তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -৪৫ ও শেষ

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪৫(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আহানে’র দরজা’র ওপরে দিয়ে,এক প্রকার ঝড় বয়ে যাচ্ছে’।আহান বিরক্ত হয়ে এসে,দরজা খুলে দিয়ে,রেগে কিছু বলতে যাবে’।তার আগে’ই তাসরিফ আহানে’র বুকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলল’।

–কি রে’ শালা শুনলাম নাকি ছ্যাঁকা খাইছস’।তাহলে একটা ব্রেকআপ পার্টি দিবি না’।

আহান চোখ বড় বড় করে তাসরিফে’র দিকে তাকিয়ে আছে’।

–আমাকে জ্বালাস না তো’।একা থাকতে দে’।

–আমরা থাকতে তুই শান্তিতে থাকবি’।এটা-ও আশা করিস আহান’।বলল আশিক।

–শালাকে ধর!ওর’ একা থাকা বের করছি’।পঁচা পানিতে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে রেখে আসবো’।বলল নিলয়।সবাই মিলে আহান’কে নিয়ে সুইমিং পুলে’র কাছে গেলো’।সবাই গোল হয়ে আহান’কে ঘিরে ধরে বসে আছে’।

–সবাই মিলে একটা গান ধর’।বলল তাসরিফ’।

–প্লিজ তোরা গান বলিস না।যতটুকু বেঁচে আছি’।তোদের গান শুনলে,এখন-ই হয়তো’ মরে যাব’।বলল আহান’।

–তাহলে তুই একটা মিষ্টি-মধুর গান ধর’।এই নিলয় তোর গিটার-টা আহানে’র হাতে দে’।নিলয় আহানে’র হাতে গিটার দিলে আহান সুর তুলে গাইতে শুরু করলো’।

আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি।বলে দিতে পারো তা’ আমায়।হয়তো’ আমার কোনো প্রয়োজন নেই।কেনো,লেগে থাকি একটা কোণায়’ তুমি বলে দিতে পারো’ তা’ আমায়।চিঠি লিখবো না’ ঐ” ঠিকানায়।আমার-ও তো’ অভিমান হয়’।চোখে জল আসে,আর আমার-ও তো’ অভিমান হয়’।(২)

–ধুর শালা এমন মরা গান গাইছিস কেনো’।আমরা কি ছ্যাঁকা খাইছি নাকি’।যে,দুঃখের গান শুনবো’।আহান তাসরিফ’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো’।পরিবেশ’টা একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেলো’।সবার মাঝে পিনপিনে নীরবতা চলছে।আহানে’র কান্না’র আওয়াজ যতটুকু শোনা যাচ্ছে’।আহানে’র কান্না দেখে তাসরিফ-ও কান্না করে দিলো’।ওদের কান্না দেখে আশিক আর নিলয়,ওদের জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে লাগলো’।আশিক আর নিলয়ে’র কান্না দেখে দুজনে’ই হেঁসে দিলো’।

–সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান’।তোদের মতো বন্ধ পেয়েছি’।যাদের কোনো কারন ছাড়াই জড়িয়ে কান্না করা যায়।যাদের জীবনে আপনে’র মতো বিশ্বাস-ঘাতক বন্ধ আছে’।ঠিক তেমন’ই তাসরিফ,নিলয়,আশিক -ও আছে।

–হয়েছে শালা আর গলাতে হবে না’।এখন বল আপনে’র সাথে কি হয়েছিল’।দু’জন গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের মতো ছিলি।সারাদিন একসাথে থাকতি’।নিজে না খেয়ে অন্যকে খাইয়ে দিতি’।একজন আরেকজন’কে না দেখলে পাগল হয়ে যেতি’।কি এমন হলো শুনি’।এত গভীর ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে ফেললি’।বলল তাসরিফ’।

–আপন’কে আমি নিজের ভাই মনে করতাম।কোনোদিন আলাদা চোখে দেখি নাই’।তারপরে রুহির সাথে আমার রিলেশন হলো’।আমরা তিনজন সব সময় একসাথে আড্ডা দিতাম’।আস্তে আস্তে আপন কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে যেতে লাগলো’।আমি বুঝতাম।তবু-ও সবকিছু জেনে চুপ করে থাকতাম।কিছু বললে ও’ যদি কষ্ট পায়।আচ্ছা রুহি না হয় দু’দিনের মেয়ে ছিলো’।কিন্তু আপনের সাথে তো’ আমার তেরো বছরে’র ফ্রেন্ডশিপ ছিলো’।ও আমার সাথে বেইমানি করতে পারলো’ কিভাবে’!

–কি করেছিল ও’।বলল আশিক।

–তাহলে শোন আপনে’র সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়’।ও কষ্ট পেয়েছে বলে,আমি ওর রাগ ভাঙানো’র জন্য ওর বাসার উদ্দেশ্য যাই।গিয়ে আমি যা’ দেখতে পাই’।তা দেখার জন্য আমি মোটে-ও প্রস্তুত ছিলাম না রে’।

–কি দেখেছিলি’।

–আমি রুহি আর আপনকে আপত্তিক’র অবস্থায় পেয়েছিলাম।সেদিন আমার পৃথিবীর সকল ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল’।আমি রুহির জন্য কষ্ট পাই নি’ রে’।তবে খারাপ লেখেছিল।কিন্তু যার জন্য কষ্ট পেয়েছি।সেটা হলো আপন,আমাদের তেরো বছরের ফ্রেন্ডশিপ ছিলো’।ও কিভাবে পারলো আমার সাথে এতবড় বেইমানি করতে’।ও রুহিকে ভালোবাসে,আমাকে বলতে পারতো’।বিনাবাক্যে আমি রুহিকে দিয়ে দিতাম।তারপরে কতদিন ওর সাথে দেখা হয় না।কথা হয় না।আড্ডা দেওয়া হয় না’।ঘোরা হয় না।সব মিলিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা’।ওর চিন্তায় আমি এক প্রকার ডিপ্রেশন চলে গিয়ে ছিলাম’।নিজেকে ঘর বন্ধী করে ফেলছিলাম’।আপন রুহিকে নিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াত’।হাত ধরে ঘোরা সারাক্ষণ দু’জনে একসাথে থাকা।সবকিছু করছিল’।আপনের এমন পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারি নি’।এখন কার মানুষ মনে করে শুধু রিলেশনে থাকলে-ই মানুষ ডিপ্রেশনে থাকে।আমি বলবো কথাটা ভুল’।কেউ পারিবারিক ভাবে,কেউ বেস্ট ফ্রেন্ড হারিয়ে,কেউ বাবা হারিয়ে,কেউ মা হায়িরে’ আরো হাজারো কারনে মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে’।তার মধ্যে আমি একজন আপন’কে হারিয়ে আমি প্রায় পাগল হয়ে গিয়ে ছিলাম।কথাটা হাস্যকর হলে-ও সত্যি।আমি আপনের জন্য-ই নিজেকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে ছিলাম।একা একা থাকতাম।কাউকে সয্য করতে পারতাম না।সবাই’কে আমার বিশ্বাস-ঘাতক মনে হতো’।আর সবাই ভাবতো আমি রুহি’কে হারিয়ে এমন হয়ে গেছি’।দু’দিনের মেয়ের জন্য আমি কেনো সবাইকে কষ্ট দিব বলতে পারিস।

–শালা এত চাপা কষ্ট মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলি’।আমাদের বললে কি হতো’।নিজেকে হালকা লাগতো’।

–সত্যি কথাগুলো বলতে পেরে সত্যি নিজেকে অনেক হালকা লাগছে’।

–খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না রে’।আমি বলি কি’ সব রাগ অভিমান ফেলে ভাবিকে বাসায় নিয়ে আয়’।

–না রে’ অধরা আমাকে ভালোবাসে না’।ওর অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না।আমি’ও মানুষ আমার-ও মন আছে।জানিস নিজে মুখে আমার থেকে মুক্তি চেয়েছে।সে,আমার ওপরে কতটা বিরক্ত।

–ভাবি রেগে বলছে আহান।এভাবে নিজের সুন্দর জীবনটাকে নষ্ট করিস না।বলল নিলয়।

–আমি’ও না এমন রাগ অনেক করেছি।কেউ আমার রাগ ভাঙাতে আসে নি’।এমন হাজারো অভিমান মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি।কেউ আমার অভিমান বুঝেনি’।উল্টা আমার নিজের রাগ নিজেকে-ই ভাঙাতে হয়েছে’।তাকে ভালো রাখার সব রকম কৌশল আমি ব্যবহার করেছি’।কিন্তু তার ভালোবাসা বাদে আমি সবকিছু পেয়েছি।বলে’ই আহান উঠে চলে গেলো’।সবাই অসহায় দৃষ্টিতে আহানে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে আছে’।

বাবা-মাকে পেয়ে মেয়েটা’র আনন্দের শেষ ছিলো না’।যখন-ই দেখলো আহান চলে গেছে’।সবাই’কে রুম থেকে বের করে দিয়ে।ঐ’ যে,দরজা বন্ধ করেছে’।সারাদিন পেরিয়ে রাত নেমে এলো’।মেয়েটা’র দরজা খোলার নামে নাম নেই’।মিনারা বেগমে’র মনে হাজারো ভয় এসে হানা দিয়েছে।ভেবছিল মেয়েটা রাত করে ঘুমিয়েছে’।তাই উঠতে দেরি হচ্ছে’।রাত হয়ে এলো তা-ও উঠছে না’।মিনারা বেগম বিকাল থেকে দশবার দরজা খোলার জন্য বলেছে অধরা’কে কিন্তু অধরার কাছে থেকে কোনো উওর আসে নাই’।মিনারা বেগম জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে,প্লাস্টিকের দরজা হবার জন্য একটু জোর ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো’।পুরো রুম একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে’।মিনারা বেগম রুমে আলো জ্বালিয়ে দেখলো’।অধরা দুই হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে’।মাঝে মাঝে নিশ্বাস আটকে আসছে’।মুখ তুলে শ্বাস নিয়ে আবার মুখ গুঁজে ফেলছে’।মিনারা বেগম দৌড়ে মেয়ের কাছে গেলেন’।অধরা’র মুখ তুলে অস্থির হয়ে বললেন’।

–অধরা মা আমার কি হয়েছে সোনা।কান্না করছিস কোনো’।খুব কষ্ট হচ্ছে তোর’।মাকে বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে’।

–মা’ উনি কিভাবে আমাকে রেখে যেতে পারলেন’।আমি উনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।মা’ গো’ মা’ আমি বিচ্ছেদের যন্ত্রনা সয্য করতে পারছি না।আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।আমি আর বাঁচতে চাই না।মিনারা বেগম মেয়ের লাগে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল’।

–আর একবার যদি বাজে কথা বলছিস।তোকে আমি নিজের হাতে মেরে ফেলবো’।থাকতে পারবি না।তাহলে জেদ করে চলে আসলি কেনো’।সংসার করা এত সহজ কাজ না’।তোদের থেকে বহু কষ্টে এত বছর সংসার করে এসেছি।আর তোরা বাচ্চাদের মতো ছোট খাটো’।বিষয় নিয়ে এতবড় করে ফেলছিস।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস’।তোর দেখছি আহানে’র ওপরে কোনো বিশ্বাস-ই নেই।আমি আহানে’র দোষ একার দিব না।দোষ তোর নিজের-ও আছে।তুই কেনো নিজের সত্যি গুলো আহানের থেকে লুকিয়ে রাখলি।আহানে’র সবকিছু জানার যেমন তোর অধিকার আছে।ঠিক তেমন তোর সবকিছু জানার আহানের অধিকার আছে।তোর কথা যদি তোর মুখে না শুনে,অন্যকারো মুখ শুনে।তাহলে আহানে’র অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক না।আমি মানছি আহান ভালো না।আহান তোকে খালি ভুল বুঝে,তুই একবারো আহানকে সঠিকটা বুঝানো’র চেষ্টা করেছিস।উল্টা যে,কথা বললে স্বামী আঘাত পায়।তুই আহান’কে সেই ডিভোর্সের কথা বলেছিস।আহানের কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক না’।একটা বার জানতে চেয়েছিস।আহান কেনো তোকে জেলে দিয়ে আসছিল’।আহান তোর আর তোর বাচ্চার ক্ষতি হতে দিবে না জন্য দিন রাত পাগলের মতো তোর বাবা-মাকে খুজে বেড়িয়েছে।শুধু তোর মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য।তুই যে,স্যার স্যার করে পাগল হস না।তোর ঐ স্যার কতটা নিচু মনের মানুষ।জানলে ঘৃণায় দ্বিতীয় বার ওনার দিকে তাকাবি না’।আহান প্লান করে ওনাকে বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে।তোকে মারতে চেয়েছিল।সেজন্য তোর নামে মিথ্যা অভিযোগ করে।তোকে থানায় রেখে আসছে।থানায় কড়া গার্ডের ব্যবস্থা করতে বলছে।যেনো,তোর শীরের একটা ফুলের টোকা’ও না পড়ে।যখন তোর স্যার তোকে নিতে আসলো’।সময় বুঝে তাকে ধরে ফেলছে।তোকে কিছু বুঝতে দিবে না বলে,তোর স্যার পালিয়ে গেলো চোখের সামনে তবু-ও আহান কিছু বলে নাই।আর তুই সেই মানুষটা’কে ছেড়ে চলে আসলি’।রাগ,জেদ দিয়ে ভালোবাসা হয় না।একজন ভালোবাসলে হবে না।দুজনকেই ভালোবাসতে হবে।একজন রাগলে আরেকজ চুপ থাকতে হবে’।তাহলেই না সংসার সুখের হবে’।

–মা আমি আর পারছি না।তুমি ওনাকে এনে দাও।

–আপনি পারবো না।তুমি পাকনামি করেছো’।তুমি নিজের সংসার গুছিয়ে নাও।এখন আর একটা কথা বললে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।নিজে কষ্ট পাচ্ছো’।নিজের বাচ্চাটাকে-ও কষ্ট দিচ্ছো’।ওকে কষ্ট দেওয়া’র কোনো অধিকার তোমার নেই’।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো’।আমি খাবার নিয়ে আসছি।

–আমি খাব না’।

–মার খেয়েছেসি’।

–আমাকে মারতে মারতে মেরে ফেলো মা’।

–আবার বাজে কথা বলিস।বেয়াদবি শুরু করছিস।আমি তোর মা’ হই ভুলে গেছিস।এক থেকে দেশ গুনবো উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়’।

অধরা কোনো কথা না বলে উঠে গেলো’।মিনারা বেগম মায়ের কাছে গেলেন’।মাকে সবকিছু বললেন।রুবিনা বেগম আশরাফুল চৌধুরী’কে ফোন করলেন।আশরাফুল চৌধুরী বলেছেন কালকে সবাই মিলে আসবে’।অধরা’র মা অধরাকে খাইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো’।অধরা’র বাবা-মা রুমে আসলো’।মনির সাহেব অধরা’র জন্য অনেক ফল নিয়ে আসলো’।

–বাবা আমি ঠিকে করেছি।আমি বীরে’র সাথে-ই সংসার করবো’।আমি তোমার সন্মানে’র কথা ভেবে বীরে’র সাথে যেতে রাজি হয়েছি।অন্য কোনো কারন নেই।আমি কিন্তু কয়টা দিন তোমার বাসায় থাকবো।তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো’ বাবা’।

–আমি খুব খুশি হয়েছি মা’।এখন তুমি বীরকে সাথে নিয়ে সারাজীবন-ও আমার বাসায় থাকো’।তাও আমার কোনো আপত্তি নেই।কালে সকালে রেডি থেকো’।অধরাদে’র বাসায় যাব’।

–আচ্ছা বাবা।বলে’ই তিতলি রুমে চলে গেলো’।বীর দরজার সামনে থেকে সবকিছু শুনে,মুখ হাসি ফুটে উঠলো’।তিতলি রুমে আসতে-ই তিতলি-কে কোলে নিয়ে রুমে গোল হয়ে ঘুরতে লাগলো’।

–আরে কি করছো’।নামা’ও আমাকে আমার মাথা ঘুরছে কিন্তু’।

–ছাড়বো না সারাজীবন ধরে রাখবো’।

–একজনকে মনে রেখে অন্য জনের সাথে সংসার করা যায় না বীর’।

–অধরা অধরা’র জায়গায় থাকবে।তুমি তোমার জায়গায় থাকবে।তোমাকে আমি নতুন করে,নতুন ভাবে ভালোবাসতে চাই।যতটা ভালোবাসলে তুমি আর কষ্ট পাবে না।একবার যখন সুযোগ পেয়েছি।তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিব না’।বলে’ই তিতলি’কে কোল থেকে নামিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো’।তিতলি কান্না করে দিলো’।অধরা’র জায়গা তো’ সে’ চায় নাই।শুধু বুকের মাঝখানে নিজস্ব একটু জায়গা চেয়েছিল।যেটা শুধুমাত্র একান্ত তিতলি’র জন্য হবে’।তবে কি এতদিনে তার মনের আশা পূর্ণ হলো’।তিতলি-ও বীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো’।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই মিলে রেডি হয়ে নিলো’।আহান উঠে রেডি হয়ে নিয়েছে অফিসে যাবে।আহানে’র বাবা আহানে’র হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো’।

–বাবা কোথায় যাচ্ছো’।আমার অফিস আছে।আমি কোথায় যেতে পারবো না’।আহানে’র কেউ কোনো উওর দিলো না’।আহানের নামের কেউ একজন আছে।মনে’ই হচ্ছে না তাদের কাছে’।অবশেষে গাড়ি এসে অধরাদে’র বাসার সামনে দাঁড়ালো’।আহান কেমন জানি অস্থির হয়ে উঠলো’।আশরাফুল চৌধুরী ছেলের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তবু-ও আহানে’র ছটফটানি বন্ধ হলো না’।

–বাবা আমাকে কেনো নিয়ে এসেছো।আমার মতামত জানার প্রয়োজন মনে করলে না।নাকি আমি এতটাই মূল্যহীন হয়ে গেছি।

–বাবার ওপরে কথা বলছো’।

–তুমি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো’।আমাকে যেতে দাও।না হলে ফলাফল খুব খারাপ হবে।

–কি করবে কান্না করে দিবে’।

–বাবা’।

–চুপ করো’।কলিং বেলে চাপ দিতে’ই তুলি বেগম দরজা খুলে দিলেন’।সবাই’কে খুব খুশি হলেন।সবাই ভেতরে চলে আসলো’।আহান কেমন উসখুস করছে’।তা’ তুলি বেগমে’র দৃষ্টি এড়ালো না’।

–কি গো পর মানুষ তুমি এমন উসখুস করছো কেনো’।আহান কেমন জানি লজ্জা পেয়ে গেলো’।তুলি বেগম যখন বলেছিল।তুমি অধরার কে হও।আহান তখন রাগ করে বলেছিল।আহান অধরা’র কেউ হয় না’।সবার মান-অভিমানের পালা শেষ হলো’।অধরা’র বাবা আহানের বাবার কাছে মাফ চাইলো’।

–বিশ্বাস কর আশরাফুল’।আমি তোর সাথে বেইমানি করি নাই’।তোর বড় ভাই আমাকে মিথ্যা করে বলে,তোর নাম করে,আমার থেকে টাকা নিয়েছিল’।তুই-ও সাইন করে দিয়েছিলি।আমি ভেবেছি।সত্যি তুই আর কম্পানি চালাবি না।না জেনে শুনে,আমি টাকা দিয়ে বড়ভুল করেছি’।আমার মাফ করে দিস তুই।

–আগে কথা সব ভুলে যা তুই।এখন আমরা ভাই-ভাই।আমি’ও না,জেনেশুনে তোকে ভুল বুঝেছি।দুজনেই কোলাকুলি করে এক হয়ে গেলো’।পুরো বাসায় আড্ডা জমে ক্ষীর হয়ে গেছে’।আহান আর অধরা কর্ণারে জড়সড় হয়ে বসে আছে।কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।অধরা একবার আড়চোখে তাকালে-ও আহান ঠায় মাথা নিচু করে আছে’।সারাদিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো’।এবার বিদায়ের পালা’।

–তাহলে আমাদের মেয়েকে আমরা নিয়ে গেলাম’।তোদের কি কোনো আপত্তি আছে’।

–তোদের বাড়ির বউ তোরা নিয়ে যাবি।আমাদের কিসের আপত্তি’।

–আমার আপত্তি আছে’।আমি আপাইয়ে সাথে যাব’।

আকাশের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো’।আশরাফুল চৌধুরী অধরা’কে রেডি হয়ে নিতে বলল’।অধরা উসখুস করলে-ও মিনারা বেগম মেয়েকে যত্ন সহকারে তৈরি করে দিলেন।তুলি বেগম-ও মেয়েকে বুঝিয়ে দিলেন।দুই মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেতে রাজি হলো’ অধরা’।সবাই গাড়িতে বসেছে’।আহানের পাশের অধরাকে বসিয়ে দিয়েছে’।আহান গাড়ির দরজার সাথে ঘেঁষে বসেছে।যেনো অধরা’র শরীরে স্পর্শ করলে,অধরা’র ছোঁয়াচে রোগ আছে।সেই রোগটা তার গায়ে চলে আসবে’।আকাশ বীরকে সরিয়ে দিয়ে তিতলি’র পাশে বসে পড়ল।বীর অসহায় দৃষ্টিতে তিতলির দিকে তাকালো’।তিতলি হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে গাড়ির মধ্যে’।বাধ্য হয়ে বীর পেছনে বসলো’।অবশেষে সবাই বাসায় পৌঁছে গেলো’।বাসায় এসে যে,যার মতো রুমে চলে গেলো’।অধরা ব্যাগ তুলতে গিয়ে-ও পারছে না।তার ব্যাগ তো এত ভারি ছিলো না।এতভারি হলো কিভাবে।আল্লাহ জানে কি কি দিয়েছে,এর মধ্যে।অধরা হতাশ হয়ে ব্যাগের ওপরে বসে পড়ল’।আহান গাড়ির মধ্যে বসে থেকে অধরা’র কান্ড দেখছে।মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না।আহান ভেবেছিল’।অধরা ভেতরে যাওয়ার পরে সে,বাসার মধ্যে যাবে’।অধরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে’।আহান গাড়ি থেকে বের হয়ে অধরা’কে তুলে দাঁড় করিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে গটগট করে বাসার ভেতরে চলে গেলো’।অধরা হেঁসে আহানে’র পেছনে পেছনে গেলো’।অধরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আহানে’র পাশে বসলো’।আহান বিছানায় এক পা তুলে,এক পা নিচে রেখে মনযোগ সহকারে ফোনে কিছু একটা দেখছে’।অধরা আহানের দিকে গোল গোল করে তাকিয়ে আছে’।একবারো অধরা’র দিকে তাকাচ্ছে না’।হঠাৎ করে’ই আহান অধরা’র দিকে তাকালো।অধরা’র চোখে চোখ পড়তে-ই আহান চোখ নামিয়ে নিলো’।দু’জন পাশাপাশি বসে আছে।দুজনের মাঝে পিনপিনে নীরবতা চলছে’।আহান উঠে চলে যেতে লাগলে অধরা খপ করে আহানের হাত ধরে ফেললো’।আহান উঠতে গিয়ে-ও বসে পড়লো’।মাথা নিচু করে আছে।অধরা কিছু বলবে,হয়তো শোনার অপেক্ষা’।অধরা হঠাৎ করেই বলে উঠলো’।

–আমি পেয়ারা খাব।আহান হতভম্ব হয়ে অধরা’র দিকে তাকালো’।মেয়েটা সামনে আসলেই আমার অভিমান গুলো-ও মেয়েটা’কে ভালোবেসে ফেলে এতটা সুন্দর মেয়েটা।আহান কথা বলছে না দেখে অধরা আবার বলে উঠলো’।

–আমি পেয়ারা খাব।

–আমাকে দেখলে-ই তোমার পেয়েরা খেতে ইচ্ছে করে।

–না,আপনাকে খেতে ইচ্ছে করে’।

–আমি কি খাওয়ার জিনিস’।

–তাহলে কথা কম বলে পেয়ারা নিয়ে এসে দিন।

–আমি পারবো না।বলে-ই আহান উঠে দাঁড়াল’।অধরা আহান’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো’।

–আপনি অনেক খারাপ মানুষ।আপনার মতো খারাপ মানুষ দু’টো দেখি নাই’।আপনি আমাকে আর ভালোবাসেন না।বুঝেছি নতুন কাউকে পেয়েছেন।তাই জন্য আমার এক কোথায় আমাকে রেখে আসলেন’।

–আমি কাউকে বলে ছিলাম।তার সবকিছু জেনেই আমি তাকে ভালোবাসি।সে,আমার কথার ব্যাখ্যা’টা বুঝে উঠতে পারে নি’।হয়তো বুঝার চেষ্টা করে নি’।যার জন্য করলাম চুরি।সেই বলে আমি নাকি চোর’।তাকে খালি ভুল বুঝি’।আচ্ছা আমি না হয় খুব খারাপ।সে,তো’ ভালো আমাকে একটা বার সঠিকটা বুঝিয়ে বলতো’।স্বামী হিসেবে এতটুকু জানার অধিকার নেই আমার।আজ যদি এমন ভুল আমি করতাম।সামান্য রাগ করে নানির বাসায় রেখে এসেছি।তাই এতটা খারাপ হয়ে গেলাম।আপনার মতো ভুল করে আমার কি শাস্তি হতো’।

–স্যরি আমার ভুল হয়ে গেছে।কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন আপনার থেকে কোনো কিছু লুকাবো না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আপনি আপনার দিক থেকে ঠিক আছেন।আমি ডিভোর্সের কথা বলে খুব অন্যায় করে ফেলছি।আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।আপনি-ও আমাকে কষ্ট দিন।কিন্তু আপনার কাছে রেখেই দিন।আপনার থেকে আলাদা করে দিবেন না’।সত্যি আমি আপনার ভালোবাসার যোগ্য না।

–আমি কাউকে ভালোবাসি না।

–তাহলে আমি থাকবো না।আবার চলে যাব।

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব।

–তাহলে বললেন কেনো’।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না’।

–নিরামিষ’রা কখনো বুঝে না।কেনো বলেছি’।একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বলছি।অধরা আহানের বুকে কিল মেরে বলল’।

–আপনি অনেক খারাপ।আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন।আপনাকে এতটুকু-ও ভালোবাসবো না’।

–নিরামিষ মেয়েরা ভালোবাসতে জানে না।

–আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আহান।সারাজীবন আপনার সাথে কাটাতে চাই।আমার শেষ পর্যন্ত থাকবেন,তো’ আমার পাশে’।

–কি বললে,আরেক বার বলো’।

–আমি আপনাকে ভালোবাসি’।আহান অধরা’র কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো’।

–তুমি জানো অধরা’।এই একটা শোনার জন্য কতগুলো প্রহর আমি অপেক্ষা করছি।কিন্তু তুমি বলো নাই।তোমার এই একটা কথা আমার সকল রাগ-অভিমান নিমিষেই শেষ করে ফেলছে’।তুমি সামনে আসলে আমি তোমার ওপরে রাগ থাকতে পারি না।তুমি কখনো আমার রাগ-অভিমান বোঝার চেষ্টা করো নি’।উল্টা আমাকে ভুল বুঝেছো’।

–আপনি আপনাকে জেনে-বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিবেন।আচ্ছা আপনি আমার সবকিছু জানলেন কিভাবে’।

–শপিং থেকে বেড়িয়ে তুমি বীর ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে,সেদিনই আমি সবকিছু জেনে গিয়ে ছিলাম’।

–আমাকে এতটা ভালোবাসেন কেনো’।

–তুমি আমার তাই’।

–এখন যান।পেয়ারা নিয়ে আসুন’।

–এতরাতে পেয়ারা কোথায় পাব।

–কেমন বাবা আপনি।নিজের সন্তানের জন্য পেয়ারা নিয়ে আসতে পারছেন না।দরকার পড়লে চুরি করুন’।

–চুরি করা মহাপাপ’।দেখি আকাশ’কে নিয়ে বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।আকাশ তিতলি’র পিছু ছাড়ছে না।দুজনের মাঝখানে আকাশ শুইয়ে আছে’।বীর কতরকম ভাবে আকাশকে বাহিরে পাঠানোর চেষ্টা করলো’।কিন্তু আকাশ নাছর বান্দা।তিতলি’কে রেখে এক-পা নড়বে না’।বীর রাগ করে কাত হয়ে শুইয়ে পড়ল’।ড্রয়িং রুমে এসে আকাশ’কে ডাক দিলো’ আহান।তিতলি আর বীর-ও আকাশে’র সাথে বেড়িয়ে আসলো’।

–কি হয়েছে ভাইয়া।এতরাত করে ডাকছো কেনো’।

–তোর আপাইকে আবার’ তোর নানি বাড়ি রেখে আসবো।এখন চল আমার সাথে’।

–এতরাতে কোথায় যাবে আহান’।বলল বীর।

–অধরা পেয়ারা খাবে।আমি রাগ করে সব পেয়ারা ফেলে দিয়ে আসছিলাম।বাসায় আর পেয়েরা নেই’।তাই দেখি দোকান খোলা আছে কি না’।

–এই রাত করে দোকান খোলা পাবে তুমি’।চলো আমি’ও তোমার সাথে যাচ্ছি।

–না ভাইয়া যেতে হবে না।আকাশ গেলেই হবে’।

–বেশি কথা বলো না’।বলে-ই তিনজন মিলে বেড়িয়ে পড়ল’।তিনজন মিলে কোথা’ও পেয়েরা খুজে পেল না।দু’একটা মুদিখানার দোকান খোলা আছে’।তিনজনে-ই হতাশ।

–আহান রাগ না করলে একটা কথা বলবো।তোমাদের বাসার পাশে একটা বিশাল পেয়ারা বাগান আছে।সেখানে থেকে কয়টা পেয়রা নিলে কেমন হয়।

–পাগল নাকি।ঐ লোকের মুখের ভাষা ভালো না।এসব চুরির মধ্যে আমি নেই’।

–চুপ করো সকালে আমরা টাকা দিয়ে দিব।বলেই আহানের হাত ধরে নিয়ে গেলো’।তিনজন চোরের মতো বিশাল বাগানটিতে প্রবেশ করলো’।পাঁচটা পেয়ারা পেরে যখনই পালতে যাবে।তখনই বাগানে’র মালিক খপ করে আহানের হাত ধরে ফেলে’।আকাশ আর বীর আহানকে রেখে’ই দে দৌড়’।আহান অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে’।

–কি রে তুই আহান না’।আজকাল চুরি করতে-ও শিখে গেছিস।তোর বাপের কি টাকা কম পড়ে গেলো’।যে,এখন তোকে চুরি করে খেতে হবে’।কালকে হাটের দিন। পেয়ার গুলা সব হাটে নিব।জানতাম আজ পেয়ারা চুরি হবে।সেজন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।কিন্তু তোর মতো ছেলে চুরি করতে আসছে।বিষয়টা বড্ড বেমানান রে’ আহান’।

–তুমি আমাকে ভুলছো কাকা’।আসলে তোমার পাঁচটা পেয়ারা নিয়েছি।এই নাও,এখানে পাঁচশো টাকা আছে।তোমার যদি আরো লাগে।আমি সকালে দিয়ে দিব।এখন এত টাকা নিয়ে আসি নাই।কাউকে কিছু বলো না প্লিজ’।লোকটি টাকা হাতে নিয়ে বলল’।

–যা’ যা’ বাসায় যা’ বড়লোক ঘরের সাওয়াল তুই’।রাত করে এই জঙ্গলের মধ্যে এসেছিস।সাপ-পোকামাকড় ধরবে।আহান অনুমতি পেয়ে দৌড়ে গেলো’।রাস্তায় বীর আর আকাশ আহানের জন্য অপেক্ষা করছে’।আহান হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল।

–তোমরা এত খারাপ কেনো।আমাকে একা রেখে পালিয়ে এলে’।

–চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড় ধরা’।

–হয়েছে আমি ওনাকে টাকা দিয়ে এসেছি।এখন বাসায় চলো’।সবাই মিলে বাসায় চলে আসলো’।আহান বাসায় এসে,অধরা’কে সবকিছু বললে অধরা হেঁসে বিছানার গড়াগড়ি খাচ্ছে’।আহান রেগে অধরা’র দিকে তাকালো’।তবু-ও অধরা মুখ আটকে বৃথা হাসি আটকানো’র চেষ্টা করছে।আহান গিয়ে অধরা’র অধরে নিজে’র অধর ডুবিয়ে দিলো’।নিমিষেই অধরা চোখ বন্ধ করে নিলো’।

–আহান আমার ছোট হয়ে-ও বাবা হচ্ছে।আমার বুঝি বাবা হতে ইচ্ছে করে না’।বলল বীর।

–নেশা টেশা করে আসছো নাকি’।

–কেনো আহান তার বউয়ের জন্য রাত করে পেয়ারা চুরি করে নিয়ে আসে।আমার বুঝি ইচ্ছে করে না।আচ্ছা তিতির আপু এ বাসায় আসে না কেনো’।

–তিতির আপুর কাজ নেই তো’।শশুর বাড়ি রেখে এসে এখানে পড়ে থাকবে।তার স্বামী সন্তান আছে’।শশুর-শাশুড়ী আছে।তাদের দেখেশুনে রাখতে হয়’।

–তোমার লজ্জা করে না।তুমি সংসার রেখে এসে বাপের বাড়ি পড়ে থাকো।এতদিন হয়ে গেলো, বিয়ে হয়েছে।এখনো বাচ্চার মা হতে পারলে না।

–এই তোমার হয়েছেটা কি বলো তো’।

–তোমার ভালোবাসা চাই।

–ভালোবাসা হাতের মোয়া চাইলেই পাওয়া যায়।

–হ্যাঁ যায়।আজকের রাত আমার চাই’।তোমার এতটা কাছে যেতে চাই।যতটা কাছে গেলে,কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।অতঃপর আরো-একটি ভালোবাসার পূর্ণতার রাত’।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।খবর এলো চৌধুরী বাড়িতে আশরাফুল চৌধুরীর বড় ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।কয়েক বছর আগে তার নামে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগে তার নামে মামলা করা হয়েছিল’।পুলিশ তথ্য প্রমাণ না পাওয়া’য় কেসটা ক্লোজ হয়ে গিয়েছি।কেউ একজন আপিল করে মামলাটা পুনরায় চালু করিয়েছে।এবং সঠিক প্রমাণ পেয়ে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।অধরা’র মুখে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু সেই বাচ্চাটির ধর্ষণকারী তার স্যার নিজে ভাবতেই ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠলো’।

–বীর ভাইয়া তুমি জানতে চেয়েছিলে না।তোমার চাচা’কে কেনো মেরেছি’।তাহলে আজকে আমার সাথে এক জায়গায় যাবে।তারপর তিতলি,বীর,আহান,অধরা সবাই মিলে একসাথে বেড়িয়ে পড়ল’।শহর থেকে একটু দূরে এসে একটা কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়াল গাড়িটি সবাই অধরার দিকে অধীর আগ্রহে,চেয়ে আছে’।অধরা গাড়ি থেকে নেমে আসলো।সবাই মিলে কুঁড়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে দুনজন বৃদ্ধ করে দেখতে পেলো’।বীর বলে উঠলো’।

–দারোয়ান কাকা’।

–হ্যাঁ তোমার চাচা তোমার কাকার আট বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল।সেজন্য তাকে আমি মর্মান্তিক মৃত্যু দিয়ে ছিলাম’।মেয়ে হারিয়ে কাকা দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিল।এক পর্যায়ে বিছানা গতি হয়ে যায়।তারপরে থেকে আমি ওনাদের দেখি।ওনাদের দেখার মতো কেউ নেই।আমি তোমার চাচার মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছি।কিন্তু তোমার চাচা দারোয়ান কাকার মেয়েকে বাঁচতে দেয় নাই।কিন্তু এর সাথে যে,স্যার-ও যুক্ত ছিলো।আগে জানলে সেদিনই স্যারকে মেরে ফেলতাম।এখন বুঝতে পারছি।স্যার কেনো পালিয়ে গিয়েছিল।বীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।আজ থেকে তাদের দায়িত্ব আমি নিব।

–রুহি আমার নিজের বোন না।সেটা তুমি জানতে’।

–হ্যাঁ!

–কাকাদে’র এখানে আর রাখবো না।বলে’ই ওদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল সবাই’।

সুখের সময় গুলো খুব ক্ষনিকের হয়’।দেখতে দেখতে কখন যে,সময়ের স্রোতে ভেসে চলে যায়।তা টের পাওয়া খুব মুশকিল’।দুঃখের সময় যতটা স্থায়ী হয়’।সুখের সময় তার বিপরীত হয়।খুব দ্রুত সময়ে’র সাথে চলে যায়।মান-অভিমান,ঝগড়া-খুনসুটি,রাগ,জেদ নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে সবার জীবন’।শারমিন’কে সুস্থ করার জন্য উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বাহিরে পাঠানো হয়েছে।আপন আর রুহি এসে আহানের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছে।তারা-ও বিয়ে করে নিয়েছে’।অধরা’র বাচ্চা হবার সময় হয়ে এসেছে’।আহান অধরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বলল’।

–বউরাণী শুনো আমাদের মেয়ে হবে’।আমি আমাদের মেয়ে’কে মাদ্রাসায় পড়াবো’।আমার মেয়েটা একদম তোমার মতো কিউট হবে’।

–তুমি বললে’ই তো হবে না।আমাদের ছেলে হবে বুঝলে।সকাল সকাল জ্বালাবে না।কাজ নেই তোমার’।

–আমার একটাই কাজ তোমাকে জ্বালানো’।অধরা’র গালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বলল।

–আমি না থাকলে কাকে জ্বালাবে’।

–রাগাবে না বলে দিলাম’।

অধরা হেঁসে আহানের গালে অধর ছুঁইয়ে দিলো’।আহানে’র চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল’।

–আমাকে একটু নিচে নিয়ে যাবে।

–কি লাগবে বলো’।আমি নিয়ে এসে দিচ্ছি।তোমার চলাফেরা করতে সমস্যা হয়’।

এখন যদি অধরা বলে তার পেটে ব্যাথা করছে’।তাহলে আহান চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় করবে’।নিচে গিয়ে মা বা আপুকে বললে,ঠিক বুঝবে’।অধরা দাঁতের ওপরে দাঁত রেখে ব্যাথা সয্য করে বলল।

–আমাকে নিচে নিয়ে চলো’।আমি তোমাকে সবটা বলছি’।

তারপরে আহান অধরা’কে ধরে নিচে নিয়ে আসলো’।সময়ের সাথে অধরা কেমন জানি অস্থির হয়ে উঠছে’।আহান উত্তেজিত হয়ে বলল’।

–কি হয়েছে তোমার’।এমন করছো কেনো’।

–মাকে একটু ডাকবে’।

আহান দৌড়ে গিয়ে মাকে ডেকে নিয়ে আসলো’।

–কি হয়েছে কোনো সমস্যা হচ্ছে’।

–মা পেটে প্রচুর ব্যাথা করছে’।একটু আগে হালকা ছিলো’।মনে করেছি আগে’র মতোই একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।সময়ের সাথে দিগুণ হচ্ছে,আমি সয্য করতে পারছি না’।

–তোমার পেটে ব্যাথা করছে।তুমি আমাকে আগে বলবে না।এতক্ষণে বলছো’।

–তুমি চিৎকার করতে তাই বলি নাই’।

–কথা কম বলো’।অধরা’কে হসপিটালে নিতে হবে।তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বলো’।অধরা’কে যথা সময়ে হসপিটালের নেওয়া হলো’।অপারেশন থিয়েটারে’র সামনে অস্থির হয়ে বসে আছে।আহান আর আফরোজা চৌধুরী’।সবাই’কে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে’।সবাই আসছে।একটু পরে বাচ্চা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো’।আফরোজা চৌধুরী,আহান দুজনেই অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছেন’।একটা নার্স এসে আহানের কোলে বাচ্চা দিয়ে বলল’।

–কংগ্রাচুলেশনস আপনার মেয়ে হয়েছে’।

–আমার স্ত্রী কেমন আছে।

–আলহামদুলিল্লাহ উনি ভালো আছেন।একটু পরে কবিনে দেওয়া হবে।সবাই দেখা করে নিবেন।আহান বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো’।মুখের তৃপ্তির হাসি।চোখদুটো ছলছল করছে আহানে’র।মিসেস আফরোজা চৌধুরী বাচ্চাকে দেখে বললেন।

–আহান একদম তোর মতো হয়েছে’।একটু-ও জালাচ্ছে না।দেখ কেমন গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে।জানিস আহান আমার খুব আনন্দ লাগছে’।নাতনী আমার তোর মতো শান্ত হয়েছে।

–তুমি নিবে মা’।কোলে নাও আমার আরহা কে’।

–আল্লাহ আমার ছেলের আশা পূরণ করে দিয়েছে।এর জন্য আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া’।আমার ছেলের কত আশা ছিলো একটা মেয়ের’।আল্লাহ আমার ছেলেকে একটা রাজকন্যার মতো মেয়ে দিয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ।একটু পরে অধরাকে কেবিনে দেওয়া হলো’।আহান বাচ্চা নিয়ে কেবিনে’র মধ্যে প্রবেশ করলো’।বাচ্চাকে দেখে অধরা কান্না-ই করে ফেললো’।আহান বাচ্চাকে অধরা’র কাছে নিয়ে গেলো’।বাচ্চার কপালে চুমু খেয়ে অধরা বলল’।

–আমাদের আরহা’।একদম তোমার মতো হয়েছে আহান’।আহান হেঁসে অধরা’র কপালে চুমু খেলো’।কিছুক্ষনের মধ্যে পুরো হসপিটাল ভরে গেলো’।সবাই অধরাকে দেখে গেলো’।

আজ পনেরো দিন পরে হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলো অধরা’।শরীর এখনো পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠে নি’।মোটামুটি সুস্থ বললে চলে’।ড্রয়িং রুমে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে অধরা’।চৌধুরী বাড়িতে খুশির শেষ নেই আজ’।ফাঁকা বাড়িটা মেহমান দিয়ে ভরে গেছে’।তিতলি এসে অধরা’র পাশে বসল’।

–আপু তুমি আসতে গেলে কেনো’।তোমার শরীরের অবস্থা খারাপ’।আমি যেতাম তোমার রুমে’।

–তুমি নিজে’ই অসুস্থ।আমি আবার তোমাকে কষ্ট করাবো’।আরহা’কে দেখে আদর করে উঠে চলে গেলো তিতলি’।

–আমার জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে তাই না তিতলি।যেদিন থেকে তুমি প্রেগন্যান্ট হয়েছে।অসুস্থতা তোমার পিছু ছাড়ছে না।

–তুমি পাশে থাকলে,পৃথিবীর কোনো অসুস্থতা-ই আমাকে কাবু করতে পারবে না।বীর তিতলি-কে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো’।

সবার দেখাশোনা শেষ হলে,অধরা বাচ্চাকে নিয়ে ওপরে চলে গেলো’।আহান অধরা’র প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে রুমে গেলো’।রাতে খেয়ে অধরা আর আহান পাশাপাশি শুয়ে আছে’।

–তোমাকে না বললাম বাচ্চার পাশে ঘুমা’ও।

–তোমাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না।

–এমন কেনো তুমি।

–আমি এমনই।বলেই অধরাকে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল’।অধরা বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে’।

তোমাকে আমি বলে ছিলাম না অধরা।তুমি থেকে যাও।সারাজীবন রেখে দেওয়ার দায়িত্ব আমার’।আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি’।

–এই যে,আমি’ও তোমার কাছে থেকে গেলাম’।এত সুন্দর একটা জীবন আমাকে উপহার দিলে।তোমার প্রতি দিন দিন আমার ভালোবাসা বেড়েই চলেছে’।বড্ড ভালোবাসি তোমাকে’।

আহান অধরা’র কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলল’।আমি’ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি ‘বউরাণী’।

(সমাপ্ত)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here