#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মানুষ সময়ে’র সাথে কিভাবে এত’টা পরিবর্তন হয়ে, যেতে পারে’।যে,মানুষ’টা কাল আমাকে চোখে হারাত,
আজ সেই মানুষটা’র চোখ মুখ তীব্র ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি’।এভাবে আমাকে এলোমেলো করা’র খুব দরকার ছিল আহান’।আমাকে এভাবে এলোমেলো না করে দিলে-ও পারতেন।কোনো অপেক্ষা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারতাম।এত ভালোবাসা’র পরে,এত অবহেলা আমি সয্য করতে পারছি না’।আপনার অবহেলা আমাকে মৃত্যু যন্ত্রনা দিচ্ছে’।না পেয়ে হারানো অনেক ভালো।কিন্তু পেয়ে হারানো’র কষ্ট যে,আমি সয্য করতে পারছি না।আপনি তো’ বলেছিলেন।আমাকে সারাজীবন আপনার কাছে রেখে দিবেন।আজ আপনার সেই কথা কোথায় গেলো’।আমি মুক্তি চাইলাম।আর আপনি বিনাবাক্যে আমাকে মুক্তি দিয়ে দিলেন।এমন ভাবে কথা বললেন,আমি গুরুত্বহীন একটা মানুষ।আমার কোনো গুরুত্বই নেই আপনার জীবনে’।তাহলে এতদিন ভালোবাসা নামক ছলনা করলেন আহান’।একটা কথা মনে রাখবেন,নারীর মস্তিষ্কে নিরবে তৈরি হওয়া’ প্রতিশোধ,পুরুষের ছলনা’র থেকে-ও দিগুন তিক্ত’।আপনার সাথে দেখা না হলে-ই সবথেকে ভালো হতো’।আগে পাগল ছিলেন,আর আজ আমাকে পাগল বানাইয়া ছাড়লেন আহান’।সত্যি আপনার তুলনা হয় না’।কথা গুলো ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলো অধরা’।
অধরা যাওয়া’র পরে,মাথা নিচু করে বীর ছাঁদে প্রবেশ করলো’।চোখ-মুখে অনুশোচনা’র ছাপ’।আস্তে করে এসে,আহানে’র পাশে বসলো’।আহান আগে’র ন্যায় আকাশে’র দিকে তাকিয়ে আছে’।চিন্তা করছে হয়তো’।একদিনে’ই চেহারায় মলিনতা এসে গেছে’।ছেলে’টা সারাদিন কিছু খাই নি’।এই ছোট বিষয়’টা বীর লক্ষ করেছে’।ভাবতে’ই নিজের প্রতি অবাক হলো’ বীর।আহানে’র কাঁধে হাত রেখে বলল’।
–আমার ওপরে রাগ করেছো’।সত্যি আমি মানুষে’র মধ্যে পড়ি না।তা-না হলে এত সুন্দর সুখের সংসার’টা নিমিষে-ই এলোমেলো করে দেই।মরীচিকা’র পেছনে,ছুটতে গিয়ে নিজের সময় করেছি নষ্ট।সাথে দিয়েছি নিজের স্ত্রীকে কষ্ট।কি করবো বলো’।মনের এটা বিষয় আছে না বলো’।কতগুলো বছর ধরে,অধরা’কে ভালোবেসে আসছি।না পেলে তো’ অভিযোগ করবো’ই।কিন্তু যখন জানলাম অধরা আমার না।তখন থেকে তিতলি’কে ভালোবাসা’র অনেক চেষ্টা করেছি।অধরা’কে ভোলার জন্য তিতলি’কে বিয়ে করেছি।শুনে ছিলাম একজন স্ত্রী চাইলে নাকি সব পারে’।তবে আমার মন থেকে অধরা’কে কেনো বের করতে পারলো না আহান’।আজ আমার জন্য সবার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’।তুমি অধরা’কে যেমন মেয়ে ভাবছো’।অধরা ঠিক তেমন মেয়ে না’।অধরা নিরপরাধ মানুষদে’র গায়ে ফুলের টোকা-ও দেয় নাই।মেরেছে তাদের যারা মানুষ রুপি জানোয়ার।যারা ছয় বছর,আট বছরে’র বাচ্চাদে’র ধর্ষণ করেছে।পুলিশে’র হাতে দিলে টাকার জোরে বের হয়ে আসতো’।তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো ক্ষমতাশীল।অধরা সবাইকে এমন ভাবে মেরেছে’।পিস পিস করে নদীতে,ময়লা’র ড্রেনে,মাগুর মাছের পুকুরে ফেলে দিয়েছে।এমন করে মৃত্যু দিয়েছে।অধরা’র বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।অনেকে’র তদন্ত হয়েছে।কিন্তু মৃত ব্যক্তির রুমে এমন কিছু চিঠি পাওয়া গেছে’।যেটা দেখার পড়ে তদন্ত ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে’।এখন তুমি বলো’ এসব লোকের বেঁচে থাকার অধিকার আছে’।তুমি অধরা’কে ভুল বুঝো না আহান।অধরা তোমাকে সবকিছু বলে দিতো’।কিন্তু আমি তোমার চোখে অধরা’কে খারাপ বানানো’র ফোন দিয়ে ডেকে ছিলাম।একদমে কথা গুলো বলে থামলো’ বীর।
আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।তারপরে বলতে শুরু করলো’।
–তোমাদের দোষ দিব কি’।আমার নিজের ভাগ্যটা-ই খারাপ।কাউকে ভালোবাসলে তাকে,না পেলে অভিযোগ করা’টা স্বাভাবিক।কিন্তু তুমি একা ভালোবাসলে তো’ হবে না।দ্বিতীয় মানুষটি’কে-ও ভালোবাসতে হবে’।একতরফা ভালোবাসা বিষের চেয়ে-ও বেশি বিষাক্ত’।সব কিছুর ওপরে জোর চললে-ও মনের ওপরে যে,জোর চলে না ভাইয়া’।আশা রাখছি তুমি-ও একদিন আপু’কে ভালোবাসতে পারবে’।ছোট একটা জীবন কষ্ট পেয়ে নষ্ট করো না।যতটা পারবে জীবনটা সুন্দর করে কাটানো’র চেষ্টা করবে’।
–অধরা’র কথা এড়িয়ে যাচ্ছো’।সারাদিন কিছু খাও নি’।আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি’।বীরের কথা শুনে আহান হাসলো’।তারপরে বীর’কে বলল সে,নিচে গিয়ে খেয়ে নিবে।কিন্তু বীর আহানে’র কথা শুনলো না।খাবার নিয়ে আসতে নিচে চলে গেলো’।আহান আনমনে হেসে উঠলো’।
–তুমি কার কথা বলছো ভাইয়া,ও আমায় কোনোদিন ভালোবাসেনি।আমি বোকার মতো তার কাছে,গিয়েছি বারবার।কখনো নিজ থেকে কাছে টেনে নেয় নাই।আমি কাছে টানলে তবে-ই আসছে।তবু-ও বিরক্ত হয়ে-ই এসেছে।আমি নামক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবো অধরা’র জীবন থেকে,অধরা বলে না।আমি ওর জীবনটা এলোমেলো করে দিয়ছি।এবার আমিই ওর জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে দিব।আমার কিছু দায়িত্ব আছে।সেগুলো পালন করা শেষ হলেই আমার শান্তি।আর অধরা’র মুক্তি।নিজ মুখে মুক্তি চেয়েছে।কতটা বিরক্ত আমার ওপরে’।তোমাকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই অধরা।কিন্তু তুমি থেকে গেলে সারাজীবন রেখে দেওয়া’র ক্ষমতা আমার আছে।শরীরে’র ওপরে জোর চালানো যায়।কিন্তু মনের ওপরে না।তুমি যে,আমাকে কতটা ঘৃনা করো’।তোমার চোখেমুখে তা আমি স্পষ্ট দেখেছি।কথা দিলাম,আমার দায়িত্ব গুলো পালন হয়ে গেলে।এই বিরক্তিকর মানুষটার মুখ আর দেখতে হবে না তোমাকে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গুলো কখন যে,লাল হয়ে গেছে।সেদিকে খেয়াল’ই নেই আহানে’র।
ড্রয়িং রুমে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে,ড্রয়িং রুমে আসলো তিতলি।এসে বীরকে দেখে রেগে গিয়ে বলল।
–আজকাল খাবার চুরি করে-ও খেতে শিখে গেছো।তোমাকে না বাসায় চলে যেতে বলছিলাম।তা-ও কেনো নির্লজ্জের মতো পড়ে আছো।
–আস্তে কথা বলো সবাই শুনে ফেলবে’।
–সবাই জানুক তাদের জামাই একটা চোর।রাতের অন্ধকারে খাবার চুরি করে খায়।
–আমাকে এখনো জামাই বলে স্বীকার করছো তাহলে’।তাছাড়া খাবার গুলো আমার জন্য না।আহানে’র জন্য।সারাদিন না খেয়ে আছে।
–মাথায় লাথি দিয়ে পায়ে সালাম করতে গেছো’।ভাইটার আমার যা’ ক্ষতি করার করে-ই দিয়েছো’।আবার কি ছক কসছো’।
বীর তিতলি’র হাত ধরে বলল।
–আমি আমার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি তিতলি’।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিয়ে একটা সুযোগ দাও।কথা দিলাম,পৃথিবীর সবথেকে ভালো স্বামী হয়ে দেখাবো’।
–এসব কথা বলে তুমি আমার মন গলাতে পারবে না।দেখি সরো,তুমি সত্যি কথা বলছো নাকি।আহানকে জিগাস্যা করে আসি।
–আহান ছাঁদে আছে।তুমি যাও আমি খাবার বেড়ে নিয়ে আসছি।বীরের কথা মতো তিতলি ছাঁদে চলে গেলো’।গিয়ে সত্যি আহান’কে দেখতে পেলো’।তিতলি’কে দেখে আহান উঠে’ এসে।তিতলিকে ছাঁদের দরজা’র বাহিরে রেখে বলল’।
–যাও তো আমাকে বিরক্ত করো না’।ভয় নেই মরে যাব না।একা থাকতে দাও।বলে’ই দরজা লাগিয়ে দিলো’।তিতলি অসহায় দৃষ্টিতে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে’।
–তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো’।আহানে’র কাছে যাও নি’।
–আহান একা থাকতে চায়।কেউ যেনো’তাকে বিরক্ত না করে।বলে’ই তিতলি চলে গেলো’।
পরের দিন সকাল বেলা,সূর্যের মিষ্টি রোদ শরীরে ওপরে এসে পড়তে’ই ঘুম ভেঙে যায় আহানে’র’।বিরক্ত হয়ে উঠে নিচে চলে গেলো আহান’।বাসার বেশিভাগ মানুষ-ই উঠে পড়েছে’।নিজের রুমের দিকে গিয়ে দরজা বন্ধ পেলে,নিচে চলে আসে’।মায়ের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অফিস যেতে নিলে,মিসেস আফরোজ চৌধুরী আটকে দেয়’।
–দাঁড়া কোথায় যাচ্ছিস’।
–অফিসে যাচ্ছি আম্মু’।
–আমাকে বুঝাস এই সাত সকাল বেলা অফিসে যাচ্ছিস।খাবার খাবি তারপরে যেখানে খুশি যেখানে যাবি’।
–আমার ক্ষুদা নেই আম্মু।ক্ষুদা পেলে অফিসে গিয়ে খেয়ে নিব’।
–আমি তোর মা’ নাকি তুই আমার মা’।
আহান মাথা নিচু করে ফেললো’।
–চুপচাপ টেবিলে গিয়ে বস’।আমি খাবার নিয়ে আসছি।বলে’ই রান্না ঘরের দিকে গেলেন’।খাবার মাখিয়ে নিয়ে এসে’।আহানে’র মুখের সামনে ধরলো’।আহান বিনাবাক্য খাবার মুখে পুরে নিলো’।আহানে’র খাবার শেষ হলে,অধরা নিচে আসে’।কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বরে হয়ে যেতে লাগলে’।অধরা’র পথ আঁটকে দাঁড়ায় আহান’।
–প্লিজ তুমি যেও না’।শুধু পাঁচটা দিন ওয়েট করো’।আমি নিজে তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিব’।দরকার পড়লে আমি,এই পাঁচ দিন বাসায়’ আসবো না।তবু-ও তুমি যেও না।বলে’ই অধরা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,চলে গেলো’ আহান।মিসেস আফরোজা চৌধুরী আহানে’র দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’।কয়দিন আগে-ও তার সংসারে সুখের কমতি ছিলো না।হঠাৎ কার কুনজর পড়ে আমার সুখের সংসারটা তছনছ হয়ে গেলো’।
এভাবে পাঁচটা দিন কেটে গেলো’।দিন যায় রাতে আসে’।কিন্তু আহান তার কথা মতো পাঁচটা দিন বাসায় আসে নাই’।এত জেদ কই থেকে আসে।একে তো নিজে আমাকে ভুল বুঝছে’।আবার নিজে’ই জেদ দেখায়।না চাইতে-ও বেহায়া চোখ-দুটো আহান’কে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে’।ড্রয়িং রুমে অধীর আগ্রহে বসে অধরা’।চাতক পাখির মতো দরজার দিকে চেয়ে রয়েছে’।কিন্তু আহানে’র আসার নামে কোনো খোঁজ নেই’।
–চোখ-মুখ একদম শুকিয়ে গেছে।শরীরটা-ও আগের থেকে কমে গেছে।এভাবে থাকলে তোমার সাথে,বাচ্চার-ও ক্ষতি হবে।তিতিরে’র কথায় মলিন হাসলো অধরা’।তিতরে’র সাথে গল্প করে।রাতে খেয়ে বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে ভাবছে।আহান তাকে মিথ্যা কথা বলল।পাঁচ দিন পার হয়ে যাচ্ছে’।তবু্-ও তার দেখা নেই’।ঘড়িতে সাড়ে এগারো’টা বাজে’।চিন্তিত হয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে’।ঘড়ির কাটা যখন এগারো’টা উনষাট মিনিট’।তখন’ই হন্তদন্ত হয়ে আহান রুমে প্রবেশ করে’।আহান’কে দেখে অধরা উঠে বসে’।অধরা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,আহান বলে উঠলো’।
–হ্যাপি বার্থডে অধরা’।
আহানে’র মুখে জন্মদিনে’র শুভেচ্ছা শুনে,অধরা চমকে উঠলো’।আজ যে,তার জন্মদিন তার মনে-ই ছিলো না’।কিন্তু আহান জানলো কিভাবে’।কিন্তু আহানে’র মুখে অধরা নামটা শুনে নিমিষেই খারাপ মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো’।আমাদের সম্পর্কটা যদি আগে’র মতো থাকতো’।আহান কত আদুরে কণ্ঠে ‘বউরাণী’ আহানে’র বউ,আরো কতকিছু বলে সম্মোধন করত’।অধরা’কে অবাক করে দিয়ে আহান বলল’।
–পেয়ারা খাবে অধরা’।
অধরা’র সত্যি পেয়ারা খেতে ইচ্ছে করছিল।আহানে’র কথার ওপরে ঝটপট বলে উঠলো’।
–হ্যাঁ’।
–আচ্ছা দাঁড়া-ও বলে’ই বাহিরে গেলো’।হাতে পেয়ারা’র ব্যাগ,গোলাপ,আর রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে আসলো’।
–এই নাও এগুলো তোমার জন্য’।তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে না-ও।তোমাকে কথাটা দিয়ে ছিলাম না।পাঁচ দিন পরে এসে,তোমাকে নিজ হাতে মুক্ত করে দিব।বোরকা পড়ে গায়ে চাদর মুড়িয়ে নিও।বাহিরে অনেক ঠান্ডা পড়েছে’।আজকে তোমার জন্মদিনে’র শ্রেষ্ঠ উপহার তোমাকে দিব।আমাকে নিয়ে আর কোনো অভিযোগ রাখতে পারবে না।বলে দিলাম।
–এতরাতে আমাকে নিয়ে যাবেন।
–দিনের বেলায় সবাই তোমাকে যেতে দিবে না।ভুলভাল বুঝিয়ে আমার সাথে থাকতে বাধ্য করবে।আর আমি চাই না তুমি বাধ্য হয়ে আমার সাথে সংসার করো’।তুমি চিন্তা করো না’।আমি আমার এক ফ্রেন্ড’কে আমার পিএ হিসেবে নিয়েছি।বাচ্চা হবার পরে তুমি আবার জয়েন হতে পারবে।আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি।তুমি নিজেই নিজেকে চালাতে পারবে।এর জন্য বাধ্য হয়ে কারো কাছে থাকতে হবে না’।এখন কথা কম বলো সবকিছু গুছিয়ে না-ও।
–আপনাদে’র বাসার কোনো জিনিস আমার লাগবে না’।আমার জামা-কাপড় কয়টা শুধু নিব’।
–আচ্ছা ঠিক আছে’।গুছিয়ে নাও।একটু পরে অধরা তৈরি হয়ে আসলো’।অধরা’র হাতে থেকে আহান ব্যাগটা নিয়ে বলল।
–ভারি জিনিস একদম হাতে উঠাবে না।কথা না বলে চুপচাপ চলো’।অধরা কথাটা বাড়ালো না।আহানে’র পেছনে পেছনে গেলো’।যথা সময়ে গাড়ি এসে অধরাদে’র বাসার সামনে দাঁড়ালো’।আহান গাড়ি থেকে নেমে অধরা’কে বলল’।
–আমি তোমার চোখ-দুটো ধরতে পারি’।
–কয়দিনে এতটা পর করে দিলেন’।
–আমি তোমার আপন ছিলাম কবে’।
আহান কোনো কথা না বলে অধরা’র চোখ ধরে ফেললো’।
–কি করছেন’।
–মেরে তো’ আর ফেলছি না।তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।গেলে-ই দেখতে পাবে’।বলে-ই বাসার ভেতরে নিয়ে গেলো’।দরজাটা খোলায় ছিলো’।বাসার সবাই জানে হয়তো তারা আসবে’।পুরো বাসায় আলো জ্বলছে’।অধরা’র রুমটা শুরু অন্ধকার’।অধরা’কে রুমে নিয়ে এসে চোখ খুলে দিতে-ই পুরো রুমে আলো জ্বলে উঠলো’।
–সারপ্রাইজ’।বলল আহান’।
সামনের দিকে তাকাতে-ই অধরা’র দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো’।দু-চোখ ভরে পানি চলে এলো’।দ্রুত গতিতে হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।এটা-ও সম্ভব।আহান এটা কিভাবে করতে পারলো’।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
অধরা’কে দেখে সবাই একসাথে বলে উঠলো’।হ্যাপি বার্থডে অধরা’।এতগুলো বছর পরে,নিজের বাবা-মাকে “দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না অধরা’।দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো’।মিসেস তুলি বেগম মেয়ে’কে এতগুলো বছর পরে কাছে পেয়ে,তিনি-ও হাউমাউ করে কান্না করে দিলো’।মা-মেয়ে’র কান্না দেখে অধরা’র বাবা বলল’।
–আমি তো’ কারো কেউ না’।বাবা’র কোনো দায়িত্ব, আমি পালন করতে পারি নি’।সেজন্য কেউ আমাকে চিনে না’।বাবা’র কথা শুনে অধরা বাবা’র দিকে তাকায়’।অধরা’র বাবা দু-হাত বাড়িয়ে দিলে,অধরা বাবা কাছে যায়’।মিনার বেগম এক কোণে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সবকিছু দেখছেন’।সত্যি কখনো চাপা থাকে না।অধরা একদিন ঠিক জানতে পারতো’।সে,অধরা’র আসল মা না’।সেজন্য মিনারা বেগম আহান’কে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন’।আহান মিনারা বেগমে’র কাছে গিয়ে বলল’।
–আপনি কান্না করছেন কেনো মা’।
–আমাকে আর মা’ ডেকো না বাবা’।এখন তোমার আসল শশুর-শাশুড়ি চলে এসেছে’।তারা শুনলে কি মনে করবে’।
–আমি এসব কথা কানে নিব না।একবার যখন মা ডেকেছি’।সারাজীবন মা বলে-ই ডাকবো’।
মিনারা বেগমে আহানে’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল’।
–পাগল ছেলে’।
–আচ্ছা মা আপনার বাবার কথা মনে পড়ে না।
আহানে’র কথা শুনে,মিনারা বেগমে’র কলিজা কেঁপে উঠলো’।নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো’।
–আপনার মনটা খারাপ করে দিলাম তাই না মা’।দেখবেন আপনার খারাপ মনটা নিমিষেই ভালো করে দিব’।
মিনারা বেগম’ আহানে’র দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আহান কিভাবে তার মন ভালো করার কথা বলছে’।আহান মিনারা বেগম’কে একটু অপেক্ষা করতে বলে চলে গেলো’।একটু পরে মনির সাহেব’কে ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে আসলেন।মনির সাহেব খুড়িয়ে খুড়িয়ে আহানে’র হাত ধরে হেঁটে আসছে’।মিনারা’র কাছে এসে সালাম দিলো’।সালাম দিয়ে বলল।
–কেমন আছো তুমি’।
মিনারা বেগম পলকহীন ভাবে মনির সাহেবর দিকে তাকিয়ে আছে’।সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে’।নিজের চোখকে-ও বিশ্বাস করতে পারছেন না’।
–তুমি বেঁচে আছো’।
–আমি মরে গিয়ে ছিলাম কবে’।এতবড় অপারেশনের পড়ে যখন বেঁচে গিয়েছিলাম।হঠাৎ করে মরে গেলাম সন্দেহ হলো না তোমার’।এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে আমাকে’।
–বিশ্বাস করো আমি ভুলি নাই’।শারমিন আপা আমার সাথে এতবড় বিশ্বাস-ঘাতকতা করবে।আমি বুঝতে পারি নাই’।শারমিন আপা একটা সাইকো’।সেজন্য তাকে মেডিকেল থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে’।উনি তোমাকে নিয়ে গেছে,আমি জানতাম।শুধু বড় আপা আর দুলাভাই’কে বাঁচানো’র জন্য আমি সেদিন এত নাটক করছিলাম’।শারমিন আপা’র কথাতে’ই আমি অধরা আর আকাশে’র সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি’।শারমিন আপার সব অন্যায় মুখ বুঁজে সয্য করছি’।অধরা’কে অনেক বলার চেষ্টা করেছি’।কিন্তু অধরা’র যে,রাগ শারমিন আপা’কে যদি মেরে ফেলত’।তাহলে আমি তোমাদের সবাই’কে হারিয়ে ফেলতাম’। বড় আপা অধরা আর আকাশ’কে কতটা ভরসা করে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছিল’।আমি কি করে অধরা আর আকাশে’র বিপদ ডেকে নিয়ে আসতাম’।এমনিতে-ই অধরা ইন্টার লেভেলে গিয়ে মাফিয়া জগতে যোগদান করেছিলো’।এক বছর ট্রেনিং-ও নিয়েছে’।তারপরে যখন-তখন বাসা থেকে বের হয়ে যেতো’।সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম মেয়েটা’র কখন কি হয়ে যায়’।তারপরে তুমি ওকে মাথায় হাত দিয়ে শপথ করিয়ে নিলে,অধরা যেনো এই পথে না আসে’।ওর হাতে আর কোনো মানুষের প্রাণ না যায়।তোমার কথা মতো অধরা আবার পড়াশোনা শুরু করলো’।তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে,
অধরা’র মাথার ওপরে এসে সংসারে’র সব দায়িত্ব পড়ল’।মেয়েটা সবকিছু ভুলে পড়াশোনা আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল’।এর মাঝে বাবা-মাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছে’।কিন্তু শারমিন আপার বুদ্ধি সাথে পেরে উঠে নাই।শারমিন আপা খুব চালাক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।তারপরে অধরা’র বিয়ে হলো,ভাবলাম এবার হয়তো’ মেয়েটা আমার শান্তি পাবে।সবকিছু কি দূরে ঠেলে দিয়ে,সুখে সংসার করবে।কিন্তু আপা হতে দিলো কই।তোমাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে গেলো’।আমাকে বাধ্য হয়ে আকাশ আর অধরা’কে পর করে দিতে হলো’।আমি ইচ্ছে করে কি নি’।বিশ্বাস করো’ আমি নিজের জন্য কিছু করি নি’।সব অধরা আর আকাশের জন্য করেছি।আমি তো মনে করেছিলাম,শারমিন আপা তোমাকে নিয়ে গিয়ে মেরে-ই ফেলছে’।বলে-ই হাউমাউ করে কান্না করে দিলো’।মনির সাহেব,মিনারা বেগমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল’।
–কান্না করো না তুমি’।আমি জানি তুমি নিজের জন্য কিছু করো নি’।যা কিছু করেছো আকাশ আর অধরা’র জন্য’ করেছো।
–সত্যি কথা বলতে আমি’ও একটা অন্যায় করে ফেলছি।আমি আকাশ আর অধরা’কে হারাতে চাই নাই’।সেজন্য শারমিন আপা যখন এ-বাসায় এসেছিলো’।আমি’ও আপাকে সাহায্য করেছি।আমি’ও অপরাধী’।আমাকে শাস্তি দেওয়া হোক’।আমি ভেবে ছিলাম।আপা আসলে আকাশ অধরা’কে নিয়ে যাবে’।আমাকে আর দিবে না ওদের।এই একটা ভয়ে আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম’।ওদের নিয়ে গেলে,আমি কি নিয়ে বাঁচব’।তুমি ভালো করেই জানো আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম।
–তুমি তো’ ভুল কাজে অন্যায় করিস নি’।আমি তোর প্রতি অনেক অবিচার করেছি’।তোর নামে মায়ের কাছে আজেবাজে বলে তোকে ত্যাজ্যকন্যা করিয়েছি’।আমি অন্ধের মতো শারমিনকে বিশ্বাস করেছি।ওর বলা প্রতিটি মিথ্যা কথা সত্যি মনে করে।আমি তোকে ভুল বুঝেছি।মায়ের থেকে তোকে আলাদা করেছি।তোর নামে বাজে কথা বলেছি’।তুই আমাকে মাফ করে দে’।আকাশ আর অধরা’কে তুই রেখে দে’।আমার মা হবার কোনো যোগ্যতা নেই রে’ মিনারা’।আমি জন্মের পরে অধরা মেয়ে হয়েছে বলে,অবহেলা করে তোকে দিয়ে দিয়েছি’।আকাশ যখন হলো’ শারমিন আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছিলো’।আমি ভয়ে আকাশ’কে তোর কাছে রেখে দেশ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু শারমিন আমাদের ধরে ফেলে,আর আমাদের নিজের কাছে আটকে রাখে’।এমন’কি আমি অধরা’র সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতাম।আমার নাম্বার থেকে আজেবাজে মেসেজ পাঠাতো’।যেনো অধরা’র স্বামী অধরা’কে ভুল বুঝে’।আমি যখন অধরা’কে বলতাম।এই জায়গায় আছি।পরেরদিন জায়গা বদলে ফেলতো’।ও আমাদের রুমে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখতো’।যখন যা’ করতাম সব দেখে ফেলতো’।আমি মায়ের কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারি নাই।তুই আকাশ আর অধরা’র মা’।একদমে কথা গুলো বলে থামলেন তুলি বেগম’।
–তোমারা দুজনে-ই আমাদের মা’।আমাদের চোখে দু’জনেই সমান’।এমন ভাবে কান্না করলে,আমি খুব রাগ করবো’।তোমরা আর কেউ কান্না করবে না।এবার থেকে আমরা সবাই মিলে,সুখে সংসার করবো’।কেউ আমাদের আলাদা করতে পারে না।শারমিন খালাকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিব।
–একসাথে দু’টো মা পেয়ে গেলাম’।এখন থেকে সবকিছু দু’টো করে পাব তাই বল আপাই’।আকাশে’র কথা শুনে সবাই আকাশে দিকে তাকালো’।
–তুই এখনো জেগে আছিস’।
–না রে’ আপাই আমি ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলাম।তোদের বকবকে’র জন্য আমার ঘুম ভেঙে গেলো’।
–অধরা তারমানে তুমি সবকিছু জানতি’।বলল মিনারা বেগম।
–হুম মা জানতাম।আকাশ হবার পরে মা আমাকে সবকিছু বলেছিল,এটা-ও বলেছিল সে আমার আসল মা’।
–তাহলে আমাকে এতদিন বলিস নাই কেনো’।
–তুমি আমার কলিজার টুকরা মা’।তোমাকে কিভাবে কষ্ট দেই বলো’।মেয়ের কথা শুনে মিনার বেগম মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন’।
–দুই মাকে পেয়ে এখন আমাদের কেউ চিনবে না’।অধরা’র বাবা আর মনির সাহেব বলল।সবাই মিলে,হেঁসে দিলো’।মা-বাবা মেয়ে’র মিলন দেখে আহানের মনে প্রশান্তি বয়ে গেলো’।তার দায়িত্ব শেষ’।অধরা’র মুখের হাসি অধরা’কে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।এটা ভেবেই আহানের ভেতরে ভালো লাগা কাজ করছে’।এখানে আর আমার কোনো কাজ নেই।আহান কোনো কথা না বলে সেখানে থেকে আস্তে করে বেড়িয়ে আসলো’।খুব সাবধানতার সাথে বেড়িয়ে আসছে’।
ফাঁক রাস্তা,হালকা শীতের রাত,চারিদিকে নেই কোনো কোলাহল’।জনশূন্য রাস্তায় আপন মনে গাড়ি চালিয়ে,নিজের বাসার উদ্দেশ্য যাচ্ছে আহান’।বুকের মাঝখানে কেমন জানি ফাঁকা ফাঁক লাগছে’।বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে’।না চাইতে-ও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে’।শব্দহীন কান্না খুবই ভয়ংকর’।গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেতে-ই ইচ্ছে করছে না আহানে’র।সবকিছু বিরক্ত লাগছে’।কোনো রকম বাসায় এসে ফ্রেশ না হয়ে-ই শুইয়ে পড়ল’।দু-চোখের পাতা কিছুতে-ই এক করতে পারছে না’।উঠে বিরক্ত হয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিলো’।তবু-ও ঘুম আসছে না।সারারাত ছটফট করতে করতে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে আহান’।
পরের দিন সকাল বেলা সবাই খাওয়া-দাওয়া করে নিজের কাজ করছে’।আহান আর অধরা আসছে না দেখে সবাই অবাক হলো’।এগারোটা’র দিকে আশরাফুল চৌধুরী তিতলি আর বীরকে ডেকেছেন।বীর সকাল বেলা’ই উঠে পড়েছে’।কিন্তু তিতলি এখনো ঘুমাচ্ছে’।বীরের সাথে ভালো-মন্দ কথা বলছিলেন আশরাফুল চৌধুরী’।তখন-ই তিতলি ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে’।
–এতবেলা করে ঘুমালে চলবে’।শশুর বাড়ি গিয়ে-ও এমন করবে নাকি’।
–সবাই তো’ আর নিজের বাবা-মা না’।আমি আর শশুর বাড়িতে যাব না।
–খেয়ে আসো আগে’।তোমার সাথে আমার কথা আছে’।তিতলি আর কোনো কথা না বলে খেতে চলে গেলো’।খেয়ে এসে বাবার পাশে বসলো’।আশরাফুল চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল’।
–দেখো মা’।মানুষের বিয়ে একবার-ই হয়’।তাই বলে সংসার করবে না।এটা কেমন কথা’।বলছি কি’ ছেলেটা না হয়’।একটা ভুল করে ফেলছে’।সে,তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে’।সে,তার ভুল বুঝতে পেরে মাফ চেয়ে একটা সুযোগ চেয়েছে’।যে,ভুল করার পরে মাফ চায়।নিজেকে ঠিক করে নেওয়া’র একটা সুযোগ চায়।তাকে মাফ করে একটা সুযোগ দিতে হয়’।ধরে নিলাম তুমি সংসার করবে না।সংসার ছেড়ে যখন তুমি আবার আমার কাছে আসবে’।তখন সমাজ তোমাকে আগের মতো মেনে নিবে না মা’।তুমি যখন রাস্তা দিয়ে যাবে।তোমার আড়ালে তারা তোমাকে নিয়ে কটু কথা বলবে’।অনেকে তোমার সামনে বলবে’।রাস্তায় যখন যাবে’।লোকে দেখে বলবে দেখো’ ডিভোর্সি মেয়ে যাচ্ছে’।একবছর সংসার করে খেতে পারলো না’।এর থেকে-ও বাজে কথা বলবে’।আমি বাবা হয়ে সেসব কথা কি করে বলি’।বীর কিন্তু আরেকটা বউ পেয়ে যাবে।তুমি আরেকটা স্বামী পেয়ে যাবে।কিন্তু আমাদের সমাজে ছেলেদের দোষ’কে দোষ বলে মনেই করে না।আর মেয়েদের পান থেকে চুন খোঁসলে হাজার রকমে’র কথা শুনতে হয়’।আমাদের সামাজে মানুষ মেয়েদের থেকে ছেলেদের প্রাধান্য দেয় বেশি।মেয়েদের দোষ,দোষ।কিন্তু ছেলেদের দোষ,দোষ না কারন তারা ছেলে’।এখন যদি বলো আমি তোমাকে খাইয়ে পড়িয়ে রাখছি।তুমি সমাজের খাও না।তাহলে তাদের কথা কেনো শুনবে’।তোমার শুনতে হবে না’।তারা বলতে বলতে এমন এমন কথা বলবে,তোমার কলিজায় দাগ কেটে যাবে।তাদের কথাগুলো ধারালো অস্ত্রের মতো আঘাত করবে’।তুমি না চাইলে-ও তাদের কথা তোমাকে আঘাত করবে।মন খারাপ হবার কারন হবে’।একটু একটু করে শেষ করে দিবে তারা তোমাকে’।তাদের কাজ’ই এটা যারা ভালো থাকবে তাদের কিভাবে নিচে নামানো যায়।আর যারা আঘাত প্রাপ্ত তাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিভাবে ক্ষত-বিক্ষত করা যায়।তুমি’ই বলো,তোমাকে কেউ বাজে কথা বলুক এটা তুমি চাও।আর আমি বাবা হয়ে মেয়ের নামে কেমন করে কটু কথা শুনবো বলো’।তাই বলছি বিয়েটা যখন হয়ে গেছে’।ছেলেটা’কে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো’।তুমি বলতে পারো বাবা জোর করে নিজের মতামত আমার ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছে’।আমি তোমাকে জোর করছি না মা’।আমি তোমাকে শুধু বললাম’।রাগ না করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নাও।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো’।তোমার মতামতের বাহিরে যাব না’।
আহান নিচে আসছিল’ বাবার কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়’।সে-ও ভাবলো’ সত্যি তো’ বীর ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পারছে’।আপু’কে ভালোবাসার একটা সুযোগ চাচ্ছে’।একটা সুযোগ দিয়ে দেখা উচিৎ’।আহান’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বীর বলল’।
–আহান দাঁড়িয়ে আছো কেনো’।
–এমনই ভাইয়া’।
–আহান অধরা কোথায়’।
–ওকে নানির বাসায় রেখে আসছি বাবা’।ও আর কোনোদিন আসবে না’।
–আমি ভেবে দেখছি বাবা।আমি তোমাকে পরে উত্তর দিব।বলে’ই তিতলি উঠে চলে গেলো’।বীর-ও তিতলি’র সাথে গেলো’।সবাই আহানে’র কথাটা সাধারণ ভাবে-ই নিয়েছে’।এর আগে-ও এমন করেছে তারা দু’জন’।
–মজা করছো আহান’।
–তুমি আমার ফ্রেন্ড হও বাবা।তোমার সাথে আমি মজা করবো’।
ছেলের শান্ত কণ্ঠে বলা কথাটা আশরাফুল চৌধুরীর মনে ভয় ধরিয়ে দিলো’।ছেলে আমার কখনো এমন করে কথা বলে না।ছেলেকে আমার কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে’।আশরাফুল চৌধুরী ছেলের কাছে গেলেন।মাথায় হাত দিয়ে বললেন’।
–কি হয়েছে বাবা’।তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো’।রাতে ঘুমাও নি’।তুমি তো’ এত বেলা করে ঘুমাও না’।
–আজকে তো’ শুক্রবার’।তাই ঘুমিয়েছি বাবা’।অধরা কিন্তু সত্যি আসবে না।আমি তোমার সাথে মজা করছি না।কালকে আমি রেখে আসছি ওকে’।এখন হয়তো ভালো আছে।বলে-ই খেতে বসলো আহান’।দু’বার খাবার মুখ দিয়ে খেতে ইচ্ছে করলো না’।খাবার রেখে উঠে চলে গেলো’।সারাদিন আর বাসায় ফেরে নি আহান’।আফরোজা চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে’।সাতটার দিকে আহান বাসায় আসলো’।
–সারাদিন কোথায় ছিলে,বাসার কথা একবার-ও মনে হয় নাই।সবাই তোমার জন্য চিন্তা করছে।
–বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসে মা’।আমি নিশ্বাস নিতে পারি না।জানো মা’ আমার অনেক কষ্ট হয়’।বলে’ই ওপরে চলে গেলো’ আহান’।ছেলের এমন করুন অবস্থা দেখে আফরোজা চৌধুরীর চোখ ছলছল করছে’।চোখের পলক ফেললে-ই পানি গড়িয়ে পড়বে’।আফরোজা চৌধুরী আহানে’র ফ্রেন্ডদের আসতে বলল’।তারা বলেছে আমরা থাকতে আপনার চিন্তা করা লাগবে না আন্টি।একটু অপেক্ষা করুন।আমরা সবাই চলে আসছি।তারপরে দেখবো কেমনে আহান মন খারাপ করে থাকে।
চলবে…..
চলবে…..