#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৭
কারণ এসব যদি একবার জোহোরা খাতুন টের পেয়ে যায় তাহলে অবস্থা খুবই খারাপ হবে।অধরা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইরাদের খুজতে লাগলো হঠাৎ ইরা কন্ঠ শুনে অধরা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো ইরাদের নৌকা একদম তাদের নৌকার সাথেই। পৃথুলা অগ্নি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা নিজ ব্যাগ থেকে ইরার ফোন বের করে বললো,
~তোর ফোনের জন্য এই পথে আসা হয়েছে।
ইরা বললো,
~শাওন ভাইয়ার হাতে দিয়ে দেও।
অধরা ফোনটা শাওনের হাতে দিয়ে দিলো শাওন বললো,
~এই নে তোর ফোন এখন শুরু কর মডেলিং আমিও দেখি কতদূর যায়।
ইরা ভেংচি কেটে ছবি তুলতে অধরা রক্তিমকে বললো,
~আমাকে পাড়ে নামিয়ে দিন ভালো লাগছেনা।
শাওন অধরার কথা শুনে বললো,
~দেখ অধরা এতদূর এসে পরেছিস তাই ইনজয় কর আর শোন রির্সোটটা অনেক নিড়িবিড়ি তাই তুই একা থাকতে পারবিনা।
রক্তিম বললো,
~কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ফিরে যাবো তুই একটু অপেক্ষা কর।
অধরা আর কথা না বাড়িয়ে নৌকার একপাশে বসে রইলো পুলের পানিতে হাত নাড়াচাড়া করতে লাগলো রক্তিমও একপাশে বসে রইলো অধরা একধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে আছে তার হাতে কিছু ফুলের পাপড়ি লাগতেই সে মুচকি হেসে সেই পাপড়ি হাতে নিয়ে নেয়।রক্তিম অধরার অগোচরে সেই দৃশ্যটি ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলে সবাই নৌকা ভ্রমণ শেষ করে একসাথে পুলের পাড়ে এসে দাড়িয়ে পরলো।শওকত বললো,
~সবাই যেহেতু এখন ক্লান্ত তাই যার যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেও কালকে সকালে বাসার জন্য রওনা দিতে হবে।
রায়হান বললো,
~কালকে সকালে রওনা দিলে আমরা দুপুর পর্যন্ত পৌছে যেতে পারবো আমার অনেক জরুরি মিটিং আছে।এখনই ম্যাসেজ এসেছে
রক্তিম বললো,
~তাহলে সবাই সকাল বেলায় তৈরি থাকবে আমরা সবাই রওনা হবো।
সবাই রুমে চলে আসলো তারপর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো।রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে বিশাল এই আকাশটাকে খুবই তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে শওকত তার পাশে নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বললো,
~কী এতো ভাবছিস?
রক্তিম গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~বাবার সাথে কথা বলতে হবে এখনই উত্তম সময় যদি দেরি করে ফেলি তাহলে সময় হাত থেকে চলে যাবে।
শওকত বললো,
~তোর মা রাজী হবে না রক্তিম সে অধরাকে মেনে নিবে না।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তুই কী জানোস মা পৃথুলাকে পছন্দ করে নিজ ছেলের বউ হিসেবে?
শওকত হাতে থাকা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বললো,
~নাহ এসব জানিনা।
রক্তিম তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,
~ফুপি নিজ সম্পত্তি আমার বাবার নামে করে দিয়েছি আর নিজ মেয়েকে করে দিতে চায় আমার নামে।
শওকত বললো,
~তোর বাবা কেন এসব মেনে নিচ্ছে?
রক্তিম বললো,
~টাকার নেশা তাকে আকড়িয়ে ধরেছে।
শওত রক্তিমের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~শোন দোস্ত যদি সোজা আঙ্গুলে ঘি না বের হয় তাহলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়।
রক্তিম বললো,
~তা আমি জানি আর এতে আমি মাস্টারি করে ফেলেছি।
________________♥________________
সকালে সবাই রওনা দিয়ে দেয় বাসার উদ্দেশ্যে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে ইরা অধরার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। সবার চোখেই ঘুমে ভরপুর এই দুদিন অনেকটাই তারা ব্যস্ত ছিল যার কারণে এতোটা ক্লান্ত তাদের শরীর।এসবের মাঝেই অধরার ফোনটা বেজে উঠলো অধরা মোবাইলটা বের করে দেখলো তাহিদা ইসলামের ফোন করছে। অধরা ফোন রিসিভ করতেই তাহিদা ইসলাম বললেন,
~তোদের পৌছাতে কতোটা সময় লাগবে?
অধরা বললো,
~দুপুর হয়ে যাবে মা।
তাহিদা ইসলাম খুশি হয়ে বললেন,
~যাক ভালো হলো আজ বিকেলে মেহমান আসবে তাই জিজ্ঞেস করলাম।
অধরা ভ্রুকুচকে বললো,
~কারা আসবে মা?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~এতো কথা শুনে তোর লাভ নেই ঠিকঠাক মতো পৌছে যা তোরা।
বলেই সে ফোনটা রেখে দিলো অধরা ব্যাগে ফোনটা রেখে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
ঠিক ১২ টায় তারা বাসার সামনে এসে পৌছালে সবাই বাস থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে গেলো।কলিংবেল বাজাতেই ইলিনা চৌধুরি দরজা খুলে দিলো সবাইকে দেখে সে হালকা হেসে বললো,
~কেমন গেলো তোদের ভ্রমণ?
শাওন বললো,
~খুব ভালো মা।এখন শোন খুব ক্ষিদে পেয়েছে খাবার দেও টেবিলে।
ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~আহারে আমার ছেলেটা এই দুদিনে কতোটা শুকিয়ে গেছে।
শাওন এবার বললো,
~এখন over acting হচ্ছে।
সবাই শাওনের কথা শুনে হোহো করে হেসে উঠলো তাহিদা ইসলাম,জোহোরা খাতুন টেবিলে খাবার দিয়ে বললেন,
~যা তোরা ফ্রেশ হয়ে নে খাবার দিয়েছি টেবিলে।
জোহোরা খাতুন অধরাকে দেখে বললেন,
~অধরা,চুল সুন্দর করে সেম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবি।আজ বাসাশ মেহমান আসবে
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~বাসায় মেহমান আসবে এতে অধরা কেন ভালো করে চুল সেম্পু করবে?আর কারা আসবে?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~বেশি কথা বলবিনা যখন আসবে তখন দেখে নিবি।
রক্তিমের মনে একটা সন্দেহের বীজ বপন হয়ে পরলো সে গটগট করে নিজ রুমে চলে গেলো।অধরা শাওয়ার নিয়ে চুল আছড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তাহিদা ইসলাম রুমে এসে হাজির একহাতে খাবারের প্লেট তো আরেক হাতে শাড়ি।অধরা শোয়া থেকে উঠে পরলো তাহিদা ইসলাম প্লেটটা অধরার হাতে দিয়ে বললো,
~খেয়ে নে।
আর শাড়িটা বিছানার উপরে রেখে বললো,
~অধরা,আজ বিকেলে এই শাড়িটা পরবি।
অধরা বললো,
~শাড়ি কেন পরবো?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~মায়ের কথার উপর এতো কথা বলতে হয় না যা বলেছি তাই করবে।
বলেই সে রুম থেকে চলে গেলো অধরা তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো
_______________♥_______________
রক্তিম বিছানায় একহাত মাথায় তুলো শুয়ে আছে তখনই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো জোহোরা খাতুন।রক্তিম কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো জোহোরা খাতুন দাড়িয়ে আছে।রক্তিম বললো,
~কোনো কাজ আছে?
জোহোরা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~রক্তিম,একটু তোর মামা বাড়ি যেতে হবে তোর নানী তোকে দেখতে চেয়েছে।
রক্তিম মাথা থেকে হাত সরিয়ে বললো,
~তোমরা যে পরিকল্পনা করেছো তা আমি হতে দিবো না।
জোহোরা খাতুন ভয় পেয়ে বললো,
~কীসের পরিকল্পনা এসব কী বলছিস?তোর নানী তোকে দেখতে চেয়েছে অনেক জরুরি কথা আছে তোর সাথে।
রক্তিম বললো,
~আজ যাবো না কালকে যাবো।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এভাবে বলিস না তোর নানীর শরীরটা বেশি একটা ভালো না তোকে দেখতে চেয়েছে বাবা।আজই চলে যা
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে শওকতকে নিয়ে চলে যাবো।
জোহোরা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।রক্তিম তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
~তোমরা যা ভেবেছো তার থেকে একটু বেশি আমি ভেবে রেখেছি।
রক্তিম গায়ে শার্ট জড়িয়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে তারপর সোজা বাসার বাহিরে চলে আসলো।
বিকেলবেলা অধরা শাড়ি পরে বসে আছে পাত্রপক্ষের সামনে অধরা কখনো ভাবিনি যে তার সাথে আজ এমন হবে।কিছুক্ষন আগে তাহিদা ইসলাম শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে তাকে বাহিরে নিয়ে আসে।
অধরা দেখে তিনজন লোক সোফায় বসে আছে একজন মহিলা দুজন পুরুষ একজনের বয়স ২৭ কী ২৮।অধরা একবার তাহিদা ইসলামের দিকে তাকালো সে চোখ দিয়ে ইশারা করলো সালাম দিতে অধরা সবাইকে সালাম দিলো জোহোরা খাতুন সবার সাথে অধরার পরিচয় করিয়ে দিলেন।মহিলার নাম আসমা জাহান সে ছেলের মা, ছেলের বাবার নাম ইকবাল রহমান আর ছেলের নাম ইফতি রহমান।অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনে এক অজনা ভয় লাজ করছে মনে হচ্ছে এখনিই কোনো তুফান এসে পরবে।
আসমা জাহান অধরার পাশে বসে বললেন,
~মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে প্রিয়ার বিয়ের সময় দেখেই আমার মন জিতে নিয়েছে।
অধরা চুপ করে বসে আছে ইকবাল রহমান অধরার বাবা তৈয়ব হোসেনকে বললেন,
~আপনাদের মতামতের আশায় আছি আমরা।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~আমার অনেক ইচ্ছ মেয়ে পড়াশোন করুক এখন বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
ইফতি তাদের কথার মাঝেই বলে উঠলো,
~আঙ্কেল আমাদের এই বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~কিছু মনে করবেনা বাবা বিয়ের পর যদি তোমার মতামত পরিবর্তন হয়ে যায় তখন আমি কী করবো?
ইফতি বললো,
~আঙ্কেল আমি এতোটাও নিচু মনমানসিকতা নিয়ে বড় হয়নি যে ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা ভেঙ্গে ফেলবো।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~আমি আমার বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে অবশ্যই আপনাদের জানিয়ে দিবো।
তখনই কেউ থেকে বলে উঠলো,
~বাকি সবার মতামত আমি জানিনা আমার মতামত এখনই শুনে যান এই বিয়ে কোনো মতেই হবে না।
ব্যক্তিটির কণ্ঠস্বর শুনে সবাই সেখানে তাকালো অধরা ছলছল নয়নে সেঔ ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)