তুই আমারই থাকবি পর্ব ১৪+১৫

পর্ব ১৪+১৫
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_14
!
‘-এই তুমি হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলে কেন?তোমার কী কোনো কু মতলব আছে নাকি?(ভ্রু কুঁচকে)
!
আমি উনার কথা শুনতে পেয়েও কিছু বললাম না।
!
-উনি আমার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।বললেন,বৃষ্টি আসবে নাকি?
!
-আমি এবারেও চুপ!
!
-উনি এবার রেগে গেলেন।ড্রাইভ করা থামিয়ে সোজা হয়ে বসলেন।আমি সবকিছু বুঝতে পেরেও আগের মতো মন খারাপ টাইপ ভাবসাব নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম।
!
-উনি রাগী বিবশ কন্ঠস্বরে বলে উঠলেন খুশবু?আমি তোমার সাথে কথা বলছি,তুমি কী শুনতে পাচ্ছ না?
!
-পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই আমি শুকনো মুখে বলে উঠলাম,কী?
!
-কী মানে?তোমার সাথে আমি কথা বলতে চাইছি আর তুমি আমার দিকে না তাকিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখো? এতবড় সাহস তোমার ডেয়ারিং মেয়ে!(রেগে)
!
-আমি মুখ শুকনো করেই বললাম,আপনি?আপনি আমার সাথে কী কথা বলবেন?হাউ?
!
-উনি রাগী ফেইস কাচুমাচু করে বললেন,না মানে!তুমি চুপচাপ কেন?
!
-আমিও ফটাফট বললাম,আসলে ওইখানে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চকলেট কেক দেখে এসেছি!
!
-এগুলো কী তোমার ফেভারিট?তুমি খাবে?
!
-হুম।আরকিছু খেতে পারি না পারি চকলেট কেক না খেলে আমার মুড অফ থাকে সারাদিন।কিছুক্ষণ পর পর মুড সুইং হয়।কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে হয় না।আমি বিরাট ডিপ্রেশনে চলে যাই!
!
-হোয়াট???(অবাক গলায়)
!
-আমিও মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বললাম,জ্বি!
!
-হাউ পসিবল!তোমার কী সত্যিই মুড সুইং হয়?আচ্ছা,সত্যি করে বলতো!
!
-আমিও ভাব নিয়ে বললাম,হুম,হয়তো!
!
-তুমি তাহলে সত্যিই প্রেগন্যান্ট! (ভাবুক কন্ঠে)
!
-আমি রেগে বললাম,আপনার কেল্লা আর মাথা!
!
-তুমিই তো বললে,তোমার মুড সুইং হয়।আর আমি জানি প্রেগন্যান্ট মহিলাদের নাকি বেশিরভাগ সময় মুড সুইং হয়!
!
-আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম,আমি মোটেও ওইভাবে বলিনি।আমি মুড সুইং বলতে মুড অফ বুঝাতে চেয়েছি।আর আপনি এত হাঁদারাম যে এটাও বুঝেন না!আপনি কী বার্লি খেয়ে বড় হয়েছেন?আজব!
!
-আমি মোটেও বার্লি খেয়ে বড় হয় নাই!(রেগে)
!
-আপনি আসলেই ছেলেমানুষ! যত্তসব!বুইড়া বয়সে ভীমরতি! অসহ্য!
!
-এই আমায় ইনসাল্ট করবে না!
!
-ওকে চুপ!এবার গাড়িটা চালান!
!
-উনিও কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,চলো ফুচকা খেতে যাই?
!
-আমি বললাম,আপনি?ফুচকা খাবেন?
!
-হুম,সারাজীবন শুনেই এসেছি!ইংল্যান্ডে তো এসব পাওয়া যায় না।আমার ফ্রেন্ডরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে কত ফুচকা পার্টি করেছে আর আমায় ছবি তুলে পাঠিয়েছে!
!
-আমি ভাব নিয়ে বললাম,না যাবো না।ফুচকা খাবো না আমি!
!
-আচ্ছা,তুমি তাহলে চকলেট কেক খাবা, আমি ফুচকা।
চলো!
!
-আচ্ছা,জোর করছেন যখন যাই!বৃষ্টি আসবে মনে হয়!
!
!
!
!
!
!
-আমি আর উনি ফুচকা খেতে পার্কে গেলাম।বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব তাই পার্ক খালি।দু’তিনজন মানুষ এদিকওদিক আছে।উনি আমাকে আগে যেতে বললেন,কারণ আমি সবকিছু চিনি,বলতে পারি।কীভাবে কী করতে হয় জানি। আমি ফুচকাওয়ালাকে গিয়ে চুটকি বাজিয়ে বললাম,হেই মাম্মা!
!
-উনি অবাক হয়ে আমার মুখপানে তাকিয়ে রইলেন।উনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ইশারায় উনাকে চুপ করতে বললাম।
!
-জ্বে আফা, কইন!
!
-একপ্লেট ফুচকা, ঝাল ছাড়া,টক ছাড়া!
!
-ফুচকাওয়ালা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,আফা, মাইয়ারা তো এমনে ফুচকা খায় না।আপনে এমনে খান কেন?
!
-আরে মাম্মা, আমি খাবো না।ওই যে,ওই ইংরেজটাকে দেখছেন, উনি খাবে!উনি ঝাল -টক খান না!
!
-ফুচকাওয়ালা উনাকে দেখে দু’হাত উপরে তুলে বললেন, হে খোদা,তুমি আমার মনের কথাডা হুনছ,আমি চিন্তাতেও ভাবি নাই, এইরহম সুন্দর বিদেশী মানুষ স্বচক্ষে কোনোদিন দেখমু!ইয়া খোদা,তুমি আছ,তুমি আছ!বলে মোনাজাত শুরু করলেন!
!
-আমি আর উনি ফুচকাওয়ালার কান্ড দেখে বেক্কলের মতো তাকিয়ে রইলাম।
!
-কী মাম্মা,ফুচকা দিবা না?
!
-কী কও আফা!এক্কুণি দিতাছি।তোমরা বসো গিয়া!
!
-আচ্ছা!
!
-উনি কী আফনের কেউ হন?
!
-আমার জামাই হন!
!
-কী কন আফা?এই বিদেশী মানুষ আমাগো মতো গরীব দেশে আইসা বিয়া করে?(ভাবুক গলায়)
!
-হুম করে!
!
-কেমনে করে?আমি ভাবতে পারতাছি না আফা!বলেই লোকটা তার ভাবনার ঝুড়ি খুলে বসে পড়লো। এমন একটা হাবভাব যেন,আবরার গুন্ডার মতো বিদেশী মানুষ কীভাবে একটা দেশী মেয়ে বিয়ে করে সেটা এক আজব বিষয়।এহেন আজব কথা জীবনেও শোনেনি!
!
-লোকটা ফুচকা বানানোয় মন দিলো। তার ধারণা, বিদেশী মানুষ এসেছে এই প্রথম তার দোকানে,তাই যত্ন করে নিজ হাতে সে ফুচকা বানাবে।সে এটাও বলেছে যে,ইচ্ছেমত আমরা ফুচকা খেতে পারি কিন্ত বিনিময়ে সে টাকা নিবে না, কিছুতেই!
!
-আমি হতাশ হয়ে ফুচকাওয়ালাকে বুঝাবার চেষ্টা করলাম যে,উনি বিদেশী নন,বিদেশে থাকতেন শুধু।জন্ম বাংলাদেশে!কিন্ত ফুচকাওয়ালা কিছুতেই বুঝতে চাইলো না।আমিও হাল ছেড়ে দিয়ে উনার পাশে এসে বসে পড়লাম।উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।আমি কিছু বললাম না।
!
-চলো!
!
-কোথায়?
!
-গাড়িতে!
!
-কেন?ফুচকা খাবেন না?অর্ডার করে এলাম।
!
-ফুচকা গাড়িতে বসে খাবো।
!
-কেন?(সন্দেহ নিয়ে)
!
-আমার না খুব চুমু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে।আর গাড়িতে বসে ফুচকার /চকলেট কেকের সাথে তোমার চুমুটাও খাওয়া যাবে!সো চলো…….(বলেই হা হা করে হাসতে লাগলেন)!
!
-আমি রেগে বললাম,ছিহ বেলাজ কোথাকার। পাবলিক প্লেসে এসব কী?আমার কী কোনো সম্মান নেই নাকি? যে আপনি বললেন,আর আমিও চুমু দিতে রেডি!
!
-তোমার এসব সো কল্ড সম্মানের কথা পড়ে ভেবো! বলেই আবারো হা হা করে হাসতে লাগলেন।সিল্কি লালরঙা চুলগুলোতে হাত বুলাতে লাগলেন আর আমার দিকে তাকিয়ে বেক্কলের মতো হা হা করছেন!’
!

চলবে…….

(গল্পটা কী ভালো লাগছে না?ভালো লাগলে নেক্সট পার্ট দেবো!ইনশাল্লাহ 💜💜)#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_15
!
‘-আমিও রেগে বললাম,এই বেলাজ বুড়া, আপনি বেক্কলের মতো হা হা করছেন কেন?আপনার হাসি যে সুন্দর সেটা কী রাস্তার লোকজনকে দেখাতে ইচ্ছে হয়েছে?
!
-এই, আমি বেলাজ বুড়া?(রেগে)
!
-একশো বার বেলাজ বুড়া।এইভাবে বেক্কলের মতো হাসার কোনো রিজন নেই,তাও হাসছেন।রাস্তাঘাটে এভাবে হাসলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে পাগল ভাববে!
!
-সেটা ওদের ইচ্ছে।ওরা কী ভাবলো না ভাবলো তাতে আমি আমার বিশ্বসেরা হাসিটা মনখুলে হাসতে পারবো না?তোমার দেশের মানুষ এতই বোকা?
!
-বাবাহ….এটা আপনার দেশ না?আপনি তাহলে কোন দেশের?ভিনগ্রহ থেকে এসেছেন?ওয়েট ওয়েট….. সেইজন্যই আপনি এমন? আজব প্রাণী তো……(ভাব নিয়ে)
!
-হাউ ডে…..য়া….র…… র……ইউ??????(রেগেমেগে)
!
-উনি আরো কিছু ডায়লগ আমার উপর ঝাড়বার আগেই ফুচকাওয়ালা ফুচকা নিয়ে হাজির।আমিও উনার থেকে বাঁচার জন্য বললাম,মাম্মা এগুলো ভালো করে প্যাকিং করেছেন তো?আড়চোখে তাকিয়ে দেখি উনি রেগে বোম হয়ে আছেন।হাফপ্যান্টের পকেটে দুটো হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! বাবারে বাবা!ভয়ে আমার আমার ইন্নালিল্লাহ হবার দশা!
!
-ফুচকাওয়ালা বলল,জ্বে আফা।ভালো কইরা প্যাকিং কইরা দিসি।বিদেশী জামাই খাইবো আমি ভালো কইরা নতুন ফুচকা দিয়া দিসি।বলেই দাঁত বের করে হাসতে লাগলেন।ফুচকাওয়ালাকে খুব আনন্দিত দেখাচ্ছিলো।কিন্তু উনি কোনো টাকা রাখেননি!
!
-আমি ফুচকা পর্ব শেষ করে হাতে প্যাকেটগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে গাড়ি নামক ভয়ঙ্কর জিনিসটায় উনার পাশে গিয়ে বসলাম! উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন।কিছু বললেন না!
!
-আমিও বেশ বুঝতে পারছি, কিছু না বলা কিছু বলার চেয়েও ভয়ঙ্কর!ইয়া খোদা…….ইয়া পৃথিবীর মালিক! এই সন্ত্রাস নামক গুন্ডা আবরার আগুনের আগুন থেকে আমায় রক্ষা করো।গুন্ডা যে,প্রাণী বললে রেগে যায়! সেটা তো আমি জানতাম।তাও……ধুর…..তাও বলে ফেললাম?এটা আমার জীবনের সেরা মিস্টেক!!!!
!
!
!
!
!
!
-বাসায় এসে দেখি আম্মুরা চলে গিয়েছে।মামু-ভাইয়া অফিসে।মামানি রান্নাঘরে।আমি উপরে রুমে চলে গেলাম।
!
-খুশবু সোনা?গুন্ডাটা কিছুক্ষণ পর রুমে এসে বললো,
!
-আমি ভয়ে ভয়ে অবাক হয়ে বললাম,জ্বি বলুন!
!
-ফ্রেশ হয়েছ?
!
-না,,,,,,না,,,!
!
-যাও,ফ্রেশ হয়ে আসো!ঠান্ডা গলায়!
!
-আমি ভয়ে বললাম,হ্যা যাচ্ছি!
!
-যাও!তোতলাচ্ছ কেন?
!
-কোথায় তোতলাচ্ছি!আমি যাই!ফ্রেশ হয়ে আসি!
!
-যাও!
!
-উনার কথা শুনে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম।উনি সোফায় বসে আছেন।গালে হাত দিয়ে!
!
!
!
!
-আধঘণ্টা পর!!!
!
-ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি আবরার গুন্ডা বসে আছে আগের মতো। বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে।চকলেট কেকটা নেই,বুঝলাম উনার পেটে…….
!
-তোমার কেকটা আমি খেয়ে নিয়েছি।খেতে খেতে ভাব নিয়ে বললেন,
!
-কেন?(সন্দেহ নিয়ে)
!
-সেসময় আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলেছ,তাই!(ভাব নিয়ে)
!
-কেন?
!
-আজব তো!তুমি কী শুনোনি আমি কী বলেছি?
!
-ভয়ে ভয়ে, শুনেছি!
!
-তাছাড়া, ওসব খাওয়া তোমার মতো চিকন মেয়েদের ঠিক নয়!(ভাব নিয়ে)
!
-রেগে বললাম,মোটেও না।তাছাড়া আমি এতটাও চিকন না।
!
-মোটেও হ্যাঁ!আর তুমি চিকনই। আমি যা বলবো তাই,রাইট! গট ইট!(রেগে)
!
-আমিও রেগে চুপ করে রইলাম।চুল থেকে পানি পড়ছে,তাই টাওয়াল দিয়ে প্যাঁচিয়ে রেখেছি।উনি খাওয়া রেখে বললেন,
!
-তোমার ওড়নাটা খুলে দাও তো!!(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
!
-আমি অবাক গলায় চিৎকার করে বললাম,কীহহহহ…..??????’
!

চলবে……

হ্যাপি রিডিং💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here