#তুমিই_আমার_আষাঢ়_শ্রাবণ
#Part_2
#লেখনীতে_Nusrat_Hossain
নাফিয়া বাড়িতে ফিরে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় ঘুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে ।তার মনটা ভীষন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ।বাসায় এসে মায়ের সাথেও দেখা
করেনি ।না চাইতেও বারবার রেস্টুরেন্টের ঘটনাটা মনে পরছে ।একবার মন বলছে ছেলেটাকে চড় মারাটা কি ঠিক হয়েছে ? মায়ের প্রতি রাগটা কি ছেলেটার উপর দিয়ে গেল ? আরেকবার মন বলছে একদম ঠিক করেছে অসভ্য ছেলেটাকে চড় মেরে ।সে কোনো ভুল করেনি ।
_________________
আমার ছেলের গালে চড় মারে , কার এত বড় সাহস হলো ?
স্পর্শ মাটিতে দুই হাত ভর দিয়ে , বাড়ির বাউন্ডারির দেয়ালের উঁচুতে দুই পা রেখে সমানতালে পুশ-আপ করছিল ।মিসেস তানিয়ার কথায় পুশ-আপ করা থামিয়ে দিয়ে মাটিতে রাখা টি-শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল ।
স্পর্শ মুচকি হেঁসে জিজ্ঞেস করল , তুমি কখন এলে মা ?
মিসেস তানিয়া ছেলের কথার প্রত্যুত্তর না করে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল ,
কার এত বড় সাহস হলো যে , তোমার গালে চড় মারে ?
স্পর্শ নিজের গালটা আঙ্গুলগুলো দ্বারা মায়ের কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করল।একটা মেয়ের হাতে চড় খেয়ে আবার মায়ের কাছে ধরা পরে যাওয়া এটা খুব-ই লজ্জাজনক বিষয় মনে হলো স্পর্শের কাছে ।তা-ও আবার একটা মেয়ের হাতে !
মিসেস তানিয়া তীক্ষ্ণ গলায় বললেন , লুকিয়ে লাভ নেই ।আমি অনেকক্ষণ আগেই তোমার কাছে এসেছি কিন্তু তুমি তোমার কাজে মনোযোগী ছিলে , তাই আমায় দেখতে পাওনি ।আর এখানে এসেই তোমার গালটা আমার চোখে পরল ।
মিসেস তানিয়া ছেলের গালটা আলতো হাতে ছুঁয়ে ভারী কন্ঠে বললেন ,
মনে হচ্ছে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কেউ চড়টা
মেরেছে ।গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে ।
মিসেস তানিয়া স্পর্শের গালটা ছুঁয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে রইলেন ।অনেক সাধনা করে স্পর্শকে তারা পেয়েছিলেন ।ছোটবেলা থেকে ছেলের গাঁ-য়ে কোনোদিন আঁচড় পর্যন্ত লাগতে দেননি ।সেই ছেলের গালে চড়ের নিশানা দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছেন তিনি ।স্পর্শ ফর্সা হওয়াতে পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ স্পষ্টভাবে
ফুঁটে উঠেছে ।ছেলেটা একদম তার মতোই হয়েছে ।একদম ফর্সা টগবগে গাঁ-এর রং ।
স্পর্শ স্বাভাবিক গলায় বলল , এটা তেমন কিছুনা আম্মু।তোমায় এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা ।
তোমার মনে আছে স্পর্শ ? ছোটবেলায় একবার এক টিচার তোমাকে চড় মেরেছিল , তোমার বাবা ঐ টিচারের স্কুলের চাকরিটাই শেষ করে দিয়েছিল একেবারের জন্য , মিসেস তানিয়া গম্ভীর গলায় বললেন ।
স্পর্শ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে আবির সাহেব এসে হাজির ।আবির সাহেবকে দেখে স্পর্শ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চাইল ।কারন , চড়ের দাগগুলো বাবার চোখে পরলে , বাবা তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে ছাড়বে ।তার বাবা মা দুজনেই তাকে নিয়ে অতিরিক্ত পসেসিভ ।স্পর্শ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চাইল কিন্তু পারলনা ।তার আগেই আবির সাহেব স্পর্শের হাতটা ধরে স্পর্শের গালের চড়ের দাগগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন ।মুহূর্তেই আবির সাহেবের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।
বাবা আম্ স্পর্শ কিছু বলতে চাইল তার বাবাকে ।
কিন্তু তার আগেই আবির সাহেব বললেন ,
কে চড় মেরেছে ? নামটা বল । দেশ ছাড়া করবো আমি তাকে ।লাইফ হেল বানিয়ে দিব আমি তার পরিবারের ।আবির সাহেবের চোখেমুখে রাগস্পষ্ট ।
স্পর্শ ভাবলেশহীন গলায় বলল , আমি আর ছোট নেই বাবা ।আমার ব্যাপারটা আমাকেই হ্যান্ডেল করতে দাও ।যে আমায় আঘাত করেছে তাকেও পাল্টা আঘাত পেতে হবে , তবে তার কোনো ক্ষতি করে নয় ।শেষের কথাটা স্পর্শ ফিচেল হেঁসে বলল ।
আবির সাহেবও ফিচেল হাঁসি হেঁসে ছেলের কাধ চাঁপড়ে বললেন , এই না হলে আমার ছেলে ।একদম ছাড় দিবিনা কাউকে ।
স্পর্শ আগের মত হাঁসিটা দিতে দিতে নিজের রুমে চলে এল ।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে কাকে যেন ফোন করল ।ওপাশ হতে ফোনটা রিসিভ করতেই স্পর্শ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল ,
ঐ মেয়ের কোনো খোঁজ খবর পেয়েছিস ?
ওপাশ থেকে বলল , সিসিটিভি ফুটেজে মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলনা ।অনেক কষ্টে মেয়েটার খোঁজ নিয়েছি দোস্ত ।মেয়েটার নাম নাফিয়া ।আর সব থেকে বড় কথা হল মেয়েটা আমাদের কলেজেই পরে আর বাড়িও আমাদের কলোনিতেই ।
স্পর্শ ঠোট কামড়ে হেঁসে বলল , থ্যাংকস দোস্ত ।তোকে আর কিছু করতে হবেনা ।
ওপাশ থেকে বলল , থ্যাংকস দিতে হবেনা দোস্ত ।আবার কোনো কিছু দরকার পরলে আমায় জানাস ।
আর পার্টি কিন্তু দিতে হবে দোস্ত ।
স্পর্শ বলল , অবশ্যই ।ভালো থাকিস ।এখন
রাখছি ।
স্পর্শ ফোনটা রেখে নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল অজানা উদ্দেশ্য ।
__________________
পরেরদিন বিকেলে , নাফিয়া কলেজ থেকে ফিরে এসে শাওয়ার নিয়ে একটানা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল ।কালকে রাতে তার ঠিকমত ঘুম হয়নি ।উহ !এটা বললে ভুল হবেনা যে , কালকের ঘটনাটা ভেবে ভেবে কেন যেন সে একটুও ঘুমোতে পারেনি ।বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে ঢলে পরল নাফিয়া ।
ঘুমের মধ্যে মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই নাফিয়া তড়াক করে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠল ।
আরে বাবা এত উত্তেজিত হোসনা !আমি তোর একমাত্র ভাই ।তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম ইহান মুচকি হেঁসে বলল ।
নাফিয়া একটা দীর্ঘ দম নিয়ে বলল , ভাইইই !তুমি ? আমি তো ভয়-ই পেয়ে গিয়েছিলাম ।
হ্যাঁ তুই তো ভয় পাবি-ই ।একটা ভীতুর ডিম যে তুই !
ভাই মজা করোনা তো ! আমার মন ভীষন খারাপ কালকে থেকে ,নাফিয়া থমথমে গলায় বলল ।
ইহান মুচকি হেঁসে বলল , তোর মন ভালো করার উপায় কিন্তু আছে আমার কাছে ।
নাফিয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাল ইহানের দিকে ।
ইহান বলল , এক্ষুণি আমরা শপিংমলে যাচ্ছি ।দুজনে খুব কেনাকাটা করব ।জলদি রেডি হয়ে নে ।
নাফিয়া খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল , সত্যি-ই ভাইয়া ? কিন্তু আম্মু !
আমি তো যাচ্ছি সাথে মা কিছু বলবেনা ।তুই রেডি হয়েনে ।দেরি করলে কিন্তু আর নিয়ে যাবোনা ।
নাফিয়া কান্নারত চেহারা বানিয়ে বলল , এএএএএএ না…….. আমি এক্ষুণি রেডি হচ্ছি জাস্ট ফাইভ
মিনিট ।
ইহান ফিঁক করে হেঁসে ফেলল বোনের চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে ।
_______________________
নাফিয়া শপিংমলে মেয়েদের ড্রেসগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে ।আর ইহান তার এক বন্ধুর সাথে শপিংমলে হ্ঠাৎ দেখা হওয়ায় সেই বন্ধুর সাথে কথা বলছে ।সেই ফাঁকে নাফিয়া শপিংপলের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে মেয়েদের ড্রেসেগুলো দেখছিল।হঠাৎ ইহানের কথা মাথায় আসতেই সে খুব দ্রুত পা চালিয়ে ইহানের কাছে যেতে লাগল ।আগের জায়গায় এসেও ইহানকে না পেয়ে নাফিয়া ফোনে ইহানের নাম্বারে কল করতে করতে এদিক সেদিক খুঁজতে লাগল ।তার মনোযোগ সম্পূর্ন ফোনে থাকায় হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা খেল তার
পিঠের সাইডটা।নাফিয়া পেছনে ঘুরতে না ঘুরতেই ব্যক্তিটা ঠাস করে নাফিয়ার গালে চড় মেরে বসল ।
নাফিয়া হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে দেখল কালকের সেই ছেলেটা ।যাকে থাপ্পড় মেরেছিল কালকে ।
নাফিয়া মুখ ফুঁটে কিছু বলার আগেই স্পর্শ বলে উঠে ,
বাড়িতে কি বাপ ভাই নাই ? অসভ্য মেয়ে কোথাকার !ছেলে দেখলেই খালি ছেলেদের গাঁ-য়ে পরতে ইচ্ছে করে তাইনা ? ফালতু মেয়ে বলেই স্পর্শ নিজের ফিচেল হাঁসিটা দিতে গিয়েও দিলনা ।বরং সে খটখট শব্দে পা ফেলে চলে গেল , মনে খুব আনন্দ নিয়ে ।
নাফিয়া থম মেরে গালে হাত দিয়ে টলটল দৃষ্টিতে শপিংমলের চারদিকে তাকালো ।সবাই তার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।যেন , সে কোনো চিড়িয়াখানার হনুমান !
চলবে,
@Nusrat Hossain