#তোমাকে_চাইবো_বলে
#পর্ব_৭
মিনিট দশেক পর নাদিব বারান্দায় উঁকি মারলো।চুপচাপ চারপাশ। মুনার পাশে বসলো ভয় নিয়ে।একে তো শ্বশুর বাড়ি,এখানে যদি চিল্লাচিল্লি করে তবে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে।
নাদিব আস্তে করে মুনার হাত টা ধরলো। মুনা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে রুমে আসতেই নাদিব উঠে পথ আগলে দাড়ালো।
মুনা নাদিবের চোখে তাকাচ্ছে না ভয়ে,যদি কেঁদে দেয়।
“সরুন,আমার মাথা ধরেছে।
“এখানে বসো।আমি টিপে দিই মাথা।
“একদম ন্যাকামো করবেন না। এসব করে কি প্রুভ করতে চান বলুন তো।
“তোমার আমার সম্পর্ক টা তো কিছু প্রুভ করার মত সম্পর্ক না। আমি যা করি মন থেকে করি মুনা।দায়িত্ব থেকে নয়।
“ওহ আচ্ছা? এখন যে বাইরে যাচ্ছেন সেটাও তবে মন চাইছে বলেই।বাহহ
“উফফ,দুইটা দুরকম প্রেক্ষাপটে হয় মুনা।কেন এমন করছো।
“কিছুই করছিনা আমি, সরুন,আমি যাবো।
“আচ্ছা,কতদূর যাবে?
নাদিব এক আধ পা করে এগোচ্ছে,এক আঙুল দু আঙুল করে মুনার কোমর স্পর্শ করলো।এতদূর?নাকি এতদূর?
নাদিব মুনার কোমরে হাত দিয়ে নিজের দিকে আস্তে করে টানলো মুনাকে।মুনা এক ঝটকায় নাদিবের বুকে লেপ্টে গেলো। এতকাছে যে নাদিবের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস এসে মুনার চিবুকে ঘাম ঝরাচ্ছে।
“কি, এর থেকে বেশী দূরে যেতে পারবে?
মুনা মুখ তুলে তাকালো, দু চোখ ছলছল।সব কষ্ট বুঝাতে না পারার ক্রোধ জল হয়ে বের হতে চাচ্ছে।রাগে মুনা কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
“আমাকে ছাড়ুন আপনি। যে নিজেই পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তার মুখে এসব মানায় না।প্লিজ এসব মায়ার জালে আমাকে বাঁধতে আসবেন না।
নাদিব শক্ত করে মুনাকে আগলে রেখেছে তবু।মুনার দুহাত দিয়ে নাদিব কে ধাক্কা দিচ্ছে মাঝে মাঝে।
“আচ্ছা তাই,আমার এত সাধ্যি কই তোমার মত কঠিন শিলা কে গলিয়ে নেয়ার? বাঁধছো তো তুমি আমাকে।বাব্বা,কি আছে বলোতো তোমার ভেতর?
“জানিনা।আমার মতোন একটা ছন্নছাড়া মেয়ের কি বা থাকবে যে আপনাকে বাঁধবো।
“নিরবতার আগুন আছে অনেকটা।কিছুই করোনা,তবুও কত কি ঘটে যায়। এই নিরবতার আগুনেই আমি রোজ পুড়ছি।দিন নেই রাত নেই,এক পলক আড়াল হলেই কেমন শূণ্য হয়ে যাচ্ছি আমি।
“এসব কি শুধু আমার জন্যই হচ্ছে আজকাল,নাকি ইরার জন্য ও।
“ইরা টা কে?
“ওহহ প্লিজ,আর কত আমাকে বোকা বানাবেন? আচ্ছা আমি কি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চেয়েছিলাম একবার ও? বলেছিলাম কখনো আমাকে ভালো বাসতে? বলুন বলেছি?
“না,বলোনি।
“তাহলে? কেন এসব দায়িত্ব দেখাতে আসেন যেনো আমার জন্যই আপনার সব থেমে যাচ্ছে?
“থেমে যাচ্ছে না?
“না যাচ্ছে না।মুনা নাদিবের কলার চেপে ধরলো হঠাৎ।
আপনি বাইরে যাচ্ছেন,একবারো জানি আমি? আমার মতামত কি জানতে চেয়েছেন? কে আমি? এই,সত্যি করেই বলুন না এবার অন্তত,কি প্লান আপনার?
“মানে?
মুনা কলার টেনে ধরে বললো,
“কি ভেবেছেন,বাইরে গিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চান? আমাকে এভয়েড করতে চান? সেটা তো সেদিন ই বলেছিলেন,কেনো আমি সরে যাচ্ছিনা।
নাদিব মুনার দুগালে হাত রাখলো।এতটাই মুখোমুখি যে ইচ্ছে করলেই এই মুখে এখন অনায়াসে প্রেম ভাসানো যায়।
“পাগলী একটা। শান্ত হও না এবার।
“চুপ করুন আপনি।এত মিস্টি মিস্টি কথা বলছেন কেন? সেদিন তো বলেন নি। আপনার বলা প্রতিটা কথাই আমার এখানে গেঁথে আছে এখনো।
“কোনখানে? এখানটায়?
আঙুল দিয়ে নাদিব মুনার বুকের বা পাশ দেখালো।মুনা কিছু বলার আগেই মুখ নামিয়ে বা পাশের গলার নীচ টায় আলতো চুমু খেলো। মুনা চট করেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নাদিব কে।
“একদম ছুবেন না আমায়। কিচ্ছু ভুলিনি আমি।আমার যদি উপায় থাকতো আমি সেদিন ই আপনাকে মুক্তি দিতাম।আমার এত শখ নেই নতুন করে কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার।
নাদিব হাসি মুখে আবার এগিয়ে এসে মুনার দুহাত ধরে বুকের কাছে নিয়ে আনলো।
“কিন্তু তুমি চাইলেই আমাকে ছাড়তে পারবেনা মুনা।তোমার দুর্বল চোখে আমি আমার জন্য প্রেম দেখেছি।এই দু হাত দিয়ে যখন সেদিন আমায় শক্ত করে বুকে টেনে নিয়েছিলে,আমি নেশাতুরের মতন ডুবে গিয়েছিলাম জানো। তোমার শান্ত বুকে আমি আমার জন্য বিস্তৃত জায়গা দেখেছি। এবার নাহয় শুরু করা যাক, স্বপ্ন গুলো একসাথে দেখি নাহয়।কথা দিচ্ছি কোনো অভিযোগ করতে দিবোনা।তুমি শুধু স্বপ্ন দেখে যাবে,পূরণের দায়িত্ব আমার।
“এই এক মিনিট। কি বললেন আপনি? আমি আপনাকে দুহাতে টেনে নিয়েছি মানে কি? কি মিন করলেন আপনি অনেস্টলি বলুন।
নাদিব হুট করেই কেন যে বলতে গেলো ভাবতেই নিজেরে নিজে বেক্কল বলে গালি দিলো।
“আরে না,কি বলতে কি বলেছি
মুনা হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে কঠিন মুখে তাকিয়ে বললো,
“বলবেন কিনা বলুন? নাকি সাহস নেই।
নাদিব এবার স্বীকার করলো ভয়ে ভয়ে,
“আসলে সেদিন তুমি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেলে,আর বারান্দায় বৃষ্টির পানি আসছিলো তাই আমি তোমাকে রুমে এনে শোয়ালাম। তখনি…
“কি,কি তখনি?
“আসলে মুনা, তুমি এত কাছে ছিলে যে আমি কি করতে কি করেছি বুঝে উঠিনি। তখন তুমিও আমাকে টেনে নিলে নিজের দিকে,আমি সহ্য করতে পারিনি আর।তাই..
“তাই,মানে কি,আপনি বলছেন না কেন,
মুনার অস্থিরতা দেখে নাদিব ভয় পাচ্ছেই,সাথে মজাও পাচ্ছে।কি ভীতু মেয়েরে বাবা, যেন সাত রাজার ধন লুট হয়ে গেছে।আরে ভাই লুট হলেও সেটা তো তোমার স্বামী ই লুট করেছে।দোষের কি? ভাগ্যিস কিছুই ঘটেনি তারপর, নিছক আমি জ্বরে তলিয়ে যাওয়ায়।
নয় পাগলামো টা পেয়েই বসেছিলো।এমন একটা ভালোবাসার মতন আচারি স্বাদের বউ থাকলে প্রেম তো উপচে উপচেই পড়বে।আমার আর কি দোষ।
“একচুয়ালি মুনা,সেদিন তুমি এমন ভাবে আঁকড়ে ধরলে যে আমি সরে আসতেই পারিনি।দ্যাটস হোয়াই… সরিই মুনা।
কথাটা বলেই অন্ধকারে মিটিমিটি হাসছে নাদিব।দেখাই যাক কি হয়। পরে নাহলে মানিয়ে নিবে।
থমথম করছে সারা বারান্দা।দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই নেই যেন পৃথিবীতে।আচমকাই একটা শব্দ ভারী হয়ে এলো, তারপর ফুপিয়ে কেঁদে ওঠার শব্দ।নাদিব হতবাক হয়ে গেলো মুহুর্তে। একটা মেয়ের সম্ভ্রম নিয়ে এভাবে মজা করা উচিত হয়নি তার।সম্পর্ক টা যতই কাছের হোক,যতই বৈধ হোক, তবুও কারো অনুমতি ব্যতীত তাকে স্পর্শ করাও নোংরামি। নাদিব অনুতপ্ত হয়ে এগিয়ে এলো আবার।মুনার দু গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিতেই মুনা সজোরে একটা ধাক্কা দিলো।এত জোরে যে নাদিবের সুঠাম দেহ টা চিটকে গ্রিলের সাথে এসে লাগলো। ঘটনা টা এত দ্রুত ঘটলো যে নাদিব স্তব্ধ হয়ে গেলো। হাতে ব্যাথা পেয়েছে ভীষণ তাও খেয়াল নেই।
“এত সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? কোন সাহসে আপনি আমাকে ছুতে আসেন বারবার? আমি দিয়েছি আপনাকে সে অধিকার? দিয়েছি? আমার অজান্তে আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসছে।ভুল করে আমি আপনাকে দু একবার জড়িয়ে ধরেছি,এতেই কি প্রুভ হয়ে যায় আমি আপনাকে সব দিয়ে দিয়েছি?
“মুনা তুমি ভুল বুঝছো।
“শাটাপ, লজ্জা করেনা আবার গলা তুলতে? কিভাবে পারলেন আপনি আমার সুযোগ নিতে? খুব তো ভালো মানুষ সেজে ছিলেন দু মাস।আমিও কত কি ভেবে বসেছি, নিশ্চিন্তে বেড শেয়ার করেছি।যেখানে এখনো আমাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ই মিমাংসা হয়নি সেখানে আপনি আসল রূপটাই দেখিয়ে দিলেন? হায়্রে পুরুষ জাত। ভালোবাসা আসুক না আসুক,কামুকতা আসবেই যার তার উপর।এতই যদি দুর্বলতা তো যাকে ভালোবাসতেন, যার জন্য আমাকে সরিয়ে দেয়ার এত অজুহাত দেখাচ্ছেন,সেই ইরার কাছেই যান না।কেনো আমাকে অপমান করলেন এভাবে। দুহাতে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে দিলো মুনা।
নাদিব যেনো একটুকরো বরফ খন্ড হয়ে আছে।ফ্রিজ থেকে বরফ বের করলে যেমন ধোয়া বের হয় নাদিবের দুকান দিয়ে তেমন ধোঁয়া বের হচ্ছে যেনো। কি শুনছে সে এসব।মুনা কিভাবে পারলো ওকে এভাবে বলতে,তার উপর কি মুনার একটুও ভরসা তৈরি হয়নি দুমাসে।সত্যিই যদি কিছু করতো তাও এতটা লজ্জা লাগতো না।যতটা এখন লাগছে, নাদিবের সমস্ত চরিত্রের উপর ই এক নিমিষেই কালি ঢেলে দিলো মুনা,ওর সাথে চোখ দেখাবে কি করে নাদিব এরপর। লজ্জায় দু চোখ ভিজে এলো নাদিবের। এতটাই ঘেন্নার পাত্র হয়ে আছে সে মুনার কাছে, এখন নিজেকেই অসহ্য লাগছে।
দু চোখ মুছে নাদিব মুখ খুললো। খুব শান্ত স্বরে বলতে লাগলো, যেনো কিছুই ঘটেনি একটু আগে।
“আমি তোমাকে কিছুই করিনি মুনা।ট্রাস্ট মি।কিছুই না,যতটা তুমি ভাবছো।এতটাও হালকা চরিত্রের আমি বোধহয় না।বোধহয় বলেছি বলে অবাক হচ্ছো তাইনা? আসলে আমি তোমার প্রতি খুব দুর্বল ছিলাম বরাবরই।এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতিটি পুরুষ এর জন্য। সেক্ষেত্রে আমরা এতটাই কাছাকাছি ছিলাম যে আমি তোমাকে পেতে চেয়েছি বারবার ই।পুরুষত্ব দিয়ে নয়,ভালোবেসে পাওয়ার জন্য।
মুনা মুখ তুলে তাকালো, এই একটা কথা শুনতেই সে অপেক্ষা করে ছিলো। কতবার,কতদিন শুধু এই কথাটাই পরিস্কার ভাবে জানতে চেয়েছিলো সে।মনটা হালকা হয়ে গেলো নিমিষেই। তাছাড়া নাদিব কে সে বকেছে ঠিকই,কিন্তু মন সায় দিচ্ছিলো না নাদিবের কথাটা মানতে। নাদিব কে সে দুমাস ধরে খুব কাছে থেকে জেনেছে।বরং মুনাই কয়েকবার নাদিবের অজান্তে তাকে স্পর্শ করেছিলো।তার মনেও কয়েকবার নাদিবের জন্য অন্য খেয়াল এসেছিলো।মিথ্যে নয়।
মুনার ই ভয় হচ্ছে এখন,এতগুলো কথা বলে ফেললো, ছিঃ ছিঃ একজন পুরুষ এর জন্য এর থেকে অপমান আর নেই।কিভাবে মানাবে সে নাদিব কে।
কথা বলতে চেয়ে যেন ভয়ে কথাও বের হচ্ছেনা গলা দিয়ে।কোনো মতে তাও বললো মুনা।
“সত্যিই কিছু করেন নি,তবে মিথ্যে বলে রাগালেন কেন আমাকে।
“এই যে,তোমার ভেতরের চিন্তাগুলোকে বের করে আনতে।নাহলে তো বুঝতেই পারতাম না,তোমার মনে মনে আমার জন্য কেমন ধারণা। আর হ্যাঁ, আমি অবশ্যই তেমন ই।কারণ আমি তোমার অজান্তে তোমাকে স্পর্শ করেছিলাম সেদিন।আমি তোমাকে চুমু খেয়েছিলাম।সেটা ঠোঁট অব্দিই। অথচ আমি কতটা বোকা হলে ভেবে বসি যে তোমাকে ভালোবাসি বলে এইটা আমার প্রাপ্য।ভুলেই গেছি তোমার মনে আমার জন্য জায়গা টা কখনো খালি হবে কিনা। আমি বেশ খারাপ ই।
এতক্ষণে নাদিব টের পেলো সে হাতে ব্যাথা পেয়েছে।হয়তো বুকের ভেতরেও কোথাও। বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কবজি ধরে আছে সে।
নাদিবের শীতল কন্ঠে মুনা আরো ভয় পেয়ে গেলো। লোকটা এতটা হার্ট হয়েছে বুঝতেই পারেনি মুনা। আরে সে তো স্বামীই, আমাদের মধ্যে একটা ক্লোজ বন্ধুত্ব ও গড়ে উঠেছিলো, ভালো লাগা ছিলো। ভালোবাসা ও ছিলো হয়তো।ভুল করেই যদি কাছে চলে আসে সেটা তার প্রাপ্যই।মুনা খেয়াল করলো নাদিবের হাত।নিজেকে খুন করে ফেলতে মন চাচ্ছে তার।
মুনা ভয়ে ভয়ে রুমে গিয়ে একটা মলম নিয়ে এলো। নাদিবের পাশে দাঁড়িয়ে হাতে মলম নিয়ে নাদিবের হাতটা টেনে নিতেই নাদিব ছাড়িয়ে নিলো।
মুনা আবারো হাতটা ধরে মলম লাগাতেই নাদিব মুনার হাত ধরে ফেললো।
“থাকুক প্লিজ,ভালো লাগছেনা এসব।
মলম লাগিয়ে দিতে তো দিবেন? ব্যাথা হচ্ছে নিশ্চয়ই খুব।
“সেরে যাবে।কতদূর আর মলম লাগাবে তুমি।ভেতরকার ব্যাথাটা দেখাই যায়না তাইনা মুনা?
“আমি বলতে চাইনি ওভাবে।তাছাড়া আপনার অধিকার আছে আমাকে স্পর্শ করার।আসলে আপনি এক বছরের জন্য চলে যাচ্ছেন,আবার বলছেন আর ফিরবেন ই না।আমি ভয় পেয়েছিলাম।রাগের মাথায় কিসব বলেছি।
“হাহা,একবছর! তুমি হয়তো জানোনা,এ বাড়িতে আমি তোমার পিছু পিছুই চলে এসেছিলাম,শুধু তোমার অনুপস্থিতি আমাকে পীড়া দিচ্ছিলো বলেই। তুমি আদৌ আমাকে মিস করবে কিনা তা জানতেই মায়ের সামনে ওভাবে বলেছি।
মুনা আবছা আলোয় নাদিবের নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে রইলো। কি বলবে বা কি বললে সঠিক অনুভূতি নাদিব কে বুঝাতে পারবে তা মাথায় ই আসছিলো না।
“আপনি তাহলে যাচ্ছেন কেন? আপনার কি একবারো মনে হয়না,আদিবের মৃত্যুর পর মা আপনাকে দূরে পাঠাতে ভয় পায়?
“মাকে আমি বলেছি,খুব ইমার্জেন্সি না হলে আমি যেতাম না।তাছাড়া তোমার অন্তত সেই ভয় নেই এটা জেনেই স্বস্তি পাচ্ছি। এখন আমি যতদিন ই থাকিনা কেন অন্তত পিছুটান নেই এটা ভাবতে পারবো।
“দায়িত্ব এড়াচ্ছেন? নাকি পালিয়ে যাচ্ছেন? মায়ের ইচ্ছার বোঝা আর বয়ে বেড়াতে চান না বলে? নাকি নিজের পুরোনো পছন্দ ছিলো বলে।
“হাহা।মুনা আমি কখনো প্রেমেই পড়িনি কারো।না দেশে না বিদেশে।ইরা শুধুই আমার বন্ধুর মতন,বন্ধুও নয়।বাবার অনুপস্থিতি,স্কলারশিপ, ক্যারিয়ার এসবের তাড়নাই ঘুরেছে মাথায়।এত্ত বিজি ছিলাম নিজেকে নিয়ে যে কে আমাকে পছন্দ করতো তাও খেয়াল হয়না।একসময় বাইরে চলে যাই।সেখানেও ব্যস্ততা। দিনশেষে মা আর ভাইয়ের সাথে জম্পেশ আড্ডা। মা আর আদিবের মুখেই তোমার ব্যাপারে ধারণা পাওয়া।আদিব প্রতিদিন ই আমাকে তোমার ব্যাপারে বলে বলে প্রায় বিরক্ত করে ফেলেছিলো।আমি তখন বলতাম ওকে,বিয়ে করছিস তুই,প্রেম করছিস তুই,আমাকে কেনো এসব শুনিয়ে ঈর্ষা ফিল করাস? ও খালি হাসতো।
তুমি প্রায় ই আমাকে জিজ্ঞেস করোনা,আমি তোমার ব্যক্তিগত সমস্যা,স্বভাব,ভালো লাগা,পছন্দ কিভাবে জানি? সব ই আদিবের মুখে শুনা।এত এত শুনেছি যে মাথায় গেছে আছে সব। তোমার ব্যাপারে প্রতিটি কথাই আমার জানা। একসময় আমিও ভাবতাম,এসব প্রেম ট্রেম এর চক্করে না পড়ে মায়ের পছন্দেই সেরে নিব বিয়ে।তারপর চুটিয়ে প্রেম করবো আদিবের মত।হাহা। সব ই হলো, একটু অনিয়ম করেই শুধু।
দুজনেই নিরব, মুনা উৎসুক চোখ মুখে তাকিয়ে আছে।সে চাইছে নাদিব বলুক নিজ থেকে তার অনুভূতি। নাদিব আবার বললো..
“হঠাৎ অনুভব করলাম,তোমাকে সরাসরি না দেখেও তোমার জন্য হুটহাট মনের ভেতর ভাবনা আসছে।একটা অদ্ভুত ভালোলাগা যাকে বলে।কি অদ্ভুত! আমি আদিব কে মজা করে বলেও দিলাম সেটা।ও হেসে উড়িয়ে দিলো।
মনের ভুল ভেবে সে ভাবনাটা ভুলে যেতে থাকলাম। এরপর ই একদিন আচমকা আদিবের এক্সিডেন্ট এর খবর পাই।তারপর তো দেশেই চলে আসি। সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেলো তারপর। সবকিছুই।
তুমি জানো মুনা, আদিবের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই একদিন রাতে মা আর আমি ছাদে বসে আছি।বেশ নিরবতার পর মা হুট করেই চেয়ে বসলো,বাবু তুই মুনা কে বিয়ে করবি?
আমার বুক কেঁপে উঠলো। এজন্য যে, আমি আদিব নই,আদিবের জায়গা টা কি আমি পাবো, নাকি শুধু একটা শান্তনা হয়েই থেকে যাবো।আমি নিজের অজান্তেই হ্যাঁ বলে দিলাম।
নিজেই অবাক হই,কেন রাজি হলাম।তোমাকে আমি দেখিনি সরাসরি, বুঝিনি, কথা হয়নি তেমন,তোমার মত জানতেও চাইনি,কি স্বাভাবিক ভাবেই রাজি হয়ে গেলাম।যেনো এটাই হওয়ার ছিলো। এরপর কতরাত শুধু এটা ভেবে কাটিয়েছি যে,আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? সেটা কখন হলো? কিভাবে হলো? তুমি তো আমার হওয়ার ই ছিলেনা।তবে? কল্পনাতেই বোধ হয় এসব হয়।আমি কখনোই মাকে খুশি করতে রাজি হইনি।নিজের মন চেয়েছিলো বলেই… তুমি শুনলে অবাক হবে, বিয়ের রাতে যখন আদিবের ঘরে সব তছনছ করে হুশ হারিয়ে পড়ে ছিলে,সেই প্রথম আমি তোমাকে মন ভরে দেখেছিলাম। আমার একবার ও মনে হয়নি আমি ভুল করেছি,বা আমার এর থেকে বেস্ট কিছু চাই।বরং মনে হয়েছে,হ্যাঁ একেই তো চেয়েছি। আমার ভীষণ রাগ হয়েছিলো সেদিন, আদিবের জন্য এত টান আমি সেদিন সহ্য করতে পারছিলাম না।।সেদিন টের পেয়েছি খুব সহজ হবেনা তোমার ভেতর নিজের জন্য জায়গা করা।
কারণে অকারণে এরপর বারবার তোমাকে রাগিয়েছি,মিশেছি,বন্ধুত্ব করেছি।শুধু তোমাকে স্বাভাবিক করতে।আদিব কে সরিয়ে নয়,বা আদিবের ছায়া হয়ে নয়।শুধুই আমি হয়ে।কতোবার শুধু তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে শান্ত করতে চেয়েছি।অপেক্ষা করেছি কখন তুমি বুঝবে,কখন। পারিনি। আমাকে দিয়ে হয়নি। আমি কখনোই আদিব হতেই পারিনা।ভুলেই গেছি আদিবের জায়গায় আর কেউই আসবেনা কখনো।
মুনা অপরাধীর মতোই চুপসে আছে।কিছুই বলার মুখ তার নেই।কি বলবে,এখন যদিও বা বলে নাদিবের জন্যও তার দুর্বলতা আছে তবে সেটা নাদিব বিলিভ ই করবেনা।তাছাড়া এও সত্যি আদিবের মায়া টা আজো কাটেনি পুরোপুরি।তা সত্ত্বেও নাদিবের জন্য ভেতরে ভেতরে টান জন্মেছে,দুর্বলতা জমেছে,ভয় জন্মেছে হারানোর,না দেখলে মিসিং এসেছে।এগুলো কি প্রেম না? কিভাবে সে বুঝবে সে ভালো বেসেছে নাদিব কে?
বললেই কি মেনে নিবে নাদিব এত অপমানের পর?
চলবে….