#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)
আর এদিকে আরোহি ভাবছে,
আমাকে অনেক জালিয়েছো পতিদেব। আজ থেকে তোমার পালা।কাল শুধু রাত জাগিয়ে সেবা করিয়েছি।এখন থেকে আর কি কি করি দেখে নিও।
এগুলো ভেবেই আরোহি মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিল।তবে সেটা ইহানের আড়ালে।আরোহি বসে বসে এসব ভাবতে ভাবতে আরশি বেগম দরজায় নক করে।আয়ান ও সাথে আছে।
ওনারা ঘরে ঢুকে দেখে আরোহি বিছানায় বসে আছে আর ইহান রেডি হচ্ছে।আরশি বেগম খাটের এক কেনায় বসে আরোহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এখন কেমন লাগছে শরীর? হঠাৎ করে জ্বর বাধালি কি করে বলতো? জানিস কালকে আমরা সবাই কত টেনশনে ছিলাম।”
আরোহি আয়ানকে কোলে নিয়ে আরশি বেগম এর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল।বলে উঠল,
“জানি না খালামনি। হঠাৎ করেই জ্বরটা এলো।আয়ান তোমার কাছে ছিল। তোমার খুব কষ্ট হয়েছে না ওকে সামলাতে।”
আরশি বেগম হাসি মুখে বললেন,
কি যে বলিস।আমার আয়ান একদম শান্ত। এতটুকু ও জ্বালায় না।ইহান তো আয়ানের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। সারা রাত আমাকে জ্বালাতো।আয়ান আর ইহান মধ্যে এই দিক থেকে একটু ও মিল নেই। ”
ড্রেসিং টেবিলের সামনে তৈরি হচ্ছিল ইহান।তবে মায়ের কথা শুনে চোরা চোখে দেখল একবার মা আর আরোহির দিকে যেনো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে। আরশি বেগম ইহানের চোরা চোখের চাওনি না দেখলে ও আরোহি ঠিকই দেখেছে।মনে মনে হাসল আরোহি।মনে মনেই বলে উঠল,
” ঠিক বলেছো খালামনি।আয়ান এর সাথে ইহানের কোনো কিছুতেই মিল নেই। থাকবে কি করে আয়ান তো ইহানের সন্তানই না। তবে ও আমার ছেলে ছিল আর আমার ছেলে থাকবে। ”
কথাগুলো ভেবেই আরোহি আর একটু আহ্লাদি স্বরে আরশি বেগম কে ডাকল। বলল,
“ও খালমনি, আমার না খুব খিদে পেয়েছে আমাকে একটু খায়িয়ে দেবে?”
আরোহির এমন কথায় যেন বিষম খেল ইহান।হঠাৎ আরোহির এত পরিবর্তন।ইহান ভাবছে,
” মেয়েটা আহ্লাদী স্বরে আম্মুকে ডাকছে, খায়িয়ে দিতে বলছে। কিন্তু ঐ সব ঘটনার পর থেকে তো আরোহি একদম অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল। নিজের জন্য কিছু বলত না। সকলের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকত।বিশেষ করে আম্মু আর আমার থেকে তাহলে আজ কি হলো ওর? জ্বর হয়ে রাগ গুলো, অভিমান গুলে কি হাওয়া হয়ে গেল নাকি!!”
আরশি বেগম হাসলেন।বললেন,
” অবশ্যই মা।তুই ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
আরশি বেগম লতা বেগম ডেকে আয়ানকে তার কাছে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল আরোহির জন্য খাবার আনতে। মেয়েটা অনেক দিন পর নিজ থেকে কিছু চাইছে।
আরশি বেগম আর লতা ফুফু আয়ানকে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আর ইহান তো হা করে আরোহির দিকে তাকিয়ে আছে।যেন কোনো শকের মধ্যে আছে। আরোহি ইহানকে এভাবে তাকিয়ে তাকতে দেখে হালকা কাশি দিল।এতে ধ্যান ভাঙল ইহানের। নিজেকে সামলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল ইহান।তবে আরোহির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল।খাট থেকে নামতে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ল আরোহি।
“বাবা গো, মা গো” বলে চিৎকার করে উঠল।
আরোহির চিৎকার শুনে ইহান ছুটে এলো আরোহির কাছে। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে আরোহি? ব্যাথা পেয়েছো?কি ভাবে ব্যাথা পেলে?আর পড়লেই বা কি করে? ”
ইহানের এত গুলো প্রশ্ন শুনে ভ্যবাচেকা খেয়ে গেল আরোহি। মনে মনে শ খানিক গালি দিল তবে মুখে কিছু বলল না।
আরোহি চুপ করে আছে দেখে ইহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।মনে মনে বলল,
” এই তো আগের ফর্মে ফিরে এসেছে। আর আমি বোকার মতো কি না কি ভাবছিলাম। ”
ইহান কিছু একটা বিরবির করে হুট করে আরোহিকে কোলে তুলে নিল।আরোহি এতে যেন অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেছে।আরোহি ভেবেছিল ইহানকে একটু চিন্তায় ফেলবে।কিন্তু ইহান যে হুট করে এমনটা করবে ভাবতে পারেনি। আরোহিকে ইহান বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে খাটে বসালো।আরোহি ঘামছে হার্টবিট ও অনেক ফাস্ট চলছে।আরোহির অবস্থা বুঝে ইহান আরোহিকে নিজ থেকে আলাদা করল।মাটিতে হাটু ভেঙে বসে আরোহির পা দেখতে লাগল।শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কোন পায়ে ব্যাথা পেয়েছো?”
ইহানের এই শান্ত কন্ঠ যেন আরোহিকে অশান্ত করে দিচ্ছে। এর আগে ও এই লোকটা শান্ত স্বরে কথা বলেছে তখন তো এমন হয়নি।হবে কিভাবে? তখন তো একটা মিথ্যে নিজের অনুভূতিগুলো কে চাপা দিয়ে রেখেছিল।কিন্তু আজ সত্যি টা জানার পর এই মানুষটার ছোয়ায় ঘৃণা কাজ করছে না।বরং একটা আলাদা শিহরণ কাজ করছে।হঠাৎই ইহানের ওপর পুনরায় অভিমান জমা হলো আরোহির। মনে মনে ভাবল,
আজ যদি আমাকে সত্যি টা বলে দিতেন। তাহলে আপনাকে কখনো ঘৃণা করতাম না আমি।কিন্তু আপনি বলেন নি ইহান। আমাকে একটা বাইরের লোকের কাছ থেকে সব জানতে হয়েছে। মায়াকে বিয়ে করায় আমি কষ্ট পেয়েছিলাম তবে আপনার আর মায়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি জেনে আপনাকে ক্ষমা করে দিলে ও আমার কাছ থেকে এতদিন সত্যি টা লুকিয়ে রেখে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে আমি সহজে ক্ষমা করব না।জানি না যতটা আমি জ্বলেছি, পুড়েছি ততটা কষ্ট আপনাকে দিতে পারব কি না তবে সহজে আপনাকে ধরা দেব না ইহান।আপনার কাছে থেকে ও দূরে থাকব আমি। আর এটাই আপনার শাস্তি হবে।”
কথাগুলো ভেবেই আর কোনো দিকে খেয়াল করল না আরোহি। সোজা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আরোহিকে এভাবে দৌড়ে চলে যেতে দেখে অবাক হলো ইহান। একটু আগেই তো পায়ে ব্যাথায় ছটফট করছিল। এখন আবার নিজে থেকে ওয়াশ রুমে চলে গেল। ইহান আর কিছু বলল না।ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।একেবারে তৈরি হয়ে ব্রকফাস্ট করতে এলো ইহান। আরশি বেগম আরোহির জন্য সুপ করছিল এতক্ষণ। আয়ান লতা ফুফুর কাছে থাকায় নিজেই ব্রকফাস্ট বেড়ে খেয়ে নিল ইহান।আর আরশি বেগম সুপ নিয়ে ইহানের ঘরে আরোহির কাছে চলে গেল।
ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ইাহনকে না দেখে খুশি হলো আরোহি। এই মুহূর্তে ইাহনের মুখোমুখি না হওয়ায় ভালো।ততক্ষণে আরশি বেগম সুপ নিয়ে হাজির হলেন আরোহির কাছে। নিজের হাতে খায়িয়ে দিল আরোহিকে। আরোহি ও চুপচাপ খেয়ে নিল।তবে বিপত্তি বাধল খাওয়া শেষে ঔষধ খাওয়ার সময়। আরোহির মতে সে এখন সুস্থ। তাই তার কোনো ঔষধ এর দরকার নেই। কিন্তু আরশি বেগম বলছেন আরোহিকে ডাক্তার ওষুধ খেতে বলেছেন।যখন আরোহি মটে ও শুনছিল না তখন আরশি বেগম হাল ছেড়ে দিলো। বলল তোকে ওষুধ খাওয়ানো আমার কর্ম না। দ্বারা যে খাওয়াতে পারবে তাকে ডাকছি।আরশি বেগম এর এমন কথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল আরোহির। কারণ আরোহি ভালো করে বুঝতে পারছে আরশি বেগম ইহানের কথা বলছে।আর ইহান যদি জানতে পারে আরোহি ওষুধ খেতে চাইছে না তাহলে আরোহির এক দিন কি ইহানের এক দিন।আরোহি তারাতাড়ি ওর খালমনি কে আটকালো আর ভদ্র মেয়ের মতো ঐ তেতো জঘন্য ওষুধ টা খেল।আরশি বেগম আরোহির এমন বাচ্চামো দেখে হেসে ফেললেন। মেয়েটা যে আবার আগের মতো হচ্ছে এটাই অনেক তার কাছে। কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দিলেন লতা বেগম। তবে দরজার ওপারে রাফসান কে দেখে একটু অবাক হলো।রাফসান ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল,
” ইহান কি আছে?”
লতা বেগম রাফসান কে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে বলল ইহান অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছে। এটা শুনে রাফসানের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।ইহান না থাকলে যে আয়ান এর সাথে সময় কাটাতে পারবে না এটা সে জানে।আয়ানকে দেখতে রাফসান এসেছে। কিন্তু ইহান না থাকায় সেটা বলার সাহস পেল না আরোহি সবটা জানে তবে সকলের সামনে আরোহির সাথে কথা বলা টা ও বেমানান।তাই মুখ টা কালো করে রাফসান চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াচ্ছিল। তবে তখনই আয়ানের কান্নার আওয়াজ পেল সে।দেখল,
#তেমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)
আয়ানের কান্নার আওয়াজে যেতে গিয়ে ও গেল না রাফসান।যদি একটাবার ছেলেটা কে দেখতে পায়,এই আশায়।নিজেকে আজ বড্ড বেশি অসহায় মনে হচ্ছে রাফসানের।নিয়তি তাকে কোথায় দাড় করালো যে নিজের সন্তানকে একটা বার দেখার জন্য, একটা বার কোলে নেওয়ার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তখনই হাসিমুখে উপস্থিত হলো আরোহি।আয়ানের কান্না ও থেমে গেছে। আরোহি রাফসানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
রাফসান হালকা হেসে উত্তর দিল,
” ভালো। তুমি কেমন আছো? ”
আরোহি সৌজন্য হেসে বলল,
“জ্বি, ভালো আছি।আপনি বসুন।”
আরোহি হুট করে আয়ানকে রাফসানের কোলে দিয়ে দিল।চোখে হেসে বোঝালো তাকে আগলে রাখতে।রাফসানের মনের মধ্যে খুশির জোয়ার বইতে লাগল।নিজের সন্তানকে কোলে নিলে যে এত আনন্দ সেটা রাফসান আগে কখনো অনুভাব করেনি।আয়ানকে রাফসানের কোলে দিয়ে রাফসানের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে গেল আরোহি। তখনই বাড়িতে এলো ইহান।একটা জরুরি কাগজ নিতে ফিরে এসেছে সে।
বাড়ি ফিরে যে রাফসানকে দেখবে এটা আশা করেনি ইহান। আবার আয়ান ও তার কোলে।বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগল ইহানের কাছে।আর এর পেছনে যথেষ্ট কারণ ও আছে।ইহান আর রাফসানের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক। ওরা একে অপরকে যথেষ্ট চেনে, জানে।আর ইহান এটা ও জানে আয়ান রাফসানের সন্তান।আর তাই আয়ানের ওপর রাফসানের অধিকার আছে। তবে বাড়ির কেউ সেটা জানে না।তাই সহজে রাফসানের হাতে আয়ানকে কেউ তুলে দেবে না।আর সেই জন্যই ইহান অবাক হচ্ছে তবে অখুশি নয়।ইহান ধীর পায়ে রাফসানের কাছে গেল। রাফসান এক ধ্যানে আয়ানকে দেখছে।আর চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। ইহান রাফসানের পাশে বসে বলে উঠল,
“কেমন আছো? আজ দুদিন খবর নেই কেনো?”
হঠাৎ ইহানের কথায় চমকালো রাফসান। তবে ইহানকে দেখে বিচলিত হলো না।হালকা হেসে বলল,
“ভালো আছি। আর কালকে একটা বিশেষ কাজ ছিল।তাই আয়ানের খবর নিতে পারিনি।তাই আজকে চলে এলাম। ওকে দেখতে।”
সৌজন্য হাসল ইহান।আশ পাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কি না।নাহ কেউ নেই। তাও রাফসানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” বাববাহ! কি এমন বিশেষ কাজ যে নিজের ছেলের খবর নিতে সময় পেলে না?”
মৃদু হাসল রাফসান। হাসি মুখেই জবাব দিল,
” যে মানুষ টা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে।তার জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই আর কি!!”
রাফসানের কথা বুঝল না ইহান, জিজ্ঞেস করে উঠল,
“মানে?”
রাফসান মুখ খোলার আগেই আরোহি নাস্তা নিয়ে হাজির হলো।ইহানকে দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরোহির। এমন সময় ইহান বাড়িতে কেন? ভাবল আরোহি।ইহান আরোহিকে দেখে কিছু বলল না।রাফসানকে বসতে বলে নিজের ঘরে গেল কাগজ টা আনতে।রাফসান কে আরোহি বলল,
” ভাইয়া কালকে কিন্তু ছোট বোনকে কথা দিয়েছিলেন ইহান আমাদের দেখা হওয়া, কথা বলা সম্পর্কে কিছু জানবে না।কথার খেলাপ করবেন না কিন্তু। ”
আবার ও হাসল রাফসান। বলল,
“তুমি চিন্তা করো না। আমি ইহানকে কিছু বলব না।তবে ছোট বোন মনে হচ্ছে আমার বন্ধু কে টাইট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে!!”
আরোহি বিজ্ঞদের মতো করে ভাবল। তারপর ফিক করে হেসে দিল।আরোহিকে হাসতে দেখে রাফসান ও হাসল।তখনই সেখানে উপস্থিত হলো ইহান।রাফসান আর আরোহিকে হাসাহাসি করতে দেখে অবাক হলো।মনে মনে বিরবির করল,
” আমার সামনে হাসা তো দূর।একটু ভালো করে কথা ও বলে না।আর এদিকে দেখো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।”
তবে ইহানের ভালো ও লাগল আরোহিকে হাসতে দেখে। নিজের দোষের জন্য আরোহির মুখ থেকে হাসি কেড়ে নিয়েছিলো ইহান।এটা ভাবতেই আবার ও অনুশোচনা হলো ইহানের।
ইহানকে দেখে আরোহি হাসি থামালো।রাফসান ও আয়ানকে আদর করে আরোহির কাছে তুলে দিল।ইহানকে টাইট হাগ দিয়ে বলল,
“একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম।ভাবলাম আয়ানকে ও একটু দেখে যায়।আর তেমার সাথে ও দেখা করে যায়।”
ইহান মুচকি হাসল। বলল,
“তুমি কি চলে যাবে? তাহলে চলো একসাথে যায়।আমাকে ও অফিসে যেতে হবে।একটা কাগজ নিতে এসেছিলাম।”
আরোহি ইহানের কথায় কিছু বলল না।আয়ানকে সাথে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। আর এদিকে রাফসান আর ইহান ও বেরিয়ে পড়ল।
__________________
সারাদিন বেশ ভালোই কেটেছে আরোহির।আজকের দিনটা যেন আলাদা ছিল আরোহির কাছে। আর তার কারন হয়তো রাফসান। হ্যাঁ কালকে রাফসানের সাথে কথা বলার পর আরোহির বুক থেকে অনেক বড় একটা পাথর নেমে গেছে। এতদিন ভেতরে যে দহন হতো সেটা অনেক টা কমে গেছে।ইহানের ওপর রেগে আছে আরোহি তবে সেই ঘৃণা টা নেই। যে ঘৃণা আরোহি কে ও আঘাত করত।
সন্ধ্যা বেলা হালকা নাস্তা বানাচ্ছিল আরোহি। আয়ান আরশি বেগম এর কাছে।লতা বেগম বানাতে চেয়েছিল খাবার টা কিন্তু আরোহি দেয় নি।রান্না করতে করতে হঠাৎই ইহানের কথা মনে পড়ে গেল আরোহির।এ বাড়িতে আসার পর সেদিন প্রথম ইহান আরোহির সাথে কথা বলেছিল আরোহির হাত পুড়ে যাওয়ায়।এমনকি আরোহি ও রাতে কথা বলেছিল।
ইহান আরোহিকে নিজের হাতে খাইয়িয়ে দিয়েছিলো সেদিন। ভাবতে গাল দুটো লাল আভা ধারণ করে আরোহির। সেদিন তো এত লজ্জা লাগে নি।লাগবে কি করে? সেদিন তো আরোহির মন বিষিন্নতায় ভরা ছিল। যেটা আজ নেই। হয়তো এ কারণেই আরোহি লজ্জা পাচ্ছে।আরোহি ইহানের কথা ভাবায় এতটাই বিমোহিত ছিল যে ছুরি টা অসাবধানতার জন্য নিজের হাতের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয় আরোহি। আঙ্গুল কেটে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে আরোহির।ব্যাথায় কেকিয়ে উঠল আরোহি। সেদিন হাতে সামান্য ছ্যাকা লেগেছিল কিন্তু আজ একটা আঙ্গুলের অনেক টা কেটে গেছে। ব্যাথায় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে আরোহির। আঙ্গুল টা ধরে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আরোহি।
হঠাৎই কেউ হাত ধরে একটান দিয়ে রান্নাঘরের স্নিঙ্ক এর কাছে নিয়ে গেল।হঠাৎ এমন হওয়ায় অবাক হলো আরোহি। তবে পাশে ইহানের রাগি চোখের চাওনি দেখে চোখ নামিয়ে নিল।আরোহি ভালো করে বুঝতে পারছে আজ তার কপালে দুঃখ আছে।
আরোহির হাত ধুয়ে দিয়ে তাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল ইহান।ড্রয়িং রুম দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আরশি বেগম সেটা খেয়াল করলেন তবে আরোহির কাটা হাত দেখে কিছু বললেন না।কারণ ইহানের ব্যাবহারের কারণ তার কাছে স্পষ্ট।
আরোহিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে হাতে এন্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছে ইহান।কেউ কোনো কথা বলছে না।আরোহির হাত জ্বালা করছে। চোখে পানি চোলে এসেছে জ্বালার জন্য তবে কিছু বলছে না।আরোহির হাতটা ছোট করে ব্যান্ডেজ করে ইহান ফ্রেশ হতে চলে গেল।তখন আরশি বেগম আয়ানকে সাথে নিয়ে ঘরে এলো।খালামনি কে দেখে আরোহি একটা হতাশার শ্বাস ফেলল।আরশি বেগম আয়ানকে রেখে আরোহিকে বলল,
“হাত টা কাটলি কি করে বলত?বকেছে খুব?”
আরোহি ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
“কথাই বলে নি।”
আরশি বেগম হালকা হাসলেন।বললেন,
” জানিস তো কেমন! এই জন্য রাগ করেছে।চিন্তা করিস না আস্তে আস্তে রাগ কমে যাবে।আচ্ছা আয়ান কে কি আজ ও আমার কাছে রাখব?”
আরোহি ইতস্তত করল। ভাবল এভাবে আয়ানকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না তো।আয়ান রাফসানের সন্তান এটা জানার পর আয়ানকে অবহেলা করছে না তো!
আরোহির চিন্তিত মুখ দেখে আরশি বেগম কিছু একটা বুঝে নিলেন।আরশি বেগম বললেন,
” চিন্তা করিস না।মাঝে মাঝে আয়ান আমার কাছে থাকলে সেটা তোর অবহেলা না। তোকে আমি চিনি আরোহি।”
চলবে,
(