#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
বর্ষা ও তিন্নি কলেজ থেকে রওনা হলো বর্ষার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিয়ের এতো দিন পর একবার ও বাবার বাড়িতে যাওয়া হয়নি বর্ষার । আজকে সকালে বর্ষার আম্মু ফোন দিয়ে বলল,
” বর্ষা মা অনেকদিন হলো তোকে দেখি না। রিয়ানকে নিয়ে আয় না মা । আম্মুর কথা কি মনে পড়ে না ?
বর্ষার আম্মু কল কাটার পর বর্ষা রিয়ানকে বলেছিল ,
” বিয়ের পর একবার ও আমাদের বাড়িতে যাইনি । আম্মু , আব্বুকে ও দেখতে ইচ্ছে করছে । আজকে চলুন না যাই !
রিয়ান একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ,
” সরি ! আজকে অফিস একটা জরুরী মিটিং আছে । আমি আজকে যেতে পারবো না ।
রিয়ান একটু থেমে আবারও বললো,
” তুমি আজকে কলেজে যাবে তো ?
বর্ষা মাথা নাড়িয়ে বলল,
” হ্যাঁ যাবো ।
” তাহলে বরং তুমি আর তিন্নি কলেজ থেকে চলে যেও।
বর্ষা গাল ফুলিয়ে বলল,
” আচ্ছা !
বর্ষাকে গাল ফুলাতে দেখে রিয়ান হেসে দিল । নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
” আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে যাব ! এবার খুশি ?
বর্ষার চোখ মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিল । হাসিমুখে বলল ,
” অনেক খুশি !
*******
সকালে বর্ষার আব্বুকে বাজারে পাঠিয়েছেন বর্ষার আম্মু । মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করবেন আজকে । বর্ষার আব্বু বাজার থেকে ফিরে আসার পর রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বর্ষার আম্মু । শুভ রান্নাঘরে পানি খেতে আসে । পানি খেয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখে তার আম্মু খুশি মনে রান্না করছে । শুভ তার আম্মুকে জিজ্ঞেস করল ,
” কি ব্যাপার আম্মু ? আজকে যেন তোমাকে খুশি খুশি লাগছে !
বর্ষার আম্মু তরকারিতে লবণ দিতে দিতে বলল,
” আজকে বর্ষা আসছে ।
” আমার বোন আসছে আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না ?
” তোকে বলবো বলবো করে ও বলতে পারি নি !
” আমার বেলায় তো কিছুই মনে থাকে না । সব তোমার মেয়ের বেলায় মনে থাকে ।
” দেখছো মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও কেমন ঝগড়া করে !
” বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে ! আমার বোন আমি ঝগড়া করবো ।
” আচ্ছা বাবা করিস । এখন গিয়ে গোসল করে নে । কিছুক্ষণ পর ওরা চলে আসবে ।
” যাচ্ছি ।
বর্ষা ও তিন্নি বর্ষাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তিন্নির বুক ধুকপুক করছে । হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে । শুভকে দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগছে মনে । চোখ মুখে খানিক লজ্জার আবাস পাওয়া যাচ্ছে । বর্ষা তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বলল ,
” কিরে এভাবে লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? এখানে তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু দেখছি না !
তিন্নি বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ,
” তোর ভাইয়া বাসায় আছে ?
বর্ষা এতক্ষণে তিন্নির লজ্জার কারণ বুঝতে পারল । তিন্নির মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল ,
” দাঁড়া আমি তোর ভাইয়াকে বলে তর একটা ব্যবস্থা করছি !
কথাটা বলেই বর্ষা কলিংবেল চাপ দিলো । বর্ষার কথায় তিন্নি আঁতকে উঠলো । মেকি হেসে বলল ,
” তুই আমার কলিজার বান্ধবী , আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাএ বেষ্টফ্রেন্ড ! তুই প্লিজ ভাইয়াকে কিছু বলিস না । তুই তো ….
তিন্নি কথা বলার মাঝেই দরজা খুলে দিল বর্ষার আম্মু ।
তিন্নি আর কিছু বলল না । বর্ষা তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরল । নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করল । তখন উপর থেকে ডাক ভেসে আসল ,
” আম্মু ! ও আম্মু দেখে যাও তো !
শুভর কন্ঠস্বর শুনে তিন্নির মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। মনের মাঝে মানুষটাকে দেখার প্রবল ইচ্ছা জেঁকে বসেছে ।
” ছেলেটা এখনও নিজের জিনিস নিজে গুছিয়ে রাখতে শিখলো না। সবসময় খালি আম্মু , আম্মু করে ।
কিছুক্ষণ পর সিঁড়ি বেয়ে এক হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে নামছে । তিন্নি শুভর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । শুভ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে কিছু বলতে যাবে তখন তিন্নির দিকে নজর গেল । তিন্নির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিন্তু তিন্নির কোনো পরিবর্তন হলো না । এতক্ষণ লজ্জায় মিইয়ে থাকা মেয়েটা এখন যেন বড্ড নির্লজ্জ হয়ে গেল । তিন্নি এভাবে তাকিয়ে থাকাতে শুভর অস্বস্তি হচ্ছে । শুভ বর্ষার পাশে বসে বর্ষাকে ফিসফিস করে বলল ,
” তোর ননদ কে এভাবে তাকাতে মানা কর । আম্মু এসে দেখলে কি ভাববে !
বর্ষা শুভর কথায় তিন্নির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
” ওই , একটু আগে তো লজ্জায় লাল হয়ে ছিলি ! এখন এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ? লজ্জা কি আকাশে উড়াল দিছে ?
বর্ষার কথা যেন তিন্নি শুনেও শুনল না । বর্ষা এবার একটু জোরে বলল ,
” তিন্নি ?
তিন্নি ঘোর থেকে ফিরে এসে নিজের কান্ডে নিজেই লজ্জা পেল । শুভ তিন্নির অস্বস্তি বোঝতে পেরে এখান থেকে উঠে চলে গেল ।
—————
রাত এগারোটায় রিয়ান বর্ষাদের বাসায় আসল । বর্ষা সন্ধ্যা থেকে রিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু রিয়ান সেই দেরি করে আসলো । রিয়ান আসার পর বর্ষা একটা কথা ও বলছে না আয়ানের সাথে । রিয়ান বর্ষার দিকে সামনে গিয়ে কানে ধরে বলল ,
” এভাবে রাগ করে থেকো না ! বললাম তো ভুল হয়েছে। আমি তো ইচ্ছে করে দেরি করিনি । এমন হবে না আর !
বর্ষা রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” কালকে সকালে তো চলেই যাবেন ! সন্ধ্যার দিকে চলে আসলে কি আপনার চাকরি চলে যেত ? আপনাদেরই তো অফিস ।
” আরেক বার এসে বেশি দিন থেকে যাব ।
” সত্যি ?
” হুম ।
রিয়ান বর্ষার রুমের দিকে তাকিয়ে দেখল রুমটা অগুছালো । রিয়ান বর্ষার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল ,
” তোমাকে না বলেছি রুম সবসময় গুছিয়ে রাখবে ! এখন ও রুমটা অগুছালো কেন ?
বর্ষা আমতা-আমতা করে বলল ,
” আমি আসলে রুমে আসিনি কিছুক্ষণ আগেই এসেছি !
এমন সময় বর্ষাকে বর্ষার আম্মু ডাক দিল । বর্ষা রিয়ানকে বলল ,
” আপনি একটু রুমটা গুছিয়ে দেন না ।
কথাটা বলেই বর্ষা রুম থেকে বেরিয়ে আম্মুর কাছে গেল । কিছুক্ষণ পর রুমে উঁকি দিয়ে দেখে রিয়ান রুম গুছাচ্ছে । বর্ষা তখন পাশের রুম থেকে তিন্নিকে ঠেকে এনে বলল,
” তোকে বলেছিলাম না , তোর ভাইয়াকে দিয়ে আমার রুম গুছাবো ! দেখছিস আজকে তোর ভাইয়া আমার রুমটা গুছিয়ে দিচ্ছে ।
” তুমি তো এখন আমার ভাইয়ার বউ হয়ে গেছো তাই ভাইয়া রুমটা গুছিয়ে দিচ্ছে । না হলে জিবনেও গুছিয়ে দিতো না ।
” তর ভাইয়ের বউ না হলেও আমি তর ভাইয়াকে দিয়ে রুম গুছিয়ে নিতাম। হুহ !
#চলবে