তুমি শুধু আমারই হও পর্ব – ২৭

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২৭|

তরীর মামা-মামী কিছুতেই মানতে চাচ্ছেন না রুশান আর তরীকে। রুশানের বাবা মা প্রথমে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। উৎসব বোঝাতে আর একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নেন সম্পর্কটা। এখন ঝামেলা হচ্ছে তরীর মামা-মামী কে নিয়ে। শেষে উৎসব তরীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–“তোমার বয়স কত?”

–“স্ সতেরো।”

–“আঠারো হতে কতদিন বাকী?”

–“আড়াই মাস।”

উৎসব এবার তরীর মামা-মামীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“বয়স আর সাক্ষীর জন্য বিয়ে বাতিল করেছিলেন না? তাহলে এইটুকুন বয়সে আপনারা ওর বিয়ে কিভাবে দিচ্ছিলেন? মেয়ে নিজের পছন্দের ছেলের সাথে পালিয়ে এসেছে আর অমনি মনে হলো মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি তাই না?”

তরীর মামা-মামী চুপ করে রইলেন। একজন পুলিশ বললেন,
–“আপনারা যে অভিযোগ করেছেন এই ছেলের বিরুদ্ধে সেই একই কাজ তো আপনারাও করছিলেন।”

তরীর মামা আমতা আমতা করে বললো,
–“আ্ আসলে___”

শক্ত কন্ঠে উৎসব বললো,
–“কোনো আসলে নকলে নেই। আজ থেকে ঠিক আড়াই মাস পরে রুশান আর তরীর বিয়ে হবে৷ আর সেটা রুশানের পরিবার এবং আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিবো। আপনারা কিভাবে আটকাবেন আটকে দেখান।”

তরীর মামা তরীর হাত ধরে বললো,
–“আমাদের মেয়েকে ওর সাথে বিয়ে দিবো না।”

–“তরী যাবে না আপনাদের সাথে।”

উৎসবের কথায় একজন পুলিশ বাঁধা দিয়ে বলেন,
–“উনারা চাইলে উনাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে পারে, এখানে আপনি বাঁধা দিতে পারবেন না।”

–“তরীকে জিজ্ঞেস করুন, ও যেতে চায় কিনা।”

উৎসবের কথায় একজন পুলিশ তরীকে এই কথা জিজ্ঞেস করলে ও সাথে সাথে নাকোচ করে দেয়। পুলিশ বলেন,
–“ও এখনো এডাল্ট হয়নি, তাই এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ও নিতে পারবে না।”

অর্নির আর নূরের রাগ হচ্ছে ভীষণ। তরীর মামা-মামী কে জাস্ট খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। অর্নি এগিয়ে গিয়ে তরীর ডান হাতের উপর পিঠ এবং ঘাড়ে থেকে চুল সরিয়ে ঘাড় দেখিয়ে বললো,
–“দেখুন, উনারা কি রকম অত্যাচার করে মেয়েটাকে। উনাদের পছন্দমতো বিয়েতে রাজি না হওয়াতে মেরে এই হাল করেছে মেয়েটার।”

নূর বললো,
–“এরপরও বলবেন তরী উনাদের সাথে যাবে? না জানি এখন আবার বাসায় নিয়ে বিয়ে না করে রুশানের সাথে পালিয়ে আসার জন্য খুন করে মাটিচাপা দিয়ে দেয় ঠিক নেই। তার থেকে ভালো তরী আমাদের সাথে আমার বাসায় যাবে৷ আর আড়াই মাস পর রুশানের সাথে বিয়ে হবে ওর।”

পুলিশের লোক তরীর মুখ থেকে সবকিছু শুনলেন। নানান তর্ক-বিতর্ক এর পর উৎসব তরীকে রাখতে সক্ষম হয়। তরীর মামা-মামী আর পুলিশ চলে যান। উৎসব রুশানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“আড়াই মাস পরেই বউ করে ঘরে তুলবে, ততদিন তরী আমাদের বাসায় থাকবে।”

রুশান উৎসবকে জাপ্টে ধরে বললো,
–“থ্যাংকস ভাই, আজ আপনি না থাকলে__”

–“থ্যাংকস বলার মতো কিচ্ছু হয় নি, আসছি।”

কথাটা বলে উৎসব বেরিয়ে পড়লো রুশানদের বাসা থেকে। নূর অর্নি তরী ওরাও রুশান আর ওর বাবা মাকে বলে বেরিয়ে এলো।

উৎসব ড্রাইভ করছে, পাশেই অর্নি বসা। নূর আর তরী পেছনে বসেছে। অর্নি উৎসবের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“থ্যাংকস আপনাকে, আমাদের কথা রাখার___”

–“এখানে এসেছি, তরীকে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকিয়েছি বলে ভেবো না যা যা করেছো তা ভুলে যাবো আমি। তোমাদের বাসা থেকে বেরোনো বন্ধ মানে বন্ধ। আর তোমার পানিশমেন্ট আমি বাসায় গিয়ে দিচ্ছি।”

রাতের খাবার খেয়ে অর্নি শায়লা বেগমের সাথে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। সাথে তরী আর নূরও আছে। নূরের আব্বু নিজের ঘরে চলে গিয়েছেন খাবার খেয়ে। উৎসবও নিজের রুমেই আছে। পানিশমেন্ট এর ভয়ে অর্নি ঘরে যেতে চাচ্ছে না। নূরের ফোন বাজাতে ও উঠে চলে গেলো। ফোন রুমে রেখে এসেছে। এখন নিশ্চয়ই শান্ত ফোন দিয়েছে। নয়তো এত রাতে ফোন দেওয়ার মতো আর কেউ নেই। নূর উৎসবের ঘর ক্রস করার সময় উৎসব ডেকে বললো,
–“অর্নি কোথায়?”

–“ও তো নিচে আম্মু আর তরীর সাথে আড্ডা দিচ্ছে।”

এইটুকু বলেই প্রস্থান করলো নূর। দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। ইতিমধ্যে দুবার ফোন বেজে কেটে গেছে। ফোন রিসিভ করতেই শান্ত বললো,
–“আজকাল বড্ড বেশিই ব্যস্ত মনে হচ্ছে ম্যাডামকে? আমার কথা তো স্মরণই থাকে না।”

–“তেমন কিছু না, আসলে একটু ঝামেলায় ফেঁসে গেছিলাম___”

শান্ত বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
–“কিসের ঝামেলা? কিছু হয়নি তো তোমার? ওদিকে সব ঠিক আছে?”

নূর সব ঘটনা খুলে বললো শান্তকে। সব শুনে শান্ত একচোট হেসে নিলো। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“আপনি হাসছেন? জানেন কত রিস্ক নিয়ে কাজটা করেছিলাম।”

–“হ্যাঁ এত রিস্ক নিয়ে করেছো বলেই সম্পূর্ণ করতে পারোনি। তোমাদের জন্য বেচারা রুশানকে আরো আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হবে।”

নূর কিছু বললো না। শান্ত বললো,
–“পায়ের ব্যাথা কমেছে?”

–“উহুঁ__”

–“মেডিসিন নাও আপাতত, কাল ডক্টর এর কাছে যাবে।”

এরকম ভাবেই টুকটাক কথা চলতে লাগলো দুজনের। বেশ ক্ষানিকটা সময় বাদে তরী এসে শুয়ে পড়লো৷ তরীর ঘুমে ডিস্টার্ব হবে ভেবে নূর কথা বলতে বলতে ব্যালকোনিতে চলে গেলো।

ঘড়ির কাটায় পাক্কা এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট। শায়লা বেগম ভ্রু কুঁচকে অর্নির দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,
–“মতলব কি তোর? রুমে যাচ্ছিস না কেন?”

–“মা থাকো না এখানে, দিব্যি তো গল্প করছিলাম। আরো কিছু সময় থাকি না।”

–“সাড়ে এগারোটা বাজে অর্নি। ঘুমাবি না? এমনিতেই পা কেটেছে অনেকটা। যা ঘুমিয়ে পড়।”

–“উঁহু।”

ভ্রু কুঁচকে তাকালেন শায়লা বেগম। সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–“ঝগড়া করেছিস আবার দুজনে?”

অর্নি কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,
–“তোমার ছেলের রাগ কমেনি এখনো। বাসায় ফেরার সময় বলেছে পানিশমেন্ট দিবে। আমি যাবো না ঘরে।”

শায়লা বেগম মুচকি হেসে অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“আমার ছেলেটা তোকে বড্ড ভালোবাসে তো। বেশি কঠিন পানিশমেন্ট দিতে পারবে না তোকে। যা ঘরে যা। উৎসব নিশ্চয়ই তোর অপেক্ষায় আছে।”

–“যাবো?”

শায়লা বেগম কিছু বলার আগেই উৎসব ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো,
–“অর্নি কয়টা বাজে এখন? ঘরে আসছো না কেন? ঘুমাবো তো আমি, অফিস আছে সকালে।”

এর আগেও দু বার ডেকেছে উৎসব অর্নি সারা দেয়নি। শায়লা বেগম মুচকি হাসলেন ছেলের কথায়। অর্নিকে বললো,
–“ঘরে যা, তুই না গেলে ও ঘুমাবে না।”

অর্নি তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো৷ তারপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে উপরে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করতেই উৎসব এসে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“এতক্ষণ নিচে কি করছিলে? আমার ডাকে সারা দাওনি কেন?”

অর্নি ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“আপনি না ঘুমাবেন? তাহলে এখনো ঘুমাননি যে। অফিস আছে না সকালে?”

–“মজা করছো আমার সাথে? তোমাকে ছাড়া এখন ঘুম হয় না আমার। তাছাড়া তুমি পানিশমেন্ট এর কথা ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি।”

শুকনো ঢোক গিললো অর্নি। উৎসব বিছানায় বসে বললো,
–“কানে ধরে উঠবস করো দশবার ফাস্ট।”

উৎসবের কথায় অর্নি থতমত খেয়ে গেলো। বোকা বোকা ভাবে প্রশ্ন করলো,
–“আমাকে ক্লাস ওয়ান টু এর বাচ্চা মনে হয়? যে পড়া পারিনি তাই এখন কানে ধরে উঠবস করতে হবে।”

–“বাচ্চাদের থেকে কোনো অংশে কম না। এখন যা বলেছি তাই করো।”

–“নাহ___”

–“পনেরো বার।”

–“দেখুন___”

–“বিশ বার। তুমি যতবার কথা বলবে ততবার পাঁচবার করে বারবে। কানে ধরে উঠবস তো তোমায় করতেই হবে।”

অর্নি কাঁদোকাঁদো ভাবে কানে ধরে বললো,
–“উঠবস না করি প্লিজ?”

–“উঁহু, চলবে না। উঠবস করতে হবে।”

অর্নি কোনো উপায় না পেয়ে কানে ধরে উঠবস করতে লাগলো। ছয়বার উঠবস করতেই উৎসব গিয়ে জড়িয়ে ধরলো অর্নিকে। বললো,
–“নেক্সট টাইম কোনো উল্টাপাল্টা করার আগে এই কানে ধরে উঠবস করার কথাটা যাতে মাথায় থাকে।”

অর্নি গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো৷ আচমকাই উৎসব অর্নিকে কোলে তুলে নিলো। অর্নি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বললো,
–“করছেনটা কি?”

–“পা কি অনেকটা কেটেছে? ব্যাথা করছে খুব তাই না?”

অর্নি অভিমানে গাল ফুলিয়ে বললো,
–“বাসায় ফিরেছেন পর থেকে রেগে আছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করছেন আমার উপর। তার উপর আবার এতক্ষণ কাটা পা নিয়ে কানে ধরে উঠবস অব্দি করালেন। আর এখন আসছেন এই কথা জিজ্ঞেস করতে?”

উৎসব অর্নির নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বললো,
–“পানিশমেন্ট দরকার ছিলো। তবুও প্রথম বার বলে অল্পতে বেঁচে গেলে। নেক্সট টাইম একদম পার পাবে না। এখন বলো ব্যথা কি এখনো অনেক আছে?”

অর্নি কিছু বললো না। উৎসব অর্নিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মেডিসিন বক্স এনে বসলো অর্নির পায়ের কাছে৷ অর্নির পায়ে হাত দিতে গেলেই অর্নি দ্রুত পা সরিয়ে বলে,
–“কি করছেন? পায়ে হাত দিচ্ছেন___”

উৎসব অর্নির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে বললো,
–“হুশশশ! একটাও কথা না। এতক্ষণ পানিশমেন্ট এর দরকার ছিলো বলে দিয়েছি। এখন বউয়ের যত্ন নেওয়া দরকার তাই নিচ্ছে। কোনো কথা হবে না।”

উৎসব ধীরে ধীরে অর্নির পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে কাটা জায়গা আবারো পরিষ্কার করে দিলো। জায়গাটায় আবারো ক্ষানিকটা রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছিলো। উৎসব ভালো করে পরিষ্কার করে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। বললো,
–“বেশ অনেকটা কেটেছে৷ সাবধানে হাঁটা-চলা করবে। আর পা ভালো না হওয়া অব্দি তুমি বা নূর কেউ-ই ভার্সিটি যাচ্ছো না। মাথায় থাকে যেন।”

অর্নি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো৷ উৎসব উঠে গিয়ে অর্নির পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে৷ অর্নিও পাখির ছানার মতো লেপ্টে রইলো উৎসবের বুকে। উৎসব অর্নির মাথা তুলে ঠোঁটে চুমু খেলো ক্ষানিকটা সময়ের জন্য। তারপর কপালে চুমু দিয়ে আবারো অর্নিকে জাপ্টে ধরে চোখ বন্ধ করলো।

চলবে~

[ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। আজকে খুব ক্লান্ত। একবার গল্প দিতে চাইছিলাম না। তবুও দিলাম আপনারা অপেক্ষায় আছেন বলে।

নাইছ নেক্সট লিখবেন না, পারলে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here