#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২
ভার্সিটির ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কণার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে কণার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
কণা সেদিকে যেতে গিয়েও থেমে যায়। নিজের অবস্থানের কথা মনে পড়ে যায় আর আদ্রিয়ানের বলা শেষ কথাগুলো।
কী আছে তোমার মাঝে? কোনদিক দিয়েই তোমার সাথে আমার যায় না। না আছে রুপ না আছে গুণ। মুখ তো এসিডে পুড়ে গেছে আর আনস্মার্ট। তোমার কোনো যোগত্যা নেই আমার পাশে দাঁড়ানোর। ছোঁয়ার নখের সমান যোগত্যাও তোমার নেই। ছোঁয়া আমাকে প্রোপোজ করছে আমিও এক্সসেপ্ট করছি। আজকে থেকে তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।
ছোঁয়া আর আদ্রিয়ানকে কতো হাসিখুসি দেখাচ্ছে। ছোঁয়া আদ্রিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদে মাথা রেখে বসে আছে। ৭ মাস আগে সেও এভাবে আদ্রিয়ানের সাথে বসে থাকতো। আজ সব পাল্টে গেছে। আদ্রিয়ান একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ফট করে ছোঁয়ার গালে কিস করে দেয়। কণার
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু সে তো কারো সামনে কাঁদবে না। তাকে শক্ত হবে। তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যোগত্যায় সে কারো কাছ থেকে কম না।
কণা ক্লাস রুমের দিকে চলে যায়। আদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে কণা যাওয়ার দিকে। সে অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছিল মেয়েটা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে চিনতে পারছে না। চিনবে কী করে আগের সেই হাস্যজ্জ্বল, দুষ্টু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটা যে আজ আর নেই। মেয়েটা যে গম্ভীর হয়ে গেছে। আগের মতো খোলা চুলে ভার্সিটি আসে না। এখন স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে ভার্সিটি আসে। আদ্রিয়ান আর বেশি মাথা গামায় না। মেতে ওঠে ছোঁয়াকে নিয়ে।
৬
কণা ক্লাসে ঢুকতেই দেখতে পায় আজও ঐশি কণার জন্য পাশের সিটটা রেখে দিয়েছে। এটা দেখে কণার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।এই পৃথিবীতে আপন বলতে তার দুজন মানুষই আছে একজন তার বাবা আর অপরজন হচ্ছে ঐশি। বন্ধুমহলের সবাই তাকে ছেড়ে গেলেও এই মেয়েটা তাকে ছেড়ে যায়নি। কণা কুৎসিত দেখতে বলে কখনো ঘৃণা করেনি। কণার সুখে, দুঃখে সব সময় পাশে থেকেছে। কণার এতো এতো ইগনোরেন্স সহ্য করেও কণার পাশে থেকে গেছে। এক মুহূর্তের জন্য ও কণার সঙ্গ ছাড়েনি।
কণা ঐশির পাশ কাটিয়ে গিয়ে পিছনের সিটে বসতে গেলে ঐশি কণাকে জোড় করে তার পাশে বসিয়ে দেয়। তারপর কণার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বলে,
কেনো তুই আমাকে এতো ইগনোর করছিস? আমি কোনো অন্যায় করেছি? নিজের অজান্তেই কোনো ভুল করেছি? বল না প্লিজ? তোর এতো ইগনোরেন্স আমি সহ্য করতে পারছি না।
তুই কোনো ভুল করিসনি। ভুলতো আমি করেছি। এমন একটা কুৎসিত চেহেরা নিয়ে বেঁচে থাকাই একটা ভুল।
এসব কী বলছিস তুই?
যা বলছি সব সত্যিই তো বলছি। আমি সবার জীবনে অমঙ্গল বয়ে আনি। আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা মারা গেলো। আর এখন আমার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পাগলের মতো এসব কী বলছিস? তোর জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে কী করে?
প্লিজ মিথ্যা বলার চেষ্টা করিস না। তুই জানিস তুই মিথ্যা বলতে পারিস না আর আমার সামনে তো একদমি না। আভিয়ান ভাইয়া তোকে বলেছে আমার সাথে তুই সম্পর্ক রাখলে তার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবি না।
ঐ হারামির নাম একদম মুখে নিবি না। কতো বড় সাহস আমার কাছ থেকে আমার বান্ধবীকে কেঁড়ে নিতে চায়। ব্রেকআপ করে ফেলছি ঐ কুত্তার সাথে। তোকে যে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাইবে তাকে আমি কেটে কুচি কুচি করে ফেলবো।
এসব কী বলছিস তুই? আভিয়ান ভাইয়ার সাথে ব্রেকআপ করে ফেললি? আভিয়ান ভাইয়াকে তো তুই নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসিস।
ঐশি কণাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিন্তু তোর থেকে বেশি না। আমার জীবনে মা-বাবার পরেই তোর স্থান ।
কেনো তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস? যেখানে বন্ধুমহলের সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে সেখানে তুই আমার ইগনোরেন্স সহ্য করে আমার পাশে রয়ে গেলি। আমার চেহেরা কুৎসিত বলে সবাই আমাকে ঘৃণা করে, আর তুই আমার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে দিলি।
হুসসস। আরেক বার নিজেকে কুৎসিত বললে এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। বেদ্দব মহিলা। আমার চোখে তুই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তোকে কখনো আমি ছেড়ে যাব না। এই পৃথিবীর একজন মানুষও যদি তোর পাশে না থাকে তখনো আমি তোর পাশে থাকবো। তোর সাথে আমার আত্নার সম্পর্ক। বুঝতে পারছিস?
পৃথিবীর সেরা সুন্দরী হলে কী আর আদ্রিয়ান ছেড়ে চলে যেতো? বিশ্রী চেহেরা বলে মুখ ঢেকে ভার্সিটিতে আসতে হয় সে আবার পৃথিবীর সেরা সুন্দরী।
কণা আর ঐশি দুজনেই ছোঁয়ার দিকে তাকাই। কিন্তু দুজনের থেকে একজনও ছোঁয়ার সাথে কথা বলে না। ছোঁয়া আবার বলতে শুরু করে,
একদিন বলেছিলাম না তোর ভালোবাসাকে আমি কেড়ে নিবা। দেখ তোর ভালোবাসা আজকে আমার। আমাকে ছাড়া আর কিছু বুঝে না। আদ্রিয়ানের মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে শুধু আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়েকেই মানায়।
যে সৌন্দর্য নিয়ে তুই অহংকার করছিস। একদিন সেই সৌন্দর্য থাকবে না। আদ্রিয়ান তোকে ভালোবাসে? হা হা হা হাসালি আমাকে। এক সময় আদ্রিয়ান আমাকে ছাড়াও কিছু বুঝতো না। যে ছেলে এক বছরের সম্পর্ক চোখের পলকে মাঝেই শেষ করে ফেলতে পারে। সেখানে তোর সাথে দুই তিন মাসের সম্পর্কের কোনো মুল্য তার কাছে নেই। আদ্রিয়ান শুধু তোর সৌন্দর্যের মোহে পড়ে গেছে। একদিন এই মোহ কেটে যাবে। তোর থেকে সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে পেলে তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিতে আদ্রিয়ান দুই সেকেন্ড ভাববে না। আ………
কণার আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই স্যার চলে আসে। সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়ে।
৭
ক্লাস শেষে কণা আর ঐশি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখে ভার্সিটির সামনে আভিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আভিয়ানকে দেখে কণা চলে যেতে নিলেই ঐশি কণার হাত টেনে ধরে।
কোথায় যাচ্ছিস তুই?
আভিয়ান ভাইয়া তোর জন্যই ওয়েট করছে।
দেখ ঐশি আমাকে নিয়ে তোরা আর জামেলা করিস না। নিজেদের মাঝে সবকিছু ঠিক করে নে। আমার জন্য তোদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।
কণা ঐশির থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। কণা চলে যেতে নেয় তখনি আভিয়ান ডেকে ওঠে কণাকে।
কণা দাঁড়া।
ডাকটা শুনেই কণার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। কতোদিন পরে আভিয়ান তাকে এভাবে ডাকলো। ঐশির সাথে আভিয়ানের রিলেশনের পর থেকেই আভিয়ানের সাথে কণার সম্পর্কটা ভাই বোনের মতো হয়ে যায়। মাঝখানে সম্পর্কটা পাল্টে গিয়েছিল। কণার পা দুটো থেমে যায়।
কণা একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলে। চোখের পানি লুকানোর বৃথা চেষ্টা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কণা পিছন ফিরে তাকাই।
কেমন আছিস তুই?
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?
তুই কী আমার ওপর রেগে আছিস?
ছিঃ ছিঃ ভাইয়া এসব কী বলেন? আমি একদম রাগ করি নাই। রাগ করতে যাব কেনো? ঐশি আপনার হবু বউ। আপনি ঠিক করে দিতেই পারেন ঐশি কার সাথে মিশবে আর কার সাথে মিশবে না। প্লিজ ভাইয়া আমার জন্য আপনাদের সম্পর্ক নষ্ট করবেন নাহ। আমি আর ঐশির আশেপাশেও আসবো না।
কণা কথা বলতে বলতে কখন যে রাস্তার পাশে চলে এসেছে সে খেয়ালই করেনি। কণা রাস্তার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হুট করে একটা গাড়ি এসে কণার পিছনে দাঁড়ায়। একটা লোক কণার মুখে রুমাল চেপে ধরে গাড়িতে তুলে নেয়।
চলবে………