#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন তাল সামলাতে না পেরে,আরহামের বুকে গিয়ে পড়লো। আরহামও শক্ত করে মেহেভীনকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মেহেভীন ‘সরি ‘ বলে উঠতে চাইলে, আরহাম মেহেভীনকে আরো শক্ত করে মিশিয়ে বলে,
‘ স্টুপিড মেয়ে যদি নিজেকে সামলাতে না পারে, তাহলে তো আমাকেই আগলে রাখতে হবে তাইনা? তুমি বরং আমার বুকেই ঘুমিয়ে পড়ো। সামনে আরো পিচঢালা রাস্তা আছে। এই অবস্হায় বার বার ঝাক্কি খাওয়াটা ঠিক নয়। ‘
মেহেভীন কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললো,
‘ কি করছেন কি? আরিয়ান দেখছে তো? কি ভাব্বে ছাড়ুন। ‘
আরহাম কন্ঠে মধুরতার সুর এনে বললো,
‘ ছাড়বো না। আরহাম হাসান তালুকদার এতো তোমাকে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। হোক সেটা দায়িত্ব কিংবা ভালো…’
আরহাম বাকি কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুদ দৃষ্টিতে। আরহাম কি যেন বলতে চাইছিলো। কিন্তু বললো না। মেহেভীনের জানতে ইচ্ছে করলো আরহামের মুখে সেই অব্যক্ত বাণী।
আরিয়ান পিছনে না ঘুড়েই বললো,
‘ আমি কিছুই দেখছি না। আমি তো ছবি তুলতে ব্যস্ত। এতো কিছু দেখার সময় নাই আমার। ‘
‘ দেখলে তো কিছুই দেখছে না আরিয়ান। তুমি বরং আমার বুকেই নিশ্চিন্তেই ঘুমিয়ে পড়ো। তাহলে এতো ঝাক্কি খেতে হবে না। ‘
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন লজ্জা পেয়ে গেলো। আরহাম স্মিত হাসলো। মেহেভীন আরহামের বুকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। এই বুক হয়তো তার জন্যে সব থেকে নিরাপদ। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়েই রইলো। এইরকম মনোমুগ্ধকর মুহুর্তটিকে
ক্যামেরাবন্দী করতে একদমই ভূললো না আরিয়ান।
মজনু গাড়ি চালাতে চালাতেই হাসলো।
___________
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে আরহাম, আরিয়ান ও মেহেভীন চট্টগ্রামে পৌঁছে গেলো বেশ সকালেই। আরহাম একটা ফাইভ স্টার হোটেল বুক করে ফেললো,যেখানে তাদের সব অফিসের কলিগরা উঠেছে। রুশা,তা্হসানসহ বাকি সকল কলিগরা আপাতত চট্টগ্রাম শহরটাকে একটু ঘুড়ে দেখতে গিয়েছে। আরহাম এখনো তাদের সাথে দেখা করিনি। ভেবেছে একেবারে রাতের মিটিংয়েই সকলের সাথে দেখা করে ফেলবে। যদিও আরহাম তাহসানকে ফোন করে বলে দিয়েছে সে পৌঁছে গেছে। যেহুতু এখানে আরহামের বাবা-মা কেউ নেই। তাই আরহাম মেহেভীনের জন্যে আলাদা রুম বুক করে ফেলে,যদিও রুমটা আরহামের রুমের পাশের রুমটি।
মেহেভীন, আরহাম, আরিয়ান এবং মেহেভীন সকালের নাস্তা করতে লাগলো ফাইভ স্টার হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে। মেহেভীন খেতে গিয়েও পারছে না। এতো পথ জার্নির করার ফলে, সে যথেষ্ট ক্লান্ত। আরহাম মেহেভীনের অবস্হা বুঝতে পেরে বললো,
‘ মেহেভীন তুমি বরং রুমে চলো। আমি বরং কোন স্টাফকে দিয়ে তোমার খাবার টা রুমে আনিয়ে নিচ্ছি। আর আরিয়ান তোরা খেয়ে না। ‘
মেহেভীন ও আরিয়ান সম্মতি জানায়। আরহাম নিজের খাবার টা না খেয়েই, মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে আস্তে করে মেহেভীনের রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মজনু দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আমাগো বড় ভাইজান আমাগো ভাবিরে কত্ত ভালোবাসে। আহা উনাগো দেখলে আমার খালি দেখতেই ইচ্ছা করে। ‘
আরিয়ান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
‘ দোয়া করিও মজনু। সবসময় যেন এইরকম থাকে। ‘
‘ আমি আর রাহেলা তো সবসময় দোয়া করি। আমাগো বড় ভাইজান আর বড় ভাবি যেন সবসময় এমই থাকুক। এদের ভালোবাসার উপরে যেন কারো শয়তানের বদ নজর না পড়ে। ‘
আরিয়ান স্মিত হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
________
অভ্র গাড়িটা ফাইভ স্টারে হোটেলের সামনে রাখলো। মায়রা এবং গাড়ি থেকে নেমে গেলো। হোটেলটার দিকে তাকিয়ে অভ্রের কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখানেই সে তার কাঙ্খিত কিছু পেয়ে যাবে। অভ্র বুঝতে পারছে না, তার এমন অদ্ভুদ অনুভুতির কারণ কী? মায়রা এগিয়ে এসে, অভ্রের কাধে হাত রেখে বলে,
‘ অভ্র….’
মায়রার ডাকে হুশ ফিরে অভ্রের। মায়রা বললো,
‘ অভ্র ভিতরে যাবে না? এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে। ‘
‘ হুম যাচ্ছি চলো। ‘
মায়রা ও অভ্র তাদের লাগেজ নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। মেহেভীনকে নিয়ে এসে, আরহাম কাউন্টার থেকে তাদের রুমের কার্ড নিয়ে, তাদের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আরহাম ও মেহেভীন চলে যেতেই, কাউন্টারে অভ্র ও মায়রা কাউন্টারে চলে এলো। কাউন্টারে বসে থাকা স্টাফ অভ্রদের উদ্দেশ্য বললেন,
‘ স্যার আপনাদের কয়টা রুম লাগবে? ‘
‘ জ্বী আমাদের জন্যে একটা রুম বুক করে দিন। ‘
মেহেভীনের কানে অভ্রের কন্ঠের প্রতিধ্বনি আসে। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে কেউ নেই। মেহেভীনের মনে হচ্ছে অভ্র এখানেই আছে। কিন্তু অভ্র এখানে কি করে থাকতে পারে? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম বলে উঠে,
‘ এখানে দাড়িয়ে কি করছো? ভিতরে চলো। ‘
আরহামের কথা শুনে আর কিছু না ভেবে, মেহেভীন নিজের রুমে চলে যায়। আরহাম মেহেভীনকে ঘরে খায়িয়ে দিয়ে, নিজের রুমে এসে, শুয়ে পড়ে। কালকে মজনু নিজের হাতে ব্যাথা পাওয়ায়, আরহামই নিজে ড্রাইভ করে এসেছে। আরহাম তার ব্যাগটা রেখে, বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়। মেহেভীন টিপ টিপ করে আরহামের রুমে ঢুকে। মেহেভীনের ধারণাতমতে, আরহাম এখন গভীর ঘুমে আচ্ছান্ন। এইটাই সুযোগ! মেহেভীন আস্তে আস্তে আরহামের কাছে গিয়ে, আরহামের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। আরহামের কপালে লেপ্টে থাকা সিল্কি চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে, কপালে মালিশ করে দিতে থাকে। মেহেভীন জানে আরহামের মাথা প্রচন্ড ধরেছে তাই সে মালিশ করে দিতে এসেছি। আরহাম যদি জানে এই অবস্হায় মেহেভীন এসেছে, তাহলে রামধমক দিবে। কথাটি ভেবে মেহেভীন মুচকি হাসে।
আরহাম ঘুমের মাঝেই মুচকি হাসে,যা মেহেভীনের অগোচর হয়ে থাকে।
_________
অভ্র লাগেজ টা রেখে, ওয়াশরুমে চল যায়। মায়রার মনে তো অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছে। আরহাম ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই, মায়রা অভ্রের কাছে আবদারের সুরে বলে,
‘ অভ্র আজ ডিনারের পরে, আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে? আগের মতো? ‘
অভ্রের কথাটি শুনেই চোখ-মুখে ধরা দিলো একরাশ বিরক্তি। সে বিরক্তির সুরে বললো,
‘ দেখো মায়রা আমি আজকে যথেষ্ট টায়ার্ড। এতো রংঢং করার ইচ্ছে নেই আমার। আমাকে প্লিয এখন একা ছেড়ে দাও। ‘
‘ অভ্র…এইসব বলছো কি তুমি! আগেও তো কত টায়ার্ড থাকতে তুমি। সারাদিন অফিসের কাজ করে, আমার বায়না মিটানোর জন্যে, কত লং ড্রাইভে নিয়ে গিয়েছো? আজ এতোটা চেঞ্জ কেন হলে, অভ্র?’
মায়রা চোখ ছলছলো হয়ে উঠছে কথাগুলো বলতে বলতে। অভ্র জবাব দিলো না।
‘ ডিনার করতে চলো। ‘
কথাটি বলেই প্রস্হান করলো অভ্র। মায়রা বরাবরের মতো আশাহত হলো।
______________
এদিকে,,
মেহেভীন নিজের রুমে এসে পানির গ্লাস হাতে নিতেই দেখে, তার পাশে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লিখা,,
‘ প্রেয়সী! তুমি সবার খেয়াল রাখো। এদিকে আমার অন্তরের খবর কী রাখো? উহু একদমই না।
আমার অন্তরটা জ্বলে পুড়ে খাড় হয়ে যাচ্ছে, তোমাকে না পাওয়ার অসুখে সেই খবর রাখো? চিন্তা করোনা। ঠিক আমি তোমাকে নিজের করে নিবো। ‘
চিরকুট টা দেখে মেহেভীনের অতিমাত্রায় রাগ হলো। কে এই আগন্তক? দুইদিন পর পর উদয় হয়? যত্তসব! মেহেভীন চিরকুট টা ফেলে দেয়। আরিয়ানের ডাক আসে ডিনারের জন্যে। মেহেভীন নিজের ভাবনাটা চেপে রেখে, নীচে চলে যায়।
আরহামও নীচে বসে আছে। মেহেভীন নীচে নেমে আসে। মেহেভীন নীচে নামতেই, তখনি কেউ এসে আরহামকে জড়িয়ে ধরে। তাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় মেহেভীন। আরিয়ান ও বসা থেকে উঠে যায়। আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউ তাকে এখানে আশা করেনি। মেহেভীন যেন তাকে দেখে ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে।#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৮ [কাহানী মে আয়া টুইস্ট]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র আরহামকে এসেই জড়িয়ে ধরে। নিজের পাক্তনকে এইভাবে দেখে স্হীর হয়ে দাড়িয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র এখানে কি করে এলো?অভ্রকে আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই আশা করেনি, তা তাদের চোখ-মুখেই স্পষ্ট। মেহেভীন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্নের বিস্তার ঘটতে থাকে। আরহামকে অভ্র এসে জড়িয়ে ধরলো কেন? তাহলে কী আরহাম ও অভ্র পূর্বপরিচিত? অভ্র আরহামকে জড়িয়ে ধরেই বললো,
‘ এইসব কি ব্রো? এখনো নিজের ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবি? সেই একটা বিষয় নিয়ে এখনো এতো রাগ পুষে রেখেছিস? এখন তো এইসব ছাড় প্লিয। ‘
আরহাম কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। অভ্র এইবার আরিয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
‘ কি হলো? সবসময় তো আমাকে দেখে তুই সবার আগে এসে, টাইট করে হাগ করিস। আজ কি হলো?
বুঝেছি অভিমান হয়েছে। ওকে আমিই করে নিচ্ছি। ‘
অভ্র কথাটি বলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানের ভাই? কীভাবে সম্ভব? মেহেভীনকে কখনো তো আরহাম কিংবা আরিয়ান বলেনি তাদের অভ্র নামক কোন ভাই আছে।
অভ্র আরিয়ানকেও ছেড়ে দিলো। অভ্র তার দুই চাচাতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কখনো ভাবেনি চট্টগ্রামে এসে এইভাবে তোদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। কিরে ভাই তোরা এখনো চুপ করে থাকবি? আমি বুঝতে পারছি না। বড়দের মধ্যে যা হোক, কিন্তু আমরা কেন আমাদের মধ্যে এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে চলবো বলতো? ‘
‘ দূরত্ব সবসময় তোর পক্ষ থেকেই ছিলো অভ্র। আমরা কখনো তোর সাথে দূরত্ব বাড়াতে চাইনি। ‘
আরহাম কাঠকাঠ গলায় অভ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলো।
অভ্র স্মিত হেসে বলল, ‘ তা আমি জানি। তোরা আমাকে কতটা ভালোবাসিস। সেইটাও জানি,কিন্তু
আমিই বা কি করবো? আমি বাধ্য হয়েই একপ্রকার এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়েছি।তোরা তো জানিস মা কে আমি কতটা ভালোবাসি।
মায়ের জন্যে যে আমি কত কিছু করেছি,তা শুধু আমিই জানি। ‘
শেষের কথাটি অভ্র আস্তে করেই বললো।
আরিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,
‘ কি বললি ভাইয়া তুই? ‘
‘ না মানে আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে,আমি পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারেনি। আচ্ছা এইবার তো বাদ দে এইসব অভিমান ইয়ার। লেটস গো বাদ্রারস গিভ মি সাম হাগস। ‘
অভ্র কথাটি বলেই আরহাম ও আরিয়ানকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম ও আরিয়ানও আর রাগ করে থাকতে পারলো না, তারাও জড়িয়ে ধরলো তাদের ভাইকে। অভ্র জড়িয়ে ধরতেই, তার চোখ গেলো তার অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির দিকে। যার জন্যে সে এতোদিন ধরে ছটফট করছিলো। মেহেভীন বুঝতে পেরেছে, অভ্র তাকে দেখে ফেলেছো। মেহেভীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে,
‘ মেহেভীন? ‘
অভ্রের কথা শুনে আরহাম ও আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকায়। মায়রাও ততক্ষনে চলে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনকে নিয়ে এসে অভ্রের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ তুই মেহেভীনকে কি করে চিনিস ভাই? ‘
‘ কিন্তু তার আগে বল? মেহেভীন তোদের কি হয়? ‘
মেহেভীনের সাথে আরহামকে দেখেই মায়রা চিনে ফেললো, আরহাম একবার ভার্সিটিতেও এসেছিলো। এখন তার মনে পড়লো অভ্রের ফোনে সে একবার আরহামের ছবি দেখেছিলো, তাই সেদিন আরহামকে তার চেনা মনে হচ্ছিলো। অভ্র আবারো মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি হলো বললি না যে, মেহেভীনকে কি করে চিনিস তোরা? ‘
মেহেভীনের তো জান যায় যায় অবস্হা । মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে।
এখন কি বলবে আরহাম?আরহাম সবাইকে অবাক করে দিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে হাঁসিমুখে বললো,
‘ আমার ওয়াইফ। মিসেস মেহেভীন আরহাম হাসান তালুকদার। ‘
আরহামের কথাটা শুনেই পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে যায়। মায়রারও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে যে মেহেভীনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যদিও তার বেশ খুশি লাগছে। অভ্র শুধু নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কানে এখনো আরহামের কথাটি বেজে চলেছে। মেহেভীন জানে অভ্র এখন তার উত্তরের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মেহেভীনও আরহামের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘ হুম আমি এখন মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। এইটাই আমার পরিচয়। ‘
রুশা ও তাহসানরাও ততক্ষনে ফিরে আসলো হোটেলে। রুশার কানে কথাটি আসতেই, সে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
মেহেভীন খেয়াল করলো অভ্র ঠিক কাঁদছে না। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। আরিয়ানের চোখ এইবার মায়রার দিকে গেলো। আরিয়ান মায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না যে? ‘
মায়রা স্মিত হেসে জবাব দিলো,
‘ আমি হচ্ছি মিসেস অভ্র আহমেদ। ‘
আরিয়ান হাত তালি দিয়ে বললো,
‘ বাহ কতটা দূরত্ব হয়ে গেলো যে, অভ্র ভাই তু্ই বিয়ে করলি অথচ আমরাও জানি না। ‘
অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আরহাম ও যে বিয়ে করেছে সেই খবরও তো আমরা পেলাম না। ‘
‘ মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে, অনেক কিছুই গোপনীয় থেকে যায়। বিয়ের বিষয়টাও তার মধ্যে অন্যতম। ‘
আরহামের কথায় অভ্র আর কিছু বললো না। অভ্র কখনো ভাবতে পারেনি মেহেভীন তার ভাইয়ের বউ হবে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসে। যা কারো নজরে পড়লো না। অভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীনের চোখে ঘৃণা উপচে পড়ছে তার জন্যে। মেহেভীন ইচ্ছে করেই আরহামের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি এখন রুমে যাবো। ‘
রুশা নিষ্প্রানের মতো দাড়িয়ে আছে।তাহসান রুশার অবস্হা বুঝতে পেরে, এগিয়ে এসে বললো,
‘ আরহাম তুই বলছিস টা কি? আমাকে একটু খুলে বলবি তো? ‘
আরহাম তাহসানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘ তোকে যা বলার আমি পরে বলছি। আগে মেহেভীনকে ঘরে দিয়ে আসি। তারপর তোকে যা বলার বলবো। আমার বউ সবার আগে। যতই হোক একটা মাত্র বউ আমার। নকল হলেও বউ তো।’
শেষের কথা আরহাম ঠাট্টার সুরে আস্তে করে মেহেভীনের কানে বললো। মেহেভীন হেসে দেয়। আরহাম মেহভীনের হাত ধরে সকলের সামনে উপরে নিয়ে যায়। রুশা মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তাহসান রুশার পিছন পিছন চলে যায়। অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যেন। সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না ব্যাপারটা।
________
আরহাম মেহেভীনকে রুমে এনে, ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ বের করে মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে একটা তুমি। টাইম মতো ওষুধ টাও খেতে পারো না। ‘
কথাটা বলেই আরহাম বক্সটা বেডের এক পাশে রাখে। মেহেভীন ওষুধ টা খেয়ে নেয়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আরহাম সাহেব আপনি আছেন না সবসময়ই? আমার যত্ন নেওয়ার মানুষ। আমার নিজের যত্ন নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ‘
মেহেভীনের কথায় আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন গলাটা খাকারি দিয়ে বললো,
‘ মানে বলছিলাম কি মায়রা আপু আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র সেই সুবাধে অভ্র ভাইয়াকে প্রায় আমাদের ভার্সিটিতে দেখিছিলাম,কিন্তু অভ্র নামক যে আপনাদের কোন ভাই আছে, তা জানতাম না তো। ‘
আরহাম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহেভীনের মনে হাজারো প্রশ্ন এসে ঝটলা পাঁকাচ্ছে। সেসব প্রশ্ন সব অভ্রকে ঘিড়েই৷ আরহাম ধীর গলায় বললো,
‘ অভ্র সম্পর্কে আমার ছোট চাচার ছেলে হয়। মানে আমার চাচাতো ভাই। ছোট চাচা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পরে,কোন এক কারণে ছোট মা অর্থাৎ অভ্রের মা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কোন একটা কারণে ছোট মা আমাদের পুরো পরিবারকে ঘৃণা করে। কিন্তু কেন কে জানে? অভ্র এবং আমি সমবয়সী ছিলাম। অভ্র ছোটবেলা থেকেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করতো। অভ্র একপ্রকার লুকিয়েই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো, কিন্তু ছোট মা দুবছর আগে যখন আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক আছে কথাটি জেনে যায়। তখন অভ্রকে বাধ্য করে যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে। অভ্র ও আমাদের সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই আমরাও আর যোগাযোগ রাখিনা। আজ ভাগ্যক্রমে চট্টগ্রামে অভ্রকে দেখে আমরা আর নিজেদের অভিমানটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। ‘
মেহেভীন এইবার আস্তে ধীরে সবটা বুঝতে পারলো। তার খালামনি অর্থাৎ আরহামের ছোট মা তালুকদার বাড়ি থেকে কোন এক কারণে বেড়িয়ে, তার বাড়িতে মেহেভীনকে আশ্রয় দিয়েছিলো। এতোটা বছর ধরে তার খালা তার শ্বশুড় বাড়ির কথাও কখনো বলেনি এমনকি মেহেভীন জানতেও চাইনি। যদিও মেহেভীন জানতো অভ্রের দুই চাচাতো ভাই আছে, কিন্তু তাদের নাম যে আরহাম এবং আরিয়ান সে সম্পর্কে তার অবগতি ছিলো না। এমনকি মেহেভীন তার অতীতের কথা আরহাম ও আরিয়ানের কথা বললেও, অভ্রের নাম একবারও উচ্চারণ করেনি। তাই অভ্র যে মেহেভীনের প্রাক্তন তা আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই জানে না। আরহামের ফোন বেজে উঠায়, সে বাইরে চলে গেলো। মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো কিচ্ছুক্ষন আগের কথা যখন আরহাম তাকে সকলের সামনে তার বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে। মেহেভীনের অধরের কোণে এতো কিছুর পরেও, প্রাপ্তির হাঁসির ফুটে উঠলো। সে কখনো আশা করেনি আরহাম তাকে এইরকম একটা সম্মান দিবে। সত্যি আরহাম এবং অভ্র দুই ভাই হয়েও, তাদের মধ্যে কত তফাৎ। একজন শুধু কষ্ট দিতে পারে আরেকজন নিয়ে যেতে পারে সুখের রাজ্যে। এতোদিন পরে অভ্রকে দেখে মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো সেই ভয়ংকর অতীত।
মেহেভীন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো,
‘ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। নাইস নেম! ‘
মেহেভীন মাথায় ভয়ংকর এক খেলার ভূত চেপে বসলো। যার পরিণতি ঠিক কি হবে জানেনা মেহেভীন। তখনি মেহেভীন শুনতে পায় দরজা বন্ধ করার আওয়াজ। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে……
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সকলের সামনে প্রাক্তন এইভাবে জড়িয়ে ধরায় অস্বস্হিতে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে মেহেভীনের।
আরহাম রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। আরহাম বাবা-মা এখনো মাথা নিচু করেই বসে আছেন। তাদের দেখে খুব ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে অভ্র তাদের সবকিছুই বলে দিয়েছে।মেহেভীনকে ছাড়িয়ে, অভ্র মেহেভীনের ললাটে ধরে বল, ‘ আমি সবকিছু জেনে গিয়েছি আমি। সবটা।
আমি জানি তোর গর্ভে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে। আরহামের সাথে তোর বিয়ে হয়নি। সবটাই তোর নাটক। আমাকে পোড়ানোর জন্যেই এতোকিছু করেছিস তাইনা? ‘
মেহেভীন অভ্রের থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বুকটা তার কেঁপে উঠলো অভ্রের কথা শুনে। মনে মনে যা সন্দেহ করেছিলো,সেইটাই ঠিক। অভ্র সবকিছুই জেনে গেছে। মেহেভীনকে এইভাবে নিজের থেকে দূরে সরে যেতে দেখে, অভ্র মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে,
‘ আমি জানি আমি যা করেছি তা অন্যায়,কিন্তু বিশ্বাস কর আমি যা করেছি এর পিছনেও কিছু কারন লুকিয়ে আছে। তা তোকে জানতে হবে,কিন্তু তুই তার আগে আমার সাথে আমার বাড়িতে চল।
এই কয়দিনে তোর থেকে দূরে থেকে আমি হারে হারে টের পেয়েছি তোকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি রে,নিজের অজান্তেই। তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না রে মেহু। ‘
‘ আর মায়রা? তাকে বুঝি তুমি ভালোবাসো না? একদিন তো মায়রার যোগ্যতাই তোমার কাছে সবকিছু ছিলো। মায়রাকেই তো ভালোবেসে, আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছিলে তাইনা অভ্র?আমাকে তো শুধু ব্যবহারই করা যায়। আজ মায়রার প্রতি তোমার ভালোবাসা ট্রান্সফার হয়ে, আমার কাছে চলে এলো? যাকে শুধু তুমি ব্যবহার করার বস্তু মনে করতে। ‘
মেহেভীনের কঠোর কথায়, অভ্র আমতা আমতা করে বলে,
‘ মায়রার স্ট্যাটাস ছিলো একটা। মায়রা মর্ডান। তাই মায়রার সাথে আমি রিলেশনে গিয়েছিলাম। মায়রাকে আমি পছন্দ করতাম। সেই পছন্দটাকেই আমি ভালোবাসা বলে চালিয়ে দিয়েছি,কিন্তু তোর সাথে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করতে গিয়ে, তোকে আমি অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছিরে মেহু। তা আমি আজ উপলব্ধি করেছি, তুই প্লিয এখন
আমার সাথে চল। আর এখন তো আমাদের সন্তানও আসতে চলেছে, তাই আমরা এখন একসাথে থাকবো। খুব সুখে থাকবো।’
মেহেভীনের রাগে থরথর করে কাঁপছে, সে অভ্রের ডান গালে অভ্রকে ঠাস করে চর বসিয়ে দেয়। অভ্র অবাক হয়ে মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীনে অভ্রের আরেকগালে চর বসিয়ে দেয়। উপস্হিত সবাই অবাক! মেহেভীন যে এতোটা রেগে গিয়ে,অভ্রকে থাপ্পড় মেরে বসবে, তা কেউ ভাবেনি।
মেহেভীন অভ্রের দিকে এগোতে এগোতে কড়া গলায় বলে,
‘ তুমি আগেও অমানুষ ছিলে,আজকেও অমানুষ আছো তুমি। আমার মনটা নিয়েও খেলেছো আজ তুমি মায়রাকে নিয়েও খেলছো । মেয়েদের কি তুমি নিজের খেলনা মনে করো?আজ একে ভালোবাসলাম কাল অন্য কাউকে? সন্তানের কথা বলছো তুমি? যেদিন তোমার মা তোমার সন্তানকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলেছিলো,সেদিন কোথায় ছিলে তুমি? সেদিন তো তুমি নিজের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। আমি তোমাকে আমাদের সন্তানের কথা জানাতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারেনি। কেননা তোমার তো শুধু তখন নিজের বিয়ে ছাড়া আর কোনকিছুই মাথাতে ছিলো না। আর আজ তুমি সন্তানের উপর অধিকার বসাতে এসেছো? ‘
মেহেভীনের কথায় সবাই আরেকদফা চমকে যায়। সবার ভিতরেই অস্হিরতা বেড়ে যায়। কেউ ভাবেনি অভ্রের মা ইশরা বেগম মেহেভীনের সন্তানকে এই পৃথিবীতে আসার আগেই, মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। আরহাম ছলছল দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে তাকায়। মেয়েটা যেন কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছে। কতটা কষ্টের মধ্যে মেয়েটা গিয়েছে। অভ্র মেহেভীনের হাত পুনরায় ধরে, ধরা গলায় বলে,
‘আমি যদি সত্যি জানতাম আমাদের সন্তানের কথা,তাহলে এইসব কিছুই হতো না। আমার মা যে এতোটা নিচে নামবে আমি কখনো ভাবেনি। এখন আমি বলছি তো আমাকে একটিবার সুযোগ দে। সব ঠিক করে দিবো আমি। তুই এখুনি আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবি। ‘
কথাটি বলে অভ্র মেহেভীনকে জোড় করে হাত ধরে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে,তখনি পিছন থেকে মেহেভীনের হাত আরহাম ধরে, একপ্রকার হেচকা টান দিয়ে, মেহেভীনকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মেহেভীন আরহামের পিছনে গিয়ে, নিজেকে আড়াল করে ফেলে। অভ্র অস্হির হয়ে বলে,
‘ এইসব কি আরহাম? তুই আমার আর মেহুর মাঝে ঢুকছিস কেন? দেখ মেহুর গর্ভে আমার সন্তান। আমার অধিকার আছে মেহুর উপর এবং আমার সন্তানের উপর। তুই মেহুকে ছেড়ে দে। মেহু আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে। ‘
অভ্র মেহেভীনের দিকে এগোতে নিলে, মেহেভীন আরহামের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে এবং আরহামের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকায়,যার মানে কিছুতেই অভ্রের সাথে যাবে না। সে কিছুতেই অভ্রকে বিশ্বাস করেনা। আরহাম মেহেভীনকে নিজের থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে, অভ্রের নাক বরাবর ঘুষি দেয়। অভ্র মুখ থবড়ে মাটিতে পড়ে যায়।
এতোটা জোড়ে ঘুষি দেওয়ার ফলে, অভ্রের মুখ কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেছে। অভ্র রাগে ফুশছে। আরিয়ান তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে,’ ভাই তুই কি করছিস? ‘
আরহামের বাবা- মাও চমকে যায় ছেলের কান্ডে। আরহামের বাবা গম্ভীর সুরে বলে,
‘ আরহাম! অভ্র তোমার ভাই হয়। এইভাবে তাকে মারতে পারো না তুমি তাকে। ‘
আরহাম তার বাবার কথার উত্তরে বললো,
‘ এতোদিন আমার যা করা উচিৎ ছিলো, তা আমি আজ করলাম। আজ আমাকে কেউ বাঁধা দিবে না। ‘
মুহুর্তেই পরিস্হিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। মেহেভীন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আরহাম গিয়ে, অভ্রকে শার্ট চেপে ধরে রাগে চিৎকার করে বলে,
‘ অনেক্ষন ধরে সহ্য করছি অভ্র। তুই কি ভেবেছিস তুই যখন যা চাইবি তাই হবে? ‘একবার আমাকে ভালোবাসা আমার মেহেভীনকে আমি তোকে দিয়েছিলাম, কিন্তু তুই আমার মেহেভীনের মর্যাদা দিতে পারিস নি। আমার মেহেভীনের জীবন থেকে সমস্ত সুখ তুই কেড়ে নিয়েছিস। আমার জীবনের সব থেকে বড় ভূল হলো আমি তোর মতো প্রতারকের কাছে বিশ্বাস করে, আমার মেহেভীনকে রেখে গিয়েছিলাম,কিন্তু আজ সেই ভূল আমি দ্বিতীয়বার করবো না। কোন অধিকার নেই তোর মেহেভীন কিংবা বেবীর উপর। ‘
আরহাম মেহেভীনকে ভালোবাসে এই কথাটি নির্দ্বিধায় বলে ফেললো। মেহেভীন কখনো ভাবেনি আরহাম এতো সহজে সবার সামনে সবকিছু বলে দিয়েছে।
অভ্র বিদ্রুপ হাঁসে। হাঁসিটু্ুকুও নিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আমি আমার অধিকার নিয়েই ছাড়বো আরহাম হাসান তালুকদার। অভ্র তার ভালোবাসা কেড়ে নিতে জানে। ‘
অভ্র কথাটি বলেই রেগে হনহন করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। অভ্র বেড়িয়ে যেতেই, আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে, মেহেভীনকে আশ্বাস দিয়ে, হাতটুকু শক্ত করে চেপে ধরে। যার মানে সে কিছুতেই মেহেভীনকে অভ্রের কাছে যেতে দিবে। সবসময় আগলে রাখবে মেহেভীন এবং তার বেবীকে।মেহেভীন ও নিশ্চিন্ত হয়। এই মানুষটা ছাড়া আর কাউকে সে এতোটা ভরসা করতে পারেনা। মেহেভীন এইবার আরহামের বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে ফেলে। মেহেভীন ভাবছে এতোদিন মিথ্যে বলে বাড়িতে থাকার ফলে,হয়তো মেহেভীনের বাবা-মা তাকে ভূল বুঝছে।আরহামের মা মেহেভীনের কাছে এসে , গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ আমি তোমাকে ভরসা করেছিলাম মেহেভীন,কিন্তু তুমি আমার ভরসাটা এইভাবে ভেঙ্গে না দিলেও পারতে। ‘
মেহেভীন ফুপিশে কেঁদে উঠে। আরহাম কিছু বলতে নিলে,আরহামের মা বললেন,
‘ আমি এখন আর কিছু শুনতে চাইনা। আমি উপরে যাচ্ছি। কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার। তোমার কাছে তো অন্তত কিছু শুনতেই চাই না আমি আরহাম। ‘
‘ মা! ‘
‘ সবার সামনে মেহেভীনকে ভালোবাসার কথা বললে যে, তোমার মুখে কি একটুও বাঁধলো না আরহাম? যে তোমারই ভাইয়ের প্রাক্তন স্ত্রী এবং সন্তানের মা হতে চলেছে। ‘
আরহাম পকেটে হাত গুজে নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
‘ আমি মেহেভীনকে ভালোবাসি, তাতে কোন ভূল হতে পারে বলে আমি মনে করি না। কেননা মেহেভীনের কোন ভূল নেই এতে। যা করেছে সব অভ্র এবং ছোট মা করেছে। ‘
‘ তোমাকে আমার সত্যি কিছু বলার নেই। তুমি একেবারে অন্ধ হয়ে গেছো,ভালোবাসায় আরহাম। আর তোমার মাথাটা যে কন্টিনিয়াসলি কেউ খাচ্ছে, সেইটাও বুঝতে পারছি৷ ‘
ক্রোধান্তিত হয়েকথাটি বলেই আরহামের মা গটগট করে উপরে চলে গেলেন। আরহামের বাবা ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। মেহেভীন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে, আরহামের মা তাকেই কথাগুলো উদ্দেশ্য করে বলেছে। আরহাম তার মাকে আটকাতে চাইলেও পারেনা।মেহেভীন এখন কি করবে বুঝতে পারছে না? মানুষগুলো তাকে এইভাবে ভূল বুঝছে।আজ তাদের চোখেই মেহেভীন ছোট হয়ে গেলো। যারা একসময় তাকে এতোটা ভালোবাসতো। বুক ফেটে কান্না আসছে তার।
আরিয়ান এসে মেহেভীনের কাঁধে হাত রাখলো।
_________
ইশরা বেগম চারদিকে রুমে পাইচারি করে যাচ্ছেন, অভ্র এখন সবকিছু জেনে গিয়েছে, এখন সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার কাছে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে, সেদিন যদি সত্যি বাচ্ছাটাকে মেরে ফেলতে পারতো,তাহলে এই দিন দেখতে হতো না। ইশরা বেগমের ভাবনার মাঝেই, মায়রা ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। ইশরা বেগম মায়রাকে ব্যাগ হাতে নিতে বেড়োতে নিলে বুঝে গেলেন মায়রা নিজের বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছে। ইশরা বেগম বললেন,
‘ মায়রা তুমি কি সত্যি চলে যাবে? ‘
মায়রা তেজি গলায় বললো,
‘ তা নাহলে কি করবো বলুন? আপনার ছেলে যা শুরু করেছে। প্রাক্তনের প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেছে তার। বাচ্ছার অধিকারের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে,এদিকে যে আমার গর্ভে অভ্রের সন্তান বেড়ে উঠেছে সেদিকে কোন খেয়াল আছে ওর? মেহেভীনের গর্ভে যে বাচ্ছা রয়েছে, শুধু অভ্রের কাছে একটা অস্ত্র মাত্র, যার মাধ্যমে অভ্র এখন মেহেভীনকে পেতে চায়। ‘
‘ মায়রা আমার কথা টা শুনো তো? ‘
মায়রা নিজের চোখের জলটুকু মুছে, অভ্রের মাকে থামিয়ে বলে,
‘ আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। আপনার কি মনে হয়না? আজ যা কিছু হচ্ছে তার পিছনে আপনার দায় সবথেকে বেশি। আপনার জন্যে আজ এতোকিছু। আমার সব থেকে বড় ভূল হলো আমি আপনাদের সাহায্য করেছিলাম। আসলে অভ্রকে ভালোবাসতাম তো,তাই অতীতে এইরকম একটা অন্যায়টাতে হাত মিলিয়েছিলাম। তার ফল ও পাচ্ছি আমি। ‘
ইশরা বেগম চুপ করে আছেন। মায়রা আবারোও গলায় কন্ঠিন্য এনে বললো,
‘অভ্রকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। মেহেভীনকে তো নাই। সবাইকে আমি দেখে নিবো। আমার বাপির কাছে গিয়ে, আমি সব খুলে বলবো। ‘
মায়রা হাতের ব্যাগটা নিয়েই বেড়িয়ে গেলো। ইশরা বেগম বুঝতে পারলেন, মায়রা আবারো আরেকটি
নতুন ঝামালার উপত্তি ঘটাতে চলেছে।
____
মেহেভীন আরহামের ঘরে ঢুকেই, নিজের লাগেজ গুছাতে শুরু করে দিলো। আরহাম কোন এক কাজে বাইরে গেছে। আরিয়ান ও বাড়িতে নেই।
সেই সুযোগেই সে চলে যাবে। এতোদিন তার জন্যে আরহাম অনেক কিছু সহ্য করেছে। আরহাম অনেক করেছে। মেহেভীন নিজেকে আরহামের কাছে বোঝা ছাড়া কিছুই মনে করছে। মেহেভীন খুব ভালো করে বুঝতে পারছে আরহামের সাথে তার বাবা-মায়ের একটা দূরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তার উৎস যে মেহেভীন নিজেই, তা বুঝতে বেগ পেতে দেরী হয়না মেহেভীনের। মেহেভীন চায়না তার জন্যে আরহামের পরিবারের সাথে আরহামের দুরত্ব সৃষ্টি হোক। তাছাড়া অভ্র একবার যখন জেনে গেছে,তখন সে বার বার চেস্টা করবে এখানে এসে বাচ্ছার অধিকার নিতে,যা কিছুতেই চায়না মেহেভীন। অভ্রের কাছে সে কিছুতেই ফিরবে না। অনেক দূরে চলে যাবে সে এবং তার সন্তান।মেহেভীন ঘরটাকে ভালো করে দেখে নেয়, এই ঘরে তার কত স্মৃতি জুড়ে আছে আরহামের সাথে। মেহেভীনের কেন যেন ইচ্ছে করছে না আরহামকে ছেড়ে কিংবা এই বাড়ির মানুষগুলোকে ছেড়ে। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। আরহামের জন্যে অন্যরকম কষ্ট উপলব্ধি করছে সে,কিন্তু কেন? মেহেভীন নিজেকে শক্ত করে আরহামের ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন বেড়িয়ে পড়তেই,সে অনুভব করে তার কাঁধে কারো উতপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে। মেহেভীন স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস কেমন উঠছে নামছে মেহেভীনের। পিছনে থাকা ব্যক্তিটি যে আর কেউ স্বরং আরহাম নিজেই। যে ভয়টা মেহেভীন পেয়েছিলো,তাই হলো। মেহেভীন ভয়ে ভয়ে আরহামের দিকে তাকিয়েই, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেলে। আরহাম রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখুনি মেহেভীনকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলবে। আরহাম মেহেভীনের হাতজোড়া শক্ত করে ধরে,রুমে নিয়ে যায়। মেহেভীন কাচুমাচু হয়ে বসে পড়ে বিছানায়। আরহাম মেহেভীনের বাহু চেপে ধরে শক্ত গলায় বলে,
‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে তুমি একটা। এতোটা স্টুপিড মানুষ কীভাবে হয়! তুমি আমাকে ছেড়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে? এতোটা কঠোর তুমি কীভাবে হতে পারো মেহেভীন আন্সার মি? আন্সার মি ড্যাম ইট। ‘
আরহাম ধমকে কথাগুলো বলে টেবিলে জোড়ে ঘুষি মারে। মেহেভীন কেঁপে উঠে ভয়ে। আরিয়ানও রুমে ঢুকে আরহামের কথা শুনে, আরহামকে শান্ত করার জন্যে বলে, ‘ ভাই তুই মেহুর উপর এইভাবে রাগ করে থাকিস না প্লিয ভাই। দেখ মেহু হয়তো বুঝেনি। একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই…’
আরহাম আরিয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই,
আরিয়ান চুপ হয়ে যায়। সে খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে। আরহাম এইবার ঠান্ডা গলায় বললো,
‘ ও বুঝি নি? সবকিছুই বুঝে বুঝেছিস এবং বুঝে বলেই আমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চায়। এই স্টুপিড মেয়েটা ভালো করেই জানে ওকে এবং বেবীকে আমি কতটা ভালোবাসি। ওরা আমার জীবনের ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবুও ইচ্ছে করে আমার থেকে সরে যেতে চাচ্ছে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে। ‘
‘ তাহলে আমার মতো স্টুপিড মেয়েকে ভালোবাসেন কেন? যে শুধু আপনাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না। ‘
‘ জাস্ট স্টপ ইট মেহেভীন। আর একটা কথা আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইনা? আর ইউ গট ইট?’
আরহামের কাঠিন্য গলায় বলা কথাগুলো শুনে,মেহেভীন মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।সে কি বা করবে? সে তো আরহামের ভালোই চেয়েছিলো বলে চলে যেতে চাইছিলো, যেন আরহাম ভালো থাকে,কিন্তু উল্টো আরহাম তাকে এইভাবে বকা দিলো। আরিয়ান আরহামের কাঁধে হাত রেখে বুঝায় যেন একটু শান্ত হয়, নাহলে মেহেভীন ভয় পেয়ে যাবে এমনিতেই মেয়েটার মনের উপর কম ঝড় বইছে না। আরহামও কোনরকম নিজের রাগটাকে সংযত করার চেষ্টা করে। আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে। আরিয়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে, ফারিয়ার ফোন। আরিয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আরিয়ান নিজের রুমে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করার সঙ্গেই সঙ্গেই ফারিয়া অস্হির হয়ে বললো,
‘ বাড়ির অবস্হা কেমন? সব ঠিক আছে তো ডাক্তার সাহবে! ‘
‘ তেমন ভালো না। বিচ্ছিরি একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। ‘
আরিয়ান পর পর সব ঘটনাই খুলে বললো ফারিয়াকে। সবকিছু শুনে ফারিয়া বললো,
‘ আপনি চিন্তা করবেন না ডাক্তার সাহেব। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আরহাম ভাইয়া তো মেহেভীন আপুকে অনেক ভালোবাসে,দেখবেন ভাইয়া আপুকে ঠিক আগলে রাখবে। ‘
আরিয়ান ছোট্ট করে বলে,
‘ আমি শুধু চাই ভাইয়া এবং মেহু এক হয়ে যাক। আর কিছুই না। ‘
ফারিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ ভরসা। ‘
ফারিয়া এবং আরিয়ান আরো কিছুক্ষন গল্প করলো। আরিয়ান খেয়াল করে দেখলো মেয়েটার সাথে কথা বললে তার মনটা হাল্কা হয়ে যায়।
এদিকে….
আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনের হাতজোড়া ধরে নরম সুরে বলে,
‘ মেহেভীন তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে ছেড়ে বেবীকে নিয়ে দূরে চলে যাবে,তাহলে একদম ভূল ভাবছো। আমি তোমাকে নিজের থেকে কখনো দূরে যেতে দিবো না। তুমি চাইলেও না। একটা অনুরোধ রাখবে আমার? ‘
মেহেভীন অশ্রুসিক্ত চোখে আরহামের দিকে তাকাতেই, আরহাম মৃদ্যু হেসে জবাব দিয়ে বলে,
‘ আমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে ভালোবাসা না পেলেও, আমি আমার ভালোবাসাকে কখনো নিজের থেকে আলাদা করতে দিবো না। তাই আমার কাছে ছোট্ট অনুরোধ। ভালোবাসতে হবে না আমায় আজীবন না হয় কষ্ট দিও তবুও আমার কাছে থেকো যেও আমি তোমায় রেখে দিবো আমার মনের গহীনে। ‘
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন উঠে দাঁড়ায়। মানুষটার কথাগুলো শুনলেই,যে ভালোবাসার প্রতি তার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে সেই বিশ্বাসটা যেন পুনরায় উজ্জীবিত হতে চায়। মেহেভীনের মস্তিষ্ক বার বার যেন বলছে ‘ মেহেভীন ভালোবাসা একটা ফাঁদ। যা আমাদের ধংশের দিকে ধাবিত করে।এই ফাঁদে আবারোও নিজেকে জড়িয়োও না তুমি। ‘
অন্যদিকে মন বার বার বলছে ‘ মেহেভীন সঠিক মানুষ বার বার জীবনে আসেনা। সে একবারই আসে। একবার যখন সে তোমার জীবনে চলে এসেছে তাকে আকড়ে ধরে রাখো, দেখবে ভালেবাসা সুন্দর। ‘
মেহেভীন যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে। কার কথা শুনবে সে? মনের কথা নাকি মস্তিষ্কের কথা? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
‘ চলুন এখন। ‘
‘ কোথায়? ‘
‘ যেখানে আমি নিয়ে যাবো। ‘
আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে ধীরে নিয়ে যায়। ছাঁদে আসতেই, মেহেভীন এক প্রকার স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
________________
ইশরা বেগম ড্রইং রুমে বসে আছেন মাথা নিচু করে। তখনি অভ্র একপ্রকার ঢুলতে ঢুলতে তার মায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। ইশরা বেগম চমকে উঠেন ছেলেকে এই অবস্হায় দেখে। ইশরা বেগম অভ্রকে উঠিয়ে, নিজের পাশে সোফায় বসিয়ে বললেন,
‘ অভ্র! এইসব কি শুরু করেছো তুমি? তুমি জানো মায়রা আজ বাপের বাড়ি চলে গেছে। ‘
‘হুম জানি মা চলে গেছে। ‘
অভ্র মুখটা বেকিয়েই আস্তে করে জবাব দিলো। ছেলের থেকে এইরকম উত্তরে বিরক্তির রেশ ফুটে উঠলো ইশরা বেগমের কপালের ভাজে। তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন অভ্র ড্রিংক করেছে।ইশরা বেগম ছেলের গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ অভ্র এইসব কি পাগলামি করছো? দেখো বাবা
মায়রা তোমাকে ভালোবাসে। মেহেভীনকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও। আমার কথাটা শুনো বাবা।’
অভ্র তার মায়ের থেকে সরিয়ে রুক্ষ গলায় বললো,
‘ কি কথা শুনবো আমি মা? আজ তোমার কথা শুনেই তো এতো কান্ড হয়ে গেলো। ভালোবেসে ফেললাম আমি মেহেভীনকে। আজ আমার জীবনের এই পরিনতির জন্যে তুমি দায়ী মা!’
‘ অভ্র..’
‘ প্লিস মা থামো তুমি। তুমি কী জানতে না? মেহেভীনের গর্ভে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে কি হলো মা জানতে? তাহলে কেন তাকে মেরে ফেলতে চাইছিলে তুমি? সে তো আমারই অংশ। সে তো ছোট্ট নিষ্পাপ। তার কি দোষ বলো? ‘
কথাটি বলেই অভ্র তার মদের বোতলটা সজোড়ে ফেলে দিলো,যা ভেঙ্গে বিকট শব্দের সৃষ্টি করলো।
ইশরা বেগম শক্ত মুখে বসে রইলেন। সে যেন এই মুহুর্তে অভ্রের সাথে কোনপ্রকার তর্কে জড়াতে চাইলেন না। অভ্র এইবার নিজের কন্ঠটা নরম করে, নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো,
‘ মাগো ও মা! তুমি তো জানো মা। কখনো তোমার কথার অমান্য করি না। সব কথা শুনেছি তোমার। আজ একটা ছোট্ট আবদার রাখবে গো মা? আমার মেহেভীনকে এনে দাও না মা। ওগো মা শুনছো? আমার মেহেভীনকে এনে দাও। ‘
একটা ছোট্ট বাচ্ছা যখন তার পছন্দের খেলনার জন্যে যেমন তার মায়ের কাছে আবদার করে বসে, তেমনি অভ্র ও আজ মাতাল অবস্হায় তার মায়ের কাছে মেহেভীনকে চাইছে। ইশরা বেগম একেবারে হতভম্ব হয়ে যায় ছেলের এমন আবদারে। ছেলেটা কি তাহলে সত্যিই মেহেভীনকে ভালোবেসে ফেললো?
অভ্র কন্ঠটাকে কিছুটা বাচ্ছামো এনে বললো,
‘ আমি মেহেভীনকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। একটিবার মেহেভীনকে এনে দাও মা। আমি আর কিচ্ছু চাইনা। একটিবার আমি আর কিচ্ছু চাইনা মা।’
ইশরা বেগম নিজের ছেলের এই গভীর কষ্টেভরা আকুতি শুনে নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলেন না। শক্ত করে চেপে ধরলেন নিজের ছেলেকে। এইরকম একটা পরিনতি সে কখনোই আশা করেননি।
অন্যদিকে,
মায়রা নিজের বাড়িতে ঢুকেই তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আদরের মেয়ের চোখের পানি দেখে মায়রার বাবা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মেয়ের কাছে হঠাৎ কান্নার কারণ জানতে চাইলে,মায়রা কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলে তার বাবাকে। মায়রার বাবা মেয়ের এইরকম পরিনতির কথা শুনে,একপ্রকাত স্তব্ধ হয়ে পড়েন। আদুরের মেয়ের এতোটা কষ্টে আছে সে ভাবতেই পারছেন না।
মায়রা তার বাবাকে জড়িয়ে, কান্নার সুরে বলে,
‘ বাবা মেহেভীন আমার সব থেকে বড় পথের কাটা। ওর জন্যে অভ্র আমাকে নিজের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমার সন্তানকে পর্যন্ত এখন সে মেনে নিতে নাখছ।’
মায়রার বাবা নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে, আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ ডোন্ট ক্রাই মাই প্রিন্সেস। তোমার বাবা আছেনা? সে সব ঠিক করে দিবে। তোমার পথের কাটাকে পারলে একেবারে উপড়ে ফেলে দিবে,তবুও তোমাকে অসুখি থাকতে দিবে না। ‘
……..
ছাদের পরিবেশটা নীরব এখন। চারদিকের মৃদ্যু বাতাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে আরহাম এবং মেহেভীমকে। আজ আকাশে পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে। তার আলো দিয়ে উজ্জ্বল করে দিয়েছে গোটা পরিবেশটা। আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে দোলনায় বসে পড়ে। দুজন মিলে আজ চন্দ্রবিলাশ করবে। আরহাম তার ড্রইনিং এর খাতা ও পেন্সিল ও নিয়ে এসেছে। মেহেভীনকে উঁকিে মেরে দেখছে, আরহাম মেহেভীনকে আঁকছে। মেহেভীন ভ্রু কুচকে বলে,
‘ পৃথিবীতে এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস, অথচ শুধু আমাকেই আকেঁন আপনি। ‘
‘ ওইযে বলেছিলাম না? আমার চোখে আমার ভালোবাসার মানুষটিই সর্বশ্রেষ্ট সুন্দর। ‘
মেহেভীন আনমনে বললো,
‘ আপনি আর একটু আগে কেন এলেন না জীবনে আরহাম সাহেব? ‘
‘কিছু বললে? ‘
‘ মান মানে..আমরা সবসময় ভূল মানুষকেই কেন ভালোবাসি আরহাম সাহেব? আজ দেখুন না অভ্রের মতো ভূল মানুষকে ভালোবেসে আমার এই পরিনতি। ‘
আরহাম বুঝেছে মেহেভীনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাই বিষয়টি চেঞ্জ করে, তার ছোটবেলার কাহিনী শুনানো মেহেভীনকে। মেহেভীন ও খুব আনন্দের সাথে শুনতে লাগলো। একটা সময়ে মেহেভীন আরহামের কাঁধেই ঘুমিয়ে পড়লো। আরহাম তা দেখে মুচকি হেসে, পুনরায় মেহেভীনের ছবি আঁকতে শুরু করে দিলো।
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন আরহামের কাঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের উজ্জ্বল আলো এসে মেহেভীনের মায়াবী মুখশ্রীকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছে। মেহেভীনের প্রতি আরহাম যেন দ্বিগুনভাবে মোহিত হয়ে উঠে।পূর্নিমার রাতের মুগ্ধতা যেন দ্বিগুন বাড়িতে তুলছে মেহেভীনের এরুপ মোহীত রুপ।আরহাম হাল্কা ফু দিয়ে মেহেভীমের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোকে উঁড়িয়ে দেয়। এতে মেহেভীন খানিক্টা নড়ে আরহামের শার্ট আলতো করে আকড়ে ধরে। আরহাম খানিক্টা স্মিত হেঁসে যত্নের সাথে তার ঘুমন্তি প্রেয়সীর ছবি একেঁ ফেললো। এতো সুন্দর একটা দৃশ্য না একেঁ কি থাকা যায়? আরহামও মেহেভীমনকে ডেকে,মেহেভীনকে আর বিরক্ত করেনি। আরহাম ও দোলনায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
…………….
অভ্রকে মাতাল অবস্হায় ইশরা বেগম কোনরকম
অভ্রকে নিজের রুমে শুয়িয়ে দিয়ে দেন। অভ্র ঘুমের মাঝেই ‘মেহেভীন ‘বলে চিৎকার করতে থাকে। ইশরা
বেগম ছেলের এইরকম অবস্হা দেখতে পারছেন না,তিনি বেড়িয় যান ঘর থেকে। অভ্র তার পাশে থাকা
মেহেভীনের ছবির ফ্রেম টা কোনরকম হাতড়ে নিয়ে নেয়। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে, অভ্র তেমন কিছু দেখতে পারছে না। শুধু তার চোখে মেহেভীনের ছবিটা ভাঁসছে। অভ্র কাঁচের ফ্রেম থেকে ছবিটা বের করতে নিলে, কাঁচ তার হাতেও ঢুকে যায়। রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অভ্র সেদিকে খেয়াল করেনা। অভ্র কাঁচের ফ্রেম টা ফেলে দিয়ে, মেহেভীনের ছবিখানা শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে খানিক্টা ধীর গলায় বলে,
‘মেহু রে! আমি কখনো তোর সাথে অন্যায় করতে চাইনি বিশ্বাস কর। আমি চাইনি। সত্যি বলছি যদি জানতাম তোকে এতোটা ভালোবাসবো,তোর শুন্যতা আমাকে এতোটা পুড়াবে, তাহলে কখনো তোর সাথে অন্যায় করতাম না। ভালোবাসার অনুভুতি যে বড্ড অদ্ভুদ! যখন -তখন হুটহাট যে কারো প্রতি চলে আসে। এই অনুভুতি যে আমাদের অতি কষ্টের দহনে
পুড়নোর জন্যে যথেষ্ট। যেই দহনটা আমার মনের ভিতরে হচ্ছে। ‘
অভ্রের চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অভ্র রক্তমাখা হাত দিয়ে,মেহেভীনের ছবিখানা বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখে। অভ্রের রক্ত দিয়ে পরিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের ছবিখানা।
________
সকাল সকাল আরহাম মেহেভীনের জন্যে খাবার নিয়ে আসে। মেহেভীন ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই,
আরহাম মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ এইযে সব খাবার যেন ফিনিশ হওয়া চাই। স্টুপিডের মতো যেন আবার ফেলে না দেওয়া হয়। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে। সব শেষ করে ফেলবে। ‘
মেহেভীন দ্রুততার সাথে মাথা ঝাকায়। যার মানে না সে কোন স্টুপিডের মতো কাজ করবে না। লক্ষী মেয়ের মতো নাস্তা সেরে ফেলবে। আরহাম মুচকি হেসে ‘গুড ‘ বলে চলে যেতে নিলে,কি ভেবে যেন থেমে যায়। পুনরায় মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ রেডি হয়ে নিও। আজকে তোমার ভার্সিটি যাওয়ার পথে, হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আগে চেকাপ করিয়ে নিবো। ‘
‘ কিন্তু হঠাৎ হসপিটালে কেন? ‘
আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে,মেহেভীনের নাক টেনে বললো,
‘ স্টুপিডের মতো ভূলে যাও কেন সব? ডক্টর যে বলেছে প্রেগ্ন্যাসির সময় এক মাস পর পর চেকাপ করাতে হবে। ভূলে গেলে সব? ‘
মেহেভীন জিব কাটে। সত্যিই আজ তার চেকাপের ডেট ছিলো,অথচ সে স্টুপিডের মতো সব ভূলে গেলো। মেহেভীন কানে হাত রেখে আরহাম ‘সরি’ বললো।
‘ হয়েছে ম্যাম আপনার আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে, রেডি হয়ে নীচে চলে আসুন। আমি নীচে অপেক্ষা করছি। ‘
আরহাম কথাটি বলেই, আলতো হেঁসে চলে যায়। মেহেভীন আরহামের হাঁসি দেখে কি মনে করে যেন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। লোকটা সত্যিই তার কতটা খেয়াল করে। কতটা চিন্তা তার বেবীর জন্যে।
চেকাপের ডেট মেহেভীন ভূলে গেলেও,আরহাম ভূলে না। মেহেভীন আয়নার তোয়ালা দিয়ে, নিজের চুল মুছতে মুছতে আনমনে বলে উঠে,
‘ আরহাম সাহেবকে দেখলে আবারো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবারোও প্রেমে পড়তে,কিন্তু অভ্রের দেওয়া সেই ক্ষতটা আমার মনে এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে, আমি পারছি না ভালোবাসতে। ‘
‘ ভয়কে জয় করতে হবে রে মেহু। একটিবার ভালোবেসে দেখ, দেখবি ঠকবি না। আমার ভাই অন্তত তোকে কখনো ঠকাবে না। ‘
মেহেভীন আয়নায় তাকিয়ে আরিয়ান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন আরিয়ানের দিকে ঘুড়ে, শুকনো হেসে বলে,
‘একমুঠো সুখের আশায়, যাকে আমরা সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা উজার করে দেই,সেই আমাদের শেষবেলায় এসে কাঁদিয়ে দিয়ে যায়। অভ্র আমাকে সুখ দিতে না পারলেও,আমাকে কান্না দিয়েছে। এক সমুদ্র সমান কষ্ট দিয়েছে। সমুদ্র কিন্তু বেশ বিশাল। তাহলে বুঝে দেখ অভ্রের দেওয়া কষ্টের পরিমানটা ঠিক কতটা বিশাল হতে পারে। সেই বিশাল কষ্টের ভয়টাকে জয় করা কি এতোটা সহজ আরিয়ান? ‘
আরিয়ানের মন ক্ষুন্ন হয়ে গেলো। সত্যি অভ্রের করা প্রতারণার স্বীকার হয়ে,মেহেভীনের মনটা ভালোবাসা নামক অধ্যায় থেকে নিজেকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় আছে,যদিও আরিয়ান জানে আরহামের ভালোবাসায়, মেহেভীনের মন গলে যাবেই। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই, আরহামের মা রুমে ঢুকেন। আরহামকে মাকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেলে মেহেভীন। আরহামের মা তা দেখে মুচকি হেসে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ আমার উপরে রাগ করেছো বুঝি? ‘
আরহামের মায়ের কথায়, মেহেভীম আরহামের মায়ের দিকে অবাক পানে তাকাতেই, আরহামের মা আরেকদফা হেসে বললেন,
‘ কালকে যা যা বলেছি তার জন্যে আমার উপর রেগে থেকো না। আমি কালকে অভ্রের কথা শুনে কিছু না বুঝেই তোমাকে বকা দিয়ে বসেছি। ‘
মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে বললো,
‘এমা! আমি কিচ্ছু মনে করিনি। আপনার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো মা মানে আন্টি। ‘
আরহামের ম মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,
‘ আমাকে এতোদিন মা বলতে না? এখনো বলবে। আরহাম আমার এবং আরহামের বাবার সাথে আলাদাভাবে কথা বলেছে। আরহামের কথা শুনে আমরা বুঝলাম। তোমার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্যে। আমিও তো একজন মা আমিও বুঝি তোমার অবস্হাটা। তাছাড়া অভ্র এবং ইশরা যা করেছে, তাতে তোমার কখনোই ওই বাড়িতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। ‘
মেহেভীন আরহামের মায়ের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি দেয়। মানুষটা কতটা ভালো। বলতে গেলে আরহামের পুরো পরিবারটাই ভালো। আরহামের মা আবারোও বললেন,
‘ । তাছাড়া তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে,সে তো আমাদের বংশের সন্তান। অভ্রকে যতই আমরা দূরে ঠেলে দেইনা না কেন তার সন্তানকে তো আমরা সবসময় আগলে রাখবো। তুমি এই বাড়ি ছেড়ে আরহামকে ছেড়ে কোথাও যেও না মা।আরহাম ও বাচ্ছাটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। তুমি তো জানো আমার ছেলে তোমাকেও কতটা ভালোবাসে।’
মেহেভীন এইবার খানিক্টা অস্বস্হিতে পড়ে যায়। তার অস্বস্হি দূর করে আরহাম প্রবেশ করে এবং বলে,
‘ মেহেভীন তুমি এখানে? এখনো নাস্তাটা ফিনিশ করো নি? কি করছো এখনো? তাড়াতাড়ি করে নাও।’
মেহেভীন নাস্তা করে নিয়ে, আরহামের সাথেই বেড়িয়ে যায়। দুজনকে একসাথে যেতে দেখে, আরহামের মা মুচকি হেসে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ দুজনকে বড্ড মানায় তাইনা রে? ‘
‘ তা বলতে? একদম রাব নে বানাদি জোড়ি। ‘
‘ আমি ভাবছি বাচ্ছাটা পৃথিবীতে চলে আসলেই, মেহেভীন এবং আরহামের বিয়েটা দিয়ে দিবো। মেহেভীনকে একেবারে সত্যিকারের বউ করে নিয়ে আসবো আমার বাড়িতে। ‘
আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে, খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ সত্যি মা?তাহলে তো অনেকগুলো ভালো হবে। ইউ আর বেস্ট মা। ‘
আরহামের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ মেহেভীন মেয়েটা ভারী ভালো। মেয়েটা নিজের জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি। আমি জানি মেয়েটার কষ্টটাকে দূর করে সুখের পথ একমাত্র আমার আরহামই দেখাতে পারবে। ‘
আমাদের দেশে এমন অনেক মেহেভীন আছে,যারা দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশে আরহামের মতো মানুষের বড্ড অভাব,যারা মেহেভীনের মতো মেয়েদের আগলে রাখবে। জীবনে নতুনভাবে পথ চলতে শিখাবে। নিয়ে যাবে সুখের রাজ্যে।
……..
ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আরহাম। কিছুক্ষন আগেই ডক্টর মেহেভীনকে চেকাপ করেছে। মেহেভীন এখনো চেকাপ রুমে। ডক্টর খানিক্টা মুখ কালো করে বসে আছে। ডক্টরকে এইভাবে দেখে আরহামের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বললেন,
‘ মেহেভীনকে আমি দেখলাম,কিন্তু একটা খারাপ খবর আছে? ‘
ডক্টরের কথা শুনে আরহাম কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ার্থ গলায় বলে,
‘ কি খারাপ খবর ডক্টর? ‘
…….চলবে কি?
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। কেউ ছোট কইবেন না 😑পড়ার মাঝে লিখছি হুহ]#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন আরহামের কাঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের উজ্জ্বল আলো এসে মেহেভীনের মায়াবী মুখশ্রীকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছে। মেহেভীনের প্রতি আরহাম যেন দ্বিগুনভাবে মোহিত হয়ে উঠে।পূর্নিমার রাতের মুগ্ধতা যেন দ্বিগুন বাড়িতে তুলছে মেহেভীনের এরুপ মোহীত রুপ।আরহাম হাল্কা ফু দিয়ে মেহেভীমের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোকে উঁড়িয়ে দেয়। এতে মেহেভীন খানিক্টা নড়ে আরহামের শার্ট আলতো করে আকড়ে ধরে। আরহাম খানিক্টা স্মিত হেঁসে যত্নের সাথে তার ঘুমন্তি প্রেয়সীর ছবি একেঁ ফেললো। এতো সুন্দর একটা দৃশ্য না একেঁ কি থাকা যায়? আরহামও মেহেভীমনকে ডেকে,মেহেভীনকে আর বিরক্ত করেনি। আরহাম ও দোলনায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
…………….
অভ্রকে মাতাল অবস্হায় ইশরা বেগম কোনরকম
অভ্রকে নিজের রুমে শুয়িয়ে দিয়ে দেন। অভ্র ঘুমের মাঝেই ‘মেহেভীন ‘বলে চিৎকার করতে থাকে। ইশরা
বেগম ছেলের এইরকম অবস্হা দেখতে পারছেন না,তিনি বেড়িয় যান ঘর থেকে। অভ্র তার পাশে থাকা
মেহেভীনের ছবির ফ্রেম টা কোনরকম হাতড়ে নিয়ে নেয়। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে, অভ্র তেমন কিছু দেখতে পারছে না। শুধু তার চোখে মেহেভীনের ছবিটা ভাঁসছে। অভ্র কাঁচের ফ্রেম থেকে ছবিটা বের করতে নিলে, কাঁচ তার হাতেও ঢুকে যায়। রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অভ্র সেদিকে খেয়াল করেনা। অভ্র কাঁচের ফ্রেম টা ফেলে দিয়ে, মেহেভীনের ছবিখানা শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে খানিক্টা ধীর গলায় বলে,
‘মেহু রে! আমি কখনো তোর সাথে অন্যায় করতে চাইনি বিশ্বাস কর। আমি চাইনি। সত্যি বলছি যদি জানতাম তোকে এতোটা ভালোবাসবো,তোর শুন্যতা আমাকে এতোটা পুড়াবে, তাহলে কখনো তোর সাথে অন্যায় করতাম না। ভালোবাসার অনুভুতি যে বড্ড অদ্ভুদ! যখন -তখন হুটহাট যে কারো প্রতি চলে আসে। এই অনুভুতি যে আমাদের অতি কষ্টের দহনে
পুড়নোর জন্যে যথেষ্ট। যেই দহনটা আমার মনের ভিতরে হচ্ছে। ‘
অভ্রের চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অভ্র রক্তমাখা হাত দিয়ে,মেহেভীনের ছবিখানা বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখে। অভ্রের রক্ত দিয়ে পরিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের ছবিখানা।
________
সকাল সকাল আরহাম মেহেভীনের জন্যে খাবার নিয়ে আসে। মেহেভীন ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই,
আরহাম মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ এইযে সব খাবার যেন ফিনিশ হওয়া চাই। স্টুপিডের মতো যেন আবার ফেলে না দেওয়া হয়। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে। সব শেষ করে ফেলবে। ‘
মেহেভীন দ্রুততার সাথে মাথা ঝাকায়। যার মানে না সে কোন স্টুপিডের মতো কাজ করবে না। লক্ষী মেয়ের মতো নাস্তা সেরে ফেলবে। আরহাম মুচকি হেসে ‘গুড ‘ বলে চলে যেতে নিলে,কি ভেবে যেন থেমে যায়। পুনরায় মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ রেডি হয়ে নিও। আজকে তোমার ভার্সিটি যাওয়ার পথে, হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আগে চেকাপ করিয়ে নিবো। ‘
‘ কিন্তু হঠাৎ হসপিটালে কেন? ‘
আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে,মেহেভীনের নাক টেনে বললো,
‘ স্টুপিডের মতো ভূলে যাও কেন সব? ডক্টর যে বলেছে প্রেগ্ন্যাসির সময় এক মাস পর পর চেকাপ করাতে হবে। ভূলে গেলে সব? ‘
মেহেভীন জিব কাটে। সত্যিই আজ তার চেকাপের ডেট ছিলো,অথচ সে স্টুপিডের মতো সব ভূলে গেলো। মেহেভীন কানে হাত রেখে আরহাম ‘সরি’ বললো।
‘ হয়েছে ম্যাম আপনার আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে, রেডি হয়ে নীচে চলে আসুন। আমি নীচে অপেক্ষা করছি। ‘
আরহাম কথাটি বলেই, আলতো হেঁসে চলে যায়। মেহেভীন আরহামের হাঁসি দেখে কি মনে করে যেন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। লোকটা সত্যিই তার কতটা খেয়াল করে। কতটা চিন্তা তার বেবীর জন্যে।
চেকাপের ডেট মেহেভীন ভূলে গেলেও,আরহাম ভূলে না। মেহেভীন আয়নার তোয়ালা দিয়ে, নিজের চুল মুছতে মুছতে আনমনে বলে উঠে,
‘ আরহাম সাহেবকে দেখলে আবারো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবারোও প্রেমে পড়তে,কিন্তু অভ্রের দেওয়া সেই ক্ষতটা আমার মনে এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে, আমি পারছি না ভালোবাসতে। ‘
‘ ভয়কে জয় করতে হবে রে মেহু। একটিবার ভালোবেসে দেখ, দেখবি ঠকবি না। আমার ভাই অন্তত তোকে কখনো ঠকাবে না। ‘
মেহেভীন আয়নায় তাকিয়ে আরিয়ান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন আরিয়ানের দিকে ঘুড়ে, শুকনো হেসে বলে,
‘একমুঠো সুখের আশায়, যাকে আমরা সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা উজার করে দেই,সেই আমাদের শেষবেলায় এসে কাঁদিয়ে দিয়ে যায়। অভ্র আমাকে সুখ দিতে না পারলেও,আমাকে কান্না দিয়েছে। এক সমুদ্র সমান কষ্ট দিয়েছে। সমুদ্র কিন্তু বেশ বিশাল। তাহলে বুঝে দেখ অভ্রের দেওয়া কষ্টের পরিমানটা ঠিক কতটা বিশাল হতে পারে। সেই বিশাল কষ্টের ভয়টাকে জয় করা কি এতোটা সহজ আরিয়ান? ‘
আরিয়ানের মন ক্ষুন্ন হয়ে গেলো। সত্যি অভ্রের করা প্রতারণার স্বীকার হয়ে,মেহেভীনের মনটা ভালোবাসা নামক অধ্যায় থেকে নিজেকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় আছে,যদিও আরিয়ান জানে আরহামের ভালোবাসায়, মেহেভীনের মন গলে যাবেই। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই, আরহামের মা রুমে ঢুকেন। আরহামকে মাকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেলে মেহেভীন। আরহামের মা তা দেখে মুচকি হেসে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ আমার উপরে রাগ করেছো বুঝি? ‘
আরহামের মায়ের কথায়, মেহেভীম আরহামের মায়ের দিকে অবাক পানে তাকাতেই, আরহামের মা আরেকদফা হেসে বললেন,
‘ কালকে যা যা বলেছি তার জন্যে আমার উপর রেগে থেকো না। আমি কালকে অভ্রের কথা শুনে কিছু না বুঝেই তোমাকে বকা দিয়ে বসেছি। ‘
মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে বললো,
‘এমা! আমি কিচ্ছু মনে করিনি। আপনার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো মা মানে আন্টি। ‘
আরহামের ম মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,
‘ আমাকে এতোদিন মা বলতে না? এখনো বলবে। আরহাম আমার এবং আরহামের বাবার সাথে আলাদাভাবে কথা বলেছে। আরহামের কথা শুনে আমরা বুঝলাম। তোমার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্যে। আমিও তো একজন মা আমিও বুঝি তোমার অবস্হাটা। তাছাড়া অভ্র এবং ইশরা যা করেছে, তাতে তোমার কখনোই ওই বাড়িতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। ‘
মেহেভীন আরহামের মায়ের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি দেয়। মানুষটা কতটা ভালো। বলতে গেলে আরহামের পুরো পরিবারটাই ভালো। আরহামের মা আবারোও বললেন,
‘ । তাছাড়া তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে,সে তো আমাদের বংশের সন্তান। অভ্রকে যতই আমরা দূরে ঠেলে দেইনা না কেন তার সন্তানকে তো আমরা সবসময় আগলে রাখবো। তুমি এই বাড়ি ছেড়ে আরহামকে ছেড়ে কোথাও যেও না মা।আরহাম ও বাচ্ছাটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। তুমি তো জানো আমার ছেলে তোমাকেও কতটা ভালোবাসে।’
মেহেভীন এইবার খানিক্টা অস্বস্হিতে পড়ে যায়। তার অস্বস্হি দূর করে আরহাম প্রবেশ করে এবং বলে,
‘ মেহেভীন তুমি এখানে? এখনো নাস্তাটা ফিনিশ করো নি? কি করছো এখনো? তাড়াতাড়ি করে নাও।’
মেহেভীন নাস্তা করে নিয়ে, আরহামের সাথেই বেড়িয়ে যায়। দুজনকে একসাথে যেতে দেখে, আরহামের মা মুচকি হেসে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ দুজনকে বড্ড মানায় তাইনা রে? ‘
‘ তা বলতে? একদম রাব নে বানাদি জোড়ি। ‘
‘ আমি ভাবছি বাচ্ছাটা পৃথিবীতে চলে আসলেই, মেহেভীন এবং আরহামের বিয়েটা দিয়ে দিবো। মেহেভীনকে একেবারে সত্যিকারের বউ করে নিয়ে আসবো আমার বাড়িতে। ‘
আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে, খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ সত্যি মা?তাহলে তো অনেকগুলো ভালো হবে। ইউ আর বেস্ট মা। ‘
আরহামের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ মেহেভীন মেয়েটা ভারী ভালো। মেয়েটা নিজের জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি। আমি জানি মেয়েটার কষ্টটাকে দূর করে সুখের পথ একমাত্র আমার আরহামই দেখাতে পারবে। ‘
আমাদের দেশে এমন অনেক মেহেভীন আছে,যারা দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশে আরহামের মতো মানুষের বড্ড অভাব,যারা মেহেভীনের মতো মেয়েদের আগলে রাখবে। জীবনে নতুনভাবে পথ চলতে শিখাবে। নিয়ে যাবে সুখের রাজ্যে।
……..
ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আরহাম। কিছুক্ষন আগেই ডক্টর মেহেভীনকে চেকাপ করেছে। মেহেভীন এখনো চেকাপ রুমে। ডক্টর খানিক্টা মুখ কালো করে বসে আছে। ডক্টরকে এইভাবে দেখে আরহামের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বললেন,
‘ মেহেভীনকে আমি দেখলাম,কিন্তু একটা খারাপ খবর আছে? ‘
ডক্টরের কথা শুনে আরহাম কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ার্থ গলায় বলে,
‘ কি খারাপ খবর ডক্টর? ‘
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহামের কথায় ডক্টরের চোখ-মুখে আবারো ঘোর অন্ধকার এসে হানা দিলো। যেন ডক্টর আপতত আরহামকে সেই খারাপ খবরটি বলতে ইচ্ছুক নয়। ডক্টরের এমন আচরণে আরহামের দুশ্চিন্তাকে দ্বিগুনভাবে বাড়িতে তুলছে সময়ের সাথে সাথে। আরহাম ঠোট ভিজিয়ে,চিন্তুিত হয়ে বললো, ‘ ডক্টর প্লিয বলুন না কি খারাপ খবর? ” ডক্টর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ আমি মেহেভীনের চেকাপ করে যা বুঝেছি,তা হলো বেবী আপাতত মেহেভীনের গর্ভে খুব একটা ভালো পজিশনে অবস্হান করছে না। যা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে মা এবং বেবী দুজনেরই। আমার যতটুকু মনে হয়, ডেলাভারির সময় মেহেভীনের লাইফের অনেক রিস্ক থাকবে। বেবীর পজিশনটা ভালো নয়। ‘
ডক্টরের কথা শুনে আরহামের ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে। মেহেভীন এবং বেবীর দুজনেই অনিরপত্তায় রয়েছে,দুজনেরই বেশ জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কথাটা ভাবলেই, আরহামের মনে খারাপ ভাবনা ঝেঁকে বসছে। বেবী কিংবা মেহেভীনের কিছু হয়ে গেলে,সে কী করবে তখন? আরহামের ভাবনার মাঝেই,ডক্টর আবারোও বললেন,
‘ মিঃ আরহাম খুব দুঃখের সাথে আমাকে বলতে হচ্ছে যে, এই অবস্হার জন্যে মেহেভীনের মানষিক অবস্হা দায়ী। মেহেভীন কোন একটা বিষয় নিয়ে,ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতো।যার ইফেক্ট বাচ্ছার উপরেও পড়েছে। আপনি বুঝতে পারছেন তো মিঃ আরহাম? ‘
আরহাম মাথা নাড়ায়। প্রেগন্যান্ট অবস্হায় মেহেভীন যে খুবই মানুষিক অবস্হার মধ্যে গিয়েছে এবং এখনো যাচ্ছে যা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আরহাম। আরহাম খবরটি শুনে, একপ্রকার ছন্নছাড়া হয়ে যায়। বুক ফেটে কান্না আসে তার।
বেবী এবং মেহেভীন এখন তার জীবনের সব থেকে বড় অংশে পরিনিত হয়ে গিয়েছে,তাদের কিছু হলে আরহাম কী করে থাকবে?
ডক্টর আরহামের অবস্হা বুঝতে পেরে,খানিক্টা নরম সুরে বললেন,
‘ মিঃ আরহাম আপনি বেশি চিন্তিত হয়ে পড়বেন না। আপনি যদি এইসময় শক্ত না থাকেন,তাহলে তো আরো সমস্যা হবে। আপনি যথাসম্ভব চেস্টা করবেন যেন মেহেভীন হাঁসি-খুশি থাকার চেস্টা করে। সব থেকে বড় কথা এখন মেহেভীন এখন রিস্কি জোনে আছে,তাই মেহেভীনকে অনেকটা নিরাপদভাবে চলাফেরা করতে হবে,নাহলে একটু উনিশ-বিশ হলেই সব শেষ। আপনি শুনতে পারছেন তো মিঃ হাসান তালুকদার? ‘
আরহাম মাথা নিচু করে ছিলো, ডক্টরের কথা শুনে সে সঙ্গে সঙ্গে মাথা উচু করে,নিজেকে শক্ত করে বললো,
‘জ্বী আচ্ছা ডক্টর। আমি মেহেভীনের আগের থেকেও বেশি খেয়াল রাখবো। কোন প্রকার দুঃখকে ছুঁতে দিবো না আমার মেহেভীনকে। ‘
ডক্টর মুচকি হেসে বলে, ‘ দ্যাটস গুড। ‘
আরহাম বেড়িয়ে যায় ডক্টরের চেম্বার থেকে। মেহেভীন বাইরে অপেক্ষা করছিলো, আরহামকে বেড়োতে দেখে সে উঠতে চাইলে,তৎক্ষনাক মেহেভীনকে বাঁধা দিয়ে, আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে করে উঠায়। মেহেভীন ও আস্তে করে উঠে যায়। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ এখন থেকে সবার হেল্প নিয়ে উঠবে। একা একদম চলাফেরা করবে না। এইসময়টায় একটু সাবধানে থাকতে হবে। ‘
আরহামের মুখ শুকনো দেখে,মেহেভীন আরহামকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ কিন্তু আপনি এইভাবে শুকনো মুখে কথা বলছেন কেন? ডক্টর কি আপনাকে কিছু বলেছে?’
মেহেভীনকে ডক্টরের বলা কথাগুলো কিছুতেই বলা যাবেনা,নাহলে মেহেভীনের মনে ভয় ঝেঁকে বসবে, যা মেহেভীনের শরীরের জন্যে এমদমই ঠিক হবেনা। আরহাম কথা ঘুড়িয়ে বলে,
‘তেমন কিছু না। সবকিছুই ঠিক আছে, শুধুমাত্র এই কয়েকটা মাস তোমাকে শুধু সাবধানে থাকবে হবে,দ্যাটস ইট। ‘
মেহেভীন নিশ্চিন্ত হয় আরহামের কথায়। আরহাম কিছু একটা ভেবে বলে,
‘ চলো আমরা বরং আজ শপিং এ যাই কেমন? ‘
‘ হঠাৎ কেন? ‘
‘ বেবী তো আর মাত্র কয়েকটা মাস পরেই চলে আসবে। এখন থেকেই তো জামা-কাপড় কিনতে হবে তাইনা? ‘
‘কিন্তু আপনি তো কিনেছেন। ‘
‘ কিন্তু তুমি তো বেবীর আম্মু। আজ বরং তুমি পছন্দ করে কিনে নাও। কেমন হবে? ‘
মেহেভীন সায় দিয়ে বলে, ‘ ভালোই হবে চলুন তাহলে। ‘
আরহাম মেহেভীনের মনটাকে ভালো করার জন্যে মেহেভীনকে শপিং এ নিয়ে যাবে। বেবীর জামা-কাপড় কিনতে কিনতে মেহেভীনের মনটাও উৎফল্লে ভরপুর হয়ে উঠবে।মেহেভীন ভাবলো তার ভার্সিটিতে ছোট্ট একটা টেস্ট এক্সাম আছে,তাও বারোটার দিকে। এখন কেবল দশটা বাজে এখন শপিং এ যাওয়াই যায়।
আরহাম এবং মেহেভীন গাড়ি করে শপিং মলের দিকে গেলো।
.______
অভ্র মেহেভীনের সাথে দেখা করবে আজ। মেহেভীনকে সব সত্যি কথা বলে দিবে সে। সে নিশ্চিত পুরো সত্যিটা জানার পরে,তার মেহু নিশ্চয় তাএ সাথে রাগ করে থাকতে পারবে না। ঠিক তার মেহু তার কাছে ফিরে আসবে,কথাটি ভেবে অভ্র মৃদ্যু হেসে বেড়িয়ে যায়। ছেলেকে এইভাবে হাঁসি খুশিভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে চিন্তায় পড়ে যান ইশরা। তার ছেলের মাথায় নিশ্চয় কিছু চলছে।
._______
আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে, শপিং মলে ঢুকে বিভিন্ন বাচ্ছাদের স্টোরে নিয়ে গিয়ে, অনেক শপিং করে। মেহেভীন ও খুব আনন্দের সাথে শপিং করতে থাকে।
শপিং ব্যাগ দিয়ে, আরহাম নিজের হাত ভরপুর করে ফেলেছে। আরহামকে দেখে মেহেভীন মুচকি হাঁসে।লোকটা কতটা খুশি মনে শপিং করেছে। যেমনটা মানুষ নিজের সন্তানের জন্যে করে। সত্যি লোকটা দেখে মেহেভীন শুধু প্রতিবার মুগ্ধ হয়। আরহাম শপিং ব্যাগ নিয়ে হাতে নিয়ে এগোতে এগোতে খেয়াল করে, মেহেভীন হাটছে না,বরং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনমনে মুচকি হাঁসছে। আরহাম মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে, ফিসফিস করে বলে,
‘ আমাকে নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাবে,এখন আপাতত চলো। ‘
আরহামের কথা শুনে, মেহেভীনের ফর্সা গালগুলো টকটকে লাল হয়ে গেলো লজ্জায়। লোকটা কি করে জানলো? সে তার কথা ভাবছিলো।
আরহাম স্মিত হাঁসলো। মেহেভীনকে লজ্জা পেলে কতটা মোহনীয় সুন্দরী হয়ে উঠে। যার মায়ায় আরহাম বার বার পড়ে যায়। মেহেভীন দ্রুত গতিতে হাটা শুরু করে দেয়। আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে, একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসায়, মেহেভীন অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম মুচকি হেসে বলে,
‘ আজকে তোমার পছন্দের লাচ্ছি খেলে কেমন হয়? প্রতিদিন তো দুধ খেতে খেতে তুমি বোর হয়ে যাচ্ছো?
আজ না হয় অন্যকিছু ট্রাই করা যাক? কি বলো? ‘
মেহেভীন আরহামের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। লাচ্ছি সে অনেক পছন্দ করে,কিন্তু আরহাম কী করে জানলো? সে লাচ্ছি পছন্দ করে।
‘ ভালোবাসার মানুষটার পছন্দ সম্পর্ক একটু-আকটু ধারনা আছে আমার ম্যাম বুঝলেন?’
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন মাথা নাড়িয়ে হাঁসে। যার মানে হ্যা সে খুব ভালো করেই বুঝেছে।
………..
আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে,তাতে বাধ সাঁধে মেহেভীন। জানায় আজকে জরুরী টেস্ট এক্সাম আছে ভার্সিটিতে। সেই পরীক্ষাটা দিতেই হবে। আরহামের মনে আজ সকাল থেকেই কেমন কু ডাকছে তাই আরহাম মেহেভীনকে ভার্সিটিতে যেতে দিতে না চাইলেও, বাধ্য হয়ে নিয়ে যায়। কেননা এক্সাম টা অনেক জরুরী। আরহাম ঠিক করেছে ভার্সিটির বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষন মেহেভীন এক্সাম দিবে,কিন্তু হুট করে আরহামের জরুরী মিটিং চলে আসে, কিন্তু আরহাম যেতে চায়না। মেহেভীন বুঝায় আরহামের মিটিং শেষ হতে হতে মেহেভীন এইদিকে পরীক্ষা দিয়ে দিবে। আরহাম যেন মিটিংটা করে তাকে এসে,নিয়ে যায়। সে পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতেই থাকবে। আরহাম কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,
‘ আমি না আসা পর্যন্ত হোল থেকে একদম বেড়োবে না। ওকে? ‘
মেহেভীন মাথা নাডিয়ে বলে,
‘ আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন আরহাম সাহেব! আমি বেড়োচ্ছি না। ‘
আরহাম কথাটা শুনে কিছুটা ভরসা পেলেও,কেমন একটা অস্হিরতা কাজ করছে। না যেতে চাইলেও, চলে যায়। এমনিতেই মনটা কেমন খচখচ করছে,মেহেভীনকে এইভাবে একা রেখে যাওয়ার জন্যে।
মেহেভীন এক্সামের হোলে ঢুকে, অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রকে দেখে মেহেভীন একপ্রকার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,অভ্র তাতে বাঁধ সাধে, বলে,
‘ তোর সাথে কিছু কথা আছে। যা আজ তোকে শুনতেই হবে। ‘
‘ আমার কোন কথা নেই আপনার সাথে। আমি পরীক্ষা আছে। ‘
‘ওহ তাহলে পরীক্ষার পরে বলবো। তুই নিশ্চিন্তে গিয়ে পরীক্ষা দে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ‘
মেহেভীনের এইবার রাগ হয়। সে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
‘ আপনি এতো বেহায়া কেন মিঃ অভ্র আহমেদ? এতোগুলো থাপ্পড় খেয়েও কি শিক্ষা হয়নি আপনার? ‘
‘ ভালোবাসলে একটু বেহায়া হতে হয় বুঝলি? ‘
চোখ টিপ দিয়ে অভ্র কথাটি বললো। মেহেভীনের ইচ্ছে হলো কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতে অভ্রকে,কিন্তু সে তা করলো না। এক্সাম শুরু হয়ে যাবে একটু পর। মেহেভীন হোলে ঢুকে যায়।
_________
মেহেভীনের এক্সাম ভালো করেই শেষ হলো। সবাই নিজেদের মতো চলে গেলো। মেহেভীন হোলে বসে আরহামের জন্যে অপেক্ষা করছে, তখনি কেউ তার মুখ চেপে ধরে।
……চলবে….কী?