#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–13
#Arishan_Nur
–এবার তো সবাই যে যার রুমে যাও? আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাব। মিনমিনে সুরে কথাটা বলল নিরব।
সুমি খালা মুচকি হেসে বলে, হ্যা,হ্যা তুই তো চাসই আমরা যেন চলে যাই। আর তুই তোর বউয়ের সাথে সময় কাটাতে পারিস। বুঝি তো সব৷
নিরব মুখ বাকিয়ে বলে, রাত শেষ। একটু পর ফজরের আযান দিবে। আর মুভিও তো শেষ হলো, তাই না? আর কি কিছু বাকি আছে?
সুমি খালা বলল, তুই আর বরকত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আয়। আমরা মেয়েরা আজকে সবাই একসাথে নামাজ পড়ে যে যার রুমে ঘুমাতে যাব। তারপর থাকিস তুই তোর বউ নিয়ে।
নিরব বলল, বাসায়ই নামাজ পড়ি। মসজিদে,,,,,,,,
সুমি খালা হুংকার দিয়ে বলে, না, তোরা মসজিদে যাবি।
বরকত বলল, ঠিক আছে, আন্টি মনি। আমি নিরবকে নিয়ে যাব।
ঠিক সেই সময় আযানের ধ্বনি ভেসে উঠে। কিছু ক্ষন পর বরকত আর নিরব নামাজ পড়তে চলে যায়।
আর মেয়েরা বাসায়ই পড়ে নেয়। তারপর যে যার রুমে চলে আসে।
সবাই চলে যাওয়ায় প্রমিতির রুমটা ফাকা হয়ে গেল। প্রমিতি বিছানা গুছিয়ে, বিছানায় বসে পড়ে। সে অপেক্ষা করছে নিরবের আসার।
বেশকিছু ক্ষন পর নিরব আসল। রুমে ঢুকেই দেখে প্রমিতি তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সে প্রমিতিকে দেখে মুচকি হাসল। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসল।
সে বাথরুমে বসে বসে ভাবতে লাগলো, এখনো একটু হলেও সময় আছে। অল্প কিছুক্ষনের জন্য হলেও বাসর রাতের ভাইভ পাওয়া যাবে৷
এইসব ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিল নিরব। সে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিল।
তারপর চুল ঠিক করে বাথরুম থেকে বের হয় নিরব। সে দেখতে পেল প্রমিতি এখনো সেইভাবেই বসে আছে।
নিরব প্রমিতির কাছে গিয়ে বসে পড়ে বলে, হ্যা বলছিলাম কি,,,,,
প্রমিতি ডাগর ডাগর চোখে নিরবের দিকে তাকালো। তা দেখে নিরব চমকে উঠল। মেয়েটার চোখে এক অদ্ভুত ধরনের নেশা আছে বুঝি!
নিরব এক ধ্যানে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থেকে প্রায় ফিসফিস করে বলে উঠে, কালকে সবাই ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের মধ্যে কিছু একটা হতে যাচ্ছিল,,,,,,,চল সেখান থেকে আবার শুরু করি।
প্রমিতি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
তা দেখে নিরব বেশ খুশি হয়। সে আবারও বলল, আমার সাথে বাকি জীবনটা পায়ে পা মিলিয়ে চলতে রাজী আছো?
প্রমিতি মুখে কিছু বলল না, কিন্তু মাথা নাড়িয়ে সায় দিল যে সে নিরবের সাথে আগামী জীবনের পথচলায় পাশে থাকতে রাজী আছে।
তা দেখে নিরব প্রমিতি নরম হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল।
নিরবের স্পর্শ পেতেই প্রমিতির মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল। তার মধ্যে কেমন যেন এক কম্পন সৃষ্টি হতে লাগলো। হুট করে হাত-পা কাপতে লাগল প্রমিতির।
তা দেখে নিরব ভ্রু কুচকে বলে উঠে, তোমার কি কাপা-কাপির রোগ আছে নাকি?
প্রমিতি চোখ তুলে নিরবের দিকে তাকালো, তারপর ছোট্ট করে বলে, উহু।
–তাহলে তোমার হাত কেন কাপছে?
–কই কাপছে?
–এই যে কাপছে।
–নাহ!
নিরব প্রমিতির হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে, আই ক্যান ফিল!
নিরবের বলা কথাটা প্রমিতির কানে গিয়ে বাজলো। বাক্যটি যেন প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার তার কানে বাজতে লাগলো।
এবার নিরব তার আরেকটা হাত প্রমিতির ডান গালে রাখল।
গালে নিরবের হাতের ছোয়া পেতেই প্রমিতি শিউরে ওঠে এবং দ্রুত চোখ বুজে ফেলে।
প্রমিতির ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। কেমন যেন লাগতে শুরু করেছে তার। অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে কোথায় পালিয়ে গেলে বেচে যাবে সে। প্রমিতির নিশ্বাস ভারী হতে লাগলো।
নিরব প্রমিতির মুখের উপর ফু দিল। এতে যেন চারশ চল্লিশ ভোল্টের কারেন্ট প্রবাহিত হলো প্রমিতির দেহে। প্রমিতি তার হাত বিছানার চাদরের সাথে খামচে ধরে।
নিরব আস্তে আস্তে এগুতে লাগে প্রমিতির দিকে। প্রমিতির মাঝে কোন নড়চড় নেই। সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে নিরব তার অতি নিকটে। সে আবারো চোখ বুজে ফেলে।
নিরব প্রমিতিকে স্ক্যানার মেশিন যেভাবে কোন বস্তুকে খুটে খুটে স্ক্যান করে ঠিক সেই ভাবে দেখছে৷
প্রমিতির গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটি কাপছে। বেশ জোড়েই কাপছে ঠোঁট জোড়া। নিরব তা দেখতে পাচ্ছে। আবার হাতটাও কাপছে।
নিরব মনে মনে ভাবতে লাগলো, মেয়েটার কি মৃগ্মী বেরাম আছে নাকি?
সে প্রমিতির ঠোঁটের উপর হাত রাখল। তারপর যেই না প্রমিতির দিকে এগাবে নিরব ওমনি প্রমিতি কাপা গলায় বলে উঠে, আমার খুদা পেয়েছে।
নিরব তো আকাশ থেকে পড়ল। এই রকম সময় কেউ যে এমন কথা বলতে পারে তা জানা ছিল না নিরবের।
নিরব অবাক হয়ে গেল এবং বলল, কি বললে?
প্রমিতি কিউট করে বলে, আমার না খুদা লেগেছে খুব। খাওয়ার মতো কিছু আনতে পারবে আমার জন্য?
বাসর ভোরে নতুন বউয়ের মুখে যে এমন কিছু শুনবে তা মোটেও আশা করে নি নিরব।
সে অস্ফুট স্বরে বলে, সাবাশ! এই না হলো নিরব চৌধুরির বউ!
নিরব বলল, খুব বেশি খুদা লেগেছে?
প্রমিতি ছোট করে বলে, হুম।
–খেতেই হবে?
–হ্যা।
–আচ্ছা, ওয়েট দেখি কি আনা যায় তোমার জন্য।
বল্র নিরব রুমের বাইরে গিয়ে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরে তেমন কিছু ই নেই। খালার বাসায় ফ্রিজ যে কই তা জানে না নিরব৷
নিরব দেখল একটা মি.নুডুলসের প্যাকেট আছে। সে উপায় না পেয়ে নুডুলস রান্না করতে লাগলো।দ্রুত কিছু খাওয়াতে হবে প্রমিতিকে। তাই রান্না করতে এক বিন্দু ভাবলো না নিরব। খাওয়া -দাওয়ার চক্করে তার যেন বাসর ভোরটাও মাটি না হয় এমনটাই দোয়া করছিল নিরব।
রান্না করে গরম গরম নুডুলস বাটিতে সার্ভ করে রুমের দিকে যেতে লাগলো।
রুমে যেতেই তার চোখ কপালে। কারন প্রমিতি বিছানায় শুয়ে পড়েছে। শুধু তাই না বরং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে৷
তা দেখে নিরব মনে মনে কষ্ট পেল। সে গিয়ে প্রমিতিকে ডাকতে লাগে কিন্তু প্রমিতির কোন সাড়া পেলনা।
তাই নিরব হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে ধপ করে। এরপর বলতে লাগলো, বাহ! এতো সুন্দর বাসর রাত টা কাটলো আমার! আজীবন মনে থাকবে। প্রথমে কনজরিং দেন মি.নুডুলস। ভালোই।
তারপর আর কি? নিজের বানানো নুডুলস নিরব নিজেই খেয়ে-দেয়ে প্রমিতির পাশে শুয়ে পড়ল। নিরবের প্রমিতির উপর খুব মেজাজ গরম হচ্ছে। কি দরকার ছিল এই সময়ে ঘুমানোর? এক রাতে না ঘুমালে কি তার হ্যালুয়েশন হত নাকি? আজব! সবাই মিলে তার সাধের বাসর রাতটা এভাবে ত্যাজ পাতা বানিয়ে দিল।
বরকতের ঘুম ভাংলো।সে চোখ খুলে দেখে লিনা তার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। লিনাকে দেখে বরকত মুচকি হাসল। এখন ঘড়িতে সোয়া দশটা বাজে।
বরকত দেখল লিনা গভীর ঘুমে আছে। তাই এই ফাকে বরকত লিনার গালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দিল।
এবং আস্তে আস্তে বলে উঠে, আই লাভ ইউ! কবে যে তুমি বুঝবা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি! যতো দিন তুমি আমাকে নিজ থেকে কাছের আসার পারমিশন না দিচ্ছো, আমি অধিকার খাটাব না। আফটার অল, আই লাভ ইউ সো মাচ!
এরপর বরকত উঠে ফ্রেস হতে গেল৷ ফ্রেস হয়ে লিনাকে ডাকতে লাগে।
লিনা ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে, কেন ডিস্টার্ব করছো?
–উঠবা না?
–নাহ।
–আরো ঘুমাবে?
লিনা বলে উঠে, হু।
–বেলা তো অনেক হলো। উঠতে হবে না।
লিনা বলল, কয়টা বাজে?
–দশটার বেশি।
লিনা ঝটপট উঠে বসল এবং বরকতকে ঝাড়ি মেরে বলে, এতো দেরিতে ডাকলা তুমি আমাকে? আগে কেন ডাকো নি?
–আরে আমিও ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কালকে তো ঘুম হয় নি না তাই,,,,,,,
লিনা দ্রুত উঠে বাথরুমে গেল।
এদিকে এগারোটার দিকে আশা নিরব দের রুমে গিয়ে গেট ধাক্কাতে লাগে।
গেটে নক করার শব্দে প্রমিতির ঘুম ভাংলো। সে উঠে বসে দেখে নিরব তার পাশে ঘুমাচ্ছে।
নিরবকে দেখতেই প্রমিতির লজ্জা পেয়ে গেল।
দে দ্রুত পায়ে উঠে গেট খুলে দিল।
গেট খুলতেই আশা ঢুকে পড়ে রুমে আর বলে,সেকি! ভাইয়া ঘুমাচ্ছে! আই থট তোমরা রোম্যান্স করছিলে।
একথা শুনে প্রমিতি আবারো এক দফা লজ্জা পেল। এবং বলল , এমন কিছু না।
–হুম। হুম। বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা চল। আম্মু ডাকছে তোমাকে।
আশা প্রমিতিকে নিয়ে তার আম্মু মানে সুমি খালার কাছে গেল।
খালা প্রমিতিকে দেখে বলে, গোসল করো না?
প্রমিতি মৃদ্র কন্ঠে বলে,না। খালা।
যাও গোসল করে তারপর আসো।
–আচ্ছা, খালা।
বলে প্রমিতি ফের রুমে এলো। তখনো নিরব ঘুমাচ্ছে।
প্রমিতি গোসল সেরে বরকতের দেওয়া শাড়ি টা পড়ে বের হলো এবং আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে লাগল।
আজকেও ঠিক এই সময় নিরবের ঘুম ভাংলো এবং সে চোখ খুলতেই প্রমিতিকে দেখতে পেল৷
নিরব হালকা হেসে প্রমিতির দিকে এগুলো এবং তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে তার কানের কাছে মুখ এনে চুপিচুপি বলে, কালকে তুমি কেন ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
প্রমিতি হালকা কেপে উঠে।
চলবে।