তুমিময় আসক্তি পর্ব -২১+২২

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২১”

— রুদ্র রোজার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে রাগে ফুসতে থাকে৷ রোজা যেনো অবিশ্বাস্য চোখে রুদ্রকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ রুদ্র তার সাথে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেই পারিনি৷ অসহ্য বিস্ময় ঠেলে তাকিয়ে আছে দোলা৷ হাতের কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছে সে। তানিয়া ছুটে যাবে দোলাকে তুলতে তার আগের রুদ্র হাত বাড়ায় রোজার দিক হতে নজর সরিয়ে। দোলা চমকপ্রদ চক্ষু বিসর্জন দিচ্ছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র এবার ঝুকে বসে দোলার দুই বাহু ধরে তোলে। পুনরায় হাতের ব্যথায় দোলা কিঞ্চিৎ আহ শব্দ করে এতে যেনো রুদ্রর হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়৷ রোজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুতি আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে মনের আশ মেটানো। রোজা এখনো স্থীর চাহনিতে তাকিয়ে৷ এই রুদ্র অচেনা তার। সম্পুর্ণ আলাদা মানুষ। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোর সাহস কি করে হয় দোলার গায়ে হাত দেওয়ার? দোলা আমার ওয়াইফ। রুদ্রর এই কথাটা রোজার মধ্যে বারবার রিপিট হয়। কেনো জানি এই শব্দটা আজ খুব কষ্ট দিচ্ছে তাকে৷ সে-তো চায়না রুদ্রকে। তো যা ইচ্ছে হোক তার সমস্যা থাকার কথা না। তাহলে কেনো এই অচেনা ব্যথা মনে।

– এতখন চুপচাপ ছিলাম কেনো জানিস? রুদ্রর কথায় সবাই বিস্ময় চাহনি রাখে।
– দেখছিলাম তুই কতটা নাটক করতে পারিস৷ তোর অভিনয়ের পরিপক্বতা কতটা হয়েছে। আমি দেখছিলাম তুই আর কত রকম ন্যাকামি করতে পারিস৷ কিন্তু তুই সব কিছুর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। দোলাকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর কথাটা বলে রুদ্র আবারও হাত তুলে মারার জন্য তখন দোলা রুদ্রর হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রোজা ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে খিচে চোখ বন্ধ করে আছে। সবাই আতংকিত চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র যে ভীষণ পরিমাণে রেগে আছে বোঝায় যাচ্ছে।

– আমার জীবন’টা তুই শেষ করেছিস। তোর মতো ঠক প্রতারক নোংরা মানসিকতার মেয়েকে ভালোবেসে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলেছি। আমার স্বপ্ন, আমার আশা আকাঙ্খা, আমার সুখ, আনন্দ, হাসিখুশি সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস তুই। আবার সেই ভালোবাসার দাবী নিয়ে আমার কাছে ফেরার কথা বলিস। আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করছিস। আমার ভালোবাসার দিকে আঙ্গুল তুলিস। হ্যাঁ তোকে ভালোবাসতাম আমি। পাগলের মতো ভালোবাসতাম। যার প্রতিদানে তুই আমাকে সস্তা ভেবে ছুড়ে ফেলেছিস। ঠকিয়ে গেছিস আমায়। আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছিস। আমায় নিঃস্ব করে দিয়ে আরেকজনের হাত ধরে… বাকিটা বলার আগে থেমে যায় রুদ্র৷ নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে তার। সবাই নিরব হয়ে রুদ্রর কথা শুনছে৷ রুদ্রর মধ্যে যে হতাশা, কষ্ট সেটা সবার সামনে নিঙড়ে দেয় আজ।
— রুদ্র এবার দোলার হাত চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ রোজা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু৷ দোলাও চমকে উঠে হঠাৎ এমন হওয়াতে। বিমুঢ় হয়ে রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে৷

–শী ইজ মাই ওয়াইফ! আর আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসি। কোনো বেইমানের জায়গা আমার কাছে নেই৷ আমি যদি কাউকে ঘৃণা করি এই মুহুর্তে সেটা তুই। শুধুমাত্র তুই সেটা। বেরিয়ে যা বলছি। নেক্সট টাইম আমার সামনেও আসার চেষ্টা করবি না। তোর মুখও আমি দেখতে চাইনা৷ তোর মতো বেইমানের ছায়াও আমার জীবনে অভিশাপ।

— রোজা ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর দৃষ্টি রেখে বলে দোলা মা হবে তার জন্যই কি আমাকে অবহেলা করা রুদ্র? তুমি যে দোলাকে ভালোবাসো না এটা আমি খুব ভালো করে জানি৷ তুমি যে সবার সামনে ভালোবাসি বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছো! দোলার সাথে তোমার সম্পর্কটা কত সুন্দর আমাকে দেখাতে চাইছো? এই সব কিছু যে আমাকে দেখানো এটাও আমি জানি। রুদ্র তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি। কেনো করছো এমন? রাগ করে তাই তো। আচ্ছা আমাকে বলতে দাও একবার আমি কেনো গিয়েছিলাম৷ আর কোথায় গিয়েছিলাম। আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি রুদ্র। আমি তোমাকে বাচ্চা দেবো৷ তোমাকে বাবা হওয়ার সুখ দেবো। আমি যে ভুল করেছি সেটা শোধরাই নেবো। তুমি দোলাকে ছেড়ে দাও৷ তাছাড়া ওই সন্তান তোমার নয় রুদ্র৷ দোলা তোমাকে.. বাকিটা শেষ করার আগে দোলা সপাটে একটা চড় বসিয়ে দেয় রোজার গালে। রোজার নোংরা কথায় বাধ্য করে দোলাকে এটা করতে।

– তানিয়া তো বেশ খুশি, রত্না চৌধুরীর মুখেও তৃপ্তিকর হাসি। রাজ মৃদু হাসে, তানভীর আহমেদ খোস মেজাজে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আতংকিত জেসমিন চৌধুরী। রোজার এমন অপমান তার যেনো সহ্য হচ্ছে না৷ রোজা রাগী লুকে তাকায় দোলার দিকে। মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগে দোলা একটা আঙ্গুল তুলে রোজার দিকে তাকিয়ে বলে তোমার এই নোংরা মুখে আমার মাসুম,পবিত্র সন্তানকে নিয়ে একটাও কথা শুনতে চাইনা৷ ভেবো না তুমি যেমন লোভী,নিচ,স্বার্থপর চরিত্রহীন ঠক প্রতারক মেয়েমানুষ তেমনটা সবাই। আমার সন্তানের দিকে বাজে আঙ্গুল তোলার কোনো অধিকার নেই তোমার। যার কাছে ভালোবাসার দাবী নিয়ে এসেছো সেই তোমাকে ঘৃণা করে শুনেছো না। তাহলে কেনো দাঁড়িয়ে আছো এখনো? তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি।

-খুব বড় বড় কথা বলছো তুমি। আমার সাথে লড়তে এসো না দোলা। তাহলে শেষ হয়ে যাবে৷ রেগে বলে দেয় রোজা।
– আসল রুপ প্রকাশ পেয়ে গেলো তবে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রাজ৷ রোজা ভ্রু কুচকে তাকায়।
তোর মধ্যে যে খারাপ মানুষটা আছে যেটা তুই এতখন জোরপূর্বক ভাবে লোকানোর চেষ্টা করছিলি সেটা এখন প্রকাশিত। তুই কেনো এসেছিস? কেনো এইসব ন্যাকামি করছিস জানি না৷ তবে আমি এটা জানি তুই সব জেনে-বুঝে তবেই এসেছিস। আর তার প্রমাণ তোর বলা একটু আগের কথাগুলো। দোলা যে মা হবে আমরা কেউ একবারও বলিনি তোকে। কিন্তু তুই সেটা অনায়াসে বলে দিয়েছিস। তাই বলছি! তুই যে উদ্দেশ্য নিয়ে আসিস না কেনো বেরিয়ে যা এখানে থেকে। আর এবার যদি রুদ্রর কোনো ক্ষতি করার কথা ভুলেও ভাবিস তাহলে কিন্তু আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবো না৷ আমার ভাবতেও লজ্জা লাগে এক সময় তুই আমার বন্ধু ছিলিস। বেরিয়ে যা রোজা চিৎকার করে ধমক দিয়ে বলে রাজ।

— এখানের সবাইকে দেখে নেবো আমি। আমাকে অপমান করে একদম ঠিক করোনি তোমরা। আর তুমি! দোলার দিকে আঙ্গুল তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। আমাকে চড় দেওয়ার শোধ আমি নিয়ে ছাড়বো মনে রেখো। আর রুদ্র তুমি আমার পেছনে কুকুরের মতো ছুটতে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আর আজ আমি যখন নিজে তোমার কাছে ধরা দিতে এসেছি তখন তুমি আমাকে বড়বড় লেকচার দিলে। এই দুই টাকার মেয়েটাকে প্রাধান্য দিলে তো৷ তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে সামনে তুমি নিজেও জানো। কথাগুলো বলে রোজা ব্যাগপত্র গুছিয়ে আবারও হাঁটা দেয়। রোজা চলে যেতেই সবাই স্বস্তি শ্বাস ছাড়ে। রুদ্র রাগের বশে সামনে টেবিলে থাকা ফুলদানি এক-লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সবাই কেঁপে উঠে।
– রুদ্র আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না৷ দ্রুত পায়ে ঘরে চলে আসে। রাজ রুদ্রর পেছনে আসতে গেলে দোলা বাধা দেয়।

– উনাকে একা ছেড়ে দেন ভাইয়া৷ উনার কিছু সময় একা থাকা প্রয়োজন। নিজেকে নিজের সামলানো দরকার। উনাকে শক্ত হতে হবে আর সেটা নিজেকেই করতে হবে। দোলার কথায় রাজ আর যায়না রুদ্রর কাছে। কিন্তু একটু বাদে উপর থেকে ভাংচুরের শব্দ ঠিকই শুনতে পাই সবাই। দীর্ঘশ্বাস ফুকে সবাই নির্বিশেষে।

— রোজা একে একে ঘরের সব কিছু এলোমেলো করে। সবার করা অপমান কোনো ভাবেই হজম হচ্ছে না তার৷ রুদ্রর থাপ্পড় আর দোলার থাপ্পড় যেনো ঘুরে ফিরে তার গালে আঘাত করছে। রোজা এবার আয়নায় একটা গ্লাস ছুড়ে মারে৷ কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পড়ে ঝনঝনিয়ে। এমন সময় উপস্থিত হয় সামির। রোজাকে এমন পাগলামী করতে দেখে অবাক হয়ে ভ্রু কুচকায়।

— আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখিয়ে অনেক বড় ভুল করেছে ওরা। আমি সবাইকে শেষ করে দেবো। আর দোলা! ওর খুব অহংকার না বেবিটা নিয়ে। ওকে ফাইন! বেবিটার ব্যবস্থা আগে করবো আমি। তারপর দেখবো দোলার বড়বড় কথা কোথায় থাকে তখন! কথাটা বলে রোজা হো হো করে হেসে উঠে। সামির তো হতভম্ব হয়ে গেছে রোজার বিহেভে।

– রোজা কি হয়েছে? তুমি এমন করছো কেনো? একি অবস্থা করেছো ঘরের। একের পর এক প্রশ্নের তীর ছুড়ে দেয় রোজার দিকে। (সামির সময় তে আপু আবার সময় তে নাম ধরে ডাকে রোজার। যেহেতু সমবয়সী তাই সবই চলে তাদের। রোজা সামিরের থেকে এক মাসের বড়। যার ফলে সামির আপু বলে মাঝে মাঝে আর সেটা মুডের উপর ডিপেন্ড) রোজা সামিরের দিকে তাকিয়ে তেড়ে এসে কলার চেপে ধরে বলে তুমি বসে বসে শুধু দোলাকে পাওয়ার স্বপ্নই দেখো। আর ওইদিকে দোলা আর রুদ্র চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। তাদের ভালোবাসার ফসল দোলার পেটে। আর তুমি এখনো বসে বসে দিবাস্বপ্ন দেখছো। হঠাৎ আক্রমে সামির ঘাবড়ে যায় প্রথমে। কিন্তু রোজার কথায় তার মধ্য কৌতুহল জাগ্রত হয়।

– কি হয়েছে তোমার? আর এইসব কেনো বলছো? বিস্মিত কন্ঠস্বর সামিরের।

রোজা সামিরের কলার ছেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে সবটা বলে। সব শোনার পরও সামির স্বাভাবিক।
– ওহ এই ব্যাপার। তো! তোমার কি মনে হয় এতদিন পর তোমাকে দেখে রুদ্র কোলে তুলে নাচবে? সামিরের লজিকহীন কথায় রোজা আরও ক্রোধানল হয়ে বলে কি বলতে চাইছো?

– তুমি যাকে ধোঁকা দিয়েছো। যার বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এসেছো। যার স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অর্থটাই মূল্যহীন করে দিয়েছো সে তোমায় কীভাবে ভালোবাসবে এখনো?? তোমার জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কি অবশিষ্ট থাকতে পারে তার মনে।

— সব দোষ দোলা নামের ওই মেয়েটার । ওর জন্য রুদ্র আমাকে রিজেক্ট করার সাহস দেখিয়েছে। রুদ্রর মনে একদম জেঁকে বসে গেছে ওই মেয়ে। যে রুদ্র আমার পেছনে কুকুরের মতো ছুটতো সে এখন আমায় ইগ্নোর করছে! আমায়। এর ফল যে কি ভয়াবহ হবে রুদ্র বা তার পরিবার জানে না। আর রইলো দোলা। ওর আমি এমন ব্যবস্থা…. স্টপ রোজা। যতটুকু বলেছো ব্যাস। আমি দোলার নামে একটাও উল্টো পালটা কথা শুনতে চাইনা আর না ওর কোনো ক্ষতি। দোলা আমার ভালোবাসা। আমি ওকে ভালোবাসি।

দোলার প্রেমে তুমিও কি অন্ধ হয়ে গেছো সামির। ওই একটা মেয়ে তোমাদের হাতের মুঠোয় করে রেখেছে। শুনো সামির এইসব ভুলে যাও। আমাকে সাহায্য করো চৌধুরী বাড়িকে ধ্বংস করতে। আমি তোমাকে দোলার চেয়ে সুন্দর মেয়ে দেবো।

– আমি বলেছি দোলাকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা৷ নয় তো নয়। দোলা আমার শুধু আমার। ওর কোনো ক্ষতি করার কথা ভুলেও ভাবনা না বুঝেছো। সামির রেগে চলে যায়। রোজার ইচ্ছে করছে এই সামিরের সহ গলা টিপে সবাইকে হ/ত্যা করতে।

– দোলা মনে মনে প্রস্তুতি নেয় সামিরের কাছে যাওয়ার জন্য আর সেটা আশাকে সাথে নিয়ে। অপেক্ষা রুদ্রর ঘুমানোর।

চলবে….
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২২”

— রোজা চলে যাওয়ার পর থেকে রুদ্র ঘর থেকে বের হয়নি৷ সেই পুরোনো ক্ষত,পুরোনো স্মৃতি সবকিছু নতুন করে কষ্ট দিচ্ছে। প্রিয় মুখটাও আজ সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘৃণার কাছে ভালোবাসাটাও পরাজিত হয়ে গেছে। আর হবে নাই-বা কেনো? এমন মানুষের জন্য ভালোবাসা নয় ঘৃণাটাই প্রাপ্য থাকে। রুদ্রর মধ্যে অনুশোচনা আজ! ভীষণ ভাবে অনুশোচনায় ভুগছে অন্য বিষয় নিয়ে আর সেটা অবশ্যই দোলা। দোলার কথাগুলো আজ রুদ্রকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। নতুন করে দোলাকে চিনতে সাহায্য করছে। রুদ্রর মধ্যে আফসোস এতদিন সত্যি কি সে-সব ভুল করে এসেছে৷ দোলার সাথে যেগুলো করা হয়েছে সত্যি কি দোলা সেগুলোর যোগ্য ছিলো? সামিরের সাথে দোলার আদো সম্পর্ক আছে কি-না? আর যদি থাকেও সেটা কোন পর্যায়ে সেটা রুদ্র আজ ভীষণ ভাবে ভাবছে। তার চিন্তা, ধারণা, মস্তিষ্ক সবকিছু ভাবাতে বাধ্য করছে।
— রাজের বলা কথাগুলো আর আজকের দোলাকে রুদ্র জুড়ে দেয়। আর তাতে যা দেখতে পাই রুদ্র তা হলো দোলা স্নিগ্ধ, নির্দোষ সম্পুর্ণ। রুদ্র আর কিছু ভাবতে পারছে না। সে সাহস আর হচ্ছে না তার। তবে এটা বুঝে গিয়েছে যে একটা মানুষকে কেন্দ্র করে সে আরেকটা মানুষের প্রতি জুলুম করে ফেলেছে। অজান্তেই অত্যাচার করেছে। দোলা ঘরে আসে সে-সময়। দোলাকে দেখে রুদ্র একটু নড়ে-চড়ে বসে!এরপর স্নেহময় দৃষ্টি রাখে। অপরাধবোধ আজ অবশ্যই বিদ্যমান রুদ্রর মধ্যে। দোলা ঘরে ঢুকতেই রুদ্রকে লক্ষ্য করে একবার। এরপর নিজ কাজে মন দেয়। সময়টা দুপুর হওয়াতে বাইরে তীব্র রোদের চাপ। গরমটাও বেশি পড়ছে আজকাল। দোলা হাতের কিছু কাজ শেষ করে রুদ্রর জন্য ওষুধ বের করতে থাকে বক্স থেকে। রুদ্র এখনো একই ভাবে দোলাকে দেখছে। দোলা বুঝতে পারছে রুদ্র ড্যাবডেবে চোখে তাকে দেখছে আর তাতে অস্বস্তিও লাগছে দোলার। কিন্তু রুদ্র এইভাবে তাকিয়ে আছে কেনো এটা বোধগম্য নয়।

— এই নিন আপনার ওষুধ। খেয়ে রেস্ট করুন। রুদ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে রুদ্র দোলার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয় পাশে। দোলা হকচকিয়ে উঠে কৌতুহলী চোখে তাকায়।

— হুট করে পেটে হাত রাখে রুদ্র। দোলা মৃদু কেঁপে উঠে সরে আসতে চাইলে রুদ্র বাধা দেয়। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই না দোলা? দোলার অবাক চাহনি। কোনো কথা ছাড়াই বলে উঠে রুদ্র। দোলা যেনো বিস্ময়ের সাগরে ভাসছে। আগের তুলনায় কৌতুহল বৃদ্ধি পাই । কপালে ভাঁজ উঠে, চোখ, ভ্রু কুচকে আসে। দোলার এমন নানান তর্জমার এক্সপ্রেশন দেখে রুদ্র মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে অবাক হচ্ছো তাই না? রুদ্রর বলা বাক্যটিতে অপরাধবোধ স্থান পাই। দোলা নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে।

— অবাক হওয়ারই কথা! তোমাকে কি বলব! কি বলা উচিত আমার জানা নেই। শুধু এতটুকু বলব আমি ভুল ছিলাম। রুদ্রর নুয়ে পড়া কন্ঠস্বর! সংকোচ চাহনি দোলার মধ্যে তোলপাড় তৈরি করে।
— ওষুধ খেয়ে ঘুমান রুদ্র। কথা এড়িয়ে গিয়ে, কৌতুহল দমিয়ে কথাটা বলে দোলা। কারণ অনেক কিছু বাকি আছে তার। রুদ্র একটা আফসোস দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আমি বেবিটা চাই দোলা। ওর নিষ্পাপ মুখটা দেখতে চাই। সাথে তোমাকেও। শেষের তোমাকেও শব্দটা গায়ে কাটা ফেলে দেয় দোলার৷ ধক করে উঠে বুকের মধ্যে। রুদ্র উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

— আমি আপনার সন্তানকে আগলে রাখবো রুদ্র! এবং আপনার হাতে তুলে দেবো প্রমিস করছি। আল্লাহ তা’লা বাদে কেউ আমার সন্তানের ক্ষতি করতে পারবে না। অক্ষত অবস্থায় আপনার কোলে দেবো কথা দিচ্ছি আমি। এতটুকু বলে দোলা থেমে যায়। এরপর রুদ্রর দিকে অভিমানী দৃষ্টি রেখে বলে যদি আপনি আমায় বিশ্বাস করেন তবে। কিন্তু আপনি তো আমাকে৷ বিশ্বাসই করেন না। ঠোঁটে আছে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি। রুদ্র চমকে তাকায়। দোলার এই কথাটার তাৎপর্যতা যে কতটা গভীর সেটা রুদ্র বেশ উপলব্ধি করতে পারছে।

– রুদ্র দোলার হাত ধরে মুঠোয় নেয়। দোলা যেন আজ অন্য রুদ্রকে দেখছে। যার মধ্যে আজ শুধুই ভালোবাসা, ভরসা আর বিশ্বাসে ভরপুর।
– আমি তোমাকে বিশ্বাস করি দোলা। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করতেও চাই। যা ভুল করেছি সেটা আমি… আমার কাজ আছে রুদ্র। আপনি ঘুমান একটু। রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে দোলা। রুদ্র আহত দৃষ্টি রেখে বলে! বললে না তো তুমিও থাকবে আমার পাশে?

– আছি তো! যাওয়ার হলে অনেক আগেই চলে যেতাম। বিধাতা যখন জুড়ে দিয়েছে তখন ছেড়ে যাওয়ার তো অপশন নেই। দোলার কথায় রুদ্র অনেকটা খুশি হয়ে যায়। মুখে বিশ্বজয়ের হাসি এনে বলে থ্যাঙ্কিউ দোলা। আমি তোমাকে আর কখনো অবিশ্বাস করবো না প্রমিস। দোলা মলিন হাসে। যে হাসির মানে শুধু দোলায় জানে।

– ঘড়ির কাটা ঠিক তিনটার ঘরে অবস্থান করছে। রুদ্র একটু আগে ঘুমিয়েছে। দোলা যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। রুদ্র ঘুমিয়ে যেতেই দোলা আশাকে ফোন করে। আশা প্রস্তুত ছিলো। কারণ দোলা অনেক আগেই সবটা জানায় তাকে। তানিয়াকে এই বিষয়ে কিছু বলে না দোলা। কারণ রাজ আর তানিয়া বারণ করে দোলাকে একা কিছু করতে। সামিরের সাথে পরে কথা বলা যাবে এটাই জানায়। কিন্তু দাগ তো লেগেছে দোলার চরিত্রে। কিভাবে চুপ থাকতে পারে। তাই যতখন না নিজেকে সবার সামনে নির্দোষ প্রমাণ করছে। ততখন তার নিস্তার নেই।

– দুপুরে সবাই যখন যে-যার ঘরে বিশ্রাম করছে। তখন
দোলা বেরিয়ে যায় ফোন হাতে। আশাকে এগিয়ে আসতে বলে। দোলা এর আগেও সামিরের বাড়িতে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। সামির নিয়ে গেছে আশা আর দোলাকে। তাই তাদের সামিরের বাড়ি চিনতে অসুবিধা হয়না।

— সামির বাড়িতেই ছিলো। সেও লাঞ্চ সেরে ঘরে বসে আয়েস করে ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত। এমন সময় উপস্থিত হয় দোলা আর আশা। হঠাৎ দোলাকে দেখে চমকে উঠে সামির। একদমই প্রত্যাশা করেনি দোলাকে এই সময়। অনেক খুশি হয়ে যায় সামির দোলাকে দেখে। ঠোঁট প্রসারিত করে ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। দোলা চোখ মুখে ক্রোধ এনে তাকিয়ে আছে সামিরের দিকে।
– দোলা তুমি? ও মাই গড। আই কান্ট বিলিভ দিস! তুমি এই সময় আমার বাড়ি। দাঁড়িয়ে কেনো এসো বসো বসো। তুমি আসবে আমাকে জানাবে না একবার। আশা দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। দোলার কোনো রকম উত্তর না পেয়ে সামির ভ্রু কুচকে বলে কি হলো দোলা এসো বসো। সামির এগিয়ে এসে দোলার হাত ধরতে যাবে সে-সময় দোলা সর্বস্ব শক্তি দিয়ে সামিরের গালে একটা চড় দেয়। রাগে রিরি করছে দোলার শরীর। ইচ্ছে করছে সামিরকে নিজ হাতে খু/ন করতে। সামির তো শকড। হতভম্ব হয়ে তাকায়। দোলার এমন রুপ দেখে চমকে উঠে সে।

– আশার মুখে তৃপ্তির হাসি। তারও ইচ্ছে করছে এই ঠক প্রতারকের গালে দুটো ইচ্ছে মতো দিতে।
– কি হয়েছে দোলা? তুমি আমাকে মারলে কেনো? সামির কথাটা শেষ করতেই আরেকটা মারে। সামির এবার রেগে তাকায় দোলার দিকে। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে এমন ভাব।
– কি হচ্ছে এইসব দোলা? হঠাৎ এমন বিহেভের মানে কি? উত্তেজিত কন্ঠস্বর সামিরের।
– এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিলো আমার। কিন্তু আফসোস অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তারপরও যে আমি এটা করতে পেরেছি ভেবেই শান্তি লাগছে। দোলার কথা কিছুই বুঝতে পারে না সামির। ভ্রু কুচকে বিস্মিত হয়ে বলে মানে?

– তুমি আমাকে ঠকিয়েছো! দিনের পর দিন মিথ্যা বলে এসেছো। আমাকে দিয়ে একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট করিয়েছো।। ভালো মানুষীর মুখোশ পড়ে দিনের পর দিন ব্যবহার করেছো আমাকে। তোমার জন্য আমি চরিত্রহীনা হয়ে গেছি। সবাই আমাকে ভুল বুঝছে। এমনকি আমার স্বামীও আমাকে বিশ্বাস করে না। সব কিছুর জন্য দায়ী তুমি কথাটা বলে দোলা আবারও হাত তুলে মারার জন্য কিন্তু এবার সামির দোলার হাত চেপে ধরে। দোলা অগ্নি দৃষ্টি রাখে।
– ওহ এই ব্যাপার! তাই তো বলি আমার পোষা বিড়াল হঠাৎ বাঘিনী হলো কীভাবে। সামিরের কথায় আশা এবং দোলা দুজনেই স্বাভাবিক চোখে তাকায়।

– রুদ্র তোমায় ভুল বুঝেছে বলে এত দুঃখ। আরে ওতো এমনি মেন্টাল। কারো ভরসার যোগ্যই না। সেখানে ও কাউকে বিশ্বাস করবে কীভাবে? শুনো দোলা তুমি না রুদ্রকে ছেড়ে দাও। তারপর আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমাকে রাজরানীর মতো করে রাখবো। একটুও অবিশ্বাস করবো না কখনো। ওই রুদ্র তোমাকে কীভাবে অত্যাচার করে আমি সব জানি। আর আমি! আমি তোমাকে ভালোবাসবো।।শুধু ভালোবাসবো কথাটা বলে সামির হেসে উঠে। দোলার ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে সামিরের কথায়।

– আমার হাত ছাড়ো সামির। তোমার মতো নিচ,জঘন্য মানুষের মুখে ভালোবাসার কথা শোনাটাও পাপ। ভালোবাসা কাকে বলে জানো তুমি? যদি জানতে তাহলে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করতে না। তাদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলতে না।
– ওহ আচ্ছা। তো কার মুখে ভালোবাসার কথা শুনতে চাও তুমি? ওই রুদ্রর মুখে। ওই ষ্টুপিডটা আমার সব শেষ করে দিয়েছে৷ আমার খাচার পাখি ওর খাচায় বন্দী করেছে। আমি তো ওকে কখনোই ছাড়বো না। শেষ করে দেবো একদম দাঁতে দাঁত চেপে বলে সামির।

– খবরদার সামির! মুখ সামলে কথা বলো। তুমি যার সম্বন্ধে কথা বলছো তিনি আমার স্বামী। আর আমার স্বামীর নামে একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। হুশিয়ার দিয়ে বলে দোলা।
– বাবাহ! কি প্রেম। এই কয়দিনে এতো প্রেম। এতো প্রেম কীভাবে হলো শুনি? দুদিন আগেও তো রুদ্রকে দেখতে পারতে না। ওর থেকে পালাতে চাইতে। তাহলে আজ? আজ হঠাৎ স্বামী নিয়ে প্রতিবাদ করছো যে? আচ্ছা কারণটা কি এই বেবিটা। মানে যেটা তোমার গর্ভে আছে। রুদ্র আর তোমার বেবি। দোলা চমকে তাকায় সামিরের দিকে। আশাও অবাক হয় ভীষণ। সামির ওদের ফেস রিয়াকশন দেখে হো হো করে হেসে উঠে বলে কি হলো চমকে উঠলে মনে হয়। ভাবছো তো আমি কিভাবে জানলাম সব? আমি সব জানি মুখটা গম্ভীর করে বলে সামির।

— সামির এখনো একহাতে দোলাকে ধরে আছে দোলার একটা হাত। দোলা মোচড়ামুচড়ি করে হাতটা ছাড়ানোর জন্য কিন্তু সামির আরও শক্ত করে চেপে ধরে। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে দোলা আহ করে উঠলে সামির আঁতকে উঠে ছেড়ে দেয় দোলার হাত।
– কি হয়েছে দোলা ব্যথা পেয়েছো। দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো। আইম সরি জান। আমি সত্যি তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি। অদ্ভুত আচরণ করে সামির। দোলা শকড হয়ে যায়। বিস্ময় নিয়ে তাকায় সামিরের দিকে।

– তুমি একদম ঠিক করোনি সামির। হঠাৎ বলে উঠে আশা। সামির চোখ কুচকে তাকায় ওর দিকে।
– তুমি আমাকে ঠকিয়েছো দোলাকে ঠকিয়েছো। মিথ্যা বলেছো। আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছো মিথ্যা বলে।।সব তোমার সাঁজানো ছিলো। তুমি নেহার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো। ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো। তুমি অনেক জঘন্য মানুষ সামির।
– এই চুপ! একদম চুপ। চিৎকার করে বলে সামির। আশা কেঁপে উঠে সামিরের কথায়। দোলা ঘাবড়ে যায়।
– তখন থেকে এক কথা শুনে যাচ্ছি। জঘন্য মানুষ, ঠকিয়েছি ব্লা ব্লা ব্লা। হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলেছি! আমি নেহাকে ঠকিয়েছি। দোলাকে মিথ্যা বলেছি
কিন্তু যা কিছু করেছি সব দোলার জন্য করেছি আমি। দোলা যেনো আঁতকে উঠে সামিরের কথায়।
আমি দোলাকে ভালোবাসি। আর এই জন্য আমি সব কিছু করেছি। যাতে করে আমি দোলার আশেপাশে সব সময় থাকতে পারি তাই মিথ্যা বলে বন্ধুত্ব করি। ভেবেছিলাম সময় মতো দোলাকে প্রপোজ করবো। কিন্তু তার আগে! ওই রুদ্র এসে সবটা গন্ডগোল পাকিয়ে দিলো। বিয়ে করে ফেললো দোলাকে। আমার এতদিকের পোষা পাখি, যাকে আমি আগলে আগলে রাখছি তাকে নিয়ে ফুড়ুৎ।
– এরপর থেকে আমি রুদ্রর মনে সন্দেহ ঢোকায় দোলাকে নিয়ে। নেহার জন্য যে মেয়ে দায়ী মানে যে আমার গার্লফ্রেন্ড সেটা যে দোলা। এটা আমি রুদ্রকে জানায়। যাতে করে রুদ্র দোলাকে ছেড়ে দেয়। বের করে দেয় বাড়ি থেকে। কিন্তু না! রুদ্র সবটা জেনেও চুপ করে থেকেছে। তবে দোলাকে যে সন্দেহ করতো এটা আমি জানতাম। যার জন্য আমি দোলাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করতাম রুদ্রর সামনে যাতে করে রুদ্র বিশ্বাস করে আমার আর দোলার রিলেশন আছে। এবং দোলা বিয়ের পরেও সেটা কন্টিনিউ করছে।

— দোলা পিছিয়ে যায় কিছুটা। এত ষড়যন্ত্র তার পেছনে। যার জন্য অনেক ভোগান্তি দিতে হয়েছে তাকে।
– আমি নেহাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসতাম। এমনকি আরো অনেক মেয়ের সাথেই আমার সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু তাদের বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ছিলো মূল উদ্দেশ্য। এরপর ছুড়ে ফেলতাম। নেহাকেও তাই করেছি। কিন্তু ঝামেলা হয়ে যায় বাচ্চাটা। তবে বিশ্বাস করো দোলা। আমি তোমাকে নিয়ে এমনটা কখনোই ভাবিনি। তোমাকে নিয়ে এমন চিন্তা কখনো আসেইনি। আমি সব সময় তোমাকে চাইতাম। আর সেটা মন থেকে ভালোবেসে। তোমাকে বিয়ে করে একসাথে থাকতে চাইতাম। আর সব মেয়েদের থেকে তুমি স্পেশাল আমার কাছে। দোলা আর কিছু শুনতে পারছে না। কান গরম হয়ে আসছে। একটা মানুষ এতটা খারাপ কীভাবে হতে পারে সেটাই ভাবছে সে।

– তবে সমস্যা নেই। তোমাকে আগে পাইনি তো কি? এখন তো পাবো।।হাসি মুখে বলে সামির।
– মানে? চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে দোলা।
+ মানে তুমি রুদ্রকে ছেড়ে আমার কাছে আসবে। আমি তোমায় বিয়ে করবো। অনেক ভালোবাস… তার আগে দোলা রেগে আবারও চড় দেয়। সামির তো এবার রেগে বো”ম হয়ে যায়।
– তোর মতো মানুষকে ভালোবাসা না শুধু ঘৃণায় করা যায়। আর তোকে বিয়ে না৷ সোজা জেলে দেবো। আর তার ব্যবস্থা আমি করবো। তোর মতো মানুষের শাস্তি প্রাপ্য। দোলার কথায় সামির হাসতে থাকে। শব্দ করে হাসতে থাকে। দোলা আর আশা ভ্রু কুচকে তাকায় ।
– তা কীভাবে দেবে আমাকে শাস্তি জানেমন! আমাকে শাস্তি দিতে হলে তো তোমায় বেরোতে হবে এখানে থেকে। তারপর না অন্য কিছু। কিন্তু আফসোস তুমি এখানে থেকে বেরুতেই পারবে না। এসেছো নিজ ইচ্ছায় কিন্তু বের হবে আমার ইচ্ছেতেই।

– কি বলতে চাইছো তুমি? আমি এখানে থাকার জন্য আসেনি৷ এসেছি যখন তখন বের হবো ঠিক আর তোমার শাস্তিও নিশ্চিত করবো দৃঢ় কন্ঠে বলে দোলা।

ও আচ্ছা৷ তো বেরিয়ে দেখাও। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে সামির।
-আশা চল এখানে থেকে। ওকে তো পরে দেখে নেবো কথাটা বলে দোলা আশার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে যাবে তার আগে সামির তালি বাজায় হাতে। কয়েকজন লোক এসে হাজির হয়। দরজা রোধ করে দাঁড়ায়। দোলা আর আশা ঘাবড়ে যায় ওদের দেখে। ভয়ার্ত চোখে তাকায় সামিরের দিকে। ( আসলে সামিরের লোক সিসি ক্যামেরায় সব দেখছিলো আর শুনছিলো। সামিরের ড্রয়িং রুমে সব সময় মনিটরিং অন থাকে। যার মাধ্যমে বাইরে থেকে কে আসছে যাচ্ছে ইনফ্যাক্ট ঘরের মধ্যে গুলোর খবরও জানা যায়। তাই ওরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো।)

– সামির ঠোঁট উল্টোয় তাতে।
– আমাদের যেতে দাও সামির। দেখো একদম ভালো হবে না বলছি। রুদ্র যদি একবার জানতে পারে তুমি আমার সাথে অসভ্যতা করেছো তাহলে কিন্তু তোমাকে মেরে রেখে দেবে।

– তাই নাকি? তোমার স্বামীর প্রতি তোমার অগাধ বিশ্বাস দেখছি। তবে তোমাকে খুঁজে পেলে তবে না আমার কিছু করবে? তাছাড়া তোমাকে তো বিশ্বাসই করেনা রুদ্র। কীভাবে আমার ক্ষতি করবে যদি রুদ্র এটা জানে যে তুমি নিজ ইচ্ছেতে আমার কাছে এসেছো ওকে ছেড়ে। বেচারা তো আবারও ছ্যাকা খাবে। দেবদাস হয়ে পথে পথে ঘুরবে আহারে!।
– সামির! আমাকে যেতে দাও বলছি উত্তেজিত কন্ঠে বলে দোলা।
– একবার বলেছি না কোথাও যেতে পারবে না। সবটা যখন জেনেই গিয়েছো তখন তো আর লোকানোর কিছু নেই। আমার আসল রুপের কথা শুনেছো কিন্তু দেখোনি কখনো। এবার দেখাবো বলে দোলার হাত চেপে ধরে। দোলা আঁতকে উঠে।
– সামির দোলাকে ছেড়ে দাও। কি করছো তুমি? আশা বলে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে।
– দুজনকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখ পাশের ঘরে। আর দেখবি পালাতে যেনো না পারে এরা কোনোভাবে৷ তাহলে তোদের একটাকেও আমি আস্ত রাখবো না। আমি একটু পর আসবো। একটা দরকারী কাজে বাইরে যাচ্ছি। এসে এদের ব্যবস্থা করবো আমি। এরপর সামির দোলার ফোনটা কেড়ে নেয় সাথে আশারও। তবে আশার ফোনে সবটা রেকর্ড চলছিলো। এতখন সামির যা যা বলেছে সব তাতে রেকর্ডিং হয়। আশার ফোন নেওয়াতে হতাশ হয় দোলা। দোলা আর আশা ছটফট করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিছু তাতে কোনো লাভ হয়না৷ ওদের নিয়ে ঘরে বন্দি করা হয়।

– দোলার অনুশোচনা হয় এখন। এইভাবে আশাটা একদম ঠিক হয়নি তার। কেনো এমন নির্বুদ্ধিতা করতে গেলো ভেবেই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে৷ তবে সামির যে এতটা খারাপ দোলার ভাবনায় ছিলো না।

চলেব….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here