#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৩
কণা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। কারো উপকার করলে যে এতো কথা শুনতে হবে কণা ভাবেইনি। মহিলাটি কণাকে অপমান করেই যাচ্ছে। তখন একটা লোক দৌড়ে আসে। লোকটা এসেই মহিলাটিকে ধমক দেয়। ভয়ে মহিলাটি কেঁপে ওঠে। ভদ্রলোকটা হয়তো মহিলাটি স্বামী। ভদ্রলোকটা কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ধন্যবাদ আপু। আপনি যে আমার কতো বড় উপকার করেছেন সেটা আপনি নিজেও জানেন না। আপনার জন্য আজকে আমার ছেলের জীবন বেঁচে গেলো। ধন্যবাদ দিলেও আপনাকে কম হয়ে যাবে। আপনার কাছে সারাজীবন আমি ঋণী হয়ে থাকবো। কোনোদিন যদি কোনো ভাবে আপনার উপকারে আসতে পারি। তাহলে নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপনার উপকার করার চেষ্টা করবো। আর ওর ব্যবহার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন নাহ।
পাশ থেকে মহিলাটি তেঁতে ওঠে বলে, তুমি ঐ মেয়েটাকে ধন্যবাদ বলছো কেনো? আর আমার ব্যবহারের জন্য সরিই বা কেনো বলছো? এই মেয়েটার জন্য আমার বাবুটা কখন থেকে কাঁদছে।
চুপ। একটা কথাও বলবা না তুমি। তোমার জন্য এখনি আমি আমার ছেলেটাকে হারাতে বলেছিলাম। এই আপুটা আমার ছেলেকে না বাঁচালে আজকে আমার ছেলেটীর কী হতো? তোমাকে বলেছিলাম না ওকে নিয়ে দোকানে না আসতে। কসমেটিকের দোকানে এলে তো তোমার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না। আমার…..
কণা আর কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করলো না। সে একটা রিকশা ডেকে ওঠে পড়লো। পাড়ি জমায় নিজের গন্তব্যের দিকে।
৩০
বর্তমানে বন্যা আর সাফাতের মাঝে চলছে তুমুল ঝগড়া। ঝগড়া বললে ভুল হবে কারণ বন্যা একাই বকবক করে যাচ্ছে সাফাত চুপচাপ বন্যার কথা শুনে চলেছে। বন্যা রেগে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুন দিয়ে যেন সাফাতকে এখনি ঝলসে দিবে। বন্যার রেগে যাওয়ার কারণ হচ্ছে লাবণী। লাবণী সাফাতের কলিগ। সুন্দরী আর স্মার্ট। সাফাত লাবণীর সাথে কথা বলেছিল বলেই বন্যা রেগে গেছে।
তোমাকে বলেছিলাম না ঐ লবণের সাথে কথা বলবা না। তারপর তুমি লবণের সাথে কথা বলছো। যেখানে আমি কথা বলতেই বারণ করছি সেখানে তুমি ঐ লবণের সাথে কথা বলে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছো। তুমি এখন আর আমার একটা কথাও শোনো না। শুনবে কেনো? আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি। আমাকে তো আর এখন ভালো লাগবে না। ভালো লাগবে তো ঐ লবণকে। ঐ লবণ শাকচুন্নি আমার জামাইরে কাইড়া নিল। নামটাও যেমন তিতা দেখতেও তেমন তিতা। ঐ লবণ কী দেখতে আমার থেকেও বেশি সুন্দরী? আমার………
সাফাত বন্যার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়। তারপর কপালের উপর পড়ে থেকে চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে,
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে……
পরাণ যায় জ্বলিয়া ……
কী গো? জ্বলে নাকি বুকের ভিতর?
বন্যা রেগে উত্তর দেয়, আমি তোমার বোন না হবু বউ। তাই জ্বলাটা স্বাভাবিক না?
বন্যার কথা শুনে সাফাত হেসে দেয়। এটাই যেনো সাফাতের ভুল ছিল। বন্যা রাগে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ধুম সাফাতের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়। এতে যেনো সাফাতের হাসি আরো প্রসারিত হয়। বন্যা রেগে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। সাফাত বন্যার গাল টেনে ধরে। বন্যা নিজের গাল ছাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সাফাত টুপ করে বন্যার গালে একটা চুমু এঁকে দেয়। বন্যা সাফাতের দিকে আড় চোখে তাকায়। অতঃপর দুজনেই ফিক করে হেসে দেয়।
কেউ একজন যে তাদের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এটা হয়তো তারা খেয়ালই করেনি। তাদের ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা অন্যের চোখের পানির কারণ সেটা হয়তো তারা কখনো জানতেই পারবে না।
৩১
কণা ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে আসে আজকে ঐশির সাথে আড্ডা দেয় না। তার কেমন যেনো অস্থির লাগছে কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। কণা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রুমে ঢুকেন তিশান আহম্মেদ। তিশান আহম্মেদের হাতে মোটামুটি আকারের বাক্স। কণা বুঝতে পারছে না তার বাবা এই বাক্সটা নিয়ে তার রুমে কেনো এসেছে? আর এই বাক্সটাতেই বা কী আছে? তিশান আহম্মেদ বাক্সটা কণার সামনে রাখে।
তোর নামে পার্সেল এসেছে।
কে পাঠিয়েছে?
নাম নেই।
আজব ব্যাপার। যে পার্সেলটা পাঠালো তার নাম নেই। আর আমাকেই বা কে পার্সেল পাঠাবে। আমাকে পার্সেল পাঠানোর মতো তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কী আছে এটার ভিতরে?
আমি জানি না। তুই নিজে খুলে দেখ।
কথাটা বলতে বলতে তিশান আহম্মেদ কণার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কণা তার বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার বাবা এতো অদ্ভুত কেনো? অন্য কোনো মানুষ হলে এতক্ষণে প্রশ্নের ঝড় তুলে ফেলতো। কে এটা পাঠিয়েছে? তোকে এসব কেনো পাঠাবে? ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু তার বাবা নির্বাক। যেনো এটা খুব সাধারণ বিষয়। কণা ওব বাক্সটির ওপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে। বাক্সটির ওপর বড় বড় করে লেখা
❤ ধূলিকণা ❤
কণা নামটা দেখে অবাক হয়ে যায়। ‘ধূলিকণা’ এমন অদ্ভুত নামেও কেউ কাউকে ডাকে। কণা বাক্সটা খুলতেই দেখতে পায় হরেক রকমের চকলেট। এতো চকলেট দেখে সে অবাক হয়ে যায়। সাথে একটা চিরকুটে লেখা।
আমার চকলেট পাগলির জন্য সামান্য উপহার। তোমার জন্য বিকালে একটা সারপ্রাইজ আছে।
এগুলো দেখে কণার অজান্তেই কণার ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি ফুটে ওঠে। কণার হাসিমুখ দেখে আরেকজন তৃপ্তির হাসি হাসে।
৩২
বন্যা বাসার ভিতর প্রবেশ করতেই দেখতে পায় একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা বসে আছে ড্রয়িংরুমের সোফায়। তাদের ঘিরে বসে আছে পরিবারের বাকি সদস্যরা। এই দুজনকে বন্যার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে। পরিচিত কারো সাথে মিল পাচ্ছে কার সাথে মিল পাচ্ছে বুঝতে পারছে না। সে এটা নিয়ে মাথাও ঘামায় না। নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সে এই পরিবার কোনো কিছুতেই থাকতে চায় না এবং থাকেও না। বন্যার আর নিজের রুমে যাওয়া হলো না। তার আগেই তার বড় মামির মুখে নিজের নাম শুনে দাঁড়িয়ে যায়।
এই তো বন্যা চলে আসছে।
বন্যার বড় মামির কথা শুনে ভদ্র মহিলাটি বসে থেকে ওঠে দাঁড়ায়। বন্যার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
তুই তাহলে বন্যা। বাহ অনেক বড় হয়ে গেছিস দেখা যায়।
বন্যা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। অপরিচিত কারো কাছ থেকে তুই সম্বোধন শুনতে পছন্দ করে না। আর সে তুই সম্বোধনের সাথে এতো অভ্যস্ত নয়। বাইরের মানুষের সামনে সে নিজের বিরক্তিটা প্রকাশ করতে পছন্দ করে না। চোখ মুখ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেয়।
জ্বী আমিই বন্যা। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
নিজের মাকে ভুলে গেলি?
বন্যা বুঝতে পারে এটাই তার মা। যে জন্ম দিয়ে একটা বাসায় আশ্রিতা রেখে নিজে দায় মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আজ এতো বছর নিজেকে মা বলে দাবি করছে। কথাগুলো ভাবতেই কণার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।
আমার তো মা নেই। তাই ভুলার প্রশ্নই আসে না।
তাহলে আমি কে?
সেই প্রশ্নটা আপনি নিজেকেই করুন। শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। মা হতে হলে যোগ্যতা লাগে।
বেশ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতে শিখে গেছিস দেখা যায়। তোর মা হতে হলে আমার যোগ্যতা লাগবে? হা হা হা। মেয়ে হতে হলেও যোগ্যতা লাগে। তোর মা হওয়ার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। আমার যে দুটো সন্তান আছে তাদের মা হলেই হবে। তোর ভাব দেখার জন্য আমি তোর সাথে কথা বলতে আসিনি। আমি তোকে কিছু বলতে চাই।
বন্যা কথাটা যাস্ট ইগনোর করে চলে যায়। সে শুনতে চায় না এই মহিলার কথা। সে প্রয়োজন বোধ করছে না এই মহিলার কথা শোনার। আনজুম বেগম ( বন্যার মা ) অনেক কিছু বলছেন কিন্তু বন্যা সেই কথাগুলো কর্ণপাত করলো না। নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসেই বন্যা হতভম্ব হয় যায়। তার রুমে দু দুটো ছেলে বসে আছে।
চলবে……