তুমিময় প্রেম পর্ব ১৮

#তুমিময়_প্রেম♥
#PART_18
#FABIYAH_MOMO🍁

আকাশ অন্ধকার করছে। হালকা ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় একটা জনমানব নেই। একদম এই মাথা থেকে ওই মাথা খালি। একটা গাড়িও চলছে না। মুগ্ধ আমায় কেমন জায়গায় নিয়ে আসলো? হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এসেছি। পিছু ফিরে যাওয়ার সময় নেই। মুগ্ধ হয়তো চোখ টলমল করে আকাশের পানে চেয়ে অভিযোগ বানী শুনাচ্ছে। হাতটা উঠিয়ে দেখলাম। আমার হাতটা এখনো লালবর্ণ ধারন করে আছে। থাপ্পরটা তার গালে কেমন দাগ বসেছে সেটা আমার হাতই বলে দিচ্ছে। শাড়ির আচঁলটা আরেকটু টেনেটুনে হাতটা নামিয়ে হাটতে লাগলাম। নজর শুধু একটা গাড়ির জন্যে। কেউ যদি লিফট দিতো!! কিন্তু এই সুনশান জায়গায় গাড়ির প্রকাশও নেই। লিফট কে দিবে!!

আরো আধঘন্টা হেঁটে অনেকদূর চলে এসেছি। মেঘের কালোভাবটা যেনো তীব্র আকারে ঘনিয়ে এসেছে। বাতাসের গতিবিধি একটা ঝড়ের আভাস দিচ্ছে। এখনো গাড়ির দেখা মিলছেনা। জায়গাটা এমন নিরব কেনো? মানুষ থাকে না? প্রশ্নগুলো অগোচরে মনের মধ্যে ঢিল ছুড়তে লাগলো। সেগুলো দমিয়ে রেখে সামনে কয়েক কদম দিবো ওমনেই শো করে একটা গাড়ি এসে ঠিক আমার পায়ের কাছে থামালো। আমি ঘটনাক্রমে ভ্রু কুচকে চমকে উঠলে গাড়ির কাঁচটা নেমে গেলো। আরো দুদফা ভ্রু কুচকে এলো আমার! মুগ্ধ গিয়ারে দুহাত রেখে গম্ভীর ভাবে সামনে তাকিয়ে আছে। ওকে ভয়াবহ গালি দিতে ইচ্ছা করলেও মনে মনে নিজেকে কন্ট্রোল করি। জোরে শ্বাস ছেড়ে ওকে ইগনোর করে সামনে পা বাড়ালে মুগ্ধ বলে উঠে,

— নিজেকে বেশি পন্ডিত ভেবো না! গাড়িতে উঠো! এখানে কোনো গাড়ি পাওয়া যায়না!
— লজ্জা থাকা উচিত! কোন্ মুখে আমাকে পন্ডিত বলতে আসো!

মুগ্ধ সোজা আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু উচু করলো। মুখে ফুল ডোজ এক্সট্রা এটিটিউট! গিয়ার থেকে হাত ডান সরিয়ে থুতনি বুলাতেই আপাদমস্তক দেখে নিলো আমার! ওর চাহনি কখনো অশ্লীল লাগেনি, কিন্তু এভাবে কেনো তাকাচ্ছে আজ?

— তুমি এটা অন্তত জানো, আমি একটা ছেলে! সো আমি কি কি করতে…..

কথাটুকু বলে উদ্ভট করে তাকালো সে। পরক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টেনে ধরে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় মুগ্ধ। গাড়ি সুগম পাকা রাস্তা ধরে একেবেকে চলছে। আকাশ ভেদ করে বৃষ্টির বড় ফোটা পড়ছে এখন। একেকটা বৃষ্টির ফোটা গাড়ির জানালায় ঘোলাটে থেকে স্বচ্ছ বানিয়ে দিচ্ছে। অনেকক্ষন যাবৎ চুপচাপ সময় কাটার পর ওর পাশ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। আমি তখন জানালার দিকে তাকিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বৃষ্টি দেখছি।

— তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো? বলো? আমায় কেনো রিজেক্ট করলে? কি কারন বলো প্লিজ!

আমি জবাব না দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ একই প্রশ্ন গমগম গলায় কয়েকবার করলো। আমি ঘাপটি মেরে চুপ করে আছি তো আছিই। জবাব না দিয়ে উল্টো শক্ত হয়ে আছি। হঠাৎ বিকট একটা শব্দ হলো মুগ্ধের সাইড থেকে। আমি শব্দটা শুনে পুরো বিচলিত চাহনিতে ওর দিকে হতবাক হয়ে আছি! দরুন শব্দটা হওয়ার পরপরই মুগ্ধ ব্রেক কষে দিলো! মুগ্ধের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।

জানালার কাচটা অক্ষত নেই। পুরো জানালাটা চুরমার হয়ে গেছে মুগ্ধের ঘুষিতে। হিংস্র ন্যায়ের রাগ দেখাচ্ছে মুগ্ধ। নাক দিয়ে ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ছে ক্রমাগত। আমি ওর অবস্থা দেখে কি করবো বুঝতে পারছিনা। প্রচুর রক্ত পড়ছে হাত থেকে!! হাতটা টেনে দেখবো কি!! নিজের উপর থেকে সিটবেল্টটা খুলে ওর দিকে ঝুকে হাতটা কাছে টেনে নেই। এখনো একটা কাচ টুকরো ওর হাতে ঢুকে আছে। রক্ত গলগল করে মুগ্ধের হাত বেয়ে পান্জাবীর ফোল্ডেড হাতায় যেয়ে লাগছে। ওর রাগ এতেও যেনো কমলো না। আমার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে কাটা হাতে পরপর আরো দুটো ঘুষি মারলো মুগ্ধ। আমি কানে হাত চেপে চোখ খিচে শক্ত হয়ে আছি।। ওর এই রূপ দেখার জন্য আমি প্রস্তুত না! একদম না!! এই মুগ্ধকে আমি চিনি না!!

মুগ্ধ ফোস ফোস করে চেচিয়ে বলে উঠলো,

— ভয় পাচ্ছো পাকনি? ভয় পেও না! আমি তোমাকে মনের ভুলেও ক্ষতি করবো না। যা করবো এই নিজেকে করবো! নিজেকে শেষ করবো! তিলেতিলে শেষ করবো! বারবার ক্ষত করবো নিজেকে! তুমি ভয় পেও না।

আস্তে আস্তে কান থেকে হাত সরিয়ে মুগ্ধের দিকে তাকাতেই মুগ্ধ আমার হাত টেনে আমার মাথা ওর বুকে চেপে ধরলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললো সে। আমি ঘন ঘন হাফিয়ে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছি। মুগ্ধ ওর রক্ত মাখা হাতটার উপর সাদা কাপড়ে মুড়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো ঠোঁট ছুয়িয়ে নম্র কন্ঠে বলে উঠলো,

— শান্ত হও পাকনি। ভয় পেও না প্লিজ। ভয় পেও না। আমি আছি তো। শান্ত হও…

-চলবে 🍁

Fabiyah Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here