমান। গেইম খেলার বুদ্ধিটাও বাবাই বের করেছে। প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে ম্যাচ হয়। সেই ম্যাচে বাবা জিতে গেলে পুরো সপ্তাহ মাকে বাবার কথা শুনেই চলতে হবে। মা আজ পর্যন্ত একবারও বাবাকে হারাতে পারেনি। সবসময় নিজেই হেরে গেছে। তবুও জিতু, মিতু আর ইতু সবসময় মায়ের টিমে থাকে। কারণ মায়ের টিমে থাকলে মা খুশি হয়। আর মা খুশি হলে বাবা সবাইকে চকলেট দেয়। ওহ, জিতুরা দুইবোন একভাই। জিতু সবার ছোট। ইতু আর মিতু ক্লাস ফোরে পড়ে। যদিও তারা দেড়বছরের ছোট-বড়। আর জিতু পড়ে ক্লাস ওয়ানে। তার স্কুলে অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু জিতুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার বাবা।
জিতু মায়ের কাছে বসে আছে। ইতু আর মিতুও সেখানে এলো। মাকে কাঁদতে দেখে ইতু প্রশ্ন করল,” কি হয়েছে?”
জিতু বলল,” জানো না কি হয়েছে? মা কাঁদছে।”
মিতু বলল,” ও বুঝেছি। বাবার কাছে হেরে যাওয়ার জন্য?”
মিতুর প্রশ্নে জিতু আর ইতু চাপা হাসল। তারিন গরম দৃষ্টিতে তাকাল বাচ্চাদের দিকে,” আমি হেরে গেলে তোদের খুব খুশি লাগে তাই না?”
সবাই একযোগে মাথা নাড়ল। ইতু বলল,”একদম না মা। আমরা সবাই তো তোমার টিমে।”
” তোরা মিথ্যামিথ্যি বলিস আমার টিমে। আসলে তোরা সবাই তোদের বাবার টিমে। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছিস? আমি কি বোকা?”
জিতু বলল,” রাগ কোরো না মা। তুমি এভাবেই কাঁদতে থাকো। একটু পর বাবা যখন এসে দেখবে তুমি কাঁদছো তখন এমনিই বলবে..”
জিতুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ঈশান ঘরে প্রবেশ করল। তারিনের চোখ-মুখ লাল দেখে সে হত বিস্ময় নিয়ে বলল,” তুমি এখনও কাঁদছো? সামান্য একটা গেইম নিয়ে? সিরিয়াসলি? ”
তারিন জবাব দিল না। ঈশান শ্রান্ত কণ্ঠে বলল,” আচ্ছা বাবা, আমিই হেরে গেছি। তুমিই জিতে গেছো। পুরো সপ্তাহ তোমার কথাই চলবে। এবার খুশি?”
তারিন চোখ মুছে হাসল। জিতু বিরক্ত ভঙ্গিতে কপালে হাত ঠেঁকিয়ে বলল,” আমি তো আগেই জানতাম, এটাই হবে। সবসময় এটাই হয়। শুধু শুধুই আমরা ম্যাচ দেখি। আসলে তো এর কোনো অর্থই নেই। ম্যাচ খেলার আগেই মাকে জিতিয়ে দেওয়া উচিৎ। নাহলে তো মা কান্নাকাটি করে ফাইনালি জিতেই যাবে।”
সবাই হেসে উঠল জিতুর কথায়। জিতু চলে যেতে নিলেই ঈশান তাকে ধরে কোলে উঠিয়ে বলল,” এতো পকপক করা কোথায় শিখেছিস? সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে থেকে মায়ের মতো হয়ে যাচ্ছিস নাকি? খবরদার, মায়ের মতো ছিচকাঁদুনে হবি না কিন্তু। ”
” আমি কেন ছিচকাঁদুনে হবো? আমি কি মেয়ে?”
” শুধু মেয়েরাই ছিচকাঁদুনে হয় এই কথা কোথায় শিখেছিস?”
” দেখে দেখে শিখেছি। মাকে তো সবসময় কাঁদতে দেখি। কিন্তু তোমাকে কখনও কাঁদতে দেখিনি বাবা।”
তারিন বলল,” তোর বাবাও কেঁদেছে। বিয়ের আগে আমার চেয়েও বেশি কাঁদতো৷ কাঁদতে কাঁদতে তো একেবারে বেহুশ হয়ে গেছিল।”
বাচ্চারা সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। ইতু-মিতু একসঙ্গে বলল,” সত্যি?”
তারিন মাথা নাড়ল। কিন্তু তবুও বাচ্চাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। বাবার সাথে কান্না ব্যাপারটাই তো বেমানান। আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যাওয়া, সেটা তো আরও বেমানান!
তারিন বলল,” তোদের বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে মোহনা মামীকে ফোন কর। তিনি তো আর মিথ্যা বলবেন না।”
ঈশান সঙ্গে সঙ্গে শব্দ করল,” এহেম, এহেম, বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না তারিন? বাচ্চাদের এসব জানানোর কি প্রয়োজন?”
” হু, শুধু নিজের বেলাতেই বাড়াবাড়ি তাই না? বাচ্চাদেরও তো জানা উচিৎ তাদের বাবা কত ইমোশনাল ছিল!”
মিতু সবিস্ময়ে বলল,” বাবা ইমোশনাল ছিল? সত্যি বলছো মা?”
ঈশান ধমক দিয়ে বলল,” এই, তোদের লেখা-পড়া নেই? যা এখান থেকে। খালি আজাইরা আলাপে ইন্টারেস্ট।”
জিতু মহাবিরক্ত কণ্ঠে বলল,” আজকে তো উইকেন্ড বাবা। তাহলে আজকেও কেন লেখাপড়া?”
” উইকেন্ডেও লেখাপড়া করতে হয়। যা, সবাই পড়তে বস। নাহলে কিন্তু নেক্সট ঈদে বাংলাদেশে যাওয়া ক্যান্সেল। কাউকে নিবো না।”
সবাই ছটফটিয়ে উঠল। ঈদ মানে বাংলাদেশে যেতেই হবে। জিতু বলল,” আমি অবশ্যই বাংলাদেশে যেতে চাই। আচ্ছা বাবা, অন্তি চাচী কি এখনও আগের মতো অনেক মটু আছে? মা, তুমি একটা ডায়েট চার্ট লিখে দাও না অন্তি চাচীর জন্য।”
তারিন আর ঈশান একসাথে হেসে ফেলল। গতবার যখন তারা বাংলাদেশে গেল তখন ফাহিমের বউ অন্তি প্রেগন্যান্ট ছিল।তাই দেখেই জিতু এই কথা বলছে। তারিন পেশায় একজন নিউট্রশনিস্ট। একবার অনেক মোটা এক মহিলা তারিনের থেকে কাউন্সিলিং নিয়েছিল। ছয়মাসে সে একদম স্লিম হয়ে গেছে। জিতু পুরো ব্যাপারটা দেখেছিল। এজন্য সে মোটা কাউকে দেখলেই আবদার করবে যেন তারিন তাকে ঠিক করে দেয়। ঈশান বলল,” আচ্ছা, ঠিক করে দেবে। এবার বাংলাদেশে গেলে আর অন্তি চাচীকে মটু দেখবি না।”
” সত্যি?”
” হুম। এখন পড়তে যা। তাহলে বিকালে সবাইকে স্কেটিং-এ নিয়ে যাবো।”
বাচ্চারা উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল,” ইয়ে!” তারপর দ্রুত তারা নিজেদের ঘরে চলে গেল। তারিন হাত তালি বাজিয়ে বলল,” সাবাশ, আমার পাশাপাশি বাচ্চাদের ম্যানেজ করাও ভালোই শিখে গেছেন।”
” তুমি ওদের এসব কেন বলতে যাচ্ছিলে তারিন? ওরা কি ভাববে?”
” কেন? আপনার লজ্জা লাগে বুঝি? দেখুন লজ্জার কিছু নেই। সেদিন যদি আপনি বেহুশ না হতেন তাহলে এই ইতু, মিতু, জিতু, আমার তিনটা কিউট বেবি কি কখনও পৃথিবীতে আসতো বলেন? কোথায় পেতেন আপনি ওদের?”
ঈশান তারিনের হাত ধরে একটানে কাছে এনে আবেগমাখা কণ্ঠে বলল,” সবচেয়ে বড় কথা আমি তোমাকে কোথায় পেতাম? এই মিষ্টি হাসিটাকে কোথায় পেতাম বলো?”
তারিন লাজুক হেসে বলল,” হাউ রোমান্টিক!”
ঈশান বলল,” আই লভ ইউ।”
” আই লভ ইউ টু।”
ঈশান জড়িয়ে ধরে তারিনের কাঁধে মুখ গুজল।তারিন চোখ রাখল জানালায়। স্কটল্যান্ডে বরফ জমে আবহাওয়া এখন শ্বেতাভ। দূর থেকে দেখে লাগছে যেন সাদা মেঘ। তারা বুঝি মেঘের রাজ্যে চলে এসেছে। এখানে দুঃখের কোনো গল্প নেই। শুধু আছে সীমাহীন সুখ, অপরিমিত প্রশান্তি।
_____
সমাপ্ত।
Bhalo laglo